Different Love পার্ট ২১

0
1351

Story:- #Different_Love
Writer:- গল্পছোঁয়া
Part:- 21

— কি করতে চাচ্ছিস তুই??

— জানিনা,দেখি কি করা যায়।
তবে আমি প্রুফ করেই দম নিব।

— ওয়ান এ মিনিট,আমান তখন যে লোকের বর্ণনা দিয়েছিলো ওইটা আয়মান ভাইয়া নয়তো,যদি এমন হয় তাহলে তো আমানকে দেখেই ফেলেছে আয়মান ভাইয়া।

— যা হবার হবে,আপাতত যেটুকু বললাম সেটা শোন।আমি ফিডারে দুধের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি,রাতে কাঁদতে লাগলে খাইয়ে দিস।

অহনা মিঃ মুখার্জির কাছে থেকে আমানকে নিয়ে নিল,আরিয়া মিঃ মুখার্জির সাথে কথা বলেছে যে, সে এখানেই থাকবে।মিঃ মুখার্জিও ভীষণ খুশী হয়েছে,মিঃ মুখার্জি কে বলে আরিয়া ফিডারে দুধের ব্যবস্থাও করে নিয়েছে,রুমে গিয়ে আমানকে সযত্নে ঘুম পারিয়ে দিলো আরিয়া,তারপর ওর কাছে অহনাকে রেখে আবার হলরুমে চলে এলো সে।সেই সেইম গেটআপে,যে সাজে বিয়ে হয়েছিল ওদের।অহনার হেল্প নিয়ে সেইম শাড়ি, সেইম ভাবে সাজলো আরিয়া।শাড়ির ওপরে পড়লো আয়মানের সেই হুডি গেঞ্জি টা।গেঞ্জি টা সাধারণত আরিয়া নিজের সাথেই রাখে সবসময়,আর শাড়িসহ সেদিনের হিাজব,চুড়িগুলো নিমু কে বলে এক স্টাফ কে দিয়ে আনিয়ে নিয়েছে আরিয়া।সব কম্পিলিট,এবার মিশন হলো আয়মান যে ওরই আয়মান,আমানের বাবা সেটা প্রুফ করা।

আরিয়া রিসোর্টের হলরুমের একটা টেবিলের চেয়ার টেনে বসলো,সামনের টেবিলে কয়েকজন ছেলে বসে আছে,যারা বারবার আরিয়ার দিকে তাকাচ্ছে কেউবা সিগন্যাল দিচ্ছে।
কিন্তু আরিয়ার এসবে পাত্তা নেই,আরিয়ার চোখদুটো শুধু আয়মান কে খুজে চলেছে কিন্তু কোথায় আয়মান?
এদিকে ২টা ছেলে এসে আরিয়ার পিছে দাঁড়িয়ে হাই/হ্যালো করে যাচ্ছে, আরিয়াতো চরম বিরক্ত।হঠাৎ আরিয়ার চোখ গেলো কিছুটা দূরে রুহি আয়মানের বাহু জড়িয়ে আসছে হলরুমের দিকে, আয়মানও রুহির সাথে হেসেহেসে কথা বলছে।আরিয়াতো রাগে গজগজ করছে,এদিকে পেছনের ছেলেদের ডিস্টার্ব।
আরিয়া মনেমনে কিছু একটা ভেবে ডেভিল স্মাইল দিলো।

— ওহ,হ্যালো।
একচুয়ালি আমি বুঝতে পারিনি, কানে এয়ারফোন ছিলোতো তাই (মুচকি হেসে)

— ওও আচ্ছা আচ্ছা,বলছিলাম যে তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে (একজন ছেলে)

— ওহ রিয়েলি (আরিয়া মুচকি হেসে)

— হ্যাঁ,আর ইউ সিঙ্গেল?

— (মুচকি হাসি দিলো আরিয়া)

— ওও বুঝেছি, আমিও তাই।
আসলে শুনেছি বিয়ে বাড়ি আসলে নাকি অনেক সুন্দরী মেয়ে পাওয়া যায়,এখানে এতো মেয়ে দেখলাম।তোমাকে সবচেয়ে বেশি সুন্দর লেগেছে, ইউ আর সো কিউট & বিউটিফুল।

— ফ্লাট করছেন?

— আরে নাহ,না।ফ্লাট করবো কেন (আরিয়ার পাশের চেয়ার টেনে বসে)
আমরা কি বন্ধু হতে পারি? (আরিয়ার দিকে হাত বাড়িয়ে)

আরিয়া আয়মানের দিকে তাকিয়ে দেখলো আয়মান অগ্নিদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে,আরিয়া কিছু আন্দাজ করে আয়মানকে জ্বলানোর জন্য নিজের চেয়ারটা আরও টেনে আনলো ছেলেটার দিকে।
এবার ছেলেটার হাতের সাথে হাত মেলাতে যাবে তখনই এক গম্ভীর পুরুষালী কণ্ঠে ছেলেটি নিজের হাত সরিয়ে নিল।
আরিয়া খেয়াল করলো ছেলেটি ভয় পেয়েছে, চোখেমুখে ভয় স্পষ্ট।
কন্ঠস্বরের মালিককে দেখার জন্য আরিয়া মাথা তুলে তাকিয়ে দেখে আয়মান দাড়িয়ে আছে।

— এইযে ছোট ভাই,বিয়ের অনুষ্ঠানে এসেছো এন্জয় করো।মেয়েদের পিছুপিছু কি হুম,তোমাদের বাবামা কে কি বিষয়টা জানাবো
যে মেয়েটার সাথে ফ্লাট করছো সে-তো ম্যারিডও হতে পারে,তার হাজবেন্ড যদি এসব জানে কি হবে তোমাদের জানো।

— সরি স্যার ?

— নেক্সট টাইম যেন এরকমটা না দেখি,পড়াশোনা করার বয়স মন দিয়ে পড়াশোনা করে লাইফে সাকসেস হও।এসব আবেগের পেছনে সময় দিলে কি চলবে, চলবেনা।

— সরি স্যার,আর হবে না।
আসছি আমরা (ছেলেদুটো চলে গেলো)

আরিয়া এখনও আয়মানলে পর্যবেক্ষন করছে আর আয়মান জোরেজোরে শ্বাস নিচ্ছে আর হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে।বুঝাই যাচ্ছে রাগ দমানোর চেষ্টা চালাচ্ছে সে।

— এইযে মিসঃ সরি মিসেস,ছেলেরা ফ্লাট করতে আসে আর আপনি তাদের উন্মাধনা দিচ্ছেন।মিনিমাম সেন্স নেই আপনার,পরে বাজে কিছু হতে পারতো

— আয়মান,আমি তো তোমার জন্যই… আমি জানিতো তুমিই আমার আয়মান, আমার…

— শাট আপ,কি শুরু করেছেন কি।
একবার তো বলেছি আপনি যাকে ভাবছেন আমি সে নই,এইতো রুহি (রুহির হাত ধরে নিজের পাশে এনে) সি ইজ মাই উডবি ওয়াইফ,গট ইট। (আয়মান রাগী স্বরে)

— এই মেয়েটা কে আয়মা??তখন থেকে তোমার পেছনে পরে আছে।
এই মেয়ে,তোমার কি লাজলজ্জা নেই।তখন ওয়াসরুমে কি করেছো তুমি,কি ভাবছো দেখিনি মনে করছো।ছিঃছিঃছিঃ,নির্লজ্জ বেহায়া মেয়ে মানুষ, ছেলে দেখলেই হামলে পরতে ইচ্ছে করে তাইনা।
লিসেন,তোমাকে ফার্স্ট টু লাস্ট ওয়ার্নিং দিচ্ছি।নেক্সট যদি তোমাকে আমার আয়মানের ধারেকাছেও দেখিনা তো এই পাবলিক প্লেসে অ্যানাউসড করে তোমার কুকৃত্তি ফাস করবো মনে রেখো।চলো আয়মান (রুহি আয়মানের হাত ধরে হনহন করে চলে গেলো আরিয়ার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে)

এসব শুনে আর দেখে আরিয়া স্তব্ধ হয়ে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়লো,মাথা ঝিনঝিন করছে ওর।ও মরিচিকার পেছনে দৌড়াচ্ছে না তো,অহনা যেটা বললো সেটা যদি সত্যি হয় তাহলে কি হবে,হতেও তো পারে।
নাহ,শেষ রিস্ক টা আরিয়া নেবেই।
রুহি আয়মানের হাত ধরে মিঃ মুখার্জির ছোট ছেলে মানে যার আজকে বিয়ে হলো তার সাথে বসে আছে। নতুন বউও আছে,আরও অনেক ছেলেমেয়ে আছে। সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছে,কথাবার্তা শুনে বুঝা গেলো বর সানজিদ আর আয়মান দীর্ঘদিনের কাছের বন্ধু।রুহির সাথে আয়মানের বিয়ে হওয়ার কথা,সামনে মাসেই।
আরিয়ার রাগে মাথা হ্যাং করছে,রাগে গজগজ করতে করতে আরিয়া হাতে থাকা জুসের গ্লাসটা নিয়ে আয়মানের পেছনে দাড়িয়ে ইচ্ছে করে জুসটা আয়মানের গায়ে ফেললো।

— হোয়াট দ্য হেল? (আয়মান)

— ওহহ,সরি সরি সরি।আমি খেয়াল করিনি,ভুল করে পরে গেছে।

রুহি উঠে দাড়িয়ে আয়মানের ব্লেজার ঝেড়ে দিতে দিতে বললো..

— ওহো আয়মান বেব্স,ইশ স্যুট টাই নষ্ট হয়ে গেলো তোমার।
এই মেয়ে তোমাকে বলেছিলাম না,আয়মানের ধারেকাছেও না আসতে,সেই তুমি আবারও।
আসলেই নির্লজ্জ মেয়ে তুমি। (রুহি)

— বললামতো সরি,খেয়াল করিনি।
তোমার সমস্যা টা কি,নিজেকে কি মনে করো তখন থেকে আমাকে যাচ্ছেতাই ভাবে অপমান করে যাচ্ছো।আমাকে চেনো তুমি, আমি চাইলে তোমার কি করতে পারি।
আমি কাট ওয়াইফ জানো

—কেরে,ভাব নিচ্ছিস আমার সাথে।আমি কে…

—আহ্ রুহি,ইট’স এ অ্যাক্সিডেন্ট।
আমি চেঞ্জ করে আসছি (আয়মান)

— চলো,আমিও যাচ্ছি।

— নাহ্,তুমি থাকো।আমি চেঞ্জ করে এখনই আসছি।
আর এইযে আপনি (আরিয়া কে উদ্দেশ্য করে) দেখেশুনে চলাফেরা করবেন,আর বুঝেশুনে কথা বলবেন (কথাটা বলেই আয়মান হনহন করে চলে গেলো)

— এইযে, শোনো মেয়ে।
আয়মানকে পেয়ে খুব ভাব নিচ্ছো তাইনা,বলাতো যায়না আয়মান তোমার কপালে নাও থাকতে পারে?

রুহিকে পিন্চ করে কথাটা বলেই আরিয়া আয়মানের পিছুপিছু গেলো কিছুটা দূরত্ব বজায় রেখে।
আয়মান রিসোর্টের ৩তলার ৩০১ নম্বর রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো,আরিয়া দরজার কাছে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, নক করতে গিয়েও সাহস পাচ্ছে না।
চাপা উত্তেজনা + ভয় কাজ করছে,আদোও এটা আয়মান হবে তো নাকি না।
সব ভাবনা সাইডে রেখে আরিয়া এবার দরজায় নক করেই ফেললো,

— আরিফ এসেছিস?
তোকে যেটা আনতে বলেছিলাম ওটা নি… (আয়মান টাওয়াল পেচিয়ে কথাগুলো বলতে বলতে দরজা খুলেই দেখে আরিয়া দাঁড়িয়ে আছে)

আয়মান আরিয়াকে দেখেই দ্রুত রুমে ঢুকে গিয়ে লাগেজ থেকে শার্ট বের করে শার্ট পরতে লাগলো, আর আরিয়া আয়মানকে এ অবস্থায় দেখে রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো।

— কি ব্যাপার মিঃ আয়মান আহির চৌধুরী,নিজেকে লুকোতে ব্যাস্ত হয়ে গেলেন দেখছি। (আরিয়া দু’হাত বগলে হাত গুজে দাড়িয়ে)

— আপনি আমার রুমে কি করছেন মিসঃ (উল্টোদিকে ঘুরে শার্ট পড়তে পড়তে)

— হাহাহা,অভ্যাস পাল্টায়নি দেখছি,এখনও নিজের বউকে মিসঃ মিসঃ বলে ডাকবা

— আজবতো কিসের বউ,আচ্ছা আপনিকি পাগল?
সেই তখন থেকে বলে যাচ্ছি আপনি যাকে ভাবছেন আমি সে নই,আপনি ভু… (আয়মান আর কিছু বলতে পারলোনা তার আগেই আরিয়া গিয়ে আয়মানের শার্টের কলার টেনে ধরলো)

— অনেক সহ্য করেছি আর নাহ্,কি পেয়েছো টা কি তুমি। কি ভেবেছো আমি তোমাকে চিনতে পারবোনা,তুমি যা বুঝাবে আমি তা-ই বুঝবো।
আমি কি ঘাসে মুখ দিয়ে চলি নাকি,শোনো আমি আর সেই বোকা আরিয়া নেই যাকে সাড়ে ৪বছর আগে তুমি ফেলে রেখে পালিয়ে গিয়েছিলে।আমি এখন সেই বাচ্চা মেয়ে নই,আমার নিজেরই এখন একটা ব… থাক না-ই বলি।এই রুমে এখন আমি আর তুমি ছাড়া কেউ নেই সো স্বীকার করতে তো কোনো প্রবলেম নেই।
আমি জানি,তুমি বিনাকারণে কোনো কাজ করোনা,তোমার ওপর আমার কোনো রাগ বা অভিযোগ নেই।ওই মেয়েটার সাথে মিশছো নিশ্চয়ই এর পেছনেও কোনো কারণ আছে,তাই মাইন্ড করিনি।
আগেই বলেছিলাম তোমার প্রফেশন নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই,তুমি আমাকে ভালোবাসো সেটাও জানি।
হ্যা তোমার ভালোবাসা আর ৫টা মানুষের মতো নরমাল নয়,তোমার ভালোবাসা অন্যরকম।It’s called #Different_Love

আয়মান কিছু বলতে যাবে তখনই দরজায় নক পড়লো,আরিয়া আয়মানের কলার ছেড়ে একটু দূরে সরে দাঁড়ালো, না জানি দরজার ওপাশে কে আছে।
যদি রুহি হয় তখন??
আয়মান শার্ট টা ঠিক করে নিয়ে দরজা খুলে দেখলো…..

To be continue…

((

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here