Different Love পার্ট ১৮

0
1322

Story:- #Different_Love
Writer:- গল্পছোঁয়া
Part:- 18

সে জীবিত আছে আর একদিন অবশ্যই ফিরে আসবে সে।
২ঘন্টা জার্নির পর তারা পৌঁছালো নিজ শহরে।নিমু একটা সিএনজি ভারা করে নিজ বাসায় গেলো আর আছে আরিয়া আরেকটা সিএনজি ভারা করে তিনজনই আরিয়ার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।
১৫মিনিট পর বাড়ি পৌঁছালো তারা,আরিয়া,হিমু অহনা তিনজনেরই ভীষণ নার্ভাস লাগছে।ধরা না পড়লেই আলহামদুলিল্লাহ।
কলিং বেল দিতেই কিছুক্ষণ পরে আরিয়ার আম্মু এসে দরজা খুলে দিলো।এতদিন পর নিজের মেয়েদের দেখে চোখে পানি এসে গেছে তার।আরিয়া আমানকে হিমুর কোলে দিয়ে দুবোন মা কে জড়িয়ে ধরলো।
এদিকে আমান হিমুর কোলে গিয়ে কান্না করছে,আরিয়া ছাড়া কারোর কোলে তেমন থাকেনা আমান।অহনা আর নিমুর কাছে থাকে,বাট বেশিক্ষণ না,হিমুর কাছেতো যায়ইনা।তবে রাহুল আর রোজের সাথে বেশ খাতির ওর।
যাহোক নিজের ছেলের কান্না শুনে আরিয়া দ্রুত হিমুর কোল থেকে আমানকে নিয়ে নিলো,এতক্ষণ জার্নি করার জন্য বাবুর ক্ষুধাও লেগেছে বুঝতে পারছে আরিয়া।এখুনি রুমে যেতে হবে,দূধের শিশু।এতক্ষণ না খাইয়ে রাখা ঠিক না।

— এটা কে আরিয়া,কার বাচ্চা এটা? (আরিয়ার মা)

কাঙ্ক্ষিত প্রশ্ন শুনে তিনজনই ভয় পেয়ে গেছে,অহনা হিমুকে ইশারা করলো।হিমু কোনমতে নিজেকে সামলে বললো..

— আসসালামু আলাইকুম আন্টি,ওটা আমার ছেলে।আমি অহনার বান্ধবী,নিমু আপুর বিয়ের জন্য এসেছি।
আমার হাজবেন্ড বিয়ের দিন আসবে।

— আসলে আম্মু,আমিই বলেছি হিমুকে আমার সাথে থাকতে। আমান আমার কাছেই বেশিক্ষণ থাকে তো,আমান আমায় ছাড়া কান্নাকাটি করে।আর আমিও আমানকে ছাড়া থাকতে পারবোনা তাই নিজের কাছেই রাখলাম।

— ভালো করেছিস,মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর ফুটফুটে হয়েছে।(আরিয়ার মা আমানকে কোলে নিয়ে)
তা মা,তোমার বর কি করে??

— আহ্,আম্মু।কি শুরু করলে বলোতো।বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবে নাকি।
উফফ ভীষণ টায়ার্ড লাগছে,খুধা লাগছেতো,ভেতরে চলো।আমার আমান সোনারও ক্ষুধা লাগছে। (আরিয়া কথা ঘুরিয়ে)

— হুম,চল।
আজ তোদের দুবোনের পছন্দের সব রান্না করেছি।

রুমে গিয়ে হাফ ছেড়ে বাচলো আরিয়া,অহনা,হিমু।অহনা দরজা লক করে দিলো আর আরিয়া দ্রুত চেঞ্জ করে আমানকে ফিডিং করিয়ে ঘুম পারিয়ে দিলো।অহনা আরিয়ার ব্যাগ থেকে আমানের সব জিনিসপত্র বের করলো।আরিয়া ডায়াপার চেঞ্জ করে আরেকটা ডায়াপার পরিয়ে দিয়ে নিজের মায়ের কাছে গেলো।
চলে গেলো ৬দিন,আজ নিমুর গায়ে হলুদ।
সন্ধ্যায় মূল অনুষ্ঠান,এখন দুপুর ১২টা বাজে।
নিমু আরিয়ার বাকি সব বন্ধুবান্ধবরাও এসেছে,প্রতিবেশী রা হলুদ মেহেদী বাটছেন শিলনোড়া তে।
আরিয়া চেয়ারে আমানকে নিয়ে বসে বসে দেখছে।

— ভালোইতো ছেরি,রাজশাহী যায়া মোটা হয়া গেছোস দেখি।

— আমরাতো শুনছিলাম,পড়ালিখার জন্যি বাইরে গেলে খাবারের সেই কষ্ট।ভালো খাবার পাওঅ যায়না,কিন্তু তোরাতো দেখি ফুইলে গেছু।

— আরিয়া ছেমরি ডা বেশি ফুলছে,কিরে পড়াশোনা করছু নাকি শুধু খাইছু।পরিক্ষা কিরকম হলো

একেকজনের একেকরকম কথায় আরিয়ার মেজাজ গেলো চটকে,কড়া কিছু কথা শুনিয়ে দেওয়া প্রয়োজন এদের।

— তখন থেকে কি শুরু করছেন আপনারা,মানুষ তো সারাজীবন একরকম থাকেনা।আগে চিকন ছিলাম এখন একটু স্বাস্থ্য বাড়ছে তারমানে এই নয় যে সবকিছু তুলে এনে খোঁটা মারবেন্
আমি আপনাদের খাইওনা পড়িওনা সো আমায় নিয়ে পরে না থেকে যে কাজে আসছেন সেটাই মন দিয়ে করুন।নাকি অন্যের মেয়েকে নিয়ে গিবত করাই আপনাদের কাজ? (আরিয়া আমানকে নিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে হনহন করে চলে গেলো)

— দেখছু তোরা,শাওনের বেটির কি দেমাগ বাড়ছে।এইজন্যই মেয়েমানুষ কে বাইরে পড়তে দিতে হয়না,বালপাকনা হয়ে যায়।

— ঠিকই কইছু,আগে কতো সহজসরল ছিলো মেয়েটা আর আজ দেখ চ্যাটাংচ্যাটাং কথা বলছে।

মহিলাগুলো আর সব বকবক করে এই টপিক চেঞ্জ করে অন্য টপিক্সে গেলো।
আরিয়া নিমুর বান্ধবী গুলা নিমুর সাথে কতো মজা করছে,আড্ডা দিচ্ছে।আরিয়ার এসব কিছুই ভালো লাগছে না,সে নিজের মতো আমানকে নিয়ে এখানে সেখানে থাকছে।আজকাল এতো হাসিতামাশা ওর বিষের মতো লাগে,অথচ আগের আরিয়া হলে আজকে সবার চেয়ে বেশি মজামস্তি সে-ই করতো।


সন্ধ্যা ৬ঃ০৫
আরিয়াকে ঘিরে ধরেছে ওর বান্ধবী রা,সবার উদ্দেশ্য আরিয়কে শাড়ি পড়ানো।সব বান্ধবী রা হলুদ শাড়ি পরেছে আরিয়াকেও পরতে হবে,একই রকম শাড়ি আরিয়ার জন্যেও কেনা হয়েছে।
সবাই জোরজবরদস্তি করছে আরিয়াকে শাড়ি পড়ানোর জন্য,কিন্তু আরিয়া পরবেনা।
কিভাবে শাড়ি পরবে সে,ওর সিজারের কাটা ক্ষত শুকিয়ে গেলেও এখনও চিনচিনে ব্যথা হয়,ভেতরে হালকা কাঁচা আছেই। দাগতো জলজল করছে।শাড়ি পড়তে গেলে কাটাজায়গায় কাপড় ঠেকলে জ্বলে,তাইতো আরিয়া ঢিলাঢালা গাউন,গোল জামা পরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।আর তাছাড়াও,আরিয়া আর শাড়ি পরতে চায়না।জীবনের ১ম শাড়ি পরায় আয়মানকে পেয়েছিল সে,আজ আবার শাড়ি পড়লল যদি উল্টাপাল্টা কেস হয় তখন।শাড়ি কে ভয় পায় আরিয়া,সে মনেমনে ভেবে রেখেছে আয়মান ফিরে আসলে তখনই শাড়ি
এদেরতো আর সত্যি টা বলতে পারবেনা,ফোনটাও হাতের কাছে নেই যে হিমু,নিমু বা অহনা কে ডাকবে।এরাতো ছারছেইনা,আরিয়া আমানকে বুকের সাথে নিয়ে ঠাঁই দাড়িয়ে আছে।
অহনা আর হিমু তো পুরো বিয়ে বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছে,আনন্দ করছে।আর নিমুকে পার্লারের মেয়েরা সাজাচ্ছে তাই কেউ নেই।
আরিয়ার বান্ধবী শাকিলা আরিয়ার কোল থেকে আমানকে কেড়ে নিলো,ভাগ্যিস আমান ঘুমিয়ে ছিল নয়তো এখনই কান্না করে দিতো।
সিনথি,শ্রেয়া,রিতু,সাদিয়া,তামান্না সবাই মিলে এবার আরিয়ার ওপর হামলে পড়লো,একজন গিয়ে দরজা লক করে দিলো।আর বাকিরা জোড় করে শাড়ি পরানোর জন্য আরিয়ার জামা ধরে টানাটানি করছে।

— শোন,ভালোয় ভালোয় বলছি নিজে বেলাউজ,পেটিকোট পরে আসবি নাকি আমরা পরাবো।যাই বলিস,শাড়ি তোকে পড়তেই হবে।

— দেখ রিতু,বাড়াবাড়ি করিসনা।আমি শাড়ি পরতে পারবোনা,উষ্টা খেয়ে পরবো।ছোট বাবুকে নিয়ে শাড়ি সামলানো আরও টাফ।

— বালের কথা কসনাতো।
বাবু টা কি তোর নাকি,সারাদিন দেখি বাবুকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিস।বাচ্চার মায়ের কি বাচ্চার প্রতি কোনো দ্বায়িত্ব নেই,বাচ্চা কে ছেড়ে আছে কি করে। এতটুকু দুধের বাচ্চা। (সিনথি)

—আমানকে আমার কোলে দে শাকিলা,ঘুম ভেঙে গেলে কান্না শুরু করবে।সামলানো যাবেনা।

—ওর মা ওকে সামলাবে,তোর এতো মাথাব্যথা কিসের।এই তোরা ওকে শাড়ি পরাতো আগে।

সবাই মিলে আরিয়াকে আবার ধরতে যাবে তখনই নিমু এসে উপস্থিত,রাগী স্বরে সবাইকে ধমকালো সে।

— ওকে জোর করিসনা তোরা,ওর এপেনডিসাইডের অপারেশন করা হয়েছিল, ঘা শুকোয়নি এখনও।

— আমরাতো জানতামনা,আগে বলবিনা আরিয়া।সরি রে

নিমু এটাসেটা বুঝিয়ে সবাইকে রুমের বাইরে পাঠিয়ে দিলো,আরিয়া দ্রুত শাকিলার কাছে থেকে আমানকে নিলো।সবাই চলে গেলে নিমু দরজা লক করে দিলো,আরিয়া স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।

— বাঁচালি নিমু,এরা যে যাতাকলে ফেলছিলো বাপরেবাপ।

— আরে ঈষিতা না বললে তো বুঝতেই পারতাম না।রোজ ঈষিতা কে তোর সেফটির জন্য রাখছে,যাতে তোর কোনে প্রবলেম হলে আমাদের জানায়।

— ঈশিতা??

— লেডি কনস্টেবল।

— ওওও

ভালোভাবে গায়েগলুদ,বিয়ে সব মিটে গেলো।
নিমুর বিয়ে মিটে যেতেই বাড়িতে এটাসেটা বুঝিয়ে আরিয়াও আমানকে নিয়ে রাজশাহী তে চলে এলো,কারণ হিমু আর আমানকে নিয়ে বেশিদিন বাসায় থাকলে সন্দেহ করবে ওর বাবা-মা। প্রতিবেশী রা তো আছেই।


দেখতে দেখতে কেটে গেলো ৩টা বছর,আমানের এখন 3বছর ৪মাস বয়স।
আরিয়া এখন একটা প্রাইভেট কম্পানিতে জব করে।যদিও চাকরির দরকার ছিলোনা,কারণ গভমেন্টই ওদের ভরনপোষণের দ্বায়িত্ব নিয়েছে। কিন্তু আরিয়ার বাবা-মা তো আর এসব জানেনা মেয়েকে লেন বাইরে রাখবে তারা।তাই আরিয়া এই চাকরির অজুহাত দেখিয়ে বাড়িতে বেশি যায়না,আমান বড় হয়েছে। কথা বলা শিখেছে,আরিয়াকে মাম্মাম বলে ডাকে।বারবার আমানকে নিয়ে বাড়ি যাওয়া, ওর মাম্মাম বলে ডাকা আরিয়ার বাবা-মা ১০০% সন্দেহ করবে।
এদিকে আরিয়ার বাবা-মা আরিয়ার বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে পরে লেগেছে,এই চাকরির অজুহাতেই সব ম্যানেজ করে যাচ্ছে আরিয়া।


কোম্পানিতে নিজের কেবিনে বসে ফাইল রি-চেইক করছে আরিয়া,হঠাৎ ফোন রিংটোন বেজে উঠায় ফোন হাতে নিয়ে দেখলো ওর মায়ের কল।
আরিয়া ওর পিএ কে ডেকে আমানকে তার কাছে দিয়ে বললো বাহিরে নিয়ে গিয়ে চকোলেট কিনে দিতে।
পিএ রুমি আমানকে নিয়ে চলে গেলে আরিয়া এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে কল রিসিভ করলো।

— আরিয়া,বলছিলাম যে মা।অনেক তো হলো এবার অন্তত…

— আহ্ আম্মু, প্লিজ।আমি বিয়ে করতে চাইনা,কি পেয়েছো টা কি তোমরা।
বোঝা হয়ে গেছি নাকি আমি

— এভাবে বলছিস কেন,তোর ভবিষ্যতে ্র জন্যই তো…

— তোমার এই এক কথা আর কতো বলবে বলোতো,আমি তো জব করি তাইনা।
আমার খরচা,আমি নিজেই চালাতে পারি।তো ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতে হবে না,প্লিজ এসব বিয়ের চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো।ভাললাগছেনা আমার।

— তবুও মা,একটাবার ভেবেতো দেখ।এভাবে অবিবাহিত মানে সারাজীবন এম…

— আমি বিজি আছি,রাখছি….

To be continue….

((

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here