Different Love পার্ট ১৭

0
1399

Story:- #Different_Love
Writer:- গল্পছোঁয়া
Part:- 17

অহনাকেও ইনফর্ম করা হয়েছে,ও ইতিমধ্যে রওয়ানা দিয়ে দিয়েছে।
প্রায় দুই ঘন্টা পর একজন নার্স তোয়ালে জোড়ানো একটা বাচ্চা কে নিয়ে বের হলো,নিমু কাঁদতে কাঁদতে গিয়ে দাঁড়ালো।
নার্স মুচকি হেসে বললো,

— কংগ্রাচুলেশনস,ছেলে হয়েছে।

রোজ বেবিকে কোলে নিলো,নিমু কাঁদতে কাঁদতে বললো..

— আআরু,আরিয়া কেমন আছে??

এবার নার্সের মুখ কালো হয়ে গেলো।

— ডক্টর বলবেন সেটা,আমি কিছু বলতে পারবোনা।(কথাটা বলেই নার্স আবার অটিতে ঢুকে গেলো)

কিছুক্ষণ পরে একজন ডক্টর বের হলো,সবাই মিলে ঘিরে ধরলো তাকে।অহনাও চলে এসেছে,বেবি এখন তার কাছেই,,

— ডক্টর,আমার আপু কেমন আছে বলুন।সে ঠিক আছে তো?? (অহনা)

ডক্টর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো..

— দেখুন সময়ের আগেই আমরা ডেলিভারি করতে বাধ্য হয়েছি,মিনিমাম আরও ১০দিন পর ডেলিভারি করলে ভালো হতো।এনিওয়েস,তেমন কোনো প্রবলেম হয়নি,ঠিকভাবেই অপারেশন সাকসেস হয়েছে।কিন্তু প্রেশেন্ট যে মেন্টালি আঘাতটা পেয়েছিলো,তার জন্য কি হবে এখনই বলতে পারছিনা।
২ঘন্টা পর জ্ঞান ফেরা নরমাল,সর্বোচ্চ ৬ঘন্টা।তানাহলে প্রেশেন্ট কুমায় চলে যেতে পারে,আমাদের কিছুই করার নেই।কিছুক্ষণ পরে প্রেশেন্ট কে কেবিনে দেওয়া হবে।
এক্সকিউজ মি (ডক্টর চলে গেলেন)

নিমু আর অহনা ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়লো,অনবরত কান্না করে যাচ্ছে তারা।
আরাফাত অহনার কাছে থেকে বাবুটাকে নিলো।আয়মানের আন্ডারে কর্মরত যেকয়জন অফিসার এসেছিল তারা এখন বাবুকে নিয়ে বিজি।
হ্যাঁ,আরিয়ার জন্য তাদেরও খারাপ লাগছে ঠিকই কিন্তু বেবিকেও তো সামলে রাখতে হবে।


সাড়ে ৩ঘন্টা পরে জ্ঞান ফিরে আরিয়ার,আলহামদুলিল্লাহ সে ঠিক আছে।
কিন্তু জ্ঞান ফেরার পর থেকে আরিয়া কারোর সাথে কথা বলছে না,কেমন চুপচাপ হয়ে আছে।
রাহুলের বাসা হসপিটালের পাশেই,রাহুল সুগারফ্রি সুজি রান্না করে এনেছে।সিজারিয়ান প্রেশেন্ট,ঝাল-মিষ্টি ছাড়া নরম খাবার খাওয়াতে হবে।আরিয়া এখনও বাবুকে দেখেনি,আরাফাত আর রোজ ডক্টরের কাছে নিয়ে গেছে বেবিকে।কি একটা ইনজেকশন দিতে হবে তাই।

— আরিয়া আপু,নে খেয়ে নে এটা (অহনা মুখের সামনে চামচে করে সুজি নিয়ে)

— (নো রেসপন্স)

— কিরে খা,দেখ আরু এমন করলে কি চলবে?? চলবে না।
বেবির জন্য হলেও তোকে ঠিক থাকতে হবে,সবটাকে নিয়তি হিসেবে মেনে নে। (নিমু)

— আরিয়া আপু,আপাতত এটা খা।
হিমু বাসায় গেছে,নরম করে ভাত রান্না করে নিয়াসবে।তুই যদি খাবার না খাস তাহলে বেবিকে ফিডিং করাবি কি করে (অহনা)

— বেবি কোই?? (এতক্ষণে মুখ খুললো আরিয়া)

রোজ আর রাহুল তখনই বেবিকে নিয়ে কেবিনে ঢুকছিলো,আরাফাত হিমু কে ড্রপ করতে গেছে।

— এই নাও তোমার বেবি,একদম আয়মান স্যার এর ডুপ্লেক্স। (রোজ)

— জুনিয়র আয়মান স্যার,বাট এমন কার্বন কপি কেমনে হলো বাব্বাহ্। (রাহুল)

আরিয়ার পেটে বেল বাঁধা ছিলো,নিমু আর অহনা মিলে বেডের সাথে হাল্কা হেলান দিয়ে বসালো আরিয়াকে,যাতে পেটের কাটাজায়গায় ব্যথা না পায়।
আরিয়া বেবিকে কোলে নিয়ে বুকের সাথে নিলো,এক দৃষ্টিতে বেবির মুখের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে সে।
যেন কতকাল পরে চক্ষু তৃষ্ণা মেটাচ্ছে সে।
আরিয়া বাবুর কপালে চুমু দিয়ে বললো..

— বলেছিলাম না,আয়মান আমাকে ছেড়ে কখনোই যাবেনা,বেবির মধ্য দিয়েই সে আমার সাথে আছে।দেখ মিললো তো আমার কথা, আমি যাতে কষ্ট না পাই তাই বেবির ফেইসটা হুবুহু আয়মানের মতোই করে দিয়েছে আল্লাহ।
জানিস,আমি সবসময় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম আয়মানকে ফিরিয়ে দিতে।আজ আল্লাহ আমার কোলে জুনিয়র আয়মান কে পাঠিয়েছে,আমার আর কোনো দুঃখ নেই।আজকে আমার নিজেকে পৃথিবীর সেরা সুখি মানুষ মনে হচ্ছে।
আয়মানের সাথে মিলিয়ে ওর নাম দিলাম ❝আমান আহির চৌধুরী❞

আরিয়া কথাটা শেষ করার সাথে সাথে বেবি আরিয়ার আঙুল মুষ্টিবদ্ধ করে হেসে দিলো।এতটুকু বাচ্চা কি বুঝলো কি জানি,উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।


৭দিন পর আরিয়াকে হসপিটাল থেকে রিলিজ দেওয়া হলো,ফিরে গেলো ওরা আয়মানের ফ্ল্যাটে।আরিয়া বেবিকে কোলে নিয়ে ধীরেধীরে হাঁটছে,রুমের এটাসেটার সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে,যেগুলোতে আয়মানের ছোঁয়া রয়েছে।
নিমু অহনা,রোজ,রাহুল ড্রয়িং রুমে বসে আছে,আরিয়ার পাগলামি দেখছে তারা।
আরিয়া চায় আমানও আয়মানের মতো সিক্রেট পুলিশ অফিসার হোক,সেভাবেই গড়বে নিজের ছেলেকে।

— তো অহনা,ওইদিন হুট করে রাতের বেলায় চলে আসলে।বাড়িতে কি বলে আসছো? (রোজ)

— আরিয়ার হসপিটালের এডমিট হওয়ার কথা শুনে আমার কি অবস্থা হয়েছিল আমি জানি,না পারছি বাবা-মা কে বলতে না পারছিলাম বের হতে।
শেষে কোনোমতে বুঝিয়ে বললাম যে,আমার কালকে সকাল ৭টায় ইংরেজি পরিক্ষা আছে কোচিং এ।মিস দেওয়া যাবেনা, এটা বলেই চলে আসছি।

— আর কতদিন এভাবে লুকিয়ে রাখবো বলতো,সত্যি কখনো চাপা থাকেনা।
এখন অবধি সব ঠিক আছে, বেবিও সুস্থ ভাবে ডেলিভারি হয়েছে। কিন্তু এরপর কি হবে,স্বামী ছাড়া একা সন্তান মানুষ করা অনেক কঠিন।সমাজ ছারবেনা (নিমু)

— এটা আয়মান স্যার এর ফ্ল্যাট, আমাদের ডিপার্টমেন্ট + এখানকার সবাই এখন জানে আরিয়া আয়মান স্যার এর ওয়াইফ।বাচ্চাটাও বৈধ।আর আরিয়াকে এসব বিষয়ে কিছু বলার সাহস কেউ পাবে না,আয়মান স্যার এর ওয়াইফ হওয়ার দরুন আরিয়ার পাওয়ার রয়েছে।
পুরো ডিপার্টমেন্ট আছে আরিয়ার সাথে,খরচ নিয়েও ভাবতে হবে না। প্রতি মাসেমাসে আরিয়ার অ্যাকাউন্টে টাকা চলে আসবে,আরিয়া আর ওর বাচ্চার পুরো রেসপনসেবলিটি গভার্মেন্টের ওপর।

— হুম জানি সেটা,প্রেগ্ন্যাসির পুরোটা সময় তো গভ্ট থেকেই খরচা দিয়েছে।
বলছি সামনে সপ্তাহে এক্সাম,কিযে হবে আল্লাহ জানে।আরু তো একয়দিন পড়তেই পারেনি, আর এখন আমানকে নিয়ে কিভাবে পড়াশোনা করবে।এতটুকু দুধের শিশুকে রেখে এক্সাম হলে কি করে যাবে।

— চিন্তা করোনা,দুজন লেডি কনস্টেবল কে সাথে নিয়ে যাবে।আর অহনাতো আছেই।
ওরা আমানকে নিয়ে এক্সাম হলের বাইরে থাকবে,কোনো প্রবলেম হলে তখন আরিয়া বাহিরে এসে আমানকে সামলাবে।এভাবে তো অনেকেই এক্সাম দেয়।

— কথা সেটা না,আম্মু আর আন্টি আসতে চাচ্ছে এখানে।ওনাদের কথা হচ্ছে পরিক্ষার এই এক মাস আমাদের এখানে থাকবে।

— হোয়াট,আটকাতে হবে যে করেই হোক।

—কি করবো বুঝতে পারছিনা,আমি আরিয়াকে এখনও জানাইনি এইবিষয়ে।এমনিতেই মেয়েটা নানান টেনশনে আছে,ওর মনটাও খারাপ
হয়ে আছে, এরমধ্যে এগুলো শুনলে আরও প্রবলেম হবে।
আম্মু আন্টি আসলে আমানের কে দেখে যদি প্রশ্ন করে,এই বাচ্চা টা কার।তখন কি বলব?
আর আরিয়ার সিজারের জন্য ওর চলাফেরাতে অনেক বেগ পেতে হচ্ছে।আম্মু আর আন্টি তো সব বুঝে যাবে।

— আমি দেখছি কি করা যায়,তুমি টেনশন করোনা।মন দিয়ে পড়াশোনা টা করো।


১মাসের মধ্যে পরিক্ষা গুলো সব হয়ে গেলো,নিমু আর আরিয়ার আম্মুও আসেনি।
আসলে ওনারা আসতে চেয়েছিলেন পরিক্ষার মধ্যে নিজেদের মেয়েদের প্রপার কেয়ার করার জন্য,রোজ নানান কিছু বলে ম্যানেজ করেছে।আর অহনাতো আছেই।
এক্সাম হলের বাইরে দুজন লেডি কনস্টেবল এর সাথে অহনা আমানকে নিয়ে বসে থাকতো।প্রয়োজন হলেই আরিয়া এসে আমানকে সামলাতো,এভাবেই একেএকে পরিক্ষা গুলো শেষ হয়ে গেলো।
মোটামুটি ভালোই হয়েছে এক্সামস,খুব খারাপ হয়নি।
আমানের বয়স এখন ১মাস ১৫দিন,আরিয়াও এখন পুরো সুস্থ।সিজারিয়ানের ঘা শুকিয়ে গেছে,সেলাই কাটার পরে।এখন চলাফেরা করতে কোনো অসুবিধা হয়না তার।
নিমু আর আরিয়া,দুজনের বাড়ি থেকেই বলে দিয়েছে বাড়ি চলে আসতে।
১টা বছর,মেয়েদের কাছে পায়নি তারা।পরিক্ষা শেষ,মাসখানেকের মতো ছুটি আছে হাতে।আর রোজ ও নিমুর বিয়ের ডেট ও ফিক্সড হয়ে গেছে,সামনে সপ্তাহে বিয়ে।
এখন আর কোনো অজুহাত দিয়ে লাভ হবেনা,বাড়ি যেতেই হবে।
আরিয়া কিছু একটা প্ল্যানিং করে নিলো,প্ল্যান টা সাকসেস হলে আর প্যাড়া নাই।আরাফাত আর হিমুর সাথে কথা বলতে হবে,ওরা রাজি হবেই শিওর।
যথারীতি হিমু,অহনা,নিমু আর আরিয়া আমানকে নিয়ে চললো বাড়ির উদ্দেশ্যে।কতদিন পর নিজের জন্মস্থানে যাচ্ছে, নিমুতো ভীষণ এক্সাইটেড। আরিয়ারও খুশি লাগছে তবুও ভেতরে এক চাপা ভয় কাজ করছে, যদি সবাই বুঝে ফেলে কি জবাব দিবে সে।আয়মান থাকলে কোনো টেনশন ছিলোনা,অনেক আগেই ফেমিলিকে বুঝিয়ে নিতো সে।কিন্তু এখন আয়মানতো নেই, জানিনা কখনো ফিরবে কিনা।
তারওপর বেবি হয়েছে,কিভাবে কি করবে।
হ্যাঁ আরিয়া বিশ্বাস করে আয়মানের কিছুই হয়নি,সে জীবিত আছে আর একদিন অবশ্যই ফিরে আসবে সে…..

To be continue…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here