Different Love পার্ট ১৬

0
1449

Story:- #Different_Love
Writer:- গল্পছোঁয়া
Part:- 16

— তুমিতো আছোই,আশা করছি প্রবলেমস হবে না

— আরিয়া কে জানিয়ে দেওয়া উচিত,আয়মান স্যার কোথায়।নাহলে আরিয়া ভুল বুঝবে।

— আরু কখনোই ভুল বুঝেনি রোজ।

— তবুও জানানো উচিত।

— ঠিক আছে,যা ভালো বুঝো।

রোজ আরিয়াকে বলে দিলো আয়মান কোই আছে,বিষয়টা আরিয়া নরমাল ভাবেই নিয়েছে।কারণ সে আয়মান কে কথা দিয়েছিল,আয়মানের প্রফেশন নিয়ে ওর কোনো প্রবলেম নেই।আয়মান তো বলেইছিলো সে একজায়গায় স্থায়ী নয়,তার লাইফরিস্ক রয়েছে।
সব জেনেশুনেই তো আরিয়া নিজেকে আয়মানের সাথে জড়িয়েছে,তাহলে আজ কেন মানতে পারবে না সে।
আরিয়া অপেক্ষা করবে আয়মানের ফিরে আসার,আল্লাহর কাছে একটাই চাওয়া তিনি যেন আয়মান কে সশরীরে সুস্থ ভাবে ফিরিয়ে আনে,আয়মান কে যে ফিরতেই হবে নিজের সন্তান আর ভালোবাসার মানুষের টানে।
হ্যাঁ,আয়মান আরিয়াকে ভালোবাসে।আয়মান এখনও সেটা মুখফুটে না বললেও তার আচরণে ঠিকই বুঝেছে আরিয়া।
৫বছর কেন,সারাজীবনও অপেক্ষা করতে রাজি আরিয়া।


পরদিন আরিয়া নিমুর বাবা-মা আসলো,অহনাও এসেছে।হোস্টেলের ভাড়া দিয়ে সব জিনিস গুছিয়ে নিয়ে আয়মানের ফ্ল্যাটে গিয়ে উঠলো আরিয়া নিমু।আরিয়া সবার সাথে নরমাল বিহেভিয়ার করেছে,কেউ কিছু বুঝতে পারেনি।
আরিয়ার মা ভুনা ডিম করেছিলো,আরিয়ার ফেবারিট অনেক কিছুই। কিন্তু আরিয়া কিছুই খেতে পারছেনা,বমি হয়ে যাচ্ছে।
সবার সামনে কোনোমতে নিজেকে সামলে নিজের রুমের বেসিনে গিয়ে হরহর করে বমি করে দিলো আরিয়া।
কেউ কিছু বা বুঝলেও অহনা ঠিকই বুঝতে পেরেছে কিছু তো হয়েছেই ওর বোনের।
আরিয়া সাধারণত অহনার কাছে কিছু লুকায়নি,আজও লুকালোনা।সব খুলে বললো অহনা কে।অহনাও চরম মাপের শক খেয়েছে + ভয়।
অহনার এসএসসি শেষ,ওর আব্বুআম্মু এই রাজশাহীতেই আরিয়ার সাথে রাখতে চেয়েছিলো ওকে,দুবোন একসাথে থাকবে।
কিন্তু অহনা রাজি ছিলোনা,ও এলাকার কলেজেই পড়বে,ফ্রেন্ডসদের সাথে।
কিন্তু এখন ডিসিশন চেঞ্জ করলো অহনা,নিজের বোনের এই সময়ে পাশে থাকতেই হবে ওর।হাতে আর একদিন আছে,তারপরেই চয়েস দেওয়ার ডেট শেষ।
আর্স থেকে এসএসসি তে ৪ঃ৯৮ পেয়েছে অহনা,ওর বাবা-মা কে বুঝিয়ে ওইদিন বিকেলেই বাড়ি ফিরে গেলো সবাই।অহনা আগের চয়েস ক্যান্সাল করে নতুন করে চয়েস দিলো।


দেখতে দেখতে কেটে গেলো ২টা মাস।আরিয়ার প্রেগন্যান্সির এখন সাড়ে ৩মাস চলছে।
আয়মান যে রুমে থাকতো ওই রুমেই থাকে আরিয়া,নিমু একরুমে আর অহনা আরেক রুমে।
ফ্ল্যাটে ৪টা বেডরুম,একটা ডায়নিং রুম,একটা কিচেন আর প্রতিটা বেডরুমে এডজাস্ট বাথরুম।শুধু আয়মান অরফে আরিয়ার রুমে বেলকনিও রয়েছে
আরিয়া এই রুমে কাউকে ঢুকতে দেয়না,এই রুমে যে তার আয়মানের স্মৃতি রয়েছে,ঘরের প্রতিটা জিনিসে আয়মানের ছোয়া রয়েছে।
নিমু দরজায় এসে নক করলে আরিয়া দরজা খুলে রুমের বাহিরে আসলো,তবুও রুমে কাউকে ঢুকতে দিবেনা সে।

— কি,বল?

নিমু আর আরিয়া ড্রয়িং রুমের সোফায় বসলো।

— তোর তো এখন সাড়ে ৩মাস চলছে,পেট এখনও বুঝা যাচ্ছে না।
তো আমি বলিকি এখনই বাড়ি থেকে একবার ঘুরে আয়,আর বলে আসবি সামনে এক্সাম।ক্লাস মিস দেওয়া যাবেনা,আগামী ১বছরের মধ্যে আর বাড়ি আসা হবে না আমার।

— ঠিকই বলছিস,এখন না গেলে কিছুদিন পরেই চেললাবে বাড়ি যাওয়ার জন্যে।তখনতো যেতে পারবোনা,বুঝা যাবে তখন।

— চল,সবাই মিলেই বাড়ি থেকে ঘুরে আমি তাহলে।

— আজ যদি আয়মান থাকতো,ওকে নিয়েই যেতাম রে।কিন্তু তারতো কোনো খোঁজই নেই,যোগাযোগ নাকি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে

— হুম,রোজ তো সেটাই বললো।

— না জানি কি অবস্থায় আছে।

— টেনশন করিসনা আরু,আল্লাহর কাছে দোয়া কর যাতে সব ঠিক থাকে।ভাইয়া যেন ফিরে আসে সুস্থ ভাবে।

— সেটাই,এছাড়া আর কি’বা করতে পারি।
আল্লাহ যেন আমার অনাগত সন্তানকে বাবা হারা না করে (ফুস করে দম ছেড়ে)

— বড় হয়ে গেছিস আরু,কেমন বড়বড় কথা বলতে শিখে গেছিস।

— পরিস্থিতি বাধ্য করেছে,আমরা সবাই পরিস্থিতির স্বীকার।পরিস্থিতিই মানুষকে বদলে দেয়।
যাকগে,চল পড়তে বসি।এতো চিন্তা করতে গেলে পড়াশোনা হবেনা,পড়াশোনাটাও তো চালিয়ে যেতে হবে তাইনা।


পরেরদিন আরিয়া,নিমু,অহনা বাড়ি চলে গেলো।১০-১২দিন থেকে সবাই কে বুঝিয়ে আবার রাজশাহী ব্যাক করলো।
দিন যায়,মাস যায়।আরিয়ার ডেলিভারি ডেট ও এগিয়ে আসছে,এখন নয়মাস চলছে আরিয়ার।
চলাফেরা করতে ভীষণ কষ্ট হয় ওর,তাই কলেজ করতে পারেনা,নিমু ক্লাস করে নোটস এনে দেয়,সেটা দিয়েই পড়াশোনা করে আরিয়া।রোজ আরিয়ার জন্য এক্সট্রা টিচার্স রেখেছে,যারা আরিয়া আর নিমুকে বাড়ি এসে টিউশনি করিয়ে দিয়ে যায়।
রাতে আরিয়া নিমুর সাথে ঘুমায়,কখন কি প্রবলেম হয় বলাতো যায়না তাই।


রাত ৮টা বাজে,নিমুর কল বেজে উঠলো।
রোজের নম্বর,কিন্তু রোজ তো এমন সময়ে কল দেয়না।নিমু ওয়াসরুমে গেছে,তাই আরিয়া হাতে থাকা বায়োলজি বই টা রেখে নিমুর ফোনটা নিয়ে কল রিসিভ করলো।আরিয়া কিছু বলবে তার আগেই রোজ বলে উঠলো..

—নিমু,আমি এখন যা বলব এটা যেন আরিয়া একদম জানতে না পারে।
এইসময়ে ওর মেন্টালি প্রেশার নেওয়া একদম ঠিক না।
মাত্র খবর পেলাম,আয়মান স্যার যেখানে পারমাণবিক বোমা কেইস সল্ভ করতে গেছিলো ওইখানে বোমা বিস্ফরণ হয়েছে। ওই জায়গাসহ,পাশের আরও কিছু এরিয়া ধ্বংস হয়ে গেছে।কেউ বেঁচে নেই আর,বাঁচা তো দূর মানুষ,প্রাণীদের কঙ্কালও খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
ফায়ার সার্ভিসসহ আরও অনেক টিম কাজ করছে,যদি কারোর লাস পাওয়া যায়।আয়মান স্যার আর নেই নিমু,উনিও ওখানেই ছিলেন।

কথাটা শুনতেই আরিয়ার হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো,একটা চিৎকার দিয়েই সেন্সলেস হয়ে গেলো।ভাগ্যিস বিছানার ওপরে বসে ছিল,তাই আঘাত পায়নি আরিয়া।ফোনের ওপাশ থেকে রোজও বুঝে গেছে এতক্ষণ ওর সব কথা নিমু নয় আরিয়া শুনেছে। বিপদ আঁচ করতে পেরে সব রেখে দ্রুত কার নিয়ে রওয়ানা দিলো রোজ।
কিছুক্ষণ পরে আয়মানের ফ্ল্যাটে নক করলে কোনো সাড়াশব্দ পেলোনা রোজ।দরজায় হাল্কা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেলো,মানে খোলাই ছিল।রোজ হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে গিয়ে দেখলো নিমু বিছানায় বসে নিজের কোলের ওপর আরিয়ার মাথা রেখে ডাকছে,আরাফাত চোখেমুখে পানি ছেটাচ্ছে,হিমু হাত-পা ঘষছে।
আরাফাত আর হিমু ডেটিং এ গেছিলো,মানে শহর ঘুরাঘুরি আরকি।নিমুর কল পেয়ে ওরা ছুটে এসেছে,নিমু রোজকেও কল দিয়েছে অনেকবার কিন্তু রোজ ড্রাইভিং করছিলো বিধায় কল রিসিভ করতে পারেনি।নিমু তখন বাথরুমে থাকাকালীন হঠাৎ আরিয়ার চিৎকার শুনে দ্রুত রুমে এসে দেখে আরিয়া অচেতন অবস্থায় পরে আছে, তখনই নিমু সবাইকে কল করে।
নিমু সাধারণত আরিয়াকে একা থাকতে দেয়না,কেউনাকেউ সঙ্গে থাকবেই। কিন্তু আজ সকালে অহনা জরুরি এক কাজে বাড়ি চলে গেছে।
রোজ কে দেখে নিজের কোল থেকে আরিয়ার মাথা ধীরেসুস্থে নামিয়ে রোজের সামনে এসে দাঁড়ালো।রোজ অসহায় আর চিন্তিত চোখে তাকিয়ে আছে নিমুর দিকে।

— তখন আরু কে কি এমন বলেছো যে আরু সেন্সলেস হয়ে গেলো বলো।
দেখো আমি জানি তখন তুমি কল দিয়েছিলে আর আরুর সাথে কথা বলছিলে।

— আআসলে নিমু… (রোজ সবটা খুলে বললো)

— আগে আগে সব বলতে কে বলেছে তোমায়,তুমি নাকি পুলিশ অফিসার।এই তার নমুনা,আগে ভয়েস শুনবেনা কে কল রিসিভ করেছে (রেগে)

— নিমু,আরিয়ার হাত-পা ক্রমশ ঠান্ডা হয়ে আসছে ( আরাফাত)

— নিমু,এসব কথা পরে হবে আগে আরিয়াকে হসপিটালে নিয়ে যাওয়া দরকার, ইট’স ইমিডিয়েটলি।


হসপিটালে অটিতে নেওয়া হয়েছে আরিয়াকে,ইমিডিয়েটলি সিজার করতে হবে।তানাহলে মা-বাচ্চা কাউকেই বাঁচানো পসিবল না।প্রেশেন্ট একপ্রকার ব্রেইন স্টক করেছে,সে এমনকিছু দেখেছে বা শুনেছে যেটা তার ব্রেইন মেনে নিতে পারেনি।
প্রেশেন্ট কুমায়ও চলে যেতে পারে,আবার নাও যেতে পারে।সব আল্লাহর ওপরে, এমনটাই জানিয়েছে ডাক্তার।
অটির বাইরে আরাফাত,রোজ,রাহুল,শান,প্রীতম,মাইনুল,নাঈম পায়চারি করছে (এরাও অফিসার, আয়মানের আন্ডারে কাজ করে)
নিমুতো কাঁদতে কাঁদতে অলরেডি ১বার সেন্সলেস হয়ে গেছিলো,হিমু নিমুকে সামলাচ্ছে। অহনাকেও ইনফর্ম করা হয়েছে, ও ইতিমধ্যে রওয়ানা দিয়ে দিয়েছে….

To be continue….

((

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here