Different Love পার্ট ১৫

0
1668

Story:- #Different_Love
Writer:- গল্পছোঁয়া
Part:- 15

— ঘুমাও,কালকে আর্লি মর্নিং উঠতে হবে।
সকালেই রওনা দিব আমরা।

— কিন্তু হঠাৎ ওগুলো কথা…

— কিছুনা,এমনই বলছিলাম।


ভোরে দুজনেই ফজরের নামাজ শেষে আবার সুয়ে পড়লো,আয়মান আরিয়া কে বুকে টেনে নিলো।

— আরিয়া

— হুম

— শেষবারের মতো তোমাকে কাছে পেতে চাই,নিজের সাথে মিশিয়ে নিতে চাই।তুমি কি সেই অনুমতি দিবে??

— শেষবারের মতো মানে? (সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে)

— না,মানে আজকেই তো ব্যাক করব।এরপর তো একসঙ্গে থাকা হবে না। তো কেন আই??

আরিয়া লজ্জা পেয়ে আয়মানের বুকে মুখ গুজলো।
আরও একবার মিলন হলো তাদের।আরিয়া এখন ঘুমোচ্ছে আর আয়মান এক্সারসাইজ করছে রুমের ভেতরেই।
সকাল ৮টার দিকে আরিয়ার ঘুম ভাঙলে নিজের পাশে আয়মানকে না পেয়ে, নিজেকে চাদরে ঢেকে উঠে বসলো।
এবার দেখতে পেলো আয়মান কে,পুশআপ দিচ্ছে সে।
আরিয়া আবারও ক্রাশড,উফফ এই লোক কে দেখলে আরিয়া বারবার প্রেমে পরে,ক্রাস খায়।
আয়মানের মাসাল ওয়ালা সিক্সপ্যাক তো আরিয়ার সবচেয়ে পছন্দের,সবই ঠিক আছে। কিন্তু আয়মানের উন্মুক্ত পিঠে আরিয়ার দেওয়া খামছির দাগ স্পষ্ট।মুচকি হাসলো আরিয়া।


আজ ২মাস হয়ে গেলো,আয়মানের কোনো খবর নেই।
সেইযে আরিয়া আর নিমুকে হোস্টেলে পৌঁছে দিয়ে গেলো,এরপর আর আয়মানের দেখা পায়নি আরিয়া।কোথায় সে,জানেনা আরিয়া।
রোজকেও জিজ্ঞেস করেছে,কিন্তু তার উত্তর সে জানেনা আয়মান কোই।ওইদিন অফিসে গিয়ে কিছু ফর্মালিটি কম্পিলিট করে বাসায় ফিরে যায় আয়মান, এরপর থেকেই সে গায়েব।
আরিয়া বেশ বুঝতে পেরেছে,এটা আয়মানের আগেরই প্ল্যান। তাইতো ওইদিন ওরকম ভাবে কথা বলছিলো।
হোস্টল অবধি পৌঁছে দিয়ে চলে যাবার সময়ে আয়মান আবারও বলেছিলো ❝আমি না ফিরলে নতুন কাউকে বিয়ে করে নিও,সুখি হবে।আর হ্যাঁ,অপেক্ষা করনা আমার জন্য।❞ কথাটা ব’লেই আয়মান একমুহূর্ত না দাড়িয়ে চলে গিয়েছিল।
আসলে রোজ জানে,আয়মান কোই আছে। কিন্তু আয়মানের নিষেধ থাকায় রোজ সত্যিটা বলতে পারছে না আরিয়াকে।
এদিকে আরিয়ার অবস্থা খারাপ,ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া করেনা সে।নিমুই জোর করে যা খাওয়ায় আরকি।
আজকে ক্লাস টেস্ট ছিলো,নিমু একপ্রকার জোর করেই আরিয়াকে নিয়ে যায়।
কিন্তু ক্লাসে ঢোকার সময় হঠাৎই আরিয়া সেন্সলেস হয়ে যায়।কলেজের পাশেই হসপিটাল,নিমু-আরাফাত আরও দুজনের সহায়তা নিয়ে আরিয়াকে হসপিটালে নিয়ে গেলো।
ডাক্তার চেকআপ করছে,নিমুর তো ভীষণ টেনশন হচ্ছে আরিয়ার জন্য।নিজের প্রতি কোনো যত্ন নেই,নাওয়াখাওয়াও ঠিকমতো করেনা।যার ফলাফল বমি হয়,আর আজকে সেন্সলেস হওয়া।
আরিয়ার বাবা-মা এসব বিষয়ে এখনো জানেনা,নিমু বলেনি ল।আরিয়াও চায়না ওর বাবা-মা চিন্তায় পরে যাক।
এদিকে আরাফাতের ভীষণ রাগ হচ্ছে আয়মানের ওপর,আজ ওর জন্যইতো আরিয়ার এই অবস্থা।
সে নাকি আইনের লোক,রেসপনসেবলিটি নিয়ে ভীষণ পসেসিভ সে।কিন্তু আরিয়ার বেলায় এমন কেন,আরিয়াতো তার বিবাহিত বউ।আরিয়া কি তার রেসপনসেবলিটি নয়??

— পেশেন্টের হাজবেন্ড কোই?? (ডাক্তার)

— কেন,ডাক্তার আন্টি? (নিমু)

—অতিরিক্ত মেন্টালি প্রেশার আর খাবারের অনিয়মের জন্য সেন্সলেস হয়ে গেছিলেন উনি। এই অবস্থায় মেয়েটার এতো টেনশন নেওয়া একদম উচিত না।
যথাসম্ভব টেনশন ফ্রী ও হাসিখুশি থাকতে হবে।ঠিকমতো হেল্দি খাবার খেতে হবে।নাহলে মা আর বাচ্চা দুজনেরই ক্ষতি।

— মা বাচ্চা মানে,আরিয়া কি? (নিমু অবাক হয়ে)

— সি ইজ প্রেগন্যান্ট,৬সপ্তাহ চলছে ওনার।
কেন,আপনারা কি জানতেননা?

— ননা মানে, আসলে..

— নো প্রবলেম,পেশেন্টের হাজবেন্ড কে বলে দিবেন এখন থেকে ফুললি কেয়ারফুলি রাখতে।ঠিকমতো হেল্দি খাবার খাওয়াতে,আর মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট পেশেন্ট যেন আর কোনোরকম মানসিক চাপ না নেয়,খেয়াল রাখবেন।এক্সকিউজ মি (ডাক্তার চলে গেলেন)

নিমু আর আরাফাত তো অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে,হাত-পা কাঁপুনি দিচ্ছে।
এটাই হওয়ার বাকি ছিল এখন,আরিয়া আর আয়মানের বিয়ের ব্যাপারে তো কেউ-ই জানেনা।আর সবচেয়ে বড় কথা হলো আয়মান নিখোঁজ,এই বাচ্চার কথা জানাজানি হলে তখন কি হবে।সমাজ তো অবৈধতার ট্যাগ লাগিয়ে দেবে,আর আরিয়ার বাবা-মা?? তারা জানলেতো আত্মহত্যা করবে।

নিমু কাপাকাপা হাতে ব্যাগ থেকে নিজের ফোনটা বের করে রোজকে কল দিয়ে সবটা খুলে বললো।কল কেটে মাথায় হাত দিয়ে বেডের সাইডের চেয়ার টেনে বসে পড়লো নিমু,আরাফাত ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।

— এবার কি করবো আরাফাত,আমার মাথা কাজ করছে না।
আয়মান ভাইয়াতো আরুকে নিজের স্ত্রী বলে এক্সেপ্টই করেনও,আর সেতো এখন নিরুদ্দেশ। কি হবে এবার, আঙ্কেল আন্টি জানলে কি হবে ভেবে দেখছিস

— আমার মাথা কাজ করছেনা,কি করবো।
আচ্ছা আরু তো ঘুমোচ্ছে, ঘুমের মেডিসিন দেওয়া আছে।
এবোর্শন করালে কেমন হয়??

— কি যা-তা বলছিস,এই অনাগত বাচ্চাকে মেরে ফেলার কথা বলছিস কি করে তুই ?

— তাছাড়া কি বলবো বল,এই প্রেগ্ন্যাসির কথা আজ বাদে কাল সবাই জেনে যাবে।তখন আরু কাউকে মুখ দেখাতে পারবে??

— ঠিকই বলছিস, কিন্তু…

আরিয়ার ঘুম অনেক্ষন আগেই ভেঙেছে,অতিরিক্ত টেনশনে ঘুমের ওষুধেও আজকাল ঘুম আসতে চায়না তার।এতক্ষণ বলা কথাবার্তা সবই শুনেছে ও।
আরাফাতের কথা শুনে আর চুপ থাকতে পারলোনা আরিয়া।

— বেস অনেক হয়েছে, শোন তোরা।আমার বাচ্চা কে আমি পৃথিবীতে আনবো,একাই বড় করবো ওকে।সমাজের কথায় কিছু আসেযায়না আমার।
এই বাচ্চা যে আয়মানের স্মৃতি, তার অংশ।
আয়মান আমার পাশে সশরীরে না থাকলেও এই বাচ্চার মাধ্যমে আছে। আমি এই বাচ্চা কে কখনও নষ্ট করবোনা,জন্ম দিব ওকে।

— আরু,তুই তাহলে জেনে গেছিস সব।
আরু ভেবে দেখ,কিকরে একে পৃথিবীতে আনবি তুই। আঙ্কেল আন্টি,সমাজ,পৃথিবীর চোখে তুই অবিবাহিত মেয়ে।এই বাচ্চার কথা জানতে পারলে আঙ্কেল আন্টির কি হবে ভেবে দেখেছিস??

— আমি জানি আমি কি করছি,আব্বুআম্মু কখনও এই বাচ্চার কথা জানবেনা।আমি ভেবে নিয়েছি কি করবো,শোন…. (আরিয়া আরাফাত আর নিমুকে নিজের প্ল্যানিং টা বললো)

— গ্রেট আরু,কিন্তু যদি সাকসেস না হোস? (আরাফাত)

—আর তোর যা হেল্থ কন্ডিশন?

— এতদিন তো জানতাম না,আয়মানের অংশ আমার গর্ভে বেড়ে উঠছে।এখন জেনেছি,আর হেলাফেলা নয়।
এখন থেকে আমার আয়মানের অংশ,আমাদের বেবির জন্য নিজের ফুল কেয়ার করবো আমি।ওকে সুস্থ ভাবে পৃথিবীতে আনবো,সিঙ্গেল মাদার হয়েই ওকে বড় করবো দেখে নিস তোরা।

—- আমরা তোর পাশে আছি অরু। (আরাফাত+নিমু)

আরিয়ার হাতে স্যালাইন চলছে,ঘন্টাখানেক পরেই রিলিজ দেওয়া হবে।নিমু আরাফাত চেয়ার টেনে বসে আছে,কিছুক্ষণের মধ্যেই রোজ এসে উপস্থিত হলো।
রোজও শক খেয়েছে,আরিয়ার সাথে কুসল বিনিময় করে নিমুকে ডেকে বাইরে আসলো রোজ।

— এটাই হওয়ার বাকি ছিল,আরিয়াকে যদি আগেই বলতাম তাহলে আরিয়া কিছু একটা করে আয়মান স্যার কে ফিরিয়ে আনতো।তুমি কেন নিষেধ করলে আরিয়া কে বলতে??

— আমি কি জানতাম নাকি আরু প্রেগন্যান্ট, আমি তো রাগে বলছিলাম এটা।
আয়মান ভাইয়া কিভাবে পারলো আরু কে এভাবে ফেলে যেতে,বউ আগে নাকি প্রফেশন।
আরুকে যদি বউ হিসেবে না-ই চায়,তাহলে ফিজিক্যালি গেলো কেন।

— এবার কি করবো,স্যার তো আফ্রিকা তে।
পরশুদিন লাস্ট কথা হয়েছিল,ঠিকঠাক কনটাক্টট হয়না,মাসে ১দিন কনটাক্ট করতে পারি।এবার আর পারবো কিনা জানিনা,সিক্রেট মিশনে গেছে।ভীষণ ড্যান্জারাস,জীবন নিয়ে বেঁচে ফিরতে পারলে হয়।পারমাণবিক বোমা কেস বুঝছো

— এখন কি হবে,আমার মাথা কাজ করছেনা।আরিয়া কি বলেছে জানো (নিমু আরিয়ার প্ল্যান খুলে বললো)

— এটা কি ধরনের বাচ্চামি আইডিয়া,এগুলো সিনেমাতেই মানায়।বাস্তবে না,বাস্তব টা খুবই কঠিন।এসব ননসেন্স মার্কা প্ল্যান বাদ দাও।

— কিন্তু বাই এনি চান্স যদি সাকসেস হতে পারি তাহলে কোনো চিন্তা থাকবে না।
তুমি তো আছোই,একবার চেষ্টা করতে ক্ষতি কি বলো।

— ঠিক আছে,যা ভালো বুঝো করো।
আয়মান স্যার এর ফ্ল্যাটের চাবি আমার কাছে,আজকেই হোস্টেল ছেরে তোমরা দুজনেই স্যার এর ফ্ল্যাটে উঠবে।
আরিয়ার বাড়িতে কল করে বলে দিও,যে আমি তোমাকে ফ্ল্যাট দিচ্ছি,তুমি আর আরিয়া ওখানেই থাকবে।অকারণ হোস্টেলে থেকে টাকা উড়ানোর কি দরকার।

— ওকে,এটাই বলি তাহলে।
আর আঙ্কেল আন্টি ও আব্বুআম্মু কালকেই আসবে।অনেকদিন দেখা হয়নি,তো ওনাদের কালকেই সব বলবোনি।
আরিয়ারতো সবে দেড়মাস চলছে, বুঝতে পারবেনা কেউ।

— ওকে,তাহলে কালকেই চলে আসো।
আর আরিয়ার খেয়াল রেখো,কালকে আঙ্কেল আন্টিরা যেন কিছু বুঝতে না পাটে,ওনাদের জহুরির চোখ।একটা ক্লু পেলেই কিন্তু সন্দেহ করবে।

— হুম,আমরা ম্যানেজ করে নিব।
তুমিতো আছোই,আশা করছি কোনো প্রবলেমস হবেনা……

To be continue…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here