Different Love পার্ট ১৪

0
1672

Story:- #Different_Love
Writer:- গল্পছোঁয়া
Part:- 14

—এখন থেকে আমাকে আপনার সাথে থাকতে দিবেন তো??

— ঘুমাও,অনেক রাত হয়েছে।

— কিন্তু…

—হুসস,কোনো কথা না।ঘুমিয়ে পরো।


ভোর ৪ঃ৪৫,বৃষ্টির বেগ কমে গেছে,ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হচ্ছে।আরিয়ার জ্বরও নেই আর।
আরিয়ার ঘুম ভাঙতেই দেখলো আয়মান নিজের কপালের ওপর এক হাত রেখে,চোখ বন্ধ করে বেডে হ্যালান দিয়ে শুয়ে আছে।
আর সে আয়মানের বাহুডোরের আছে,দুটো হাই তুলে আরিয়া বললো..

— গুড মর্নিং?

— (নো রেসপন্স)

— হেই,হ্যালো

আরিয়া বারকয়েক ডাকার পরেও আয়মানের কোনো রেসপন্স পেলোনা,এবার ও আয়মানের গলায় জড়িয়ে ধরলেই আয়মান হুসে আসে।তাকিয়ে দেখে আরিয়া জেগে গেছে।

— তুমি উঠে পরেছো,আসো ফ্রেশ হওয়া দরকার।তারপর একসঙ্গে ফজরের নামাজ পড়ে নিব।

— আপনি কি কোনো বিষয়ে চিন্তিত??

— হঠাৎ?

— অনেক্ষন ধরে ডাকছি,রেসপন্স দিচ্ছেন না।আবার আপনার ভয়েসটাও কেমন জানি লাগছে।কি হয়েছে বলুন।

— (কি বলবো তোমাকে বলো আরিয়া,গতরাতে আবেগের বসে বিরাট বড় একটা ভুল করে ফেলেছি।এটা করা একদমই উচিত হয়নি আমার,আমি তো চেয়েছিলাম তুমি আমাকে ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করো।আমি নাহয় আমৃত্যু দূর থেকেই ভালোবাসবো,আমার ভালোবাসাটা অন্যরকম,চাইলেও প্রকাশ করতে পারবোনা।It’s #Different_Love
কিন্তু গতরাতে যেটা হলো এটা হওয়া একদম উচিত হয়নি,আমি কি করে এতো বড় ভুল করতে পারলাম।
এখানে একটা মিশনে এসেছি,সাকসেস হলেই আমায় ৬বছরের জন্য আফ্রিকায় যেতে হবে,জানিনা আদৌও বেঁচে ফিরতে পারবো কি-না।)

বুকে গরম তরলের ছোঁয়া পেয়ে ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলো আয়মান।দেখে আরিয়া ওর বুকে মাথা রেখে কান্না করঢ়ে,চিন্তিত হয়ে গেলো আয়মান।

— কি হয়েছে আরিয়া,কাঁদছো কেন তুমি?
এনি প্রবলেম??

— আপনি বারবার কোই হারান,জানেন কতো খুঁজেছি আপনাকে।
বিশ্বাস করুন আপনার প্রফেশন নিয়ে আমার কোনো প্রবলেম নেই,প্লিজ আমাকে ছেড়ে আর যাবেননা।আমি অনেক ভালোবাসি আপনাকে,যা হবার হোক, যতদিন বাচবো,আপনার ওয়াইফের পরিচয়ে বাঁচতে চাই।

— মুখে অনেক কিছুই বলা যায়,কিন্তু বাস্তবতা টা অনেক ভিন্ন আরিয়া।
আজ আবেগের বসে তুমি অনেককিছুই বলবে, কিন্তু বাস্তবে পারবে না।

— এভাবে বলছেন যে,আবার আমাকে ছেড়ে যাওয়ার প্ল্যান করছেন তাইনা??

— (ভুল যখন করেই ফেলেছি,সেটাতো সংশোধন করতে পারবোনা।এ কয়দিন তোমাকে নিজের করেই রাখি না হয়,কোনো কষ্ট পেতে দেবনা তোমাকে)

— হেই,আবার কোই হারালেন??
আমাকে তো ভালোবাসেননা তাইনা,এমন তো করবেনই।গতরাতে মনে হয় ভুল করে আমার সংস্পর্শে এসেছিলেন আর এখন পস্তাচ্ছেন এম আই রাইট??
ওকে নো প্রবলেম,আপনাকে কিছু বলবোনা আমি।আমি কিছু মনে করিনি,কজ আপনি আমার স্বামী।আপনি আমাকে বউ হিসেবে না মানলেও আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মানি।মৃত্যুর আগে অবধি তা-ই মানবো,যেদিন থাকবোনা সেদিন বুঝবেন।
অবশ্য আপনার কোনো টেনশন নেই,যত চিন্তায় থাকি মনে হয়না বেশিদিন বাচবো।
কেউ আসবে না আর ভালোবাসার দাবি নিয়ে,মরে গ.. (আর বলতে পারলোনা আরিয়া,তার আগেই ওর ঠোঁট আয়মানের ঠোঁটের দখলে)

ধীরেধীরে স্পর্শ গভীর থেকে গভীর হতে লাগলো,ডুব দিলো তারা ভালোবাসার সাগরে।
১ঘন্টা পর..
আয়মান আর আরিয়া দুজনেই শাওয়ার নিয়ে,অযু করা ফজরের নামাজ আদায় করে নিলো।আরিয়ার নরাচরা করতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে,কোমড়ের নিচের দিক থেকে মনে হয় অবস হয়ে আছে। হাঁটতেও পারছে না ভালো করে,রেজাল্ট খুরিয়ে খুরিয়ে হাঁটতে হচ্ছে তাকে।
আরিয়া কিচেনে যেতে চেয়েছিলো,কিন্তু আয়মানই বারন করেছে।এঅবস্থায় যাওয়ার দরকার নেই, আরিয়া গুটিশুটি মেরে বিছানায় সুয়ে আছে।আয়মান মোটামুটি রান্না জানে,সবধরনের ট্রেইনিংই নেওয়া আছে তার।
আপাতত আরিয়ার জন্য ভেজিটেবল স্যুপ আর নুডলস,জুসও রয়েছে।
নিজের জন্যও সামান্য, নামে মাত্র অয়েল দিয়ে ভেজিটেবল স্যুপ করেছে।
সব রেডি করে টেবিলে রেখে রুমে গিয়ে দেখলো আরিয়া ঘুমিয়ে আছে,ঘুমোবেইব না কেন।সারারাত ঘুম হয়নি,আয়মানেরও ঘুম পাচ্ছে কিন্তু সময় নেই।রোজ আসলেই তাদের বেরোতে হবে।
আয়মান আরিয়াকে ডাকলে কিছুক্ষণের মধ্যেই আরিয়া জেগে গেলো,উঠে বসতে যাবে তখনই পেট চেপে মৃদু আর্তনাদ করে উঠলো।
আয়মান ব্যাপার টা বুঝতে পেরে কোনো কথা না বলে ডাইরেক্ট আরিয়াকে পাজাকোলে নিয়ে ডায়নিং টেবিলের চেয়ারে বসালো।
নিজ হাতে ওকে খাইয়ে দিলো।একটা পেইন কিলার খাইয়ে রুমে নিয়ে গিয়ে আবারও সুয়ে দিলো,তারপর নিজেও স্যুপ খেয়ে জুস খেয়ে নিলো।
৭ঃ৩০বাজে,এখনও রোজ নিমু আসেনি।আয়মান কল করলে রোজ বললো সাড়ে দশটার মধ্যে চলে আসবে,আয়মান গিয়ে আরিয়ার পাশে সুয়ে আরিয়াকে বুকে টেনে ওকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।একটু ঘুম প্রয়োজন তার,নাহলে ব্রেইন স্ট্রং থাকবে না।


আরিয়ার ঘুম ভাঙলে তাকিয়ে দেখে ওর মাথার কাছে নিমু বসে আছে,মোবাইল টিপছে আর মৃদু মুচকি হাসছে।
আরিয়া সোয়া থেকে উঠে বসতে বসতে বললো…

— কিরে,তুই কখন আসলি?

আরিয়ার সাউন্ড পেয়ে নিমু আরিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখে আরিয়া উঠে বসার চেষ্টা করছে।নিমু বেডের সাথে বালিস রেখে, আরিয়াকে ধরে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিলো।

— আরে ইয়ার,এতো ছটফট করিস কেন?
খুব কি ব্যথা করছে, পেইন কিলার খাইছিস?

বাহ্,কি সুন্দর।নিমু একদম ডন্টকেয়ার ভাব নিয়ে প্রশ্ন করে যাচ্ছে আর এদিকে আরিয়ার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে।
হ্যাঁ, তারা দুজনে বেস্টফ্রেন্ড।একে-অপরের সাথে এমন কোনো কথা নেই যেটা শেয়ার করে না,নেগেটিভ সাইডও।
কিন্তু আজকে নিজের বেলায় এটা বলতে অটোমেটিক লজ্জা লাগছে।

— কিরে,এনি প্রবলেম??
গরম পানি আনবো?

— ননা মমানে ওই আ..

— থাক বনু,লজ্জা পাইতে ওইবোনা।আমি জানি সব,আমার সাথে কথা বলতে লজ্জা কিসের।পেট ব্যথা করছে নাকি,গরম পানির ছ্যাঁক দিলে কমে যাবে, আনবো কি?

— হুম,একটু ব্যথা করছে।
আনতে হবে না,কখন আসলি তোরা আর উনি কোই?

—১১টার দিকে আসছি,আমরা আসতেই আয়মান ভাইয়া আর রোজ রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলো,কেস নিয়ে নাকি কি একটা ইম্পর্ট্যান্ট ক্লু পেয়েছে।

— ওওও

— আজ থেকে আমায় একা ঘুমোতে হবে (মন খারাপ করে নিমু)

— কেন

— ওললে বাবুুলে,তুমি তো এখন থেকে নিজের বরের সাথে থাকবে আর আমি একা।বিয়েতো করিনি, আফসোস

— রোজ ভাইকে বলবো নাকি রে,আজকেই বিয়ে করে একসাথে থাকতে (আরিয়া হাসতে হাসতে)

— চুপ যা,শয়তান (মুখ ভেংচিয়ে)


চারদিনের দিন রাত আজ,কালকেই আবার রাজশাহী ব্যাক করবে ওরা।
একয়দিন তারা আর ৫টা সাধারণ স্বামীস্ত্রীর মতোই কাটিয়েছে,আরিয়াতো ভেবেই নিয়েছে এখানে থেকে ফিরলেই আয়মানকে নিয়ে নিজের বাবা-মার কাছে যাবে।
হ্যাঁ,আরিয়ার বাবা-মা পুলিশের চাকরি পছন্দ করেনা,কিন্তু একটু বুঝিয়ে বললে ঠিকই মানবে,আয়মান সবদিক দিয়েই বেস্ট।আয়মানকে অপছন্দ করার মতো কোনো অপশন নেই।
আরিয়া এই বিষয়ে আয়মানের সাথে প্ল্যানিংও করেছে,প্রতিত্তোরে আয়মান কিছুই বলেনি।এড়িয়ে গেছে সবসময়,এবার শুধু ফেরার পালা।
আরিয়া বিছানায় উপর হয়ে সুয়ে সুয়ে আয়মান কে দেখছে,আর আয়মান রিভলবারে বুলেট লোড করছে।
কেস সল্ভ হয়ে গেছে, সাকসেসফুল ভাবেই।ফোর্সেরা ক্রিমিনাল দের নিয়ে গেছে আগের দিন।
আয়মান গান লোড করে ড্রয়ারে রেখে দিলো,তারপর ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো।
আরিয়া তো ভীষণ এক্সাইটেড,কালকেই সে আয়মান কে নিয়ে রাজশাহী ফিরবে। তারপরেরদিন বাড়িতে গিয়ে সবাইকে বলবে।
কিন্তু আদোও কি আরিয়ার ইচ্ছে পূরণ হবে।এতো খুশি সইবে তো তার কপালে? দেখা যাক কি হয়।
আয়মান ফ্রেশ হয়ে এসে আরিয়াকে বুকে জড়িয়ে সুয়ে পড়লো,কিছু একটা ভেবে বললো..

— আচ্ছা আরিয়া,যদি কখনো আমাকে খুজে না পাও তুমি কি আমাকে ভুলে যাবে??

— হঠাৎ এসব কেন বলছেন, আপনাকে খুঁজে কেন পাবোনা।মানেটা কি,আপনিকি আবারও আমাকে ছেড়ে চলে যাবেন ?

— আমার যা প্রফেশন,জীবন বাজি রেখে কাজ করতে হয়।
কখন কি হয় বলাতো যায়না,সাপোচ ধরো হঠাৎ করে আমি হারিয়ে গেলাম।আমাকে খুঁজে পেলেনা তখন কি করবে??

আরিয়া আয়মান কে শক্ত করে ধরে কান্না করছে।

— কেঁদো না আরিয়া,আমি না থাকলে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিও।সুখি হবে তুমি, আমার আশায় থেকোনা বুঝলে।আমি যদি না ফিরি,ভেবে নিও আমি আর নেই।

আরিয়া আয়মান কে জড়িয়ে এবার হুহু করে কেঁদে দিলো..

— আমি সারাজীবন আপনার জমা ওয়েট করবো,আপনি ফেরার জন্য।
তবুও আমার জীবনে আপনি বিনা ২য় কেউ আসবেনা,আমি আমার সবটা দিয়ে শুধু আপনাকেই ভালোবাসি।এই মনে আর কারোর জায়গা হবে না।

— আবেগ,কল্পনা আর বাস্তব আলাদা।

— আমার ওপর বিশ্বাস রাখতে পারেন,আমাদের বিয়ের আড়াই বছর অপেক্ষা করেছি শুধু আপনার জন্য।অনেক ছেলেই আমায় প্রপোজাল দিয়েছে, আমি রিজেক্ট করেছি।কারণ আমি শুধু আপনাকেই ভালোবাসি, এতদিনেও আমায় চিনলেননা।

— সাপোস ধরো,তোমার বাড়ি থেকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো তখন কি করবে?

— পালিয়ে যাব বাড়ি থেকে,আর আপনিতো আছেনই।

— পাগলি মেয়ে

— আচ্ছা এসব কথা আসছে কেন বলুনতো,পরশুদিনই তো আপনি আমি আমাদের বাসায় যাব তাইনা,বাড়ি থেকে সবার মত,দোয়া,ভালোবাসা নিয়ে আবার বিয়ে করবো।

— ঘুমাও,কালকে আরলি মর্নিং উঠতে হবে…

To be continue….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here