অনন্যময়ী
সানজিতা_তুল_জান্নাত
পর্ব_১৯
দরজা খুলে চৌকাঠ পেরিয়ে বাইরের দিকে পা বাড়ায় অনি রিশাদ। হালকা ঠান্ডা বাতাস তাত শরীর মনে শিহরণ জাগিয়ে দেয়। আবেশে তার শরীরটা কেপেঁ ওঠে। রিশাদ অনির কাঁপুনি অনুভব করতে পেরে তাকে আরো জোরে আঁকড়ে ধরে। ধীরে ধীরে অনি রিশাদকে নিয়ে সামনের বাগানের দিকে এগিয়ে যায়।
ভোরের মৃদু আলোয় কুয়াশার চাদর ভেদ করে এক পা দু পা করে বাগানের আসে। বাগানের পাশেই বসার জন্য দুটো বেঞ্চ রাখা। অনি রিশাদকে ধীরে ধীরে বসিয়ে দেয়। হালকা ঠান্ডা বাতাসে অনি জড়সড় হয়ে রিশাদের পাশে বসে পড়ে। রিশাদ আড়চোখে অনিকে দেখে।
অনি চুপচাপ বাগানের সতেজ প্রাণবন্ত ফুল গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকে। ফুলের পাপড়ি জিড়ে বিন্দু বিন্দু কুয়াশা জমেছে। পাখিদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। আশে পাশে কোথাও থেকে এক অজানা পাখির সুর ভেসে আসছে। বাড়ির মেইনগেটের ফাঁক দিয়ে দু একটা গাড়ি চলতে দেখা যাচ্ছে। নীরবতার চাদর ভেদ করে একটু পর পর ডেকে উঠছে এক জোড়া কাক। এই শান্ত নিরিবিলি পরিবেশে এই ডাকটা অনির কাছে বিদঘুটে লাগছে। তার শান্তি ভঙ্গ হচ্ছে। মুখটা কুঁচকে ফেলে অনি। রিশাদ অনির সাথে টুকটাক কথা বলে। অনি নির্বিকার ভঙ্গিতে কথা গুলোর জবাব দেয়।
দোতলার জানালার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে এক জোড়া শুষ্ক চোখ অনি রিশাদের দিকে স্থির ভাবে তাকিয়ে আছে। তার দৃষ্টিতে সীমাহীন শূন্যতা। সামনের মানুষটি তার জীবনে মরীচিকা মতো। চোখের সামনে থাকা সত্ত্বেও তাকে ধরার অনুমতি নেই।
খুব ভোরবেলা উঠে পড়তে বসার অভ্যাস মিথিলার। রোজকার মতো আজও এর অন্যথা হয়নি। জানালা ঘেষেই তার পড়ার টেবিল। বাইরের আলো আসার জন্য জানালার পর্দাটা সরিয়ে ফেলতেই মিথিলার চোখ জোড়া আপনা আপনি থেমে যায়। বাগানের বেঞ্চিতে এক জোড়া মানব মানবী কে বসে থাকতে দেখে তার বুকে চিনচিন ব্যথা অনুভব করে। চোখের সামনে ধীরে ধীরে সবটা ঝাপসা হয়ে আসছে। অশ্রু গুলো কেন তার কথা শোনে না। অবাধ্যের মতো না চাইতেও বেরিয়ে আসে। মন মস্তিষ্কের মধ্যে যেন এক বিশাল যুদ্ধ চলছে যেখানে বেহায়া মনটা বারবার জয়ী হয়ে অসহনীয় যন্ত্রণাগুলো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
মিথিলা নিজেকে সামলাতে পর্দা মেলে দিয়ে জানালাটা ঠাস করে লাগিয়ে দেয়। গাল বেয়ে অশ্রুগুলো গড়িয়ে পড়ে। অবাধ্য অশ্রুগুলোকে সামলে নিয়ে সে পড়ায় মনোযোগী হয়।
রিশাদ অপলক দৃষ্টিতে অনির দিকে তাকিয়ে আছে। অনি বিষয়টা লক্ষ্য করে নড়েচড়ে বসে। রিশাদের দিকে তাকাতেই রিশাদ তার চোখ সরিয়ে নেয়। অনি কিছু বলে না।
নীরবতা ভঙ্গ করে কোন ভনিতা না করে অনি রিশাদকে বলে; আপনার যদি সমস্যা না হয় একটু সামনের দিকে হাঁটতে যাবেন??
রিশাদ দ্বিধায় পড়ে যায়। তার পায়ের যা অবস্থা এই অবস্থায় তার কোথাও যেতে মন চাইছে না আবার অনিকেও না বলতে কোথাও যেন তার সংকোচ কাজ করছে।
-আচ্ছা ঠিক আছে চলুন।(রিশাদ)
রিশাদের কথার উত্তরে অনি মুচকি হাসি দেয়। রিশাদের মনে কোথাও ভালো লাগা কাজ করে।
অনি রিশাদকে ধরে ধরে বাইরের দিকে নিয়ে যায়। মেইন গেট খুলে রাস্তায় বের হয়। রাস্তাটা পুরোপুরি ফাঁকা। মাঝে মাঝে দু একটা গাড়ি চলছে। রাস্তার পাশের দু একটা চায়ের দোকানে দোকানিরা মাটির চুলায় আগুন জ্বালাচ্ছে চা বানানোর জন্য। ফুটপাত দিয়ে খুব বেশি লোকজনের আনাগোনা নেই। রাস্তার পাশের ছাউনিতে আশ্রয়হীন মানুষগুলো নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। অনি এই প্রথম এ ভাবে কাউকে ঘুমাতে দেখছে। কিছুটা অবাক হয় সে। অনির পা থেমে যায়। সে ফুটপাতের উপর ঘুমিয়ে থাকা মানুষটার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে।
রিশাদ কিছুটা আন্দাজ করতে পারে। অনিকে উদ্দেশ্য করব বলে; অবাক হচ্ছেন?? হাওয়ারই কথা। আপনক দুদিন হলো দেশে এসেছেন এই প্রথমবার দেশে এসেছেন। তাই এগুলো নতুন লাগছে আপনার কাছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মানুষ ম্যাডাম। আমাদের দেশে এমন অনেক মানুষ আছে যারা তিনবেলা খেতে পায় না। যাদের থাকার জায়গা নেই। এভাবেই চলছে আমাদের দেশটা। প্রতিনিয়ত আমরা এক ধাপ করে এগিয়ে যাচ্ছি। একটু ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা তবে ভবিষ্যতে ভালো কিছুর আশা রাখি আমরা।
অনি খুব মনোযোগ দিয়ে রিশাদের কথাগুলো বোঝার চেষ্টা করছে। এ দেশ সম্পর্কে এদেশের মানুষগুলো সম্পর্কে তার ধারণা কতটা সীমিত। তার জীবনটা যদি আর পাঁচটা স্বাভাবিক মানুষের মত হতো তাহলে হয়ত আজ তাকে নিজের দেশ ছেড়ে ভিনদেশে গিয়ে বাস করতে হতো না। সম্পর্কের ভুল বোঝাবুঝি গুলো আজ তার থেকে নিজের সব কিছু কেড়ে নিয়ে অচেনা অজানার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
রিশাদ অনিকে চুপচাপ থাকতে থেকে বলে;কি হলো ম্যাম আপনি কি এখানেই দাঁড়ায় থাকবেন নাকি সামনের দিকেও এগিয়ে যাবেন? আপনি দাঁড়ায় থাকলে থাকতে পারেন আমি আর দাঁড়ায় থাকতে পারছি না। অসহায় মুখ করে বলে রিশাদ কথা গুলো।
অনি হুম বলে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। অনির সাথে টুকটাক গল্প করছে রিশাদ। অনিও মাঝে মাঝে তার বিদেশে থাকার কথা গুলো বলছে।
রিশাদ অনিকে বলে; চলুন আজকে আপনাকে একটা স্পেশাল জায়গায় নিয়ে যাব। আমার পছন্দের জায়গা একটা।
অনি খুব আগ্রহ নিয়ে রিশাদের সাথে এগিয়ে যায়। কিছুদূর এগিয়ে এসে তারা একটা চায়ের দোকানের সামনে পৌঁছায়। ছোট একটা চায়ের দোকান। বেশ পরিপাটি দোকানটা। একটা ছাউনির নিচে দু তিনটে বেঞ্চ সজ্জিত। সাথেই ছোট টেবিল। বয়স্ক একজন লোক মাটির চুলায় চায়ের কেটলিতে পানি ভরছিলেন। রিশাদকে দেখেই লোকটা হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে আসে।
লোকটা রিশাদের হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ দেখে বলে; আরে রিশাদ বাবা! এই অবস্থা কেমনে হইল তোমার?
-এক্সিডেন্ট করেছিলাম কাকা। এখন ঠিক আছি। তোমার কি খবর বলো? আমাদের শিউলি ফুল কেমন আছে?
-তোমাগো সক্কলের দোয়ায় আল্লাহ আমগোর ভালোই রাখছে বাবা। শিউলি ফুল তো এইবার ইস্কুলে ফাশট হইছে বাবা। হের ইস্কুলের স্যার আমাগো বাড়িত আইছিল হেরে যেন আমরা বিয়া না দেই। হেরে যেন আরো পড়তে দেই। আমিও কইছি বাবা মাইয়াডারে আমি অনেক দূর লেখাপড়া করামু। হেই যতদূর পড়ব ততদূরই পড়ামু। হেসে হেসে কথা গুলো বলে বয়স্ক লোকটা।
অনি লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। লোকটার সব কথা সে বুঝতে পারছে আবার বুঝতে পারছে না।
রিশাদও হেসে হেসে বলে; হ্যা কাকা। শিউলি ফুল তো খুব ভালো মেধাবী। কোন সাহায্য লাগলে আমাকে বলবে কিন্তু। শিউলি তো আমার বোনের মতো। ওকে আমি খুব স্নেহ করি।
-হ বাবা ! তোমরা না থাকলে তো আমার শিউলি মা রে এত দূর লেখাপড়া করাইতেই পারতাম না। তোমাদের জন্যই হেই এদ্দূর আইতে পাইছে। তোমাদের ঋণ আমি কোনদিনও ভুলুম না।
-কি যে বলো না তুমি কাকা শিউলি তো আমারও বোনের মতো ওর জন্য এটুকু না করলে হতো। এসব কথা বাদ দাও এখন তুমি আমাদের তোমার স্পেশাল চা খাওয়াও। (রিশাদ)
লোকটি এবার অনির দিকে তাকিয়ে রিশাদের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। রিশাদ অদ্রিকে নিয়ে অনেকবার এই জায়গায় এসেছে। আজ হঠাৎ করে অনিকে দেখে সে হিসাব মেলাতে পারছে না।
রিশাদ লোকটার মুখের ভাব দেখে সবটা বুঝতে পেরে বলে; কাকা ইনি হলো অনন্যময়ী। আমার স্ত্রী। বিদেশে থাকে। এই কিছুদিন আগেই এসেছে।তোমার স্পেশাল চা খাওয়ানোর জন্য এনেছি। (রিশাদ)
লোকটা হাসি মুখে বলে; হ বাবা তোমরা একটু বসো আমি এক্ষুণি দিতাছি। বলেই তিনি চুলায় আরো বেশ কিছু কাঠের টুকরো ঢুকিয়ে জালটা বারিয়ে দেয়।
অনি রিশাদকে নিয়ে ছাউনির নিচে বসে। অনি কৌতূহলী দৃষ্টিতে রিশাদকে বলে; আচ্ছা উনি আপনাকে কি বললো? ওনার কথাগুলো আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না।
-ওহ আচ্ছা। আসলে ব্যাপারটা হয়েছে কি ওনার মেয়ে শিউলি এবার ক্লাস এইটে পড়ে। একদিন হুট করে আমার গাড়ির সামনে পড়ে। ভাগ্য ভালো ছিল আমি ঠিক সময়ে ব্রেক চাপি। মেয়েটা মাটিতে পড়ে যায়। ভয়ে সেন্স হারিয়ে ফেলে। আমি উঠিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাই। আপনি তো ডাক্তার আংকেলকে চেনেনই। আমি ডাক্তার আংকেলের কাছেই নিয়ে যাই। ওকে কিছু টেস্ট দেয়। মেয়েটা প্রথমে টেস্টগুলো করাতে চায়নি টাকার জন্য।আমি জোর করে টেস্ট গুলো করিয়ে আনি। তারপর ওকে ওর বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসি। সেখান থেকেই শিউলিকে আমার চেনা।
রিশাদ হাত দিয়ে চাওয়ালার দিকে ইশারা করে বলে ওই যে ওনাকে দেখছেন উনি তখন এরকম ছিলেন না। নেশা করা ছিল ওনার নিত্যদিনের সাথি। জুয়া খেলে সব টাকা শেষ করে দিত। শিউলির মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাত। নেশা করে এসে উনি শিউলর মাকে ধরব মারতও। শিউলিকে দেখে আমার বেশ মায়া হয়।
কয়েকদিন পর আমাকে ডাক্তার আংকেল ফোন দিয়ে বলে যে শিউলির ব্রেইন ক্লট হয়েছে। লাস্ট স্টেজ। এখনই অপারেশন না করলে মেয়েটার লাইফ রিস্ক হয়ে যাবে। আমি একটু চিন্তিত হয়ে যাই।
তারপর আমি ওদের বাড়ি গিয়ে শিউলির মাকে সবটা জানাই। উনি সবটা শুনে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। আমার অনেক খারাপ লাগে। এরপর আমি আর বাবা মিলে শিউলির অপারেশনের ব্যবস্থা করি। এখন সে পুরোপুরি সুস্থ। শিউলির বাবাও অনেকটা ভালো হয়ে যায়। এখানে চায়ের দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করে।
রিশাদের কথা শুনে অনির বেশ ভালো। কিঞ্চিত ভালো লাগার উদয় হয়। তবে সে সম্পর্কে অবগত নয় অনি। নিজের অজান্তেই মুচকি হাসি দেয় রিশাদের দিকে তাকিয়ে। অনির হাসিটা রিশাদের কাছে রহস্যময়ী লাগে। হা করে অনির দিকে তাকিয়ে থাকে। অনি ইতস্তত বোধ করে চোখ সরিয়ে নেয়।
কিছু বলতে যাবে অনি তার আগেই চাওয়ালা লোকটা দুই কাপ চা নিয়ে হাজির হয়। রিশাদ অনির হাতে চায়ের কাপ তুলে দেয়। কাপটা অনির কাছে অন্য রকম লাগে। মনে হচ্ছে মাটির তৈরি। কাপের উপর নিচটা ভালো করে দেখে নেয় সে।
এ ধরনের পরিবেশে এরকম কাপে অনি প্রথম বার চা খেতে চলেছে। দু এক বারের বেশি সে চা খায় নি।চায়ের রংটাও অন্য রকম লাগছে তার কাছে। মনে হচ্ছে মালাইয়ের পরিমাণ বেশি। খানিকটা সংকোচবোধ নিয়ে অনি চায়ের কাপে চুমুক দেয়। চা টা তার কাছে বেশ ভালোই লাগে। হালকা মিষ্টি চা মুখে নিলেই কেমন দানা দানা অনুভব হচ্ছে যা সাথে সাথেই মিলিয়ে যাচ্ছে। বেশ ভালো লেগেছে তার। চায়ের কাপে পুনরায় চুমুক দেয় অনি। বেশ তৃপ্তি নিয়ে খাচ্ছে সে।
রিশাদ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে অনির দিকে তাকায়। নিজের চা খাওয়া বাদ দিয়ে সে অনির চা খাওয়াটা যেন বেশি উপভোগ করছে। আড় চোখে বার বার সেদিকেই তাকাচ্ছে সে।
কিছুক্ষণ পর অনি রিশাদ চা খাওয়া শেষ করতেই রিশাদের মনে পড়ে তার সাথে কোন টাকা নেই। এমনিতেও রিশাদের থেকে টাকা নিতে চাওয়ালা আপত্তি করে তবুও রিশাদের কাছে হার মেনে যায়।
রিশাদ চাওয়ালাকে ইতস্ততভাবে বলে; কাকা আমি তো সাথে করে মানিব্যাগ আনি নাই পরে মিটিয়ে দিবো নি। বেশ লজ্জাজনক পরিস্থিতিতেই পড়ে সে।
চাওয়ালা বলে; কি যে কও না তুমি। আজ বউমনি রে নিয়ে আইছ আইজকে আমি এমনিও চা খাওয়ামু। ট্যাহ্যা দেওন লাগব না ।
রিশাদ অপ্রস্তুত হয়ে যায়। জোর করে একটা হাসি দেয়। এরপর তারা বাড়ির দিকে রওনা দেয়। অনির মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছে। হাসি মিশে আছে তার ঠোঁটের কোণায়। অনিকে হাসিখুশি দেখে রিশাদের মনটাও ভালো হয়ে যায়।
বাড়িতে ঢুকতেই শায়লা বেগম বলে ;কিরে কোথায় গেছিলি তোরা??
-এইত আম্মু একটু সামনের চায়ের দোকানের দিকে হাঁটতে বেরিয়েছিলাম।(রিশাদ)
-পায়ের এই অবস্থা তোর বলে যাবি তো নাকি? আয় নাস্তা করে নে। অনি তুইও আয় মা। (শায়লা বেগম)
অনি শান্ত গলায় জবাব দেয় হ্যা মামনি আসছি।
সকালের নাস্তা শেষ করে অনি রিশাদকে নিয়ে রুমে চলে যায়। রিশাদকে ওষুধ খাইয়ে সোফায় তার ল্যাপটপ টা নিয়ে বসে পড়ে সে। দুমাস পড়েই তার ভার্সিটি তে ফাইনাল এক্সাম। ভ্যাকেশনও শেষ হয়ে যাবে কয়েকদিনের মধ্যে। তার ফিরতে ফিরতেও প্রায় এক মাস সময় লাগবে। তাই সে কন্টাক্ট করে কিছুদিনের জন্য অনলাইনে ক্লাস করার আবেদন করে। ফ্রেন্ডদের সাথেও যোগাযোগ করে যেন তারা সব আপডেট অনিকে জানায়।
রিশাদ একটু পর পর অনিকে দেখছে। অনি গভীর মনোযোগ দিয়ে কাজ করছে। সে খুব বোর ফিল করছে। তাই দুচোখ বুজে ঘুমানোর চেষ্টা করে।
পৌনে এগারো টা বাজতে চলেছে। হিমাদ্রী এখনো ঘুম থেকে না ওঠায় রেহানা বেগম বার বার ডেকেই চলেছে। হিমাদ্রী কোন মতে উঠে বসে। তার চোখ জ্বলছে মাথাটা ভন ভন করছে। এটা তার কাছে একদম নতুন কিছু নয়। প্রায় প্রতিদিনই ঘুম থেকে ওঠার পর সে এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়। চোখ কচলাতে কচলাতে ওয়াশরুমে যায় হিমাদ্রী।
ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে রাফিকে খোঁজে কোথাও না পেয়ে সে ফোনটা হাতে নেয়। হোম স্ক্রিনে সময়টা দেখতেই হিমাদ্রীর চক্ষু চড়কগাছ। ওয়ারড্রব খুলে একটা শার্ট আর প্যান্ট বের করে ঝটপট রেডি হয় সে। হাতে ঘড়িটা ঢুকিয়ে দৌড়ে দৌঁড়ে নিচে নামে। রাফির উপর প্রচণ্ড রেগে আছে সে। ওকে না নিয়েই বেরিয়ে গেছে রাফি। হাতের কাছে পেলে উলটা করে ঝুলিয়ে পিটাবে।
হিমাদ্রিকে নিচে নামতে দেখেই রেহানা বেগম বলে; আস্তে আস্তে পড়ে গিয়ে হাত পা ভাঙবি নাকি বাপ?
-উফ আম্মু আমার অনেক লেট হয়ে গেছে আমি আসছি। বলেই হিমাদ্রী বেরিয়ে যেতে নেয়।
রেহানা বেগম আটকে দিয়ে বলে; এই না একদম না। আগে নাস্তা করবি তারপর বের হবি। বলেই তিনি জোর করে হিমাদ্রীকে ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে দেন।
হিমাদ্রী অসহায় মুখ করে বসে পড়ে। এক গ্লাস জুস খেয়ে কোনমতে একটা পাউরুটি খেয়ে ঢক ঢক করে এক গ্লাস পানি খেতে রেহানা বেগমের আঁচলে মুখ মুছে বেরিয়ে যায়।
রেহানা বেগম কিছু বলার আগেই হিমাদ্রী উধাও। রেহানা বেগম একাই বিড় বিড় করতে থাকে।
হিমাদ্রী গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ব্লুটুথ কানে কানে লাগিয়ে রাফিকে কল দেয়। দুবার রিং হতেই রাফি কল রিসিভ করে। রাফির কন্ঠ শুনতে পেয়েই হিমাদ্রী তাকে এক দফা ধমক দেয়।
রাফি হিমাদ্রীর ধমক শুনে কাচুমাচু করে বলে; আরে ভাই আমি তোকে ডাকছি। তুই নিজেই ঘুমে বিভোর ছিলি। মুই কি করুম ক তুই আমাক??
-চুপ কর তুই। দশ মিনিটের মধ্যে হোটেল ড্রিম পার্কের সামনে চলে আয়। একটু যদি লেট করিস বুঝতে পারবি কি হয়। বলেই হিমাদ্রী কল কেটে দেয়।
রাফি এক একরাশ বিরক্তি নিয়ে হোটেল ড্রিম পার্কের দিকে রওনা দেয়।
চলবে….