#ক্যানভাস
লেখনীতে : তামান্না আক্তার তানু
পর্ব : (২০)
৫০!!
ক’দিন ধরে শ্রাবণ কেমন যেন হয়ে গেছে। ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করে না। বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে না। অফিসে যায় না। এমনকি আদনারের সাথেও যোগাযোগ করে না। আদনান দেখা করতে চাইলে শ্রাবণ আদনানকে ইগনোর করে। গালিগালাজ করে। কারণ, আদনান সব জেনেও শ্রাবণের থেকে সব লুকিয়ে গিয়েছিল। আদনানকেও শ্রাবণ সহ্য করতে পারে না।
শ্রাবণের কাছে এমন খারাপ ব্যবহার আদনান মেনে নিতে পারে না। তাই সে শ্রাবণের আশেপাশে আসাটাই ছেড়ে দিয়েছে। আদনান একটা পার্কের ব্রেঞ্চে বসে আছে। হঠাৎ আদনানের ফোনে কল আসে। কল পেয়ে আদনান সোজা মেঘদের বাসায় চলে যায়। মেঘদের বাসায় গিয়ে দেখে নওরিন, ইরা, সামি মিলে একসাথে কী যেন আলোচনা করছে। ইরা আদনানকে সোফায় বসতে বলে।
চারজনে একসাথে বসে আলোচনা করছে মেঘকে কীভাবে ফিরিয়ে আনবে আবিরের জাল থেকে। আবির সেই যে মেঘকে নিয়ে চলে গেল, আর কোনো ফোন ও করেনি। এমনকি মুক্তিপণও চায়নি। কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। আদনান নওরিনকে ইগনোর করতে চাইলেও মেঘের কথা ভেবে নওরিনের সঙ্গ দেয়। যেভাবে হোক মেঘকে বাঁচাতে হবে।
চারিদিকে পুলিশ খোঁজাখুঁজি চালিয়ে দিয়েছে ঠিকই কিন্তু আবিরের কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। আবিরকে না পেলে মেঘকেও পাওয়া যাবে না। তাই সবার আগে আবিরের লোকেশন জানতে হবে। আদনান ইরাকে জিজ্ঞেস করল,
_ইরা তুমি আমাকে এটা বলো, আবিরের শহরে পরিচিত কেউ আছে কিনা।
_শহরে যে ক’দিন ছিল, আবির জেলে ছিল। যদি কারও সাথে পরিচিত হয়ে থাকে, তাহলে জেলের কোনো আসামীর সাথেই হবে। আবিরের সব আত্মীয়-স্বজন তো গ্রামে থাকে।
_আবিরের ফেইসবুক একাউন্ট, কিংবা মোবাইল, ইমেইল এমন কোনো উপায় আছে যার মাধ্যমে আমরা আবিরের লোকেশন পাবো।
_আমার তো জানা নেই। তবে মেঘের ফোন। ঘাটলে কিছু একটা মিলতো। কিন্তু মেঘের সিমটাই তো এখন আর নেই। সেটা তো আগেই আমি ভেঙে ফেলেছি, যেদিন আবির মেঘকে ফোন করেছিল।
_তাহলে চলো, আমরা গ্রামে খোঁজ করি। যদি আবির গ্রামে থাকে। কিংবা ওর আত্মীয়-স্বজন কারও সাথে যোগাযোগ করে ওর নাম্বার জোগাড় করতে পারি কি না। চেষ্টা করে দেখতে পারি।
_ঠিক আছে।
আদনান, নওরিন, আর ইরা মিলে সঙ্গে সঙ্গে মেঘদের গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সামি এখনও সম্পূর্ণ সুস্থ হয়নি তাই সামিকে সঙ্গে নেওয়া রিস্কি।
আদনান বাসের টিকেট কাটলে পরেরদিন সকাল সকাল ওরা গ্রামের বাড়িতে রওয়ানা দেয়। ইরা আর নওরিন যখন বাসে কথা বলছিল তখন কেউ একজন মুখ আড়াল করে একই বাসে উঠে। ইরা ভালো করে তাকিয়ে বুঝতে পারলো এটা আবির। আশ্চর্যজনক হলেও একই বাসে আবিরও উঠে। আবিরের সিটটা আদনানের সিটের অপজিটে পড়ে। ইরা আদনানের ফোনে ম্যাসেজ করে আবিরকে ইশারায় দেখায়। আদনান কানে হ্যাডফোন গুঁজার অভিনয় করে আবিরের কথা শোনার চেষ্টা করে। আবির কেউ একজনের সাথে ফোনে কথা বলছে। আদনান আবিরের কথাগুলো ফলো করছে। আবির বলল,
_আরে বাবা খাচ্ছে না তো কী হয়েছে? জোর করে খাওয়া। ওর বেঁচে থাকার খুব প্রয়োজন। আমার জন্য বাঁচতে হবে ওকে।
_
_কী বলছে? ও যতই শ্রাবণ, শ্রাবণ করুক শ্রাবণের কাছে আর ফিরে যেতে পারবে না। ও এই আবিরের জীবন।
_
_আচ্ছা মুশকিল তো। এখন আমি গ্রামে যাচ্ছি। গাড়িতে আছি। এখন কী করবো?
_
_ঠিক আছে আসছি। ভুলিয়ে রাখ কিছু সময়।
এইবলে আবির রাগ দেখিয়ে বাস থেকে নেমে। এটা হয়তো আল্লাহর ইচ্ছে, নয়তো আজ এইভাবে আবিরের সাথে কেন ওদের দেখা হলো! আদনানও সোজা বাস থেকে নেমে পড়ে। ইরা, নওরিন আদনানকে ফলো করে দুজনে বাস থেকে নেমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে। আদনান যেভাবে বলবে সেভাবে করতে হবে। হয়তো মেঘকে ফিরে পেতে পারে। কারণ আবিরের কথায় যা বুঝা তাতে এটাই যে, মেঘ এখনও বেঁচে আছে। আর মেঘের নিঃশ্বাস চলাকালীন সময়েই ওকে বাঁচাতে হবে। কে জানে আবির কেমন আচরণ করছে ওর সাথে।
ইরা আর নওরিনকে বাসায় চলে যেতে বলে আদনান আবিরকে ফলো করতে থাকে। আবির একটা সি. এন. জি করে কোনো ঠিকানায় চলে যায়। আদনান অন্য একটা সি. এন. জি নিয়ে আবিরের গাড়িকে ফলো করতে বলে। একটা জায়গায় গিয়ে আবির গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়ে। যেতে যেতে একসময় আবির আদনানের চোখের আড়ালে চলে যায়। আদনান এদিক-সেদিক অনেক খোঁজে কিন্তু আবিরের গাড়িকে আশেপাশে দেখতে পায় না। এইভাবে সুযোগটা হাতছাড়া হয়ে যাবে কে জানতো। তবে আবির যেখানে নেমেছে আদনান সেই জায়গাটা ভালো করে নজর দিয়ে রেখেছে। অনেকসময় আবিরের অপেক্ষায় আদনান রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে।
৫১!!
আবিরের দেখা না পেয়ে আদনান ফিরে আসে। আবির ভেতরে যেতে যেতে খুব ভেতরে যায়। রাস্তায় অলিগলি পেরিয়ে, ছোটখাটো রাস্তা গিয়ে একটা ফ্লাটে প্রবেশ করে। ভেতরে ঢুকে দেখে আবিরের পোষা গোণ্ডা মেঘকে খাওয়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মেঘ কিছুই মুখে তুলছে না। আবির মেঘের কাছে গিয়ে মেঘের মুখ চেপে ধরে মেঘকে বলল,
_কী ভাবছিস তুই? না খেলে আমি তোকে ছেড়ে দেবো। ইম্পসিবল মেঘ! তুই কবুল না বলা পর্যন্ত এই বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পাবি না।
_কুত্তার বাচ্চা, আমাকে ছেড়ে দে। একবার শুধু বাঁধন খুলে দে আমার। এখান থেকে পালাতে বেশি সময় লাগবে না। তুই কী ভাবিস তুই আমাকে এখানে আটকে রাখতে পারবি। যতদিন আমার নিঃশ্বাস চলছে ততদিন আমি শুধু শ্রাবণের হয়ে থাকবো। তোর মতো খুনিকে বিয়ে করবো না।
_তোকে এতো সহজে ছাড়বো না। ছাড়লেই তুই পুলিশের কাছে যাবি। আর এতো শ্রাবণ, শ্রাবণ করিস না। শ্রাবণ অলরেডি জেনে গেছে তোর আসল পরিচয়। রাত্রি সেজে ওকে কীভাবে ধোঁকা দিয়েছিস তুই।
_নামে কী আসে যায়। আমার ভালোবাসা তো মিথ্যে না। আর তুই শত চেষ্টা করেও আমাকে আটকে রাখতে পারবি না। তোর এই গুণ্ডাপাণ্ডাদের সামনে দিয়ে আমি এই বন্দিখানা থেকে বেরিয়ে যাবো। শুধু দেখে যা তুই।
_দেখি কীভাবে পালাস তুই?
আবির রাগে কটমট করতে থাকে। মেঘ আবিরের মুখ বরাবর থু থু ফেলে দেয়। আবির রাগে মেঘকে চড় মারতে গিয়েও থেমে যায়। বেরিয়ে আসে মেঘের সামন থেকে।
আদনান বাসায় এসে ইরাকে ফোন করে সব জানায়। মেঘের বাবা-মা দুজনই কাঁদতে কাঁদতে দিশেহারা। এতো কড়া সিকিউরিটি দেওয়ার পরেও মেঘকে আবিরের হাত থেকে বাঁচাতে পারলেন না। সেই আবির ওকে কিডন্যাপ করে নিয়ে গেল। মেঘের মায়ের ভেতরটা ডুকরে কেঁদে উঠে নাড়ি ছ্যাড়া ধনটার জন্য। নামাজে দাঁড়িয়ে দু’হাত তুলে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানান তিনি। একমাত্র মেয়েকে ফিরে পাওয়ার করুণ আর্তনাদ এক মায়ের চোখের জল দেখলে বুঝা যায়।
ইরা লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদে। কাউকে বুঝতে দেয় না। ইরা জানে, এইভাবে ভেঙে পড়লে মেঘকে সহজে ফিরে পাবে না। সাহস নিয়ে আবিরের মুখোমুখি হতেই হবে।
শ্রাবণ একা একা সন্ধ্যেবেলা ছাদে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। নিঃসঙ্গ জীবনে আনিকার স্মৃতি গুলো আজ বড্ড উঁকি দিচ্ছে শ্রাবণের ছোট মনে। সেই সাথে মেঘের দেওয়া যন্ত্রণাগুলোও। ফোনের টিউন শুনে ভাবনা থামায় শ্রাবণ। ফোন হাতে নিয়ে দেখে অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসছে। তাও ভিনদেশের নাম্বার। শ্রাবণ কল রিসিভ করে সালাম দিলে ওপাশ থেকে মিষ্টি কণ্ঠে একটা মেয়ে বলল,
_কেমন আছো শ্রাবণ?
_আনিকা!
_হুম। চিনতে পেরেছো?
_কী করবো বলো। চাইলেও ভুলতে পারি না।
_কী হয়েছে তোমার? গলা ভাঙা কেন?
_জানো, তোমার দেওয়া কষ্ট গুলোকে ভুলতে রাত্রিকে আপন করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু সেও তোমার মতো ফাঁকি দিলো। আমার সাথে কেন এমন হচ্ছে আনিকা? আমি কি সত্যি পাপী?
_শ্রাবণ! পারলে আমায় ক্ষমা করে দিও। বিনা দোষে তোমায় যে শাস্তি আমি দিয়েছি তাতে আমি অনুতপ্ত। কিন্তু, আমি নিরুপায় ছিলাম। সিঙ্গাপুরে আসার পর জানলাম বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে, তার বিজনেস পার্টনারের ছেলের সাথে। বাবা যখন আমাকে জানায় তার আগে সুযোগ বুঝে আমার পাসপোর্টটা বাবা রেখে দেয়। নয়তো আমি ঠিকই বাংলাদেশে ব্যাক করতাম। কিছুদিন আগে আন্টিকে ফোন দিয়ে জানতে পারলাম, তুমি মেঘকে বিয়ে করতে যাচ্ছো। অনেক চেষ্টা করেছি ফোন করার কিন্তু সাহস পাইনি। আজ দিলাম। মেঘ কেমন আছে শ্রাবণ?
_জানি না আমি। আমাকে ঠকিয়েছে ওই মিথ্যেবাদী।
_কী বলছো এসব! আর তুমি রাত্রির কথা বললে সে আবার কে?
শ্রাবণ সব কথা আনিকাকে খুলে বলে। আনিকা শ্রাবণকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খোঁজে পাচ্ছে না। কারণ আনিকা নিজেও অপরাধী। কোন মুখে আরেকটা মেয়ের হয়ে ওকালতি করবে? যে নিজেই এতো বড় অন্যায় করে বসে আছে। একটা নিষ্পাপ মনকে কষ্ট দেওয়ার মাশুল এখন আনিকা একাই দিচ্ছে। হয়তো বাকী জীবনে আরও নানানরকম ঝড়তুফান যাবে আনিকার উপর দিয়ে, তাও সহ্য করে নিবে মেয়েটা। কিন্তু, শ্রাবণের কষ্ট যে মেনে নেওয়া যায় না। ছেলেটা তো সত্যি ভালোবেসে ছিল। কী পেল ভালোবেসে? অবহেলা, অযত্ন, অবশেষে বিশ্বাসঘাতকতা। এসব কষ্ট যে বার বার সহ্য করার মতো শক্তি একটা মানুষের মধ্য থাকে না। আনিকা ফুঁপানি থামিয়ে শুধু শ্রাবণকে বলল,
_সব শুনে মনে হচ্ছে, মেয়েটা দোষী নয় শ্রাবণ। আবারও চেষ্টা করে দেখতে পারো। হয়তো সে তোমাকে আমার থেকে বেশি ভালোবাসবে।
_তুমি এটা বলছো!
_কী করবো বলতে পারবে। তোমাকে কষ্ট দিয়ে আজ আমি সুখী নই শ্রাবণ। আমি যে অন্যায় করেছি তারজন্য ক্ষমা চাইবার মুখ আমার নেই। তবুও বলছি মাফ করে দিও। আর মেঘকে আরেকবার সুযোগ দিও। হয়তো মেয়েটা তোমায় সত্যি ভালোবাসে। নয়তো কেউ কীভাবে তোমার ছবি না দেখে তার হৃদয়ে এঁকে ফেলতে পারে।
_কিন্তু আনিকা।
_ভালো থেকো শ্রাবণ। আল্লাহ হাফেজ।
_আনিকা শুনো।
শ্রাবণের কথা না শুনে আনিকা ফোন কেটে দেয়। আনিকার কথাগুলো কেমন যেন অদ্ভুত লাগলো শ্রাবণের কাছে। আনিকার গলার আওয়াজে স্পষ্ট বুঝা গেছে, মেয়েটা কাঁদছে। কিন্তু আনিকা কাঁদছে কেন? শ্রাবণ ভেবে পায় না আনিকার কী হয়েছে? যে মেয়েটা সুখ খোঁজতে শ্রাবণকে ছেড়ে চলে গেল, আজ সে অসুখী কেন? ভাবনার অতল গহ্বরে প্রবেশ করতে চায় শ্রাবণ, কিন্তু মেঘের মুখখানি দুচোখে স্পষ্ট ভেসে উঠে। মেঘের হাসি, কান্না, দুষ্টামি, মেঘের চাঞ্চল্য। এই তো সেদিন যেভাবে শ্রাবণকে দেখতে চুপিচুপি শ্রাবণের কাছে আসা। মেয়েটা নির্ঘাত বোকা। বোকা না হলে কেউ এমন সিদ্ধান্ত নেয়। কড়া সিকিউরিটি থাকার পরেও মেয়েটা চুপিসারে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে ভালোবাসার মানুষটিকে একনজর দেখার জন্য এতদূর ছুটে আসে।
শ্রাবণ ভাবছে এসব কি সত্যি মেঘের ছলনা, না কি ভালোবাসা। কী বুঝবে শ্রাবণ? এখনও মেঘের সাথে বুঝাপড়া হয়নি। তার আগেই মেঘ একবুক যন্ত্রণা দিয়ে হারিয়ে গেল। কেন হারালো মেঘ এইভাবে?
৫২!!
আদনান মেঘকে খোঁজে পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। যেভাবে হোক মেঘকে ফিরিয়ে আনতে হবেই। শ্রাবণকে বুঝিয়ে দিতে হবে মেঘের ভালোবাসার গভীরতা কতটুকু ছিল। একটুও মিথ্যে মায়া ছিল না মেঘের অস্তিত্বে। শুধুমাত্র আনিকার কথা ভেবে নিজের পরিচয় সেদিন গোপন রাখলো মেয়েটা। ভাগ্যের দোষে আজ সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেল। এমন তো কথা ছিলো না।
আদনান যখন বাবা-মায়ের সাথে মেঘকে নিয়ে কথা বলছে তখন নওরিন ওর ফোনে কল দেয়। নওরিনের কল দেখে আদনান নিজের রুমে চলে আসে। তারপর কলটা রিসিভ করে বলল,
_কী হয়েছে?
_মেঘকে খোঁজে পাওয়ার কোনো উপায় পেলে।
_না, তবে চেষ্টা করছি।
_আমরা চাইলে শ্রাবণ ভাইয়ার হেল্পও নিতে পারি।
_ও মেঘকে কেন, এখন আমাকেই সহ্য করতে পারে না। আমার মনে হয় না, শ্রাবণ কিছু করবে।
_তবুও তুমি একটু বলে দেখো।
_শ্রাবণ তো অনেকদিন আমার সাথে যোগাযোগ করে না। ইনফ্যাক্ট আমি যোগাযোগ করতে চাইলেও আমায় ইগনোর করছে। আমি কী করবো বলতে পারো?
_আবিরের নাম্বারও নেই, নয়তো লোকেশন ট্র্যাক করা যেত।
_ইরা কী বললো? সামির চাচ্চু কতদূর আগালেন?
_সেসব ওনি ভালো বলতে পারবেন। এইভাবে খোঁজা যাবে না। আর আবির তো মুক্তিপণ চাইছে না। সেদিনের পর আবির একবারও কল করেনি মেঘকে নিয়ে যে পালিয়ে গেল। আর শ্রাবণ ভাইয়া ভাবছে, মেঘ ইচ্ছে করে পালিয়েছে।
_তুমি এক কাজ করো কাল শ্রাবণের বাসায় এসো, আমিও যাবো।
_আদনান, সময় খুব কম। ফাইনাল কম্পিটিশনের আর বেশি দেরী নেই।
_কতদিন আছে?
_তিনদিন।
_কী বলছো? এই তারিখের মধ্যে মেঘকে কীভাবে খোঁজে পাবো আমরা?
_প্লিজ কিছু করো। এইভাবে ওর প্রতিভাকে হারিয়ে দিলে মেয়েটা শেষ হয়ে যাবে।
_কাল আসো। তারপর দেখছি কী করা যায়।
_তুমি বরং কাল শ্রাবণ ভাইয়াকে মেঘদের বাসায় আসতে বলো। ভাইয়ার একবার বুঝা উচিত। কাছ থেকে মেঘকে যদি সে ফিল করতে পারে।
_শ্রাবণ কি রাজী হবে?
_চেষ্টা করে দেখো। না হলে আমি যাবো।
_ঠিক আছে।
আদনান ফোন কেটে দেয়। নওরিন ফোন হাতে নিয়ে কাঁদতে থাকে। মনে মনে বলল,
_ফিরে আয় না মেঘ। যেভাবে পারিস ফিরে আয়। আবিরের নজর থেকে পালিয়ে আয় প্লিজ। তোকে খুব প্রয়োজন এই দেশের। তুই যে একজন শিল্পী। তোর অমূল্য প্রতিভাকে এইভাবে হারিয়ে যেতে দিস না। যেভাবে হোক, ওই জাল থেকে বেরিয়ে আয় তুই।
ইরা মেঘের বাবা-মাকে নিয়ে রাতের খাবার খেতে বসে। ওনাদের মুখে ভাতের নলা উঠতে চায় না। মেঘের মা ডুকরে কেঁদে উঠেন। ইরা বুঝে উঠতে পারে না, কীভাবে সামলাবে এদের। প্রতিদিন হাঁটতে গেলে মেঘ, বসতে গেলে মেঘ, অথচ আজ এক সপ্তাহ নিজের মেয়েটার থেকে দূরে। মা-বাবা দুজনই ভালো নেই মেঘকে ছাড়া। ইরা শুধু ওনাদের কান্না থামানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে। এইভাবে আর কতদিন চলবে। কতদিন মেয়ের জন্য চোখের জল ফেলবেন ওনারা। এই সুখের সংসারে কেন এতো কষ্ট নেমে এলো, কিছুই বুঝতে পারে না ইরা।
অনেক বুঝিয়ে দুজনকে অল্প খাওয়ানোর চেষ্টা করে ইরা। খাবার শেষে ঘুমাতে যায় যখন তখনই মেঘের খিলখিল হাসির শব্দ শুনতে পায় ইরা। এই বুঝি মেঘ এসে ওকে ঝাপটে ধরবে। এই বুঝি দুজনে ঝগড়াতে মেতে উঠবে। কবে যে আবারও সেইদিন আসবে? আদৌ সেই দিন আসবে কিনা তাও জানে না ইরা। শুধু জানে, মেঘকে খুব প্রয়োজন।
শ্রাবণ যখন ঘুমাতে যায় তখন আদনান শ্রাবণের ফোনে কল দেয়। আদনানের নাম্বার দেখে শ্রাবণ কল কেটে দেয়। আদনান বার বার দিতে থাকে। শ্রাবণ প্রতিবারই কল কেটে দিচ্ছে। আদনান বাধ্য হয়ে শ্রাবণকে একটা টেক্সট পাঠালো।
_শ্রাবণ কল উঠানোর প্রয়োজন নেই। কাল পারলে মেঘদের বাসায় আসিস। খুব আর্জেন্ট কাজ আছে। মেঘের ফাইনাল কম্পিটিশনের সময় এসে গেছে। মেঘকে খোঁজে পেতে তোকে খুব প্রয়োজন আমাদের। আমার উপর রাগ পরে দেখাস। আগে মেয়েটাকে ফিরিয়ে আনতে একটু হেল্প কর। তুই পাশে থাকলে আমরা একটু সাহস পাবো। আমি একটা লোকেশন পেয়েছি। আমার মন বলছে মেঘ সেই লোকেশনের আশেপাশে আছে। প্লিজ দোস্ত একবার আসবি তো।
শ্রাবণ ম্যাসেজ দেখে চুপ হয়ে যায়। ইচ্ছে করছে না এই ম্যাসেজের রিপ্লে করতে তবুও রিপ্লে করলো,
_চেষ্টা করবো।
আদনান ম্যাসেজ দেখে ভরসার নিঃশ্বাস ফেলে। শ্রাবণ পাশে থাকলে হয়তো মেঘকে তাড়াতাড়ি খোঁজে পাওয়া যাবে।
চলবে…
ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।