ক্যানভাস লেখনীতে : তামান্না আক্তার তানু পর্ব : (২১)

0
991

#ক্যানভাস
লেখনীতে : তামান্না আক্তার তানু
পর্ব : (২১)

৫৩!!
পুরো রুমটা অন্ধকার। মেঘের হাত-পা বাঁধা। ফ্লোরে পড়ে আছে মেয়েটা। গলা তুলে আওয়াজ দিবে সেই শক্তিটাও নেই। মুখ থেকে কাপড় পেঁচিয়ে গলায় বাঁধা। যেন গুঙানির আওয়াজ ছাড়া আর কিছু বের হয় না।

হঠাৎ দরজা নড়েচড়ে উঠলো। মনে হচ্ছে কেউ ভেতরে প্রবেশ করছে। মেঘ চুপচাপ দেখার চেষ্টা করছে। কিন্তু অন্ধকার থাকায় ঠাওর করা যাচ্ছে না। একটু পর রুমে আলো জ্বলে উঠলো। মেঘ চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে আবির হাতে খাবার নিয়ে মেঘের দিকে এগিয়ে আসছে। আবির মেঘের কাছে এসে মুখের বাঁধন খুলে দিল। মেঘের মুখে খাবার তুলে দিতে গেলে মেঘের মুখ সরিয়ে নেয়। বার বার জোর করেও মেঘকে খাওয়াতে ব্যর্থ হচ্ছে আবির। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলল,

_ভালোয় ভালোয় খেয়েনে। নইলে গলা টিপে খাবার ভেতরে পাঠাবো।
_খাবো না আমি। ছেড়ে দে আমাকে। একবার শুধু বাঁধন খুলে দে। আমাকে এক মুহূর্তও এখানে পাবি না তুই।
_ঠিক আছে দিলাম খুলে।

আবির মেঘের হাত আর পায়ের বাঁধন খুলে দেয়। মেঘ উঠে যেতে চাইলে আবির মেঘের হাত চেপে ধরে বলল,

_কোথায় যাচ্ছিস?
_শ্রাবণের কাছে।
_এতো সহজে তো আমি তোকে যেতে দিব না। তুই শুধু আমার।

এইবলে আবারও মেঘকে ফ্লোরে ফেলে দেয়। মেঘ ফ্লোরে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। কপালে খানিকটা ব্যথাও পায়। হালকা জুড়ে চিৎকার দিয়ে উঠে।

_মেরে ফেল আমাকে তবুও আমি তোর হবো না।
_যার জন্য বুকে এতো ভালোবাসা, সেই শ্রাবণই তো এখন তোকে সহ্য করতে পারে না। তাহলে কার কাছে ফিরে যাবি তুই?
_তবুও আমি যাব। কারণ আমি তাকে ভালোবাসি।
_আর আমার ভালোবাসা।
_এভাবে ভালোবাসা হয় না আবির। জোর করে মন পাবি না তুই। কেন এতো কষ্ট দিচ্ছিস আমাকে?
_আহা! খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না। কষ্টটা আমিও পেয়েছি। অন্ধকার কারাগারে জ্বলেপুড়ে মরেছি। কেউ আমার খোঁজ নেয়নি। তুই তো দিব্যি সুখে ছিলি। একবারও মনে পড়লো না আমাকে?
_তোর মতো পাপীকে মনে রাখাও পাপ। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম, এই জগতে তোর মতো পিশাচ আজও বেঁচে আছে। এতো শাস্তি পেয়েও শান্তি হলো না। আমাকে আটকে রেখে কী পাবি বলতে পারিস?
_তোকে তো পাবো। আমার এতেই চলবে।
_আমি এই জীবনে শুধু একজনকে এই মন সপে দিয়েছি। আর কাউকে নিজের সাথে জড়াবো না। তোর মতো খুনিকে তো আগে থেকেই না।
_কেউ জানতো না আমি খুনি। যদি তুই সেদিন আমাকে না ফাঁসাতি। আজকের এই দিন শুধু সেদিনের সাজা মাত্র।
_এইভাবে আমার মৃত্যু যদি লেখা থাকে তাও আমি সেই মৃত্যু হাসি মুখে গ্রহণ করবো। তবুও তোকে মেনে নিবো না।
_তাহলে ভোগ কর শাস্তি।

আবির আবার মেঘের হাত-পা বেঁধে মেঘের মুখ বেঁধে বাইরে চলে যায়। মেঘ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। এইভাবে শ্রাবণকে ছেড়ে থাকতে হবে কখনও ভাবেনি মেয়েটা। অথচ আজ থাকতে হচ্ছে।

কত স্বপ্ন ছিল দু’চোখে। ভালোবেসে দুটো মানুষ, দুটো মন একে-অপরের সাথে মিশে যাবে। একে-অন্যকে ঘিরে বেঁচে থাকবে। সেই স্বপ্ন কি না আজ শুধু চোখের জল হয়ে ঝরছে।

৫৪!!
পর দিন সকাল…
নওরিন, আদনান, ইরা, সামি, মেঘের বাবা-মা শ্রাবণ সবাইকে একসাথে বসে আছে। মেঘকে নিয়ে আলোচনা করছে। কেউ না কেউ একেকটা আইডিয়া বের করছে। কিন্তু শ্রাবণ বরাবরের মতো চুপ থেকে যায়। শ্রাবণের চুপ থাকা দেখে ইরা শ্রাবণকে বলল,

_ভাইয়া তুমি কিছু তো বলো।
_আমার কিছু বলার নেই।
_তুমি চাও না মেঘ ফিরে আসুক।
_ওর আসা না আসাতে আমার কিছু যায় আসে না। তবে হ্যাঁ, আমি এটা চাই, ও যেখানে থাকুক ভালো থাকুক।
_কিন্তু ভাইয়া মেঘ তো তোমার কাছে ভালো থাকবে।
_সেটা যদি হতো তাহলে এতো বড় সত্যি আমায় গোপন করলো কেন? আমি কি এতটাই পর ছিলাম। সবাই ছিলে ওর সাথে। ইনফ্যাক্ট আমার বাবা-মাও সব জানতেন। শুধু জানতাম না আমি। আমার ইমোশনের কোনো মূল্য নেই কারও কাছে। তাই মেঘ এইভাবে আমার মনটাকে নিয়ে ইচ্ছেমতো খেলে গেল।
_অসুবিধা নেই। আমাদের ঘরের মেয়েকে আমরাই ফিরিয়ে আনবো। তার জন্য যত কষ্ট আমাদের হয় হোক, তবুও তোমায় কিছু করতে বলবো না। কী জানো তো ভাইয়া, মেঘ সব সত্যি তোমায় বলতে চাইছিল, আমি ওকে বাধা দিয়েছিলাম। মেয়েটা সেদিন সত্যি বলতে গিয়েও নিজের ভালোবাসার মানুষটার কথা ভেবে চুপসে গেছে। মেঘ তো আমাদের ঘরের মেয়ে। ওর ক্ষতি মানে আমাদের ক্ষতি। তুমি এতদূর কষ্ট করে এসেছো, এতেই আমরা খুশি। আর কোনো হেল্প আমাদের চাই না।

ইরার কথায় শ্রাবণ চুপ হয়ে যায়। মেঘের বাবা-মা ইরাকে চুপ থাকতে বলেন। ওনারা শ্রাবণকে বুঝাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। শ্রাবণ ওনাদের কথা মানতে নারাজ। সে কিছুই করতে পারবে না। মেঘের মা বললেন,

_তুমি শুধু বাহ্যিক দিক দেখে ওকে বিচার করলে, এরবার ওর মনের কথাটা জানবে না।
_আন্টি, আমাকে মাফ করবেন। যে মানুষের আগাগোড়া মিথ্যে দিয়ে সাজানো তাকে আর বিশ্বাস করা যায় না। আমি আসছি।

শ্রাবণ সোফা থেকে উঠে বাইরে যেতে নিলে ইরা পিছন থেকে বলল,

_যাওয়ার আগে নিজের চোখে কিছু দেখে যাও।

শ্রাবণ পিছু ফিরে তাকায়। ইরা শ্রাবণকে নিয়ে মেঘের রুমে পা বাড়ায়। সামি, নওরিন, আর আদনান মেঘের বাবা-মায়ের পাশে বসে থাকে। শ্রাবণ চায় না মেঘের রুমে যেতে তবুও ইরা জোর করে শ্রাবণকে মেঘের রুমে নিয়ে যায়।

রুমটা খুব সুন্দর করে গুছানো। চারিদিকে শুধু ক্যানভাস আর ক্যানভাস। প্রতিটা ক্যানভাস জুড়ে শুধু শ্রাবণের অস্তিত্ব। এসব দেখে শ্রাবণের চোখ দুটো ছানাবড়া হয়ে যায়। শ্রাবণ একটা একটা করে সব ক্যানভাসে হাত বুলায়। রুমের এমন কোনো কোণা বাকি নেই, যেখানে শ্রাবণের ক্যানভাস নেই। পুরো রুমটা শ্রাবণকে নিয়ে সাজিয়ে তোলা। বড় এক ক্যানভাসের নিচে সুন্দর করে লেখা…

“তুমিময় আমি শুধু তোমাতেই মগ্ন,
জীবনের বাঁকে-বাঁকে তুমি সুখের লগ্ন।”

ইরা শ্রাবণের দিকে একটা ডায়রী বাড়িয়ে দিল। শ্রাবণ ডায়রীটা হাতে নিয়ে একপাতা উল্টায়। অবাক হয় শ্রাবণ, প্রতিটা পাতায় শুধু শ্রাবণের নাম লেখা। একটা কবিতাও লেখা। মেঘ যা নিজের হাতে লিখেছে।

#ক্যানভাস
কাশফিয়া হাসান মেঘ

রঙতুলির এই ক্যানভাসেতে, তোমার দু’চোখ ভাসে।
মন-দুয়ারে ঘন্টা নাড়ায় তোমার মুখটি এসে।
ঘুমের মাঝে স্বপন কালে তোমার ছায়া দেখি,
ক্যানভাসের এই সাদা পাতায় তোমার ছবি আঁকি।

চোখ বুজলেই চারিপাশটা অন্ধকারে ঢাকে,
তখন স্বপ্নেরই রাজ্যে তুমি ভাসাও আমাকে।
চোখ খুললেই পালাও তুমি! কোন সে অজানায়?
হাজার লোকের ভীড়ে রোজ খোঁজি যে তোমায়।

জানি না এ কেমন খেলা! কীসের লুকোচুরি?
কেন স্বপ্নেই এসে তুমি, মনটা নিলে কাড়ি।
কোনদিনও হবে না কি তোমার সাথে দেখা?
শুধুই কি চোখের মায়ায় ভাসবো আমি একা?

সামনে এসে দাঁড়াও তুমি হাতটি রাখো হাতে।
নয়ন ভরে দেখব তোমায়, ডুববো অজানাতে।
ক্যানভাসেতে নয় তোমায় সত্যি করে চাই।
তোমার বুকের বাম পাশেতে আমায় দিও ঠাঁই।

উৎসর্গ : শ্রাবণ মাহমুদ

শ্রাবণ সবকিছু দেখে চোখের জল ছেড়ে দেয়। কোনোদিকে না তাকিয়ে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। আর এক মুহূর্ত এইখানে থাকা যাবে না। এসব কিছুই মেঘের নাটক মনে হচ্ছে শ্রাবণের কাছে। আর কোনোভাবেই সে নিজেকে মেঘের মাঝে ডুবাবে না। যে মেয়ে বিয়ের আগে এতো গুছিয়ে মিথ্যে বলে, সে বিয়ের পরেও এমন কাজ করবে না, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই এই মিথ্যে মায়াজালে আর নিজেলে আটকে রাখতে চায় না। সবার প্রশ্ন উপেক্ষা করে বাইরে বের হয়ে গেল। মেঘের মা অনেক ডাকলেন শ্রাবণ পিছু ফিরলো না। সে নিজের মনকে বুঝাতে ব্যস্ত।

শ্রাবণ চলে যায়। সবাই ব্যর্থ হয় শ্রাবণকে বুঝাতে, মেঘের ভালোবাসা যে সত্যি ছিল। ভালোবাসার মাঝে কোনো মিথ্যে লুকিয়ে ছিল না। নাম কি মানুষের আসল ভালোবাসা বুঝাতে পারে? ভালোবাসা বুঝতে তো মনের প্রয়োজন হয়। মন যেখানে অনুভূতিতে পরিপূর্ণ হয়ে সুবিশাল এক ভালোবাসার রাজ্য গড়ে তুলে সে রাজ্যে শুধু ভালোবাসার অধিকারটাই বেশি থাকে। সেখানে কোনো রূপ, সৌন্দর্য্য কিংবা কোনো নামের প্রাধান্য পায় না। প্রাধান্য পায় একে-অপরের প্রতি সীমাহীন ভালোবাসাটুকু। যে ভালোবাসার জন্য লাইলী-মজনু, শিড়ি-ফরহাদ, চণ্ডিদাস-রজকিনী, রোমিও-জুলিয়েট যুগে যুগে সবার মাঝে অবিস্মরণীয় ভালোবাসার ইতিহাস টেনে গেছেন, সে ভালোবাসা কেবল দুটি মনকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল।

তাদের ভালোবাসায় ছিল না কোনো ধনী-গরিবের ভেদাভেদ, ছিল না রূপের বেড়াজাল, ছিল না দৈহিক চাহিদা, ছিল শুধু এক মনের সাথে অন্য মনের গভীর মিলন। যে মিলনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়, সুন্দর এক সম্পর্ক। যার নাম ভালোবাসা। ভালোবাসার জন্য মানুষ সব ত্যাগ করতে পারে। ভালোবাসার মানুষকে উৎসর্গ করে অনেক প্রেমিক-প্রেমিকা ইতিহাস গড়ে গেছেন। তেমনি এক ইতিহাস ছিল, সম্রাট শাহজাহানের জীবনে। নিজের স্ত্রীকে ভালোবেসে যিনি ‘তাজমহল’ তৈরী করে দেখিয়েছেন। যে ‘তাজমহল’ আজ বিশ্বের সকল প্রেমিক-প্রেমিকাদের জন্য ভালোবাসার মিলনস্থল নামে পরিচিত।

রাত যত গভীর হয় সবার চিন্তা তত বাড়তে থাকে। কম্পিটিশনের সময় ঘনিয়ে আসছে অথচ মেঘের কোনো হদিস পাওয়া গেল না। এইভাবে আর কতদিন হাত গুটিয়ে বসে থাকবে সবাই। চারিদিকে সবাই এত চেষ্টা করছে মেঘকে ফিরে পাওয়ার তবুও কাজ হচ্ছে না।

৫৫!!
অন্ধকার রুমে মেঘ একা। হাতের বাঁধনটা আবির খুলে গেছে। আবির ভালো করে বুঝে গেছে, মেঘ পালানোর মতো সাহস করবে না। তাই শুধু বাইরের দিকে থালা দিয়ে বেরিয়ে যায়। মেঘ রুমে একা বসে থাকে। আশেপাশে একটা ফোনও নেই। কীভাবে বাসায় ফোন করবে সেই চিন্তায় অস্থির হয়ে যায় মেঘ।

বাইরে থেকে গাড়ির হর্ণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কাছাকাছি বড়সড় রোড আছে। মেঘ জানালার কাচ দিয়ে উঁকিঝুঁকি মারে। জানালার চারিপাশ রডের তৈরি। চার আঙুল পরিমাণ ফাঁক। এই ফাঁক দিয়ে পালানো অসম্ভব!

মেঘ বাইরের রাস্তাঘাট ভালো করে দেখে বুঝতে পারলো, এই বিল্ডিংটা কোনো এক গলির মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এই বিল্ডিং থেকে পালাবে কীভাবে? এসব এসব ভেবে ভেবে মেঘ রুমে পায়চারি করছে। হঠাৎ দরজা খুলে কেউ রুমে ঢুকলো। হাতে খাবারের প্লেট। মেঘকে খাবার এগিয়ে দিয়ে সে চলে যায়। মেঘ তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করল,

_আবিরকে দেখেছেন।
_না, কেন?
_আসলে ওর সাথে আমার কিছু কথা ছিল। আপনার ফোনটা একটু দিবেন।
_ওয়েট, আমি কল ধরিয়ে দিচ্ছি।
_উফ! দিন না আমাকে। আমি কল দিচ্ছি।

মেঘ ছেলেটার ফোন নিয়ে আবিরকে তাড়াতাড়ি আসতে বলে। ছেলেটা চলে যায়। মেঘ আবারও একা একা হাঁটতে থাকে। আধাঘণ্টা পর আবির রুমে আসে। মেঘ আবিরকে দেখে আহ্লাদী কণ্ঠে বলল,

_কোথায় ছিলে তুমি? আমি তোমার জন্য অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি।
_আজ সূর্য কোনদিকে উঠলো? তুমি এতো পাল্টে গেলে যে।
_তুমি তো বোকাই রয়ে গেলে। দেখো না, আকাশে কী সুন্দর জ্যোৎস্না! চল না একটু জ্যোৎস্নায় আলোর নিজেদের ভাসিয়ে দেই।
_তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।
_রাগ করছো কেন? তুমি তো চাইতে আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমার কাছাকাছি থাকি। আজ যখন আমি তোমাকে কাছে চাইছি তখন তুমি দূরে সরে যাচ্ছো।

মেঘের কথাগুলো আবির বিশ্বাসই করতে পারছে না। এইভাবে মেঘ তার কাছে ধরা দিবে সেটা তার ভাবনারও বাইরে ছিল। তবে মেঘের চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে, সে রোমান্টিক মুডে আছে। আবির এই সুযোগটাই তো এতদিন ধরে খোঁজছিল। মেঘ যে এইভাবে তাকে নিয়ে ভাববে এসব তো আগে কেবল আবিরের কল্পনার অংশ ছিল। আজ না চাইতেও সব সত্যি।

আবির ধীরো পায়ে এগিয়ে যায় মেঘের দিকে। মেঘ আবিরের মতিগতি বুঝার চেষ্টা করে। ইচ্ছে করেই দূরে সরে যায়। তারপর বলল,

_এতো তাড়া কীসের? আগে খাবারটা খেয়ে নেই। খুব ক্ষিধে পেয়েছে আমার।
_ঠিক আছে। তুমি খাও। আমি পাশেই আছি।
_হুম…

মেঘ মনোযোগ দিয়ে খাবার খাচ্ছে। আর খুব ধীরে ধীরে খাচ্ছে। যেন এই সময়টা মেঘ এখানেই থামিয়ে দিতে চাইছে। আর কত যে অপেক্ষা করতে হবে কে জানে। মেঘ এক নলা ভাত গিলে আর আবিরকে চোখ মারে। আবির একেবারে গলে যায় মেঘের এমন ব্যবহার দেখে। মেঘের খাওয়ার স্পীড দেখে আবির বলল,

_আজ কি খাবার শেষ হবে না?
_আরেকটু অপেক্ষা করো। জানোই তো সারাদিন খাইনি। এমন করছো কেন?
_অসুবিধা নেই খাও। কিন্তু…
_আরে বাবা আমি বুঝি তো। আমাকে খাবার শেষ করার টাইম তো দিবে।

আবির চুপ করে রইলো। মনে হচ্ছে বেশ লজ্জা পেয়েছে। মেঘের ঠোঁটে রহস্যময় হাসিটা ফুটে উঠলো। মেঘ আবারও খাবারের দিকে দৃষ্টি দিল।

খাবার শেষে মেঘ হাত পরিষ্কার করে আবিরের পাশে গিয়ে বসে। আবির মেঘের হাতে হাত রেখে বলল,

_কেন জানি না আজ তোমাকে অন্যরকম লাগছে?
_কী রকম?
_এইভাবে তুমি আমার কাছে আসবে, আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।
_চিমটি কেটে দেখো, সবটাই সত্যি। আমি সত্যিই তোমার কাছে আছি।
_এই মুহূর্তটা যেন কোনদিনও না শেষ হয়।
_সেটা তো আমিও চাইছি। সময়টা আজ এখানেই থমকে যাক।
_সত্যি!
_হ্যাঁ, সত্যি। এবার চলো আমরা জ্যোৎস্না বিলাস করবো।
_চলো।

আবির মেঘের কাঁধে হাত রেখে মেঘকে নিয়ে জানালার কাছে যায়। রুমের ভেতরের অন্য একটা জানালার কাছে নিয়ে যায়। এই জানালাটা কাচের। জানালা দেখে মেঘ ভরকে গেল। এই পর্দার আড়ালে যে এত বিশাল মাপের জানালা ছিল, আগে কেন দেখলো না? কী বোকার মতো কাজটা করলো মেঘ। এতদিন যে রুমে ছিল এটা তো সে রুম না। আজকের রুমটা আলাদা। সন্ধ্যেবেলাতেই আবির মেঘকে এইরুমে নিয়ে আসে। তার আগে বন্দি রুমে ছিল মেঘ। মেঘ আবিরকে বলল,

_আজ আকাশটা বড্ড সুন্দর!
_তুমি আছো তো, তাই।
_ইশ! এতো প্রেম আগে কোথায় ছিল?
_তুমি তো শুধু শ্রাবণ, শ্রাবণ করতে। তাই তো আমার ভালোবাসা বুঝতে পারোনি।
_হুম। যে আমাকে বুঝে না, আমি বোকার মতো তাকে নিয়ে ভেবে গেছি।
_একদম ইমোশনাল হবে না। আমি আছি তো পাশে।
_তুমি আছো বলেই তো ভরসা পাচ্ছি।

মেঘের মুখ থেকে এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কথাবার্তা শুনে আবির সত্যি সত্যি অবাক হচ্ছে। কিন্তু এই ভেবে আবিরের ভালো লাগছে যে, মেঘ তার কাছে ধরা দিয়েছে।

চলবে…

ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here