বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ৩৯

0
1487

বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ৩৯
#আনিশা_সাবিহা

–“হ্যাঁ ইমন ভাইয়ার বউ। সুন্দর না? সাথে খুবই মিশুক। কয়েকদিন আগে তো শুনলাম সায়রা ভাবি প্রেগন্যান্ট। তোকে বলাই হয়নি এসব ব্যাপারে। তুই তো ফোনে কথা বললে সময়ই দিস না। তাই বলতে পারিনি। যাই হোক তুই আয় আমি যাচ্ছি।”
বলেই ব্যস্ত পায়ে আসরের দিকে বাকি সকলের সঙ্গে এগিয়ে গেল। ঐশীর কথাগুলো ঐশানীর মনে এক অন্যরকম প্রশান্তি এনে দিল। তার মনটা বলে উঠল…..
–“আমার শ্যামলা ঘোড়া কি এখনো আমার অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে আছে?”

অন্যদিকে তার মস্তিষ্ক তাকে বলে আরেক কথা। মস্তিষ্ক তার মনকে ঠেস মেরে বলে…..
–“থাকলে বা তোর কি? এমন মনে হচ্ছে তুই নিজের সংসারে আবার ফিরে যাবি! বিয়ে শেষে আবার তো সেই ফিরে যাবি চট্টগ্রামে। দেন তোর শ্যামলা ঘোড়াকে একাই জীবন কাটাতে হবে। তুই মস্ত বড় মাছ বিক্রেতা ঐশানী! নিজেও সুখে থাকছিস না আবার নিজের বরকেও সুখে থাকতে দিচ্ছিস না।”
এভাবেই চলতে থাকল মন আর মস্তিষ্কের ঝগড়া। মনের যুক্তি আর মস্তিষ্কের যুক্তি একত্রে মিলানো অসম্ভব তবে তিক্ত হলেও সত্যি যে মস্তিষ্ক সবসময় সঠিক কথা বলে। আর মন সবসময় আবেগ দিয়ে বিচার করে। তাই মস্তিষ্কের কথা শোনাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

একভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পেছনে কোনো অন্য ব্যক্তির উপস্থিতি টের পায় ঐশানী। চট করে পেছন ফিরে তাকাতেই চোখটা স্থির হয়ে যায় মানুষটার দিকে। দুই বছর পর অভয়কে দেখছে ঐশানীর চোখজোড়া। তার চোখজোড়াকে কি আর সরাতে পারবে? সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে যায় ঐশানীর। সারা রাজ্যের অস্বস্তি ভর করে তার মাঝে। মাথা নোয়াতে চেয়েও পারছে না সে। মানুষটা ঠিক আগের মতো নেই। বড় ঘন দাঁড়ির কারণে ঢেকে গিয়েছে অভয়ের থুঁতনির মাঝখানে খাঁজকাটা দাগ। যেটা ঐশানীর সবচেয়ে বেশি আকর্ষনীয় লাগতো। ওই থুঁতনি যে ঐশানীর ওষ্ঠদ্বয় কতবার ছুঁয়েছে তার হিসেব নেই। লোকটার পরনে হলুদ শেরওয়ানি তার ওপরে সাদা রঙের কটি। কটিতে গোল্ডেন সুতো দিয়ে কাজ করা। পারফেক্ট ম্যান লাগছে তাকে।

–“আ…আপনি এখানে?”
অস্ফুটস্বরে কথাটা বলতেই অভয়ের বিদ্রুপের হাসি দিয়ে বলল…..
–“আশা করোনি নিশ্চয়! তবে সম্পর্কটা এখনো ছিন্ন হয়নি। কাগজে কলমে এখনো আমি এই বাড়ির জামাই। হয়ত মনের দিক থেকেও সম্পর্কটা এখনো ছিন্ন হয়নি।”
ঐশানী কথা আঁটকে আসছে। অভয় তা দেখে ভীষণ মজা পাচ্ছে। তবে সে হাসছে না। ঐশানীর নিরবতা দেখে সে আবার বলল…..
–“আগে তো কথা চালু করলে আর শেষ হবার নাম নিতো না। আর এখন তোমার পেট থেকে কথা বের করা দুর্দায় হয়ে পড়েছে।”

–“আমি আসছি। আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।”
বলেই তাড়াহুড়ো করে অন্যদিকে যাওয়ার জন্য পা ফেলে ঐশানী। সঙ্গে সঙ্গে পথ আঁটকে দাঁড়ায় অভয়। শয়তানি হাসি দিয়ে বলে….
–“আরে দাঁড়াও। এতো তাড়া কীসের? প্রেমে পড়ার ভয় পাচ্ছো?”
–“প্রেম? কীসের প্রেম?”
ইতস্ততবোধ করে বলে ঐশানী। অভয় নিজের হাসি প্রসারিত করে বলে…..
–“যেই প্রেমের জগত থেকে উঠে আমার পরোয়া না করে দূরে চলে গিয়েছিলে আবারও যেন সেই প্রেমে না পড়ো তার ভয় পাচ্ছো? নাকি তুমি ভুল করেছো বলে পালিয়ে যাচ্ছো?”

–“আমি কোনো ভুল করিনি। আর না আপনার প্রেমে পড়ার ভয় পাচ্ছি। যেই প্রেমময় ভালোবাসায় আমি আগেই নিজের সর্বাঙ্গ আপনাকে দিয়ে দিয়েছি সেই প্রেমে পড়ার ভয় আর নেই আমার।”
–“তাহলে কেন চলে গিয়েছিলে?”
থমথমে গলায় প্রশ্ন করে অভয়। ঐশানী মিনমিন করে বলে…..
–“এর উত্তর আপনিও জানেন আর আমিও জানি।”
ঐশানীর ডাক পড়ে তখনই। চলে যায় সে একপ্রকার পালিয়ে। অভয় তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে।
–“পালিয়ে যাওয়ার অভ্যেস তোমার অনেক পুরোনো। তবে পালিয়ে গিয়ে ঘুরেফিরে আমার কাছেই আসার অভ্যেসটাও সেই পুরোনোই!”

রাত আটটা বেজে পার হয়ে গিয়েছে। অনুষ্ঠান জমজমাট হয়ে উঠেছে। আশ্চর্যজনক ভাবে ঐশীর পাশে বসা ঐশানীকেও যে পারছে গায়ে হলুদ লাগিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। সে বারণ করা সত্ত্বেও মানছে না। হলুদ লাগিয়ে একেবারে যেনতেন অবস্থা তার। নিজের বিয়েতেও এভাবে কেউ হলুদ লাগায়নি তাকে। অবশ্য অভয় যা কান্ড করেছিল! যেভাবে দুধে-হলুদে ওকে গোসল করিয়েছিল অন্য কাউকে আলাদা করে হলুদ লাগানোর দরকারই ছিল না।
ঐশানীকে হলুদ লাগানো দেখে দূরে এক কোনায় দেওয়াল ঘেঁষে মিটিমিটি হাসছে অভয়। নিজের বিয়েতে ঐশানীকে ঠিকঠাক লক্ষ্য করেনি অভয়। হলুদের সাজে মেয়েটাকে এতোটা সুন্দর লাগে জানলে হয়ত ওর গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের দিনই উম্মাদ করে ফেলত তাকে। ফুলের গয়না মোড়ানো মেয়েটাকে সদ্য লাল গোলাপের মতোই লাগছে!!

অভয়ের পাশে এসে এক নারী দাঁড়ানোতে ঐশানীর দিক থেকে চোখ সরিয়ে পাশে তাকায় সে। সায়রাকে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়ায় সে। সায়রা হাসিমুখে ঐশানীকে ইশারা করে বলে…..
–“অবশেষে ও এসেছে। অভয় মনে হচ্ছে লাইফ আমাকে একটা চান্স দিয়েছে তোমার সঙ্গে ওর সম্পর্কটা ঠিক করানোর জন্য। আমার মনে হয় না এই সুযোগটা আমার মিস করা উচিত! কি বলো?”
–“না সায়রা। আর তোমায় আগেও বলেছি ঐশানী তোমার জন্য আমায় ছেড়ে যায়নি। নিজের বোকা মাথায় বোকা যেই বুদ্ধি এসেছে সেই কাজটা করেছে। তুমি সেকারণে দায়ি নও। ঐশানী আমার কাছে ফিরবে। নিশ্চয় ফিরবে। তুমি চিন্তা করো না।”

সায়রা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। নিজের আগের পাগলামির জন্য সে সত্যিই অনুতপ্ত। সে মনেপ্রাণে চায় ঐশানী ফিরে আসুক অভয়ের জীবনে। আগের ন্যায় আলোকিত করে তুলুক অভয়ের জীবন।
–“কিন্তু তবুও কোথাও না কোথাও নিজেকে আংশিক দায়ি বলে মনে হয়।”
–“তুমি এই বিষয় নিয়ে মাথা ঘামিয়ো না। শুনলাম তোমার সংসারে জুনিয়র আসতে চলেছে? কংগ্রাচুলেশনস…! এভাবেই ভালো থেকো।”

–“অল ক্রেডিট গজ টু ইউ অভয়। সেদিন তুমি যদি আমার সঙ্গে বোঝাপড়া না করতে সুন্দর ভাবে লাইফের স্বপ্ন না দেখাতে হয়ত আমি একই জায়গায় পড়ে থাকতাম।”
অভয় সায়রার জবাবে নিঃশব্দে হেসে ঐশানীর দিকে তাকায়। সায়রাও ঐশানীর দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলে….
–“আমি তো জানতাম ঐশীর গায়ে হলুদ হচ্ছে। কিন্তু ঐশানীর এমন অবস্থা কেন? আচ্ছা অভয় এটা কি তোমার প্লান?”
অভয় শুধু মাথা নাড়ায়। সায়রা উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বলে….
–“রিয়েলি? তাহলে যাই দুই বধূকে হলুদ মাখিয়ে আসি।”
–“ওকে গো।” (একগাল হেঁসে)

হলুদ মাখা মুখে একপ্রকার জুবুথুবু হয়ে বসে ছিল ঐশানী। এতো ভীড়ের মাঝে না চাইতেও তার চোখ গেল হেসে হেসে কথা বলা অভয় আর সায়রার দিকে। দুজনকে এভাবে কথা বলতে দেখে চোখজোড়া সরু হয়ে এলো তার। হঠাৎ করেই রাগ হতে শুরু করল তার। তার এতো রাগ হচ্ছে কেন? রাগে কটমট করে পাশেই ঐশীর হাত জোড়ে চেপে ধরে বসে সে। ঐশী হকচকিয়ে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকায়। তার হাতের হার মাংস বোধহয় একাকার হয়ে গেল। চোখ বড় বড় করে সরিয়ে নেয় নিজের হাতটা। ঐশানীকে ধাক্কা দিয়ে ধীর গলায় বলল….
–“আপু তুই কি বাইরে গিয়ে রেসলিং শিখেছিস নাকি বক্সিং? এভাবে আমার তুলোর মতো সফট হাতকে চেপে ধরলে বিয়ের আগেই হাত ভেঙে বসে থাকব।”

কথাগুলো যেন ঐশানীর কান পর্যন্ত পৌঁছালোই না। তার তীক্ষ্ণ নজর সায়রা আর অভয়ের দিকে। সে নিজমনে বিড়বিড় করে বলে…..
–“সায়রার নাকি বিয়ে হয়ে গেছে? তাহলে ও শ্যামলা ঘোড়ার সাথে এভাবে কথা বলছে কেন? আর ওই অসভ্যটাও দাঁত কেলিয়ে কথা বলছে। এতো কথা কীসের হু?”
সায়রাকে নিজের দিকে আসতে দেখে দৃষ্টি সরিয়ে অন্যদিকে তাকায় ঐশানী।

সায়রা এসে প্রথমে ঐশীকে আর তারপর ঐশানীর গালে হলুদ ছুঁইয়ে দেয়। ঐশানী অবাক নয়নে গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে বলল….
–“আমায় কেন হলুদ ছোঁয়াচ্ছ? আমার বিয়ে নয়। ঐশীর বিয়ে।”
–“হ্যাঁ কিন্তু সবাই যখন দুই বোনকেই হলুদ মাখাচ্ছে আমি বাদ যাই কেন বলো?”
ঐশানী আর কোনো কথা বলল না। ওর রাগ হচ্ছে। কপাল কুঁচকে বসে থাকল। সায়রাকে বুঝিয়ে দিতে চাইল সে তার প্রতি বিরক্ত। কিন্তু সায়রা সেদিকে দৃষ্টিপাত না করেই ইমনের ডাকে অন্যদিকে চলে গেল।

এরপর আসল অনিন্দিতা আর ইশানের পালা। অনিন্দিতা ঐশানীর পাশে বসে শুধুমাত্র ঐশীকে হলুদ ছোঁয়ালো। সে বড্ড অভিমান করেছে নিজের ভাবির ওপর। তার ভাইকে একা ফেলে যাওয়াটা কি খুব প্রয়োজন ছিল? ঐশানীর দিকে এক পলক তাকিয়ে সে শুধু গম্ভীর কন্ঠে বলল….
–“এমন কাজ না করলেও পারতে। তুমি যাওয়ার পর নিজের ভাইকে সবচেয়ে বেশি অসহায় দেখেছি। এতোটা অসহায় করা খুব প্রয়োজন ছিল কি? আমি এটা অন্তত তোমার থেকে এক্সপেক্ট করিনি।”
বলেই হাফ ছেড়ে উঠে গেল অনিন্দিতা। ঐশানী নির্বাক হয়ে রইল। তার দিকটা কেউ বুঝতেই চাইছে না। যেখানে নিজের পরিবারকে ঐশানী এতো বড় বিষয় জানায়নি সেখানে কি করে নিজের স্বামীকে এই খবর দিতো যে, সে কোনোদিন বাবা হতে পারবে না?

নিজের গালে এক চেনা ছোঁয়ায় চমকে তাকায় ঐশানীকে। অভয়কে ভ্রু উঁচিয়ে বসে থাকতে দেখে রাগটা যেন দপ করেই বেড়ে যায়। লোকটা হেঁসে হেঁসে কথা বলেছে সায়রার সাথে। অভয় বাঁকা হেসে আরেক গালে হলুদ ছোঁয়াতেই ঐশানী আচমকা একটা ভয়ানক কাজ করে বসে। তার সামনে থাকা হলুদের বাটিটা তুলে সরাসরি অভয়ের মুখে ছুঁড়ে মারতেই সব হৈচৈ থেমে যায়। রাগের বশে ঐশানী এমন কাজ করবে সে নিজেও জানতো না। অথচ সে একদিন নিজেই চিঠি লিখে জানিয়েছিল অভয়কে সায়রাকে বিয়ে করে নিতে। আজ নিজেই সামান্য সায়রার হেসে কথায় বলায় অভয়কে সবার সামনে এভাবে হলুদের বাটি ছুঁড়ে মারায় নিজেই হতভম্ব ঐশানী। অভয়ের চোখমুখে গাঢ় হলুদের প্রলেপ। ঠোঁটেও হলুদ লেগে রয়েছে। ভীতিকর চোখে তাকায় ঐশানী।

মিসেস. দিশা এসব দেখে ছুটে আসতেই মায়ের দিকে তাকিয়ে একটা টিস্যু মায়ের হাতে ধরিয়ে বোকা হাসি দিয়েই বলে….
–“উনাকে দিয়ে দিও।”
বলেই জিহ্বা কেটে মুখচোখ ঢেকেই নেমে যায়। ছুটে রুমের দিকে যায় সে। অভয় নিশ্চয় এখন রাগে জর্জরিত একটা সিংহ হয়ে রয়েছে! তার সামনে গিয়ে নিজে কিছুতেই বলি হবে না ঐশানী। রুমে এসেই দরজা হালকা ভিড়িয়ে দিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায় ঐশানী। আয়নায় চোখ লাগিয়ে নিজেকে দেখতে থাকে। চোখ বড় বড় করে বলে…..
–“তোর সাহস দেখে জাস্ট অবাক ঐশানী। কবে থেকে এতো বড় সাহস হলো তোর? তোর চেহারার তো পরিবর্তন হয়নি! কিন্তু সাহসিকতার এতো পরিবর্তন হবে ভাবিনি।”

কথাগুলো শেষ হতে না হতেই রুমের লাইট ওফ হয়ে গেল। থতমত খেয়ে অন্ধকারে আশেপাশে তাকায় ঐশানী। লাইট বন্ধ হলো নাকি কারেন্ট গেল? আশেপাশে হাতাতে হাতাতে দরজার কাছে যেতেই যখনই বেরোতে নেবে ঝড়ের গতিতে একজন ঘরে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দিল। আগন্তুক ব্যক্তিটার সাথে ধাক্কা খেয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়তে নিল ঐশানী। তবুও নিজেকে সামলে নেয় সে। এভাবে অসভ্যের মতো কে তার ঘরে ঢুকল ভেবেই পাচ্ছে না সে।
–“এই কে? কে এলো আমার ঘরে আমার পারমিশন ছাড়া?”
ঘরে থাকা মানুষটা জবাব দিল না। ঐশানীর কাঁধে কারো হাত পড়তেই লাফিয়ে ওঠে সে। সরে যেতেই মানুষটা তার কোমড় টেনে কাছে আসে।

বর্তমানে মানুষটাকে মোটেও আগন্তুক মনে হচ্ছে না তার। লোকটা তার চেনা। কেঁপে উঠতেই লোকটা নিজের গালের সঙ্গে ঐশানীর গাল চেপে ধরে। নড়াচড়া করেও ছাড় পেলো না ঐশানী।
–“দুইবছরে সাহস ভালোই বেড়েছে তোমার। ভালোবেসে হলুদ মাখাতে পারতে। কিসের ক্ষোভ প্রকাশ করলে এভাবে হু? রাগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করার কথা আমার। আর উল্টে তুমি রাগ ঝাড়ছো? দ্যাটস নট ফেয়ার! আজকে এই পর্যন্তই থাক। বাড়ি ভর্তি মেহমান। এই হিসেব তোলা রইল। কাল রাতে গুনে গুনে শোধ তুলব বউ।” (থুঁতনি জোরে চেপে ধরে)

ঐশানীর বুঝতে দেরি হয় না ব্যক্তিটা কে। ঢক গিলে কিছু বলতেই ব্যক্তিটা তাকে ছেড়ে ঝড়ের বেগেই বেরিয়ে যায়। ঐশানী হা করে তাকিয়ে থাকতেই লাইট চলে আসে। আয়নার দিকে তাকায় সে। তার গলায়, গালে আর ঠোঁটের পাশে হলুদের ছোঁয়া। না চাইতেও সুখকর অনুভূতি খেলে যায় তার মনে। সে কি পুনরায় ভালোবাসার বাঁধনে জড়িয়ে পড়ছে?

সকাল হতে না হতেই বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়। কোনোরকমে সকালের নাস্তা করেই হুড়মুড় করে ঐশানী ঢুকে পড়ে ঐশীর ঘরে। সেখানে ঐশীকে রেডি করানো হচ্ছে। রেডি করানো হচ্ছে বললে ভুলই হবে। কেননা ঐশী ঐশানীর জন্যই বসে ছিল। ঐশানীর আসতে দেরি হলো কারণ সে মন দিয়ে অভয়কে খুঁজেছে একপলক দেখার জন্য। কিন্তু পায়নি। লোকটা কোথায় কে জানে!
–“তোর এতোক্ষণে সময় হলো আসার? জানিস কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি? আয় তোরে বউ সাজা….”
ঐশী রিনির হাতে চিমটি দিতেই মুখে কুলুপ এঁটে দেয় রিনি। সে মাঝেমধ্যেই বেফাঁস কিছু বলে ফেলে।

ঐশানী ভ্রু কুঁচকে তাকায়। সন্দিহান হয়ে বলে…..
–“আমাকে বউ সাজিয়ে দিবি মানে? বিয়ে তো ঐশীর তাই না?”
–“আরে বান্ধবী, রিনির মুখের ব্যালেন্স নেই। ওর কথা কেন বিশ্বাস করিস বল তো? আয় ঐশীকে তৈরি করায় সবাই মিলে।”
দিয়া বলেই বোকা হাসি দিয়ে শাড়ি তুলে ধরে। সকলে মিলে ঐশীকে তৈরি করাতে শুরু করে। প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে ওকে রেডি করানোর এক পর্যায়ে ঐশী মেঘনাকে ইশারা করতেই মেঘনা মাথা নাড়িয়ে আলমারি থেকে আরেকটা বেনারসি বের করে। তা খেয়াল করে ঐশানী ব্যস্ত কন্ঠে বলে….
–“এটা কার জন্য?”

–“তোর জন্য। আয় তোকে তৈরি করিয়ে দিই।”
ঐশানীকে টেনে বলে রিনি। ঐশানী হাত ছাড়িয়ে বলে…..
–“আমার জন্য মানে? আমি বেনারসি পড়ে কি করব?”
–“আরে পড় না। আজ আমরা সবাই বউ সাজব। আজ আমরা ঐশীর হবু বর মানে রিত্তিক জিজুর পরিক্ষা নেব। ঐশীকে উনি চিনতে পারেন কিনা সেটাই টেস্ট নেব।”
দাঁত কেলিয়ে বলে দিয়া। ঐশানী মানা করলেও সকলে মিলে জোর করেই ওকে তৈরি করিয়ে দেয়। জোরাজুরিতে ঐশীও বাদ ছিল না। ঐশানীর বোঝার বাইরে চলে যাচ্ছে সবকিছু।

ঐশানীকে রেডি করানোর পরে বাকি সকলে রেডি হতে বাইরে চলে যায়। ঐশীর ঘুম পাচ্ছে। সে ভাবছে তার বোনের মতো অবস্থা আবার না হয়! ঐশানীকে সে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল….
–“আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি থাক।”
ঐশী গিয়ে ওয়াশরুমে ঢোকে। ঐশানী কিছুক্ষণ বসে থেকে ভাবে তার বোনের বিয়ে সে যদি এভাবে বসে থাকে তবে কি তার চলবে? বাহির থেকেও কয়েকবার তার ডাক এসেছে। এই ভেবে বেরিয়ে বাইরে বের হয় সে। দ্বিতীয় ফ্লোরে তেমন কোনো লোকের আনাগোনা নেই। সামনে এগোতেই রিনি আর দিয়াকে দেখতে পায় সে। কানে আসে ওদের কথোপকথন।
–“হায় আমাদের বান্ধবীর কি ভাগ্য! ওর সেকেন্ড বিয়ে হতে চলেছে নিজের বোনের সাথে। আর আমার একবারও হলো না।”

–“আমার তাও একবার হয়েছে। একটা কাজ করি তুই তোর পছন্দমতো পাত্র ধরে নিয়ে আয়। আমিও আমার বরকে নিয়ে আসি। সবাই একসাথে বিয়ে করে ফেলি। আইডিয়াটা কেমন?”
দিয়ার জবাবে রিনি দাঁত কেলিয়ে বলে। অন্যদিকে ওদের কথোপকথনে মাথা কাজ করা বন্ধ করে দেয় ঐশানীর। সেকেন্ড বিয়ে মানে? আবার কার সঙ্গে বিয়ে দিতে চায় সবাই? অভয়ের সঙ্গে তো তার বিয়ে হয়েছিল এখনো তাদের ডিভোর্সও হয়নি। অভয়কে ছেড়ে অন্য কারো সঙ্গে বিয়ে দেওয়া প্লানিং করছে না তো? মাথাটা ভনভন করে ওঠে ওর। দিশেহারা হয়ে পড়ে। সে অন্যপ্রান্তে দ্রুত হাঁটতে শুরু করে।

–“আমি অন্যকারো সাথে বিয়ে করতে পারব না। আমি উনাকে এখনো ভালোবাসি। আমি সেকেন্ড বিয়ে করব না। তার থেকে ভালো আমি পালিয়ে যাব।”
কথাগুলো বলতে বলতে করিডোরের শেষপ্রান্তে এসে কারোর সঙ্গে ধাক্কা খায় ঐশানী। মুখ তুলে চেয়ে অভয়কে দেখেই আগপাছ না ভেবে জড়িয়ে ধরে সে। অভয় কয়েকধাপ পিছিয়ে গিয়ে ঐশানীর কর্মকান্ডে মুচকি হাসে।
–“কি ব্যাপার? হঠাৎ আমাকে জড়িয়ে ধরার ব্যাপারটা হজম হচ্ছে না।”

ঐশানী অভয়ের শেরওয়ানি খামচে ধরে কান্নারত অবস্থায় বলে…..
–“ওরা আমাকে আবার বিয়ে দেবে। আমি বিয়ে করব না। আমি তো এখনো আপনার স্ত্রী বলুন? আমি অন্যকাউকে বিয়ে করব না। সবাইকে বলে দিন না প্লিজ।”
অভয় ঐশানীর কথা শুনে মুচকি হাসে। মেয়েটা হয়ত কারো অল্প কথোপকথন শুনে ভুলভাল বুঝে ফেলছে। অভয়ের প্লানই তো ছিল এটা। ঐশানীকে দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে চায় সে। কিন্তু ঐশানী ভাবছে তার সঙ্গে অন্যকারো বিয়ে হচ্ছে। এই বিষয়টার সুযোগ উঠালে মন্দ হবে না।

অভয় গলা খাঁকারি দিয়ে বলে….
–“আমি কি করে? তুমি তো আমাকে ছেড়ে চলে গেছ। বিয়ে করে ফেলো।”
–“না না। আমি করতে পারব না। আপনি ছাড়া অন্য কাউকে নিজের বর রুপে দেখতে পারব না।”
অভয় বাঁকা হেসে বলে…..
–“একটা শর্তে অন্যের সঙ্গে বিয়েটা আটকাতে পারি।” (চাপা হেসে)
–“সব শর্ত মানব আপনি বলুন।”
উত্তেজিত হয়ে বলে ঐশানী। অভয় থমথমে গলায় বলে…..
–“আবার বিয়ে করতে আমাকে। পারবে?”
–“হ্যাঁ পারব পারব। আপনাকে দুইবার কেন দুহাজার বার বিয়ে করতে রাজি। কিন্তু অন্য কাউকে কখনোই নয়। আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমি রাজি।”

চলবে……

[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here