বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ৩৮

0
1395

বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ৩৮
#আনিশা_সাবিহা

খোলা বারান্দায় ঠান্ডা হাওয়া উপভোগ করছে অভয়। বেতের চেয়ারে পায়ের ওপর পা তুলে ফোনের দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে সে। ফোনের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে ঐশানীর হাসিমাখা একটি ছবি। ছবিতে ঐশানীর পরনে সবুজ রঙের একটা জরজেট শাড়ি। বরাবরাই অভয়ের কাছে সবথেকে বিরক্তির রঙ ছিল সবুজ। তার মতে সবুজ রঙ প্রকৃতি ছাড়া কারো গায়ে মানানসই নয়। তবে যেদিন ঐশানীকে সবুজ রঙের শাড়িতে দেখেছিল স্থির হয়ে গিয়েছিল অভয়ের দুটো চোখ। যেই রঙটা অপছন্দ করত সেই রঙটা তার হুট করেই পছন্দের হয়ে উঠল। আচ্ছা, ভালোবাসার মানুষকে যেকোনো রঙেই আলাদা আলাদা সুন্দর লাগে? হয়তবা!

–“ভাইয়া, তোর মাথায় কি চলছে?”
অভয় ভাবনা ছেড়ে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায়। অনিন্দিতা নিঃশব্দে হেঁটে এসে অভয়ের পাশের চেয়ারে বসে পড়ে। অভয় ছোট্ট করে গম্ভীরতার সঙ্গে জবাব দেয়…..
–“আমার মাথায় আবার কি চলবে?”
–“সেটাই তো জানতে চাইছি। (একটু থেমে) আর কেউ না জানুক আমি জানি ভাবির খবর তুই জানিস।”
অভয় ফোনের দিকেই তাকিয়ে থাকে। এমন ভাব করে থাকে যেন ও কিছু শোনেই নি। অনিন্দিতা হতাশ চোখে তাকায়।

–“ভাইয়া? আমার কথা শুনছিস?”
–“হুমম শুনছি বল।”
–“তুই তো জানিস ভাবি কোথায় থাকে। আমি এটাও জানি ভাবি কি করে না করে সব খবর তুই রাখিস।”
–“হুমম তো?”
অনিন্দিতা অভয়ের যুক্তিহীন প্রশ্নে চোখমুখ জড়িয়ে তাকায়।
–“তো মানে কি? তুই কেন আমাদের ওর কথা বলিস না? কেন গিয়ে নিয়ে আসিস না ভাবিকে? তুই তো ভাবিকে ভালোবাসিস।”

–“আমি ওকে গিয়ে নিয়ে আসব না। ও যেভাবে নিজের ইচ্ছায় গেছে সেভাবেই নিজের ইচ্ছায় আসতে হবে। ও অনেক বড় ভুল করেছে। আমাকে ভালোবাসা শিখিয়ে পালিয়ে গেছে। আর অবশ্যই এটা কোনো সমাধান হতে পারে না। হ্যাঁ আমি ওর খবর গত এক বছর ধরে রাখি। ওর কাছে যাই না। আমারও তো একটা আত্মসম্মানবোধ আছে! নেই কি? সেই আত্মসম্মানবোধ থেকেই ওকে আমি গিয়ে নিয়ে আসিনি। ওর ভুল শুধু এবং শুধুমাত্র ওকেই শুধরাতে হবে। ওকে নিজ থেকে আমার কাছে আসতে হবে।”

অনিন্দিতা হতভম্ব হয় অভয়ের এইরূপ কথা শুনে। সেও জানতো না অভয় ঐশানীর খবর এতোদিন ধরে জানে। এক আকাশ সমান বিস্ময় নিয়ে বলে….
–“ভাইয়া তুই ভাবির খবর এতোদিন ধরে জানতিস? তাহলে তো ওর পরিবারকে জানানো উচিত ছিল! আর তুই একটু বেশিই করে ফেলছিস না? ভাবি তো ভেবেছিল যে, অন্য সবার মতো তোরও বাবা হবার ইচ্ছে রয়েছে। আর…..”
–“ওরা জেনে কি করবে? আমার ফাদার ইন লো ঐশানীর ওপর এতোটাই ক্ষুব্ধ ওর কর্মকান্ডে যে ওর এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর উনি ঐশানীকে খোঁজার
চেষ্টা অবধি করেননি। উনার মতে ঐশানী উনার প্রিয় বন্ধু আই মিন আমার বাবার কাছে উনার মাথা নিচু করিয়ে দিয়েছেন। তাছাড়া আমি বেশি বেশি করছি? ঐশানী করেনি? আর বাবা হওয়ার ইচ্ছে থাকলেই ওর কি মনে হয়েছিল? ওকে আমি ছেড়ে দিতাম?”

ক্রোধের সাথে কথাগুলো এক নিশ্বাসে বলে জোরে জোরে হাঁপাতে লাগল অভয়। হাফ ছেড়ে সে আবার বলে…..
–“ও বোঝেনি আমায়। ও কখনো বোঝেনি। ও এটা বোঝেনি যে বেলা শেষে শুধু আমি ওকেই চেয়েছিলাম।”
অনিন্দিতারও এবার খারাপ লাগতে শুরু করে। ধীর গলায় বলে…..
–“তোর কেন মনে হচ্ছে ও ফিরে আসবে? এতোদিন যখন আসেনি। আজ কি করে আসবে?”
–“আসবে, আসবে। বোনের বিয়ে আর ও আসবে না?”

অনিন্দিতা উৎসুক হয়ে তাকায়। অভয়ের মাথায় যে কখন কি চলছে তার অজানা। কেউ আন্দাজও করতে পারে না। অভয় কিছুক্ষণ শান্ত হয়ে বসে থেকে ফোনটা অন করে কারোর নম্বরে কল করে কানে ধরে। সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ হওয়ায় স্তম্ভিত হয়ে বলে……
–“আরেহ বাহ শালিকা! মনে হচ্ছে আমার কলের আশায় বসে ছিলে?”
ওপাশ থেকে কিটকিটিয়ে হাসার আওয়াজ আসে। হাসি থামিয়ে ঐশী বলে ওঠে……
–“হ্যাঁ ভাইয়া ঠিকই ধরেছেন। আমি আমার কাজ করে দিয়েছি। আপনার শালিকা এক্টিং এ বড্ড পাকা। আপু আমার বিয়েতে আসছে।”

–“আসতে তো হতোই। নয়ত যোগাযোগ ছিন্ন করে দিতে কি না!”
অভয়ের কথায় ফিক করে হাসে ঐশী।
–“আচ্ছা আপনি কবে আসছেন তাই বলুন।”
–“তোমার বোন যখন বিয়ে বাড়িতে পা রাখবে। তখনই ধরে নিও আমি এসে গেছি।”
–“কিন্তু সমস্যা তো একটাই ভাইয়া!!” (অসহায় কন্ঠে)
অভয়ের কপালে ভাঁজ পড়ে। কি সমস্যার কথা বলতে চায় ঐশী? ফিচেল গলায় প্রশ্ন করে…..
–“কি সমস্যা?”

–“বাবা। বাবা খুব রেগে আছে আপুর ওপর সেটা তো আপনি জানেন। আমি বুঝতে পারছি না বাবা যদি বিয়ে বাড়িতে আপুকে দেখে ওভার রিয়েক্ট করে বসে তো?”
–“আই ডোন্ট থিংক সো! বাবা বরাবরই বুদ্ধিমান মানুষ। উনি সকলের সামনে এমন ওভার রিয়েক্ট করবেন না। আমি রাখছি ওকে?”
–“ঠিক আছে।”
অভয় ফোন কেটে দিয়ে অনিন্দিতার দিকে তাকায়। অনিন্দিতা হা করে তাকিয়ে আছে। অভয় ওর মুখের সামনে চুটকি বাজিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। মুখ দিয়ে হাই তুলে বলে…..

–“হা করে থাকলে মশা ঢুকে যাবে। ডিনার টাইম হয়ে গেছে আর তোর বর এবং আমার একমাত্র দুলাভাই হয়ত এতোক্ষণে পেটে হাত দিয়ে বসে গেছে। যা রান্নাঘরে। আমিও আসছি।”
–“কিন্তু ভাইয়া তুই কি করতে চাইছিস? তুই যে বলেছিলি ভাবিকে নিজে থেকে তোর সামনে আসতে হবে নয়ত তুই যাবি না।”
অভয় হঠাৎ করেই ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে। তবে তা অনিন্দিতার থেকে লুকিয়ে।
–“আমি তো যাচ্ছি না। ঐশানী আসছে। হ্যাঁ এটা ঠিক আমি ওকে নিয়ে আসছি। কি করব? ওকে ছাড়া আমার একটা মূহুর্তও ভালো কাটছে না। মাঝে মাঝে সেলফিশ হতে হয়। আমিও না হয় হবো। এতো ভাবিস না।”
অনিন্দিতার পাশ কাটিয়ে চলে আসে অভয়।

হতাশ চোখেমুখে বসে আছে ঐশানী। ভ্রুযুগল তার হালকা কুঁচকানো। পাশেই আধশোয়া হয়ে আছেন রমিলা বেগম। অনেকক্ষণ ধরেই ঐশানীকে পর্যবেক্ষণ করছেন উনি। ঐশানী এমন উদ্ভট মুখভঙ্গি দেখে বললেন…..
–“এমন ভূতের মতো ফোনের দিকে তাকিয়ে কি ভাবছিস বল তো?”
–“আন্টি, কালকে সকাল, দুপুর বা বিকেলের কোনো বাসের টিকিট নেই। একবারে রাত বারোটার বাস ফাঁকা।”
–“তো সমস্যা কি? ট্রেনে যা না!”

–“ট্রেনে গেলে আরো দুইদিন আগে থেকে বুকিং করিয়ে রাখলে ভালো হয়। তাছাড়া সিট পাবো না তো। আর ট্রেনে গেলে অনেক দেরি হয়ে যাবে। কালকের পরের দিনই ঐশী গায়ে হলুদ।”
–“তাহলে তোর বরকে ফোন দিয়ে বল গাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে।”
ব্যঙ্গ করে বলেই ফিক করে হেসে ফেলেন রমিলা বেগম। ঐশানী সরু চোখে তাকায়। এটা তার কাছে নতুন কিছুই না। রমিলা বেগম কথায় কথায় অভয়ের কথা টেনে আনেন। কেন অভয়ের প্রসঙ্গ বারে বারে তোলেন তা জানা নেই ঐশানীর।

ঐশানী সরু চোখে তাকাতে দেখেই রমিলা বেগম ওর কাঁধ হালকা ঝাঁকিয়ে বলেন…..
–“এভাবে তাকিয়ে লাভ নেই। আমি তোকে ভয় পাই না হুমম….!”
–“তোমার কি মনে হয় আমি তোমাকে ভয় দেখানের জন্য এভাবে তাকাচ্ছি?”
রমিলা বেগম ঠোঁট বাঁকিয়ে বলেন…..
–“কি জানি! তা কয়টার বাসের সিট বুকিং করলি তুই?”
–“ওই রাত বারোটা। পৌঁছাতে পৌঁছাতে ভোর হয়ে যাবে।” (দীর্ঘশ্বাস ফেলে)

–“সেকি রে! রাত বারোটার দিকে বাসে উঠবি মানে তো অনেক রাত। একা মেয়ে যাবি কি করে এতো রাতে?”
হতভম্ব হয়ে বলেন রমিলা বেগম। ঐশানী মুচকি হেসে বলে…..
–“এটা নিয়ে আমিও চিন্তায় ছিলাম কিন্তু রাহিদ ভাই(স্কুলের সহকর্মী শিক্ষক) আমায় পৌঁছে দেবেন বলেছেন। আর শোনো আমি লতাকে বলে দিয়েছি ও শুধু কাজই করবে না তোমার সঙ্গে এসে থাকবেও কয়েকদিন আমি যতদিন না আসছি ততদিন।”

রমিলা বেগম মুখে হাত দিয়ে হেসে বিড়বিড়িয়ে বলেন….
–“ওকে বরং তুই পারমেন্টলি এখানে রেখে দে। তুই আর ওখান থেকে ফিরতে পারবি না।”
ঐশানী রমিলা বেগমের অস্পষ্ট কথা শুনে চাপা সুরে বলে…..
–“কিছু বললে? শুনতে পেলাম না। আবার বলো।”
–“তোর ওতো শুনতে হবে না। বাংলার খবর একবাই হয়। যাহ নিজের ঘরে যা। ঘুমিয়ে পর। রাত কম হয়নি।”
একনাগাড়ে কিছুক্ষণ রমিলা বেগমের দিকে তাকিয়ে থেকে উনাকে শুইয়ে লাইট ওফ করে দিয়ে চলে আসে ঐশানী। কালকের পরের দিন আবারও দুই বছর পর সেই শহরে ঐশানী প্রবেশ করবে তার দুরুদুরু মন নিয়ে।

একদিন পর……
চারিদিকে লাইটিংয়ে ঝলমলিয়ে উঠছে। চারিদিকে খুশির আমেজ। ঐশীর গায়ে হলুদ বলে কথা! চারিদিকে গমগমে পরিবেশ। এই ঝলমলে পরিবেশে এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে ঐশানী। পরনে তার হলুদ রঙের শাড়ি। ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে নিজের বাবার দিকে। ইমতিয়াজ সাহেব গাম্ভীর্যের সঙ্গে অন্যদিকে তাকিয়ে আছেন। একসময় মুখ খোলেন তিনি।
–“কেন এখানে এসেছিস তুই? এতোদিন পর হঠাৎ করে নিজের বাড়ির কথা মনে পড়ল যে!”
–“আসলে বাবা…..”

ইমতিয়াজ সাহেব হাত নাড়িয়ে ঐশানীকে থামিয়ে দেন।
–“আমার কথা এখনো শেষ হয়নি। তুই যখন নিজের ইচ্ছেতে নিজের শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলি তখন আমি কিছু বলিনি। আমার মানসম্মান আমার প্রিয় বন্ধুর সামনে ডুবিয়ে দিয়েছিলি সেদিন আমার কাছে বলার মতো কিছুই ছিল না। আজ বোনের বিয়ে তাই চলেও এলি। তুই কি ভেবে রেখেছিস? তোর যা ইচ্ছে তাই করবি? তোর এসব ইচ্ছেতে বাকিদের ওপর কতটা ইফেক্ট পড়ে সেটা ভেবে দেখেছিস?”
–“আই এম সরি বাবা। আমি তখন অনেক ভেবে দেখেছিলাম। কিন্তু এর চেয়ে সঠিক রাস্তা আর আমার কাছে জানা ছিল না।”

–“সঠিক রাস্তা? তুই এখনো এতোটাও বড় হসনি যে সঠিক আর ভুল রাস্তা তুই একাই যাচাই করতে পারবি। যখন এখানে এসেই পড়েছিস তোকে যেতে বলব না। হাজার হোক নিজের রক্ত তো! মায়া লাগে। বিয়ে শেষ হলে ফিরে যাবি। সেদিনই ফিরে যাবি। যাগগে আর বেশি কথা বলব না। বিয়ের পরিবেশ। আমার কথা মাথায় রাখবি।”
ঐশানীর কোনোরকম কথা না শুনে অনুষ্ঠানে গিয়ে যোগ দেন ইমতিয়াজ সাহেব। ঐশানী সেভাবেই ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে। হঠাৎ করেই তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় মাথাচাড়া দিয়ে উঠে বলে ওকে কেউ লুকিয়ে দেখছে। ঘাড় ঘুড়িয়ে এদিক-ওদিক তাকায় ঐশানী। এমন কাউকে তার চোখে পড়ে না। সেই সময় ঐশী তার সামনে এসে দাঁড়ায়। তার পরনে হলুদের সাজ। গায়ে ফুলের গয়না। ঐশানীর নিজের গায়ে হলুদের কথা মনে পড়তেই মুখটা হাসোজ্জল হয়ে আসে তার।

–“এই আপু। এটা কি পড়েছিস?”
–“কেন কি পড়েছি? হলুদ শাড়ি পড়েছি। যেটা গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে পড়ে সেটাই পড়েছি। আর তুই এভাবে ছুটছিস কেন? বিয়ের কনে তুই। এমনভাবে ছুটাছুটি করতে আছে?”
ঐশী সেসবে পাত্তা না দিয়ে ঠেস মেরে বলে….
–“নিজের বিয়েতে কি করেছিলি মনে আছে? জ্বরের ঘোরে সরাসরি ভাইয়াকে কিস….”
বলেই নিজের মুখ চেপে ধরে হাসতে থাকে ঐশী। ঐশানী তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তার দিকে। তবে তারও হাসি পাচ্ছে। হাসিটা চেপে রেখেছে সে। অজান্তেই চোখজোড়া বড়ই অশান্ত হয়ে এলো অভয়কে এক পলকের জন্য দেখার জন্য। অভয় আদোও কি এসেছে? এলে তো একবার হলেও সে দেখতে পেতো। তবে কি অভয় আসেনি?

ঐশী ঐশানীর হাত ধরে টানতেই ঐশানীর ধ্যান ভাঙে।
–“আপু চল না আজ সুন্দর করে সাজবি!”
বায়না ধরে বলে ঐশী। ঐশানী ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ওর সাজ কি খারাপ হয়েছে নাকি? জোর গলায় বলে….
–“এটা তো ঠিকই আছে। চল তোকে হলুদ অনুষ্ঠানের আসরে নিয়ে যাই।”
–“তুই আগে আমার হাতে সাজবি তারপর আমি গায়ে হলুদে বসব!”
জেদ নিয়েই বলে ওঠে ঐশী। ঐশানী পড়ে যায় বিপাকে। তার উত্তরের অপেক্ষা না করে আরো কয়েকজন মেয়ে এসে হানা দেয়। তারা হলো ঐশানী বান্ধবীরা। ঐশানী মনে মনে আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। কতদিন পর সেই চেনা মুখগুলো!

–“মহারানীর দেখা অবশেষে পাওয়া গেল।”
ভেংচি কেটে বলল মেঘনা। দিয়াও মুখ বাঁকিয়ে বলে…..
–“হ্যাঁ হ্যাঁ। অবশেষে দেখা পেলাম। কবে যে আমাদের মহারানী এতো স্বার্থপর হয়ে গেল কে জানে! আমরা তোর মতো এতো স্বার্থপর নয়। দেখ তোর সঙ্গেই স্পেশালি দেখা করতে ছুটে এসেছি।”
ঐশানী দিয়ার মাথায় গাট্টা মেরে বলে…..
–“আমি এখনো সেই উদার। নয়ত…..”
–“হয়েছে হয়েছে। তোর লেকচার শুনতে আমরা আসিনি। চল তোর গায়ে হলুদের থুক্কু ঐশীর গায়ে হলুদের জন্য তৈরি হতে হবে।”
রিনি টেনে ঐশানীকে নিয়ে যায় ঐশীর রুমে।

এতোটুকু অবধি ঐশানী কিছু না বললেও ঐশানীর চোখে কাপড় বেঁধে দেওয়ায় হতবিহ্বল হয়ে পড়ল সে। চোখের কাপড় টানার চেষ্টা করে বলল…..
–“কি করছিস তোরা? আমার চোখের মেকআপ ঘেঁটেঘুঁটে গেল। পেত্নী সেজে ঘুরে বেরাবো তোদের সামনে? ভয়ে তো উল্টে পালাবি। ঐশী….! রিনি….!”
–“আপু চুপ কর না। তোকে রেডি করাচ্ছি। এটা তোর জন্য সারপ্রাইজ। সো যতক্ষণ না রেডি হচ্ছিস চোখের কাপড় খুলবি না।”
–“কিন্তু….!”
কিছু বলতে চেয়েও বলল না ঐশানী। বোনের বিয়ে তাই আবদার মেনে নিচ্ছে নয়ত কতগুলো চড় পড়ত ওর গালে সেটা ঐশানী নিজেও গননা করতে পারছে না।

ঐশানীর ঘাড়ে হাত দেয় একজোড়া হাত। এক অদ্ভুত কাঁপুনি দিয়ে ওঠে তার শরীর। সে অনুভব করে কেউ তার পড়া গয়না খুলে নিচ্ছে। ঐশীই খুলছে হয়ত এই ভেবে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে ঐশানী। আস্তে আস্তে সেই হাতজোড়ার মালিক তাকে তৈরি করে। ঐশানী অনুভব করা ছাড়া কিছুই করতে পারছে না। কেউ তার হাত স্পর্শ করে চুড়ি পড়িয়ে দেয়। এই স্পর্শ তার ভীষণই চেনা মনে হয়। ঢক গিলে সে। ও কি ভুলভাল ভাবছে? ভ্রম হচ্ছে? হঠাৎ তার কাঁধে কারো গরম নিঃশ্বাসের উত্তাপ পেয়ে নিঃশ্বাস ওঠানামা শুরু করে তার।
–“মাই বিউটিফুল ওয়াইফ….!”

ফিসফিসিয়ে বলা সেই চেনা পুরুষালী গলা শুনে ধড়ফড়িয়ে নিজের চোখের কাপড় সরানোর চেষ্টা করে ঐশানী। তবে সে চোখের কাপড় খুলতে খুলতে দরজার খটখট শব্দ হয়। চোখ থেকে কাপড় সরাতেই দেখে ঐশী হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে।
–“তুই ছিলি এখানে??”
–“হ্যাঁ আপু। আমি ছাড়া কে থাকবে?”
–“মনে হলো অন্যকেউ।”
আনমনে বলে ওঠে ঐশানী।

নিজের পরনের লেহেঙ্গা ধরে হেঁটে চলেছে ঐশানী। ও বুঝতে পারছে না এতো ভারি লেহেঙ্গা আর গা ভর্তি ফুলের গয়না ওকে পড়ানোর কারণ কি? যেন ওর মনে হচ্ছে ঐশীর সঙ্গে সেও গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানের কনে। অদ্ভুত…!
একমনে হেঁটে গায়ে হলুদের আসরের দিকে যেতেই দূরে নারীকে দেখে পা থেমে যায় তার। সরু চোখে তাকিয়ে চেনার চেষ্টা করে। অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে….
–“সায়রা….!!”
ও এখানে কি করছে? হঠাৎ করেই ওর মনে হলো অভয়ের কথা। তবে কি অভয় সত্যি সত্যি সায়রাকে….? ভাবতেই বুক ছ্যাত করে ওঠে ঐশানীর। সায়রা কারো সঙ্গে হেঁসে হেঁসে কথা বলছে।

ঐশীও সেইসময় সবার সঙ্গে আসরে যাচ্ছিল। ঐশানী ঐশীকে ডেকে প্রশ্ন করে…..
–“এই শোন, দূরে ওই সুন্দর মেয়েটা দাঁড়িয়ে আছে ওটা কে রে?”
ঐশী সায়রার দিকে একনজর তাকিয়ে বলে….
–“ওহ ওটা? কে আবার ভাইয়ার বউ।”
হৃদকম্পন এক মূহুর্তের জন্য হলেও থেমে যায়। ঐশানী মাথাটা ভনভন করে ওঠে। ঐশী তো অভয়কে ভাইয়া বলে ডাকে। তবে কি ঐশানীর ধারণা সত্যি? সে চেয়েছিল সায়রার সঙ্গে অভয়ের বিয়ে হক কিন্তু অভয় যে তার নিজের স্বামী। ঐশী আরেকটু হেসে বলে ওঠে….
–“আরে ইমন ভাইয়ার বউ।”

বড় নিঃশ্বাস ফেলে তাকায় ঐশানী। ইমন তার মামাতো ভাই। যেন তার ওপর থেকে কত বড় পাথর নেমে গেল। অস্পষ্ট কন্ঠে বলে ওঠে…..
–“ইমন ভাইয়ার বউ?”

চলবে……

[বি.দ্র. ঐশানী কেন মা হতে পারবে না? এই প্রশ্নের উত্তর শীঘ্রই পাবেন। আর অনেকে বলছেন অভয় কেন ঐশানীর খোঁজ পায়নি? ঐশানী তো আর বিদেশে যায়নি। তাদের বলব আজকের পর্ব পড়তে। সকলের একটা আত্মসম্মানবোধ থাকে যা অভয়েরও ছিল। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here