বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ৩৭
#আনিশা_সাবিহা
বেশ কিছুক্ষণ ধরে স্তব্ধ হয়ে ফ্লোরের দিকে একমনে চেয়ে আছে অভয়। ঐশানীর এভাবে হঠাৎ করে গায়েব হয়ে যাওয়া এবং ঐশানীর এতো বড় গোপন সত্যিটা জানার পর সে এতোটাই স্তম্ভিত এবং ব্যথিত যে সে নড়াচড়া করার ক্ষমতা কিছুক্ষণের জন্য হারিয়েছে। তার যন্ত্রণায় ভরা চোখজোড়া জ্বলজ্বল করছে। ভালোবাসা পেয়েও হারানো এর থেকে যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতি যেন আর হয় না। অভয়ের চোখে দেখা যাচ্ছে অশ্রু। কতটা অসহায় এবং তীব্র ব্যথিত হলে একটা পুরুষের চোখেও অশ্রুর দেখা মেলে? কিন্তু অশ্রু চোখেই রয়ে গেল। নিচে তা গড়িয়ে পড়তে দিল না। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলতেই তার মনে হয় ঐশানী তার বাড়িতে যায়নি তো? সে নিজের মনকে আশ্বাস দেয় যে, ঐশানী নিশ্চয় নিজের বাড়িতেই গিয়ে থাকবে। আর অভয় গিয়ে তাকে বকতে বকতে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।
এতটুকু আশা পেতেই সে নড়াচড়া করে ফোনটা হাতে নেয়। ঐশীকে কল করবে সে। যেই ভাবা সেই কাজ। ফোনের লক খুলতেই তার রিংটোন বেজে ওঠে। অভয় যাকে কল করতে চাইছিল সে নিজে থেকে তাকে কল করছে। ঐশীর কল রিসিভ করে তড়িঘড়ি করে কানে ধরে অভয় বলে ওঠে…..
–“হ্যালো, ঐশী? বলছিলাম যে ঐশানী তো……”
কথাটা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই ঐশী কথা বলা শুরু করে। তার কন্ঠে রাজ্যের অস্থিরতা।
–“ভাইয়া আপু কি আপনার বাসায় আছে? জানেন? আপু আমাকে আর বাবাকে কি সব উল্টাপাল্টা মেসেজ করেছে।
–“ঐশানী ওই বাড়িতে যায়নি?”
হতভম্ব হয়ে প্রশ্ন করল অভয়। ঐশী উত্তেজনা নিয়ে উত্তর দেয়…..
–“না। ও কি তাহলে সত্যিই কোথাও চলে গেল?”
–“কি লিখেছে ও মেসেজে?”
–“লিখেছে যে, ও সবার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে। তার খোঁজ যেন কেউ না করে। কেন যাচ্ছে, কি কারণে যাচ্ছে সব নাকি আপনি জানেন। ও বেশিকিছু বিস্তারিত লিখেনি। আর আমাকে সকলের খেয়াল রাখতে বলেছে। আচ্ছা, আপুর সঙ্গে কি আপনার কোনো ঝগড়া বা কথা কাটাকাটি হয়েছে?”
ঐশীর আর কোনো কথা অভয়ের কান পর্যন্ত পৌঁছায় না। ওর মন শুধুমাত্র ঐশানীকে চাইছে নিজের চোখের সামনে। ওপরদিকে ঐশী হ্যালো হ্যালো বলেই চলেছে। একসময় অভয়ের হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায়। সেভাবেই বসে থাকে অভয়। ঠোঁটজোড়া বিরবির করতে থাকে একই নামে। তা হলো ঐশানী।
–“কোথায় গেল ঐশানী? কোথায় গেল? কেন চলে গেল আমায় এতো ভালোবাসা দিয়ে? কোথায় গেল?”
গলা ধরে আসছে অভয়ের। তবে তার এভাবে বসে থাকলে চলবে না। ঐশানীকে খুঁজতে হবে। মনটা এখনো কোথাও বলে চলেছে যে ঐশানী নিশ্চয় তার কাছে ফিরবে। সে মজা করছে।
রোবটের মতো উঠে দাঁড়ায় সে। এলোমেলো পায়ের ধাপ ফেলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।
ড্রয়িংরুমে আড্ডার আসর বসেছে। রাহাত সাহেব, ইশান ও অনিন্দিতা মিলে ক্যারাম খেলছে মজা করে। মিসেস. তনয়া তা বসে বসে দেখছে। ক্যারামের গুটি নিশানা করতে করতে অভয়কে শুকনো মুখে নিচে নেমে আসতে দেখতে পান রাহাত সাহেব। একগাল হেসে উনি বলেন…..
–“হেই মাই সন, সারাদিন কাজ অনেক করলি। আয় খেলতে বস। অনেকদিন তোর সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় না।”
–“বাবা, তুমি চিটিং করো। সেকারণেই ভাইয়া তোমার সাথে খেলতে চায় না।”
ফিক করে হেসে বলে অনিন্দিতা। অভয় কারো কথায় তোয়াক্কা না করে সামনে এসে দাঁড়ায়। মিসেস. তনয়া অভয়কে পর্যবেক্ষণ করে বলেন…..
–“কিরে? কিছু হয়েছে? দেখে তো মনে হচ্ছে এখনো ফ্রেশও হসনি। এতোক্ষণ হয়েছে অফিস থেকে এসেছিস। এখনো ফ্রেশ হসনি কেন?”
–“মা ঐশানী কোথায় জানো?”
থেমে থেমে কথাগুলো বলে অভয়। মিসেস. তনয়া সাধারণ ভঙ্গিতে বলেন…..
–“হ্যাঁ। ওর বান্ধবীর বাড়িতে। মেয়েটার সামনে পরিক্ষা। একে তো এমন সময় ওর বিয়ে হলো পড়াশোনা করার চান্সই পাচ্ছে না। তাই থাক নিজের মনমতো….”
–“ও আর কখনো আসবে না মা। চলে গেছে। সব ছেড়ে চলে গেছে।”
হঠাৎ চিৎকার করে কথাটা বলে উঠল অভয়। সকলেই তার চিৎকারে কেঁপে উঠল। সেই সঙ্গে বিস্ময়ের সীমিনা রইল না কারো। অনিন্দিতা ধড়ফড় করে উঠে দাঁড়ায়। অভয়ের সামনে বরাবর দাঁড়িয়ে অবিশ্বাস্য কন্ঠে বলল…..
–“কি বলছিস ভাইয়া? ভাবি চলে গেছে? কোথায় গেছে?”
অভয় কিছু না বলে তার হাতে থাকা দুমড়ানো মোচড়ানো ঐশানীর চিঠি অনিন্দিতার হাতে ধরিয়ে দেয়। আর কোনো রকমের শব্দ না করেই কারো কোনোরকম কথা না শুনে হনহনিয়ে বেরিয়ে আসে বাড়ি থেকে।
রাতের বাতাস বড্ড জোরালো। গাড়ি নিয়ে এক নির্জন রাস্তায় মনে আছে অভয়। সে বসে আছে গাড়ির ওপরে। চেষ্টা করছে যদি এই বিষাদ ভরা মন থেকে একটু হলেও বিষাদ কমিয়ে ফেলা যায়। কিন্তু এই বিষাদ কমানোর জন্য সেই বিষাদ ভরিয়ে দেওয়া ব্যক্তিতেই প্রয়োজন তার। সে হলো ঐশানী। ফোনের স্ক্রিনে বারবার জ্বলে উঠে তার। অনিন্দিতা বার বার ফোন দিয়ে চলেছে। একসময় ফোনটা পা দিয়ে লাথি মেরে ফেলে দেয় সে। বিষাদ মাখা কন্ঠে অভয় বলে ওঠে…..
–“ভালোবাসা! ভালোবাসা শব্দটাই যত নষ্টের মূল। না আমি ঐশানীকে ভালোবাসতাম আর না এভাবে আমায় ঠকতে হতো। ঐশানী ঠকিয়েছে আমায়। ভালোই ছিলাম ভালোবাসা ছাড়া। ঐশানীকে ভালোবাসা বড্ড ভুল হয়েছে আমার। আজ যদি ওকে ভালো না বেসে থাকতাম ও কোথাও চলে গেলেও আমার কিচ্ছু যায় আসতো না। বাট আনফরচুনেটলি আই লাভ ঐশানী।”
দিন পাল্টেছে। সময় পাল্টেছে। নতুন দিনের সূচনা হয়েছে। নতুন দিন, নতুন মানুষের হারিয়ে গেছে আগের সময়। শুধু অপরিবর্তিত রয়ে গেছে ভালোবাসা, সেই ভালোবাসা মানুষগুলো।
জায়গাটি চট্টগ্রাম। একটি সুন্দরতম শহর। সকাল হতে না হতেই শুরু হয়েছে নানানরকম মানুষের আনাগোনা। শহরের একপ্রান্তে রয়েছে একটা এপার্টমেন্টে ব্যস্ত হয়ে ছুটছে এক নারী। খোলা চুলগুলোও তাকে শান্তি দিচ্ছে না। জানালার পর্দা মেলে না দেওয়ায় ঘরটাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন লাগছে। তড়িঘড়ি করে পর্দা টেনে দিয়ে জানালা খুলে দিতেই চোখমুখ কুঁচকে যায় তার। হঠাৎই তার ডাক আসে।
–“ঐশানী! একটু ওষুধটা দিয়ে যা। খাওয়ার আগে খেতে হবে।”
পিছু ফিরে তাকায় ঐশানী। ব্যস্ত পায়ে ছুট লাগায় কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে ঔষুধ দিতে।
কানের পিঠে চুল গুঁজে ঔষুধের বক্স ও পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় ঐশানী রমিলা বেগমকে।
–“এই নাও আন্টি। তাড়াতাড়ি করো। কাল রাতে দেরি করে ঘুমানোতে বড্ড দেরি হয়ে গেছে ঘুম থেকে উঠতে। জানি না আজ স্কুলে টাইমলি পৌঁছাতে পারব নাকি!”
–“রয়েসয়ে কাজ কর। নিজেকে ব্যস্ত রেখে কি প্রমাণ করতে চাস তুই? তুই খুব ভালো আছিস?”
–“কেন ভালো না থাকার কি আছে?”
–“আমার বয়স হয়েছে। তাই বলে এতোটাও চোখের দৃষ্টি লোপ পায়নি যে কিছু দেখতে পাবো না। তোর বরকে মনে পড়ে না?”
ঐশানী থমকে তাকায়। মুখে জোরপূর্বক হাসি ফুটিয়ে বলে….
–“আন্টি, তুমি এই এক কথা বলে আসছো পুরো দুই বছর ধরে। দুই বছর মানে (একটু ভেবে) সাতশো সত্তর দিন একই কথা জিজ্ঞেসা করো। প্রতিদিন একই কথা শুনিয়ে কি পাও বলো তো?”
–“প্রতিদিন করি কারণ কোনোদিনই তোর কাছ থেকে সঠিক উত্তর পাই না। পেলে আর করতাম না।”
–“তুমি ঔষুধ খাও। আমি খাবার নিয়ে আসছি।”
বলেই উঠে যায় রান্নাঘরের দিকে ঐশানী। রমিলা বেগম জানেন ঐশানী প্রশ্নটাকে এড়িয়ে যেতেই চলে গেল। মেয়েটা বাহানা বানাতে খুব ভালো পারে। গত দুইবছর ধরে ঐশানী রমিলা বেগমের সঙ্গে থাকেন। রমিলা বেগম হচ্ছেন সীঁথির মা। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে একাই থাকতে হয় উনাকে। তাই সীঁথিকে বলে ঐশানী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল উনার সঙ্গেই থাকবে। ঐশানী এখন কাজও করে। একটা প্রাইমারি স্কুলে ছোট ছেলেমেয়েদের পড়ায়। সামান্য টাকা বেতন পেলেও সে ওটাতেই সন্তুষ্ট। কিন্তু আদোও স্বামী নামক মানুষটা হুট করেই কড়া নাড়ে তার মনের গভীরে।
প্লেটে খাবার নিয়ে ক্যালেন্ডারের দিকে নজর যায় ওর। আজ প্রায় দুইমাস হয়ে গেল পরিবারের সঙ্গে কথা বলেনি সে। ঐশানী প্রতি দুইমাস পর পর তার বাড়িতে কল করে। তাও সর্বোচ্চ তিন মিনিটের ওপরে কথা বলে না। প্রতিমাসে বিভিন্ন নম্বর ওবিভিন্ন জায়গা থেকে কল করে। আজ সে ঠিক করে স্কুল থেকে ফেরার পথে সে বাড়িতে কল করবে। এই ভেবে তাড়াতাড়ি রমিলা বেগমকে খাবার এগিয়ে দিয়ে কোনোমতে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ে সে।
–“মিস্টার চৌধুরী, আপনি কি জানেন আমি কতক্ষণ ধরে এখানে ওয়েট করছি? আপনারা টাইম মেইনটেইন করতে পারেন না তাহলে ডিল করতে আসেন কেন? আপনি পুরো সাতচল্লিশ মিনিট লেট। আর এমন লোকদের সাথে আমি ডিল করব না। সরি।”
বলেই উঠে পড়ে চকলেট কালার কোট পরিহিত অভয়। মুখে তার গম্ভীরতা ও রাগের ছাপ স্পষ্ট। সে রেস্টুরেন্টে এসেছিল ডিল করতে অন্য এক কোম্পানির সাথে। কিন্তু কোম্পানির মালিক এতোটাই দেরি করে উপস্থিত হন সে রেগে ডিল টাই ক্যান্সেল করে দেয় অভয়।
–“মিস্টার খান! প্লিজ এই সামান্য কারণে এতো বড় ডিল ক্যান্সেল করবেন না। আপনি বসুন না।”
মিস্টার চৌধুরীর কথায় অভয় কোনোরকম তোয়াক্কা না করে বলে…..
–“এক্সকিউজ মি!”
কোটের পকেটে থাকা সানগ্লাস চোখে পরে রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে যাওয়া জন্য পা বাড়ায় অভয়। পাশে অভয়ের পিএ রনিত মিস্টার চৌধুরীর উদ্দেশ্যে ফিসফিসিয়ে বলে ওঠে…..
–“আগেই আপনাকে পারসোনালি জানিয়ে দিয়েছিলাম না? যে স্যার একটুও এদিক-ওদিক হলেই সব সর্বনাশ হয়ে যাবে। কেন যে দেরিতে আসতে গেলেন? আপনাদের লাক খারাপ।”
ভেজা বিড়ালের মতো রনিতও বেরিয়ে যায় অভয়ের পিছু পিছু।
দুইবছর আগের অভয় আর বর্তমান অভয়ের মাঝে আকাশ-পাতাল তফাৎ। সে আমেরিকা থাকতে যেমন ছিল গম্ভীর, হাসিবিহীন ঠিক তেমনটাই হয়ে গিয়েছে। দিনে একশটা কথা বলে কিনা সন্দেহ। দরকার ছাড়া একটা কথাও তার মুখ থেকে বের করানো সম্ভব না। মুখভর্তি দাঁড়ি আর সবসময় শুকনো মুখে থাকে সে। এতোকিছুর পরেও তার মনে এখনো একজনের নামেরই বিচরণ সে হচ্ছে ঐশানী। এমন কোনোদিন নেই যে ও ঐশানীকে খুঁজেনি। সময় পেলেই জায়গায় জায়গায় ঐশানীকে খুঁজতে উঠেপড়ে লেগে পড়ে সে। দিনশেষে রেজাল্ট জিরো!!
–“এক ভয়ঙ্কর জাদু আমার ওপর করলে। তবে জাদুর প্রভাব না কাটিয়েই চলে গেলে। এ তোমার কেমন বিচার ঐশানী? এই জাদুর প্রভাব কি কোনোদিনও কাটবে না? কখনো না?”
গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে বিরহ নিয়ে ধীর গলায় বলে অভয়। সে যাচ্ছে বাড়ির দিকে। আর কোনো কাজ নেই তার। ডিলও ক্যান্সেল হয়ে গেছে। বাড়িতে ফেরায় শ্রেয়।
বাড়িতে ফিরে সদর দরজায় পা রাখতে না রাখতেই রাহাত সাহেবের তিক্ততায় ভরা গলায় শুনতে পায় অভয়। যদিও সে জানতো তার বাবার গলায় প্রথমে শোনা যাবে।
–“এই হতচ্ছাড়া! তুই কি করে এলি? ডিলটা ক্যান্সেল করে দিয়ে আসলি?”
–“তোমায় কে বলল বাবা?”
পায়ের বোট জুতো খুলতে খুলতে বলল অভয়। রাহাত সাহেব তেতে ওঠেন।
–“কে বলল মানে? মিস্টার চৌধুরী আমায় ফোন দিয়ে নিজে যেতে বলেছেন। আমার শরীর ভালো নেই বলে তুই যা ইচ্ছে করবি নাকি? কেন করলি এই ডিল ক্যান্সেল?”
–“যারা টাইমকে রেসপেক্ট দেয় না। দেরিতে আসাটাকে ছোট ব্যাপার বলে মনে করে তাদের সঙ্গে ডিল করলে লসই হবে বাবা। টেনশন নিও না। ওরা গেছে আরো ইনভেস্টার আসবে।”
রাহাত সাহেবের আর কোনো কথায় না শুনে নিজের মনে চলে গেল অভয়।
ফ্রেশ হয়ে সবেমাত্র এসে জানালার পাশের বড় চেয়ারে সে বসেছে ওমনি কেউ ওর চোখজোড়া ধরে ফেলল। অভয় গম্ভীর গলায় বলল…..
–“অনি! এটা কেমন মজা?”
অনিন্দিতা মুখটা গোমড়া করে অভয়ের চোখ ছেড়ে সামনে এসে দাঁড়ায়।
–“মজা তো পেলামই না।”
–“তুই এলি কখন?”
–“এই যখন শুনেছে তোর বোন ঐশীর বিয়ে হবে তখন থেকে উঠেপড়ে লেগেছে বিয়েতে যাবে তাও তোকে সাথে করে নিয়ে। ওকে কতবার করে বললাম, দিবাস্বপ্ন দেখো না। তোমার ভাই যাবে না। কিন্তু তোর বোন শুনলে তো?”
ঘরে ঢুকতে ঢুকতে কথাটা খোঁচা মেরে বলে ওঠে ইশান। অনিন্দিতা ইশানকে দেখিয়ে ভেংচি কাটে। অনিন্দিতার পরনে লেমন কালার শাড়ি। নাকফুল চকচক করছে। বিবাহিত বিবাহিত নারীর সকল বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে তার চেহারায়। তার আর ইশানের বিয়ের প্রায় এক বছর হয়ে এসেছে। অভয় নিজ দায়িত্বে তাদের মিলিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে অনিন্দিতা আর ইশান সুখেই রয়েছে। ইশানের প্রমোশন হয়েছে। অনেকদূর এগিয়েছে সে।
–“এই ভাইয়া? ঐশীর বিয়ে। আমাদের ইনভাইট করেছে। তোকে কল করার সাহস পায়নি। কিন্তু পুরো পরিবারকে যেতে বলেছে। যাবি তো?”
বায়না ধরা কন্ঠে বলে ওঠে অনিন্দিতা। অভয় সোজাসুজি উত্তর দেয়….
–“না যাব না। গিয়ে কি করব? ওই বাড়ির তো আমি কেউ না। আর শোরগোল আমার পছন্দ না জানিস না?”
–“কেন যাবি না? ভাইয়া ভুলে যাস না তুই এখনো ওই বাড়ির জামাই।”
অভয় ওকে উত্তর না দিয়ে ইশানকে বলে ওঠে…..
–“ইশান? তোর বউকে সামলা।”
–“একবছরেও সামলাতে পারব না আর এক মিনিটে সামলাবো? এতো ক্ষমতা আমার নাই ভাই। তুই-ই সামলা।”
অনিন্দিতার অতিরিক্ত জেদের কাছে অভয় হার মানতে রাজি হয়। তবে শুধু বিয়ের দিনই সে উপস্থিত থাকবে।
স্কুল থেকে বাড়ি ফিরছে ঐশানী। গাড়ি থেকে নেমে ধীর গতিতে হাঁটতে থাকে সে। ফোনটা বের করে ঐশীর নম্বর ডায়াল করে কল করে সে। কল যেন সাথে সাথেই রিসিভ হয়।
–“হ্যালো হ্যালো হ্যালো। আপু বলছিস? ঠিক ধরেছি না?”
–“বাবাহ ঐশী? ফোনটা কি ধরেই বসে থাকিস সবসময়?”
–“আমি জানতাম তুই কয়েকদিনের মধ্যে কল করবি। তাই ফোনের আশায় বসে থাকতাম।”
ঐশানীর বড্ড ভালো লাগে ঐশীর কথাটা। তার বোন কত মিস করে তাকে। সে কিছু বলার আগে ঐশী ফট করে বলে…..
–“আপু আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে আমার পেন্সিল মার্কা বয়ফ্রেন্ডের সাথে সেটা জানিস?”
–“হ্যাঁ। তা তো জানি। দুইমাস আগেই মা তো বলেছিল।”
–“তুই এবার অন্তত বাড়ি আসবি তো আমার বিয়েতে?”
ঐশানীর হাসি গায়েব হয়ে যায়। সে কি করে যাবে?তবে নিজের বোনের বিয়েও তো ইগনর করা যায় না। সে গলা খাঁকারি দিতেই ঐশী উত্তেজিত হয়ে বলে…..
–“প্লিজ আর কোনো বাহানা করিস না। তুই কোথায় আছিস আমরা কেউ জানি না। তুই সেলফিশ হতেই পারিস। কিন্তু আমার অনেক ইচ্ছে তুই আমার বিয়ের ইভেন্টে আমার সাথে থাকবি।”
–“কিন্তু….. ”
–“কোনো কিন্তু না! আমার বিয়েতে না এলে ধরে নেব তুই আমাকে আর নিজের মনে করিস না। সারাজীবনের মতো আমায় বোন হিসেবে হারাবি।”
ঐশানী তবুও আমতা আমতা করতে থাকে। অবশেষে বোনের আবদার ফেলতে পারে না সে। সম্মতি দিয়ে বসে বিয়েতে যাওয়ার। ঐশী তা শুনে আনন্দে আত্মহারা! ঐশানীর ইচ্ছে করল জানতে অভয়ও কি সেখানে যাবে? সংকোচ বোধ করে বলেই ফেলল…..
–“এই শোন? তোর বিয়েতে কি উনিও যাবেন?”
–“উনি আবার কে? তুই এলেই হলো। কি উনি উনি করছিস?”
–“কেউ না। মাকে ফোন দে।
মিসেস. দিশার সাথে একটু কথা বলে কল কেটে দেয় ঐশানী। আনমনে ভাবে, তার পরিবার কি এতো তাড়াতাড়ি অভয়কে ভুলে গেল? অথচ কিছুদিন আগেও ঐশী তাকে বলতো ফিরে এসে অভয়ের সাথে সংসার করতে। এখন আবার তাদের কি হলো??
চলবে……
[বি.দ্র. অনেকেই বলেছেন আজ দুটো পার্ট দিতে। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি। কারণ আমি একটা পার্ট বড় করে দেওয়ার চেষ্টা করি। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]