বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ২৫

0
1332

বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ২৫
#আনিশা_সাবিহা

–“আমার বিষয়ে কার সাথে আলোচনা করছো?”
অভয়কে দরজার কাছে দেখে দ্রুতই ফোনটা কেটে দিয়ে উঠে এলো ঐশানী। সূক্ষ্ম চাহনি দিয়ে অভয়কে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। অভয় কি সবটা শুনে নিয়েছে? বিষয়টা নিশ্চিত হবার জন্য অভয়কে কটাক্ষ করে ঐশানী প্রশ্ন করল…..
–“আপনি কখন এলেন?”
–“ওইতো যখন আপনার বান্ধবী জিজ্ঞেস করছিল, আমি আপনাকে ভালোবাসি কি না! তখন এসেছি।”
অভয় সবটা শুনতে পায়নি এই ভেবে শান্ত হয়ে এলো ঐশানীর চাহনি। অভয় ফোনের তাকিয়ে ইশারা করে বলল…..
–“তা তোমার বান্ধবীর প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কল কেটে দিলে যে!”

ঐশানী ফোনটা রেখে হাতে চিরুনি নিয়ে চুলে চালাতে চালাতে স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিল….
–“কি করে উত্তর দেব? আমিই তো কনফিউজড এই ব্যাপারে!”
–“কোন ব্যাপারে?” (কপাল কুঁচকে)
–“আপনি কাকে ভালোবাসেন, কাকে ভালোবাসেন না, কাকে পছন্দ করেন, কাকে পছন্দ করেন না এসব ব্যাপারে আমি কনফিউজড এবং ভাবতে ভাবতে আমি হতাশ। কারণ আপনি তো নিজের মনের খবর নিজেই রাখতে জানেন না।”
অভয়ের কথাগুলো গায়ে লাগে। মুখটা ভার হয়ে আসে। শান্ত গলায় বলে…..
–“আবেগ থেকে বেরিয়ে এসেছি। ভালোবাসাকে চিনেছি। সেকারণে অপমান করবে?”

–“কাকে ভালোবাসেন আপনি?”
চুলের ভেতর থেকে চিরুনি নামিয়ে অভয়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে ঐশানী। অভয় সোজাসুজি উত্তর দেয়…..
–“আমার কি মনে হয় জানো? জীবনে শুধু তুমি হাওয়াই মিঠাই কেই মনে রেখেছো। সেদিন আমার থাপ্পড় খেয়ে মুখ ফুলিয়ে চলে গেলে। মনে নেই সেদিন আমি কাকে ভালোবাসি বলেছিলাম? জীবনে ভুল সবাই করে আমিও করেছিলাম। ভুল শুধরে যখন আমি তোমাতে মত্ত হয়ে চাইছি তখন তুমি বাঁধা দিতে চাইছো। কিন্তু কেন ঐশানী? আমার কোনদিকটা তোমার এতোটা খারাপ লাগে যে তুমি আমাকে মেনে নিতে পারো না?”

ঐশানী নিরব। সে আপনমনে চুল বাঁধছে। যেন সে কিছু শোনেই নি। অভয়ের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। সে এতোকিছু বলল অথচ তার উত্তরে একটা শব্দও শুনতে পেলো না? টেবিলে বসে ছিল অভয়। সেখান থেকে নেমে নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায় সে। ঐশানী খোঁপা করে মাথায় খোঁপার কাটা দিতে নেবে তৎক্ষনাৎ অভয় তার ডান হাত চেপে ধরে হেঁচকা টান মারে। ঐশানীর হাত থেকে চুল বাঁধার কাটা পড়ে যায়। নিজেকে সামলাতে না পেরে অভয়ের বুকে ধাক্কা খায়। মাথা তুলে অভয়ের দিকে তাকায় সে। অভয় রাগে কেঁপে কেঁপে বলে…..
–“আমি এতো কথা বললাম তোমার জবাবের আশায়। অথচ একটা উত্তরও দিলে না তুমি।”

–“কি উত্তর চান বলুন!”
থমথমে শোনায় ঐশানীর গলার সুর। অভয় চোখ বুঁজে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে…..
–“আমার দিকে তাকাও। তাকিয়ে বলো, আমার মাঝে কি কোনো কমতি আছে? আমার কোনো ব্যবহার তোমার খারাপ লাগে? আমার কোনো দিক তোমার অবিশ্বাসযোগ্য মনে হয়?”
–“আপনার ভালোবাসায় আমার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়। আর রইল বাকি আপনার কমতির কথা? তাহলে বলব নিশ্চয় আপনার মাঝে কমতি আছে। ঐশানীর ড্রিমবয় হওয়া ওতো সোজা নাকি?”

অভয়ের বুকের ওপরে রাখা হাত নিচে নামিয়ে নিয়ে সরে আসে ঐশানী। মুখে ঝুলিয়ে রাখে এক শয়তানি হাসি। এতে অভয় যতটুকু নিজেকে শান্ত করে রেখেছিল তাও উবে যায়। রেগেমেগে একাকার হয়ে যায় সে। দাঁতে দাঁত পিষে তাকায় ঐশানীর পানে। দাঁতের মাঝে ঐশানীকে পিষে ফেলতে এক মূহুর্তও যেন লাগবে না অভয়ের। ঐশানীর হাসি উবে যায়। তবুও জোর করে হাসি ধরে রাখার চেষ্টা করে বলে……
–“শ্যামলা ঘোড়া থেকে শ্যামলা সিংহ! সিংহের মতোই দাঁতে দাঁত পিষছেন। তবে আপনাকে ঘোড়া পদবিই মানায় বিশ্বাস করুন।”

অভয় ঐশানীর সেই কথা কানে না ঢুকিয়ে হঠাৎ করেই শান্ত হয়ে যায়। শীতল কন্ঠে বলে…..
–“আমার ভালোবাসা তোমার কাছে অবিশ্বাস্য? আচ্ছা কি করলে বিশ্বাস হবে?”
ঐশানী ভ্রু দুটো কুঁচকে একসঙ্গে করে তাকায়। অভয় কি বলতে চাইছে বা করতে চাইছে? ভাবতে ভাবতেই অভয় কখন যে তার সম্মুখে এসে দাঁড়িয়েছে সেটা খেয়ালেই নেই ঐশানীর। হঠাৎ করেই ঐশানীর কোমড় চেপে ধরে টেনে নিজেদের মাঝে কোনো দূরত্ব না রেখে কাছাকাছি নিয়ে আসে ঐশানীকে। ঐশানীর প্রাণ যায় যায় অবস্থা। গলা শুকিয়ে আসে তার। বার বার ঢক গিলতে থাকে। অভয় বেশ মজা পায় ওর এই অবস্থা রেখে। মেয়েটা এতো সহজে ভয় পায় কি করে?

–“ভালোবাসলে কি বিশ্বাসযোগ্য হবে আমার ভালোবাসা?”
অভয়ের কথার ধরণ আর ওর দৃষ্টিতে ঐশানী যা বোঝার বুঝে নেয়। অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে সে। থতমত খেয়ে রসগোল্লার মতো চোখ করে তাকায়। বলতি বন্ধ হয়ে গেছে ঐশানী। তাকে ঢোক গিলতে অভয় আবারও বলে….
–“গলা শুকিয়ে গেছে?”
ঐশানী অসহায় ভঙ্গিতে চেয়ে মাথায় দুলাতে থাকে।
–“পানি লাগবে?”
ঐশানী প্রথমবারের থেকে দ্রুত মাথা নাড়াতে থাকে। তা দেখে অভয় ঐশানীর গাল দুটো ধরে বলে…..
–“আরে আস্তে আস্তে! মাথা ভেঙে এক জায়গায় পড়ে যাবে।”

ঐশানী মাথা নাড়ানো থামিয়ে দেয়।
–“আচ্ছা পানির বদলে যদি অন্যকিছু পেয়ে যাও তাহলে কি ক্ষতি হবে?”
–“মানে? কি অন্যকিছু?”
প্রশ্নাত্মক চেহারা নিয়ে বলে ওঠে ঐশানী। অভয় অদ্ভুত হাসি দিয়ে বলে….
–“সামথিং সুইট!!”
ঐশানীর চোখজোড়া সন্দেহে সরু হয়ে আসে।
–“তোমাকে দেখতে কিছুটা হাওয়াই মিঠাইয়ের মতোই লাগে। জ্যান্ত হাওয়াই মিঠাই। আই থিংক ছোট থেকে যতগুলো হাওয়াই মিঠাই তোমার পেটে গেছে সেখান থেকে তোমার চেহারাও তেমনই হয়ে গেছে। তাই বলছিলাম তোমাকে টেস্ট করা যায়?”

ঐশানী আর অভয়ের চোখে চোখ মেলাতে পারে না। চোখ নামিয়ে নেয় সে। অভয় তা দেখে নিজের হাসিটুকু প্রসারিত করে ঐশানীর গালে নিজের গাল লাগিয়ে দিয়ে কানের কাছে নিজের ঠোঁটজোড়া আনে অভয়। ঐশানীর কাঁপুনি উপলব্ধি করতে পারে সে। ফিসফিস করে বলে…..
–“এতো ভয় পাও কেন? তোমাকে ভয় পাওয়ানো দেখি খুব সহজ। তাছাড়া এই কাঁপুনি কি ভয়ের কারণে ছিল নাকি অন্য কোনো কারণ আছে?”
ঐশানীর কোনো হেলদোল নেই। ওর হাত-পা সবটা যেন অবশ হয়ে পড়েছে। না পারছে ও সরে যেতে আর না পারছে অভয়কে ধাক্কা দিতে। ওট দৃষ্টিটাও একদিকে স্থির।

–“এতোই ভয় পেয়েছো যে কথাটাও বন্ধ হয়ে গেছে? একটা কথা বলো! তোমাকে খেতে কেমন হবে? হাওয়াই মিঠাই এর মতো? মানে মুখে দিলে গলে যাবে এই টাইপ?”
লজ্জায় দুইচোখ বন্ধ করে নেয় ঐশানী। লোকটা কি বুঝতে পারছে না? সে ভয় না লজ্জা পাচ্ছে? কি অসভ্যের মতো কথাগুলো বলেই চলেছে! হাত দিয়ে যে মুখটা ঢাকবে তারও কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না ঐশানী। কারণ তার হাত দুটো অভয় সযত্নে নিজের এক হাতের মুঠোয় নিয়ে রেখেছে। ঐশানী মুখ থেকে অভয় যা মজা পাচ্ছে তা বলার বাহিরে। লজ্জা পেলে নাকি মেয়েদের সৌন্দর্য দেখে যে কেউ প্রেমের সমুদ্রে ডুবে যেতে পারে! কথাটা হয়ত একেবারেই সত্যি। অভয়ের ইচ্ছে হলো ঐশানী লজ্জায় আরো বেশি করে রাঙ্গিয়ে দিতে। আরো লজ্জা দিলে কেমন লাগবে ওকে?

অভয় নিজেকে ধাতস্থ করে বলল…..
–“তাহলে বলো কোথায় থেকে ভালোবাসা শুরু করা যেতে পারে? (ঐশানী চোখ বড় করে তাকাতেই) ঠোঁট থেকে শুরু করব?”
ঐশানীর ঠোঁটজোড়া নিজের বৃদ্ধ আঙ্গুল দিয়ে আলতো ছুঁয়ে দেয় অভয়। ঐশানীর শরীরে বিদ্যুৎ বয়ে যায় যেন। ঝড়ের বেগে অভয়কে ধাক্কা দিয়ে বেশ কয়েকহাত সরে আসে সে। দ্রুততার সাথে বলা শুরু করে…..
–“আ…আপনাকে তো ভালো মানুষ ভেবেছিলাম। আমার বাবাও তো আপনাকে ভালো ভেবে বিয়ে দিয়েছিল। আ…আপনি একটা লুচুর ফ্যাক্টরি! আমি এক্ষুনি বাবাকে কল করে বলব।”

–“রিয়েলি? যদি বলতে পারো তবে আমারও কোনো আপত্তি নেই। কি দিন এলো! আজকাল বউকে ভালোবাসতেও লুচুর ফ্যাক্টরি অপবাদ শুনতে হয়। এই দুঃখ কই রাখি?”
মুখে আফসোসের ছাপ ফেলে নিচের ঠোঁট উল্টে মাথা দুলাতে থাকে অভয়। ঐশানী মনে মনে বলে….
–“আহা! কি দুঃখ! আর একটু হলেই সর্বনাশ হয়ে যেত।”
অভয়ের ফোনের রিংটোনটা নিজ ছন্দে বেজে উঠতেই তাদের দুজনের ধ্যান ভেঙে তাকায়। অভয় বিরক্ত হয়ে ফোনটা বের করে। লোকে ফোন করারও সময় পায় না?

ফোনটা বের করতেই স্ক্রিনের নম্বর দেখে বিরক্তি ভাব মুছে গিয়ে গম্ভীরতার ছাপ ফুটে ওঠে অভয়ের চেহারায়। সেটা চোখ এড়ায় না ঐশানীর। ফট করে তার উদ্দেশ্যে বলে উঠল……
–“সায়রার কল বুঝি?”
অভয় কিছু না বলে ঐশানীর দিকে তাকায়। কারণ কলটা আসলে সায়রারই। প্রথম নম্বর ব্লক করলেও অন্য নম্বর থেকে কল করছে সায়রা। যেটা অভয় ব্লক করেনি। ঐশানী অভয়ের দৃষ্টি বুঝে বলে….
–“আমি বাইরে যাচ্ছি। আপনি কথা বলুন।”
–“নো ঐশানী লিসেন! শোনো….”

অভয়ের বার বার ডাকা সত্ত্বেও ঐশানী বেরিয়ে যায়। তবে ওর চোখমুখে আজ অভয় স্পষ্ট অভিমান দেখতে পেয়েছে। অভিমানগুলো যেন অভয়কে বলছিল, ‘আপনি নাকি আমায় ভালোবাসেন? তাহলে কেন সায়রা আপনাকে কল করছে? আর তার জন্য আমি থমকে যাচ্ছেন? এই থমকানোই আমাকেও বারবার থমকে দিচ্ছে আপনাকে ভালোবাসতে।’
এই মূহুর্তে সায়রার প্রতি প্রচন্ড রাগ হলো অভয়ের। সে জানে সে ভুল করেছে সায়রাকে একসময় ভালোবাসি বলে। এখন তো সে শুধরাতে চাইছে তবুও এই সায়রার কল তাকে তা করতে দিচ্ছে না।

অভয় কলটা রিসিভ করে কানের কাছে নিয়ে গিয়ে এক নিশ্বাসে ক্রুদ্ধ হয়ে বলে….
–“হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট সায়রা? কি চাইছো তুমি? একসময় আমি তোমাকে কল করে করে পাগল হয়ে গেছি কিন্তু তুমি তখন পাত্তা দাওনি। এখন যখন নিজের মোহ থেকে বেরিয়ে আমার নিজের ডেস্টিনি, ভালোবাসার দিকে যেতে চাইছি তখন তুমি বার বার কল করে আমার বাঁধা হচ্ছো কেন? আমার ভুল ছিল তোমার মোহে জড়িয়ে পড়া। এরজন্য আমি সত্যিই অনুতপ্ত। পারলে আমায় ক্ষমা করো। আমি বিবাহিত। আর একজন বিবাহিত পুরুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তার স্ত্রীর সাথে যা বন্ডিং তা নষ্ট করবে না আশা করি।”
সায়রার জবাবের কোনোরকম অপেক্ষা করে কল কেটে দিয়ে ফোনটা খাটে ছুঁড়ে মারে অভয়। একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে তাকিয়ে থাকে দরজার দিকে।

বারান্দা দিয়ে গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে হাঁটছে অনিন্দিতা। তার মনে যেন আনন্দের ঢেউ খেলছে। মুখে হাসির রেশ। আর লাফিয়ে লাফিয়ে হেঁটে যাচ্ছে লম্বা বারান্দা দিয়ে। তাদের গ্রামের বাড়িটা তেমন আধুনিক না। সামনে উঠান। বাড়িটা লম্বা। সবার রুম পাশাপাশি লাইন ধরে। আর রুমের সামনে পড়ে এমাথা-ওমাথা বড় বারান্দা। বারান্দার সামনে খোলা আকাশ। হাঁটতে হাঁটতে ইশানের রুমের সামনে এসে পড়ল অনিন্দিতা। তার ইচ্ছে হলো যখন এদিক দিয়ে যাচ্ছেই তখন ইশানের রুমে উঁকি দিয়ে গেলে মন্দ হয় না! যেই ভাবা সেই কাজ। দরজা ধরে মাথাটা বের করে উঁকি দিল সে। কানে এলো ইশানের কন্ঠ।

–“আমি তোমার অবস্থা বুঝতে পারছি। কিন্তু এক্ষেত্রে কিছুই করার নেই। অভয়কে কনভিন্স করা তো দূর ওকে এই বিষয়ে বলতেও পারব না। কারণ ওর দিক থেকে ও যা করছে সব ঠিক। বিয়ের পর বউয়ের প্রতি ভালোবাসা জাগা স্বাভাবিক।”
অনিন্দিতার চোখজোড়া বিস্ময়ের ভরে যায়। মনে জাগে প্রশ্ন। কাকে এসব কথা বলছে ইশান? প্রশ্নের উত্তর পেতে আরো মনোযোগ দিয়ে শোনে ইশানের কথা।
–“কাঁদা কি তোমাদের মেয়ের শখ নাকি বলো তো? কিছু হলেই কাঁদো তোমরা মেয়েরা। আমি তো ভেবেছিলাম তুমি এটলিস্ট শক্ত মনের মেয়ে হবে। কিন্তু তুমিও শেষমেশ কাঁদুনিই বের হলে সায়রা!!”

অনিন্দিতার চোখজোড়া চড়কগাছে পরিণত হয়। চোখমুখের রঙ পাল্টে গিয়ে ফ্যাকাশে হয়ে যায়। সে কি ঠিক শুনেছে? ইশান সায়রার নাম নিল? ফোনের ওপাশে সায়রা ছিল? ভাবতেই গলা শুঁকিয়ে আসে অনিন্দিতার। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়ে হম্বিতম্বি করে দাঁড়ায় ইশানের ঘরের দরজায়। নিজেকে যথাসাধ্য শান্ত করে বলে…..
–“আসব?”
ইশান সায়রাকে হাসানোর চেষ্টায় মশগুল ছিল। অনিন্দিতার কন্ঠে হালকা বিরক্ত হয়েই তাকায় সে। ফোন কান থেকে সরিয়ে বলে…..
–“আসার আর সময় পেলি না?”

অনিন্দিতার চেহারা মলিন হয়ে যায়। ইশান তার জন্য বিরক্ত হচ্ছে ভেবে ক্ষীণ যন্ত্রণা অনুভব করে সে। ইশান ফোনে সায়রাকে বলে…..
–“আমি তোমায় একটু পরেই কল ব্যাক করছি। রিমেম্বার দ্যাট, কেঁদে কেঁদে সুইমিংপুল বানিয়ে দিও না। আমি কিন্তু ভেসে যাব।”
বলে কেটে দেয় কল ইশান। অনিন্দিতার দিকে তাকিয়ে বলে…..
–“কি কাজ এখানে? আমার মাথায় কি আরো আলু বানিয়ে দিতে আসছিস?”
–“না আসলে দেখতে এসেছিলাম তোমার কপালের ব্যাথা কমেছে কি না! এসে দেখলাম কারো সাথে ঠাট্টা করে কথা বলছো। মনে হলো সায়রার সাথে কথা বলছিলে।”

–“হুমম। সায়রার সাথেই কথা বলছিলাম। অভয় যাকে ছেড়ে দিয়েছে। তোর ভাই এটা একদম ঠিক করে নাই। এতো সুন্দর মনের মেয়েকে কেউ আঘাত করে?”
অনিন্দিতা ক্ষীণ সুরে প্রতিবার করে বলে……
–“সুন্দর মনের মেয়ে? ও আমাদের বাবার শত্রুর মেয়ে ইশান ভাইয়া। আর বিয়ের পরেও সায়রার সাথে ভাইয়াকে যোগাযোগ রাখতে বলছো? তোমার তো মনে হয় খুব কষ্ট হচ্ছে ওর জন্য। তুমি ওর কষ্ট কমিয়ে দাও।”
শেষের কথায় রাগের ছাপ পেলো ইশান। অন্যদিকে তাকিয়ে বলল…..
–“চেষ্টা তো করছি বন্ধু হিসেবে। ওর সাথে কথা বলতে অন্যরকম ভালো লাগে। দুনিয়ার আর কিছু মনেই থাকে না।”

অনিন্দিতার চোখমুখ লাল হয়ে গেল। চোখজোড়া মিইয়ে গেল। গম্ভীর গলায় বলল…..
–“কোথা থেকে পেলে ওর নম্বর?”
–“অভয়ের থেকে। ওর কাছে সায়রার প্রসঙ্গ তুলতেই ও আমাকে সবটা বলে। তাই ওর নম্বর চেয়ে বসি। একটা কথা বল, ওকে তোর ভাবি হিসেবে কেমন মানাবে?”
অনিন্দিতা চুপ করে গেল। নিরব চাহনি দিয়ে বুঝিয়ে দিতে চাইল ইশানকে তার মনের ভাষা। কিন্তু ইশান বুঝলে তো!! অনিন্দিতা দম ফেলে বলল….
–“জানি না আমি।”
আর এক মূহুর্ত দেরি না করে হনহন করে স্থান ত্যাগ করে সে। কয়েকটা সেকেন্ড থাকলে অনিন্দিতা কি করত সে নিজেও জানে না। নিজেকে সামলাতে বড্ড কষ্ট হয়ে পড়ত তার।

চলবে……

[বি.দ্র. অনেকেই দ্রুত রহস্য শেষ করতে বলছেন। রহস্য শেষ হলে তো গল্পই শেষ হয়ে যাবে। আর এক পার্টেই সবটা কি করে তুলে ধরব? আমাকে একটু সময় দিন। রহস্য যেহেতু দিয়েছি সেহেতু রহস্যভেদও আমিই করব। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here