বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ২২
#আনিশা_সাবিহা
দুপুরে প্রচন্ড রোদের তাপ। সিলেটের পাহাড়ি অঞ্চলের গ্রাম। সাধারণ মানুষের মাঝে দেখা যায় নানান উপজাতিদের। গ্রাম দিয়ে হেঁটে চলেছে ঐশানী, অভয় সহ পুরো পরিবার। গ্রামের জায়গা গুলো বেশিভাগ উঁচুনিচু। উঁচু জায়গাগুলো তে চায়ের বাগান। সাথে কমলা গাছের বাগানও রয়েছে। ঐশানী জানে সিলেট অঞ্চল কেমন হয়। কারণ সে এখানেই বড় হয়েছে। তবে এই গ্রামে নয়। আরো দুটো গ্রাম পড়ে তাদের গ্রাম। গ্রামের কাঁচা রাস্তা। দুপাশে সুপারি গাছের বাহার। রাস্তাটিকে আরো মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে।
অভয় রেগে বম হয়ে হাঁটছে। সবাই নানানরকম কথাবার্তা বলতে ব্যস্ত থাকলেও ওর মুখটা গোমড়া। হওয়ারই কথা। বাসে তো আর কম কান্ড হয়নি! ভাগ্যিস শেষ মূহুর্তে ঐশানীর ঘুম ভেঙেছিল সেই সঙ্গে ওর পরিবারের সবাই বলেছিল যে ঐশানী তার স্ত্রী। নয়ত ওতগুলো লোকজনের গণধোলাই খেয়ে সিলেট নয় হসপিটালে আসতে হতো। মিটমিট করে হাসতে হাসতে হাঁটছে ঐশানী। বাসে অভয়ের নাস্তানাবুদ হওয়ার বিষয়টা বেশ মজা পেয়েছে সে। ওরা দুজনই পেছন পেছন হাঁটছে নানানরকম লাগেজ নিয়ে। বাকি সবাই বেশ এগিয়ে হেঁটে চলেছে। গ্রামে থাকা লোকজন বেশ অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাদের দিকে লক্ষ্য করছে।
–“এই তুমি হাসি বন্ধ করবে? অন্যসময় তোমার হাসি আমার প্রাণ জুড়িয়ে দেয় বিশ্বাস করো! তবে এখন যেই হাসি দিচ্ছো সেটা আমার কাটা গায়ে নুনের ছিটা দেওয়া হচ্ছে।”
অভয়ের রাগি স্বরের কথাগুলো শুনে ঐশানীর হাসির শব্দ বেড়ে যায়। তাতে দাঁতে দাঁত চেপে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেয় অভয়। ঐশানীর তালে তাল মেলাতে কষ্ট হয়। অভয় লম্বা মানুষ তার বড় বড় পায়ের ধাপের সাথে কি আর ঐশানীর পায়ের ধাপ মেলে? তবুও চেষ্টা চালাতে চালাতে একসময় হঠাৎ করেই একজন বয়স্ক মহিলা এসে দাঁড়াতেই নিজেকে সামলে দাঁড়ায় ঐশানী। রাস্তার মাঝে এভাবে হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ায় খানিকটা বিরক্তও হয় সে। সরু চোখে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে এই বয়স্ক মহিলাকে কি সে চেনে? নাহ, একদমই চেনে না।
–“তোমাকে দেখে তো এই গ্রামে নতুন মনে হচ্ছে। তোমার নাম কি?”
মহিলাটির কথায় অপ্রস্তুত হয়ে ঐশানী জবাব দেয়….
–“ঐশানী।”
–“এখানে কি বেড়াতে এসেছো?”
–“জ্বী।”
–“কার বাড়িতে?”
–“খান বাড়িতে।”
অভয় হাঁটতে হাঁটতে খেয়াল করে ঐশানী তার পাশে নেই। পেছন ফিরে চেয়ে দেখে মেয়েটা কার সাথে যেন কথা বলছে।
–“মেয়েটাও না! আসার সাথেই কার সাথে যে গল্প জুড়ে দিয়েছে কে জানে?”
বলেই পেছন ফিরে হেঁটে এসে দাঁড়ায় অভয়। ঐশানীকে ইঙ্গিত করে বলে….
–“কি হলো যাবে না তুমি?”
–“হ্যাঁ যাব কিন্তু…..”
কথাটি পুরোপুরি শেষ না হতেই হুট করেই মহিলাটি আবার প্রশ্ন করে বসেন।
–“তুমি কে হও খান বাড়ির?”
ঐশানী এবার ভাবনায় পড়ে যায়। কি বলা উচিত? খান বাড়ির বউ? এটা বলা কি ঠিক হবে? সে তো পুরোপুরি সেই বাড়ির বউ হতেই পারেনি। অভয় জবাব দেওয়ার আগেই ঐশানী দুম করে বলে বসল….
–“কয়েকদিনের অতিথি হিসেবে রয়েছি।”
ঐশানীর কথাটি অভয়ের বুকে তীরের মতো গিয়ে বিঁধে যায়। ও নির্বাক হয়ে শুধু চেয়েই থাকে। ওর দৃষ্টি হয়ে পড়ে শূন্য। অতঃপর ঐশানী অভয়ের দিকে তাকিয়ে বলে…..
–“যাওয়া যাক?”
অভয় নিজের যন্ত্রণা ঢক গিলে নিজের মাঝে মিশিয়ে দেয়। হালকা মাথা দুলিয়ে হাঁটতে শুরু করে। সেই সঙ্গে পিছু পিছু হাঁটে ঐশানী।
অনেকক্ষণ হলো বাড়ির উঠানে বসে নিজের ছেলে, বউমা, নাতি-নাতনি এবং নাতবউয়ের অপেক্ষা করছেন আয়েশা বেগম। গায়ে সাদা ধবধবে শাড়ি পড়ে গোসল করে দ্রুত এসে উঠানে বসেছেন উনি। কতবছর পর নিজের ছেলেকে আর তার পরিবারকে দেখবেন উনি ভাবা যায়? উনার মনে কাজ করছে চাপা উত্তেজনা। অপেক্ষার অবসান অবশেষে ঘটে। রাহাত সাহেবের ‘আম্মা’ ডাকটি শুনেই উনি চিনে ফেলেন। চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ান তৎক্ষনাৎ। পা ধীরে ধীরে চালিয়ে দরজার কাছে এসে দাঁড়াতেই ছেলে আর বউমার দেখা পান উনি। মুখে ফুটে ওঠে উল্লাসের হাসি।
–“আসসালামু আলাইকুম আম্মা, কেমন আছেন?”
এসেই হাসিমুখে কথাগুলো বললেন মিসেস. তনয়া। আয়েশা বেগমের হাসিটা আরো প্রসারিত হলো। সালামটি নিয়ে উনি বলেন…..
–“ভালা কেমনে থাকুম? তোমরা তো বুড়ি রে ভুইলা গেছো। আমার কথা আর কি মনে পড়ে?”
–“আরে আম্মা, জানোই তো বিদেশে ছিলাম। তোর নাতনির পড়ালেখা কমপ্লিট না হলে কিভাবে আসতাম!”
–“হইছে। তোমাগো আর বাহানা দিতে হইব না।”
মুখ বেঁকিয়ে বলেন আয়েশা বেগম। অনিন্দিতার আগমন হলে আরো কিছু কথাবার্তা বলে খোঁজখবর নিয়ে উনি দেখতে চান ঐশানী আর অভয়কে। আশেপাশে তাকিয়ে আগ্রহের সঙ্গে বলেন….
–“কই কই? আমার নাতি আর নাতবউ কই?”
–“ওইযে হেঁটে আসছে তোমার গুনধর নাতি আর নাতবউ।”
আয়েশা বেগম পেছনে বড্ড কৌতুহল নিয়ে তাকান। দূর থেকে দুজনকে হেঁটে আসতে দেখেন। সেখান থেকেই চোখজোড়া জুড়ান। কিটকিটিয়ে হেসে বলেন…..
–“নাতবউ ভালোই বেছেছিস রাহাত। আমার সুন্দর নাতির সাথে সুন্দরী নাতনি। ঐশানী রে তো আমার প্রথমেই পছন্দ ছিল নাতবউ বানানোর লাইগা। অবশেষে আমার সাধ পূর্ণ হলো।”
সবাই হাসেন উনার কথা শুনে। বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে আসেন ইশানের মা-বাবা, মিসেস. রজনী এবং আজিম সাহেব। সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় শেষে বাড়িতে ঢোকে ওরা।
বাড়িতে খুশির আমেজ। বাড়িটা খুব একটা বড় নয় তবে বেশ সুন্দর। গ্রামের বাড়িগুলো দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। বাড়ির পেছনে জঙ্গল, পাশেই উঁচু জমিতে চা-বাগান। একতলা বাড়ি আর বাড়ির উঠান দিয়ে চিকন সিঁড়ি দিয়ে ছাঁদে ওঠার রাস্তা। মেয়েরা সকলে গল্পের মেতেছে। আর ছেলেরা অন্যদিকে। এতোকিছুর মাঝে অভয়কে না দেখতে পেয়ে অনিন্দিতার চোখ তার ভাইকে খুঁজতে থাকে। মায়ের থেকে জানতে পারে অভয় ছাঁদে উঠেছে। তা জেনে অনিন্দিতাও ছাঁদে ওঠে।
ছাঁদে উঠতেই কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা অভয়কে চোখে পড়ে অনিন্দিতার। কিনারায় কোনো পাঁচিল দেওয়া নেই। ভীতিকর সুরে চিল্লিয়ে অনিন্দিতা বলে….
–“এই ভাইয়া একটু সরে আয় পড়ে যাবি তো।”
অভয়ের ভাবান্তর হয় না। শুধু একবার তাকিয়ে আবারও বুকের হাত জড়িয়ে একদৃষ্টিতে আশপাশটা দেখতে থাকে। অনিন্দিতা এগিয়ে আসে। অভয়ের কিছু হয়েছে সে বেশ আন্দাজ করতে পারছে।
–“কি হয়েছে তোর?”
–“বড্ড খারাপ লাগছে। যতবার ঐশানীর কাছে যেতে চাইছি ঐশানী নিজ দায়িত্বে আমার মনকে বিষাদে ভরিয়ে তুলছে। এমনটা কেন হচ্ছে অনি? তুই তো বলেছিলি যত তাড়াতাড়ি নিজের মনের কথা স্বীকার করব ততই তাড়াতাড়ি আমার মাঝে যা দূরত্ব সব মিটে যাবে!”
অনিন্দিতা বেশ মনোযোগ দিয়ে অভয়ের বলা কথাগুলো শোনে। তার কথা শেষ হলে অনিন্দিতা বলার আরম্ভ করে…..
–“এমনটা হওয়া কি অস্বাভাবিক? তুই একটা মেয়েকে বারবার বলে আসছিস যে তুই অন্য কাউকে ভালোবাসিস। কিন্তু হঠাৎ করেই যদি তুই বলে বসিস তুই তাকেই ভালোবাসিস সে কি এতো দ্রুত বিশ্বাস করবে? বিষয়টা এক্সেপ্ট করা একটা মেয়ের জন্য ততটাই কঠিন। ওকে সময় দে। ওকে বুঝতে দে। তুই বেশি করে নিজের মনের কথা ওর কাছে প্রকাশ কর। আস্তে আস্তে ও তোকে বুঝবে। আরো যদি নিজের ভালোবাসার কথা বুঝতে দেরি করতিস তাহলে বিষয়টা আরো জটিল হয়ে দাঁড়াতো।”
–“না অনিন্দিতা। আমার মনে হয় ঐশানী আমার থেকে বারবার কিছু লুকায়। ওকে যতটা সরল অংকের মতো মনে হয় ও ততটাই জটিল অংক। ও অদ্ভুত। আমি ওর সঙ্গে একই ঘরে থাকি আমি সেটা বুঝতে পারি। যেন ও নিজের কোনো অস্তিত্ব লুকিয়ে ফেলতে চাইছে।”
অনিন্দিতা এবার নিজেও বিপাকে পড়ে যায়। ঐশানী আবার কি লুকাবে? খুব ভেবেচিন্তে বলল….
–“একারণেই তো তোকে বেশি করে ওকে জানতে হবে, চিনতে হবে, ওর সাথে মিশতে হবে। তাহলেই ও তোর কাছে পানির মতো সহজ হবে।”
দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে নিজেকে হালকা করে নেয় অভয়। মুখে মুচকি হাসির রেশ ফুটিয়ে অনিন্দিতার দিকে ঘুরে বলে……
–“অনেক তো জানলাম। অনেক বুঝলাম। শুধু এখন আমায় এটা বল যে ভালোবাসা সম্পর্কে তুই এতো কিছু জানলি কি করে? এতোটা ভালোবাসা সম্পর্কিত ধারণা কবে হলো তোর?”
অভয়ের হুট করে করা প্রশ্নে ভড়কে তাকায় অনিন্দিতা। নিমিষেই নামিয়ে ফেলে তার দুটো চোখ। লজ্জায় গুটিয়ে যায় সে। তার লজ্জা দেখে চোখ সরু হয়ে আসে অভয়ের। অনিন্দিতার কাঁধে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে…..
–“তোর লাল হওয়া গাল আর নামিয়ে নেওয়া চোখ কিন্তু অনেক কিছু বলে দিচ্ছে। কি সেই ভাগ্যবান ব্যক্তি?”
–“ইয়ে মানে ভাইয়া এখন কিছু জানতে চাইবে না প্লিজ। সময় হলে আমি নিজে বলব!”
অভয় আর জোর করে না। সে জানে তার বোন নিজেকে বোঝে। সময় অনুযায়ী ঠিকই তাকে জানাবে।
–“ঠিক আছে। সময় হলেই বলিস। জোর করছি না।”
অনিন্দিতা লজ্জামাখা হাসি দিয়ে নিচে নেমে যায়।
বিকেলের সময়। সকলে উঠানে বসেছে গল্প করতে। এতোদিন পর সবার দেখা পেয়েছেন আয়েশা বেগম। বয়ষ্ক মানুষ বলে কি গল্প জমে থাকবে না? নানানরকম কথাবার্তায় জমিয়ে তুলেছেন গল্পের আসর। শুধু ঐশানীই নেই সেই আসরে। দুপুরে খাবার খাওয়ার পর ঘুমিয়েছিল মেয়েটা। জার্নি করে অতিরিক্ত ক্লান্ত থাকায় এখনো তার ঘুম ভাঙনি। অভয়ও জাগিয়ে দেয়নি তাকে। কিছুক্ষণ পর গ্রাম ঘুরতে বের হবে তারা। তখন না হয় ঐশানীকে জাগিয়ে দেওয়া যাবে। উঠোনের বেশ কিছু দূরে মেইন দরজায় ঠকঠক আওয়াজ হয়। মেয়েলি কন্ঠে ভেসে আসে।
–“বাড়িতে কেউ আছেন?”
আয়েশা বেগম জোরে জবাব দেন…..
–“কে?”
ভেতরে ঢুকে পড়েন একজন বয়স্ক মহিলা। খুব বেশিও বয়স না। আয়েশা বেগমের তুলনায় কম। আয়েশা বেগম উনাকে এক দৃষ্টিতেই চিনে যান।
–“আরে হালিমা তুমি? আসো আসো। এতোদিন পর আমার বাড়ির দরজায় কি মনে করে?”
–“বাড়িতে নতুন কিছু অতিথি দেখলাম তাই ভাবলাম পরিচয় হয়ে আসি।”
অভয়কে বেশ চেনা চেনা লাগে মহিলাটিকে। কিছুটা মনোযোগ দিয়ে দেখবার পরেই চিনে যায় মহিলাটিকে। এই মহিলাই তো ঐশানীর পথ আঁটকে কথা বলছিল।
–“আরে নতুন অতিথি না সব আমার পরিবারেরই সদস্য। অনেক বছর পর বিদেশ থেইকা ফিরল।”
হালিমা হেসে ভেতরে আসেন। সবার সাথে চেয়ারে বসেন। বেশ কথা হয় সবার মাঝে। কিন্তু হালিমা যেন খুঁজছেন অন্য কাউকে। সেটা খেয়াল করে অভয়। কথার মাঝে হুট করেই হালিমা বলেন…..
–“আমার একটা ছেলে আছে বুঝলেন আপা? বিয়ের উপযুক্ত! ভালো চাকরি করে। ভাবছি দেখেশুনে বিয়ে দেব।” (তার ছেলের ছবি দেখিয়ে)
মিসেস. তনয়া সঙ্গে সঙ্গে অনিন্দিতার দিকে তাকান। মেয়েটার বয়স তো কম হয়নি। তাকেও বোধহয় বিদায় দেওয়া সময় এসেছে।
–“বেশ ভালো কথা তো। দেখুন মেয়ে।”
–“আসলে বলছিলাম আপনাদের বাড়ির দিকে আসতেই একটা মেয়েকে দেখেছিলাম। ওই মেয়েটাকে এক দেখাতে আমার পছন্দ হয়। ও এদিকেই আসছিল।”
সবাই মনে করে হালিমা হয়ত অনিন্দিতার কথা বলছে। অভয় অনিন্দিতাকে দেখিয়ে দিয়ে বলে…..
–“অনির কথা বলছেন?”
–“আরে না না। আরেকটা মেয়ে। একটু খাটো করে কি যেন নাম তার! মনে পড়ছে না।”
সবাই কনফিউজড হয়ে পড়ে। হালিমা আবার কোন মেয়ের কথা বলছেন? সেই সময় ঐশানীকে উঠানে আসতে দেখতে পান হালিমা। তার দিকে তাক করে বলেন…..
–“ওইযে মেয়েটা। ঐশানী নাম। এই মেয়ে এদিকে শুনো।”
ঘুম থেকে আড়মোড়া ভেঙে সবে চোখমুখে পানি দিয়ে উঠানের দিকে আসছিল ঐশানী। এমন সময় সেই মহিলাকে আবার দেখে ভ্রু কুঁচকে যায় তার। তবুও ভদ্র ভাবে গায়ের ওড়না ঠিক করে এগিয়ে আসে। সবাই ঐশানীর দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। শেষমেশ বিষয়টা এমন দাঁড়াল যে শ্বশুড়বাড়িতেই বাড়ির বউয়ের দ্বিতীয় বিয়ের প্রস্তাব?
সবার চোখ কপালে। অভয় তো আকাশ থেকে পড়েছে? নিজের বউকে বিবাহিত রুপটি না দিতে পেরে বড়ই আফসোস হচ্ছে তার। অন্যদিকে ঐশানী এসবের কিছুই জানে না। সে শুধু ভাবছে সবাই তার দিকে এভাবে তাকিয়ে আছে কেন? সিরিয়ালের নায়িকার মতো তার চেহারা কি নিমিষেই পাল্টে গেল নাকি? চেক করার জন্য নিজের গাল-মুখে হাত দিল সে। মনে তো হচ্ছে সব ঠিকঠাকই আছে।
অভয়ের পাশে বসে ছিল ইশান। সে দাঁত বের করে হাসছে। হালিমা তার হাসির কারণ বুঝতে পারছেন না। বলা বাহুল্য বুঝতেও চাইছেন না। কারণ ছোট থেকেই ইশান বড্ড ফাজিল। আগুনে ঘি ঢালাতে অভয়ের কানের কাছে এগিয়ে যায় সে। গলা খাঁকারি দিয়ে ফিসফিস করে বলে….
–“অভয়! তোর বউকে নিজের করে রাখতে পারলি না রে। তোর তো নিমপাতা খেয়ে মরে যাওয়া উচিত। এখন ভেবে নে তোর বউকে দ্বিতীয় বিয়ে দিবি কবে? জাঁকজমক ভাবে দিবি নাকি নরমালি? বিয়েতে কিন্তু আমার স্পেশাল কাচ্চিবিরিয়ানি চাই।”
ক্রোধের সাথে সাপের মতো ফোঁসফোঁস করে তাকায় অভয়। ইচ্ছে তো করছে ঐশানীকে কয়েকটা ঠাটিয়ে থাপ্পড় মেরে গাল লাল করতে। ইশানকে হালকা ধাক্কা মেরে বলে…..
–“কাচ্চিবিরিয়ানি দিয়ে তোকে এমনভাবে চেপে দেব নিশ্বাস না নেওয়ার অভাবে মৃত্যু হবে তোর। সরে যা। রাগ বাড়াস না।”
হালিমা সবার রিয়েকশন দেখে কিছুই বুঝলেন না।
–“আপনারা সবাই এমনভাবে তাকালেন কেন? আমার তো এই মেয়েটাকে পছন্দ হয়েছে। কি মিষ্টি দেখতে। এমন ছেলের বউ চেয়েছিলাম আমি।”
কথাটা শোনামাত্র কাশি উঠে যায় ঐশানীর। তার মনটা বলতে থাকে….
–“তাহলে এই ছিল এই মহিলার মনে? কি লজ্জা! কি লজ্জা!”
নিজের বিস্ময় ভেঙে রাহাত সাহেব হাসার চেষ্টা করে বলেন….
–“কি বলছেন আপনি? ও তো বিবাহিত! আমার ছেলের বউ। এখন ওকে দ্বিতীয় বিয়ে দিই কি করে?”
হালিমা বড্ড চমকে উঠলেন। ঐশানীর দিকে এক পলক তাকিয়ে বললেন…..
–“দেখে তো মনে হয় না। শাড়ি পরেনি, নাকে ফুল নেই। কিভাবে বুঝব বিবাহিত নাকি অবিবাহিত? আর যখন ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এই বাড়ির কে হও তখন ও উত্তর দিয়েছিল অতিথি হয়। এতে আমার দোষ কোথায়?”
অভয় আর চুপ থাকতে পারলো না। বসা থেকে উঠে দাঁড়াল। হাসি দিল। সেই হাসিতেও রাগ। নিজের রাগকে দমানোর চেষ্টা করে বলল….
–“তাই বলে এভাবে দুম করে বিয়ের প্রস্তাব আনা কি ঠিক হয়েছে? আরে আমরা স্বামী-স্ত্রী। আমাদের মনমালিন্য চলছিল। তাই হয়ত ঐশানী কয়েকদিনের অতিথি বলে ফেলেছে তাই না ঐশানী? আর তোমার নাকের ফুল কোথায়?”
ক্রুদ্ধ নয়নে তাকিয়ে প্রশ্ন করে অভয়। ঐশানীর চোখ তো বেরিয়ে আসার উপক্রম! কবেই বা ওদের মনমালিন্য হলো? আর এসব হচ্ছেই বা কি? তবুও মিনমিন করে উত্তর দিল…..
–“আসলে বাসে আসতে নাক ফুল খুলে পড়েছিল। ওটা আমি ধরে ফেলেছিলাম। তাই সেটা ব্যাগে রেখে দিই। আর পড়া হয়নি নাকে।”
–“তাহলে চলো আমি আজকে তোমায় নাক ফুলটা পড়িয়ে দিই?”
কথাগুলোতে অতিরিক্ত রাগ নিয়েই বলল অভয়। ঐশানীর হাতটা ধরে টানতে টানতে ভেতরে নিয়ে গেল।
চলবে…..
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]