বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ২১

0
1387

বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ২১
#আনিশা_সাবিহা

ঐশানী শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। তার ঠোঁটের কোণে হাসি হাসি ভাব। তার মনে এক চিলতে অনুভূতি কড়া নাড়ে। মনটা বলে ওঠে…..
–“লোকটা কেন তার জন্য এতো পরিশ্রম করে তার সব থেকে পছন্দের জিনিস আনতে গেল? তবে কি দুপুরে বলা কথাগুলো সত্যি ছিল?”
অভয় ঐশানীর নিরবতা দেখে চোখজোড়া সরু করে ফেলে। হাওয়াই মিঠাইগুলো লেগে থাকা বড় স্টিলের লাঠি এক হাত দিয়ে ধরে অন্যহাতে চুটকি বাজিয়ে বলল….
–“ও হ্যালো? কোথায় হারিয়ে গেলে? পছন্দ হয়নি?”
ঐশানী হালকা চমকে গিয়ে মুচকি হেসে তাকায়। অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে বলে….
–“আপনি সত্যি আমার জন্য এনেছেন এতোক্ষণ ধরে খুঁজে?”

–“তবে কি মনে হচ্ছে? আমি মিথ্যে বলছি?”
–“না আসলে…. (একটু থেমে) মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি। শ্যামলা ঘোড়া আমার জন্য এতোক্ষণ ধরে খুঁজে হাওয়াই মিঠাই এনেছে। এটা অবিশ্বাস্য। তবে যান বিশ্বাস করলাম।”
বলেই নিজের ঠোঁটের হাসি প্রসারিত করে ঐশানী। বেরিয়ে আসে তার গজদাঁত। যেটা হাসির সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম। অভয়ও প্রতিত্তোরে হাসে। হাওয়াই মিঠাই গুলো দেখিয়ে বলে…..
–“আমি কি বাহিরেই দাঁড়িয়ে থাকব? নাকি ভেতরেও যেতে দেওয়া হবে?”
–“আমি এতোটাও মোটা নই যে আপনার ভেতরে যেতে সমস্যা হবে।” (নাক ফুলিয়ে)

–“বাট এটা নিয়ে তো ঘরে ঢোকা সম্ভব নয় তাই না?”
ঐশানী এতো বড় লাঠিটা ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে। এতো বড় জিনিস সদর দরজা অবধি ঢোকানো সম্ভব নয়। ছুটে গিয়ে একটা একটা করে হাওয়াই মিঠাই নিজের হাতের ভাঁজে নিতে থাকে সে। এতোগুলো প্যাকেট তো কম কথা নয়। একসময় তার দুহাত সহ মুখও ভর্তি হয়ে যায়। তবুও হাওয়াই মিঠাইয়ের প্যাকেট শেষ হয় না। অসহায় পানে চেয়ে থাকে ওপরে থাকা হাওয়াই মিঠাইয়ের দিকে। অভয় তা লক্ষ্য করে একটু মজা নিয়ে নিজের দুইহাতে বাকি প্যাকেট নিয়ে বলে…..
–“হ্যাপি?”
ঐশানী দুইদিকে মাথা নাড়িয়ে সদর দরজা পেরিয়ে আসে।

সেখান থেকে ড্রয়িংরুমে পা রাখতেই মিসেস. তনয়া ও রেনু গল্প করা অবস্থায় ঐশানীর দিকে তাকায়। হাত ও মুখ ভর্তি হাওয়াই মিঠাই দেখে থতমত খেয়ে তাকান উনারা। পেছন পেছন অভয়কেও একইভাবে দেখে আরো চমকে উঠেন।
–“তোমরা এভাবে? এতোগুলো হাওয়াই মিঠাই কি করবে?”
মিসেস. তনয়ার প্রশ্নের উত্তর দিতে ঐশানীর মুখে হাওয়াই মিঠাইয়ের প্যাকেট থাকায় শুধু উম…উম… শব্দ করতে থাকে। অভয়ও চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে। মিসেস. তনয়া অভয়কে কটাক্ষ করে বলেন…..
–“ঐশানীর তো বলতে পারছে না। তুই তো বলতে পারবি। এতো হাওয়াই মিঠাই কি পুরো শহরে বিতরণ করবি?”

–“ওই আ…আসলে মা…. ”
অভয়ের আমতা আমতা করা দেখে ভ্রু কুঁচকান মিসেস. তনয়া। হালকা ধমকে সুরে বলেন….
–“কি আসলে নকলে? স্ট্রেটকাট কথা বলতে পারিস না?”
–“মা তোমার বউমা হাওয়াই মিঠাই খাদক। এতোগুলো ও একাই খেতে পারবে। এজন্য নিয়ে এসেছি।”
এক নিশ্বাসে গড়গড় করে কথাগুলো বলে ঝড়ের গতিতে সিঁড়ি দিয়ে উঠে যায় অভয়। মিসেস. তনয়ার বুঝতে বাকি থাকে না বউয়ের জন্য এসব এনেছে বলতে তার লজ্জা লেগেছে। তাই মিটমিটিয়ে হাসতো থাকেন উনি।

ঐশানী ঠাঁই সেখানেই দাঁড়িয়ে থেকে ঢক গিলতে থাকে লজ্জায়। অভয় কি বলে গেল? সে কিনা হাওয়াই মিঠাই খাদক? মিসেস. তনয়া তার দিকে তাকাতেই সে এগিয়ে এসে হাতে থাকা হাওয়াই মিঠাই এগিয়ে দিয়ে ইশারাই বলে খেতে। মিসেস. তনয়া এবার হেসেই বলেন…..
–“আমাদের এসব খাওয়ার বয়স পার হয়ে গেছে। তোমার বর তোমার জন্য এনেছে তুমিই বরণ খাও। আমরা কেউ এসব খাই না।”
লজ্জায় মিইয়ে পড়ে গটগট করে রুমের দিকে চলে যায় ঐশানী।

রেনু সবটা খেয়াল করে খুশিতে গদগদ হয়ে বলে….
–“বড় আম্মা দেখছেন আপনে? আমি বলছিলাম আপনার পোলা একদিন ঠিকই বউয়ের কদর করবে। করতাছে তো! আইজ বউয়ের জন্য ওর পছন্দের জিনিস আনছে। আপনার পোলা বউয়ের প্রেমে ফাঁসছে।”
বলেই খিলখিল করে হাসে রেনু। মিসেস. তনয়াও না হেসে পারেন না। আসলেই ঠিক বলেছে রেনু। তার ছেলেরও কি এবার সুবুদ্ধি হলো? হলে তো মন্দ নয়।
–“বউয়ের প্রেমেই তো জড়িয়ে যাওয়া উচিত রেনু। এটা তো নিয়ম। প্রকৃতির নিয়ম। ওপরওয়ালা দুটো মানুষকে যখন এক করেছেন তখন দুজনকে তো দুজনের কাছে আসতেই হয়।”

রুমের বেডের একপ্রান্তে বসে হাওয়াই মিঠাই খেতে ব্যস্ত ঐশানী। ইতিমধ্যে ফ্লোরে প্রায় পনেরোটা খালি প্যাকেট পড়ে রয়েছে। ওয়াশরুম থেকে একেবারে শাওয়ার নিয়ে বের হয় অভয়। গায়ে তার সাদা বাথরোব। বেশ বড় বড় চুলগুলো নেতিয়ে কপাল থেকে চোখ পর্যন্ত নেমে এসেছে। চুলের ফাঁক দিয়ে সে দেখতে পায় ঐশানীকে। মেয়েটার কোনোদিকে খেয়ালই নেই। রুমের মধ্যে আরেকজনও উপস্থিত রয়েছে সেটা কি সে ভুলে গেছে? স্যান্ডেল পড়া পায়ে দুইধাপ এগোতেই দুর্ভাগ্যবশত তার পা পড়ে খালি প্যাকেটের ওপরে। সঙ্গে সঙ্গে স্লিপ কেটে চোখের পলকেই ফ্লোরে উপুড় হয়ে পড়ে যায়। মৃদু চিৎকার দিয়ে ওঠে ‘আহহ’ শব্দ করে।

খেতে খেতে আঁতকে তাকায় ঐশানী। অভয়কে পড়ে থাকতে দেখে চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম হয় তার। অভয়ের বাথরোব পায়ের বেশ খানিকটা ওপরে উঠে যেতে দেখে ঐশানীও এক চিৎকার দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। অন্যদিকে অভয়ের অবস্থা নাজেহাল। একার পক্ষে দাঁড়ানো অসম্ভব হয়ে যাবে। চোখমুখ জড়িয়ে অসহায় ভঙ্গিতে ঐশানীর দিকে তাকিয়ে বলে….
–“আরে হৃদয়হীনা উঠাতে সাহায্যও তো করতে পারো নাকি!”
–“আ…আপনি আগে নিজের কাপড়চোপড় ঠিক করুন।”
চিল্লিয়ে বলে ঐশানী। অভয় ভ্রু কুঁচকে নিজের দিকে তাকায়। নিজের অবস্থা থেকে বাথরোব ঠিকঠাক করে হালকা কাশি দিয়ে বলে…..

–“এতোটাও কাপড় উপরে উঠে যায়নি যে এভাবে বলতে হবে। স্টুপিড গার্ল!”
ঐশানী পিটপিটিয়ে চাইলো। হাত ঝেড়ে এসে অভয়কে টেনে তুলল। পায়ে ভালোই ব্যাথা পেয়েছে সে। খোঁড়াতে খোঁড়াতে গিয়ে বেডে বসল। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে পা ধরে এদিক ওদিক নাড়াতে থাকল সে। রাগি চাহনি নিয়ে ঐশানীকে বলল….
–“হাওয়াই মিঠাই খাবে খুব ভালো কথা। কিন্তু প্যাকেট এদিক-সেদিক ফেলে দিয়েছো কেন? আমার পায়ে যা ব্যাথা লেগেছে ঠিকঠাক হাঁটতে পারছি না। এখন কি আমাকে কোলে নিয়ে চলতে পারবে তুমি?”

ঐশানী হাওয়াই মিঠাই মুখে দিয়ে ব্যস্ত কন্ঠে বলল….
–“কোনোদিন দেখেছেন পিঁপড়া হাতিকে কোলে নিতে?”
–“আমার রুমে এসব চলবে না।”
–“বাইরে যেতে পারেন!”
রাগে ফোঁসফোঁস করে তাকালো অভয়। অতঃপর রাগটাকে নিমিষেই শান্ত করে নিল। এখন তার রাগলে মোটেও চলবে না। বড় একটা শ্বাস নিয়ে উপুড় হয়ে বসে গালে হাত রেখে ঐশানীর খাওয়া দেখতে দেখতে বলল…..
–“ঐশানী?”

–“হু?”
খেতে খেতে ছোট্ট করে জবাব দিল ঐশানী। অভয় চেহারা গম্ভীর হয়ে এলো…..
–“আই এম সরি।”
–“কেন?” (খাওয়া থামিয়ে ভ্রু কুঁচকে)
–“আমার বোঝা উচিত ছিল তুমি সেই সিচুয়েশনে কতটা ভড়কে গিয়েছিলে। কিন্তু সেসব না বুঝেই তোমায় রাগে ভুলবশত চড় মেরে বসেছি।”
–“এটা আর নতুন কি? আপনার সঙ্গে দেখা হওয়ার দ্বিতীয় দিনই তো চড় দিবস পালন করেছিলেন। আমি তো এখন আপনার হাতে চড় খেয়ে ভাবলাম আজও হয়ত চড় দিবস।”
খেতে খেতে স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিল ঐশানী। অভয় এবার অনুনয়ের সাথে বলে…..

–“আই এম রিয়েলি সরি। প্লিজ এক্সেপ্ট মাই সরি। জাস্ট তোমার রাগ ভাঙানোর জন্য এতোক্ষণ ধরে খুঁজে খুঁজে হাওয়াই মিঠাই এনেছি।”
ঐশানী খাওয়া থামিয়ে দিল। অভয়ের চোখের দিকে তাকালো। তার চোখে সত্যিই অপরাধবোধ রয়েছে। ঐশানী উঠে দাঁড়িয়ে বলল….
–“ওকে সরি এক্সেপ্টেড।”
অভয়ও খুশি হয়ে উঠে দাঁড়ায়। চেহারাই হাসিখুশি ভাব এনে বলে…..
–“সত্যি?”
–“হুমম। কিন্তু হ্যাঁ সরি এক্সেপ্ট করেছি আপনার ভালোবাসা নয়। আগে আমরা যেমন ছিলাম তেমনই থাকব। হতে পারে সারাজীবন এমনই থাকব। আপনিও সময় নিন। বুঝতে শিখুন যে আপনার আসল ভালোবাসা কে। তারপর ভালোবাসা প্রকাশ করবেন।”

অভয় কিছুক্ষণ নিরব থেকে বলে….
–“চলবে। এখন শুধু সরি এক্সেপ্ট করে আগের মতো হলেই চলবে।”
ঐশানী ভাব নিয়ে হাসল। স্টাইল করে চুল অন্যদিকে দিয়ে ভাব নিয়েই বলল….
–“আপনার সরি এক্সেপ্টেড। আমি আবার দয়ালু মানুষ। কেউ এভাবে সরি চাইলে তাকে ফেরাতে পারি না।”
এই মেয়েটা কি ধাতু দিয়ে তৈরি তা জানা নেই অভয়ের। তবে মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে সে কি দিয়ে তৈরি? কি করে পারে অভয় খানের মতো গুরুগম্ভীর মানুষকেও হাসাতে? চোখ বন্ধ করে হাসে অভয়। বিড়বিড়িয়ে বলে…..
–“এক্টিং কুইন একটা!”

পরেরদিন……
সকালের আলো ফুটেছে সবে। অভয় ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে তার জিনিস প্যাকিং করছে। ঐশানী নিজের জিনিস প্যাকিং করতে করতে ঘুমে ঢলে পড়েছে। টেবিলে মাথা লাগিয়ে ঘুমিয়ে চলেছে ও। আর ঘুমের মাঝেই ‘শাহরুখ খান’ এর নাম নিয়ে চলেছে যেটা ভীষণই বিরক্ত লাগছে অভয়ের কাছে। কারই বা ভালো লাগে নিজের স্ত্রী এর মুখে অন্য কোনো পুরুষের নাম শুনতে? সে হক যতই সিলেব্রিটি! একসময় অভয় বিরক্তির চরমে পৌঁছে ধমক দিয়ে ডাকে ঐশানীকে।
–“এই মেয়ে! উঠো।”
ঘুমের মাঝে এতো জোরে ধমক পেয়ে হুড়মুড়িয়ে উঠে আশেপাশে তাকিয়ে বলে…..

–“শাহরুখ খান, শাহরুখ খান? কোথায় শাহরুখ খান?”
–“এটা শাহরুখ খান নয় অভয় খান। সারাদিন মুখে শুধু শাহরুখ খান আর শাহরুখ খান। ব্যাগ প্যাকিং করেছো নিজের?”
হাই তুলে উঠে দাঁড়ায় সে। ঘুমে জড়ানো কন্ঠে বলে….
–“শেষদিকে।”
আজ ওরা সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা হবে। ৭ টার দিকে বাস ছাড়বে। তার আগেই পৌঁছাতে হবে বাস স্ট্যান্ডে। সবটা প্যাক করে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে অভয় ও ঐশানী। নিচে ইশান সহ সবাই রয়েছে। তারা অপেক্ষায় করছিল এই দুজনের জন্যই।

নিচে নামতেই ইশান এগিয়ে গিয়ে অভয়কে প্রশ্ন করল…..
–“কিরে এতো দেরি হলো কেন?”
–“ঘুম ভাঙতে দেরি হয়ে গেছে।”
লাগেজ ঠিক করতে করতে স্বাভাবিক ভাবেই জবাব দিল অভয়। এতে ইশান দুষ্টু হাসি দিয়ে ফিসফিস করে বলে…..
–“হয় হয়। বিয়ের পর এমনটা হয়। আমিও বুঝি।”
থতমত খেয়ে ইশানের দিকে তাকায় অভয়। ছেলেটা কি বুঝাতে চেয়েছে সেটা খুব ভালো করে বুঝেছে। তার মাথায় গাট্টা মেরে অভয় দাঁতে দাঁত চেপে বলে….
–“ফাইজলামি অন্য কোথাও করবি। আমার এখানে চলবে না।”
–“আজকাল সত্যি কথার ভাত আছে? নো প্রবলেম এই ইশান রুটি খেয়ে থাকতে রাজি আছে। তাও সত্যি বলা ছাড়তে রাজি নেই।”
ইশানের অদ্ভুত কথায় কিছু বলতে গিয়েও বলে না অভয়। ওর এই ফাইজলামি কখনো যাবার নয়। তার থেকে কথা না বাড়ানোই ভালো।

সকলে মিলে বেরিয়ে পরে বাস স্ট্যান্ডের উদ্দেশ্যে। ইশান সেখানেই থাকে অভয়ের দাদির সঙ্গে। অভয়ের দাদি মা শহরে আসতে নারাজ। একা বয়স্ক মানুষ তো চলতে পারবেন না তাই ইশানের পরিবারসহ সেখানেই থাকে ইশান। বলতে গেলে নানিবাড়িই তার আসল বাড়িতে রুপান্তরিত হয়েছে।

বাস চলছে নিজের গতিতে। সামনের সিটে বসেছেন মিসেস. তনয়া এবং রাহাত সাহেব। ইশান ও অনিন্দিতা বসেছে এক সিটে। আর পেছনে বসেছে অভয় ও ঐশানী। যদিও ঐশানী অভয়ের কাছে বসতে চায়নি। তবে কায়দা করে বসেছে অভয় নিজেই। তবে এখন কেন জানি তার মনে হচ্ছে সে ঐশানীর পাশে বসে ভুলই করেছে। মেয়েটা অভয়ের কাঁধে মাথা রেখে বারংবার অস্পষ্ট ভাবে শাহরুখ খানের নাম জপ করছে। যেটা শুনে রাগে ফুলেফেঁপে উঠছে অভয়। ঐশানী ঘুমিয়েছে বলে কিছুও বলতেও পারছে না সে। তবে এতোকিছুর মাঝেও ঐশানী অভয়ের কাছে তো এসেছে! এটাই যেন অভয়ের সফলতা। চুলগুলো আলতো উড়ে এসে অভয়ের শ্যামলা চেহারায় দাঁড়ি ভর্তি গাল ছুঁইয়ে দিচ্ছে। মেয়েটা আবার চুলে খোঁপা করে রেখেছে। ছোট চুলগুলোই শুধু অভয়কে ছুঁতে সক্ষম হচ্ছে। অভয় মনে মনে বলে….”চুলগুলো বাঁধার কি খুব দরকার ছিল?”

ফোনের রিংটোনের শব্দ শুনে ফোন বের করে অভয়। স্ক্রিনের নামে সে অতিমাত্রায় বিব্রত হয়। সায়রা তাকে কল করেছে। আগে যখন সে সায়রাকে কল করত কখনোই সায়রাকে পেতো না কলে। এখন কি না সায়রা নিজে থেকেই কল করছে? তবে এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। সায়রা নামক ভূত তার মস্তিষ্ক থেকে নেমে গেছে। অভয় কেটে দেয় সায়রার কল। ফোনটা ওফ করে ঢুকিয়ে রাখে পকেটে।
একসময় শাহরুখ খানের নাম শুনতে শুনতে কান পঁচে যাবার উপক্রম হয় অভয়ের। এখনো ৩ ঘন্টার পথ বাকি। অভয়ের কানও যেন এখন হতাশ গলায় বলছে……
–“এতোদিন কি করলি অভয়? তোর বউ এখনো কিনা তোর নাম ব্যতীত অন্য পুরুষের নাম নেয়?”

রাগে-দুঃখে অভয় নিজের ডান হাত ঐশানীর মুখের ওপর আলতো চেপে ধরে। তাও যেন ওই শাহরুখ খান নামটা শুনতে না হয়। কান পর্যন্ত আর পৌঁছায় না সেই নামটা। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বাইরের দিকে চেয়ে থাকে ঐশানীর মুখ চেপে ধরে। কিন্তু বিপত্তি ঘটে তখন যখন বাসের কন্ডাক্টর বিষয়টি লক্ষ্য করে।
–“আরে ভাই, মেয়েটার মুখ এমনে চেপে ধরে আছেন ক্যান? মেয়েটারে পালাইয়া লইয়া যাইতেছেন নাকি?”

কন্ডাক্টর এতোই জোরে কথাগুলো বলল যে আশেপাশের সব লোক শুনে তাকালো তার দিকে অদ্ভুত ভাবে। বিরক্ত হয়ে বলল…..
–“আরে ভাই না। ও আমার বউ। কানের কাছে বিড়বিড় করছিল তাই মুখ চেপে ধরছিলাম।”
–“এইটা কেমন কথা? আমার মনে হচ্ছে মেয়েটাকে আপনি জোর করে কোথাও নিয়ে যাচ্ছেন।”
অন্য সিট থেকে আরেক লোক কথাটা বলে উঠল। অভয়ের তো কপাল চাপড়ানোর উপক্রম।
–“কি মুশকিল! আরে ভাই না। ও আমার বউ। সবাইকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করছি।”
তবুও কেউ দমল না। কন্ডাক্টর বলে উঠল….
–“আমার তো মনে হইতাছে এই লোকটা ছেলেধরা। কিডন্যাপ করে।”
অভয় বাকরুদ্ধ হয়ে গেল। শেষমেশ কিনা সে কিডন্যাপার প্রমাণিত হলো? তাও নিজের বউকে কিডন্যাপ??

চলবে……

[বি.দ্র. আপনারা সবাই মত দিয়েছেন গল্পটা নিজের মতো চালিয়ে যেতে। আমিও তাই চাইছি নয়ত গল্পের মাধুর্য হারিয়ে যাবে। গল্প আমার কল্পনা অনুযায়ীই এগোবে। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here