বেলা_শেষে_শুধু_তুমি পর্ব ১৬
#আনিশা_সাবিহা
চোখে পানির বাঁধ মানছে না সায়রার। এই ভরা অনুষ্ঠানে কাঁদতেও পারছে না ঠিকঠাক করে। গলায় কান্না আঁটকে আসছে বার বার। কান্না আটকাতে গিয়ে চোখমুখের রঙ তার পাল্টে গেছে। ও ভীড় ঠেলে বেরিয়ে আসছে একটু একটু করে। পেছনে দাঁড়িয়ে আছে অনিন্দিতা। ওর চোখমুখ শুষ্ক! সায়রাকে দেখে মনে হয় সে নাটক করছে। মেয়েটার কষ্ট বুঝে তার খারাপ লাগছে। তবুও সে পারবে না তার ভাইয়ের সাথে ঐশানীর সম্পর্ক ভাঙতে। অবশ্য অনিন্দিতারও ধারণা ছিল না অভয় তাকে এবং সায়রাকে এতো বড় চমক দেবে। এজন্য যদি সে স্বার্থপর প্রমাণিত হয় হক।
লাইটিং, জাঁকজমকপূর্ণ জায়গাটি ছেড়ে বড় সদর দরজা দিয়ে বেরিয়ে আসতেই খোলা আকাশের নিচে দাঁড়ায় সায়রা। আকাশের রঙ ঘন কালো। অনেক তাঁরা ঝিকিমিকি আলোয় ভরিয়ে দিয়েছে অন্ধকার আকাশকে। আর আকাশে সেই সুন্দর চাঁদ সেটা তো আকাশকে আরো আলোকিত করেছে। কিন্তু সায়রার জীবনকে আলোকিত করার চাঁদ টা নেই। হারিয়ে ফেলেছে সে চিরতরে। আজ সে দেখেছে অভয় কতটা সুখি আছে ঐশানীর সাথে। ঐশানীকে সামান্য অপমান করায় যদি অভয়ের গায়ে লাগে আর তার স্ত্রী এর বদলে যদি সে জবাব দেয় অপমানের এটাকে ভালোবাসার প্রকাশ ছাড়া কি বলা যেতে পারে? সায়রা ওদের দুজনকে হাসতে দেখেছে। তার মানে ওরা দুজনেই সুখি। আড়াল থেকে দেখেই সে বেরিয়ে আসে। এখন হেঁচকি তুলে তুলে কাঁদছে সে। খানিকক্ষণ পর আশেপাশে চোখ বুলিয়ে ওড়না ঠিক করে হাঁটা শুরু করল সামনের মেইন রাস্তার দিকে।
চোখ বুলিয়েও আড়ালে থাকা একজনকে চোখে পড়েনি সায়রার। সে হলো ইশান। গাছের পেছনে দাঁড়িয়ে সিগারেট খেতে ব্যস্ত ছিল সে। অনিন্দিতা তাকে বাইরে বের করে দিয়েছে সিগারেট খাওয়ার জন্য। অনুষ্ঠানে নাকি সিগারেট এলাও না। গাছে ঠেস লাগিয়ে দাঁড়িয়ে প্রায় দুটো সিগারেট শেষ করে তিন নম্বর সিগারেট ধরাতেই কারো হেঁচকি তোলা কান্নার আওয়াজ শুনে গাছের আড়াল থেকে ঘাড় কাঁত করে তাকায় সে। বেশ কিছুক্ষণ আগে ধাক্কা খাওয়া অত্যাধিক সুন্দরী মেয়েটিকে চিনতে তার খুব একটা ভুল হয় না। বিড়বিড় করে সে নিজেকে বলে….
–“ইশান, সিগারেট খেলেও নেশা চড়ে নাকি? উল্টাপাল্টা মেয়েদের দেখিস কেন? মেয়েটা তোর কি খুব বেশি পছন্দ হয়েছে নাকি?”
চোখটা ডলে ভালো করে তাকায় ইশান। সিউর হয় সে ভুল দেখছে না। মেয়েটা কাঁদছে। ইশান চোখ ছোট করে তাকায়। কাঁদার কোনো কারণ সে আন্দাজ করতে পারে না। মেয়েটাকে চলে যেতে দেখেই হাতের সিগারেট টা নিচে ফেলে দিয়ে আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে সায়রার পিছু নেয়।
সায়রা টলমল করে হাঁটছে। তার তিন হাত দূরেই হাঁটছে ইশান। হাঁটতে হাঁটতে এক পর্যায়ে সায়রার পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করে সে। সায়রা শোকে এতোটাই কাতর যে ওর খেয়ালেই নেই পাশেও কেউ রয়েছে। ইশান কি বলে কথা বলবে তা বুঝতে পারে না।
–“হেই মিস. সায়রা! কাঁদছেন কেন? অনুষ্ঠানে কি বিরিয়ানি খেতে পাননি?”
চমকে হাঁটা থামিয়ে পাশে তাকায় সায়রা। তার চমকটা কেন সে নিজেও জানে না। ইশানের পাশে হাঁটার জন্য নাকি এমন উদ্ভট কথার জন্য?
–“কে আপনি?”
–“আমাকে চিনলেন না? ওইযে বাংলোতে ঢুকতে ধাক্কা খেলেন। আমি কে তুমি নন্দিনী গানের দুটো লাইন গাইলাম!”
–“আপনার কি মনে হয় আমি ওখানে বিরিয়ানি খেতে গেছি?”
কান্নার মাঝে রাগ নিয়ে বলে সায়রা। ইশান হেঁসে উঠে বলে…..
–“আর কি বলব? এমন অনুষ্ঠানে কেউ কাঁদে তা শুনিনি। তাই বললাম। আপনি অভয়ের কোনো আত্মীয় হন?”
–“কেউ হই না আমি অভয়ের।”
কথাটা আরো দ্বিগুন রাগ নিয়ে বলে সায়রা। ইশান ঘটনার কিছুই বোঝে না।
–“প্লিজ আমার সাথে আর কোনো কথা বলবেন। আমি কোনো কথা বলতে রাজি নই। আর আমার পিছুও আসবেন না। বুঝতে পেরেছেন?”
সায়রা কাঠকাঠ গলায় কথাগুলো বলে হাঁটা ধরল। ইশান ঠোঁটজোড়া সরু করে সায়রার রাগ আর দুঃখের কারণ খুঁজেও পেলো না। কপাল কুঁচকে সায়রার হাঁটার দিকে এক নাগাড়ে তাকিয়ে থেকে বলল…..
–“অনুষ্ঠানে ঢুকল এমন ভাবে যেন ঐশানী ভাবির সতিন। আবার বের হলো এমন ভাবে যেন অভয় তাকে অপমান করে বের করে দিয়েছে। মনে হচ্ছে হৃদয় একেবারে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে কাঁচের মতো! আসলে ব্যাপার টা কি?”
রাতটা বেশ গভীর হয়েছে। ঐশানীর পরিবার ঐশানী আর অভয়কে নিতে এসেছে। সবার সাথে পরিচয় হয়ে কথাবার্তা বলে, খেয়েদেয়ে দুজনকে নিয়ে আবারও বাড়ির দিকে রওনা দেয় ঐশানীর পরিবার। গাড়িতে ঐশানীর পাশে বসেছে ঐশী। অন্যপাশে রয়েছে অভয়। অভয় একমনে জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। আর ইমতিয়াজ সাহেবের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে টুকটাক। মাঝেমধ্যে কিছু বলার জন্য উসখুস করছে ঐশী। ঐশানী স্ট্রেইট হয়ে বসে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। কারণ তার ডান পাশে অভয় বসেছে। অভয়ের পাশাপাশি বসার সুযোগ হলেও অভয়ের এতোটা কাছাকাছি বসেনি কখনো। গাড়িতে যখন ঝাঁকুনি হচ্ছে তখন ঐশানীর শরীর দুলছে। মাঝেমধ্যে না চাইতেও দুজন দুজনকে স্পর্শ করে ফেলছে। দুজনই দুজনের দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছে যেন ভূত দেখছে।
ঐশীর উসখুস দেখে তাকে অন্যদিকে চাপা মেরে চোখ গরম করে বলে…..
–“আগের জন্মে ব্যাঙ ছিলি নাকি? গাড়িতে বসে লাফালাফি করছিস কেন? এমনি এদিকে আমার নিশ্বাস আঁটকে যাচ্ছে আর তুই নড়াচড়া করছিস! চুপচাপ বস।”
–“গাড়িতে তো যথেষ্ট অক্সিজেন আছে আপু। তোর নিশ্বাস আঁটকে আসছে কেন?”
ঐশানী ঐশীর দিকে এগিয়ে গিয়ে অভয়কে বাঁকা চোখে দেখে কানে কানে বলে….
–“ওইযে আমার পাশে বসেছে না? আমার মনে হয় হয় এই শ্যামলা ঘোড়া আমার ভাগের অক্সিজেন নিয়ে নিচ্ছে।”
–“তুই আমাকে অযথায় ব্যাঙের বংশধর বললি আপু। আমি তোকে ইন্টারেস্টিং প্রশ্ন করার জন্য ভেতরের হার্ট টা ধুকপুক ধুকপুক করছিল। আর তুই কি-না আমাকে ইনসাল্ট করলি?”
ঐশানী ঠোঁট বাঁকিয়ে চুমুর মতো করে ঐশীকে বলে…..
–“আমার মতো জ্ঞানী ব্যক্তির থেকে কি ইন্টারেস্টিং প্রশ্নের উত্তর চাস তুই বলে ফেল।”
–“বলব?”
–“তো বলবি না?”
ঐশানীর আরো পাশ ঘেঁষে বসে ঐশী। মুখটা কানের কাছে নিয়ে গিয়ে ধীরে বলে ওঠে…..
–“বাসর রাতে কোনো ইন্টারেস্টিং ঘটনা ঘটেছে? দুজন দুজনের কাছে এসেছিস?”
বিস্ফোরিত চোখে তাকায় ঐশানী। বাসর রাতের কথা মনে করতেই মনে পড়ে ঝগড়ার কথা আর শেষমেশ যার সাথে ঝগড়াটা হলো তার ওপরই বেঘোরে ঘুমিয়ে পড়ার কথাটা। ভাবনার ঘোর কাটতেই সে খেয়াল করল অভয় কাশতে শুরু করেছে। এমন ভাবে কাশছে যেন সে বিষম খেয়েছে। অবশ্য এটা বিষমের থেকে কম বড় কিছু নয়। অভয় ঐশানীর পাশেই বসে থাকায় ঐশী যতই ধীরে কথা বলুক না কেন সবই ওর কানে এসেছে। ফলে কথাগুলো শুনে বিষম খেয়ে বসে অভয়। কাশতে কাশতে বেহাল অবস্থা হয়ে যায় তার। পেছন থেকে অনিন্দিতা এগিয়ে দেয় পানির বোতল। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে তাকে নিয়ে।
পানি খেয়ে শান্ত হয়ে বসে অন্যদিকে তাকায় সে। তার গালে আলতো গোলাপি ছোঁয়া। তা হয়ত দেখা যাচ্ছে না। হয়ত রাগে নয়ত লজ্জায়। ঐশী ঐশানীর কাঁধে ধাক্কা দিয়ে বলে…….
–“এই বল না। কোনো স্পেশাল কিছু হয়েছে?”
–“যদি গাড়িতে না থাকতাম তোর গলা চেপে ধরে মুখের জবান বন্ধ করে দিতাম। তাছাড়া তোকে বলিনি আমি? যে উনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন? এই তোর লজ্জা করে না? দিন দিন বেয়াদব হচ্ছিস। চরম বেয়াদব!”
ঐশী ঠোঁট উল্টে বলে…..
–“কিছুই হয়নি?”
–“না।”
–“কোথায় ভেবেছিলাম ইন্টারেস্টিং কথাবার্তা শুনব! ধুর!”
বিরক্ত হয়ে ঐশানীকে ধাক্কা দিয়ে বসে ঐশী। ঐশানী জায়গা না পেয়ে অভয়ের ওপরেই গিয়ে পড়ে অভয়ের দুহাত খামচে ধরে সিটের নিচে পড়া থেকে বাঁচতে গিয়ে। গাড়ির ঝাঁকুনিতে আরো সবটা যেন উলোটপালোট হয়ে যায়। অভয় অপ্রস্তুত হয়ে অন্যহাত দিয়ে ঐশানীর ঘাড়ের একটু নিচে হাত দিয়ে চেপে ধরে। ঘটনা ঘটিয়ে নিজেই বোকা বনে যায় ঐশী। মুখ চেপে ধরে বসে থাকে সে। অনিন্দিতা তিনজনের কান্ড দেখে মৃদু আওয়াজে হাসতে শুরু করে।
যখন দুজনের মাঝে দূরত্বটা পাঁচিল তুলে ফেলে তখন হুট করেই ভাগ্যক্রমে যদি দুজন দুজনের কাছে এসে পড়ে তবে তাদের শরীরের প্রতিটা রগ এবং অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অচল হয়ে পড়ে।
ঐশানী আর অভয়ের ক্ষেত্রেও ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে। তারা অচল হয়ে পড়েছে। ঐশানী না পারছে উঠতে আর অভয় ঐশানীকে না পারছে সরাতে। দুজন দুজনের চোখে তাকিয়ে নির্বাক! তারা হয়ত নিজেদের নামে লিখা কোনো ভাষা খুঁজতে ব্যস্ত। অভয়ের মস্তিষ্ক তো কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। ঐশী অনেকক্ষণ কিছু একটা ভেবে একটু এগিয়ে এসে ভয়ে ভয়ে বলে…..
–“আপু উঠতে পারছিস না? সারা রাস্তা এভাবে যাবি? ইয়ে মানে সামনে বড়রা বসেছে তো তাই বলছিলাম।”
ঐশানী ও অভয় হকচকিয়ে উঠে দুজন দুদিকে ছিটকে আসে। দুজনের ঘন ও গাঢ় শ্বাস পড়তে থাকে। আঁড়চোখে দুজন দুজনকে আবারও দেখে। ঐশানী চোখ সরিয়ে ঐশীর দিকে কটমট করে তাকায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলে…..
–“তোর পেনসিল মার্কা প্রেমিক কে ঝড়ের দিনে হাওয়ায় ওর সঙ্গে তোকেও উড়িয়ে দেব। আর জায়গা পাসনি? সরাসরি উনার দিকে ফেলে দিলি?”
–“সরি। আমি বুঝতে পারিনি তো। আমার প্রেমিকের সাথে হাওয়ায় ভাসতে আমার কোনো সমস্যা নেই।” (লজ্জাবোধ করে)
ঐশানী ফুঁসে সামনের দিকে তাকিয়ে বসে থাকে। আর সামান্য রাস্তায় বাকি!
রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। নতুন জামাই আর মেয়ে আসায় আড্ডার আসর জমেছিল আজ। একটু আগেই যে যার মনে ঘুমোতে চলে গেল। অভয় আর ঐশানীও রুমে চলে আসে। দুজন পরে বিপাকে। গলা খাঁকারি দিয়ে অভয় বলে…..
–“আজকেও কি গলা ফাটিয়ে ঝগড়া করতে চাও?”
ঐশানী নিজের বালিশগুলো কোলে তুলে বলে…..
–“যেচে পড়ে আর বিপদ বাড়াবো না। তাছাড়াও এবার গলা ফাটিয়ে ঝগড়া করলে রুম থেকে আমার মা আমাকেই বের করবে।”
–“তাহলে দুজন একসাথে একই খাটে ঘুমায়?”
অভয়ের প্রস্তাব শুনে ঐশানী বেডের দিকে তাকায়। তার বেড টা অনেকটাই বড়। কোনো উপায় না পেয়ে সে মাথা নাড়ায়। তারপর হুট করে বলে….
–“আপনার সায়রা কিছু মনে করবে না তো?”
–“জানি না।”
বলেই স্যান্ডেল খুলে শুয়ে পড়ে একধারে অভয়। ঐশানীও অন্যধারে শুয়ে পড়ে। মাঝখানে রাখে বড় বালিশ। দুজন একেবারেই ধারে শুয়েছে। যেন দুজন দুজনের স্পর্শ পেলে মহাপাপ হয়ে যাবে। ঐশানীর হার্টবিট বেড়েই চলেছে এতোটুকুতেই। তার পাশেই কিনা একজন পুরুষ শুয়ে আছে যে তার হয়েও তার নয়। সেকারণেই হয়ত ভয়টা বেশি। অশান্ত মনকে শান্ত করতে করতে একসময় চোখ বন্ধ হয়ে আসে ঐশানীর।
অভয়ের যখন ঘুম ভাঙে কাগজের খসখস আওয়াজে। দিনের গাঢ় আলোয় চোখমুখ কুঁচকে তাকায় সে। কাগজের আওয়াজ কোত্থেকে আসছে তা জানার জন্য চোখটা ভালো করে মেলানোর চেষ্টা করতেই সামনে স্পষ্ট হয়ে ওঠে ঐশানীর মুখটা। তার মানে ঐশানীও উঠে পড়েছে। কিন্তু কি করছে ও? দেখে তো মনে হচ্ছে কোনো ফাইল ঘাঁটছে। সবটা আর স্পষ্ট হতেই উঠে বসে সে। আচমকা অভয়কে জাগ্রত অবস্থায় যেন আশা করেনি ঐশানী। হাতের ফাইলটা দ্রুত পেছনে লুকিয়ে ফেলে। অভয়ের দিকে ভয়াতুর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে। অভয় এমন দৃষ্টির কারণ খুঁজে পায় না। তার মনে হলো ঐশানী তার কাছ থেকে ফাইলটা লুকাতে চায়।
–“এভাবে আমাকে দেখে ফাইল লুকিয়ে নিলে কেন? কি আছে ওই ফাইলে?”
–“আপনার সম্পত্তি আপনার থেকে কেঁড়ে নিলাম তার ফাইল।”
জড়ো হাসি দিয়ে বলে ঐশানী। তার কম্পন তোলা কন্ঠস্বর বলে দিচ্ছে ঐশানী সব এড়িয়ে যাচ্ছে। অভয় উঠে দাঁড়ায়। ঐশানীর কাছে গিয়ে হাত বাড়িয়ে ফাইলটা নেওয়ার চেষ্টা করতেই ঐশানী তার কাছের আলমারির দরজা খুলে তা ঢুকিয়ে দেয়। গম্ভীর গলায় বলে…..
–“আপনাকে এতোসব দেখতে হবে না। ফ্রেশ হয়ে নিচে আসুন। সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।”
বিষয়টা পুরোপুরি এড়িয়ে গেল অভয়। নিজেকে অভয়ের প্রশ্ন থেকে বাঁচাতে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় সে। অভয় আর ঘাঁটায় না তাকে। ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে আসে। অনেকক্ষণ ধরে ফ্রেশ হবার পরেও মনে একটা প্রশ্ন বার বার আসে। কি এমন বিষয় আছে ঐশানীর মাঝে যা ঐশানী একেবারেই তার থেকে বিষয়টা লুকাতে পালিয়ে গেল? অভয়ের মন খচখচ করতে থাকে। সে ফ্রেশ হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসে। নিজের মুখটা মুছে আবারও তাকায় আলমারির দিকে। ঐশানী আলমারিটা বন্ধ করেনি। অভয় সেই ভেবে আলমারি খোলে। সে প্রশ্ন নিয়ে থাকতে পারবে না। সে চায় ঐশানীকে জানতে। তার ইচ্ছে করে ঐশানীর সবটা জানতে। এটা তার আগ্রহ নাকি অন্যকিছু সেটা জানে না সে। তবে ওকে গভীরভাবে জানতে ইচ্ছে করে।
আলমারি খুলে একটা জামার ভাঁজে ফাইলটা দেখা যায়। অভয় ফাইলটা বের করে নিয়ে আসে। ফাইলের কভার দেখে মনে হচ্ছে কোনো হসপিটালের ফাইল। অভয় ফাইলের প্রথম পেজ খোলে। একটুখানি চোখ বুলিয়ে নিতেই ঝড়ের গতিতে এসে সেটা কেঁড়ে নেয় ঐশানী। অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় অভয়ের দিকে।
–“কি করছিলেন আপনি?”
ঐশানীর কন্ঠে স্পষ্ট রাগ! অভয় বলে…..
–“আমি ওই ফাইলটা…..”
–“আপনি বোঝেন না নাকি? আমার পারসোনাল জিনিসে আপনাকে কে হাত দিতে বলেছে? আমি তো আপনার পারসোনাল কোনো কিছুতে হাত দিইনি। আপনি কেন আমার এই ফাইলের ওপর আগ্রহ দেখাচ্ছেন?”
অভয় বিস্ময়ের চোখে তাকায়। ঐশানীর এমন আচরণ তার অজানা। এভাবে ঐশানী কখনো কথা বলেনি তার সাথে। অভয় থমকায়। সে অপমানিত বোধ করে। আর কোনোরকম শব্দ না করে হনহন করে স্থান ত্যাগ করে।
চলবে……
[বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]