বিপরীতে তুমি আমি (দ্বিতীয়_পরিচ্ছদ) পর্ব ২

0
633

#বিপরীতে_তুমি_আমি
(দ্বিতীয়_পরিচ্ছদ)
#লেখনি_সুমাইয়া_ইসলাম
|২|

বৃষ্টির উৎপাত প্রচন্ড বেড়েছে। সময় অসময় মেঘ ঢেকে চারপাশে অন্ধকার ঘনিয়ে আসে। প্রচন্ড গরমের পর পৃথিবী শীতল করতে বৃষ্টির চেষ্টার যেন কোনো ত্রুটিই নেই। ঝম ঝম শব্দে বৃষ্টি নেমে পড়ে। তবে কিরণের কানে ঝম ঝম এ বৃষ্টির থেকে অধিক বাজছে পানি ফুটার তগবগ শব্দ। কফি মগে পানি ফুটছে ঠিকই কিন্তু যিনি পানি গরম দিয়েছেন তিনি উধাও। বারান্দার ওলের দোলনাটা ছেড়ে কিরণ এবার ওঠে দাঁড়ালো। বেশ অনেকক্ষণ যাবৎ বসে আছে সেখানেই। রাত বারোটা পাড় হয়েছে মিনিট পাঁচেক আগে। সন্ধ্যা থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় পাঁচ ঘন্টা যাবৎ সে বাড়িতে নেই। হেঁটে রুমে আসতে আসতে কিরণের মনে দুঃচিন্তা হানা দিল। তাকে না পেয়ে তার বাবা মা এর কি অবস্থা? মায়ের হয়তো পেশার ফল করেছে ইতিমধ্যে। কি করে জানাবে এখন কিরণ? মোবাইলটা তখন কাছে ছিল না বিধায় নিয়েও আসতে পারে নি। অর্ণবও ঘরে নেই। অর্ণবও বেশ অদ্ভুদ বটে। সময়ের ব্যবধানে ঘায়েব হয়ে যায়। এদিক সেদিক তাকিয়ে অর্ণবকে না পেয়ে ঘরের বাহিরে পা বাড়ালো। নগর থেকে বেশ খানিকটা দূরে নদীর তীর ঘেষে ছোট খাটো তিন তলা বিশিষ্ট নিরিবিলি এক রিসোর্ট। কিরণ ও অর্ণবের অবস্থান একেবারের উপরেরটায়। বারান্দা থেকে এইটা বুঝতে পেরেছে। বারান্দা থেকে খরস্রোতা নদীর সকল দৃশ্যই স্পষ্ট দেখা যায়। কিরণের বিক্ষিপ্ত মন এ সময় যাবৎ সেই দৃশ্যেই মন ভুলে রেখেছিল। ঘর থেকে বের হওয়ার পর কিরণ বুঝতে পারলো তাদের থাকার জায়গাটা বেশ বড়। ভুল হল। বড় নয়, বিশাল। বোধ হয় পুরোটা জুড়েই কেবল একটি মাত্র স্থান। কিরণের কাছে মনে হলো এইটা হয়তো কোনো সৌখিন বাসা। হাঁটতে হাঁটতে কিরণের চোখে পড়লো বিশাল সুইমিং পুল। ব্যক্তিগত সুইমিং পুল। খোলা আকাশের নিচে। কিরণ এবার নিশ্চিত হলো এটি বিশেষ অথিতি চাহিদা অনুযায়ী নির্মিত। এক পা দু পা করে সুইমিং এর দিকে এগোলো। কাঁচের দরজা ঠেলে পাশে থাকা একটা বিশ্রাম সিটে বসল। বহুদিন পর সুইমিং পুল দেখে চোখের সামনে সাদাকালো স্মৃতি রঙ্গিন হয়ে ওঠলো।
তখন অর্ণব দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্র। কলেজ থেকে শুধুমাত্র ছেলেদের উদ্দেশ্যে আয়োজন করা হয়েছিল সাঁতার প্রতিযোগিতা। প্রচলিত নিয়মের মতো অর্ণবের সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করাটাও ছিল যেন বাধ্যগত। টুর্নামেন্ট শেষ হলে জয়ী ঘোষণা করা হলে জানা গেল অর্ণব মাত্র তিন সেকেন্ডের জন্য দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। অর্ণব তবুও খুশি হলো। সে তো চেষ্টা করেছে। চেষ্টা করে হারলেও শান্তি। সেই পর্ব মিটিয়ে যখন সবার প্রথমেই শার্ট ও প্যন্ট নিতে খেলার জন্য নির্ধারিত পোষাক কক্ষে, তখন সেখানে আবিষ্কার করলো কিরণকেও। কিরণ খুবই সাবধানে অর্ণবের শার্টের দুটো বোতাম ছিড়ে রাখছিল।
মেয়েদের শরীর দেখানোর শাস্তি। কিরণ খেয়াল করেছিল সাঁতারের সময় অনেক মেয়েরা অর্ণবের বিদেশি মতো চামড়ার শরীরটার দিক তাকিয়ে আছে। বয়সটা ছোট হলেও কিরণের ঈর্ষান্বিত মন তা সহ্য করতে পারে নি।
কিরণ পোষাক রুম থেকে বের হতেই মুখোমুখি পড়ে গিয়েছিল অর্ণবের। হঠাৎ অর্ণবের কাছে এমনভাবে ধরা খেয়ে যাবে তা ছিল ধারণাতীত। আশেপাশে তাকিয়ে তিন্নিকে খুঁজেছিল। মেয়েটাকে পাহাড়ায় রেখেছিল। কেস খাইয়ে কেটে পড়েছে। কিরণ ঢোক গিয়ে অর্ণবের দিকে তাকিয়ে ছিল ভয়ে ভয়ে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ছিল অর্ণব সেদিন কিছুই বলে নি। কেবল মুচকি হেঁসে শার্টটা নিয়ে চলে এসেছিল। কিরণ কেবল বোকাকান্তের মতো দাঁড়াতে ছিল কয়েক মিনিট। সেদিন থেকেও হয়তো বুঝেছিল অর্ণবের গতিবিধি বুঝতে তার হয়তো এ জন্মও কম পড়বে।

স্মৃতিচারণের মাঝে হঠাৎই আগমণ ঘটলো অর্ণবের। চোখ তুলে অর্ণবের দিকে তাকানোর আগেই হুট করে অর্ণব কোল তুলে নিল কিরণকে। ঘটনার আকষ্মিকতায় কিরণ হচকচিয়ে ওঠে গলা আঁকড়ে ধরে। অর্ণব কিরণের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে হেঁসে দিয়ে রমাঞ্চ কন্ঠে বলে,

– আর ইউ রেডি?

রহস্যময় হাসি। কিরণের ভ্রু কুচকে এলো। অর্ণবের কথার মানে বুঝতে না পারলেও তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় জরুরিভাবে খবর জানালো ” বিপদ সংকেত!”
তবে ভাগ্য সহায় বলে একটা কথা আছে। তাই বিপদ সংকেত বুঝার পরও তার থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার পূর্বেই কিরণ আঁচড়ে পড়লো পানির উপর। অর্ণবের এহেন কান্ডে কিরণ বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লো। সুইমিং পুলের পানিতে এক প্রকার নাকাবু চুবানি খেল যেন। পুরো শরীর ভিজে একাকার অবস্থা। নিজের অবস্থান দেখে অর্ণবের দিকে তাকালো। অর্ণবের চোখে মুখে বিশ্বজয়ের হাসি। আর কিরণের মস্তিষ্ক যেন যগ্গের আগুন । অর্ণব হাসি সেই আগুনেরই ঘি। কিরণের মেজাজ তুংগে ওঠেছে। বিকট চিৎকার করে ওঠার যেই প্রস্তুতি নিবে তখনই সজাগ হলো ইন্দ্রীয়। চোখ তুলর অর্ণবের দিকে তাকিয়ে। অর্ণবের চোখ উৎসুক হয়ে আছে। কেন? কিসের অপেক্ষায়? কিরণের কৌতুহলি মস্তিষ্ক ক্রমান্বয়ে প্রশ্ন করে গেল। কেন হঠাৎ অর্ণব এমন কাজ করলো?
তখনই সাথে সাথে উত্তরও এলো। কিরণ ঠোঁট বাকা করে হাসলো। স্বাভাবিক হয়ে এলো ওর মেজাজ। লম্বা এক নিঃশ্বাস নিয়ে ভেজা জামাটা ঠিক করে ধীরে ধীরে ওঠে এলো। হতাশ হয়ে আশা অর্ণবের মুখশ্রী দেখে কিরণের মনে মনে যেন দামামা বাজছে। কিছু না করেও যে বাজিমাত করা যায় তা এই পরিস্থিতিতে না পড়লে হয়তো সে বুঝতোই না।
অর্ণবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে অতি শান্ত কন্ঠে বলে,

আপনি যদি মনে করে থাকেন এসব বাচ্চামো কাজকর্মের দ্বারা আমার থেকে পূর্বের ন্যায় আচরণ পাবেন তবে তা ভুল ভাবছেন।

অর্ণব কিরণের চোখের মাঝে চোখ রেখে অপল তাকিয়ে রইল। সে তো চেয়েছিল কিরণ রেগে আসুক ওর দিকে। রাগ ঝেড়ে দিক সব। কিন্তু সর তো একেবারে শান্ত। কিরণ সত্যি কি এতোটা পাল্টেছে? তার প্রতিটি দানে চেকমেট দিতে যে মেয়ে সর্দা প্রস্তুত সেই মেয়ে আজ গুটি বসিয়ে রাখছে? তবে সত্যিই সে দেরি করে ফেললো? ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো। কিরণ পাশ কেটে গেল।

কিরণ হেঁটে প্রায় দরজার কাছেই চলে এসেছে। পা থেমে গেল হঠাৎ। মন অশান্ত হচ্ছে। পিছন ঘুরে তাকানোর তীব্র ইচ্ছা জাগছে। অর্ণব কি তাকিযে আছে ওর দিকে? রাতের এমন বৃষ্টির মাঝে একা অর্ণবকে ফেলে রেখে যেতে মন কিছুতেই শায় দিচ্ছে না। ভিজে যদি অসুখ হয়? কিরণ পিছন ফিরে চাইলো। অর্ণব বিপরীতে তাকিয়ে। পকেটে দু হাত গুজে টান টান হয়ে দাঁড়িয়ে। সাদা টি শার্টটা ভিজে জুবজুবে। শরীরের সাদা রংটা টি শার্ট ভেদ করেছে। কিরণের কেন যেনো মনে হলো অর্ণব কাঁপছে। অর্ণবের ট্রাউজার পড়া পায়ের দিকে তাকাতেই সেই মন হওয়া বিশ্বাসে পরিণত হলো। কিরণের বুকের মাঝটায় হঠাৎ চিন চিন ব্যথা হলো। প্রিয়জনের কষ্টে বুঝি এমনই ব্যথা হয়! কিরণ এগিয়ে গেলো অর্ণবের দিকে। দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়েই ডাক দিলো,

অর্ণব! বৃষ্টি হচ্ছে প্রচুর। ঘরে চলুন। এতো রাতে ভিজবেন না।

অর্ণব চমকে ওঠলো। তবে এ চমক বিষ্ময়ের নয়, আনন্দের। তার চেনা কিরণ বদল যায় নি। কেবল সময়ের আবহাওয়ায় ধুলো পানিতে মরিচা পড়েছে। কিরণ এভাবেই ফিরবে তার জীবনেও। নিজ ইচ্ছায়। নিজ ভালোবাসার চাহিদায়। অর্ণবের মুখশ্রী আনন্দে খেলে গেলেও ঘুরে তাকালো স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই। কিরণের চোখে সরাসরি চোখ রেখেই জিজ্ঞাসা করলো,

তোমার চোখে আমার জন্য এই চিন্তা কিসের কিরণ? করুণার নাকি ভালোবাসার?

এ সময় এমন প্রশ্ন করবে তা কষ্মিণকালেও ভাবতে পারে নি কিরণ। কিরণের মস্তিষ্ক এ প্রশ্নের উত্তর শূন্য দেখালো। কেবল তাকিয়ে থাকা ব্যতীত আর কোনো প্রতিক্রিয়াই দিতে পারলো না।
অর্ণব কিরণের নিরবতা বুঝতে পারলো। জোর পূর্বক এক হাসি দিয়ে পাশ কেটে চলে আসতেই আচমকাই পা পিছলে পড়ে গেলো সুইমিং পুলে।
কিরণ মুখ ফসকে হেঁসে ওঠলো। একেই হয়তো বলে প্রকৃতির প্রতিশোধ। কিরণ এ কথা ভেবে আরো উচ্ছাসের সহিত হেঁসে ওঠে। অর্ণবের বোকা হয়ে যাওয়া মুখ থেকে সেই হাসির গতি বাড়লো দ্বিগুণ। হাসিতে যেন তার পেটে খিল ধরে এলো। হাঁটু গেড়ে বসেই পড়লো। হাসির মাঝেই খেয়াল করলো অর্ণব কিনারে এগিয়ে আসছে। অর্ণবের গতিবিধি আন্দাজ করতে পেরে উঠতে গেলে তার পূর্বেই অর্ণব কিরণের পা টেনে নামিয়ে আনে নিজের খুব নিকটে। কিরণও ভয়ে অর্ণবে কাঁধ খামচে ধরে। দুজনেই কাজ ভিজা। বৃষ্টির গতিও বেড়ে গেল। পানিতে বৃষ্টির ফোঁটার শব্দ কি অদ্ভুত সুন্দর ঝংকার তুলছে। পুরো পরিবেশ শীতল। উষ্ণ কেবল তাদের নিঃশ্বাস। অর্ণবের ছিটকে আশা উষ্ণ নিঃশ্বাসে কিরণের শ্বাস ভারি হয়ে এলো। অর্ণবের কপাল জুড়ে ল্যপ্টে থাকা চুলগুলোয় মন অবাধ্য হয়ে পড়ছে। কিরণের হঠাৎই মনে হলো অর্ণবকে মাত্রাতিরিক্ত সুন্দর লাগছে। নিঃশ্বাস এলোমেলো হতেই খামচে ধরলো অর্ণবের দু কাঁধের টি শার্ট। সময় মনে হলো থমকে গেছে। বৃষ্টির তাল ও নিশ্বাসের লয় ব্যতীত পৃথিবী নিস্তব্ধ। সেই নিস্তব্ধতা ভেঙ্গেই অর্ণবের মোহনীয় গম্ভীর কন্ঠ কিরণকে আরো এক ধাপ শিহরিত করে তুললো,

এমন আবেদনময়ী হবে জানলে এ কাজ করার ভুল কভু করতাম না। এখন যে পাগল পাগল লাগছে ভীষণ।

কিরণ ঠোঁট কেঁপে কেঁপে ওঠলো। অর্ণবের কথার গভীরতায় তার ভেতরে যে তোলপাড় শুরু করেছে। পানির মাঝেও কিরণের ঠোঁট যেন ভিজে এলো। অর্ণবের বেপরোয়া দৃষ্টি দেখে কিরণ অস্থির হয়ে ছুটোছুটি শুরু করলো। এখনই তাকে সরে পড়তে হবে। নতুবা অর্ণবের এ দৃষ্টি উপেক্ষা করার মতো ক্ষমতা তার নেই। কিন্তু অর্ণবেকে ধাক্কা দিয়ে সরাতে চাইলেও পারলো না। উল্টো ঘটে গেলো আরো সাংঘাতিক ব্যপার। অর্ণবের উষ্ণ ঠোঁটের গভীর ছোঁয়া পেল গলায়। বিদ্যুতের মতো কেঁপে ওঠলো পুরো শরীর। বরফের মতো শীতল হয়ে এলো। অর্ণবের সেই ঠোঁট যখনই তার ঠোঁটের মাঝে এসে ডুবলো তখন কিরণের মেরুদণ্ড বেয়ে বয়ে গেল যেন সেই বরফ শীতল হাওয়া। শক্ত হলো কাঁধ আকড়ে ধরা হাতটাও।
সময় কতক্ষণ অতিবাহিত হলো তা হয়তো কেউই জানে না। বাজ পড়ার শব্দে হুশ ফিরলো অর্ণবের। ছিটকে সরে এলো কিরণের থেকে। এক পলক কিরণের দিকে তাকিয়ে সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে এক প্রকার পালয়ে গেল যেন। কিরণ শুধু তাকিয়ে রইলো। অর্ণব যে তার অনুভূতিগুলো উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পালালো তা বেশ বুঝেছে। স্বামী হয়েও স্ত্রীর উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে জানে যে পুরুষ, স্ত্রী ইচ্ছাকে সম্মান করে যে পুরুষ সে সুপুরুষই বটে। এমন সুপুরুষকে ভালোবাসা থেকে বিরত সে কি করে থাকবে?
কিন্তু এই পুরুষই যে বার বার তাকে ভালোবাসিয়ে ফেলে রেখে গিয়েছে। তার হিসেব কিভাবে কষবে সে? ভালো তো বাসে কিন্তু ভালো থাকবে কি?

—–

রাতে হুটহাট ভেজার ফলে অর্ণবের সাংঘাতিক ঠান্ডা লেগে গেছে। গলা বসে, নাক বন্ধ হয়ে একাকার অবস্থা। সকালের দিকটায় একদমই কথা বলতে পারছিল না। চায়ের কাপ হাতে ছেড়ে যেন নড়ছেই না। মনে হচ্ছে যেন চা ই জীবন।
বারান্দায় ঝুল দোলনাটায় কম্বল পেছিয়ে বসে আছে অর্ণব । কোলের উপর ল্যপটপ এবং আরেকটি হাতে চায়ের কাপ। খালি চায়ের কাপ। তখনই কিরণও এসে পাশে একটা ছোট টুল টেনে বসলো। হাতে কড়া কড়ে কফির মগ। অর্ণবের দিকে এগিয়ে দিতেই অর্ণব মগের সূত্র ধরে কিরণের দিকে তাকিয়ে তৃপ্তিময় এক হাসি দিল। হাতের কাপটা ও ল্যপটপটা সামনের একটা টেবিলে রেখে মগটা হাতে নিল। বিকেলের আকাশটা একদমই স্বচ্ছ। বৃষ্টি সব কালো ধুয়ে মুছে কেবল শুভ্র আকাশ রেখে গেছে। কফের মগে চুমুক দিতেই আত্মা ভরে এলো। আজ কত মাস পর কিরণের হাতের কফির স্বাদ নিচ্ছে সে। অর্ণব কিরণের দিকে তাকালো। কিন্তু কিরণ তাকিয়ে পশ্চিম আকাশে নব্য হেল পড়া সূর্যটার দিকে। হাতে থাকা কফিতে প্রথম চুমুক দিয়েই সেদিকে দৃষ্টি রেখেই ধীর কন্ঠে শুধালো,

আপনি ওর কথা আগে থেকেই জানতেন না? তাহলে বলেন নি কেন?

অর্ণব এহেন প্রশ্নে কিছুটা অপ্রস্তুত হলো। এ সমস্ত বিষয় নিয়ে কিরণের সাথে আলোচনা করতে এখনো পুরোপুরি তৈরি হয় নি অর্ণব। তাই কথাটা ঘুরাতে খুবই কৌশলে অভিনয় ভঙ্গিতে বলল,

ওর কথা? কার কথা বলছো? আচ্ছা তুমি কি কোনোভাবে বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে ভাবছো কিরণ? ও মাই গট! আমি কিন্তু একেবারে রাজি। তুমি গ্রিন সিগনাল দিলেই টিম তৈরী করার প্রসেস শুরু করবো।

কিরণ অর্ণবের দিকে তাকালেই অর্ণব এক চোখ মারতেই কিরণ মুচকি হেঁসে ওঠে। কিন্তু সে হাসি ক্ষণস্থায়ী। পুনরায় আগের মতো হয়ে আবারো বলে,

হিয়ার সম্পর্কে আগে যখন সব জানতেনই তাহলে কেন এতঁ বছর নিরব ছিলেন অর্ণব ? প্লিজ বলুন। আমাকে আর ধোঁয়াশায় রাখবেন না।

অর্ণব কিরণের চোখে তাকালো। যন্ত্রণা, বেদনা ও আকুতায় কিরণের চোখ নুয়ে পড়ছে যেন। ছুঁয়ে দিলেই বুঝি ঝড়ে পড়বে এখনই। বিশ্বাসী বন্ধু যখন শাপের মতো আচরণ সম্মুখে আসে তখন বোধ হয় নিজেকে দুনিয়ার মাঝে অভাগীদের কাতারে সামিল করা যায়। অর্ণবের মনে একটা কথাই শুধু ঘুরপাক খেলো,

বিশ্বাস করে ঠকে যাওয়া ভালো নাকি অবিশ্বাস করে ঠকে যাওয়া?

চলবে ~ ~

গতকাল গল্প দিতে চেয়েছিলাম বেশ অনেকটুকু লিখেওছিলাম। কিন্তু পরিকল্পনাহীন হঠাৎ সফরের কারণে বাকিটুকু লিখতে পারি নি। আজ রাতে বাড়ি এসেই বাকিটুকু শেষ দিলাম। কথা রাখতে না পারার জন্য দুঃখিত। যারা অপেক্ষায় ছিলেন তাদের ক্ষতিপূরণ হিসবে ইনশাআল্লাহ এরইমাঝে কোনোদিন দিনে দুটো পর্ব দিবো। এবার সবাই খুশি খুশি হয়ে যান। সবাইকে আরো একবার বৃষ্টিময় ইদ মোবারক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here