বিপরীতে তুমি আমি (দ্বিতীয়_পরিচ্ছদ) পর্ব ৮

0
395

#বিপরীতে_তুমি_আমি
(দ্বিতীয়_পরিচ্ছদ)
#লেখনি_সুমাইয়া_ইসলাম
|৮|

রেস্তোরাঁর প্রেমের রমরমা পরিবেশের অবসান ঘটে অর্ণবের গায়ের উপর ছড়িয়ে থাকা সাদা আলোর বিলুপ্তির মাধ্যমে। অর্ণব নিঃশব্দে স্থান থেকে ওঠে যায়। তরুণ এক ছেলে অন্ধকারেই এগিয়ে এসে গিটারটা ফিরিয়ে নেয়। স্পট আলোটা নিভে গেলেও নিভে যায়নি রঙিন আলোগুলো। অর্ণব সকলের চোখ এগিয়ে এগিয়ে যায় তার প্রেয়সীর দিকে। কিরণের গালে থাকা হাতটা ততক্ষণে সরেছে। চোখ সজাগ হয়েছে। এখন নিশ্চয়ই অর্ণব তার কাছেই আসবে। অন্ধকারে নীরবে তার চোখ অর্ণবের তালাশ করে যাচ্ছে। সামনে, কোণে, কখনো ডানে তো কখনো বামে। কিন্তু অর্ণবের দেখা মিলছে না। কিরণের মন ব্যকুল হলো। সে কি চলে গেল? এই কি ছিল তার বিশেষ উপহার? মন ভার হয়ে এলো কালো মেঘের মতো। মন খারাপেরা ধীরে ধীরে ভীড় জমানো শুরু করলো হৃদ আঙ্গিনায়। ঘড়ির মিনিটের কাটা থেমে থেমে পাঁচটা ঘর পাড় করলো। কিরণও বসে রইলো ঠায়। তারপরই জ্বলে ওঠলো পুনরায় স্বাভাবিক আলো। একে একে খুলে দেওয়া হলো পর্দা। সকালের আলো হু হু করে ডুকে পড়লো পুরো রেস্তরাঁয়। কিরণের মন খারাপের চোখ জোড়া সে দৃশ্য দেখে নিল। পাশে পড়ে থাকা ফোনটা তুললেই চোখ পড়লো ফোনের নিচে থাকা টিস্যু পেপার। কিরণের ভ্রু দ্বয় কিঞ্চিৎ পরিমান কুচকে গেল। ফোনটা পাশে রেখে ডান হাতে তুলে নিল ত্রিভুজ আকারে ভাজ কর রাখা টিস্যু পেপার। দু হাতের উপর টিস্যু পেপারটা খুলে দেখতে পেলো গোটা গোটা করে লিখা,

এ অধমেরে দাও ঠাঁই
নলিনের ধীর কদম দেখিবার সুযোগ চাই!
সুন্দর সে হাটিয়া আসিয়া বসিবে কি পাশে?
আবেদন কবুল হলে জানাই, আমি রয়েছি দাঁড়ায়ে..

কিরণ হেঁসে ওঠে। বায়বীয় পদার্থের ন্যায় সকল মন খারাপ ওড়ে গেল। টিস্যু পেপারটি ভাজ করে রেখে দিল হাতের ছোট ব্যাগটায়। কাল বিলম্ব না করে দ্রুত বেড়িয়ে পড়লো। আহ্বান এ সাড়া দিতে যদি দেড়ি হয়!

গাঢ় নীল আকাশে পেঁজো তুলোর মতো মেঘ। ধবধবে সাদা মেঘ। বৃষ্টির কোনো সম্ভাবনায়ই নেই। অথচ রৌদ্রের তাপে উত্তপ্ত হয়ে গেছে মাটিও। আবছায়া অন্ধকারের সুযোগে কিরণকে চিরকুট দিয়ে এসে সাত থেকে আট মিনিট হতে চলল। রেস্তোরাঁর সিঁড়ি বরারব রিসোর্টের বাগানের পাশের রাস্তায় গাড়ি দাঁড়িয়ে। গাড়ি দরজা ঘেষে বাহিরে দাঁড়িয়ে ঘামিয়ে ওঠেছে অর্ণব। সিঁড়ির দিকে এক পলক তাকিয়ে ঘড়িতে সময় দেখে নিল। কিরণের আসতে দশ মিনিটের বেশি লাগার সময় নয়। দেড়ির কারণ অর্ণবের বোধ হল না। অতৃপ্ত দৃষ্টি ব্যকুল প্রায়। রৌদ্রের অসনীয় তাপ সহনীয় পর্যায়ে কিন্তু প্রেয়সীর অপেক্ষায় কাতর। ভালোবাসা কতই না বিচিত্র! ভুল হলো। ভালোবাসার অনুভূতি বিচিত্র।
মিনিট খানেক পরেই দেখা মিললো কিরণের। কুচি ধরে সাবধানে নেমে এলো। অর্ণব আঁটকে পড়লো আগত রমনীতে। তার সকল ইন্দ্রিয়কে ছুড়ে দিয়েছে কিরণের দিকে, কেবল কিরণের দিকে। আজ, এখন আর দৃষ্টি সরাবে না। সে আঁটকে পড়তে চাইছে আজ। সৌন্দর্য তার দিকে ধাবিত হবে এ দৃশ্যে মুগ্ধ হবে বলেই তো রৌদ্রে দগ্ধ হওয়া। কিন্তু এ সৌন্দর্যের তাপমাত্রা যে আরো বেশি। ঝলসে যাওয়ার মতো।
কিরণের ঠোঁটের কোণে সূক্ষ্ম হাসি। কৃত্রিম গোলাপি রং ছাড়িয়ে গালে ভেসে ওঠছে প্রকৃত লাল আভা। অর্ণবের দিকের এক কদম কিরণের বুকে দাদামা বাজাচ্ছে। আজ হঠাৎই এতো লাজের ভারে নুয়ে পড়ছে কেনো তার কোনো সমাধান এলো না। শুধু বুঝতে পারছে বরফের ন্যায় ওই নিক্ষিপ্ত শীতল চোখ জোড়া তীর্যক ভাবে হৃদযন্ত্রে আঘাত করছে।

কিরণ গাড়ির সামনের অর্ণবের পাশের সিটটায় বসে অনবরত নখ দিয়ে নখ খুটিয়ে যাচ্ছে। সংকোচে দাঁত দ্বারা নিচের ঠোঁটের অবস্থা প্রায় নাজুক করে ছেড়েছে। কিন্তু সেদিকে আপাতত তার খেয়াল নেই। একটু পর পর অর্ণবের দিকে তাকাচ্ছে। অর্ণব চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে। হঠাৎ কেমন যেনো চুপছে গিয়েছে। সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে কেবল গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। কিরণ গাড়িতে ওঠার পর অর্ণব নিজের স্থানে বসতে একবার কিরণের দিকে তাকায়। তারপর থেকে সে আর তাকায় নি। কিরণের মন এ ব্যপার বোঝার পর থেকেই উশখুশ করছে। কোথায় যাচ্ছে সেটাও জানা নেই। অর্ণবের গম্ভীর মুখ দেখে সেই সাহসও করতে পারছে না। কিন্তু চুপচাপ যে বসেও থাকতে পারছে না। সময় প্রায় আধ ঘন্টা পেরিয়েছে। এবার জানা দরকার। অর্ণবের দিকে খানিকটা ঘুরে বসলো কিরণ। মৃদু স্বরে ডেকে ওঠে,

অর্ণব! কিছু কি হয়েছে?

অর্ণব কিছু বললো না। কেবল মাথা নাড়িয়ে না বোধক ইঙ্গিত দিল। এতে কিরণের চিন্তা দুঃচিন্তায় পরিবর্তন হলো। বিশেষ কিছু না হলে অর্ণব নীরব হওয়ার মতো মানুষ নয়। তবে কি সেই বিশেষ কিছু? কিরণ পুনরায় জিজ্ঞাসা করে,

কিছু তো অবশ্যই হয়েছে। আপনি সেই কখন থেকে এমন নীরব হয়ে কেবল গাড়ি চালাচ্ছেন। আচ্ছা কি হয়েছে বলা লাগবে না। কোথায় যাচ্ছি সেইটা তো বলবেন?

অর্ণবের কোনো পরিবর্তন দেখা গেল না। সে পূর্বের মতোই সামনে তাকিয়ে উত্তর দিলো,

গেলেই দেখতে পাবে।

কিরণ আর কিছু বলতে পারলো না। ঠোঁট কামড়ে ফ্যালফ্যাল করে কেবল তাকিয়ে রইলো অর্ণবের দিকে। পাঁচ মিনিট! দশ মিনিট! বারো মিনিটের কাছাকাছি সময়ে হঠাৎ অর্ণব গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়লো। কিরণের দৃষ্টিও অর্ণবের থেকে সড়ে সামনে এলো। শহর থেকে বেশ খানিকটা দূরের নিরিবিলি রাস্তা। এক পাশে গাছ শাড়িবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে। অপর পাশে খোলা প্রান্তর। বর্ষার পানিতে সে প্রান্তর নদীর রূপ নিয়েছে। তারা কি শহর ছেড়ে কোথাও যাচ্ছে? পুনরায় অর্ণবের দিকে তাকালে দেখতে পেলো অর্ণব দু হাতে স্টিয়ারিং ধরে আছে। চোখ বন্ধ করে মাথা ঠেকেছে সিটে। অর্ণবের গতি বোঝার সম্পূর্ণ চেষ্টায় কিরণ তাকিয়ে রইলো তার দিকে। হুট করেই অর্ণব চোখ খুলে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো কিরণের দিকে। আকষ্মিকভাবে তাকাতে হচকচিয়ে ওঠলো কিরণ। কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে এলো। সামনে সোজা ঘুরে বসার আগেই ডান হাতে টান অনুভব করলো কিরণ। অর্ণব এক টানে বেশ কিছুটা কাছে নিয়ে এলো। ধীরে ধীরে এগিয়ে এলো নিজেও। অর্ণবের চোখের রূপ অচেনা লাগলো কিরণের। অদ্ভুত! নেশালো! চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতেই অর্ণবের হিম শীতলের ন্যয় কন্ঠ এসে বারি খেলো,

ঠোঁটের উপর অত্যাচার করার শখটা আমি না হয় পূরণ করে দিলাম।

কিরণের মস্তিষ্কে এক লাইনের এই বাক্য প্রবেশ করার পূর্বেই তার অধরে হানা দিল আরেক ভেজা অধর। কিরণের র*ক্ত বরফের মতো জমে গেল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায়। চুলে ভেতরে অর্ণবের আঙ্গুল গুলো ধীরে ধীরে আরো শক্ত হয়ে ধরলো। চুম্বনের মাত্রা গভীর থেকে গভীরতর হতেই কিরণের ভেতরটা কেঁপে ওঠলো। এক হাতে শাড়ি ও আরেক হাতে সিট খামচে ধরলো। মাথার ভেতর ভোঁতা অনুভূতিতে ছেয়ে গেল। ভারি নিঃশ্বাসে শূন্য মস্তিষ্ক টর্নেডোর মতো কেবল ঘুরে গেল।

সময় কতটুকু পার হলো কিরণের জানা নেই। অর্ণবের ঠোঁটের আলিঙ্গন থামে। কিন্তু কিরণের এলোমেলো নিঃশ্বাস স্থির হয় না। সেই অবস্থানেই ঠায় বসে রয়। হাত, আঙ্গুল সব জমে এসেছে তার। নড়ে বসে বেমালুম ভুলে গিয়েছে। দৃষ্টি নত রেখে বড় বড় নিঃশ্বাসে বুকের ওঠা নামা ঢেউয়ের মতোন। অর্ণব কিরণের অবস্থা দেখে ঠোঁট বাকিয়ে হাসে। ডান হাত দিয়ে কিরণের বাম কাঁধে ওঠানো শাড়ির আঁচল ধীর ধীরে নিচে নামিয়ে ফিসফিসে বলে,

অনেক সময় নিজেকে দমিয়ে রেখেছিলাম। তোমার খাচার নিচের তিলটা এর জন্য দায়ি। একে আমার সামনে আনবে না। এলে শাস্তি তোমার উপর যাবে।

অর্ণব কানের নরম অংশটায় গভীর একটা চুমু দিয়ে নিজের জায়গায় বসে গাড়ি চালানো শুরু করে। আর কিরণের মাথায় ঘুরে অর্ণবের কথা। গাড়িতে ওঠে বসার পর সিট বেল্ট বাঁধতে আঁচল কাঁধে ওঠিয়েছিল। সিট বেল্টের রেশ ধরে তাকাতেই অর্ণবের দৃষ্টি চুম্বকের মতো টেনে নেয় কুচকুচে তিলটা। অর্ণবের মেরুদণ্ড বেয়ে ঘাড়ে হিম বাতাসের ঝড় বয়ে যায়। অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে বাধ্য অনুভূতিগুলোও। বাধ্যতা ভেঙে অবাধ্যতার আন্দোলনে জয়ী হয় নিয়ন্ত্রণহীন অনুভূতিগুলো।

—–

কিরণ এখনো জানে না তাকে কোথায় নেওয়া হচ্ছে। দেড় ঘন্টার রাস্তা অতিক্রম করে গাড়ি থেমেছে এক রাস্তার পাশের ঠান্ডাই এর সামনে। অর্ণব ওঠে যায় সেই দোকানের দিকে। কিরণ রাস্তার বিপরীতে তাকাতেই দেখতে পেলো স্কুল ছুটি হওয়া এক ঝাক ক্লান্ত মানব পাখি। গেট থেকে বেড়িয়ে কেউ ছুটছে বাসের দিকে, কেউ ছুটছে ভ্যানে বয়ে বেড়ানো ঝালমুড়ির দোকানগুলোর দিকে। দু বেণি করা দু জন মেয়ে হাতে ঝালমুড়ি খেতে খেতে পার হয়ে এলো রাস্তা। একজন আরকজনের ঠোঙ্গায় হামলা দিচ্ছে। মাথায় চাটি মেরে প্রতিবাদ করছে। আবার হয়তো গাল ফুলিয়ে প্রত্যাখ্যান দেখাচ্ছে। স্কুল ছুটির এ দৃশ্যে কিরণের বায়বীয় মন তরল পদার্থের ন্যায় ভারি হয়ে এলো। দৃশ্যপটে ভেসে ওঠে ফেল আসা তার স্মৃতি, আত্মার সম্পর্কে আবদ্ধ করে রাখা এই সম্পর্কগুলোর অবমূল্যায়ন। কিরণের চোখে পানি জমে গেল। কিরণ বুঝতে পারলো তার বুক ভারি হয়ে আসছে। মানতে না পারার ব্যর্থতা তীব্র ভাবে নিন্দায় পীড়া দিচ্ছে। অর্ণবকে দরজার কাছে দেখতেই কিরণ চোখের পানি মুছিয়ে শুকিয়ে ফেলে। সুন্দর মুহুর্তে সে অতীত আনতে চায় না।

অর্ণবের হাত বাড়িয়ে ঠান্ডাই দিলো। মলিন মুখের হাসিটা খুব ভাবে তার নজর কেড়ে নিল। কি হলো এইটুকু সময়ে?

গাড়ি চলতে শুরু করলো পুনরায়। অর্ণব কিরণের নীরবতায় অস্থির হয়ে ওঠছে। সময় যত যাচ্ছে তত অস্তিরতা দুঃচিন্তায় পরিণত হচ্ছে। গাড়ি চালানোতে কিছুতেই মন বসছে না। কিরণের দিকে একবার তাকালো। সামনের দিকে তাকিয়ে। গালের কৃত্রিম গোলাপীবর্ণ রংচটা, ফ্যাকাশে লাগছে। অর্ণব কিরণের দিকে তাকিে বলে,

মেঘ ভারি হলে বৃষ্টি পতিত হতে দিতে হয়। মেঘ হালকা হয়। কালো আকাশের শেষে স্বচ্ছ-শুভ্র আকাশের জন্ম হয়। কিন্তু তার পূর্বে ঝড়ে বাতাস এলে ভারি মেঘ সমেত বয়ে বেড়াতে হয় দূর দুরান্ত। ভার ছেড়ে দাও কিরণ।

অর্ণবের অকষাৎ কথায় কিরণ ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকায় অর্ণবের দিকে। অর্ণবের সামনের দিকে তাকিয়ে ফের কিরণের পানে তাকালো। কিরণের চোখে আভ্যন্তরিন পীড়ার প্রতিচ্ছবি প্রতিয়মান হলো। এক ফোঁটা পানি গাল বেয়ে পড়ার সাথে সাথে নিজেই মুছে ফেললো কিরণ। জানালায় মুখ ফিরিয়ে বসে রইলো নিস্তব্ধতায়। মিনিট পাঁচেক পর কান্না জড়িত ভাঙ্গা কন্ঠ অর্ণবের কানে পৌঁছায়।

জানেন অর্ণব! হিয়া আর আমি অনেক ছোট থেকে বন্ধু। প্রাণের বন্ধু বলে না? ওরকম ছিলাম। দ্বিতীয় শ্রেণীতে প্রথম পরীক্ষার দিনে আমি আমার পেন্সিলের মাথা ভেঙ্গে ফেলেছিলাম শুরুতেই। অপক্ব হাতে বার বার চুকিয়ে ভেঙ্গে ফেলছিলাম। সময় চলে যাচ্ছে ভেবে টেনশনে আরেকটা পেন্সিল বের করে দেখি তাড়াহুড়োয় আমি ওটা চুকিে রাখতেই ভুল গেছিলাম। কেঁদে দিবো প্রায় এমন সময় হিয়া ওর পেন্সিলটা আমাকে দিয়ে বলছিলাম আমি যেন লেখা শুরু করি। ও আমার পেন্সিল ততক্ষণে চুকিয়ে দেবে। পরীক্ষা রেখে সেই দুটো পেন্সিলই আমায় চুকিয়ে দিয়েছিল। সেই থেকে বন্ধুত্বের শুরুটা হয়। সময়ের আবর্তনে এ বন্ধুত্বের সম্পর্ক তামার মতো শক্ত হয়ে এলো। কেউ কাউকে ছাড়া কোনো কিছুতেই একা ছাড়বো না। একই রঙের ব্যাগ, একি রঙের জুতা এমনি জামাও কিনেছি প্রায়ই। জমজ সেজে থাকতে খুবই পছন্দ করতাম। এক আত্মা দুই দেহের সেই মানুষ স্কুল শেষে হঠাৎই চলে গেলে অন্য দেশে। তার আগে থেকে শুরু হলো তার পরিবর্তন হওয়া। আপনাকে পছন্দ করার ব্যপারটা ও জানতো। না জানালে আমার চলতোই না। সেকশন আলাদা হওয়ায় ছুটির পর অথবা টিফিনে জমাতাম আড্ডা। ও একজনকে পছন্দ করতো। কিন্তু সবসময় বলতো তার নাম নাকি জানে না। দেখাতে চেয়েছিলাম কতবার। কিন্তু কেন জেনো সুযোগই হতো না। যেদিন ও দেশ ছাড়লো সেদিন আমি জানেন খুব কেঁদেছিলাম। কেঁদে কেটে দুদিন খাবার বন্ধ হলো। আপনারা সব কেমন যেনো একসময়ে হারিয়ে গেলেন। হিয়ার সাথে ফোনে ফোনে কথা হতো শুধু কিন্তু তবুও কম। কিন্তু আপনি চলে যাওয়ার দিন রাস্তায় এক্সিডেন্টে হাসপাতালে পড়ে রইলাম টানা এক মাস। এক পায়ের লিগামেন্ট, অন্য পায়ের হাড় খয়ে হাসপাতালের বন্ধি জীবনে আকাশও দেখলাম না কতদিন! ঠিক তখনই হিয়ার সাথে যোগাযোগ আবারো বাড়লো। জানালো সে নাকি সেখানে তার সেই পছন্দের মানুষটার দেখা পেয়েছে। নাম জানালো মাহিদ যিনি হলেন জুনায়েদ ভাইয়া!
আমি তো তখন ভাইয়াকে চিনতাম না। জাহিদ ভাইয়া একবার ছবি দেখিয়েছিলেন। সেদিন বেশ অবাক হয়েছিলাম। সমীকরণ মিলাতে পারি নি। আপনি দ্বিতীয় বার যাওয়ার পর সব বিচ্ছিন্ন প্রশ্নের, অসংশোধিত উত্তর সবকিছুর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠলে জানতে পারলাম কত অজানা তথ্য। হৃদ আর আমি গোপনে চালালাম কত অভিযান।

রফিকউল্লাহর লুকানো দ্বিতীয় স্ত্রীর একমাত্র মেয়ে হিসেবে পরিচয় পেলাম হিয়ার। আমার সম্পর্কে দেওয়া সকল তথ্যের উৎস হিয়া। বিদেশ বসেই সে আমার সম্পর্কে সকল খুঁটিনাটি বিষয় জানাতো রফিকউল্লাহকে। আর..

আনিলা আপুর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার সাথেও মিশে আছে হিয়া।

অর্ণবের দাঁত চেপে বলা কথাটায় চমকে ওঠলো কিরণ। বিষ্ময়ে অর্ণবের দিকে ঘুরে তাকালো। পিলে চমকে ওঠলো অর্ণবের কথা বোধগম্য হতেই।

চলবে……

গল্প আর মাত্র এক পর্ব আছে। আমি শেষের এ দুটো পর্ব গোছাতে গোছাতে লিখতে দেরি হচ্ছে। এর জন্য আমি ক্ষমাপার্থী।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here