#বিপরীতে_তুমি_আমি
(দ্বিতীয়_পরিচ্ছদ)
#লেখনি_সুমাইয়া_ইসলাম
|১|
লোক কথিত জাহান্নামের আগুনের উত্তপ্ত হাওয়ায় তখন দুনিয়া অদৃশ্যভাবে জ্বলছে। অসহ্য গরমের ছোঁয়ায় পাগলপ্রায় প্রকৃতির প্রতিটি প্রাণী। কিন্তু তারমাঝেই বিশাল বারান্দাটার সামনের জারুল গাছে বসে থাকা ছোট্ট একটা পাখি কি সুন্দর চুপচাপ বসে আছে। জগতে যে এতো হাহাকার চলছে তার যেন কোনো হেলদোলই নেই তাতে। কি যেন দেখছে। বারান্দার গোল দোলনাটায় বসে কিরণ এক মনে দেখতে লাগলো পাখিটাকে। যেমন সে দেখছে পাখিকে তেমন পাখিরও দৃষ্টি অটল ভিন্ন কোনো দৃশ্যে। কিরণের মনে হলো এ পাখিটা বোধহয় তারই জীবসত্তা। তার মতই হয়তো দুনিয়ার এ সকল হাহাকার উপেক্ষা করে কাঙ্ক্ষিত জিনিসটার জন্য অধীর আগ্রহে সময় ব্যয় করছে। দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এলো বুক চিরে। তবুও বুকটা কেমন ভার ভার। চাতক পাখির মতো আকাশের দিকে তাকিয়ে হা করে নিঃশ্বাস ছাড়ছে। তবুও কি ভীষণ শ্বাসকষ্ট!
আযানের ধ্বনিতে চারপাশ মুখরিত হতেই কিরণের বোধ হল দিন শেষ। ডালে বসে থাকা পাখিটাও উড়ে গেল নিজ ঠিকানায়। কোলে অযত্নে পড়ে থাকা বইটা হাতে তুলে সেও ফিরে এলো তার রুমে। অযু করে লুটিয়ে পড়লো সৃষ্টিকর্তার নিকটে। এখানেই যে প্রকৃত সুখ। দুনিয়া নামক মরিচিকার পিছন ছুটে ছুটে মানুষ যখন ক্ষত বিক্ষত হয়, সৃষ্টিকর্তার সর্তকতার বাণীতে কর্ণপাত না করে শয়তানের মোহতে পড়ে বিপদ সংকেত অতিক্রম করে ঠকে এসে সৃষ্টিকর্তার নিকট অনুতপ্ত হয়ে অশ্রুপাত করে, মহান সৃষ্টিকর্তা সবকিছু ভুলে নিজের সৃষ্টিকে ক্ষমা প্রদান করেন। তার কাছে নিজেকে নতুন ভাবে গড়ে তোলার কত শত সুযোগ পায় মানুষ। সৃষ্টিকর্তার আনুগত্যেই তো কালো ধুয়ে সাদা হয়ে যায়। অপরিচ্ছন্ন আত্মা এমন পরিশুদ্ধ হয় যেন তা কভু অশুদ্ধ ছিলই না। তবে শান্তি এখানে নয়, তো আর কোথায়?
জায়নামাজ ওঠিয়ে বিছানায় কিছু সময় ধীর হয়ে বসে রইলো কিরণ। মন মস্তিষ্ক বার বার শুধায় তার সময় এতো রঙহীন কেন? একটা মানুষের এত ক্ষমতা কি করে হলো যে তার জীবনের সমস্ত রং এমন ধুয়ে নিয়ে গেল! হঠাৎ বাজ পড়ার শব্দে কেঁপে ওঠলো কিরণ। আবহাওয়া বুঝে ওঠার আগেই শুরু হলো ঝড়ো বাতাস। দ্রুত পায়ে বারান্দার কাঁচ বন্ধ করতে গেলে চোখে পড়লো মেঝেতে পড়ে থাকা হলুদ কাগজ। কৌতুহলি চিত্তে কিরণ এগিয়ে গেলো বারান্দার দিকে। প্রচন্ড বাতাসে চোখ মেলে রাখা দায়। পিটপিট চোখে সাবধানে দুমরে মুচড়ে পড়ে থাকা কাগজটি হাতে নিয়ে ঘরে এসে পড়লো। সাবধানে সকল দরজা জানলা বন্ধ করে এবার আরামে বসলো। দু পা ঝুলিয়ে বিছানায় বসে হাতের কাগজের প্রতিটা ভাঁজ খুলতে খুুলতে ভেতর থেকে বেশ শিহরণ জাগছে তার। কি থাকতে পারে এর ভেতরে? ভাবতে ভাবতেই কাগজের ভাঁজ খুলে বেশ পরিষ্কার একটা ইটের ছোট্ট টুকরো পেলো। পাশের ছোট টেবিলটায় ইটের টুকরো রেখে কাগজটি সোজা করতে ফুটে ওঠলো লাল কলমে লেখা গোটা গোটা লেখা।
” হাতে পাওয়ার দশ মিনিটের মাঝে সদর দরজায় আসবেন। না আসলে কেবল আপনার ক্ষতি। কিন্তু আসলে আপনার আর আমার উভয়েরই লাভ। ”
অপরিচিত লেখা। কিরণের মন সংকুচিত হলো। তার অবচেতন মন কোথাও একটু হলেও আশা রেখেছিল এ হয়তো তার বহু প্রতীক্ষিত চিঠি হবে। সেগুড়ে বালি। এ হাতের লেখা তো তার কাঙ্ক্ষিত পুরুষের নয়। তবে কে দিল? কেন ডাকছে এভাবে তাকে? কিরণের মস্তিষ্কে হানা দিল চিঠি প্রেরক তাকে দেখছে। সে কখন এ বার্তা হাতে নেবে তার অপেক্ষায় তার বাড়ির আশেপাশেই উপস্থিত হয়তো। এভাবে কারো ডাকে এতো রাতে সাড়া দেওয়া নির্বুদ্ধিতার কাজ, পাগল ব্যতীত এ কাজ কেউ করবে না । কিরণ এ কথা জেনেও দোটানায় পড়লো। এ কথা যদি সকলেই জানে তবে অবশ্যই চিঠি প্রেরকও জানেন। তবুও কেন এমন বোকার মতো কাজ? তবে কি সত্যি কোনো দরকার? কিরণ বিছানা ছেড়ে দাঁড়ালো। টিপটিপ পায়ে এগিয়ে গেল বারান্দার কাঁচটার কাছে। পর্দা টা হাত দিয়ে সড়াতেই পুনরায় সরে এলো। এদিক ওদিক তাকিয়ে দ্রুত বন্ধ করে দিল ঘরের সকল আলো। এরপর পর্দা সরিয়ে দৃষ্টি রাখলো মূল ফটকের ওপাশে। শূন্য ফলাফল। কিছুই নেই, কেউ নেই। কেবলমাত্র একটি কুকর ঝড়ের কবল হতে রক্ষা পেতে বসে আছে বড় কৃষ্ণচূড়া গাছটার নিচে। মূল ফটকের কাছে দারোয়ান চাচাও নেই। ঝড়ের কারণে পাশে থাকা রুমটায় বসে আছেন। নিরাশ হয়ে কিরণ ফিরে এলো পুনরায় বিছানায়। টেবিল লাইট জ্বালিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো হলুদে কাগজটার দিকে। কেন যেন অবাধ্য মন চাইছে যেতে। কিছু সময় তাকিয়ে থেকে অবশেষে কিরণ কৌতুহল দমাতে কদম বাড়ালো। পাশে থেকে উড়নাটা মাথা দিয়ে সাবধানে সিঁড়ি বেয়ে নেমে এলো নিচে। রান্নাঘর থেকে টুকটাক আওয়াজ আসছে। হয়তো মা রান্না করছেন। আরেকটু সবাধান হলো। তার মা এমন অবস্থায় বাহিরে যেতে দেখলে নির্দ্বিধায় তাকে বকেই স্বর্গবাস করাবেন। কিন্তু বলে না যেখানে বাঘর ভয় সেখানেই সন্ধ্যা হয়। বাটি হাতে খাবারের টেবিলের দিকে এগিয়ে এলেন মিসেস রোজা। বাটিটা টেবিলে সাজিয়ে রেখে সামনে তাকালে দেখতে পেলেন কিরণ দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ভ্রু কুচকে এলো। এমন ঝড় বাদলের সময় বাহিরে যাওয়ার পায়তারা করছে কেন ভাবতেই স্বজোড়ে ঢেকে ওঠলেন,
কিরণ! ওদিকে কোথায় যাচ্ছিস? দেখছিস না ঝড় হচ্ছে। বৃষ্টি নামবে।
কিরণ থেমে গেল। নিঃশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে নিল। এখন সে কি বলবে? সন্ধ্যার পর বাহিরে যাওয়া মায়ের পক্ষের আদালত হতে একদমই নিষেধ। কোনো অযুহাতই সেক্ষেত্রে কার্যকর হয় না। নয় ছয় ভেবে মায়ের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিকভাবে বলে,
আর বলো না মা। বিকেলে একটা পার্সেল আসার কথা ছিল। সেইটা এখন দিচ্ছে। ঝড়ের কারণে আটকে গেছে । এইতো গেইটে এসেছে।
কিরণ এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে তাকিয়ে রইলো মায়ের মুখের পানে। হয়তো মায়ের মন পড়ার চেষ্টা করছে। ওনার মুখোভাব দেখে কিরণ বেশ বুঝতে পারলো তার উত্তর মায়ের মোটেও পছন্দ হয় নি। তাই সে পুনরায় বলল,
আমি কাছে যাবো না। দূরে দাঁড়িয়ে থাকবো। দারোয়ান চাচা এনে দেবেন।
এবার যেন একটু সস্তি পেলেন মিসেস রোজা। বর্তমান দিনকাল মোটেও সুবিধার নয়। আজও তিনি সংবাদে দেখেছেন মেয়েদের বাড়ির কাছে থেকেও অপহ*রণ করা হচ্ছে। কিশোরি থেকে প্রাপ্ত বয়ষ্ক সকল শ্রেণীর নারীরা তার মাঝে অন্তর্ভুক্ত। কিরণ ছোট থেকে খুবই চাপা স্বভাবের হলেও দস্যি বড়। নিষিদ্ধ জিনিসে কৌতুহল বরাবরই বেশি। তাই মেয়ে বড় হলেও তাকে নিয়ে বেশ দুঃচিন্তায় দিন কাটে তার। একটা মাত্র নাড়িকাটা ধন তার। একে ঘিরেই তো পুরো দুনিয়া।
কিরণ মায়ের নিরব সম্মতি দেখে এগিয়ে গেলো। সদর দরজার কাছে এসে দরজা খুলে বের হতেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হলো। কিরণ যেন বোকা বনে গেল। বৃষ্টির পানে তাকিয়ে রইলো। সময় পেলো না আর? পাঁচ মিনিট পড়ে আসলে কি খুব অসুবিধে হতো? কিরণ হতাশ হলো। উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মূল গেইটের দিকে। সদর দরজার চৌকাঠ পাড় হতেই হঠাৎ অন্ধকার ঘনিয়ে এলো চারিপাশে। আচমকা বিদ্যুৎ বিভ্রাটে খানিকটা অপ্রস্তুত হলো। এই হলো আরেক ঝামেলা। বৃষ্টি শুরু হতে দেরি তো বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হতে দেরি হয় না। এ যেন সমমুখি বিক্রিয়া। কিরণ খেয়াল করলো সে ফোনটাও তো সাথে নেয় নি। এখন উপায়? কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই জেনেরেটর চলে আসবে সে আশায় ওভাবেই ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো। কিন্তু জেনেরেটরের আলোর পরিবর্তে আকাশ চিঁড়ে বিদ্যুৎ চমকে আলোকিত হয়ে এলো আশপাশটা। কিরণের বুক দুরুদুরু কাঁপছে। সে সাহসী বটে, তবে এতটাও নয়। এদিক ওদিকে তাকাতেই বিদ্যুৎ চমকানোর আলোতে চোখে পড়লো অস্পষ্ট একট মানবের কায়া। কিরণের সাথে তার দূরত্ব বড়জোড় তিন থেকে পাঁচ ফিট। আঁতকে ওঠলো কিরণ। ভয়ে জমে গেল হাত পা। চিৎকার দিতে হবে ভাবতে ভাবতেই কড়া কিছু ঘ্রাণে মস্তিষ্ক অচল হয়ে এলো তার।
—
হাতের বাঁধনের সাথে তুমুল জবরদস্তি শুরু করেছে কিরণ। চোখটাও বাঁধা। তবে পা এবং মুখটা সম্পূর্ণ উন্মুক্ত। কিন্তু কিরণের এতে লাভের লাভ কিছুই হচ্ছে না। হাতটা পেছনে বেঁধে রেখেছে। মুখ দিয়ে খোলার কোনো উপায়ই নেই। পা দিয়ে দৌঁড়াবে কিন্তু কোন দিকে যাবে? সে তো চলন্ত গাড়িতে। কোথায় যাচ্ছে তা সম্পর্কে বিন্দু মাত্র ধারণা করা যাচ্ছে না। গাড়িতে সে ব্যাতীত আর কে আছে সে সম্পর্কেও বোধগম্য হচ্ছে না। বার দু তিনেক চিল্লিয়েও খুব একটা কাজ হয় নি। না কেউ শুনেছে আর না চালকের থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। তাই আপাতত কিরণ চুপচাপ বসে হাতের বাঁধন খোলার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। বুকের ভেতরটা ভয়ে ফেটে যাওয়ার উপক্রম শুরু হয়েছে। এত রাতে কে তাকে অপ*হরণ করছে? তাকে কি মে*রে ফেলবে? নাকি টাকার জন্য? প্রথমটার সম্ভবনা খুবই কম। কারণ কিরণ জানে তার প্রাণঘাতী কোনো শত্রু নেই। কিন্তু বাবার অর্থের জন্য দ্বিতীয়টার সম্ভাবনা প্রবল। এ মুহুর্তে তার মনে হচ্ছে কেন তার বাবা এতো অর্থবিত্ত হয়েছে? আজ বাবার অর্থ না থাকলে তো তাকেও এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। ভিষণ কান্না পাচ্ছে। নিজের অসহায়ত্বে চোখ কান্না ফেটে আসছে। কি করবে এখন সে? কিভাবে বের হবে এই বিপদ থেকে? হঠাৎই ওর ভাবনার মাঝে গাড়ি জুড়ে মুখরিত হলো গানের সুর।
এ জীবন তোমাকে দিলাম বন্ধু,
তুমি শুধু ভালবাসা দিও বন্ধু, তুমি শুধু ভালবাসা দিও।
সুখের চেয়েও সুখ, তুমি যে আমার,
প্রিয় থেকেও তুমি বেশি প্রিয়,
তুমি শুধু ভালবাসা দিও বন্ধু, তুমি শুধু ভালবাসা দিও।
থমকে গেল কিরণ। থমকে গেলো ওর সমস্ত অস্থিরতা। র*ক্ত প্রবাহ যেন কেঁপে কেঁপে প্রবাহিত হচ্ছে। কিরণের নিউরনে নিউরনে সে সকল র*ক্ত ডাক পিওনের মতো খবর বিলি করলো,
‘ অর্ণব এসেছে ! ‘
কিরণের জমে যাওয়া শরীরে অস্ফুটস্বরে উচ্চারিত হলো অর্ণবের নাম।
চালকের স্থানে বসে থাকা অর্ণবের ঠোঁটে ফুটে ওঠলো তৃপ্তিময় হাসি। যেন কতযুগ পর তার প্রেয়সীর মুখ তার নাম উচ্চারিত হলো। লুকিং গ্লাসে কিরণের চোখ বাঁধা মুখটা আরেক পলক দেখে নেয়। ডান হাতে স্টিয়ারিং ধরে বাম হাতে দিয়ে গানের শব্দটা আরেকটু বাড়িয়ে দিল। এ গান তার বড্ড প্রিয়। তবে শুধুমাত্র কিরণ সাথে থাকলেই এ গান অর্ণব শোনে। একা শুনলে যে তার মন পুড়ে।
মিনিট দশেক পর অর্ণব গাড়িটা থামায়। সিট বেল্ট খুলে গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালো অর্ণব। পেছনে গিয়ে দরজা খুলে কিরণকে সযত্নে নামিয়ে আনলো। অর্ণব খেয়াল করলো কিরণ খুবই শান্ত আচরণ করছে। ছটফটানিটাও নেই। একদম যেন পুতুল হয়েছে। দরজা লাগিয়ে হুট করেই কিরণকে কোলে তুলে নিলো। কিরণও অর্ণবের আকষ্মিক এক কান্ডে চমকে উঠেও পরবর্তীতে সামলে নিয়ে অর্ণবের গলা আঁকড়ে ধরে রইলো। সেও দেখতে চায় অর্ণব কি করতে চাচ্ছে। দু থেকে তিন মিনিটের রাস্তা হেঁটে অর্ণব তাকে একটি নরম বিছানায় এনে বসালো। কিরণ বোঝার চেষ্টা করতেই বুঝতে পারলো তাকে হয়তো কোনো হোটেল কিংবা রিসোর্টের রুমে আনা হয়েছে। কিন্তু কেন? মনের মাঝে হাজারটা প্রশ্নের আনাগনা থাকলেও তা মুখে আনার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে তার নেই। অভিমান, অভিযোগে পাহাড়ের চূড়া এতো উঁচু হয়েছে যে কথা বলাও অর্থহীন লাগছে। কিছু সময় পর কিরণ বুঝতে পারলো তার হাতের বাঁধন হালকা হচ্ছে। চোখের বাঁধনটাও খুলে দেওয়া হচ্ছে। কাঁধের কাছে অর্ণবের উষ্ণ নিঃশ্বাস টের পেতেই নিঃশ্বাস ভারি হয়ে এলো। কিরণ দুর্বোধ্য এক ঢোক গিয়ে চোখ খুলে। ধবধবে সাদা একটা বিছানার ঠিক সামনেই বড়সড় এক আয়না। সেখানে চোখ পড়তেই থমকে গেলো। নিঃশ্বাস নিতেও যেন ভুলে গেল। শত জনমের তৃষ্ণা এসে ভর করলো তার চোখে। আয়নায় অর্ণবের স্পষ্ট প্রতিবিম্ব। তার অবস্থান কিরণের পিছনে। থুতনিটা কিরণে কাঁধে রেখে তাকিয়ে আছে আয়নার দিকে। আয়নার মাধ্যমেই মিলিত হলো চার জোড়া চোখ। অর্ণবের দৃষ্টি স্বাভাবিক তবুও যেন কিরণের মনো হলো সে সম্মোহিত হচ্ছে। অর্ণব বড় কৌশলে দুর্বল করে নিচ্ছে তাকে। সেদিক পানে তাকিয়ে থেকেই অর্ণবের কন্ঠ কানে এলো,
অনেক অভিযোগ জমে আছে তাই না সূর্যরাণী? তোমার অভিযোগের হিমালয় জয় করতে এসেছি। সে সুযোগ দেবে কি এ ক্ষুদ্র আরোহীকে?
কিরণের এ যাবৎকালের সকল গম্ভীরতা ভেঙ্গে এলো। মজবুত হয়ে আশা কিরণ মুহুর্তেই অর্ণবের আদুরে কন্ঠে নুয়ে পড়লো যেন। চোখের কোঠরে জল জমে থৈ থে। ভালোবাসা বুঝি এমনই? যে আঘাত দেয় সেই সেবাদানকারী। মানুষের মন হয়তো তাই চায়। যে তাকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয় ইচ্ছে জাগে সেই যেন পুনরায় গড়ে দিক। মন বেহায়া। বাসবো না বলেও ভিষণ ভালোবাসি।
চোখের পানি গড়িয়ে পড়ার আগেই কিরণ ওঠে দাঁড়ায়। ভালোবেসে সে অনেক কেঁদেছে। এবার পালাক্রমে সে কাটা ঘুরাবে অর্ণবের দিকে। চোখ মুছে ঘুরে দাঁড়ালো অর্ণবের দিকে। ঠিক সাত মাস পর অর্ণব সরাসরি তার চোখের সামনে। মানুষটা যেন আগের থেকে আরো বেশি সুদর্শন হয়েছে। কিরণের অবুঝ মন নারাজ হলো। তার বিরহে সে প্রায় নাওয়া খাওয়া ভুলে শরীর ত্যাগ করতে বসেছিল সেখানে এ পুরুষ তো আরো সুদর্শন হয়েছে। তার কষ্ট তো দেখা যাচ্ছে না! কই অর্ণব তো তার মতো হয় নি। অথচ তার চোখেই পড়লো না অর্ণবের চোখের নিচের কালো দাগটা গাঢ় হয়েছে। তীব্র অভিমানে সে দাগ উপেক্ষা করেই কিরণে অর্ণবের চোখে চোখ রেখে কঠোর কন্ঠে জানালো,
” যে পাহাড়ি রাস্তার উঁচু নিচুতেই পড়ে যায় তাকে কি হিমালয় জয় করার ইচ্ছা পোষণ করা মানায়? ”
চলবে…..
অনেকটা দিন অপেক্ষা করিয়ে রাখার জন্য দুঃখিত। প্রথম পরিচ্ছেদে সকলের অপ্রত্যাশিত সমর্থন পেয়েছি। এখনো যারা সাথে আছেন তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। আপনাদের উৎসাহেই দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ লেখা শুরু করলাম। পুনরায় সাথে থাকার জন্য অনুরোধ রইলো। আপনাদের মূল্যবান মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম। বানান ভুল ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ এবং অসংখ্য ভালোবাসা।