#শিশির_ধোয়া_গোলাপ
#ইভান_ডালী
#পর্বঃ০৪
আদনান সবাইকে অবাক করে দিয়ে আরোহীর মা মিসেস শাহানা বেগম এবং আরোহীর বাবা আজগোর মিয়া কে সালাম করে।আরোহীর বাবা-মা ও আদনানের মাথায় হাত রেখে দোয়া করে।আদনান যেভাবে রিয়েক্ট করে চলে গিয়েছিলো বিয়ের আসর থেকে। তার কাছ থেকে এমন কিছু উপস্থিত কেউ আশা করেনি।আরোহী এবং আদনান কে ঘরে নিয়ে বসিয়ে যথেষ্ট আপ্যায়ন করার চেষ্টা করছে আরোহীর বাবা – মা। আরোহী তার নিজের ঘরে আদনান কে নিয়ে গেল।আরোহী বলল,
– হয়তো আপনাদের বাসার মতো বড় বড় আসবাবপত্র শৌখিন জিনিসপত্র আমাদের বাসায় নেই।তবে…..
– তবে প্রিয় জনদের ভালোবাসা মিশে আছে তাই তো।
– আপনি গ্রাম্য এলাকায় কখনো এসেছেন?
-না। এই প্রথম।তোমার গ্রামটা ঘুরে দেখাবে আমায়?
– হুম। দেখাতেই পারি।
– রুহি, একটা কথা বলার ছিলো?
– হুম। বলেন,
– আমি শাওয়ার নিবো কোথায়?
– কোনো পুকুরে।আমাদের পুকুরের পানি খুবই সুন্দর।
– হোয়াট, কি বলছো।
– হ্যাঁ,ঠিক বলেছি।আপনি আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসপএ নিয়ে বাহিরে আসুন আমাদের পুকুরে সুন্দর বাধাঁনো ঘাট রয়েছে।
– ঘাট,সেটা কি রুহি?
– আগে আসুন গেলেই দেখতে পারবেন।
আদনান তার প্রয়োজনীয় জিনিসপএ নিয়ে আরোহীর সাথে ঘাটে আসতেই আদনানের অবস্হা খারাপ।
– রুহি আমি এই ঘাটে নামতে পারবনা।
– আরে সমস্যা নেই আমি আপনার হাত না ধরছি আপনি নামেন।
– যদি পড়ে যাই তাহলে?
– তাহলে সাঁতার কেঁটে ওঠে পড়বেন,সিমপল।
– আমি সাঁতার জানলে তো!
– কি বললেন, আপনি সাঁতার জানেন না।
কথাটি বলে আরোহী উচ্চ স্বরে হেসে ফেলে।আদনান রাগি দৃষ্টিতে তাকাতেই আরোহী হাসি থামিয়ে বলল,,- আপনি চাইলে আমি আপনাকে সাঁতার শিখাতে পারি।আর যেহেতু আপনি নতুন তাই কলাগাছের মাধ্যমে সাঁতার শিখতে পারেন। পুকুর কিন্তু অনেক গভীর।
– আমার শাওয়ার নেওয়াই দরকার নেই।( রাগ দেখিয়ে )
– আপনি এখানে নামুন আমি ধরছি। নাহলে ধাক্কা মেরে ফেলে দিবো।
আরোহী কথাটা বলে মিটিমিটি হাসছে, কারন পুকুর তেমন গভীর না। তাও আদনান কে ভয় দেখাতে বলেছিল অনেক গভীর।
আদনান এবার আরোহীর কথায় সায় দিলো, আরোহীর হাত ধরে আস্তে আস্তে নামছে।এদিকে, আরোহী ও সাথে সাথে নিচের দিকে নামছে।আদনান কে আরোহী জুতো খুলতে বলায় আদনান জুতো খুলে ফেলল।ঘাটে শেওলা থাকায় আদনান পা দিতেই স্লিপ খেয়ে পড়ে যায়।আরোহী হাসি চেপেঁ রাখতে পারলো না। আরোহীর হাসি দেখে আদনানের মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি আসে। আদনান হাতটা আরোহীর দিকে বাড়িয়ে দিতেই আরোহী ভেবেছে বেচারা পরে গিয়েছে তাই আরোহী আদনানের হাত ধরতেই আদনান আরোহীকে হেঁচকা টান দেয়।তাল সামলাতে না পারায় আরোহী আদনানের গায়ের ওপরে গিয়ে পড়ে।এক পর্যায়ে দুজনেই পানিতে পড়ে যায়। পুকুরে পানি বেশি না থাকায় তেমন হয়রানি হয়নি।তবে শোয়া অবস্থায় পড়ায় দুজনেই নাকানিচুবানি কিছুটা হয়েছে। আদনান আর আরোহী দুজনেই পানিতে ওঠে দাড়িয়ে পড়লো।আদনানের চোখে মুখের অবস্থা পুরো লাল হয়ে আছে। আরোহীর দিকে চোখ পড়তেই আদনানের চোখ আটকে গেল। আরোহীর পড়ে থাকা শাড়ীটা একদম শরিরে লেপ্টে আছে। আদনান এক অদ্ভুত নেশালো চাহনিতে তাকিয়ে আছে।নিজেকে আরোহীর কাছ থেকে গুটিয়ে রাখতে চাইলেও পারছে না।
______________________________________________
এদিকে আরোহীর বেষ্ট ফ্রেন্ড নূর শাহানা বেগম কে বলছে,
-আন্টি আরোহী কোথায়, শুনেছি দুলাভাই ও নাকি এসেছে।
– ওরা তো পুকুরের দিকে গেল সেখানে গিয়ে দেখ।
নূর মনে উৎফুল্ল নিয়ে পুকুরের দিকে যেতে লাগলো,কিন্তু সামনে এরকম দৃশ্য দেখে নূর হেসে দিলো।
আদনান আর আরোহী দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে ছিলো।কারো হাসির আওয়াজে আদনান আর আরোহীর দুজনেরই চোখ পড়ে নূরের দিকে।নূর বললো,
– দুলাভাই রোমাঞ্চ করতে হলে ঘরে গিয়ে করুন।এভাবে পাবলিক প্লেসে।( কথাটা বলে আবার মিটি মিটি হাসতে লাগলো।)
আরোহী পানি থেকে ওঠেই নূর কে জড়িয়ে ধরতে নিয়ে আবার থেমে গেল।আরোহী বলল,
– আমি কারো সাথে মনে হয় অনেক বেশি রাগ করেছি।
– আচ্ছা, রাগ টা কি খুব বেশি।
– হুম। অনেক বেশি,কারন সে আমার বিয়েতে এটেন্ড করেনি।
– সেদিন আমি খুব করে আসতে চেয়েছিলাম।আর তুই তো জানিস আম্মু অনেক অসুস্থ ছিলো।এই অবস্থায় কি করে একা রেখে আসি আম্মুকে।
– হয়েছে আর এক্সকিউজ দিতে হবে না।আন্টি এখন কেমন আছে?
– আলহামদুলিল্লাহ। তবে আমার মনে হয় দুলাভাই বেশি ভালো নেই।(আদনানের দিকে ইশারা করে)
আরোহী এবার আদনানের দিকে তাকিয়ে দেখলো ভিজে অবস্থায় কোনো রকম দাড়িয়ে আছে।
– আপনি এখনো দাড়িয়ে আছেন কেন? ওপরে উঠুন বাসায় গিয়ে চেঞ্জ করবেন।
– আচ্ছা, আমি যদি উঠতেই পারতাম তাহলে কি এভাবে এখানর দাড়িয়ে থাকতাম।
– আমি আর এবার আপনাকে ধরছি না। ইচ্ছে করে আমাকে ফেলে দিয়েছেন।
দেখ দুলাভাই শহরে থাকে সে কি এখানে নামতে পারে। তুই কলে নিয়ে গলেও তো পারতি।বলল,নূর
– হয়েছে দুলাভাইয়ের হয়ে সাফাই গাইতে হবে না। আর আপনি ঝটপট উঠুন তো।
আরোহী আবার আদনান কে হাত ধরে উপরে উঠায়।তারপর তিনজন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।বাড়িতে প্রবেশ করতেই আরোহী আর আদনান দুজনেই চেঞ্জ করে নেয়। আরোহী নূরের সাথে অনেক গল্প করে এবং আদনানের সাথেও পরিচয় করিয়ে দেয়।তারপর আরোহী আর নূর কে যেতে দেয়নি।খাওয়া দাওয়া শেষে তিনজনে ঘুরতে বের হয়।আদনান কতটুকু হেঁটেই হাঁপিয়ে উঠে,
– রুহি আমি আর হাঁটতে পারবো না।চলো বাসায় ফিরে যাই।
– এটা কি বললেন,আপনি জানেন আমি আর নূর কতটা পথ হেঁটে কলেজে গিয়েছি।আর আপনি এতটুকু তেই এনার্জি শেষ।
– আমার হাঁটায় অভ্যস্ত না।
-আরু দুলাভাই যখন চাইছে তাহলে ফিরে চল।
তারপর সবাই আবার ফিরে আসলো। রাতে নূর নিজের বাসায় চলে যায়। আরোহী হঠাৎ খেয়াল করলো আদনানের চোখ মুখ কি রকম যেন লাল হয়ে আছে। পুকুরে পড়ে যাওয়ার কথা মনে পড়তেই আরোহী আদনানের কপালে হাত রাখলো।কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করতেই আদনান চমকে উঠে।
আরোহী বলল,
– আপনার তে অনেক জ্বর। আপনি আমাকে বলেন নি কেন?আপনার গা তো পুড়ে যাচ্ছে।আপনি ঘরে চলুন আপনার জন্য ঔষধ নিয়ে আসছি।কথাটা বলেই আরোহী কিছুক্ষণ পর ঔষধ নিয়ে আদনান কে খাইয়ে মাথায় জলপট্টি দিতে লাগলো।
আদনানের প্রতি আরোহীর এতো কেয়ার দেখে আদনান অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরোহী মুচকি হেঁসে বলল,
– এই যে মিস্টার নিরামিষ স্বামী আমাকে পড়েও দেখতে পারবেন। এখন চোখ বন্ধ করে একটু ঘুমোনোর চেষ্টা করুন দেখবেন ভালো লাগবে।
আদনান চোখ বন্ধ করতেই কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো টেরই পেলো না। সকালে ঘুম থেকে উঠতেই আদনান হাতের ওপর ভারি কিছু অনুভব করলো। চোখ জোড়া খুলতেই দেখলো আরোহী হাতের ওপর মাথা দিয়েই শুয়ে আছে।আদনান হঠাৎ আরোহীর মুখের উপর পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে কানের পিছনে গুঁজে দিলো।সারা রাত মেয়েটা হয়তো তার জন্য জেগে ছিলো তাই আদনান তার হাতটা ওই ভাবেই রেখে দিয়েছে।
গ্রামে খুব সকাল হলেই পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ শুনতে পাওয়া যায়। আরোহী একটু নড়ে চড়ে উঠতেই তার মনে পড়লো সে তো চেয়ারে বসা আর আদনান কে তো জলপট্টি দিতে হবে ভেবেই তড়িঘড়ি করে উঠতে নিলো,ঠিক তখনি দেখরো এক জোড়া চোখ তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।এই চোখে হয়তো লুকিয়ে আছে অনেক কথা। হয়তো অনেক কথা জমা হয়ে আছে আরোহী কে বলবে বলে কিন্তু বলতে পারছে না। আরোহী বলল,
– আপনি উঠলেন কখন আর আমাকে ডাকেন নি কেন?কথাটা বলেই আবার আদনানের কপালে হাত দিয়ে শরিরের তাপমাত্রা দেখলো।
– সারা রাত আমার জন্য ঘুমোতে পারো নি, তাই ডাকিনি।
– আচ্ছা আপনার কি কিছু লাগবে, তাহলে আমাকে বলুন আমি এনে দিচ্ছি।
আদনান মাথা নাড়িয়ে সায় জানাতেই আরোহী রুম থেকে বের হতে নিবে ঠিক তখনি আদনান বলল,
– রুহি তোমাকে কিছু বলার ছিলো।
অতঃপর……..
#চলবে