গল্প: আগামী (দ্বিতীয় পর্ব)

0
1300

গল্প: আগামী (দ্বিতীয় পর্ব)
লেখা: মাহফুজা রহমান অমি।

আমাকে দেখতেই মা চোখ বড় বড় করে বললেন, ‘তুই এই অসময়ে?’

আমি কোনো উত্তর না দিয়ে বাসার ভেতরে ঢুকে পড়লাম। মা আবার প্রশ্ন করলেন, ‘কী রে একা এলি যে? জামাইকে সাথে করে নিয়ে আসতে পারলি না?’

‘কেন বিয়ের পর কী জামাই ছাড়া মেয়েরা একা তার বাবা বাড়ি আসতে পারে না? নিষেধাজ্ঞা আছে নাকি?’ বেশ কড়া মেজাজে বললাম।

‘না, তা হবে কেন! এমনি বললাম। তা এবার কী কিছুদিন থাকবি নাকি খানিক পরই যাই যাই শুরু করবি?’

মায়ের নরম স্বর শুনে বললাম, ‘চিন্তা করো না৷ আমি আর ওবাড়ি ফিরব না। একেবারেই চলে এসেছি।’

মা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। আমি শান্ত গলায় বললাম, ‘ঠিক শুনেছো তুমি। আর হ্যাঁ, আমি তোমাদের আদরের জামাইকে ডিভোর্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

‘মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে তোর? কীসব বকছিস? কী হয়েছে? এমন কথা মুখে আনলি কেন হঠাৎ? ঝগড়া করে চলে এসেছিস?’

আমি ঠান্ডা মেজাজে উত্তর দিলাম, ‘এত প্রশ্নের জবাব এখন দিতে পারব না৷ খিদে পেয়েছে। খেতে দাও।’

মা আমার এমন অদ্ভুত আচারণে বেশ বিস্মিত হচ্ছেন তা তার চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আমি আপাতত সেটা নিয়ে ভাবছি না। আপাতত নিজের ভেতরে বেড়ে ওঠা জীবনটা ছাড়া আর কাউকে নিয়েই ভাবছি না।

ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে একটা লম্বা ঘুম দিলাম। ভেতরে ছটফট করা হাজারো যন্ত্রণাকে ঘুম পড়াতে নিজের একটা দীর্ঘ ঘুমের খুব প্রয়োজন অনুভব করলাম। ঘুম থেকে উঠে মায়ের ভেজা চোখ জোড়া দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না যে মায়ের কানে এতক্ষণে সব ঘটনা পৌঁছে গিয়েছে।
আমাকে ড্রয়িংরুমে আসতে দেখতেই মা বলে উঠলেন, ‘জামাইটা এমন একটা কাজ করতে পারলো!’

মায়ের কাতর গলা শুনে ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে যেতে শুরু করলো। কষ্টগুলোকে থামিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, ‘মানুষের উপর দেখে ভেতরের খবর বোঝা আসলেই খুব কঠিন জিনিস মা। কিছু কিছু মানুষ খুব চালাক হয়, সূক্ষ্ম অভিনয় দিয়ে তারা তাদের ভেতরের খবর ঢেকে রাখতে খুব পারদর্শী হয়। চমৎকার অভিনয় জানেন তারা।’

মায়ের গাল বেয়ে পানি নামছে৷ আমি টলমল চোখে তাকিয়ে বললাম, ‘তোমাদের জামাই একজন চমৎকার অভিনেতা মা।’

মা চুপ করে রইলেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুই নাকি প্রেগন্যান্ট, এটা কী সত্যি?’

আমি মায়ের হাতের মধ্যে হাত গুঁজে দিয়ে মুচকি হেসে বললাম, ‘সত্যি মা। তুমি নানি হতে যাচ্ছো।’

মায়ের দুঃখ ভরা কান্নায় এবার খুশির ছিটে দেখতে পেলাম।

সন্ধ্যায় ব্যালকনিতে চুপচাপ বসে আছি। এমন সময় ছোট বোন নায়লা এসে দাঁড়ায় পাশে।

‘বান্ধবীর বিয়ে কেমন খেয়েছিস?’

আমার প্রশ্নের উত্তরে নায়লা বললো, ‘ভালো। তবে তুই এসেছিস জানলে আরও আগেই চলে আসতাম।’

আমাকে চুপ থাকতে দেখে নায়লা প্রশ্ন করলো, ‘আপা, দুলাভাই কী সত্যিই আরেকটা বিয়ে করেছে?’

আমি মাথা নেড়ে বললাম, ‘হ্যাঁ, সাফিন বিয়ে করেছে।’

‘আর কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে পারলো না মানুষটা!’

আমি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললাম, ‘অপেক্ষা না করে ভালোই করেছে বোধহয়। অপেক্ষা করলে ওর ভেতরের চিন্তাচেতনা সম্পর্কে কখনোই আমার জানা হতো না।’

‘দুলাভাই কী জানে যে তুই মা হতে চলছিস?’

‘এখন জানে কী না জানি না।’

‘তোর জানতে ইচ্ছে করে না, এই খবরটা জানার পরে তার রিয়াকশন কী?’

‘উহুম না। একদমই ইচ্ছে করে না ওর বিষয়ে কিচ্ছু জানতে।’

‘তুই আসার পর কল দিয়েছিলো?’

‘ফোন বন্ধ। দিলেও জানতে পারব না।’

রাতে মুঠোফোনটা চালু করতেই দেখি সাফিনের ফোনকল। বেশ কয়েকবার কেটে দেওয়ার পরে বাধ্য হয়ে কলটা রিসিভ করলাম।

‘জুলিয়া আমি তোমাকে নিতে আসি?’

‘ভেবে পাচ্ছি না, কোন মুখ নিয়ে কথাটা বললে তুমি।’

খানিক চুপ থাকার পরে সাফিন বললো, ‘এই সংসার তো তোমারই জুলিয়া। বাবা-মা তোমাকে খুব ভালোবাসেন তুমি তো জানো।’

‘ও সংসার এখন আর আমার না। আর যার ভালোবাসার খুব প্রয়োজন ছিলো সে’ই যখন ভালোবাসেনি তখন অন্য কারো ভালোবাসার আর প্রয়োজন নেই।’

‘আমি যা করেছি ভুল করেছি। তুমি আমাকে একটাবার……’

সাফিনকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, ‘সন্তানের বাবা হবে শুনে এখন মনে হচ্ছে সব ভুল করেছো! অথচ খবরটা জানার আগেও ভাবতে সব ঠিক। সব যদি বাচ্চা হওয়া আর না হওয়ার উপরেই ধার্য হয়, তাহলে আমার প্রতি তোমার অনুভূতি আসলে কোথায়?’

সাফিন চুপ করে রইলো। আমি বললাম, ‘ডিভোর্স পেপার তোমার হাতে খুব শীঘ্রই পৌঁছে যাবে। তুমি নিশ্চিন্তে সংসার করতে পারো।’

‘আরেকবার কী ভেবে দেখবে জুলিয়া?’

‘তোমাকে আমার জীবনে আর প্রয়োজন নেই সাফিন৷ তোমার মতো মানুষেরা আমার জীবন থেকে সরে গেলেই বরং আমি ভালো থাকব। বিশ্বাস ভেঙ্গে দিয়েছো তুমি। সম্পর্কটা আর কখনো জোড়া লাগবে না সাফিন।’

সাফিনকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোনটা সুইচড অফ করে দিলাম।

এই মুহুর্তে হাউমাউ করে খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু পারছি না৷ নায়লা পাশে এসে বসলো।
‘আপা, কষ্ট হচ্ছে তোর?’

কান্নাচাপা গলায় বললাম, ‘যে মানুষটা আমাকে কষ্ট দিয়েছে তার জন্য কষ্ট পাওয়া একদম উচিৎ হচ্ছে না। কিন্তু তবুও খুব কষ্ট হচ্ছে রে।’

মায়ের কাছ থেকে জানলাম সাফিনের বাবা-মা সব ঠিক করে নেওয়ার চেষ্টা চালাতে চাইছেন। মা’কে বললাম, তাদেরকে অযথা কষ্ট করতে বারন করে দিতে।

ভেতরে বড় হচ্ছে জীবন৷ পুত্র নাকি কন্যা জানতে ইচ্ছে করছে না। একটা সুস্থ জীবন আসুক, এটাই এখন একমাত্র প্রার্থনা৷

নায়লা এসে খবর দিলো, ‘জানিস আপা, দুলাভাই নাকি তার নতুন বউকে বাড়ি এনেছে।’

‘উকিল সাহেব বলেছেন, বাচ্চা জন্মের পরই ডিভোর্স কার্যকর হবে। তাই এই অপেক্ষা। তার মানে এই না যে আমি এখনো মন থেকে সাফিনকে স্বামী ভাবি। সুতরাং আর কখনো ওকে দুলাভাই বলবি না।’

নায়লা মাথা নেড়ে বললো, ‘মনে থাকবে আমার।’

‘তুই খবর জানলি কী করে?’

‘সাফিন ভাইয়ার কাজিন আমার ভার্সিটিতে পড়ে তো।’

‘ওহ, হ্যাঁ। মনে ছিলো না সে কথা।’

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে উঁচু পেটটার দিকে তাকিয়ে বাচ্চার সঙ্গে কথা বলি আমি। মনের সব জমানো কথা আমি আমার অনাগত সন্তানের সঙ্গে বলাবলি করে মনটাকে হালকা রাখার চেষ্টা চালাই।

মায়ের মাধ্যমে সাফিনের বাবা-মা মাঝেমধ্যে মুঠোফোনে আমার খোঁজ খবর রাখার চেষ্টা করেন। তাদের মাধ্যমেই খবর জানতে পারি, সাফিনের স্ত্রী গর্ভবতী। ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিয়েছি অনেক আগেই। সাফিন এখনো স্বাক্ষর করে কাগজটা পাঠায়নি। তবে ডিভোর্সের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে সাফিন আমার সঙ্গে একবার যোগাযোগের চেষ্টাও করেনি, একবারের জন্য আমাকে দেখতে এবাড়িতেও আসেনি। আমি নিশ্চিত, অপরাধবোধের তাড়নায় নয়, সাফিন নতুন সংসার আর নতুন জীবনের কারণেই আমার মুখোমুখি হতে চায়নি। সে ডুবে আছে নতুন স্বপ্নে, নতুন ঘোরে। সেখানে আমার কোনো অস্তিত্ব নেই।

সাফিনের মনে আমার প্রতি বিন্দু পরিমাণে ভালোবাসাও আর অবশিষ্ট নেই যে সে কথা আমি জানি। তবে ডিভোর্স পেপারটা এখনো কেন ঝুলিয়ে রেখেছে, এটা জানি না। ওর স্বাক্ষর আর বাচ্চা জন্মানোর জন্যই আমার এখন অপেক্ষা। সামনের দিনগুলো আমি শান্তিতে আমার সন্তানের সঙ্গে কাটিয়ে দিতে চাই। সেখানে সাফিন নামের ওই মানুষটার কোনো প্রয়োজন নেই।

প্রচন্ড ব্যথা উঠলে বাবা মা আমায় হাসপাতালে নিয়ে এলেন। এখানেই জন্ম নেয় জমজ বাচ্চা। কী ফুটফুটে দেখতে দু’টো সন্তান। নায়লা ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘মেয়েটা দেখতে একদম তোর মতো হয়েছে আপা। আর ছেলেটা দেখতে সাফি…’

আমি ওকে থামিয়ে দিলাম। বললাম, ‘কার মতো হয়েছে ওটা বিশ্লেষণের প্রয়োজন নেই। সুস্থ হয়েছে এটাই সবথেকে বড় খুশি।’

সন্তান হওয়ার খবর পৌঁছে যায় সাফিনের বাড়ি। ওবাড়ি থেকে সাফিনের বাবা-মা আসতে চাইলে বাবা বারন করে দিলেন। সাফিন একবারের জন্যও আর যোগাযোগ করেনি৷

হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরে জানতে পারি সাফিনের তরফ থেকে স্বাক্ষর করা ডিভোর্স পেপারটা আমার বাসায় পৌঁছে গিয়েছে। হতে পারে এটা সাফিনের তরফ থেকে আমার বাচ্চাদের জন্য উপহার।

আমার দুই বাচ্চার মা হওয়া, আমাদের পুরোপুরি ডিভোর্স হয়ে যাওয়া নিয়ে সাফিনের কোনো অনুভূতি আমি জানতে পারিনি৷ জানার চেষ্টাও করিনি। হয়তো ডিভোর্সে খুশি হয়েছে আর সন্তান তো তার ঘরেও আসবে, তাই হয়তো এই সন্তানদের নিয়ে তার কোনো মাথা ব্যথা আমি টের পাইনি৷

মা হতাশ গলায় বললেন, ‘জামাইটা এতটা নিষ্ঠুর, আগে কখনো চিন্তাও করিনি।’

‘সে আর তোমাদের জামাই নেই মা।’

মা ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, ‘আমরা না হয় আত্মীয়ের তালিকা থেকে বাদ পড়েছি। কিন্তু সন্তান দু’টোর খবর নেওয়া তো তার উচিৎ ছিলো।’

মা’কে সান্ত্বনা দিয়ে বললাম, ‘ওসব কথা বরং ভুলে যাও মা। আমার সন্তানদের পাশে আমি আছি৷ মা হয়েও আমি থাকব আর বাবা হয়েও।’

ভেতরে যতই কষ্ট থাকুক সন্তানদের মুখের দিকে তাকালে সব ভুলে যাই৷ সুন্দর দু’টো মুখ। এদের নিয়েই আমার বাকি জীবনটা সুন্দরভাবে কেটে যাবে আমার বিশ্বাস।

ওবাড়ির লোকেদের সঙ্গে এখন আর যোগাযোগ হয় না৷ মাস খানেক পর নায়লা খবর জানায়, সাফিনের স্ত্রী খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বাচ্চাটা মারা গিয়েছে। ডাক্তার বলেছে সুস্থ হয়ে উঠবেন তিনি, কিন্তু তিনি আর কখনোই মা হতে পারবেন না।

আল্লাহ তায়ালার বিচার কী না সেসব যুক্তি তর্কে যাব না। তবে খবরটা শুনে খুশি হইনি মোটেও। সাফিনের প্রতি অনেক রাগ, ক্ষোভ, অভিযোগ ছিলো। তাই বলে অভিশাপ দেইনি তাকে কখনো। এমনটা সত্যিই প্রত্যাশা করিনি আমি।

বাচ্চারা বড় হয়ে উঠছে। আমিও অতীতকে চাপা দিয়ে দিন পার করে চলছি। জীবনে অনেক না পাওয়া নিয়ে আক্ষেপ থাকলেও, যা পেয়েছি তা দিয়ে সব শূন্যতা ভরাট করতে সক্ষম হয়েছি, এটাই সফলতা আমার।

শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষাসহ ছয় ঋতু নিয়ে কেটে গেলো বেশ কয়েকটা বছর। আমি এখন একটা স্কুলে বাচ্চাদের পড়াই। সবথেকে বড় পরিচয় আমি দুই সন্তানের মা। সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায় যখন আমার বাচ্চারা আম্মু বলে ডাক দেয়।

স্কুল শেষ করে বের হতেই মনে পড়লো ফোনটা সাইলেন্ট করে রেখেছি ঘন্টা খানেকের বেশি। কেউ কল করেছে কী না চেক করতেই দেখি নায়লা, মা আর নায়লার স্বামীর নাম্বার থেকে বেশ কয়েকটা ফোনকল জমা পড়েছে। ভেতরটা আঁতকে উঠে। নায়লাকে কল করলে একটা হাসপাতালের ঠিকানা দিয়ে বললো, জরুরী পৌঁছাতে। কার কী হয়েছে আমি কিচ্ছু জানি না৷ মনের মধ্যে অজানা ভয় কুঁড়ে খাচ্ছে। আমি তাড়াতাড়ি করে ছুটলাম হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।

ওখানটায় পৌঁছালে জানতে পারি, স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে মা বাচ্চাদের নিয়ে অ্যাক্সিডেন্ট করেছেন। মাথায় বাজ পড়লো। মায়ের অবস্থা ভালো কিন্তু বাচ্চাদের রক্তের প্রয়োজন। এবি নেগেটিভ গ্রুপের রক্তের কাউকে এই মুহুর্তে খুঁজে বের করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই মুহুর্তে বাচ্চাদের কাছেও যেতে বারন করে দিয়েছেন ডাক্তার। ভেতরটা ছটফট করছে। চারপাশ অন্ধকার মনে হচ্ছে। আমি কুল-কিনারাহীণ হয়ে আল্লাহ তায়ালাকে স্মরণ করে চলছি। নায়লা আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছে।

খানিক বাদেই নায়লার স্বামী এসে জানায়, ‘আপা দুশ্চিন্তার কারণ নেই৷ এক ভদ্রলোককে পাওয়া গিয়েছে। তিনি রক্ত দিতে রাজি হয়েছিলেন।’

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে জিজ্ঞেস করলাম, ‘রক্ত কী দেওয়া হয়ে গিয়েছে?’

‘এতক্ষণে বোধহয় দেওয়া হয়ে গিয়েছে।’

‘আমি কী এখন বাচ্চাদের সাথে দেখা করতে পারব?’

‘হ্যাঁ। আমার সঙ্গে চলেন।’

মায়ের পাশ থেকে উঠে গিয়ে আমি আর নায়লা বাচ্চাদের রুমের দিকে ছুটলাম।

রুমে পা দিতেই দেখি এক ভদ্রলোক বাচ্চাদের বিছানার পাশে বসে আছেন।

‘আপা ইনিই রক্ত দিয়েছেন।’ নায়লার স্বামী আমাকে কথাটা বলতেই ভদ্রলোক পেছন ঘুরে আমার মুখের দিকে তাকালেন।

আমি থ হয়ে তাকিয়ে রইলাম। শরীরটা যেন অবশ হয়ে আসছে। নায়লা পাশ থেকে আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরেছে৷

আমাকে ইঙ্গিত করে নায়লার স্বামী ভদ্রলোকের উদ্দেশ্যে বললো, ‘তিনি হলেন বাচ্চাদের মা।’

সাফিন আমার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আমি কোনো কথা বলার পরিস্থিতিতে নেই। সাফিনকে ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ কী না বুঝে উঠতে পারছি না। তবে এই মুহুর্তে আমার আরও একবার মনে পড়লো, আমার বাচ্চাদের শরীরে তাদের বাবা সাফিনের রক্তও বইছে। আমি হাজার চাইলেও বাচ্চাদের থেকে তার বাবাকে দূরে রাখতে পারব কী না জানি না। আগামীতে বাচ্চারা তার বাবার ঠিক কতটা কাছে পৌঁছে যাবে তাও জানি না। শুধু জানি বাচ্চাদের পাশে তাদের বাবার ছায়া হয়ে কেবল আমিই থাকার চেষ্টা করব। সেখানে সাফিনকে কখনো মেনে নিতে পারব না৷ তবুও ভয় হয়। আগামী নিয়ে ভয়।

প্রথম পর্বের লিঙ্ক:
https://www.facebook.com/groups/2401232686772136/permalink/3121132291448835/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here