#শুকতারা ( দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)
#পর্ব-৮
#হালিমা রহমান
হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পথে মমিন শেখের সাথে দেখা। সূচি গত হয়েছে তিন-চারদিন হবে।এই কয়েকদিন বাড়ির বাইরে পা রাখেননি তিনি।কিন্তু এখন আর সহ্য হয় না।মেয়ে হারানোর শোক সহ্য হলেও স্ত্রীর বুকফাটা বিলাপ, ভিজে চোখ সহ্য হয় না।সাহিদা বেগম কেমন যেন হয়ে গেছেন।কথা বলে না,সান্ত্বনা দেয় না,পাশে বসে না।এতো বছরের স্ত্রীকেই এখন বড্ড অচেনা ঠেকে মমিন শেখের কাছে।তার গৃহিণী ঠান্ডা,ভীতু, বাধ্য রমনী। আজ পর্যন্ত ন্যায়-অন্যায় এমন একটা আদেশও নেই যা তিনি মানেননি।সেই সাহিদাই আজ চার-পাঁচ দিনে বদলে গেছে খুব।চোখ-মুখের দিকে তাকানো যায় না।মাঝে মাঝে চুপিচুপি কাঁদেন,মাঝে মাঝে চিৎকার করে কাঁদেন।মমিন শেখের হাসফাস লাগে খুব।দুজনের ছোট্ট সংসারের গুমোট হাওয়ায় আজকাল শ্বাস নিতে পারেন না।বুক ধড়ফড় করে।রাতে ঘুম হয় না।তন্দ্রা যদিও বা আসে কিন্তু তা স্থায়ী হওয়ার আগেই ভেঙে যায়।প্রায় গভীর রাতে সূচির বদ্ধ ঘরের বেড়া ভেদ করে ভেসে আসে সাহিদা বেগমের অস্পষ্ট কাকুতি।এ এক মূর্তিমান অশান্তি। স্ত্রীর বিলাপ হাড়ে সয় না।মনে হয় যেন এ বিলাপ নয়। বাবা হিসেবে তিনি যে অযোগ্য, এ তারই প্রমাণ।
অ্যাম্বুলেন্স থেকে নামার সময় রায়হানের চোখেই আগে পড়লো।ভূমিকে বাড়ি আনার জন্যে মানুষ দরকার।তাই সে আজ গিয়েছিল হাসপাতালে।নামার সময় চোখ ঘুরাতেই চিমসানো মুখের বয়সী কাকা নজরে এলো।গাড়িটা দেখে হাত আটেক দূরে দাঁড়িয়ে আছেন মমিন শেখ।হয়তো সামনেই কোথাও যাচ্ছিলেন। অপ্রত্যাশিতভাবে ওদেরকে দেখে ওখানেই পা আঁটকে গেছে।একে একে জিনিসপত্র নামিয়ে আলতো হাতে ছোট্ট বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে একপাশে দাঁড়ালো রায়হান।কিছুক্ষণের ব্যবধানে ভূমিও নামলো।ইশতিয়াকের দু-হাতের বন্ধনে নিজের ভরটুকু ছেড়ে দিয়ে ব্যাথা কাতুরে মুখ নিয়ে আস্তে আস্তেই পা রাখছিল রাস্তায়।কিন্তু আশেপাশে নজর ঘুরাতেই চোখ-মুখ শক্ত হয়ে এলো।আসামীর উপরে নজর গেছে তার।নাক বরাবর সামনে আর তাকিয়ে দেখলো না।ইশতিয়াকের কাছে কঠিন গলায় আবদার করলো,
” আমাকে তাড়াতাড়ি ভিতরে নিয়ে চলো।”
” এই তো যাচ্ছি।”
যাচ্ছি বললেও ছুটে আর যাওয়া হলো না।স্থির মমিন শেখ ইশতিয়াকের নজরেও এসেছে।কিন্তু শ্বশুরের রুগ্ন,শীর্ণ মুখ দেখে কেন যেন তার রাগ হলো না।রক্ত টগবগিয়ে ফুটলো না।এমনিতে আচার-আচরণে সে কোমল মানুষ।ঠন্ডা প্রকৃতির, রক্তে খুব একটা রাগ নেই।তাই হয়তো এতোদিন পরে কিছুদিন আগের শোকটা ঝিমিয়ে এসেছে।বউয়ের মতো প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারলো না।কেবল খুব নিচু গলায় বললো, ” একবার ডেকে কথা বলি।বাবুকে ওর নানা-নানু দেখবে না? আব্বার উপরে তোমার রাগ, এর সাথে বাবুর তো কোনো সম্পর্ক নাই।এভাবে চোখের উপর দিয়ে চলে যাওয়াটা ঠিক হবে না।”
অগ্নি দৃষ্টি হানলো ভূমি।
” তুমি কি চাও আমি একাই হেঁটে ঘরে চলে যাই? চাইলে বলো। ভূমি এখনো এতোটাও দুর্বল হয়নি যে এতুটুকু রাস্তা হাঁটতে পারবে না।”
তর্কে জড়াতে ইচ্ছা হয় না ইশতিয়াকের।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, ” আমিই নিচ্ছি চলো।”
একে একে ঢুকে গেল সবাই।মমিন শেখ নির্নিমেষ চেয়ে ছিলেন।পলক পড়েনি চোখে।কিছুদিন আগের মমিন শেখ আর আজকের মমিন শেখে আকাশ-পাতাল তফাৎ। মেয়ে-মেয়ের জামাইকে থামতে দেখে ভেবেছিলেন ওরা হয়তো এগিয়ে আসবে।বাচ্চাকে হয়তো দেখাবে,কোলে তুলে দেবে।মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।তীব্র অপরাধবোধে ঠেলে আসা কান্নাকে বাইরে আসতে দেবেন না।চুপচাপ গিলে নেবেন।আনাড়ি মেয়ে একা বাড়িতে কীভাবে থাকবে? কিছুতেই থাকতে পারবে না।মমিন শেখ নাতিকে কোলে নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দিবেন।না আসতে চাইলেও ওদেরকে জোর করে বাড়ি নিয়ে আসবেন।আজ আর ভূমিকে ক্ষমা করতে বাধা নেই।সব রাগ-ক্ষোভ ভোজভাজির মতো উড়ে গেছে।এতো কাল বড় মেয়ের শূন্যতা পূরণ করেছে ছোট মেয়ে।আর আজ ছোট মেয়ের শূন্যতা পূরণ করুক বড় মেয়ে।কতকিছু ভাবছিলেন এই কয়েক মিনিটে! কিন্তু সব ভেস্তে গেল। ভূমি মুখ ঘুরিয়ে চলে যাওয়ার পরেই তার চটকা ভাঙলো।আমরা যতটা সহজ ভাবি পৃথিবী ততোটাও সহজ নয়।মাথা নিচু করে বাড়ির পথ ধরার সময় চুপচাপ মনে মনে একটা কথা নড়াচড়া করেন মমিন শেখ।ভূমি হয়তো কোনোদিন তাকে ক্ষমা করবে না।আশ্চর্য! তার রক্ত-মাংসের তৈরি দু-দুটো মেয়ে ছিল।তবুও বুড়ো বয়সে আজ সন্তানের অভাবে বুক জ্বালা-পোড়া করে।তাকে হয়তো মরতে হবে নিঃসন্তান বাবার মতো একটা ফাঁকা ঘরে।একে আসলে কী বলে? দুর্ভাগ্য নাকি প্রহসন?
” ভূমি, তুই একা বাড়িতে কীভাবে কী করবি? নিজেরে সামলাবি নাকি বাবুরে ধরবি?”
” দুইটাই।”
” পারবি?”
” পারব।”
বাচ্চাকে খাটে শুইয়ে নিজেও গা ছেড়ে বসলো রায়হান।শান্ত গলায় বললো, ” মেনে নেওয়া কষ্টকর তবুও বলছি শোন।আমার সাথে বাড়ি চল।তুই একা জীবনেও পারবি না।তোর নিজের শরীরটাই সুস্থ নেই।এর মাঝে আবার বাবু।অনেক কঠিন বিষয়।তুই যতটা সহজ ভাবছিস ততোটা সহজ না সব।”
” আমার কোনো বাড়িঘর নাই।আমি এতিম।এতিমেরা একাই করে সব।আমিও পারব।”
” কাকার কাছে যেতে হবে না।তুই আমার কাছে চল।আমার ওখানে থাকবি।একটু সুস্থ হলেই চলে আসবি।”
ভূমিকে একা বাড়িতে রাখার পক্ষে নেই ইশতিয়াকও।তাই রায়হানের সাথে গলা মেলায়।
” পরিস্থিতির উপরে কারো হাত নেই ভূমি।এটা পূর্ব নির্ধারিত।মানছি আব্বার দোষ আছে। কিন্তু দোষ কি আমারই কম? আমি সেদিন জোর করে সূচিকে রেখে দিলেই হয়তো এই অঘটনটা ঘটতো না।সূচি যে এমন একটা স্টেপ নেবে তা কে জানতো? আমিও জানতাম না, তুমিও জানতে না,আব্বা জানতো না, হয়তো সূচি নিজেও জানতো না।তো? কার দোষ দেবে তুমি? একটা বাবা সব সহ্য করতে পারলেও বেঁচে থেকে নিজের সন্তানের মৃত্যু সহ্য করতে পারে না।আব্বার মুখ ভালোভাবে দেখলে বুঝতে পারতে তুমি।চোখ-মুখই বলে মানু্ষটা অনেক বদলে গেছে।একটু আগে কীভাবে চেয়েছিল! রাগ পুষে রাখলেই রাগ হয়। এবার সব ঝেড়ে ফেলো তো ভূমি।তুমি ছাড়া ওনাদের আর কেউ নেই। বি পজিটিভ।”
সহসা খুব রেগে গেল ভূমি।দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললো, ” লেকচার শেষ? সূচির চিঠির কথা ভুলে গেছো?ভুলবেই তো।ও তো তোমার রক্তের কেউ না।কিন্তু আমি পারিনি। একই রক্ত বইছে তো শরীরে তাই পারি না।সূচি আমার কী ছিল তা তুমি বুঝবে না।দুটো হাতে ওর সব করেছি।রায়হান ভাইকে জিজ্ঞেস করো আম্মা কত অসুস্থ ছিল ওর জন্মের পরে।শুধু ঐ বেলায় বেলায় খাওয়ানো ছাড়া আর কিছুই করতে পারেনি।বাকি সব আমি করেছি।সেই সূচিই আজ তিনটে মানুষের জন্যে থাকতে পারলো না।ওদের দিকে আমি আন্দাজে আঙুল তুলছি না।সূচি নিজে মরার আগে ওদের নামে নালিশ করে গেছে।ও নেই কিন্তু বাকি তিনজন দিব্বি ঘুরছে, ফিরছে,খাচ্ছে,বেঁচে আছে।কোনো বিচার হলো না, কেউ ওদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে দুটো চড় অবধি মারলো না।অথচ ওরা আমার একটুখানি সূচির জীবনটাকে নরক করে ছেড়ে দিয়েছে।এরপরেও তুমি আমাকে বলবে বি পজিটিভ! এতোকিছুর পরেও??”
দু-সেকেন্ড থেমে শ্বাস নেয় ভূমি।ক্ষোভে ফেটে আগের রেশ টেনে বলে, ” আমি পারি না।তোমার মতো আমি ওত্তো ভালো মানুষ না।বললে রাগ পুষে রাখলেই রাগ হয়।কিন্তু তুমি আমার শোকই দেখেছো,ভিতরের একফোঁটা রাগও দেখোনি।আমি দেখাইনি।ওদের তিনজনকে টানা একবেলা কুপিয়ে মারতে পারলে আমার শান্তি মিলতো। বিশ্বাস করো আমি অসুস্থ বলেই ঠেকে গেছি।কসম,সুস্থ থাকলে অন্তত একবার চেষ্টা করে দেখতাম।তারপর যা করতো আল্লাহ।”
” হয়েছে থাম।এখন আবার কাঁদবি না।কাঁদলে মাথাটা ধরে যাবে তোর।যাওয়া লাগবে না কোথাও।তুই শুয়ে রেস্ট নে।”
ইশতিয়াক এগিয়ে আসতেই নির্জীবের মতো ওর বুকে মাথা এলিয়ে দেয় ভূমি।ক্লান্ত বিষাদে মগ্ন হয়ে ফিসফিসিয়ে বলে, ” কাঁদব না আর।কেন কাঁদব?যার জন্যে কেঁদেছি ওটাও একটা জানোয়ার।আমি কোনো স্বার্থপরের জন্য কাঁদি না।”
______________________________
টুটুলের মা এতোদিন কাজী বাড়িতে আসার সময় পায়নি।হাওয়া বড্ড গরম ছিল।রোমেলা বানুর দেখা-সাক্ষাতের সম্ভাবনা কম ছিল।এখন একটু শীতল হয়ে আসছে সব। বেলার পিঠে বেলা গড়াতেই মানুষের আগ্রহ কমছে।মিইয়ে আসছে সূচির আলোচনা,ফয়সালের শাস্তি হতে মুক্তির আখ্যান।আগুন নিভতে শুরু করেছে।তবে পুরোপুরি নিভে যাওয়ার আগেই খোঁচাতে চলে এলো টুটুলের মা।অলস বিকালের তীব্র আলো ঝিমিয়ে পড়ার আগেই তাকে দেখা গেল কাজী বাড়ির আঙিনায়।সইয়ের জন্য এক বাটি আলু,পটল আর কাতল মাছের হযবরল তরকারী নিয়ে এসেছে। মরা আঙিনার এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিলেন রোমেলা বানু।সাথীকে দেখেই হৈ হৈ করে উঠলো টুটুলের মা।
” কি রে রোমেলা,কী খবর তোর? দেহাই তো যায় না।”
” আর খবর! আমার বাড়ির খবরে মহল্লা উজাড় হয়া যাইতাছে আর তুই কস দেহাই যায় না।আয় ঘরে আয়।”
” এই বেলায় এমন বাইরে দাঁড়ায়া আছোছ ক্যান?শরীর খারাপ?”
” মরতে পারলেই এহন বাঁচি।আয় ঘরে আয়।”
টুটুলের মাকে নিয়ে ঘরে ঢুকলেন রোমেলা বানু।অগোছালো ঘর-দোর।বিছানার উপরে বিছানো কুঁচকে থাকা ময়লা চাদর টেনেটুনে বসলেন।
” টুটুল ভালো আছে?”
” হ।”
” বউয়ে?”
” তাও ভালো।বড় বউ কই? বাসায় নাই?”
হুমায়রার প্রসঙ্গ আসতেই বিরক্তিতে তেতো হয়ে এলো রোমেলা বানুর কন্ঠ।।
” বান্দির ঝিয়ের খোমা দেখবি ক্যামনে?আমি আসার পর থেকাই এহনো দেহি নাই।জানোয়ারে বাসায় নাই।বাপের বাড়িতে।”
” ক্যা? সাপের পাঁচ পাও দেখছেনি?ওরে কেউ কিছু করছে?”
” হেডাই।মালয়েশিয়ায় ভা**র কানে কী ঢুকাইছে আল্লায়ই জানে। আফজাইল্লায় হেদিন আমারে ফোন দিয়া কোন চোটপাট! আমিই ফয়সালের সাহস বাড়াইছি,আমিই ওরে আশকারা দিতাছি,শাসন করি না– আরো কত কিছু শুনাইলো।আমিও ছাড় দেই নাই।এক্কারে ছিল্লা লবন লাগায় দিছি।আমারে ওয় এতো কথা শোনানোর কে? আমি কি ঐ বউ ভাউড়ার কামাই খাই? যেই মা* খায় তারে যায়া শুনাক।”
” ঠিকই তো।তোর মতো মাইনষের ঘরে কী জন্মাইছে এডি?”
” আল্লাহ জানে।”
ভিতর থেকে ভেসে এল ফয়সালের কন্ঠ।সদ্য ঘুম ভাঙা বিকৃত কন্ঠ, ” আম্মা ভাত দাও।”
” পাকঘরে সব বাইড়া ঢাইক্কা রাখছি আব্বা।যায়া খাও।”
ফয়সালের পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে।রান্নাঘরে যাচ্ছে হয়তো।টুটুলের মায়ের কন্ঠ খাটো হয়,
” ফয়সাল বাসায় ক্যা? খামারে যায় না?”
” আর খামার! সব ধ্বংস হয়া যাইব।এক বান্দির ঝি আমার পোলাডারে শ্যাষ কইরা মরলো।এক ডাইনী আনছিলাম ঘরে।নটঙ্কীর নাটক কত! আমরা কত মাইর খাইছি।কই কোনোদিন তো মরার কথা ভাবি নাই।আর একদিন জামাইয়ে দুইডা থাপ্পড় দিলেই মরতে হইব? যে ভালোবাসতে পারে সে মারতে পারে না?ওর বাপে ওরে মারতো না? আমরা যে আজীবন শাশুড়ির মাইর খাইছি কই কোনোদিন তো কাউরে কই নাই।বাপের বাড়িতেও যাই নাই।আর আমার ঘরেই আনছিলাম সব জমিদারের বেটি।মোমের পুতুল সব।”
” ফয়সাল আসলেই মারছিল?”
” বান্দিয়ে যেই কাহিনী করছে হেদিন! ব্যাডা মাইনষের রক্ত গরম।মনে হয় একা ঘরে দিছে মাইর।মারলেও ক্যামন মারব, বড়জোড় দুইডা থাপ্পড়ই দিছে।এর চাইতে বেশি তো আর দেয় নাই।আমার ফয়সালরে চিনোস না তোরা? ঠান্ডা পোলা।এবার চিন্তা কর কত অতিষ্ঠ হইলে এই পোলায় বউ মারে!”
মাথা নাড়ে টুটুলের মা।
” ফয়সাল তো হাতের উপরেই মানুষ হইল।সামান্য দুই-তিনটা থাপ্পড় তো স্বামীরা দেয়ই।এর লেগাই মরণ লাগব? ”
রোমেলা বানুর কন্ঠে আসে বিকৃতি।চোখের কোণ ভিজে উঠে মুহূর্তেই।
” আমার পোলাডায় ক্যামন যেন হয়া গেছে।কথা কয় না,তাকায় না,রুমের বাইরে আহে না।মন চাইলে খামারে যায়, না মন চাইলে সারাদিন রুমে পইড়া থাকে।দিন-রাইত ঘুমায়।কথা গায়েই ছোঁয়ানো যায় না।ছ্যাৎ কইরা উঠে।আমার একটা কথাও শুনতাছে না।কি যে করি! বান্দির ঝি আমার পোলাডারে নষ্ট কইরা ছাইড়া দিছে।”
” থাক কান্দিস না।কয়দিন গেলে আরেকটা বিয়া করায়া….
অসম্পূর্ণ বাক্যটা শেষ করার আগেই থেমে যেতে হয় টুটুলের মাকে।ভিতর থেকে ভেসে আসছে ঝনঝনানি শব্দ।থালাবাসন ছুঁড়ে মারছে কেউ।রোমেলা বানুর মুখের রঙ উবে গেল।প্রায় উড়ে চলে গেলেন রান্নাঘরে।ফয়সাল দাঁড়িয়ে আছে।সামনে উল্টে আছে ভাতের থালা,তরকারির বাটি,পানির গ্লাস। ভাত,তরকারি, পানি ফ্লোরে গড়াচ্ছে।রোমেলা বানু হতভম্ব হয়ে গেলেন।অস্ফুটে প্রশ্ন করলেন,
” কী হইছে বাপ?”
” কবেরকার খাবার এগুলো?”
” কালকে দুপুরের।”
” তুমি না বাসি খেতে পারো না? এখন কীভাবে খাও? এতোদিন তো তোমার মুখে ঢুকতো না।বেলায় বেলায় রান্না করা লাগতো।এখন লাগে না?তোমার মুখে বাসি-টাসি গেলেও আমার মুখে যাবে না।আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।প্রতিবেলায় টাটকা খাবার চাই।খবরদার আর যেন আমার পাতে বাসি কিছু না দেখি।”
রাগে ফুঁসছে ফয়সাল।চোখ দুটো টকটকে লাল।ফর্সা মুখে লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে।কাজী বাড়ির ছোট ছেলেটা দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছে।আজকাল এই পাগলটাকেই ভীষণ ভয় পান রোমেলা বানু।
চলবে…