শুকতারা (দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ) পর্ব ৭

0
184

#শুকতারা ( দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ)
#পর্ব-৭
#হালিমা রহমান

তিনটে দিন সূচির ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই কাটলো।গোসল আর খাওয়া ছাড়া এ ঘরের কারো সাথে ওর কোনো সম্পর্কই নেই।অষ্টপ্রহর ঘুমিয়েছে।দুপুরের আগে লাবনী টেনে তুলে জোর করে গোসলে পাঠাতো।এরপরে পেটের টানেই চলেছে খাওয়া-দাওয়া।দিনে-রাতে তিন-চারবার উঠে ওয়াশরুমে যাওয়ার সময়টুকু ছাড়া বাকি একুশ-বাইশ ঘন্টা শুধু ঘুম আর ঘুম।জ্বর ছেড়েছে সূচির।গায়ের দাগগুলো আছে বটে তবে আগের মতো ব্যাথা নেই।অতিরিক্ত ঘুমাতে ঘুমাতে চোখ-মুখ দ্বিগুণ ফুলে গেছে।খানিকটা বিভৎস দেখায় এখন।দাঁত ব্যাথা কমেছে।কপালের কাটা দাগটা আছে তবে তাতে আর যন্ত্রণা নেই।
দুপুর সাড়ে বারোটা বাজে।মাথার কাছের জানালাটা খোলা।তাতানো সূর্যের আগুন গরম তাপ চোখে-মুখে বসছে।বাতাস নেই।মাথার উপরের ফ্যানটাও বন্ধ।লোডশেডিং হয়তো।ঘামে ভেজা শাড়ি লেপ্টে আছে সারা শরীরে।পিঠের নিচের চাদরটুকুও ভেজা ঘামে।সূচির ঘুম ভেঙেছে কিছুক্ষণ আগে।বাইরে যেতে ইচ্ছে করছে না বলে এতোক্ষণ গড়াগড়ি করেছে বিছানায়।আর পারলো না।এই রুমের পাশেই রান্নাঘর।চুলার তাপ ধেয়ে আসছে এদিকে।গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠে বসলো সূচি।দু-হাতে রগড়ে চোখ মেলতেই নজর গেল দরজার দিকে।পর্দার আড়ালে ছোট একজোড়া পা।কচ্ছপের মতো মাথা ঢুকিয়ে ওকেই দেখছে।চোখে চোখ পড়তেই অপ্রস্তুত হলো কচ্ছপের ছাও।ধরা পড়ার ভয়টুকু কেটে গেল সূচির ঘুম ভাঙার আনন্দে।গুটিগুটি পায়ে ঘরে ঢুকে খাটের কাছে এসে দাঁড়ালো।চোখ ঘুরিয়ে প্রশ্ন করলো, ” তুমি এতো ঘুমাও কেন?”

” আমার অনেক ঘুম পায় তাই।”

” তোমার চোখ-মুখ এতো ফোলা কেন?”

সূচি মাথা নাড়ে।অস্ফুটে উত্তর দেয়, ” জানি না তো।”

সূচির পায়ের কাছে বসলো শিলা।গোটা সূচিটাই তার কাছে আগ্রহের মানুষ।এতোদিন ঘরের কাছে ঘুরঘুর করেও ওর সাথে কথা বলতে পারেনি। আজ সুযোগ পেয়েছে।তাই আগ্রহভরে আবার প্রশ্ন করলো, ” তোমার বাড়ি কোথায়? তুমি কি চাচ্চুর সাথে থাকতে?”

প্রশ্নটা না বুঝেই উপর-নিচে মাথা নাড়ে সূচি।

” তুমি কি আবার ঘুমাবে?”

” হ্যাঁ।”

” এখনই?”

” জানি না।”

” তুমি দেখি কিছুই জানো না।এখন ঘুমিও না।এটা গোসলের সময়।তুমি গোসল করবে না?”

শিলার কথা শুনে গোসলের কথা মনে পড়লো সূচির।সত্যিই ওর গোসল করা উচিত।অনেক সময় নিয়ে সাবান ঘসে একটা শান্তির গোসল দেওয়া দরকার।এই তিন দিনেই শরীরের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।ময়লায় ভারী ভারী লাগছে নিজেকে।চুলগুলোরও অস্তিত্ব নেই।শ্যাম্পু করা ফরজ ওর জন্যে। কিন্তু কোথায় পাবে?ওর কাছে কিছুই নেই। ওর মতো ফকির বোধহয় এই মুহূর্তে পৃথিবীতে আর একটাও নেই।

” খালামনি তুমি ঘর থেকে বের হও না কেন?”

” তোমার আম্মু কোথায়?”

” আম্মু কাজ করে।”

” একটু ডেকে দেবে?”

মাথা নাড়ে শিলা।
” এখন আম্মুকে ডাকলে আম্মু আমাকে মারবে।বলবে, শিলা বিরক্ত করবি না।”

” যেয়ে বলো আমি ডাকছি।”

” আম্মু তো মাছ কাটে।চাচ্চু মাছ এনেছে।এত্তো বড় একটা রুই মাছ।আম্মুর হাতে ময়লা।”

সেকেন্ড কয়েক ভাবে সূচি।তারপরে আগ্রহী শ্রোতাকে বলে, ” তাহলে তোমার আম্মুকে একটু পরে আসতে বলো।বলবে আমি ডাকছি।ঠিকাছে?”

” তুমি কি আবার শুয়ে পড়বে?”

” হ্যাঁ।”

বিরক্ত হয় শিলা।এই কয়েকদিনেই সূচির মরণ ঘুমের সাথে পরিচিত হয়ে গেছে।সূচির ডান হাতের আঙুলগুলো টেনে বললো, ” ঘুমিও না প্লিজ।বাইরে চলো।বাইরে সবাই আছে।”

” না, আমি যাব না।”

” চলো না।চাচ্চু,ভাইয়া,আম্মু– সবাই আছে।”

জোর করে হাত টেনে নেয় সূচি।মাথা নেড়ে বলে,
” না, আমার ভালো লাগছে না।আমাকে বিরক্ত করো না পিচ্চি।”

” আমার নাম শিলা।তুমি চলো না,ভালো লাগবে।”
টানাটানি না থামিয়ে আরেকটু ঝুকে এলো শিলা।ফিসফিস করে বললো, ” তুমি কি আব্বুকে ভয় পাও? আব্বু বাসায় নেই,অফিসে গেছে।তোমাকে কেউ বকবে না।চলো না খালামনি,প্লিইইজ।”

শান্ত যে সূচিকে পছন্দ করে না তা এই কয়েকদিনে জানা হয়ে গেছে সবার। শিলার মনে হলো সূচি শান্তকে ভয় পায়। তাই জরুরি খবরটা দিতে ভুলল না।

বছর ছয়েকের মেয়েটা বেজায় নাছোড়বান্দা।হাজার নিষেধ সত্ত্বেও কথাই শুনলো না।অগত্যা সূচিকে উঠতে হলো।একটু হাঁটাচলা করা তার জন্যে দরকারি। এই কয়েকদিনে হাড়-মাংস লেগে গেছে একদম।পর্দা সরিয়ে বসার ঘরে পা রাখতেই চোখ গেল অন্তুর উপরে।সোফায় বসে মনোযোগ দিয়ে লাবিবের চিত্রকর্ম দেখছে। সূচিকে দেখতেই পেল না।চাচার মনোযোগ আকর্ষণের কাজটা করলো শিলা।লাফাতে লাফাতে কোলে ঝাঁপিয়ে পড়ে আনন্দে চিৎকার করে বললো, ” চাচ্চু দেখো খালামনিকে ঘুম থেকে তুলেছি।আসতেই চাইছিল না, আমি জোর করে এনেছি।ভালো করেছি না?”

সূচির ব্যাপারে শিলার আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। তাই তাকে ঘুম থেকে তোলার সম্পূর্ণ কৃতিত্ব নিজেই নিতে চাইলো।কিন্তু বাদ সাধল লাবিব।পেন্সিল থামিয়ে কপাল কুঁচকে বললো, ” মিথ্যা বলবি না শিলা।আমি একটু আগেই দেখলাম খালামনি চোখ খুলে রেখেছে।নিজেই উঠেছে ঘুম থেকে আর তুই বলছিস তুই তুলেছিস! মিথ্যুক।”

” এহ, তুমি জিজ্ঞেস করো।আমি না আনলে আবার ঘুমাতো।”

” অবশেষে তোমার ঘুম ভাঙলো! আমি ভেবেছিলাম তুমি এ জীবনে আর উঠবে না।ধন্য তুমি মেয়ে।”

অন্তুর একপেশে হাসির সাথে জড়ানো সামান্য খোঁচাটুকু নীরবেই মেনে নিলো সূচি।মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।বস্তুত সেই লঞ্চ থেকে নামার পর থেকে এতোদিন মুখোমুখি তো দূরে থাক দু-দন্ড দেখা-সাক্ষাৎ বা কথা-বার্তাও হয়নি।আজ প্রায় চারদিন পর আবার দেখা।দেখা হবে কীভাবে? সূচির মাথাটাই তো কাজ করছিল না এতোদিন।মন-প্রাণ-মস্তিষ্ক সব একসাথে জড়ানো ছিল।পুরো ভজকট অবস্থা।

” বসো সূচি।শরীরটা ভালো এখন?”

” জ্বি।”

” ব্যাথা কমেছে?”

” জ্বি।”

” ক্ষুধা পেয়েছে?”

” না।”

” কিছু লাগবে?”

” না।”

সূচির দৃষ্টি ফ্লোরে।বুড়ো আঙুলের নখ দিয়ে ফ্লোর খুটছে।বেশ রয়ে-সয়ে,ধীরে-সুস্থে পরের প্রশ্নটা করে অন্তু, ” বাড়ির কথা মনে পড়ছে? কথা বলবে? কল দেব ফয়সালকে?”

চমকে মাথা তুলে সূচি। মোটা ফ্রেমের চশমায় ঢাকা অন্তুর স্থির চোখ দুটোতে সরাসরি নজর পেতে ঘন ঘন মাথা নেড়ে বলে, ” একদমই না।প্লিজ অন্তু ভাই,ওরা আমাকে হাতে পেলে মেরে ফেলবে।”

” আচ্ছা।”

” ঐ আপুটা কোথায়?”

” বড় ভাবির কথা বলছো? রান্নাঘরে কাজ করছে।ঐ যে, এখান থেকেই দেখা যায়।তোমার পিছনে।”

রান্নাঘরটা গলির মতো।লম্বা কিন্তু চওড়া না।লাবনী মাছ ধুচ্ছে একমনে।সে শুচিবায়ুগ্রস্ত। ঘসে ঘসে মাছের চামড়া না তোলা পর্যন্ত ওর শান্তি হয় না।সূচির উপস্থিতি টের পেল না।পিছনে দাঁড়িয়ে সূচিই কথা বললো প্রথমে।

” আপু”

” কে, সূচিই? উঠে গেছো? কিছু লাগবে?”

” ঐ আমার একটু গোসল করা দরকার।”

” ওয়াশরুম খালি নাই?”

” আছে।আমার আসলে পরার জন্যে কিছু লাগতো।আমি গোসল শেষে নামাজ পড়তে চাচ্ছিলাম।”

হাত ধুয়ে উঠে দাঁড়ালো লাবনী।চিন্তিত গলায় বললো, ” শাড়ি দেওয়াই যায়।কিন্তু ব্লাউজেই সমস্যা।আমার এখনকারগুলো তোমার হবে না।অনেক আগের পুরোনো একটা আছে।পরবে?”

” পরব।”

” ওয়াশরুমে যাও।আমি দিচ্ছি সব।আর কষ্ট করে একটা কাজ করো, এতোদিন যেগুলো পরেছো ওগুলো একটু সাবানে ভিজিয়ে দিও।একটু পরে বুয়া এসে ধুয়ে দিয়ে যাবে।”

” আচ্ছা।”

সূচির আর ধোয়া মাছের সুব্যবস্থা করে ড্রয়িংরুমে এসে বসলো লাবনী।রান্না শেষ।এখন শুধু গোসল আর খাওয়ার ঝামেলা।বাচ্চাদেরকে তাড়া দিলো গোসলের জন্য।অন্তুর দিকে চেয়ে আদেশের সুরে বললো, ” বাজার-সদাই করার পাকনামি আর করবে না অন্তু।থাকছো বলেই যে বাজার করতে হবে ব্যাপারটা এমন না।”

” আমি আমার বাচ্চাদের জন্যে এনেছি।তুমি বলার কে?”

” হাহ! আমার মুখ বন্ধ করার জন্যে আর কিছু মাথায় এলো না?”

অন্তু মাথা নাড়ে।লাবনীর কথার বিপরীতে হাসে বটে কিন্তু তাকে ভীষণ অন্যমনস্ক দেখায়।চিন্তিত মুখের ভাষাটা জটিল।কপালে ভাঁজ।চিন্তাক্লিষ্ট মুখের পেশিগুলোতে নেই টানটান ভাব।

” কিছু ভাবছো অন্তু?”

” হুম।তুমি যত সহজভাবে বিষয়টা নিচ্ছ,ব্যাপারটা ততো সহজ না ভাবি।”

” কোনটা? ”

” এই যে সূচির বিষয়টা।ওকে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া উচিত।”

” আমিও জানি কিন্তু কে নিয়ে যাবে? তুমি?”

” নিতেই পারি।কিন্তু সজ্ঞানে ওকে নেওয়া যাবে না এটা একেবারে নিশ্চিত।ফোন করার কথা শুনেই মেয়ে আঁতকে উঠেছে।”

” তাহলে আর বলে কী লাভ? টানাটানি করে নিশ্চয়ই একজনকে নিয়ে অন্য জেলায় যাওয়া যায় না।”

” ফয়সালকে ফোন দিলেই পারতাম।ওর বউ ও এসে নিয়ে যাক।”.

কপাল কুঁচকে ফেললো লাবনী।বিতৃষ্ণা ভরা গলায় বললো, ” ঐ হারামজাদা কে? প্রাক্তন ছাড়া আর কিছু না।তুমি ওকে ফোন দেবে কেন? দিলে সূচির বাবা-মাকে দিতে পারো।কিন্ত ভাই আমি চাচ্ছি না এখানে কোনো সিনক্রিয়েট হোক।তুমিও যেমন এখানে নতুন তেমনি আমিও নতুন।মাত্র ছ’মাস হয়েছে এসেছি।এখনই এখানে কোনো মেয়েঘটিত ব্যাপার ঘটুক তা চাচ্ছি না।বুঝতেই পারছো ইমেজের একটা ব্যাপার আছে।”

এই একই কথা সেদিনও বলেছিল লাবনী।দিন দুই আগে হুমায়রা কল করেছিল।নানা ব্যস্ততায় অন্তুর সাথে যোগাযোগ করতে পারেনি।ব্যস্ততা সেড়ে কল করলো।ওর কাছেই উদয়পুরের সব ঘটনা জানা গেল।সূচির মিথ্যা আত্মহত্যার খবরটাও মিললো।অন্তুর জ্বিভ ছটফট করছিল সূচির খবর দেওয়ার জন্যে।কিন্তু বাদ সাধলো লাবনী।ও কিছুতেই বলতে দিলো না।এই এক কথার সাথে আরেকটা প্রশ্নের লেজুর জুড়ে দিলো।সূচির মানসিক অবস্থা এখন নাজুক।এই অবস্থায় ওকে কে নেবে সুদূর ভোলা অবধি? টানা-হেঁচড়া করেও যদি বা নেওয়া সম্ভব কিন্তু এই টানাটানির খেলায় নামবে কে? অন্তু? ভাবতেই গা রি রি করে ওঠে অন্তুর।এও কি সম্ভব? মেয়েটা কি কোরবানির গরু যে গলায় রশি ধরে টেনে নিয়ে যাবে? অসম্ভব।

” আবার কী ভাবছো?”

” ভাবছি আমাদের ভাইয়ার কথা।শান্ত ভাইকে আমরা শুধু শুধুই দোষ দেই বুঝলে।ওর মতো চোখ বুজে থাকাই ভালো।চোখ খুলেছো তো মরেছ।সবসময় মানবিকতা দেখাতে নেই।এই আমাকেই দেখো।আফসোসে আমার এখন হাত কামড়াতে ইচ্ছা করে।কী করব ওকে নিয়ে ভাবি? আমি তো কোনো আশার আলোই দেখছি না।”

অন্তু সত্যিই চিন্তিত।ওর অসহায় মুখ দেখে কষ্ট হয় লাবনীর।কিছুটা স্নেহ জেগে উঠে একই সাথে।আশ্বাস দেওয়ার ভঙ্গিতে বলে, ” ভেবো না।সব ঠিক হয়ে যাবে।”
______________________________

পানি ঢালার পর থেকেই শরীরটা জ্বলছে সূচির।বেশি না অবশ্য, সামান্য।তবে অন্তর্জ্বালাটা অনেক।কারো কাছে বলার মতো না।নামাজের বিছানায় বসে কাঁদে আর কাঁদে।ভূমির কথা মনে পড়ছে।ইশতিয়াক, ভাবি মহল, বাড়ির মানুষ,মা আর ফেলে আসা উদয়পুরের কথা মনে পড়ছে।সেই উদয়পুর,যাকে ছেড়ে সে কোথাও একদিনের জন্যেও থাকেনি। এতোদিন পর সে নিজের ভবিষ্যৎ ভাবে,নিজের বর্তমান ভাবে, ভাবে নিজের অপরিচিত আশ্রয়ের কথা।মাথাটা কাজ করছে।সব তলিয়ে দেখে সূচি।মরার চেয়ে বেঁচে থাকার লজ্জাটাই তার প্রাণে বাজে বেশি।কোন এক অপরিচিত পরিবারে ভেসে এসেছে ও! অন্তু ছাড়া কাউকে চেনে না।কাউকে ভরসা করার সাহস হয় না।অথচ এই অবিশ্বাসের মাঝেই ও থাকছে।অদ্ভুত।সেই অলক্ষুণে রাতে অন্তু ছাড়া আর কারো হাতে পড়লে কেমন হতো? যদি অপরিচিত বিলে একটা অঘটনই ঘটতো! তখন, কী করতো সূচি? ভয়ে গায়ের পশম দাঁড়িয়ে যায় সূচির।পরক্ষণেই আবার ভয় কেটে যায়।কী হতো?সম্ভ্রম হারিয়ে বড়জোর মরে যেতো।বেশ হতো তবে।একদিকে মৃত্যুও হতো আরেকদিকে আত্মহত্যার দায় থেকেও মুক্তি পেতো।অন্তত পরগাছার মতো বেঁচে থাকার চেয়ে ঢের ভালো ছিল তা।ফিরে যাওয়ার কথা ভাবতেও পারে না সূচি।আবার স্বর্ণলতার মতো বেঁচে থাকার যন্ত্রণাও সহ্য হয় না।উভয় সংকটে মাথা ঘুরে সূচির।পেট গুলিয়ে বমি আসে।অস্বস্তিরা আস্তানা গাড়ে সারা শরীরে।ভালো চিন্তারা লোপ পায়।প্রভুর দরবারে আগের মতোই দু’হাত তুলে দোয়া করে,
” আমাকে তুমি মৃত্যু দাও খোদা।আমার প্রাণ নিয়ে আমাকে বাঁচাও।”

শুয়ে-বসে সময় কাটালেও আগের মতো ঘুমিয়ে গেল না সূচি। আজ আর ঘুম আসছে না।শিলা ওর বিছানায় ঘুমিয়ে আছে।মেয়েটা দারুন মিশুক।ভাব জমাতে চাচ্ছে।আগের অবস্থা থাকলে হয়তো সূচিও এতোক্ষণে ভাব জমিয়ে ফেলতো।কিন্তু এখন পারছে না।জানালার কাছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিষন্ন বিকাল দেখছিলো।দূষিত শহরের ব্যস্ত বিকাল।এমন সময়ে দরজার ওপাশ থেকে ভেসে এলো অন্তুর স্বর।
” সূচি ঘুমিয়েছ?”

” না, অন্তু ভাই।”

” আসব?”

” আসুন।”

শাড়ি গুছিয়ে ঠিক করে দাঁড়ালো সূচি।অন্তু কিন্তু বসলো না।একটু ঢুকে খাটের উপরে দু-তিনটে শপিং ব্যাগ রেখে বললো, ” এগুলো তোমার।একটু ঢিলে হবে হয়তো।কষ্ট করে মানিয়ে নিও।”

হতভম্ব সূচিকে ঘরে রেখেই ফের বেরিয়ে গেল অন্তু।বাইরের একটা চেয়ারেই লাবনী বসা।কৌতুকে নাচে তার দু’চোখ।

” কী ছিল?”

” ড্রেস।আশ্রয় আর খাবারের পাশাপাশি জামা-কাপড়ও লাগে।যেহেতু আমি সাথে এনেছি সেহেতু দায়িত্বটা আমার উপরেই বর্তায়।”

” বাব্বাহ।তোমার মতো যত্নশীল বন্ধু ঘরে ঘরে জন্মাক।”

” আমি মোটেও ওর বন্ধু না ভাবি।”

” তাহলে কী?”

দীর্ঘশ্বাস ফেলে অন্তু।মিইয়ে যাওয়া গলায় বলে,
” আমি ওর অঘোষিত অভিভাবক।”

চলবে…..

(রিচেক করার সময় পাইনি।টাইপিং মিস্টেক থাকতে পারে হয়তো।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here