#শিশির_বিন্দু❤️
লামিয়া সুলতানা সিলভী ( লেখনীতে)
পর্বঃ১৭ & ১৮
রাতের নিস্তব্ধতায় শহরের বুকে নেমে এসেছে এক সিগ্ধতার ছায়া! আজ আকাশে যেনো পূর্ণ তিথি চন্দ্র ওঠেছে! চারদিকে অসংখ্য তারার মেলা,, জ্বলজ্বল করা তারাগুলোর আলোকচ্ছটা জানালা ভেদ করে এসে পড়ছে এক রমনির মুখমণ্ডলীতে! এতে রমনীর রূপ যেনো আরো বেশি উপচে পড়ছে! তার এই মুগ্ধতা নিস্তব্ধে শুষে নিচ্ছে তার পাশে শুয়ে থাকা যুবকটি! মেয়েটি কি বলছে কিচ্ছু তার কান অবদি পৌঁছাচ্ছে না, এক ধ্যানে বিন্দুর দিকে শিশির তাকিয়ে আছে! এতে বিন্দু যেনো জ্বলে ওঠে,,,
বিন্দুঃ কি দেখছেন এভাবে? আমি কিছু বলছি, আপনার কি মনে হয় “রিভেঞ্জ অফ ন্যাচার” শুধু আমার ক্ষেত্রেই হয়েছে? আপনে এর ভুক্তভোগী নন?
শিশিরঃ শশশ,,,তুমি এতো সুন্দর কেনো বিন্দুবালা?
বিন্দুর এই মুহূর্তে শিশিরের চুলগুলো ছিড়ে টাকলা বানিয়ে দিতে ইচ্ছে করতে নয়তো বারো তলা বিল্ডিং থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে! এতো সিরিয়াজ মুহূর্তে মানুষ এতোটা বেখেয়ালি কেমনে হয়?
শিশিরঃ
” হে নারী তুমি মোরে করেছো বরণ্যে
আবার করেছো আমার বণ্যে
তোমার তরে আমার সকল চিহ্ন,
গগন কিনার হতে সুদূর অরণ্য!
তোমার ভাবনার ঘ্রাসে
আমি অতুলনীয়!
আবার…………..
করেছো আমায় দগ্ধ
তোমার নয়ন তাঁরা সর্বহারা
সর্ব বিনাশে শারদীয়!”
________( মাহাবুব আলম)
বিন্দুঃ আপনার মাথা ঠিক আছে?
শিশিরঃ ( বিন্দুর গালে হাত দিয়ে) তুমি-আমি কতটা দিন পর আবার পাশাপাশি,, দীর্ঘ সাত বছর পর আমরা এতোটা কাছাকাছি! তোমার মনে আছে বিন্দু?আমাদের রিলেশনের তিনমাস পর তোমার জন্মদিন ছিলো! তখন আমি ঢাকায় ছিলায়,, প্রায় ১ মাস আমাদের দেখা হয়নি! তারপর তোমার বার্থডের দিন রাত ১২ টায় রাইমা আর শিফার সাহায্যে তোমার সাথে দেখা করি! আর এই ১মাস পর যখন আমি তোমার সাথে দেখা করার জন্য ঢাকা থেকে নারায়নগঞ্জ এসেছিলাম, ওইদিন তুমি আমাকে জরিয়ে ধরে প্রায় ৩০ মিনিট কেঁদেছিলে! জানো তখন আমার কতটা খারাপ লেগেছিলো? মনে হচ্ছিলো আমার ভেতর থেকে জান বের হয়ে আসবে তোমার কান্না দেখে!
বিন্দু শিশিরের থেকে ছিটকে দূরে সরে যেয়ে ওঠে বসে..
বিন্দুঃ আমি ওই রুমে যাচ্ছি! ( চলে যাচ্ছিলো)
শিশিরঃ ( হাত ধরে) প্লিজ বিন্দু, আর একবার আমায় ওভাবে জরিয়ে ধরবে? সবকিছু ভুলে আমরা আবার সবটা নতুন করে শুরু করতে পারি না? (ওঠে বসে)
বিন্দুঃ ( হাত ছাড়িয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে) কি শুরু করবো? আপনে আমার সাত বছর আগের সময়টায় যেয়ে আমার ক্ষতগুলো ঠিক করে দিতে পারবেন? আমি তখন কি অবস্থায় ছিলাম জানেন,, আমার পরিবারকে কতকিছু সাফার করতে হয়েছে, সেগুলো ঠিক করে দিতে পারবেন? পারবেন না,, কারণ মানুষের অতো বড় ক্ষমতা নেই! জেনে রাখুন, আমি মানুষিক রোগী ছিলাম,, সবাই আমাকে পাগল উপাধি দিতো! আমার বাবা- মা আমাকে নিয়ে বাহিরে বের করতে পারতো না, নানান জনের কাছে নানান কথা শুনতে হতো তাদের! আমি মানষিক হসপিটালে ভর্তি ছিলাম! কিশরীর জীবনে প্রথম প্রেম হারালে তার কতটা কষ্ট লাগতে পারে, তা আপমার মতো প্রতারকের বোধগম্য হবে না! ওই সময় রুদ্র আমার পাশে না থাকলে এতোদিনে আমি বেঁচে থাকতে পারতাম না! আমার ফ্যামিলির কাছে আজও অজানা আমি কেনো ওমন করেছিলাম! আপনাকে ভালোবেসে আমি এতোই অন্ধ ছিলাম যে আপনার মুখশের আড়ালে থাকা প্রতিনিয়ত করা অন্যায় আমি ধরতে পারি নি! আপনার একটা প্রতারক, সরে যান আমার সামনে থেকে!
শিশিরঃ সরি বিন্দু,, কিন্তু আমি কি করেছিলাম সেটা তো বলবে? কেনো চলে গিয়েছিলে? হ্যা এটা মানলাম মেঘলার প্রতি আমি লাস্টের দিকে ওইক হয়ে পড়েছিলাম! তাই বলে, আমি তোমাকে ছাড়ার কথা কল্পনাও করিনি! তোমাকে ইগনোর করা, তোমার কাছে থেকে সরে যাওয়া সব কিছুই আমায় প্রতিমুহূর্ত বলতো আমি অনেক বড় ভুল করেছি! তাই তো আমি সেদিন তোমার আর আমার কথা আমাদের ওডিটোরিয়ামে এনাউন্সমেন্ট করতে চেয়েছিলাম! তুমি আসলে না কেনো সেদিন? তারপরের দিন তোমার হলে খোঁজ নিতেই জানতে পারলাম তুমি হল ছেড়ে দিয়ে নারায়নগঞ্জে চলে গেছো! তোমার নাম্বার বন্ধ, সব রকম কন্টাক্ট অফ! তারপর খোজ নিবো আর আমার এক্সমের রুটিন হয়ে যায়! নারায়নগঞ্জে আমার ফ্রেন্ডের দিতে তোমার খবর নিতে ওরা জানায় তুমি ঠিক আছো! তাই আর আমি যাই নি ভেবেছিলাম এক্সাম শেষেই তোমার বাসায় বিয়ের প্রপোজাল পাঠাবো! ওই সময় আমার কি অবস্থা হয়েছিলো তা শুধু মেঘলা দেখেছে! ও বলেছিলো, তুমি আমায় ঠকিয়েছো তাই তোমার খোঁজ না নেওয়াই ভালো, কিন্তু আমি হার মানিনি! আমার এক্সামের মাঝেই আবার খোজ নিয়ে জানতে পারলাম তোমরা বাসা ছেড়ে দিয়েছো! আমরাও তখন গ্রামে থাকতাম তাই তোমার খোজ দেওয়ার তেমন কেও ছিলো না! শুধু রাজিবের বাসা ছিলো শহরে, ওর মাধ্যমেই যতটুকু জানার জেনেছি! দেন, আমার এক্সাম শেষে, তোমাদের ভাড়া বাসায় খোজ নিতেই জানলাম তোমরা কোথায় চলে গেলো তারা কেও জানে না! পুরো নারায়নগঞ্জে তোমাকে খুযে আমি দিশেহারা হয়ে যাই! তোমার গ্রামের বাড়ির ঠিকানাও আমি জানতাম না! শিফার কাছে থেকে গ্রামের ঠিকানা নিয়ে সেখানেও গিয়েছিলাম কিন্তু তোমাদের বাড়ি তালা দেওয়া ছিলো! তার কয়েকমাস পর রেজাল্টের দিন জানতে পারলাম তুমি বিয়ে করেছো! বিশ্বাস করবে না বিন্দু আমার মনে হলো সেই মুহুর্তে আমি নিজেকে শেষ করে ফেলি! আমার তখন মেঘলার কথাগুলোই ঠিক মনে হয়েছিলো, তুমি আমাকে কখনো ভালোবাসোনি! তাও আমি নিজেকে দোষ দিয়েছি, আমার ইগনোর হয়তো বেশি ছিলো জন্যই তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গেছো! তোমার বিয়ের কথা শুনেই আমি জেদ করে মেঘলাকে বিয়ে করি!
বিন্দুঃ ( তাৎচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে) ভালো করেছেন,, এছাড়া আপনার আর কোন উপায় ছিলো না! সবকিছুই বললেন যেটা মেইন সেটাই বললেন না!
শিশিরঃ মানে?
বিন্দুঃ কিছুনা,, ঘুমিয়ে পড়েন!
শিশিরঃ বিন্দু, ধৈর্যের একটা সীমা থাকে! আমি পুরো একমাস ধরে জানতে চাইছি ওইদিন কেনো আসোনি? বলছো না কেনো তুমি?
বিন্দুঃ,,,,,,,,,
শিশিরঃ এবার না বললে কিন্তু সত্যি খারাপ হয়ে যাবে বললাম!
বিন্দুঃ এই কি বলবো হ্যা? আপনে নিজে জানেন না, আবার আমাকে জিজ্ঞেস করে? আপনে তো ক্যারেক্টারলেজ ছিলেন! আপনার মন এতোই বড় যে, সেখানে আমাকে দিয়েও জায়গা পরিপূর্ণ হয়নি আবার মেঘলাকে দিতে হয়েছে! আর মেঘলাকে এতোই ভালো বেসেছিলেন যে, একদম নিজের বাচ্চার মা বানিয়ে দিলয়েছিলেন!
শিশিরঃ ওয়াট? এই মেয়ে তোমার মাথা ঠিক আছে? কি যা-তা বলছো?
বিন্দুঃ আমি জানতাম আপনে স্বীকার দিবেন না,,তাই বলতেও চাইনি!
বিন্দুর কথা শুনে শিশিরের মাথা ঘুরছে, ও বিয়ের আগে কবে মেঘলার বাচ্চার বাবা হলো! মেঘই তো ওদের প্রথম সন্তান তাহলে সাত বছর আগে আবার কিসের বাচ্চা? বিন্দুর নিশ্চই আবার মাথা খারাপ হয়েছে!
শিশিরঃ নিজের মতো উল্টাপাল্টা একটা ভেবে নিবে আর আমি স্বীকার দিবো?
বিন্দুঃ নিজের মতো কেনো হবে? বিশ্বাস করার মতো যথেষ্ট প্রমাণ মেঘলা দেখিয়েছিলো! তখন মেঘলা দুই মাসের প্রেগন্যান্ট ছিলো! আরো অনেক অনেক প্রমাণ ছিলো,, আপনার আর মেঘলার অনেক ঘনিষ্ট পিকও ছিলো! মেঘলা আমার কাছে এসে পায়ে ধরে অনুরোধ করেছিলো, আমি যেনো আপনাদের জীবন থেকে সরে যাই! নিশ্বাপ বাচ্চার মুখের দিকে তাকিয়ে! আমার জন্য আপনে মেঘলাকে এক্সসেপ্ট করতে পারছেন না! আর কি জানতে চান আপনে? বেইমানি তো শুধু আমার সাথেই করেন নি মেঘলার সাথেও করেছিলেন! আপনার মতো সন্তান জন্ম দিয়ে আপনার বাবা-মা পাপ করেছে! আপনে,,( থেমে যায় শিশিরের চিৎকারে)
শিশিরঃ বিন্দু,,, অনেক বলেছো! আমাকে এসব বলার সাহস পাচ্ছো কিভাবে তুমি? এসব লেইম প্রুভের জন্য তুমি আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলে? এই ভালোবেসেছিলে আমায়? কেও একজন তোমায় বানিয়ে বানিয়ে বলবে আর তুমি সেটা সত্যি ভেবে নিবে! আমার ওপর কোন বিশ্বাস ছিলো না? আমাকে এসে জিজ্ঞাস করতে পারতে না? মেঘলা সত্যিই ঠিক বলেছিলো, তুমি আমাকে কখনো ভালোই বাসোনি তাই এভাবে চলে যেতে পেরেছিলে! আমার মাথায় আগুন বের হচ্ছে,, এসবও আমাকে শুনতে হবে এতোদিনে এসে!
বিন্দুঃ সত্যি কথা শুনতে সবার মাথায়ই আগুন বের হয়!
শিশিরঃ চুপ একদম উলটো-পালটে কথা বলবে না! পুরো কাহিনী ক্লিয়ার করো!
বিন্দু একটা জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করে,,,
বিন্দুঃ সেদিন যখন হোস্টেলে শুয়ে শুয়ে আমি আর রুহানা আপনার জন্মদিনের প্লান করছিলাম কিভাবে সারপ্রাইজ দিবো তখন আমার ফোনে একটা কল আসে,, তাকিয়ে দেখি মেঘলা আপুর নাম্বার! রুহানা কে বললাম কি করবো,,, বলে রিসিভড কর, করে শোন কি বলতে চায়! তারপর আমি রিসিভড করতেই মেঘলা আপু বলে,,, সে আমাদের হোস্টেলের নিচে ওয়েট করছে, খুব জরুরি দরকার আছে আমার সাথে আমি যেনো এমিডিয়েটলি নিচে যাই! তারপর আমি রুহানা কে নিয়ে নামলাম,,, দেন আপুকে দেখলাম বেশ এলোমেলো, হয়তো কোন বড় ধরনের কিছু নিয়ে অনেক চিন্তায় আছে! তাকে কেমন একটা দেখাচ্ছে! আমি জিজ্ঞাস করতেই বললো আমার সাথে একা কথা বলবে, রুহানাকে চলে যেতে বলে! পরে রুহানা চলে যায়নি তবে আমাদের থেকে বেশ দূরে যায়! তখন মেঘলা আপু বলে___
#অতীত—-
মেঘলাঃ বিন্দু তোমাকে যে কথাটা কিভাবে বলবো বাট বিশ্বাস করো আমার এতে কোন দোষ ছিলো না! ওই ই জোর করে আমাকে– ( এইটুকু বলেই কাঁদে)
বিন্দুঃ আপু কি হয়েছে আপনার? কাঁদছেন কেনো? আর কার কথা বলছেন?
মেঘলাঃ বিন্দু আমি কনসিভ করেছি দুই মাস হলো,, বাট আমি জানতাম না! কিছুদিন হলো শরীর ভালো না তাই চেকয়াপ করাতে ডক্টরের কাছে গিয়েছিলাম আর জানতে পারলাম আমি মা হতে চলেছি! ( প্রেগন্যান্টস্যার রিপোর্ট দিয়ে)
বিন্দুঃ মানে? (অবাক হয়ে রিপোর্ট নেয়)
মেঘলাঃ হুম,, আর এই বাচ্চার বাবা হচ্ছে শিশির! আমদের ব্যাচ ফাইনাল ইয়ারের জন্য লাস্ট বারের মতো একটা ট্যুরে গিয়েছিলাম ছয় মাস আগে মনে আছে? কক্সবাজার সাত দিনের জন্য? তখন একদিন শিশির আমাকে খুব কাছে ডেকেছিলো! আমি যেতে চাইনি বলে ভয় দেখিয়েছিলো আমার বদনাম করে ছাড়বে আর আমাকে এই শহরে থাকতে দিবে না! তাই ভয়ে আমি ওর এসব কাজে হ্যা সম্মতি জানাই! বিশ্বাস না হলে পিকগুলো দেখো!
বিন্দুর ঠিক এই মুহূর্তে মনে হচ্ছিলো ও এসব দেখার আগে মরে কেনো গেলো না! শিশির ওকে তাই এভাবে ঠকাবে? ও তো শিশিরকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে, তাহলে? মেঘলা শিশিরকে পছন্দ করতো, হয়তো শিশিরও কিছুটা সাই দিয়েছিলো তাই বলে শিশির এতোটা নিচে নামতে পারে? বিন্দু ভেবে পাচ্ছে না, ও মানুষ চিনতে এতোটা ভুল কিভাবে করলো? টুপটুপ করে বিন্দুর চোখের পানি গড়িয়ে পড়ছে নিচে,, মনে হচ্ছে কেও হয়তো ওর বুকে খুব শক্ত কিছু দিয়ে আঘাত করেছে! ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে, ওর জান এখনি বের হয়ে যাবে!
মেঘলাঃ পিকটা দেখো বিন্দু…
বিন্দু তাকিয়ে দেখে,, দুপুরে রৌদের আলোয় সমুদ্রের বালিগুলো চিকচিক করছে! আর শিশির বালির ওপর চোখ বন্ধ করে মাথার নিচে দুই হাত দিয়ে শুয়ে আছে! আর তার খুব নিকটেই মেঘলা বসে আছে,, দেখে মনে হচ্ছে দুই কপত-কপতী সমুদ্রে হানিমুনে গিয়েছে! এটা দেখে বিন্দুর চিৎকার দিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছিলো! চোখের পানিগুলো অনবরত নিচে পরছে!
মেঘলাঃ এই পিকটা দেখো,, আমি শিশিরের পিঠ ঘেষে বসে আছি! তখন ওদের ব্যাচেলর পার্টি চলছিলো আমরা মেয়েগুলো জোর করে ঢুকে পড়ি!
মেঘলাঃ আর এইযে ওইদিনই ও আর আমি একসাথে রাত কাটাই,, দেখো!
বিন্দু দেখে চোখ কপালে,, ২ তা ছবি তে ১ টা তে ছিলো মেঘলা শিশির জরিয়ে ধরে লিপ কিস করছে আর ১ টা তে ছিলো মেঘলার বুকের ওপর শিশির মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে! মোট ৪ টা ছবি দেখেই বিন্দুর মাথা ঘুরে নিচে পড়ে যায়! ওকে দেখে রুহানা দৌড়ে এসে বিন্দু কে ধরে! মেঘলা বলে ওঠে,,,
মেঘলাঃ সরি বিন্দু,, আমি তোমাকে হার্ট করতে চাইনি, আমি জানি তুমি শিশিরকে কতটা ভালোবাসো! কিন্তু কি করবো বলো? আমিও যে নিরুপায়! আমার ফ্যামিলি অনেক দরিদ্র,, আমাকে কষ্ট করে ঢাকায় প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়েছে! এখন যদি জানতে পারে তাদের মেয়ের এই অবস্থা আমার বাবা মারা যাবে,, এমনিতেই বাবা হার্ট এর্টাকের রোগী! আমারই এখন সুইসাইড করতে হবে,, আমি আমার এই মুখ আমার ফ্যামিলিতে দেখাতে পারবো না!
রুহানাঃ আপনে কি করবেন না করবেন সেটা বিন্দুকে কেনো বলছেন, আপু? সেটা আপনার একান্তই ব্যাক্তিগত ব্যাপার! (নিচে বিন্দুর পাশেই বসে বিন্দুকে এক হাতে জরিয়ে ধরে আরেক হাত পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো)
বিন্দুঃ শিশির এই বেবীটার কথা জানে?
মেঘলাঃ হুম জানিয়েছি,, কিন্তু ও বলেছে আমাকে কোন মতেই এক্সসেপ্ট করতে পারবে না! আমি যেনো বেবীটা এ্যাবশন করাই! আর এ সবকিছু তোমার জন্য বিন্দু,, শিশির তোমার জন্য আমাকে আর আমার বেবীকে একসেপ্ট করবে না! আমরা গরীব, আমাদের সাথে যা খুশী করাই যায় তাই আমাদের সাথে কি নিজের জীবন জুরবে কেও? ও আমাকে এভাবে ঠকাবে আমি ভাবতেও পারিনি,, নাইলে ওর মতো ফালতু ছেলের সাথে কখনোই ফ্রেন্ডশিপ করতাম না! কিন্তু বিন্দু তুমি তো বুঝবে একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়ের কষ্ট, বলো!
বিন্দুঃ (ওঠে দাঁড়িয়ে) এখন আমাকে কি করতে বলেন?( চোখের পানি মুছে)
মেঘলাঃ তুমি প্লিজ আমার আর শিশিরের মাঝে থেকে সরে যাও! অন্তত বেবীটার কথা চিন্তা করে প্লিজ বিন্দু, তোমার পায়ে ধরি!( পা ধরে নিচে বসে পড়ে) তুমি অনেক ভালো, ওর মতো ফালতু ছেলের সাথে থেকে নিজের জীবন নষ্ট কেনো করবে? আর আমার জীবন তো নষ্ট হয়েই গেছে!
বিন্দুঃ ( মেঘলা কে পায়ের থেকে তুলে) কি করছেন আপু? আপনে আমার বড়, আমার সম্মানের জায়গায়! আর হ্যা আমি চলে যাবো আপনাদের জীবন থেকে অনেক দূরে! আপনার বা আপনার বেবীর কিছুই হবে না!
রুহানঃ বিন্দু কি বলছিস এগুলো? ভেবে বলছিস তো? একবার শিশির ভাইয়ার সাথে কথা বলে দেখ!
মেঘলাঃ না না,, বিন্দু প্লিজ এই কাজটা করো না! ও যদি জানতে পারে আমি তোমায় সব বলে দিয়েছি, তাইলে আমাকে জানে মেরে দিবে আর আমার বাচ্চাটাকেও! তুমি কথা দাও তোমার ওর জীবন থেকে চলে যাওয়ার পিছনের কারণ যে আমি সেটা ওকে কখনো বলো না!
বিন্দুঃ হ্যা আপু, আপনে একদম চিন্তা করবেন না! ভালো থাকবেন আপনারা! আমি খুব তাড়াতাড়িই এই শহর ছেড়ে চলে যাবো, শিশির আমার খোঁজ পাবে না!
মেঘলাঃ শুধু এখান থেকে না বিন্দু! তোমার বাড়িও তো নারায়নগঞ্জে আর ওর বাড়িও! প্লিজ একটু সাবধানে থেকো, ও যেনো তোমাকে না খুজে পায়!
বিন্দু আর কিছু না বলে দৌড়ে ওপরে চলে আসে আর ওর পেছন পেছন রুহানা যায়! আর মেঘলা একটা পৈশাচিক হাসি দিয়ে, মনের সুখে গান গেয়ে ওর হোস্টেলে যায়! আর যাওয়ার সময় পিক চারটা ছিড়ে কুটিকুটি করে ড্রেনের মধ্যে ফালায় দেয়! এই ছবিগুলো আর দরকার নেই, যে দরকার ছিলো সেটা হয়ে গেছে! আর এখন এই ছবি সাথে থাকা মানেই বিপদ!
#বর্তমান—
তারপরের দিনই আমি হোস্টেল ছেড়ে দেই আর ব্যাগপত্র একদিনে গুছিয়ে আপনার বার্থডের দিন সকালে নারায়নগঞ্জে চলে আসি!
শিশির যেনো এতোক্ষণ জমে পাথর ছিলো,, মেঘলা শেষে কি না ওর এতো বড় ক্ষতি করলো? যে মেঘলা কে ও এতো বিশ্বাস করেছিলো,, মেঘলার জন্য বিন্দুকেও ইগনোর করেছিলো! বিন্দু চলে যাবার পর মেঘলাকে ওর কষ্টগুলো শেয়ার করতো আর সেই মেঘলাই কিনা ওর কষ্টের একমাত্র কারণ ছিলো? মানুষ এতোটা খারাপ কি করে হতে পারে? সে জন্যই হয়তো আল্লাহ তায়ালা ওকে শাস্তি দিয়ে আবার বিন্দুকে শিশিরের জীবনে দিয়েছে! আল্লাহ যা করে মঙ্গলের জন্যই করে!
শিশিরের চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে! বিন্দুরও পুরানো কথা মনে করে নিজেকে সামলাতে পারছে না! কখন বিন্দুর চোখ দেখে দুফোটা পানি গড়িয়ে পড়েছিলো সেটা ও নিজেও খেয়াল করে নি! বিন্দু অন্যদিকে তাকিয়ে চোখের পানি মুছছিলো!
শিশিরঃ ( বিন্দুকে কাছে টেনে কোলে বসিয়ে পেছন থেকে জরিয়ে ধরে) একবারের জন্য হলেও আমাকে সবটা জানানো উচিত ছিলো বিন্দুবালা! হয়তো আমাদের জীবনটা এতোটা বিষাদময় হতো না,, একটু হলেও সহজ হতো! মেঘলার মেন্টালিটি এতোটা লেইম ছিলো আমি ভাবতেও পারিনি! তাই আমি শাস্তি দেওয়ার আগেই স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা নিজে শাস্তি দিয়েছে! ওর পাপের বোঝা অনেকটা বেড়ে গিয়েছিলো! মা-বাবার সাথেও ভালো ব্যাবহার করতো না! আম্মু আমাকে বলতে আসলে আমি আরো আম্মুকে ভুল বুঝতাম, আমি রিলেশন করে বিয়ে করেছি হয়তো এই জন্য আমার বউকে তারা মেনে নিতে পারেনি! আমি অন্ধ ছিলাম তখন আর মেঘলা আমাকে বাবা-মা সম্পর্কে উল্টা-পাল্টা বোঝাতো! ( একটা জোরে শ্বাস নিয়ে)
বিন্দু চোখের পানি মুছে, আর নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করে…
বিন্দুঃ মা-বাবার সাথে আপনার বউ কি ব্যাবহার করেছে সেটা আপনাদের ব্যাক্তিগত ব্যাপার, সেটা আমাকে শুনিয়ে লাভ নেই! আমি যতদিন বেঁচে আছি আমার আম্মু-আব্বু আমার কাছে যা ছিলো রুদ্রের আম্মু-আব্বুও তাই আর এখন আপনার আব্বু-আম্মুও আমার কাছে তাই থাকবে! ছাড়েন আমাকে…
শিশিরঃ এতো ছটফট করছো কেনো? আমি না ছাড়লে আমার থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারবে?
বিন্দুঃ আর আপনাকে কি জানাতাম? আপনে আমাকে কি বলতেন? আপনে কিভাবে বাবা হয়েছেন সেটা?
শিশির এবার রেগে গিয়ে,,
শিশিরঃ জাস্ট সেট আপ বিন্দু,,অনেকক্ষণ হলো তোমার আলতু ফালতু কথা শুনে যাচ্ছি, কিচ্ছু বলছি না! তোমার কি মনে হয়? আমি এতো বড় একটা পাপ কাজ করবো? মেঘই আমাদের প্রথম সন্তান ছিলো! আমি হয়তোবা তোমার চোখে ভালো ছিলাম না কিন্তু আমি এতোটাও খারাপ ছিলাম না যে এসব ডার্টি কাজের সাথে আমি জরিয়ে থাকবো! আমার যদি ফিজিক্যাল এটাচমেন্টের ওপর এতোই ঝোক থাকতো তাইলে আমি বিয়ে করে নিতাম, তাও অবৈধ সম্পর্কে জরাতাম না! আর তুমি ভাবলে কি করে? তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড হওয়া শর্তেও যেখানে আমি তোমাকে কখনো গভীর ভাবে টার্চ করিনি সেখানে মেঘলা আমার ফ্রেন্ড হয়, ওকে আমি কিভাবে করবো বলো? তোমার- আমার বিয়ের তো একমাস হয়েছে,, তুমি আমার লিগ্যাল ওইফ! আমি কি জোর করলে তোমার সাথে কিছু করতে পারতাম না? আমি কি কিছু করেছি তোমাকে? তাইলে তুমি আমার ওপর এতোটা ধৈর্যশক্তি হারাও কিভাবে?
বিন্দুঃ ( শিশিরের কাছে থেকে সরে বসে) আপনে বলতে চাচ্ছেন আপনাদের মাঝে কোন সম্পর্ক ছিলো না?
শিশিরঃ বলতে চাচ্ছি কি? যেটা সত্যি সেটাই বলছি!
বিন্দুঃ ও আচ্ছা তাই? তাইলে পিকগুলো, প্রেগন্যান্টসির রিপোর্ট সব মিথ্যে ছিলো?
শিশিরঃ এখন টাকা দিলে সব-কিছু হয় বিন্দু! যেখানে টাকার লোভে নিজের বাবা-মাকেও খুন করতে সাধে না মানুষের সেখানে একটা প্রেগন্যান্টসির মিথ্যে রিপোর্ট বানানো বা হাতের খেল! আর পিকগুলো? পিকগুলো কেমন দেখাতে পারবে?
বিন্দুঃ আমি কিভাবে দেখাবো? মেঘলা আপু তো নিয়ে গিয়েছিলো আমাকে দেয়নি!
শিশিরঃ ব্যাখ্যা দাও!
বিন্দু তারপর একে একে চারটে ছবির ব্যাখ্যা করে! তখন শিশির বলে,,
শিশিরঃ এটা খুব স্বাভাবিক বিন্দু,, আমরা বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিলাম! আর আমার খুব ইচ্ছে ছিলো কক্সবাজারে গিয়ে সমুদ্রের পাড়ে বালির ওপর শুয়ে থাকবো! হঠাৎ করে মেঘলা এসে পাশে বসে পিক তুলেছিলো দ্যাটস ইট!
আর একটা বললে,, সেদিন আমাদের ব্যাচেলর পার্টি ছিলো! মেয়েরা এলাও ছিলো না বাট হঠাৎ করেই ওরা আমাদের পার্টির মাঝে চলে আসে! তখন হয়তো আমার পিছনে বসে পিক তুলেছিলো আমি খেয়াল করিনি!
আর যে দুইটা বললে,, ওই দুইটা ছবির কথা আমি ঠিক বলতে পারছি না! হয়তো আমাদের ব্যাচেলর পার্টির দিনই ছিলো কারণ ওইদিন আমার ফ্রেন্ডরা সবাই ড্রিংক করেছিলো, আমাকেও জোর করে করিয়েছিলো! সেদিন আমার কোন সেন্স ছিলো না,, আর মেঘলা হয়তো তারই সুযোগ নিয়ে পিকগুলো তুলেছিলো! তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না? আচ্ছা আমি যদি সেন্সে থাকতাম, পিকগুলো আমিই তুলতাম? অন্য কাওকে দিয়ে তো আর উঠাতাম না? আর অন্য কাওকে দিয়ে উঠালে মেঘলা কি সেটা মেনে নিতো? আর তোমার কথায় মনে হচ্ছে, পিকগুলো অন্যকেও তুলেছিলো! তাইলে এটা কেনো ভাবলে না? অবশ্যই পূর্ব পরিকল্পনা ছিলো! ও আমাকে লিপ কিস করবে আর আমি মেনে নিবো? আমার সেন্স থাকলে ওইদিনই আমি ওকে মারতাম! হ্যা, এটা ঠিক ওর প্রতি আমার কিছুটা হলেও ফিলিংস ছিলো কিন্তু সেটা বাজে কোন এর্টাকশনে না! ওর সাথে মারামারি করেছি অনেক কিন্তু কখনো রোমান্টিক হয়ে ওর চোখের দিকেও তাকাইনি! আর তুমি এসব ভেবে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলে?
বিন্দুঃ এটাই কি স্বাভাবিক না? আপনার সাথে আমার রিলেশন থাকা অবস্থায় আমার কোন ছেলে ফ্রেন্ডের সাথে যদি ঘনিষ্ট কোন পিক দেখতেন + আমার তার বাচ্চার মা এটা জানতেন + আপনাকে ইগনোর করে তার সাথে হেসে হেসে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতাম,, আপনে কি পারতেন মেনে নিতে?
শিশিরঃ,,,,,,
বিন্দুঃ বলেন পারতেন কিনা?
শিশিরঃ নাহ ( আস্তে করে)
বিন্দুঃ তাইলে? আমি কিভাবে মেনে নিতাম? এটাই কি যথেষ্ট কারণ ছিলো না ছেড়ে যাওয়ার জন্য?
শিশিরঃ আমি মেনে নিতাম না ঠিক আছে, কিন্তু ছেড়েও যেতাম না! এতো বড় বিশ্বাস ঘাতকতা করে তুমি পার পেয়ে যেতে সেটা কখনোই হতে দিতাম না! দরকার হলে তোমাকে খুন করে ফেলতাম!
বিন্দুঃ তাহলে আমার কি উচিৎ ছিলো, আপনাকে মেরে ফেলা?
শিশিরঃ হুম,,( আবারো বিন্দুকে কাছে টেনে)
বিন্দুঃ বলা যতটা সহজ, করা ততটা সহজ না! আর হ্যা আপনে আমাকে সহজে মেনে নিতে পারলেও আমি আপনাকে মেনে নিতে পারবো না,, সরি! আমি এখনো রুদ্রকে ভালোবাসি,, ওর জায়গা আমি কাওকে দিবো না! ( নিজেকে ছাড়িয়ে আবারো গিয়ে শুয়ে পড়ে)
শিশিরঃ বিন্দু…
বিন্দুঃ শুয়ে পড়েন.. ( ঘুমানোর জন্য চোখ বন্ধ করে)
শিশির বিন্দুর পাশে এসে শুয়ে বলে,,,
শিশিরঃ আমার চেয়েও রুদ্রকে বেশী ভালোবাসো?
বিন্দুঃ হুম,, আপনার সাথে দুই বছর রিলেশন ছিলো আর রুদ্রের সাথে ছিলো পাঁচ বছর! বিয়ের পরে পুরো এক বছর ওকে মেনে নিতে পারিনি,, আপনাকে ভুলতে পারিনি বলে! তারপর থেকে ওর ভালোবাসা আমাকে বাধ্য করেছিলো ওকে নতুন করে ভালোবাসতে! আমাদের বৈবাহিক জীবন সামনে ছয় বছরে পা দিবে! ওকে আমি আজও আগের মতোই ভালোবাসি!
শিশিরঃ এতোই যখন ভালোবাসা, তাইলে বিয়ে করেছিলে কেনো আমাকে? (রেগে গিয়ে)
বিন্দুঃ মেঘের জন্য… মা আমার কাছে গিয়ে অনুরোধ করেছিলো আপনাকে যেনো বিয়ে করি! নাইলে আমি কখনো বিয়ে করতাম না! আমি জবেরও এপ্লাই করেছিলাম, আব্বু করতে দেয়নি! আমি রুদ্রাকে নিয়ে নিজের মতোই থাকতাম!
শিশিরঃ ভালো..( অন্যদিকে ঘুরে যায়)
বিন্দুঃ ভালোই তো..( মাঝের কোল বালিশ টা টেনে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে)
কিন্তু শিশিরের আর সারারাত ঘুম আসে না! যে মেঘলাকে ও এতো ভালোবেসেছিলো বিয়ের পর,, ওর জন্য মেঘের মুখ পর্যন্ত দেখেনি আর সেই মেঘলা কিনা বিন্দু চলে যাওয়ার কারণ ছিলো? মেঘলা এতোটা নিচে নেমেছিলো শুধুমাত্র শিশিরকে নিজের করে পাবে বলে? তাইতো ওর কপালে সুখ থাকলো না! স্বামী-সন্তান কাছে পাওয়ার আগেই আল্লাহ তাকে নিয়ে যায়!
শিশির আর ভাবতে পারছে না! রাত বাজে তিনটা,, ও উঠে বেলকোনিতে যায়! ওর একটা বাজে স্বভাব হয়েছে, বেশি চিন্তা করলেই ওর নিকোটিনের ধোয়া ওড়ানো চাই! আজও তার ঠিক ব্যাতিক্রম হলো না!
#চলবে…
[ বুঝতে পেরেছি কারোর কাছে গল্পটা খুব একটা ভালো লাগছে না.. সমস্যা নেই খুব তাড়াতাড়িই ইতি টানবো]