#শিশির_বিন্দু❤️
লামিয়া সুলতানা সিলভী ( লেখনীতে)
পর্বঃ১৬
শহরে থাকার একটা আলাদা মজা আছে আর তা হলো, রাতের শহরের ব্যাস্ত নগরী দেখা যায়! যা জনমানব শূণ্য রাতের গ্রামে দেখা যায় না! গ্রামে শুধু রাতের তারাদের সামিয়ানা, জ্যোৎস্না রাতের চাঁদ আর ঝিঁ ঝিঁ পোঁকার ডাকই শোনা যায়! কিন্তু শহরে এর চেয়েও বেশী কিছু পর্যবেক্ষন করা যায়! উঁচু উঁচু বিল্ডিং এ দাঁড়িয়ে এমন অনেক কিছুই দেখা, যার জন্য দেশের বাহিরে যাওয়ারও প্রয়োজন হয় না! শহরে অট্টালিকায় দাঁড়িয়ে রাতের আলোকিত নগর, শহরের ব্যাস্ত মানুষের পথচলা, শো শো করে গাড়ি যাওয়া, বিভিন্ন টাওয়ারের ল্যাম্পপোস্ট সাথে বিভিন্ন এপার্টমেন্টে লাইট জ্বালানো পুরো শহর কেই আলোকিত করে রাখে! যা নিজের দেশে বসেও বাহিরের দেশগুলো অনুভব করা যায়! বাহিরের বড় বড় দেশগুলোর এমন অনেক মনোরঞ্জনকর জিনিস আমাদের দেশে আছে! সেটা দেখার জন্য অবশ্যই সুন্দর একটা মন থাকা চাই!
ইন্দুও বেলকোনিতে দাঁড়িয়ে রাতের ব্যাস্ত নগরী দেখছে আর চোখের পানি ফেলছে! বাতাসের তার খোলা চুলগুলো একটার সাথে আর একটা বারি খাচ্ছে তাতে তার কোন খেয়াল নেই! সে একধ্যানে বেলকোনিতে দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাঁকিয়ে রাতের নগরী দেখছে! সেই বিকাল থেকে রোদ ফোন দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু ইন্দু একবারের জন্যও কল রিসিভড করেনি! রোদ থাকতে না পেরে একটা মেসেজ পাঠায় সেটা দেখে ইন্দুর আরো বেশি করে কান্না পাচ্ছে! মেসেজ টা ছিলো এমন–
“কি সমস্যা ইন্দু? তুমি আমাকে আবার ইগনোর কেনো করছো? আজকেই তো আমাদের মাঝে সবকিছু ঠিক-ঠাক হলো, তাহলে? আমাকে কষ্ট দিতে কি খুব বেশীই ভালো লাগে তোমার? তোমার কি মনে হয়, তুমি আমাকে ইগনোর করবে আর আমি তোমাকে ভুলে যাবো? এটা ভুলেও ভেবোনা ইন্দু রাণি! তুমি যদি এমন কিছু ভেবে নাও তাহলে জেনে রাখো, তুমি হলে রোদের প্রাণ-ভ্রমড়া আর এই প্রাণ-ভ্রমড়াকে কিভাবে হাসিল করতে হয় সেটা রোদ খুব ভালো করেই জানে! যতক্ষন রোদের প্রাণ-ভ্রমড়া আছে ততক্ষণ রোদও বেঁচে আছে! যেদিন রোদের প্রাণ-ভ্রমড়া তার জীবন থেকে চলে যাবে সেদিন রোদের লাশ দেখতে পাবে! আর আমি এতো সহজে হার মানি না, তাই এসব উলটা পালটা ভাবনা বাদ দিয়ে কিভাবে মিস. ইন্দু করিম থেকে মিসেস. ইন্দু মাহবুব হবেন সেইটা চিন্তা করেন!”
এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ কারোর আওয়াজ ভেসে আসে! ইন্দু পেছনে ঘুরতেই দেখে শিশির দাঁড়িয়ে!
শিশিরঃ কি ব্যাপার শালিকা, কোন সমস্যা? অফিস থেকে আসার পরে থেকেই দেখছি রুম থেকে বের হচ্ছোনা আবার এখানে এসে দেখছি এক ধ্যানে নিচের দিকে তাকিয়ে আছো! চোখের পানিও দেখছি, কি হয়েছে, এনিথিং রং?
ইন্দুঃ না জিজু, তেমন কিছু না! ( সারাদিন কান্না করে গলাটা হালকা বসে গেছে)
শিশিরঃ হুম,,কিছু তো একটা অবশ্যই আছে, তা নাহলে আমার এমন কিউট শালিকার চোখে পানি কেনো?
ইন্দুঃ না এমনেই,, কিছু বলবেন?
শিশিরঃ বলবো না, তবে শুনতে এসেছি? কি হয়েছে? নির্দিধায় বলতে পারো! জানোতো আমার আগের শালিকা মানে তোমার মেঘলা আপুর ছোট বোন মিহি, ও আমার সাথে অনেক ফ্রি ছিলো! ওর বোনকে কিছু বলার আগে আমাকে এসে আগে বলতো সব!
ইন্দুঃ ওহ..
শিশিরঃ তোমরা তো আমার ছোট বোনের মতো! তুমিও ছোট বোনের মতো, বোনের মতো কি বলিছি বোনই হও! তাই বড় ভাই হিসেবে এইটুকু জানতেই পারি তাইনা?
ইন্দুঃ,,,,,,( কিছু বলে না)
শিশিরঃ কাওকে ভালোবাসো?
ইন্দুঃ,,,,,,,,
শিশিরঃ দেখো ইন্দু, তুমি যদি না বলো তাহলে কিন্তু মা তোমার জন্য অন্যকিছু ভাবছে! আমাকে মা পাঠালো তোমাকে বোঝনোর জন্য, তুমি নাকি কারোর সাথেই কথা বলছো না! সো, আমাকে বলতে পারো তুমি কি কাওকে ভালোবাসো?
ইন্দুঃ আম্মু জানে না সেটা? আপনাকে পাঠালো শুনতে?( মায়ের ওপর ক্ষোপ প্রকাশ করে)
শিশিরঃ হুম হয়তোবা জানে, বাট আমি জানিনা। আমাকে বলেনি,, তুমি বলো নাকি ভেবে নিবো কেও নেই তোমার লাইফে? তাইলে আমরা যেটা ভাবছি সেটাই করি?
ইন্দুঃ কি ভাবছেন? ( অবাক হয়ে)
শিশিরঃ তোমার বিয়ের কথা! মা চাচ্ছে খুব তাড়াতাড়িই তোমাকে বিয়ে দিতে, পাত্রও রেডি আছে!
ইন্দুঃ ওয়াট? কি বলছেন এসব,,বিয়ে মানে? আমি এখন বিয়ে-শাদি করতে পারবো না!
শিশিরঃ এখন করতে পারবে না, নাকি কাক্ষিত মানুষ ছাড়া পারবে না?
ইন্দুঃ যেটা ভাবেন সেটাই!
শিশিরঃ তো সে কে,, রোদ? তোমার বিন্দু আপুর দেবর, মানে রুদ্রের ছোট ভাই তাইনা?
ইন্দুঃ তো না বললেন, আপনে কিছু জানেন না?
শিশিরঃ জানিনা তো, তবে আন্দাজ করেছিলাম! তোমাদের ফ্যামিলি ফটো এ্যালবামে রোদ আর তোমার কিছু কাপল ছবি দেখে! তারপর আজকে রুদ্রা বললো তোমাদের সাথে নাকি রোদের দেখা হয়েছিলো,,এই জন্য মা নাকি তোমার গায়ে হাত তুলেছিলো! এসব তো আর এমনি এমনি না তাইনা?
ইন্দু এবার কান্না করে ফেলে! শিশির শান্ত হতে বলে জিজ্ঞাসা করতেই ইন্দু সবটা বলে দেয়,, কেনো ওর ফ্যামিলির লোকজন রোদকে মেনে নিচ্ছে না! রোদের মা-বাবার কথা, ওরা কিভাবে বিন্দুকে কষ্ট দিয়েছে সবটা বলে!
শিশিরঃ দেখো ইন্দু,, আমারও তাই মনে হচ্ছে! তুমি ওই বাড়িতে সুখী হবে না! শুধু শুধু ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে নিজের জীবনটা নষ্ট করো না! বাবা-মা, তোমার বোন, আমরা যা বলি শোনো অনেক সুখী হবে! তোমার জন্য যে ছেলেটা দেখা হয়েছে সে অনেক ভালো, তোমাকে অনেক ভালো রাখবে! আর তাছাড়া, এসব মোহ দু’দিন পরেই কেটে যাবে দেখবে!
ইন্দুঃ ( তাৎছিল্যের হাসি দিয়ে) তাই? আচ্ছা জিজু, বিয়ের পর যেদিন প্রথম আমাদের আসেন সেদিন রাতের আড্ডায় নিশান্ত ভাইয়াকে একটা কথা বলেছিলেন মনে আছে? “মোহ কেটে যাবে, তবে ভালোবাসা না”! ভালোবাসা অনেক প্রকারের হয়, সবাই ভালোবাসতে পারে না!কিছু কিছু ভালোবাসা চোখের দেখায় হয়, প্রথম প্রথম মনে হবে আপনে তাকে অনেক ভালোবাসেন কিন্তু সে আপনাকে না চাইলে তাকে ভুলে যাবেন, সেটা হচ্ছে মোহ!আবার কিছু কিছু ভালোবাসা সাংসারিক ক্ষেত্রে হয়, সেটা ভালোবাসা কিনা আমি জানিনা যেহেতু আমি অবিবাহিত! তবে এক্ষেত্রে মায়ার জালে মানুষ ফেসে যায় বেশি! ভালো না বাসলেও একসাথে থাকতে থাকতে মায়া কাজ করে আর এ থেকেই হয়তো ভালোবাসা! এক্ষেত্রে কারোর কারোর টিকে আবার কারোর কারোর টিকে না,, নাইলে দেশে এতো ডিভোর্স হতো না!আর কিছু কিছু ভালোবাসা হয় গভীরভাবে! যেটা চাইলেও কখনো ভোলা যম্ভব না বা অন্য কারোর সাথে নিজেকে পরিকল্পনাও করাও সম্ভব না! কোন কিছুর বিনিময়ে ভালোবাসার মানুষটিকে ভোলা সম্ভব না! এমনকি সেই কাক্ষিত মানুষটি ঠকালেও না! এক্ষেত্রে পরস্থিতির চাপে মানুষটির সাথে জীবন না জুরতে পারলেও তাকে ভোলা সম্ভব না!
আর রোদ ও আমার মাঝে সম্পর্কটা হচ্ছে থার্ড নাম্বার টা! কোন কিছুর বিনিময়ে একে অপরকে ছাড়তে পারবোনা! তবে তাই বলে যে, বাবা-মাকে ভালোবাসি না তা নয়! তাদেরও অনেক বেশিই ভালোবাসি তার জন্য কাক্ষিত মানুষটি থেকে ছয় মাস দূরে থেকেছি! তবে আর সম্ভব না! বাবা- মায়ের ভালোবাসা তাদের জায়গায় আর আমার প্রিয়তমের ভালোবাসা তার জায়গায়! দুটোই দুই জায়গা থেকে ঠিক!
শিশিরঃ তোমাকে আর আমি কি বোঝাবো? আমার চেয়েও অনেক ভালো বোঝো তুমি! আচ্ছা তোমাদের ভালোবাসা কত দিনের?
ইন্দুঃ সাড়ে পাঁচ বছর!
শিশিরঃ ( অবাক হয়ে) এতোদিন?
ইন্দুঃ হুম, আমার এসএসসি( SSC) পরীক্ষার পর থেকে! আর এখন আমি অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ছি!
শিশিরঃ ওহ,, আচ্ছা তারপরেও ভেবে দেখো মায়ের কথাটা! ( চলে যেতে লাগে)
ইন্দুঃ পসিবল না,, আচ্ছা জিজু মেঘলা আপুর আগে কি আপনার লাইফে কেও ছিলো? যদি থাকতো আর তাকে রেখে যদি মেঘলা আপুকে বিয়ে করতেন তাহলে বলবো আপনে কখনো ভালোবাসতে জানেন নি! আমি ১ম ব্যাখ্যা দিলাম, আপনার ঠিক তেমন কোন মোহ ছিলো! আর মেঘলা আপু বেঁচে থাকাকালীন যদি আপনে তাকে রেখে অন্য কাওকে বিয়ে করতে পারতেন তাহলে আমার ২য় ব্যাখ্যাটা মিলে যেতো!
শিশিরঃ তুমি কি শিওয় তুমি যতটা রোদকে ভালোবাসো, রোদও ঠিক ততটাই তোমকে ভালোবাসে?
ইন্দুঃ আমার চেয়েও বেশি!
শিশিরঃ ঠিক আছে, যদি তাই হয় আমি নিজে দাঁড়িয়ে তোমার আর রোদের বিয়ে দিবো!
শিশির এইটুকু বলেই চলে গেলো ইন্দুর রুম থেকে! মেয়েটার বয়স কম হলেও প্রয়োজনের থেকেও অনেক বেশী ম্যাচুয়েট! যা হয়তো শিশির এখনও হতে পারলো না! আচ্ছা ইন্দু যে বললো ভালাবাসা অনেক প্রকারের হয়, তাহলে আমার আর বিন্দুর ভালোবাসাও কি ইন্দুর ১ম ব্যাখ্যার মতো! বিন্দু চলে গেছে সেই জেদে মেঘলাকে বিয়ে করেছিলার! তাহলে বিন্দুর প্রতি আমার মোহ ছিলো? আমি কি বিন্দু বা মেঘলাকে গভীর ভাবে ভালোবাসতে পারিনি? মেঘলা যাওয়ার পরেই তো আবার অন্যকাওকে লাইফে নিলাম! ভাগ্যক্রমে যদি বিন্দু ছাড়া অন্য কেও আমার বউ হয়ে আসতো, তাহলে আমার লাইফে তিনটা মেয়ে আসতো? এটা নিশ্চই শোভনীয় দেখাতো না, তাইতো ওপরওয়ালা যা করে ভালোর জন্যই করে! এসব ভাবতে ভাবতে শিশির ওদের রুমে গেলো!
শিশিরঃ এ মা রুদ্রা সোনা, তুমি কোথায় যাচ্ছো?
রুদ্রাঃ ইন্দুমতীর কাছে,, ইন্দুমতী আজকে আমাকে তার সাথে ঘুমাতে বলেছে! ইন্দুমতী নানুপির কাছে তো আজকে থাকবে না একা একা নাকি ভয় পাবে তাই আমাকে থাকতে বলেছে!
বিন্দু বিছানায় বসে বালিশের কাভার লাগাচ্ছিলো আর আড় চোখে রুদ্রা আর শিশিরের দিকে তাকাচ্ছিলো!
শিশিরঃ তোমার ভাই কোথায়?
রুদ্রাঃ নানুপির কাছে!
শিশিরঃ সে ও কি তার নানু আপির কাছে থাকবে আজকে? তোমরা সবাই আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছো? তোমাদের আম্মু তো আমাকে আজকে মেরে ফেলবে, সে তো বাঘিনী তাহলে রুদ্রার বাবাকে বাঁচাবে কে?
রুদ্রা হেঁসে কুটি কুটি হয়ে বলে,,,
রুদ্রাঃ ও মাম্মাম বাবাইকে তুমি কিছু বলোনা যেনো! আমার সোনা বাবাই,,( গালে চুমু দিয়ে চলে যায়)
বিন্দুঃ আমি বাঘিনী?
শিশিরঃ কই? এ কথা কে বললো? কার এতো বড় সাহস আমার বউকে বাঘিনী বলে?
বিন্দুঃ ( রাগী চোখে) খুব জামাই-বউ, জামাই-বউ খেলছেন তাইনা? একবার আম্মুরা চলে যাক তারপর আপনার স্থান হবে ওই রুমে! আসছে( মুখ বাঁকিয়ে) আর হ্যা, আজকে আমি আর মেঘ আম্মুর কাছে ঘুমাবো!
শিশিরঃ কিহ?
বিন্দুঃ চিল্লানোর কি আছে? শুনতে পান নি?
শিশিরঃ পেয়েছি,, কিন্তু ওই রুমে কেনো ঘুমাবে?
বিন্দুঃ ইচ্ছে হয়েছে তাই!
শিশিরঃ উহু,,, সব ইচ্ছেই পূরণ করতে হয় না! কিছু কিছু ইচ্ছে অপূর্ণ থাকাই ভালো!
বিন্দুঃ সেটা দেখা যাবে,, ইন্দুর কি খবর? কিছু বুঝাতে পারলেন?
শিশিরঃ তোমার বোনকে আমার কিছু বুঝাতে হবে না! সে একাই অনেক বুঝদার, সে যতটুকু বোঝে ততটুকু তুমিও বোঝ না! তোমার মাথায় ঘিলু কম!
বিন্দুঃ কিহ ( অনেক রেগে)
শিশিরঃ জ্বী,, দেখো মেঘকে মা দিবে নাকি! নাইলে এখানে এসে চুপচাপ শুয়ে পড় আমার পাশে! তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে!
বিন্দুঃ বাব্বাহ,, এতোদিন তো ইগনোর করলেন! কথাও বললেন না আজকে আবার হঠাৎ কি কথা বলবেন?
শিশিরঃ এই বিন্দু তুমি সব-সময় এতো ঝগড়া মুডে থাকো কেনো বলতো? আগে তো বেশ রোমান্টিক ছিলে, রুদ্রের সাথে থেকেই এমন আনরোমান্টিক হয়ে গেছো তাইনা? আমার সাথে থাকলে মোটেও এমন হতে না!
বিন্দু একটা বালিশ ছুড়ে মারে শিশিরের দিকে! আর বলে,,,
বিন্দুঃ আমি মোটেও আনরোমান্টিক নই কিন্তু আপনার সাথে আমার রোমান্টিকের “র” ও আসবে না!
শিশিরঃ তাহলে কার সাথে আসতো রুদ্রের সাথে?
বিন্দুঃ হ্যা,, কেনো দেখেন নি এ্যালবামে? আমি আর রুদ্র কতটা হ্যাপি কাপিল ছিলাম! রুদ্র আমাকে অনেক ভালোবাসতো!
শিশিরঃ রুদ্রের টা চোখে পড়েছিলো আমার টা পড়েনি? আমি যে তোমাকে ভালোবাসতাম, সেসব? নাকি আমি মধ্যবিত্ত ঘরের বেকার ছেলে ছিলাম বলে ছেড়ে চলে গিয়েছিলে? তুমি তো আমায় ভালোবাসনি, ভালোবাসলে ছেড়ে চলে যেতে না!
বিন্দুঃ আপনার মাথা ঠিক আছে? কথায় বলে না, “চোরের মায়ের বড় গলা” আপনার তো দেখছি তাই হয়েছে! আমাকে ঠকিয়েও মন ভরেনি? আবার এসেছেন আমার জীবনে আমাকে জ্বালাতে!
শিশির কিছু বলতে যাবে তখনই বিন্দুর মা তন্দ্রাবতি ডেকে ওঠে,,,
তন্দ্রাঃ বিন্দু মা আসবো?
বিন্দুঃ হ্যা আম্মু এসো, তোমার আবার পারমিশন কেনো নিতে হবে?
তন্দ্রাঃ মেঘের ফিডার দে আর দুধের কৌটা টা দে,, আজকে মেঘকে আমার কাছেই রাখবো! ইন্দু তো আর আমার কাছে ঘুমাবে না, মেঘকে নিয়েই থাকি! (মন খারাপ করে)
শিশির যেয়ে মেঘের ফিডার আর দুধের কৌটা ওর শ্বাশুড়ি কে এগিয়ে দেয়! তারপর তন্দ্রাবতি চলে গেলে শিশির যেয়ে রুমের দড়জা লাগিয়ে দেয়! ঘুরে বিন্দুর দিকে তাকিয়ে দেখে সে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে!
শিশিরঃ কি হয়েছে?
বিন্দুঃ আমি আপনার সাথে এক বিছানায় থাকবো না!
শিশিরঃ ( অবাক হয়ে) এতোদিন তাইলে কোন বিছানায় থাকলে?
বিন্দুঃ মাঝে তো মেঘ-রুদ্রা ছিলো!
শিশিরঃ (কপট রেগে) আমি আপনাকে আপনার পারমিশন ছাড়া টার্চ করবো না, নো টেনশন! আর কিছু?
বিন্দু আর কিছু বলে না,, মাঝে একটা কোলবালিশ দিয়ে শুয়ে পড়ে! শিশির বেলকোনিতে গিয়ে সিগারেট ধরায় আর তারা ভরা নীলছে আকাশের দিকে তাকিয়ে নিকোটিনের ধোয়া ছাড়ে! কিছুক্ষন পরে ও রুমে এসে বিন্দুর পাশে শুয়ে পড়ে! দুজনের মাঝে বেশ কিছুক্ষন নিরাবতা চলে! নিরাবতা ভেঙে শিশিরই বলে ওঠে,,,,
শিশিরঃ তোমার বোন তো কোন কিছুর বিনিময়ে রোদকে ছাড়বে না! তাইলে জোর করে ওকে শুধু শুধু রুহানের জীবনে দিয়ে তিনটে জীবন নষ্ট করে লাভ কি?
বিন্দুঃ ( একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে) মা ইন্দুকে বউ হিসেবে কখনো মেনে নিবে না কারণ ওদের মামাতো বোন তিথির সাথে ছোট থেকেই রোদের বিয়ে ঠিক করে রেখেছে! আর আমাদের বাড়ি থেকেও কেও মেনে নিবে না কারন টা অবশ্যই জানেন!
শিশিরঃ হুম ব্যাপারটা প্রচুর জটিল! ছেলে-মেয়ে রাজি কিন্তু পরিবার রাজি না! আচ্ছা,রোদ কি বলে?
বিন্দুঃ রোদ আর কি বলবে? রোদ তো ইন্দুকে ছাড়া কিছু বোঝেনা! ও বলেছে দরকার হলে ওর ফ্যামিলির সাথে সম্পর্ক নষ্ট করবে, তাও ওর ইন্দুকে চাই!
শিশিরঃ রুদ্র জানতো?
বিন্দুঃ হুম,,, রুদ্র থাকলে এতোদিন বিয়ে হয়ে যেতো ওদের! ওই বাড়িতে রুদ্রের কথাই সব ছিলো! রোদ হলো প্রচুর প্রতিবাদী, আর রুদ্র ছিলো একরোখা, জেদী টাইপের! ওর যা চাই, সেটা ওর চাই ই সেটা যে কোন মূল্যে হোক! এমনকি তার জন্য বিপথে হলেও রুদ্র যাবে! বাট আবার রোদ ওমন না, ও প্রচন্ড বুঝদার!একাই সব সামলে নিতে পারবে, তবে ইন্দুর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা পুরো আলাদা! এক্ষেত্রে দেখা যায় যে, রোদ পুরো রুদ্র টাইপের হয়ে যায়! মায়ের সাথেও অনেকদিন এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছে রোদের! আর এসব কিছুর অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে আমাকে! এসব কথা ইন্দু-রোদকে কোন মতেই বোঝানো সম্ভব হয় না!
শিশিরঃ হুম,,, তোমার এক্স শ্বাশুড়ি তোমাকে অনেক অত্যাচার করতো তাইনা? আমার সাথে থাকলে এমনটা হতো না, আমার মাকে দেখেছো না? অনেক ভালো! জানোতো, “রিভেঞ্জ অফ ন্যাচার” বলে একটা কথা আছে! তুমি আমাকে কষ্ট দিয়ে রুদ্রকে নিয়ে সুখী হতে চেয়েছিলে, তাই প্রকৃতি তোমাকে সুখী হয়ে দেয় নি!
#চলবে…
[ পরের পর্বে শিশির-বিন্দুর অতীতের কাহিনী দিবো,, কেনো বিন্দু শিশিরকে ভুল বুঝে চলে আসে]