#শিশির_বিন্দু❤️
লামিয়া সুলতানা সিলভী ( লেখনীতে)
পর্বঃ১১
সকালের সূর্যের তীর্যক আলো চোখে পড়তেই ঘুম ভেংগে গেলো বিন্দুর! উঠতে যাবে তখনি বুকে ভারী কিছু অনুভব করে,, কেও একজন তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরে আছে,, এটা তার প্রতিদিনের স্বভাব! বিন্দু মিষ্টি হেসে রুদ্রাকে এক হাত দিয়ে জরিয়ে ধরলো আর ঘড়িতে তাকালো! ঘড়িতে তখন ৭:২০ বাজে! আসতে করে রুদ্রার হাত সরিয়ে তাকে ভালোভাবে শুয়িয়ে দিলো আর মেঘের কপালে চুমু দিয়ে তার ছোট্ট শরীর টাকে কাথা দিয়ে আবৃত করলো! কারণ ছোট বাচ্চা এসিতে যদি ঠান্ডা লেগে যাবে! বিন্দু বিছানা ছেড়ে উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো! তারপর ২ কাপ কফি বানিয়ে শিশিরের রুমে গেলো!..
সেদিনের পর থেকে প্রায় ১ মাস কেটে গিয়েছে,, শিশির-বিন্দুর সম্পর্কটাও অনেকটা সহজ হয়ে এসেছে! সেদিন রাতের কাহিনীর পড়ে শিশির অনেকদিন বিন্দুকে এড়িয়ে চলেছে! মাঝে মাঝেই রাগ দেখাতো,, ঝগড়া লাগতো ওদের কিন্তু সময়ের সাথে সব পরিবর্তন হয়! তাই ওদের সম্পর্কও হয়েছে!..
বিন্দুর প্রথমেই চোখ পড়লো বিছনায় ঘুমিয়ে থাকা যুবকটির ওপর,, কপালে পড়ে থাকা এলোমেলো চুলেগুলো ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে! চুলগুলো ছোট হলেও বেশ সিল্কি বটে,, অবশ্য ছেলেদের বড় চুল মানায়ও না! তবে রুদ্রের চুলগুলো ছিলো বেশ লম্বা,, সে সব-সময় পেছনে ঝুটি করে রাখতো! কিন্তু সেটা বেশিদিন স্থায়ী করতে পারেনি,, বিন্দু যখন থেকে রুদ্রকে স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছিলো তখন থেকে তার প্রত্যেকটা কথাই রুদ্র অক্ষরে অক্ষরে পালন করতো! আর বিন্দু রুদ্রের মতো ওভারস্মার্ট ছেলেদের একদম পছন্দ করতো না! রুদ্র যেমন অতিরিক্ত স্মার্ট ছিলো তেমনি ছিলো অতিরিক্ত ফর্সা! ছেলেরা আবার বেশি ফর্সা হলে মানায় না,, রুদ্র বিন্দুর চেয়েও ফর্সা ছিলো! রুদ্রের ওপর তার ভার্সিটির অর্ধেকের বেশি মেয়েরাই ক্রাশ খেতো,, আবার কিছু কিছু ছেলেও রুদ্রের রূপকে হিংসে করতো,, ছেলেদের কেনো এতো সুন্দর হতে হবে? রুদ্র-বিন্দু দুজনই সুন্দর হওয়ার কারণে রুদ্রাও হয়েছে অতিরিক্ত লেভেলের সুন্দরি! কিন্তু বিন্দুর বেশি সুন্দর ছেলেদের আবার পছন্দ না,, বরাবরই পছন্দ ছিলো শিশিরের মতো ছেলেদের! বিন্দুর ভাস্যমতে,, “যে ছেলেরা বেশী সুন্দর তারা নিজেদের রূপের অহংকার করে,, আর বউকে কোন মূল্য দেয় না!” আর রুদ্রও ক্ষেত্রেও ঠিক একই ছিলো, নিজের রূপের অহংকার করতো! কিন্তু রুদ্র সারা বিশ্বের কাছে অহংকারী হলেও সে বিন্দু বলতে অজ্ঞান ছিলো,, যা বিন্দুর চিন্তা-ভাবনা কিঞ্চিত পরিবর্তন হয়েছিলো! সব ছেলেরা এক হয় না,, কিছু কিছু সুন্দর ছেলেরা বউকে মূল্যও দেয়!..
তবে বিন্দুর যেমন পছন্দের পুরুষ ছিলো তা হলো শিশিরের মতো! শিশির শ্যামলা বর্ণের ছেলে হলেও দেখতে বেশ মায়াবী! বিন্দু যেমন চেয়েছিলো পেয়েও গিয়েছিলো তেমন কিন্তু ভাগ্যের দোষে টিকে থাকতে রাখতে পারেনি সেদিন!..
শিশির এখনও ঘুমে বিভর,,বিন্দু কফির মগটা সেন্টার টেবিলে রেখে শিশিরের কাছে গিয়ে আসতে করে ডাক দিলো!..
বিন্দুঃ শিশির শিশির ওঠুন,,,
শিশিরঃ…….
বিন্দুঃ আপনার অফিস আছে না আজকে! ৮ টার মধ্যে ডেকে তুলতে বলেছিলেন! এখন ৭:৪০ বাজে,, ওঠবেন না?
শিশিরঃ…….
বিন্দুঃ শিশির,,
শিশিরঃ উমম বিন্দু,, তুমি প্রতিদিন আমার ঘুমের বারোটা বাজাও! সরে যাও তো,, আরামে ঘুমোতে দাও! (ঘুমের ঘোরেই)
বিন্দু ভ্রুঁ কুঁচকে আবার ডাকলো…
বিন্দুঃ শিশির,,
শিশিরঃ……
বিন্দুঃ ঘুমের বারোটা বাজানোর কোন ইচ্ছেই আমার নেই,, আপনে তাড়াতাড়ি ওঠে পড়ুন এখুনি!..
শিশিরঃ……
বিন্দুঃ উফফ( চিল্লিয়ে) আপনার অফিসে কিন্তু,,( থামিয়ে শিশিরে বলে)
বিন্দুঃ আমার অফিস আমাকে ভাবতে দাও, আমার সেই চিন্তা মাথায় আছে! তোমাকে ভাবতে হবে না আমাকে নিয়ে,, তুমি তোমার কাজ করো গিয়ে! যাও এখন,, (ব্ল্যানকেটা নিয়ে মুখ ঢেকে)
বিন্দু আর কিছু বললো না,, যেভাবে কফির ট্রে নিয়ে এসেছিলো সেভাবেই ফেরত নিয়ে গেলো তারপর নিজের রুমে বসে কফি খেয়ে,,, মেঘেকে ফিডার খাইয়ে সকালের নাস্তা বানাতে কিচেনে গেলো!..
৮ টার দিকে শিশিরের ঘুম ভাঙলো কারোর কল পেয়ে! নাগাদার ফোন বেঁজেই যাচ্ছে! একরাশ বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে দেখে ওর এসিসটেন্ট রুহানের কল…
শিশিরঃ হ্যালো,,, ( হাই তুলতে তুলতে)
রুহানঃ আসসালামু ওয়ালাইকুম স্যার,,,( ফোনে)
শিশিরঃ হুম,, ওয়ালাইকুম আসসালাম!
রুহানঃ স্যার আপনে এখনো উঠেননি? ৮ টার বেশি বেজে গেছে,, মনে আছে আমাদের ১০ টায় ক্লাইন্টের সাথে মিট করার কথা! ৯ টার মধ্যেই অফিসে আসেন প্লিজ স্যার,,, ফাইভ স্টার হোটেলেও যেতে টাইম লাগবে!..
শিশিরঃ কি বলো? ৮ টার বেশি বাজে,, আমাকে ডাক কেনো দিলো না তোমার ম্যাম,,ফাজিল মেয়ে একটা!..
রুহানঃ ( মুখ টিপে টিপে হেসে) স্যার ম্যামকে আবার বোকেন না,, এমনিতেই নতুন জায়গা, নতুন পরিবেশ, সবকিছুর সাথে মানিয়ে নিতে সময় লাগবে!..
শিশিরঃ না রুহান,, তোমার ম্যামকে আমার বকতে হয় না,, সে তো রণচণ্ডী বুঝলে! আমি একটা বললে সে দশটা শুনিয়ে দেয়! মেয়ে মানুষ বলতেই প্যারা, আর এদের ক্যারি করা ডাবল প্যারা! তোমার মেঘলা ম্যামকে দেখোনি আমাকে দাঁতের ওপর রাখতো অলওয়েজ,, বিন্দুও সেইম ক্যাটাগরির! ফ্রী তে একটা ভালো এডভাইজ দেই,, জীবনেও বিয়ে করো না ভাই! যতদিন সিংগেল আছো ততদিনই আরাম! অলওয়েজ চিল মুডে থাকবা,,,( ফোনের ওইপাশে রুহানের হাসির শব্দে থেমে গেলো শিশির)
রুহানঃ হা হা হা,,, স্যার আগেই ভয় দেখাইয়েন না! এমনিতেই আমি রাজি না বিয়েতে, মায়ের কথায় যতটুকু রাজি হয়েছি ততটুকুও এখন না করে দিবো!..
শিশিরঃ আরে না না, এটা কি বলো,,বিয়ে করতেই হবে! ( শিশির লাফ দিয়ে উঠে বসে) বিয়ে একটা মানুষের জন্য অনেক ইমপ্রটেন্ট বুঝলে,, বিয়ে করলে মানুষ নিজের সুখ- দুঃখ শেয়ার করার একটা সঙ্গী পায়! অফিস থেকে ছুটি নেওয়ার সুযোগ পায়,,,( থামিয়ে রুহান বলে)
রুহানঃ স্যার বাকি কথা অফিসে এসে বইলেন! অলরেডি অনেকটা লেট হয়ে গিয়েছে! আর আসার সময় ফাইলগুলো আনবেন,, আপনার তো আবার মনে থাকে না!..
শিশিরঃ হুম,, রাখছি! বাই, সি ইউ লেটার!..
শিশির ফোন কেটে ফ্রেশ হয়ে রুদ্রা- মেঘের কাছে গিয়ে ওদের আদর করে! রুদ্রাকে ডাকলে সে বলে,, আজকে স্কুলে যাবে না! তাই শিশির আর কিছু না বলে এসে কিচেনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়,,,
ডায়নিং টেবিলে রাখা ফুড বাস্কেট থেকে একটা লাল রঙের আপেল হাতে নিয়ে এক কামুড় দিয়ে, নিউজ পেপার নিয়ে কিচেনের দড়জার সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়! দেখে,, বিন্দু রুটি বেলছে তার ব্যাক সাইড শিশিরের দিকে,, মানে কিচেনের দড়জাটা উলটো!..
শিশিরঃ “যেসব বউয়েরা স্বামীর সেবা-যত্ন করে না তাদের কপালে খুব দুঃখ আছে”–আজকে রাশিফল অনুযায়ী!
বিন্দু তাও পেছনে ঘুরলো না! আরেক পেজ উল্টিয়ে এক কামড় আপেল মুখে পুড়ে,,,
শিশিরঃ যে বউয়েরা স্বামীর অবাধ্য হয় তাদের বশে আনতে এখনি এই নাম্বারে ডায়েল করুন!– তান্ত্রিক বাবাঃ মুসাকির কি এটা যাই হোক,,, দেখছো বিন্দু কিসব ভন্ড পীর এগুলো! বউয়েরা কি কখনো স্বামীর অবাধ্য হয়, বলো? এরা কিছছু যানে না,, গ্রামের তান্ত্রিক গুলো ঢেঁড়শ খেয়ে মানুষ হইছে বুঝছো! এদের বউয়েরা তো…
বিন্দু এবার রেগে পেছনে তাকিয়ে,,,
বিন্দুঃ সমস্যা কি আপনার? কি চাই এখানে?
শিশিরঃ কই কিছু না তো,, ডায়নিং টেবিলের ফ্যানটা ধুলো জমে গেছে দেখেছো?
বিন্দুঃ আপনাকে এখন কি করতে ইচ্ছে করছে জানেন? ফ্যানের সাথে কাপড় বেধে সাথে আপনার গলাটাও বেধে দেই,, তারপর সুইচ অন করে দেই! ভালো হবে না? ফ্যানের ধুলোগুলোও পরিষ্কার হয়ে যাবে!..
শিশিরঃ হুম ( মাথা ওপর- নিচ করে) এই কি বললে তুমি? আমাকে মারার প্লান করছো? কার সাথে প্ল্যান করে? পাশের বাড়ির ভাবীদের সাথে প্ল্যান করে? ছিঃ বিন্দু ছিঃ,, আমি হলাম তোমার একমাত্র,, ( বিন্দু ধেয়ে এসে)
বিন্দুঃ একদম গলা কেটে রেখে দিবো বেশি প্যাচাল পাড়লে,, ( বটি এনে)
শিশিরঃ আমার কাছে পুলিশ ভাইয়ার নাম্বার আছে,, একদম নারী নির্যাতন থুক্কু পুরুষ নির্যাতনের কেসে ফাঁসিয়ে দিবো!..
বিন্দুঃ এই আপনে যান তো এখান থেকে,, সকাল সকাল আসছে মাথা খারাপ করতে! আপনার অফিস নাই?
শিশিরঃ আছে তো,, ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়ে তারপর যাবো!..
বিন্দুঃ আপনে রেডি হয়ে আসেন, আমি ব্রেকফাস্ট রেডি করে দিচ্ছি!..
শিশিরঃ হুম,, রুদ্রা আজকে স্কুলে যাবেনা কেনো?.
বিন্দুঃ প্রতিদিন তো আইসক্রিম খাওয়ান,, সে জন্যই কিছুটা ঠান্ডা লেগেছে! তাই আমি রাতেই বলেছি ওকে যেতে হবে না স্কুলে আজকে!..
শিশিরঃ কি বলো? ঠান্ডা? তাহলে চলো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই!..
বিন্দুঃ আরে হালকা ঠান্ডা,, ঠিক হয়ে যাবে! রাতে একটা ঠান্ডার ঔষুধ খাইয়েছি তাই এখন ঘুমুচ্ছে!..
শিশিরঃ ওকে ডাকো,, খাবে না? ঔষুধ খেয়ে যতক্ষন ইচ্ছে ঘুমোক!..
বিন্দুঃ হুম…
বিন্দু কাজে মন দেয় আর শিশির অর্ধেক গিয়ে আবার কিচেনে ফিরে এসে,,,
শিশিরঃ এই বিন্দুবালা,, তুমি আমাকে আজকে ডাক দাওনি কেনো?
বিন্দুঃ (আবারো রেগে পেছনে তাকায়) ডাকিনি আমি? সকালে কি কি বলেছিলেন মনে নেই? আমি নাকি প্রতিদিন ঘুমের বারোটা বাজাই,, আপনার অফিসের চিন্তা আপনার মাথায় আছে,, আরো কতো কি!..
শিশিরঃ এই আমি এগুলো কখন বললাম? মিথ্যে কেনো বলছো?
বিন্দুঃ জ্বী,, আপনেই বলেছেন! এর পরের থেকে রেকোর্ড করে রেখে দিবো,, পরে স্বীকার না করলে শোনাবো! এখন যান তো এখান থেকে!..
শিশির কিছু না বলে মেয়েদের মতো মুখ ভেংচি দিয়ে চলে যায় রুমে রেডি হতে,, যা দেখে বিন্দু মিটমিট করে হাসে! আজকে শিশিরের অফিসে যেতে একটুও ইচ্ছে করছে না, যেতোও না যদিনা কোন ক্লাইন্ট আসতো! রেডি হয়ে চুল গুলো আছড়িয়ে দেখে ৯:১৫ বাজে! তখন আবার রুহানকে কল দিয়ে জানায় ও অফিসে যাবে না একেবারে ফাইফ স্টার হোটেলে চলে যাবে,, কাইন্টের সাথে মিট করতে যাবে! তাই রুহানও যেনো এখানে এসে যায়!..
শিশির কথা শেষ করে রুদ্রাকে ডেকে তুলে নিজের হাতে খাইয়ে দেয়,, তারপর ঔষুধ খাইয়ে দেয়! ব্রেকফাস্ট শেষে মেঘকে আদর করে চলে যায় আর বিন্দুকে বলে যায় একেবারে রাতে আসবে, কোন অসুবিধে হলে ফোন করে জানাতে! বিন্দুও গিয়ে মেঘকে ফিডার খাইয়ে ঘরের সব কাজ শেষ করে,, তারপর মেঘকে ডেকে তুলে! আজকে অনেক দিন পর বিন্দু রুদ্রের বাড়িতে কল দেয়,, তার শাশুড়ি মায়ের কাছে কল দিতে কি যেনো ভেবে অন্য কাওকে কল দেয়! ওপর পাশে দুইবার কল যেতেই কোন এক যুবক ফোন ধরে!…
বিন্দুঃ হ্যালো, আসালামু ওয়ালাইকুম!
যুবকটিঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম! কে বলছেন?
বিন্দুঃ কে রোদ? আমি তোমার ভাবী বিন্দু বলছিলাম!
রোদঃ ভাবী তুমি,, এতোদিন কোথায় ছিলে? রুদ্রা কেমন আছে? যানো কত মিস করেছি তোমাদের, তোমার সিম বন্ধ কেনো? তোমাদের বাসায় যাবার সাহসও পাইনি, মায়ের ভয়ে!..
বিন্দুঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি রোদ! তুমি কেমন আছো,, আর মা-বাবা?
রোদঃ আলহামদুলিল্লাহ,, রুদ্রা কোথায়? ও কেমন আছে? ওর জন্য অনেক কষ্ট হয় ভাবী! তুমি ফিরে এসো, প্লিজ! কাওকে তোমাদের পালতে হবে না,, তোমার আর রুদ্রার ভার আমি নিবো!..
বিন্দুঃ তাই? রোদ দেখি অনেক বড় হয়ে গেছে!..
রোদঃ জানো ভাবী আমি জব পেয়েছি,, সামনের মাসে পারমানেন্ট হয়ে যাবে!
বিন্দুঃ আলহামদুলিল্লাহ, এটা তো দারুণ খবর! আমি ঢাকায়ই আছি, এসে ঘুরে যেয়ো! আমি বাসার এড্রেস দিয়ে দিবো!
রোদঃ ঢাকায় মানে, কোথায় তুমি? কবে এসেছো, কার বাসায়, আমাকে জানাবে না তাহলে?
বিন্দুঃ হ্যা.. ( তখনি মেঘ কান্না করে ওঠে,, ওর কান্না থামিয়ে)
রোদঃ কার বাচ্চা কাঁদছে? রুদ্রা কোথায়, ও ঠিক আছে তো! তোমরা কোথায় আছো বলো আমি গিয়ে নিয়ে আসবো! বাবা- মা কিছু বলবে না দেইখো!..
বিন্দুঃ এখন আর এটা সম্ভব নারে,, সময় অনেকটা গড়িয়ে গেছে সাথে রুদ্রা-বিন্দুও এগিয়ে এসেছে! আর হ্যা বাচ্চাটা আমার, আমার বিয়ে হয়েছে এক মাস হলো!..
রোদঃ কিহ,, সত্যিই বলছো ভাবী? আমি কিন্তু অনেক খুশী হয়েছি শুনে! তোমার দুঃখের দিন এবার শেষ! আচ্ছা ভাবী, রুদ্রাকে কি ওর এই আব্বু ভালোবাসে? সবকিছু মেনে নিবো আমার রুদ্রার কষ্ট কিন্তু মেনে নিবো আর তখন তোমাকেও ছেড়ে কথা বলবো না!
বিন্দুঃ ( মৃদু হেসে) হুম রুদ্রাকেও অনেক ভালোবাসে! তুমি কি বাহিরে? নাকি বাসায়?
রোদঃ আমি অফিসে ভাবী,, কেনো?
বিন্দুঃ বাবা- মায়ের নাম্বারটা আমার আগের ফোনে ছিলো বাট ওইটা চুরি হয়ে গিয়েছে! তোমার নাম্বার টা মুখস্ত ছিলো তাও ভুলে যাই! পরে, অনেক কষ্টে ভেবে ভেবে কল দিলাম! এক কাজ করো, বাসায় গিয়ে আমাকে কল দিবে আমি বাবা-মায়ের সাথে কথা বলবো!..
রোদঃ আচ্ছা,, রুদ্রাকে দাও!
তারপর বিন্দু রুদ্রার কাছে ফোন দেয়! রুদ্রা তো ওর চাচ্চুকে পেয়ে খুশীতে আটখানা,, রুদ্রার ওর দাদুবাড়ির কথা খুব একটা মনে নেই তবে রোদের সাথে বড় হবার পর অনেকবারই ভিডিও কলে কথা বলে! আসলে এতোদিন বিন্দু ইচ্ছে করেই ওর শ্বশুরবাড়ির সাথে কন্টাক্ট করেনি! রোদের ওপর কোন রাগ ছিলো না, ওকে ছোট ভাইয়ের মতোই দেখে এসেছে বিন্দু! কিন্তু ওর সাথে যোগাযোগ করলে ওর শ্বশুর-শাশুড়ি জানবে, তাই ইচ্ছে করেই কন্টাক্ট রাখে না! রুদ্রার সাথে কথা বলা শেষ করে আবার বিন্দুর সাথে কথা বলে!..
রোদঃ ভাবী ইন্দুর কি খবর? ও তো আমাকে সোশাল মিডিয়া থেকে ব্লক করে রেখেছে! এটা নিশ্চই তোমার জন্য?
বিন্দুঃ হুম,, দেখো রোদ আমি তোমাকে ছোট ভাই হিসেবে যথেষ্ট ভালোবাসি আর নিঃসন্দেহে তুমি অনেক ভালো ছেলে! কিন্তু প্লিজ ভাই আমি চাই না ইন্দুর সাথে তোমার কোন যোগাযোগ হোক! যে বাড়িতে আমার মতো মেয়ে থাকতে পারেনি সেখানে আমার বোন স্পষ্টভাষী হয়ে কখনোই টিকটে পারবে না! তোমার ভাই যেমন ভালো ছিলো তুমিও অনেক ভালো, তোমার ভাই আমাকে যথেষ্ট সাপোর্ট করেছে আমি জানি তুমিও ইন্দুকে করবে! তারপরেও আমি অনেক মানষিক যন্ত্রণায় ছিলাম, আমি চাইনা আমার বোনও সেইম কষ্টে থাক! তুমি ওকে ভুলে যাও,, ইন্দুও তোমাকে ভুলে নিজের মতো লাইফ গুছিয়ে নিয়েছে তোমাকেও তাই করতে হবে!..
রোদঃ ভাবী, এটা কি বললে তুমি? গত চারমাস ধরে ওর সাথে আমার কথা হয়না! তুমি যানো আমি কতটা মেন্টাল প্রেশারে আছি? আর তুমি কিনা বলছো ভুলে যেতে? ইন্দু কি পারবে সত্যিই আমাকে ভুলতে? আমি কেনো তাড়াতাড়ি জব নিয়েছি জানো? ইন্দুর জন্য,, আমি তোমাদের বাসায় বিয়ের প্রপোজাল পাঠাবো!..
বিন্দুঃ না রোদ,, এটা কখনোই সম্ভব না! হাসবেন্ড যতই ভালো থাক, শ্বশুর- শাশুড়ি ভালো না হলে সেখানে টিকে থাকা খুব মুশকিল! আর আমি আমার বোনটাকে এই রকম দোটনায় ফেলে বিয়ে দিবো না!
রোদঃ প্লিজ ভাবী,, আমি ওকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যাবো! দরকার হলে বাবা- মায়ের সাথে কন্টাক্ট রাখবো না!
বিন্দুঃ ছিঃ রোদ, এটা কেমন কথা বললে! তারা যেমনই হোক, তোমার বাবা-মা তো! এক ছেলেকে হারিয়েছে এখন যদি আরেক ছেলেকে কাছে না পায় সেটা মেনে নিতে পারবে না!..
রোদঃ তাহলে আমাকে কি করতে বলো?
বিন্দুঃ আচ্ছা রোদ বাবু কান্না করছে,,, আমি তোমাকে পরে কল দিচ্ছি! এখন রাখছি,, বাসায় গিয়ে কল দিও, বাবা-মায়ের সাথে কথা বলবো!..
#চলবে…
[ আমি খুবই ব্যাস্ত আছি,, পরের পর্ব কবে দিতে পারবো জানিনা তবে চেষ্টা করবো তাড়াতাড়ি দেবার! হ্যাপি রিডিং♥]