অন্যরকম_ভালোবাসা ?পর্ব::২০

0
2518

অন্যরকম_ভালোবাসা ?পর্ব::২০
#ইফা_আমহৃদ

— “আমি যেটা চাই ,,,সেটা আদায় করেই নেয়।।নাহলে তোর আর ইশরার বিয়ের আগের দিন ওকে তুলে এনে বিয়ে করি।।আর ৫ বছর ধরে মনে প্রাণে ইশরা আর আয়রাকে চেয়েছি।।দেখ পেয়েও গেলাম।।তোকে বন্দী করে রেখেছি ,, যাতে তুই ইশরার কোনো ক্ষতি করতে না পারিস।।আর এখন যেহুতু ওদের পেয়ে গেছি ।।তাই টাটা বাই বাই “!!

কথাগুলো বলে চোখ ফিরিয়ে নিলো আয়ান ।। গার্ড এগিয়ে এসে একটা গান ধরিয়ে দিল হাতে।। কথা না বাড়িয়ে টিগার চেপে শুড করলো মেঘের মাথার মাঝ বরাবর।।সময় করলো না মেঘ।। সাথে সাথে শরীরে সকল শক্তি হারিয়ে নুইড়ে পড়লো মাটিতে।। তবুও শান্ত হলো না আয়ান।। এগিয়ে দিয়ে মেঘের ঘাড় বাঁকিয়ে ধরলো,,মট করে আওয়াজে ঘাড়ের হাড় ভেঙে আলাদা হয়ে গেল।।সাথে সাথে জোরে চিৎকার করে উঠলো মেঘ।। আয়ান মেঘকে ছেড়ে দিয়ে গানের টিগার চেপে।।গানের ভেতরে থাকা পাঁচটা বুলেট পড় পড় শুট করলো মেঘের বুকের মাঝখানে।। যাজড়া হয়ে গেল মেঘের বুক।।মাথার রক্ত আর বুকে রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে মাটির রং রক্তিম বর্ণ ধারণ করলো।।

চোখের সামনে এমন অবস্থা দেখে চিৎকার করে উঠলো ইশরা।।প্রথম থেকেই আয়ানকে ফলো করতে করতে এখানে এসেছে।। কিন্তু এখানে এসে এমন পরিস্থিতি দেখবে ভাবতে পারেনি সে।।মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে ,, মনে হচ্ছে এই বুঝি নিচে পড়ে গেল।।আচ্ছা এটা স্বপ্ন নয় তো ,, স্বপ্ন হলে অন্তত ভালো হতো।। আয়ানের এমন হিংস্র রুপ ইশরাকে দেখতে হতো না।।
মেইলি কারো চিৎকারের আওয়াজ শুনে পেছনে ফিরে তাকালো সবাই।। পেছনে ইশরাকে দেখে হাত থেকে গান পড়ে গেল আয়ানের।।হঠাৎ এমন জায়গায় একদম আশা করেনি ইশরাকে।। আয়ান অপেক্ষা না করে দৌড়ে ইশরার দিকে এগিয়ে গেল।।ইশরাকে ছুঁতে নিলে ,, এক ঝটকায় সরিয়ে নিলো নিজেকে।। আয়ানকে কিছু বলতে না দিয়ে ইশরা বলতে শুরু করলো..

— “ছিঃ আয়ান ছিঃ!! আমার ভাবতে অবাক লাগছে এই পাঁচ বছরে তোমার এতো অধঃপতন হয়েছে।। একজন মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করতে তোমার হাত একবার কাঁপল না”।।

–” ইশরা ও মেঘ ছিল!! যে তোমার নামে বাজে কথা বলেছিলি”।।

— “কি হয়েছে তাতে ।।তাই বলে তুমি ওকে এভাবে খুন করবে।।তুমি নিজেও তো আমার নামে বাজে কথা বলছিলে ।।যেটা মেঘের বলা কথাগুলোর চেয়েও ভয়ংকর ছিল।। আমার স্বতিত্ব ,, আয়রাকে নিয়ে আমার দিকে আঙুল তুলে ছিলে।।ও তো শুধু আমাকে ভালোবাসে তাই এমন করেছিলো।।আমি তোমাকে শুধুমাত্র আয়রার জন্য এলাও করেছিলাম।। কিন্তু আর নয়।। তোমার মতো একটা খুনির সাথে থাকতে থাকতে আয়রাও খুনি হয়ে যাবে।।যে নিজেই ভালো শিক্ষা পায়নি।।সে আমার মেয়েকে কি ভালো শিক্ষা দিবে।। অমানুষ বানিয়ে ফেলবে”।।

আর বলতে পারছে না।।সব কথা গলায় এসে আটকে যাচ্ছে।। শরীরটা ক্রমাগত খারাপ হতে লাগলো,, চোখজোড়া হাজার চেয়েও খুলে রাখতে পারছে না।।না চাইতেও চোখের সামনে অন্ধকার ধরা দিয়ে জ্ঞান হারালো ইশরা।। আয়ান তট জলদি ইশরাকে ধরে ফেললো।।ইশরাকে পাঁজা কোলে তুলে গার্ডদের উদ্দেশ্য করে বললো…

— ”লাশটা দ্রুত লুকিয়ে ফেল।।এমন ভাবে ফেলে দাও যাতে কেউ কখনো মেঘকে খুঁজে না পায়।।আর পেলেও যাতে চিনতে না পারে”।।

পেছনে আর তাকালো না সামনের দিকে এগিয়ে গেল।। দু’জনে।।

___________________

— “পাপা ,,মাম্মা এখনো চোখ খুলছে না কেন?? আসার পর থেকে একবারও আমার সাথে কথা বলেনি।।জানো এমন কখনো হয়নি,, যে মাম্মা আমার সাথে কথা বলেনি।।বাড়িতে ফিরলে সব কাজ ফেলে আগে আমার সাথে কথা বলে,, আমাকে চুমু খায়।।কিন্তু আজ আসার পর একবারও চোখ খুলে নি।। আমাকে ডাকেনি,, চুমু খায়নি”।।(কাঁদতে কাঁদতে আয়রা)

অন্ধকারের মাঝে আয়রার চোখের অশ্রু এড়ায় নি আয়ানের চোখে।।টান টান হাতে কোনো রকম চোখ মুছে দিয়ে দিয়ে ,, দুটো চুমু খেল আয়রার কপালে ‌।।

— “এইদেখ আমি দুটো চুমু খেলাম।।একটা তোমার মাম্মার অন্যটা আমার।।মাম্মা একটু অসুস্থ তাই ঘুমিয়ে আছে ।। কালকে সকালে যখন ঘুম ভাঙ্গবে ,, তখন তোমাকে বেশী করে আদর করে দেবে কেমন!! এবার ঘুমিয়ে পড়”।।

পাল্টা কোনো কথা বললো না আয়রা।।চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়লো।। আয়ান আয়রার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস নিলে ইশরার দিকে তাকালো।।ইশরা আয়ানের বুক জুড়ে ঘুমিয়ে আছে।। এখনও ইশরার জ্ঞান ফেরেনি।।ডাক্তার এসে মেডিসিন দিয়ে গেছে।।বলেছে,, “” সকালের আগে জ্ঞান ফিরবে না””।।এতগুলো বছর পর দু’জন ভালোবাসার মানুষ আজ কাছাকাছি।। কেউ ঘুমে ব্যস্ত ,,কেউ দেখতে ব্যস্ত।। অপেক্ষা করছে কাল সকালের জন্য ,, যখন ইশরার জ্ঞান ফিরবে ,, তখন কিভাবে রিয়েক্ট করবে।। আবার আয়ানকে দূরে সরিয়ে দেবে নাকি খুব কাছে টেনে নেবে,,,তবে যাই হোক ভালোই হবে।।তবে আর ইশরার থেকে কিছু লুকাবে না।।যেটা সত্যি সেটাই বলে দিবে।।এইসব ভেবে এতো সুন্দর একটা মুহূর্ত নষ্ট করতে নারাজ আয়ান।।তাই মন দিলো ,, ইশরাকে দেখতে।।

_____________________

তখনকার মুহূর্তের ভয়ঙ্কর দৃশ্য গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠতেই চোখ খুলে তাকালো ইশরা।। সূর্যের আলো দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছে।। ছাপ ছাপ রোদের রশ্মি এসে পড়ছে ইশরা আর আয়রার মুখ।।সাথে রয়েছে বাহির থেকে আসা দমটা হাওয়ায় ।।তাতে জানালার পর্দাগুলো উড়ছে।।রুমে হালকা পাওয়ারে এসি চলছে।।এতো ঠান্ডার মাঝেও ঘেমে একাকার হয়ে গেছে ইশরার শরীর ।। কপালে জমে আছে বিন্দু বিন্দু ঘাম।। সবটা বোধগম্য হতে খানিকটা সময় নিল।। ততক্ষন ওভাবে স্তব্দ হয়ে বসে রইল।। রুমের চারপাশে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে আয়ানের দেখা মিললো না।। দ্রুত পায়ে ছুটল আয়ানকে খুঁজতে।সারাবাড়ি ঘুরেও আয়ানকে পেল না।কিছু একটা মনে করে ছুটল তমোনার রুমের দিকে সেখানে গিয়ে ইশরার ধারণা সত্যি হলো,, আয়ান তমোনার রুমে আছে।।কোনো একবিষয় নিয়ে আলোচনা করছে।। কেউ কিছু বোঝার আগেই আয়ানের কর্লার চেপে ধরলো ইশরা।।ক্ষিপ্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চেঁচিয়ে উঠলো..

— “তুমি কেন খুন করেছো মেঘকে!! আমার জন্য ,,তাই তো ।।তাহলে আগে কেন আগলে রাখো নি”!!

— “তুই তোর বাবার খুনের কারণ জানতে এখানে এসেছিস নাকি মেঘের”??(তমোনা)

সাথে সাথে আয়ানের কর্লার ছেড়ে দিয়ে দু’পা পিছিয়ে গেল ইশরা।। চোখের পাতা স্থীর হয়ে আছে তমোনার মুখের দিকে।।কেউ যেন শরীরের সব শক্তি কেড়ে নিয়েছে।।হারিয়ে ফেলেছে কথা বলার শক্তি।।শত চেষ্টা করেও একটা বর্ন উচ্চারণ করতে সক্ষম হলোনা‌।।সব কথা গলায় দলা পাকিয়ে আটকে রেখেছে।।মনে হচ্ছে,,এই বুঝি দম বন্ধ হয়ে মরে গেল ইশরা।। কাঁপা কাঁপা গলায় অস্পস্ট ভাবে উচ্চারণ করল..– বা–বা !!
তমোনার গালে হাত দিয়ে করুন দৃষ্টিতে তাকিলো ইশরা।। মেয়ের দৃষ্টির মানে বুঝতে অসুবিধা হলো না তমোনার ।। তবুও নিজের সামলে উত্তর দিল তমোনা।।

— “হ্যা তোর বাবাকে মেঘ খুন করেছে?? শুধুমাত্র তোকে পাওয়ার জন্য”!! (কাঁদতে কাঁদতে তমোনা)

–” মা তুমি কিসব আজেবাজে বলছো ।।বাবা আমাদের ছেড়ে কোথাও যেতে পারেনা।।প্লীজ মা একবার মুখ ফুটে বলো পাপার কিছু হয়নি”।। তুমি মিথ্যা বলছো।।

— “আজ পর্যন্ত কখনো শুনেছিস আমি মিথ্যা বলেছি।। সেদিন ছাড়া।। সেদিন ,, আমি আর তোর বাবা একসাথে তোদের বাড়িতে আসছিলাম।। আসার সময় হঠাৎ করে কোথা থেকে মেঘ এসে পড়লো জানি না।। প্রথমে বুঝতে পারলাম না,, হঠাৎ মেঘের গাড়ি আটকানোর ব্যাপার টা।।কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই আমাদের দুজনকে অজ্ঞান করে ফেললো।। যখন জ্ঞান ফিরে তখন নিজেদেরকে হাত পা বদ্ধ অবস্থায় আমাদের পুরনো ফ্যাক্টরীতে আবিষ্কার করি।। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারলাম না।। তারপর যা শুনলাম হাত পা কাঁপতে শুরু করলো ।।যেকরে হোক তোকে পুরোনো ফ্যাক্টরিতে আনতে হবে আর আয়ানের কাছে বলতে হবে ,তোর সাথে মেঘের সম্পর্ক আছে।। কিন্তু আমরা কিছুতেই এসব মানতে রাজি হলাম না।। বেশকিছুক্ষন পরও যখন তিনি রাজি হলেন না।। তখন রাগের মাথায় মেঘ ‌….

আর বলতে পারলেন না তমোনা,, আঁচল টেনে চোখ মুছে নিলেন।। নিজেকে যথা সম্ভব সামলে আবার বলতে শুরু করলেন।।

চলবে …??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here