অন্যরকম_ভালোবাসা ? ইফা_আমহৃদ পর্ব::১২

0
2514

অন্যরকম_ভালোবাসা ?
ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১২

নিজের চোখের সামনে প্রিয় মানুষটিকে অন্য কোনো ছেলের সাথে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে চোয়াল শক্ত হয়ে গেল আয়ানের।।ইচ্ছে করছে ইশরা আর মেঘ,, দুজনকেই মাটিতে পুঁতে ফেলতে।। নিজের হাত দুটি শক্ত করে মাটির দিকে তাকিয়ে নিজের রাগ কমানোর চেষ্টা করছে।। আয়ান চোখ জোড়া বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে রাগ কন্টোল করছে।।তমোনা আয়ানের দিকে তাকিয়ে রাগি দৃষ্টি দিয়ে বললো…

— “”আয়ান আমি তোমাদের বাড়িতে আসছিলাম ।।এমন সময় ইশরাকে হনহন করে বেরিয়ে যেতে দেখে ।।ওর পিছু নিয়ে এখানে এসেছি।।আর এখানে এসে যা দেখলাম ছিঃ।। আমার ভাবতে লজ্জা লাগছে।। মেঘের সাথে ….!!

এতোক্ষণে ইশরা খেয়াল করলো মেঘ এখানে এককোণে দাঁড়িয়ে আছে।।তাহলে একটু আগে মেঘই ইশরাকে জরিয়ে ধরেছিলো।।ভাবতেই গা ঘিন ঘিন করে উঠছে ইশরার।। মেঘের চেয়েও আজ বড্ড আশ্চর্য লাগছে তমোনাকে ।। আর সহ্য করতে পারছে না ইশরা।। একপ্রকার চেঁচিয়ে বলে উঠলো সে…!!

— “মা !! (চেঁচিয়ে বললো ইশরা) কিসব বাজে বকছো তুমি।। তুমি নিজেই তো আমাকে ফোন করে এখানে আসতে বললে।।এখন আয়ানের সামনে আমাকে কেন ছোট করছো…!!!

— “চুপ,,একদম চুপ!! আমি তোকে মোটেও আয়ানের সামনে ছোট করছি না।। বরং তোর আসল চেহারাটা ডাকতে আমাকে চুপ করতে বলছিস।। বুঝলাম আমি তোকে এখানে ডেকেছি।।তাহলে এখানে মেঘ কি করছে ।ওকেও বুঝি আমি এখানে ডেকেছি”।।( ইশরাকে থামিয়ে দিয়ে তমোনা)

— “আন্টি আপনি আমাকে কেন আমাকে এখানে ডাকবেন।।ইশরা আমাকে এখানে ডেকেছে ।। অনেকদিন আমাদের দেখা হয়নি তাই”।।(মাথা নিচু করে মেঘ)

মেঘের এমন কথায় মাথায় বাজ পড়ল ইশরার ।।কিছুই মাথায় ঢুকছে না।।যে তমোনা মেঘকে সহ্য করতে পারেনা।।সে তমোনা আজ মেঘেকে এভাবে সাপোর্ট করছে।। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না সে।।
কিন্তু আয়ান কিছু বলছে না।। চুপচাপ সবটা শুনছে ।।ইশরা এদিকে গিয়ে আয়ানের হাত ধরলো।।চোখ খুলে শান্ত গলায় বললো…

— “ইশরা আমি তোমাকে এখনও সম্পূর্ণ বিশ্বাস করি।।তাই আমি সত্যিটা তোমার মুখ থেকে শুনতে চাই ।। কেন এতো রাতে তুমি ছোট আয়রাকে একা রেখে এখানে এলে।।কেন তোমার মা তোমার এগেস্টে এইসব বলছে ।।সবটা”।।

— “আয়ান আসলে আমি..!!

হাত দিয়ে থামিয়ে দিলো আয়ান ।। একবার তমোনা মেঘ আর ইশরাকে দুচোখে পরখ করে নিয়ে বললো..

— “যেটা বলবে ভেবে বলবে।।যদি তুমি সত্য বলো,,
তাহলে তোমার মা মিথ্যা বলছে ।।আর তোমার মা সত্যি বললে ,, তুমি মিথ্যা বলছো”।।

দমে গেল ইশরা।। কিভাবে তার মাকে সবার সামনে মিথ্যা বাদী প্রমান করবে।। কিন্তু সত্যিটা আয়ানকে না বললে।।আয়ান যে ইশরাকে ভুল বুঝবে।।
“” বাড়িতে চলো তোমার সাথে সেখানে ঠান্ডা মাথায় কথা বলবো””।। কথাটা বলে আর অপেক্ষা করলো না আয়ান ।। ধরে রাখা ইশরার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো।। হনহন করে চলে গেল সেখান থেকে ‌।।ইশরা ছুটলো আয়ানের পিছুপিছু।। দু’পা এগুতেই সামনে এসে দাঁড়ালো তমোনা।। ইশরার হাতটা নিজের মাথায় নিয়ে ছলছল চোখে বললো..

— “তোকে আমার কসম রইল ।। নিজের বাবার ভালো চাইলে আয়ানকে কিছু বলবি না”।।

আয়ান আশেপাশে ইশরাকে না দেখে আবার ছুটে এলো।।ইশরার হাত ধরে গাড়ির সামনে নিয়ে গেল।। দরজা খুলে ইশরাকে বসিয়ে দিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করতে মন।।ইশরার অবুঝ মস্তিষ্ক শুধু একটা কথাটা ভাবছে ।।রৌদ্র জুবায়ের এর কি এমন হয়েছে যে ,, আয়ানকে বলতে বারণ করলো।।

_____________

— “কোথায় গিয়েছিলিস তোরা।। বলে যাবি তো।।বাড়ির লোক কতোটা চিন্তায় ছিলো।।তোকে বাড়িতে না পেয়ে বুঝতে পারলাম ,, ইশরার সাথে কোথাও একটা আছিস।। কিন্তু আয়রা সোনা কি সেটা বুঝবে”।।(আয়রাকে ইশরার কোলে তুলে দিতে দিতে তিথি)

আয়রাকে নিজের কোলে পেয়ে পরপর দুটো চুমু খেলো ইশরা ।। হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে গিয়েছিল আয়রার।।মাকে পাশে না পেয়ে এক প্রকার কেঁদে কেটে ভাসিয়ে দিয়েছে।। বাড়ির সবাই কান্না থামানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু বারবার সব ব্যর্থ হয়েছে।।
মেয়েটা এখনো কাঁদছে।।এক মুহুর্তের জন্য মেয়ের কথাটা ভুলেই গিয়েছিলো।।কিভাবে মনে থাকবে।। হঠাৎ তমোনা ওমন আর্ত চিৎকার শুনে।।মেয়েকে কোলে ঘুম পারিয়ে দিলো।।ড্রয়িং রুমে সবার দিকে তাকিয়ে আয়ানের রুমের দিকে পা বাড়ালো।। আয়ান রুমে যাওয়ার আগে বারবার বলে গেছে,,”” যাতে ইশরাকে আয়ানের রুমে পাঠিয়ে দেয়।।আজ ইশরা আয়ানের সাথে থাকবে””।।

ড্রিম লাইটের আলোয় সবকিছু আবছা দেখা যাচ্ছে।।
আয়ানকে রুমের কোথাও দেখা যাচ্ছে না।। সিগারেটের বাজে গন্ধ আসছে।। হয়তো বেলকেনিতে দাড়িতে স্মোক করছে।। যখন আয়ান কোনো কারনে প্রচন্ড রেগে যায় কিংবা টেনশন করে।।তখন স্মোক করে,, নেশা করে,, ড্রিংক করে।।ইশরা যেদিন প্রথম এই বাড়িতে পা রেখেছে,, তারপর আর কখনো এইসব করেনি।। কারন ,, সেদিন থেকে তার সমস্ত রাগ ,, টেনশন এক নিমিষেই ইশরা দূর‌ করে দিতো।।
ভালোই হয়েছে ইশরার কাছে।। অন্তত আয়ানের মুখোমুখি হতে হবেনা।বালিশ টেনে আয়রাকে বেডের মাঝখানে শুইছে দিলো।। একটু ঝুঁকে আবার আয়রার কপালে অধর ছুয়ে দিয়ে,,, আয়রার পাশে শুয়ে পড়লো।। চোখ বন্ধ করার আগেই আয়ান টেনে দাঁড় করিয়ে দিলো তাকে।। দাঁতে দাঁত চেপে বললো…

— “সাহস কি করে হয় তোমার,, আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার।।আমাকে কষ্টে রেখে তুমি শান্তিতে ঘুমাবে।।সেটা তো হতে পারে না”।।

— “কিভাবে বলবো তোমায় আয়ান।।মা যে আমাকে অদৃশ্য এক বাঁধনে বেঁধে রেখেছে।।(মনে মনে ইশরা)
আয়ান আমি জানি তোমার অনেক প্রশ্ন আছে।।আমাকে একটা দিন সময় দাও ।।আমি মায়ের সাথে‌ একবার আলাদা কথা বলি ।। তারপর তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিবো”।।

–” কেন ?? আন্টির সাথে তুমি আলাদা কথা বলবে।। আন্টির সাথে তুমি কোনো কথা বলবে না।। আন্টির সাথে কথা বলে,,, তুমি তোমার দোষ এরাতে চাইছো।।আমি সেটা হতে দিচ্ছিনা।। আমি পুরো ঘটনাটা এখনই জানতে চাই।।(একটু থেমে আবার) তোমার এই চুপ করে থাকা ,, একদিনের সময় নেওয়া ।।আমার কাছে কি মনে হচ্ছে জানো।।আন্টি যা বলেছে,সব সত্যি।। ছিঃ”

— “আয়ান!! (চেঁচিয়ে) তোমার কথায় দমে বন্ধ হয়ে আসছে আমার।।প্লীজ চুপ করো।। ঠান্ডা মাথায় আমার কথাটা একবার মন দিয়ে শোন” ।।

— “হ্যা আমি শুনতে চাই ,, জানতে চাই ।।আসলে সত্যি টা কি??? একটা সত্যি কথা বলবে ?? আয়রা আমার মেয়ে তো?? নাকি তোমার আর মেঘের অবৈধ সন্তান”।।

ইশরা আর সহ্য করতে পারলো ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো আয়ানের গালে।।কিভাবে পারলো আয়ান এভাবে বলতে ।।কাবার্ড থেকে সেদিনের ডিভোর্স পেপার টা বের করে ইশরার এগিয়ে দিয়ে বললো..

— “হয় সত্যিটা আমাকে বলবে ?? নাহলে আমাকে মুক্তি দিবে।। অন্যথায় আমি আয়রার ডিএনএ টেস্টে করবো”।।

কথাগুলো বলেই চপল পায়ে হেঁটে বেরিয়ে গেল আয়ান।। আজ নিজের কাছের মানুষটাকে বড্ড অচেনা লাগছে ইশরার কাছে।।হাঁটু গেড়ে নিচে বসে পড়লো।। দুচোখ দিয়ে ওজড়ো ধারায় অশ্রু ঝরছে ।। কিন্তু ইশরা চোখ মুছলো না।। যত ইচ্ছে ইশরাকে অপমান করতো।। একবারও মুখ ফুটে কিছু বলতো না সে ,, কিন্তু বারবার আয়রাকে কেন টেনে আনে দুজনের মাঝে।। ভালোবাসায় এতো বিশ্বাসের অভাব ।।আজ আয়রা ছোট বলে ,, কিছু বুঝতে পারে নি।।যদি আয়রা বড় হলে আবার এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ,, তখন নিজের মাকে চরিত্রহীন মনে করবে।।আজ চোখের বাঁধ মানছে না।।আয়রাকে নিজের মেয়ে হিসেবে মানতে নারাজ আয়ান।।ইশরাও চায় না ,, বারবার নিজের স্বতিত্বের প্রমান দিতে,, আয়রার পরিচয় নিয়ে আঙুল উঠুক।।

অতিরিক্ত কোনো‌ জিনিস ভালো নয়।।রাগ ,,জেদ ,, ভালোবাসা অভিমান,, অভিযোগ।। অতিরিক্ত জিনিস সবকিছু তছনছ করে দেয়।।যেমনটা আয়ানের অবাধ্য ভালোবাসা।রাগের বসে কি বলছে,,হয়তো ভাবো নি।।
তার ভয়াবহতা কতোটা একবার ভাবলো না,, ডাক্তারের কাছে ডিএনএ টেস্ট করবে।।যার মানে এটাই ধারা ,, ভালোবাসার উপর বিশ্বাস নেই।।সেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে থাকা বিলাসীতা ছাড়া অন্য কিছু নয়।।

শেষ বারের মতো ইশরা আর আয়ানের ছবিটার দিকে তাকিয়ে চোখ মুছে নিলো। পূর্নরায় আয়রাকে কোলে নিয়ে আহম্মেদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো।।রাত গভীর হওয়ায় সবাই বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে।। কাউকে জানালো না সে।। সবাইকে জাগালে ,, হয়তো ইশরা আর আয়রাকে যেতে দিতো না।। কিন্তু ইশরা আর এই বাড়িতে থাকতে চায় না। নিজের বাবার বাড়ি ফিরে গেলে হয়তো দুদিন পর আবার গিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।।

ভালোবাসা কখনো বয়স

সময় কিংবা দূরত্বের কাছে হেরে যায় না…

হেরে যায় অবিশ্বাস

আর অবহেলার কাছে !!!

— ইফা ?

৫ বছর পর—–

?? Usne mujhe chhua bhi nahi
Aisa waisa kuchh hua bhi nahi
Najar thi pani hui bechaini
Aankhon Aankhon mein shaitani ho gayi

Saiyaan ne dekha aise
Main pani pani ho gayi
Main pani pani ho gayi
Main pani pani ho gayi

?? aisi hoon khoyi kabhi hi nahi
Aankhein mili hai jab se soyi hi nahi
Duniya se sune hai kisse tere
Jaane kya ayega hisse mere

Isi khayaal main deyani ho gayi
Saiyaan ne dekha aise
Main pani pani ho gayi
Main pani pani…..!!!

–” আয়রা” ( পেছন থেকে ইশরা)

হঠাৎ মায়ের গলা শুনতে পেয়ে ভমকে গেল আয়রা।।হাত থেকে ফোনটা লুকাতে চেয়ে অটোমেটিক ভাবে নিচে পড়ে গেল।। একটু আগে ডিনার করে রুমে এসেছে।।ডিনার করার পর বারবার ইশরা‌ বলে দিয়েছে।।যাতে রুমে এসে চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ে ।। কিন্তু আয়রা মায়ের ফোন নিয়ে,, ইউটিউবে থেকে “পানি পানি” সং সার্চ দিয়ে ডান্স করছে।।বিকেলে দিবা কে একই গানে ডান্স করতে দেখেছে ।।তাই মায়ের অনুপস্থিতিতে ডান্স করছে।।

— “হচ্ছেটা কি এখানে।।তোমাকে আমি বারবার বলেছি ঘুমিয়ে পড়তে আর তুমি ডান্স করছো।।কাল সকালে স্কুল আছে ভুলে গেছো”।।(রাগি দৃষ্টি দিয়ে ইশরা)

— “কালকে তো তোমারও খোলা আছে।। তুমি জেগে থাকতে পারলে আমি কেন পারবো না।সেই বেলায় “।(নাক টেনে কোমরে হাত দিয়ে আয়রা)

চলবে…??

নিরামিষ গল্প আমার পড়তেও ভালো লাগে না ,, আর লিখতেও না।। জানি অনেক প্রশ্ন আছে ,, আস্তে আস্তে ক্লিয়ার করে দিবো।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here