অন্যরকম_ভালোবাসা ? ইফা_আমহৃদ পর্ব::১৩

0
2333

অন্যরকম_ভালোবাসা ?
ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১৩

ইশরা আর সহ্য করে করতে পারলো না।।টুস করে চুমু খেল আয়রার গালে।। মেয়ের মুখে এমন পাকা পাকা কথা সে প্রায়ই শোনে ।।তখনই মনটা আনন্দে ভরে ওঠে তার ।। রুমের লাইট অফ করে দিয়ে,, ড্রিম লাইট অন করে নিলো।। অন্ধকারে আয়রা পায় তাই।। আয়রাকে কোলে তুলে নিয়ে বেডে শুয়ে দিলো।। মাথাটা নিজের বুকে নিয়ে ,, আয়রার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।।
আয়রার মাথার খোলা চুলগুলো বাতাসে উড়ে উড়ে ইশরার মুখে পড়ছে।। খুব পছন্দের চুল এগুলো।।যখন একটু বুজতে শিখেছে ,, তখন থেকে আর কখনো চুল কাটতে দেয় নি ইশরাকে।। কিন্তু ইশরা এটা ওটা বলে চুল কেটে দিতো।।মায়ের উপর অভিমান করে বসে থাকতো আয়রা।।কথা বলতো না। মেয়ের অভিমান ভাঙতে তখন অনেক কাঠখড় পোড়াতে হতো ইশরাকে।
আয়রা গুটিসুটি মেরে ইশরার বুকে ঘুমিয়ে আছে।।ইশরার কাছে আয়রার এমন ঘুমন্ত মুখটা খুব প্রিয়।। মেয়ের এই মায়াবী মুখটার দিকে তাকিয়ে হাজার জন্মের কষ্ট এক নিমেষেই ঘুচে যায়।। হয়তো এটা মাতৃত্বের স্বাদ।।যেটা তমোনা বলেছিলো।। মৃদু হাসলো ইশরা ‌।হয়তো আজ এই ডাকটার জন্যই সে ,, নিজের কাছের মানুষগুলোকে ছেড়ে এখানে চলে এসেছে।।
আলতো হাতে আয়রার মাথাটা বালিশে রাখলো ।।বেডের এক কোণে ভাজ করে রাখা ব্লাকেটটা খুলে আয়রার কোমর অবধি টেনে দিলো।। টেবিল ল্যাম্প জ্বালিয়ে উঠে দাঁড়ালো ইশরা।। খানিকক্ষণ ভালোভাবে বুকসেল্ফ থেকে খুঁজে খুঁজে কয়েকটা প্রয়োজনীয় বই বের করলো।।ব্যাগের চেইন খুলে ল্যাপটপ আর কিছু ফাইল বের করে ,,আসন পেতে সোফায় বসে পড়লো।। গভীর ধ্যান দিলো বইয়ের পাতায়।।কালকে একটা মামলার রায় হয়ে যাবে।।যে করেই হোক ইশরাকে মামলায় জিততেই হবে‌।। কারন ,, এটা তার জীবনের প্রধান লক্ষ্য।।
হুমায়ুন আজাদ এর রচিত”বই” কবিতাটি ইশরার জীবন ধারা একদম পাল্টে দিয়েছে।।

“”বইয়ের পাতায় প্রদীপ জ্বলে ,,
বইয়ের পাতায় স্বপ্ন বলে”” ।।
কবিতাটির প্রতিটি লাইন ইশরার দৃষ্টান্ত।।যখন নিজের চেনা পুরো পৃথিবী ইশরার বিপক্ষে চলে গেছে।। তখন পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ,, ইশরার বেষ্টফ্রেন্ড দুয়ান।।ইশরাকে নিজের বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।। নতুন ভাবে পড়াশোনার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।।আজ ইশরা একজন সফল লড়িয়ার ।।এখন পর্যন্ত একটাও মামলায় হারেনি।।

______________

— “আসবো মেডাম”!!(দরজায় নক করে দুয়ান)

দুয়ানের কথায় ঘুম আলগা হয়ে এলো ইশরার।।রাতে সোফায় হেলান দিয়েছিলো।। পড়তে পড়তে কখন যে সোফায় ঘুমিয়েছে ,, খেয়ালই নেই।।চোখ বন্ধ করে হাত দিয়ে ঘুমের ভাব দূর করার চেষ্টা করলো।।কোল থেকে ল্যাপটপ আর ফাইলগুলো সরিয়ে উঠে দাঁড়ালো।দুয়ানের দিকে তাকিয়ে ফোন চেক করলো ।।৮.০৫ বাজে।। তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো..

— “এই বাড়ি তোর ঘর তোর।।এখানে আসতে হলে ,,কারো পারমিশন নিতে হয়না”!!.

— এটা আমার বাড়ি হলেও বর্তমানে এই রুমটা তোর ।।তাই মানবতার খাতিরে বলিস আর ম্যানার্স বলিস ,, পারমিশন নিতে আমি বাধ্য।।(ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে দুয়ান)

ঠোঁট জোড়া প্রশস্ত করে হাসলো ইশরা।। শব্দহীন সেই হাসি।।নেই কোনো প্রশান্তি,, শুধু আছে একরাশ ক্লান্তি।।
ইশরার এমন ভাবে মুখ কুঁচকে বললো দুয়ান ।

— এতো রাত জেগে কেন পড়তে যাস বলবি একটু।।আগে নিজের শরীরের যন্ত নে ?? সুস্থ থাক।।নাহলে কিভাবে অন্যের সমস্যা সমাধান করবি!!

— সেটাই তো চেষ্টা করছি।।জানিস আজ এমন মামলার রায় হবে ,, যেখানে সন্তানের প্রতি বাবার অফুরন্ত ভালোবাসা রয়েছে।।প্রায় ১- দের বছর আগের কথা।। বাবা কাজ করতো নামীদামী বড়লোক বাড়িতে।মা সন্তান জন্মের সময় মারা গেছে।।বাবা ছোটবেলা থেকেই সন্তানকে খাইয়ে দাইয়ে বড় করেছে।। মায়ের অভাব বুঝতে দেয়নি।।বাড়ির বড় সাহেব একদিন খাবার খাচ্ছিলেন,, গরীব বাবার সন্তান তখন দূর থেকে তা ফলো করছিলো।।প্রথমে খেয়াল না করলেও বেশকিছুক্ষন পর বাড়ির মালিক খেয়াল করে।।তখন বাচ্চাটাকে অনেক মেরেছিলো।।সন্তানের শরীর থেকে অজড় ধারায় রক্ত ঝরছিল।।এমন দৃশ্য সহ্য করতে পারে নি ,,গরীব বাবা।। নিজের রাগ দমন করতে বড় সাহেবকে অনেক মেরেছিলো।। বাড়ির গার্ডরা থামাতে এলে ,,তাদেরও মারে ।।একদম বেহাল অবস্থা করে ফেলে।।প্রায় ৬ মাসের মতো তিনি লাইট সাপোর্টে ছিলেন।।এখন আগের তুলনায় অনেকটাই সুস্থ।।গরীর বাবাকে পুলিশে দিয়েছিলেন।।বুঝতেই তো পারছিস ,, বড়লোকের ব্যাপার স্যাপার।।অনেক টাকা দিয়ে ফাঁসির রায় কার্যকর করেছিলেন।। কিন্তু শেষ অবধি ফাঁসির স্থাগিত করা হয়।।আজ জার্জ আবার রায় দিবে।হয় ফাঁসি নয়তো জামিন।।আসামী পক্ষের মামলা আমি কখনো নেই না,, কিন্তু ছোট মেয়েটা কান্না আমাকে দমিয়ে দিয়েছে।।বাবা ছাড়া মেয়েটার আর কেউ নেই।।তাই মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে মামলাটা নিয়েছি।।আজ আমাকে জিততেই হবে।।নাহলে বাবা মেয়ের এমন ভালোবাসার জুটি আস্তে আস্তে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।।(একটু থেমে আবার) একজন বাবা সন্তানের জন্য পৃথিবীটা তুলে আনতে পারে ,, আরেকজন বাবা সন্তানের স্বীকৃতি দিতে নারাজ।।

— আয়ানকে প্রচুর মিস করছিস তাই না ।। তাহলে ফিরে যা!!(ইশরার কাঁধে হাত রেখে)

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোখ দুটো ভরে এলো।।ঝরে পরার আগে তর্জনী দিয়ে মুছে নিলো‌।। তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো..

— ফিরে যাওয়ার হলে এতো দূর আসতাম না।।শতকষ্ট সহ্য করে ওখানে পড়ে থাকতাম।। ওসব বাদ দে,, আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।।জয়ী অসুস্থ,,আজ আসবে না ।।আর আমার বাড়ি ফিরতে দেরী হবে ।। তুই একটু কষ্ট করে আয়রাকে স্কুল থেকে নিয়ে আসিস।।(বলেই ওয়াশরুমে ঢুকে গেল)

— এই যা ,,ওকে তো বলতেই ভুলে গেলাম।।আজ অনুরা আসবে।।(কপালে হাত দিয়ে দুয়ান)

ওয়াশরুমে দরজা লক করে কান্না ভেঙ্গে পড়লো ইশরা।।
তুমি তো অনেক সুখের আছ ।।তাহলে আমি কেন পারছি না সুখে থাকতে।।সারাদিন কাজের মাঝে ডুবে থাকি,, তবুও ভুলতে পারিনা তোমায়।। আদালতে বাবা সন্তানের মধুর সম্পর্ক দেখলে কষ্টে বুক ফেটে যায়।।
সবার কাছে একজন কঠিন উকিল হলেও ,,, নিজের মেয়ের কাজে বড্ড অপরাধী।।
________________

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে ব্যস্ত আয়ান।।ইশরা চলে যাওয়ার পর আজ প্রথমবার আয়ান অফিসে যাবে।।আজ ইশরা থাকলে আয়ানের কপালে চুমু দিয়ে অফিসে পাঠাতো।।যেমনটা আগে পাঠাতো।।ঠিক করে নিয়েছে আর নিজেকে কষ্ট দেবে না।।ভেবে নিয়েছে,, আল্লাহ যদি ইশরাকে তার ভাগ্যে রেখে থাকে ।।তাহলে ইশরা আয়ানের হবে।।এই ৫ বছরে সব জায়গায় খুঁজেছে ইশরাকে।। কিন্তু তার দেখা মেলে নি।। অনেক কষ্ট দিয়েছে নিজেকে আর দেবে না।।দেয়ালে বড় করে বাঁধিয়ে রাখা ছবিটা খুলে হাতের মাঝে বন্দি করে নিলো।। ইশরার পেটের উপর আলতো করে চুমু খেয়ে ,,বুকে জরিয়ে ধরলো।।ছবিটা সেদিনের তোলা।।যখনে ইশরার ৮ মাসের প্যাগনেন্ট ছিলো।। দুজন পাশাপাশি দাঁড়ানো।।

“” কোথায় আছো তুমি ইশুপাখি।।আজও কি আমার উপর বড্ড অভিমান করে আছো।।করাটা খুবই স্বাভাবিক।।তবে যাওয়ার আগে আমাকে মেরে ফেলে যেতে।। আচ্ছা আমার বুকে মাথা না রেখে তুমি ঘুমাতে পারতে না ,,তাহলে আজ কার বুকে মাথা রাখো।। তুমি ছাড়া আমার বুকে মাথা রাখার মতো কেউ নেই ,, তাই এখন আর আমি শান্তিতে ঘুমাতে পারি না।।আজও আমার স্বপ্নে তোমার বসবাস।।
সেদিন আমি শুধু সত্যিটা জানতে চেয়েছিলাম।
তাই রুড বিহেব করেছিলাম।।যাতে তুমি বাধ্য হয়ে সত্যি টা বলে দাও।। কিন্তু যেটা করলে ,, সেটা একদম ভিন্ন।।তোমাকে একটু আঘাত করতে গিয়ে নিজেকে আঘাত দিতে দিতে একদম ভেঙ্গে গেছি।।আচ্ছা আমার আয়রা সোনা কেমন আছে?? কতোবড় হয়েছে??বাবার উপর রেগে আছে তাই না?? সরি সোনা ,, তোর বাবাকে মাপ করে দিবো,,সে যে বড্ড পাষাণ ।।

____তুমি আমার হারিয়ে যাওয়া ভালোবাসার ?

অপূর্ণতায় জন্মানো এক তীব্র হাহাকার!!!✨

— ইফা ?
_______

আয়ান রেডি হয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো।ড্রয়িং রুম পেরিয়ে যাওয়ার আগেই থামিয়ে দিল তিথি।।

— কোথায় যাচ্ছ তুমি ।।আরেকটু পর আমাদের চট্টগ্রামের উদ্দেশে বের হতে হবে ভুলে গেছো।।

— না মা ভুলি নি।। সেখানে কয়দিন থাকবো , সেটা তো ঠিক জানি না।।তাই অফিসে গিয়ে একবার সবটা দেখে আসি।।

— তুমি আমার অফিসে যাবে না।‌তোমার অতি রাগের জন্য আজ নিজের বউ মেয়েকে হারিয়েছো।।আমার বাবাকে …!! এখন আবার অফিস টাকে শেষ করতে চাও।।(আজাদ আহম্মেদ)

কোনো বাক্য উচ্চারণ করলো না আয়ান।।মাথা নিচু করে পূর্নরায় নিজের রুমে চলে এলো।। মাথায় হাত দিয়ে বেডের উপর বসে আছে।।ইচ্ছে করছে সবকিছু ভেঙে ফেরতে ।। কিন্তু পারছে না,, সে চায় না আর রাগ দেখাতে।। একবার রাগ দেখিয়ে তো ইশরাকে আর আয়রাকে হারিয়েছে। আবার রাগ দেখালে যারা বাকি আছে ,, তাদের হারাবে।।
বদলে গেছে সবকিছু ।।কারো থাকা না থাকায় একটু যায় আসলেও ,, থেমে থাকে নি অন্যে কিছু।।ইশরা চলে যাওয়ার পর আজাদ আহম্মেদ কখনো ভালোভাবে কথা বলনি আয়ানের সাথে।। ছেলের উপর অনেক অভিমান জমে আছে তার।। আয়ানের জন্য রুহান আহম্মেদ হার্ট অ্যাটাক করে মারা গেছে।।রিহুর অবস্থাও তেমন ভালো নয়।।
এমন সময় কাঁধে হাত রাখলো তমোনা।।আজ এমন পরিস্থিতির জন্য একমাত্র দায়ী সে।। আয়ান কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে পেছনে তাকালো।। তমোনাকে দেখে আবার চোখ সরিয়ে নিলো।।তমোনা আয়ানের পাশে বসে মাথা নিচু করে বললো…

চলবে..??

কসমের ব্যাপারটা নিয়ে একসময় আমি নিজেও কনফিউজড ছিলাম।। ভাবতাম আমরা কসম করবো ,, সেখানে আল্লাহকে টেনে আনলাম।।পরে যখন কসম রাখতে না পারি ,, তখন তাকে অপমান+দায়ি করা হয়।। একদিন স্যার আমার এই বিষয়টা পুরো ক্লিয়ার করে দিয়েছিলো।। কিন্তু কালকের পর্বটা লেখার সময় স্যারের কথাটা ভুলে গিয়েছিলাম।।তাই জন্য আমি দুঃখিত।।আর ভুলটা যারা ধরিয়ে দিয়েছিলেন ,, তাদের অনেক ধন্যবাদ+ ভালোবাসা ??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here