অন্যরকম_ভালোবাসা ?পর্ব::০৮

0
3102

অন্যরকম_ভালোবাসা ?পর্ব::০৮
#ইফা_আমহৃদ

— “”লজ্জা করে না ,, একটা ছেলের হাতে ড্রেস চেঞ্জ করতে চাইছো। হসপিটালের এডমিট হয়ে,, নাকি বিয়ের পর সেই জ্ঞানটুকুও লোপ পেয়েছে।। তাছাড়া ডাক্তার তোমাকে নড়াচড়া করতে বরণ করেছে ,, ড্রেস চেঞ্জ করতে নয়””।।(মুখ কুঁচকে আয়ান)

— “”একদম বাজে কথা বলবেন না।।আমি আপনাকে চেন্জ করিয়ে দিতে বলেছি ।।কই আমার তো কিছু মনে পড়ছে না।। আমি আমার হাজব্যান্ড কে বলেছি।।তাহলে আপনার গা জ্বলছে কেন??ইচ্ছে হলে চেঞ্জ করিয়ে দিন নয়তো ফোনটা এগিয়ে দিন।।মেঘকে ফোন করে এখানে আসলে বলি।।(একটু ভেবে আবার ইশরা)আচ্ছা আয়ান ,, আপনার কাছে মেঘের কন্টাক্ট নাম্বার আছে ।।আমি নাম্বারটা একদম ভুলে গেছি।।না থাকলে সমস্যা নেই,,, মাকে ফোন করে নিয়ে নেই “”??(ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে)

— “”একদম খুন করে ফেলবো মেঘের নাম এই মুখে আনলে ।।এই মুখে শুধু আয়ান নাম থাকবে ।।মুখে কেন ,,সব জায়গায়”” ।।(রাগি দৃষ্টি দিয়ে আয়ান)

বলে টান মেরে হাত থেকে জামা কাপড় নিয়ে চেঞ্জ করাতে লাগলো।।আয়ান রাগি রাগি মুখটা দেখে ইশরা বেশ ইনজয় করছে ।। আবার বিরক্তি আর লজ্জা দুটোই পেয়েছে আয়ানের দুষ্টুমিতে।।মুখ ফুটে কিছু বলেনি ,, শুধু সহ্য করেছে ।।নয়তো আয়ান আরো দুষ্টুমি করবে।। আয়ান শুধু ড্রেস চেঞ্জ করেই দেয় নি ,, মাঝে মাঝে ইশরার কথার তৃক্ততে দুষ্টুমিও করেছে।। ইশরাকে বেডে বসিয়ে দিয়ে পাশে বসলো আয়ান।।ইশরার দুগালে নিজের হাতে রেখে বললো…!!

— “”আমি বারবার তোমার সাথে কতো বাজে বিহেব করেছি।। প্রেগন্যান্ট অবস্থায় বেল্ট দিয়ে পিটিয়েছি ।। মাঝরাতে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছি।। হসপিটালে একা রেখে চলে এসেছি আর যাই নি।। তারপরও তুমি আমার উপর একটুও কেন রাগ করোনি।।আমি যখন অন্যায় করবো ।।তুমি রাগ করবে ,,আমাকে প্রচুর বকবে।।নাহলে নিজের কাছে নিজেকে বড্ড ছোট মনে হয়””।।

— “”আমি সবটা জানি আয়ান।।আপনি কেন আমাকে মেরেছেন,, বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে,, হসপিটালে রেখে এসেছেন সবটা””।।

ফ্ল্যাসব্যাক ____

আয়ান বেরিয়ে যাওয়ার পর আস্তে আস্তে উঠে ,,বেডে হেলান দিয়ে বসে পড়লো ইশরা।। এতোক্ষণে মেঘও ইশরার পাশে এসে বসেছে।‌ মেঘের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো ইশরা…

— ””কি দরকার ছিলো মেঘ ,,,আয়ানকে এভাবে বলার।। জানি না ,, তোমার এমন কথায় মুখ ভাড় করে কোথায় বসে আছে।।ভালো লাগে না “”।।(বিরক্তি নিয়ে ইশরা)

— “”লাইক সিরিয়াসলি ইশরা।। তুই এখনো আয়ানের কথা ভাবছিস।।ওর মতো একটা ছেলের সাথে সারাজীবন কাটাতে চাস ।।আমি সত্যিই বিলিভ করতে পারছি না””।।

— “”জাস্ট শাট আপ মেঘ।।আমি আয়ানকে ভালোবাসি।।ওর সম্পর্কে তুমি একদম বাজে কথা বলবে না।। আয়ান ভুল করেছিলো ,,আর সে তার ভুল বুঝতে পেরেছে ।।সংশোধন করার চেষ্টা করেছে ,, তাই আমি আমার হাজব্যান্ডের সম্পর্কে কারো মুখে কোনো বাজে কথা শুনতে চাই না””।।(চেঁচিয়ে বললো ইশরা)

— “”ইশরা,, একসময় তোর আর আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিলো ।।সেই কথা তুই ভুলে যাচ্ছিস””।।(জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আয়ান)

— “”বিয়ে তো হয়নি ।। ইশরাকে বিয়ে করার জন্যই তো এতোবড় নাটক সাজিয়ে ছিলি।। কিন্তু দেখ তোর ইচ্ছে পূরণ হলো না””।। (রুমে ঢুকতে ঢুকতে তমোনা)

— ””মানে”” !!( অবাক হয়ে ইশরা)

তমোনাকে ভেতরে আসতে দেখে ভয় পেয়ে গেল মেঘ ।।মেঘ যতদূর জানে তমোনা বাড়ি ফেরার জন্য বেরিয়ে ছিলো।।তাহলে এখানে এলো কিভাবে।।তমোনা ফোন ফেলে গিয়েছিল।।সেটা নিতে এসে আয়ানকে এভাবে হনহন করে বেরুতে যেতে দেখে‌।তখনই সন্দেহ হয়েছিলো।।তাই তাড়াহুড়ো করে চলে এলো।।
তারপর তমোনা ইশরাকে সব খুলে বললো ।। রৌদ্র জুবায়ের যে আয়ান আর মেঘকে একসাথে দেখে ছিলো।।কি কি কথা বলেছিলো।। কিন্তু ভিডিওটা ব্যাপারে কিছু জানে না,, তাই বলতে পারলো না।।ইশরা তমোনার মুখ থেকে কথাগুলো শুনে মেঘের ফোনটা হাতে নিয়ে গ্যালারী চেক করে ভিডিও বের করলো।।
ইশরা মেঘের পাসওয়ার্ড যানে,, তাই সমস্যা হলো না।।
ভিডিওটা দেখে ইশরা নিজেও ধমকে গেল।।নিজেও জানে না এই ভিডিওটা কে করছিলো।।মেঘকে ঠাস ঠাস দুটো চড় দিয়ে কেবিন থেকে বের করে দিলো।।

বর্তমানে____

— “”কিন্তু জানেন কি আয়ান ,, আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন নি।।যদি এক বিন্দু বিশ্বাস করতেন ,, তাহলে আমাকে এসে সরাসরি প্রশ্ন করতেন।। আমি জানি না আপনি পুরো ভিডিও দেখেছেন কিনা।।মনে হয় দেখেন নি আর সাউন্ডও শোনেন নি।। তবুও বলছি,, সেদিন মেঘের সাথে আমার তেমন কিছু হয়নি।। মেঘের ওমন বিহেবে আমি প্রায় বিয়েটা নাকোচ করে দিয়েছিলাম।। কিন্তু বাবার সম্মানের কথা ভেবে আবার রাজি হয়েছিলাম।।আর তার ভেতরেই আপনি আমাকে তুলে এনে বিয়ে করে নিলেন””।।(একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ইশরা)আর রাগের কথা বলছেন??আমি আপনার উপর একটুও রেগে নেই আয়ান।। মনের কোণে শুধু অভিমান জমে আছে।।আমি ভাবতে পারি নি,, একজন বাইরের লোকের কথায় আপনি ,, আমাদের ছোট্ট আয়রাকে অস্বীকার করবেন””।।

সত্যিই তো আয়ান একবারও ইশরাকে জিজ্ঞাসা করেনি ।।তাহলে কি ইশরার কথাটাই ঠিক ,, আয়ানের বিন্দুমাত্র বিশ্বাস নেই নিজের ভালোবাসার উপর।।আয়ান ইশরার গাল থেকে হাত সরিয়ে নিলো।।ইশরার মাথাটা নিজের বুকে রেখে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো…

— “”সরি ইশুপাখি ।।আর কখনো তোমাকে অবিশ্বাস করবো না।। সারাজীবন আমার ইশুপাখি আর আয়রা সোনাকে এইভাবে আমার বুকে আগলে রাখবো””।।

— “”সেটাই যেন হয় আয়ান।। আয়রা আমার স্বতিত্ব ।।ওকে দিয়ে আমি মাতৃত্বের স্বাদ নিচ্ছি।। আয়রার দিকে পরিচয় নিজে প্রশ্ন উঠা মানে ,, আমার স্বতিত্বের উপর আঙুল তোলা।।আর একজন নারী কখনো তার স্বতিত্বের কলঙ্ক সহ্য করতে পারেনা।।এমন যদি কোনো আবার রিপিট হয় ,, তাহলে সেদিনই আপনার সাথে আমার শেষ দিন””।।

আয়ান আর কথা বাড়ালো না ।।ইশরাকে কোলে তুলে বেডে শুইয়ে দিলো।। দরজা লক করে,, লাইট অফ করে ইশরার পাশে শুয়ে পড়লো।। ইশরার মাথাটা নিজের বুকে রেখে ,, মাথায় রেখে বুলিয়ে দিতে লাগল।।বাড়ি ফেরার পরে ইশরাকে জোর করে হালকা খাবার খাইয়ে ছিলো ।। আর ইশরার কথাগুলো শুনে আয়ানের খাওয়ার ইচ্ছে একেবারে চলে গেছে।।।

___________________

কথায় আছে না,,,””Time and tide Wait for none”” ।।সময় আর স্রোত কখনো কারো জন্য অপেক্ষা করে না।। দেখতে দেখতে কেটে গেছে দুই মাস।।বদলে গেছে সবকিছু ।।ইশরার এখন আট মাস চলছে।।আগের তুলনায় পেট অনেকটা বেড়ে গেছে।। চোখের নীচে কালো হয়ে গেছে।।নিজের বর্তমান অবস্থা দেখে ইশরা মাঝে মাঝেই মন খারাপ করে বসে থাকে।। আবার আয়রার কথা ভাবলে সব মন খারাপ দূর হয়ে যায়।।আয়ানকেও প্রচুর পরিমাণে বিরক্ত করেছে।।মাঝরাতে বেলকেনিতে গিয়ে বসে থাকে ,, এটা খাবো ওটা খাবো বলে আবদার করে।।আর আয়ান সব আবদার পূরণ করার চেষ্টা করছে।।আয়ান এখন যথেষ্ট পরিমাণে সেনসেটিভ ইশরা আর আয়রার ব্যাপারে।। কোথাও যেতে চাইলে আয়ান নিজে গিয়ে জায়গা পরখ করে আসবে ।। তারপর ইশরাকে কোলে করে নিয়ে যাবে।।
বর্তমানে ইশরা একা বেডে হেলান দিয়ে ফল খাচ্ছে।। আয়ান ইশরার আলট্রাস্নোগ্রাফির রিপোর্ট আনতে গেছে।। ডাক্তার মাসে দুই বার আলট্রাস্নোগ্ৰাফি করতে বলেছে,, সেখানে আয়ান চারবার করছে।। যাওয়ার আগে ফল কেটে এনে দিয়েছে আর বলেছে ,,,” শেষ করে ঘুমিয়ে পড়তে ।।ইশরা এখনো ফল খাওয়া শেষ করতে পারে নি ,, ঘুম তো দূরের কথা।।কয়েক টুকরো ফল চিবিয়ে প্লেট টা ঠেলে দূরে রেখে শুয়ে পড়লো ।।
ঘুমন্ত অবস্থায় কেউ যেন ইশরাকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।। কোথায় জানি পড়েছিলাম,, “”বেশিক্ষণ ঘুমন্ত মানুষের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন ,, ঘুম ভেঙ্গে যায়।”” ইশরার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি।। পিটপিট চোখ খুলে তাকাতেই ,, সামনে আয়ানের গম্ভীর মুখটা স্পষ্ট দেখতে পেল।। কিছু না বলে রিপোর্ট টা হাতে ধরিয়ে দিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে আয়ান।। রিপোর্টে এখনো বেবীর পজিশন অনেকটা আগের মতোই আছে।। পুরোপুরি নরমাল হয়নি।। রিপোর্ট টা টেবিলের উপর রেখে ,,,হাত পেটে হাত রেখে পাশে ফিরে শুয়ে রইলো।। কিছুক্ষণ পরই ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দ হলো।। কোমরে কারো ঠান্ডা স্পর্শ আর গলায় কারো ঠোঁটের স্পর্শ প্রকট আকার ধারণ করলো।। ইশরার কানের কাছে মুখ এনে বিরবির করে বলে উঠলো..

— “”আই লাভ ইউ ইশুপাখি।।চিন্তা করো না ,, এখনো আরো দুই মাস বাকি আছে।।দেখবে রিপোর্ট আরো নরমাল হয়ে যাবে””।।

কোনো কথা বললো না ইশরা ।।সে গভীর ভাবনায় বিভোর।। সত্যিই কি সব ঠিক হয়ে ।।তাও আবার এতো সহজে‌।। আয়ান বুঝতে পারলো ইশরার মনের অবস্থা ।।ইশরাকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে বেলকেনির দিকে পা বাড়ালো।। দোলনায় বসিয়ে দিয়ে পাশে বসে পড়লো আয়ান।। ইশরার মাথাটা কাঁধে রেখে ব্যস্ত হয়ে পড়লো চন্দ্র বিলাপ করতে।। চাঁদের স্নিগ্ধ আলো এসে পড়ছে ইশরার মুখে ।।আর আয়ান ইশরার সেই স্নিগ্ধ মুখটা দেখছে।।

__________________

আয়ান ইশরার জন্য নিচে খাবার আনতে গেছে।।আর ইশরা শাওয়ার নিয়ে সবে বেরিয়েছে।। মাথায় টাওয়াল পেঁচিয়ে বেডে বসতেই চোখ পড়লো ড্রেসিং টেবিলের আয়নায়।। আজ কতোদিন পর আয়নাতে নিজেকে দেখছে ,, তার হিসেব নেই ।।ইশরা আস্তে আস্তে উঠে আয়নার সামনে দাড়ালো।নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে ব্যস্ত হয়ে গেল।। পেটটা আগের থেকে অনেকটা বেড়েছে।।চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে।।পড়নের জামাটা শরীরের সাথে লেপ্টে রয়েছে।।শরীরে বিন্দু বিন্দু পানি।।ইশরা কাবার্ড খুঁলে একটা ইন্ধি ফিতা বের করে ,, পেটের আয়তন মাপতে লাগলো।। এর মধ্যে খাবার নিয়ে রুমে হাজির হলো আয়ান।।ইশরার এই ধরনের পাগলামীতে শব্দ করে হেঁসে দিলো সে।।হাসির শব্দ পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন তাকিয়ে আয়ানকে দেখে মাথা গরম হয়ে গেল ইশরার।।সাপের মতো ফুঁসতে ফুঁসতে বললো….!!

— “”আপনি তো সবসময় আমার পাশে থাকতে চান তাইনা আয়ান।।কষ্ট করে প্রেগন্যান্ট হয়েছি আমি ।।আর দুই মাস পর যখন আমার লিভার পেইন উঠবে,, তখন আপনার ডেলিভারি করবো।। তারপর দেখা যাবে ,, এই হিংলি বিংলি দাঁতগুলো কোলগেটের এড দেয় নাকি ছাদে রোদ দেওয়া থাকে ।।হা হা হা “”।।???

চলবে..??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here