অন্যরকম_ভালোবাসা ? ইফা_আমহৃদ পর্ব::০৯

0
2638

অন্যরকম_ভালোবাসা ?
ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০৯

— “”জীবনে কখনো শুনেছ ,, ছেলেরা প্রেগন্যান্ট হয়,, লেবার পেইন ওঠে কিংবা ডেলিভাডি করা হয় ।।এই ধরনের উদ্ভর কথা বার্তা তোমার মতো পাগলীর মাথাই একদম ঘুড়ে””।।(পেছনে থেকে ইশরাকে জরিয়ে ধরে আয়ান)

— “”কেন হবে না।। (একটু থেমে আবার ইশরা) আচ্ছা আয়ান যদি ছেলেরা প্রেগন্যান্ট হতো ।।নয় মাস সন্তানকে গর্ভে ধারণ করতো,, পেইনের যন্তনা সহ্য করতে হতো ,,তাহলে তারা কখনো কোনো‌ মায়ের সাথে বাজে বিহেব করতো না।। হাজারো বৃদ্ধা আশ্রম আজ শূন্য পড়ে থাকতো ।। স্বামী তার স্ত্রীর কষ্টটা অন্তত বুঝতে পারতো।।””(আয়ানের হাতের উপর হাত রেখে ইশরা)

কথাগুলো বলতে বলতে মন খারাপ হয়ে গেল ইশরার।। আয়ানের দুষ্টুমিতে বলা একটা কথায় এভাবে যে রিয়েক্ট করবে ইশরা ।।সেটা আয়ানের ধারনা করার বাইরে ছিল।। তবে ইশরার কথাটা কোনো অংশে ফেলে দেওয়া যায় না।। সত্যিই যদি এমন যন্ত্রনা পুরুষ জাতি সহ্য করতে তাহলে এই পৃথিবীটা আনন্দে ভরে উঠতো ।।কোনো বৃদ্ধার আশ্রয় বৃদ্ধাশ্রয়ে হতো না।। দরজার দিকে তাকিয়ে তার সন্তানদের আসার জন্য অপেক্ষা করতে হতো না।। অপেক্ষা করতে করতে আঁচলের মধ্যে চোখের অশ্রু মুছতে হতো না।। পৃথিবীটা বরই অদ্ভত আজ কাল মানুষ তার নিজের রক্তের সম্পর্ককে অস্বীকার করছে।। যে এই পৃথিবীর আলো দেখিয়েছে তাকে আজ অন্ধকারে থাকতে হচ্ছে।। গিরিগিটির মত বারবার নিজের রুপ বদলাচ্ছে।।এরাই হয়তো স্বার্থপর মানুষ।।আয়ান ইশরার মন খারাপ বুঝতে পেরে কথা ঘুড়ালো।।

— “”আয়নাতে দেখো আজ তোমাকে কতোটা কিউট লাগছে।। আমি তো দেখে একদম ফিদা হয়ে গেছি””।।

— “”হইছে ,, হইছে ??।।আর আমার মন ভালো করতে মিথ্যা বলতে হবে না।।আমি নিজেই দেখতে পারছি কতো সুন্দর হয়েছি””।। (মুখ কালো করে ইশরা)

— “”আমি কখন বললাম ,, তুমি সুন্দর হয়েছো ।।আমি বলেছি ,,কিউট হয়েছ””।।

— “”কিউট আর সুন্দর একই ।। পার্থক্য কোথায়।””।

— “”একদম ভুল।।কিউট আর সুন্দরের মধ্যে অনেক পার্থক্য।। সুন্দর মানে ,, দেখলে বারবার ছুঁতে ইচ্ছে করে ,, মনকে আকৃষ্ট করে এমন।।আর কিউট মানে গোল গোল,, মিষ্টি মিষ্টি টাইপের ।। যাদের দেখলে আদর করে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে।। আর তুমি হচ্ছে একদম সেই টাইপের।।আর এখন তো তুমি মটু হয়ে একদম নাদুসনুদুস গুলুগুলু হয়ে গেছো””।।(ইশরার গালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে আয়ান)

— “”মিথ্যা কথা”” ।।

— “”বিশ্বাস হচ্ছে না বুঝি ।।ঠিক আছে ,,আগে খেয়ে নাও।।পড়ন্ত বিকেলে দেখাচ্ছি কেমন””।।।।

ইশরা আর কোনো কথা বাড়ালো না ।।মাথা নাড়ালো ।।যার অর্থ ঠিক আছে ।।বেডে গিয়ে হেলান দিয়ে বসে পড়লো।। নিচে পড়ে থাকা ইন্ধি ফিতাটা তুলে আবার স্বযন্তে কাবার্ডে রেখে দিলো আয়ান।।। খাবার মাখিয়ে ইশরাকে খাইয়ে দিচ্ছে‌।।আর ইশরা শান্ত হয়ে খাচ্ছে।।

_______________

একটার পর একটা শাড়ি ছুড়ে ফেলছে আয়ান।। নিজের পছন্দমত একটাও শাড়ি খুঁজে পাচ্ছে না।।ইশরা আধ ঘন্টা আগে জামা কাপড় চেঞ্জ করে ,, শাড়ি পড়ার উদ্দেশ্য বসে আছে।। আধ ঘন্টার চেষ্টার পর একটা লাল রঙের শাড়ি খুঁজে বের করলো আয়ান।। সিল্কের,, লাল রঙের শাড়ির উপর কালো রঙের মোটা পাইর।।শাড়িটা খুলতেই বিনা বাক্যয় পছন্দ হয়েছে আয়ানের।।
ইশরার কোমরে শাড়ির একপ্রান্ত গুজে ,,অন্য প্রান্ত কাঁধে রাখল।। আস্তে আস্তে শাড়ি খোলা অংশটুকু কুচি করে ইশরার দিকে এগিয়ে দিলো।।আর বললো,, ” আস্তে আস্তে,,, সাবধানে কুচিগুলো কোমরে গুজে নাও।। কিন্তু ইশরার সেদিকে খেয়াল নেই ,,সে আয়ানকে দেখতে ব্যস্ত।। আয়ান কতো সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিচ্ছি ,, সেটা দেখতে মন দিয়েছে।। কুচিগুলো নিজেই কোমরে গুজে দিলো ।। আয়ানের হঠাৎ স্পর্শতে কেঁপে উঠলো ইশরা।।সাথে চোখ বন্ধ করে নিলো।।আয়ান ইশরার দিকে তাকিয়ে ,, হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো।।ইশরার পা নিজের হাঁটুর উপর রেখে ,, হাতের কুড়ে আঙুল দিয়ে আলতা পড়িয়ে দিতে লাগলো।।পায়ে ঠান্ডা কিছুর স্পর্শ পেয়ে চমকে চোখ খুলে নিলো ইশরা।। নিজের পা আয়ানের থেকে ছাড়িয়ে আনতে চাইলে ,, আয়ান জোরে পা চেপে ধরলো।।জোরে চেপে ধরায় ইশরা ব্যাথা পেল বটে কিন্তু আর নড়াচড়া করলো না।।সে ভালোভাবে জানে ,, আবার নড়লে আরো ভয়ংকর কিছু তার জন্য অপেক্ষা করছে।
আলতা দেওয়া শেষ করে ড্রেসিং টেবিল থেকে কাজল আর হালকা গোলাপি রঙের লিপস্টিক এনে ইশরার কাছে রাখলো।। যত্নসহকারে লিপস্টিক লাগিয়ে দিলো।।কাজল দিতে গেলেই বারবার পলক ফেলছে ইশরা।।মনে হচ্ছে ,,এই বুঝি কাজল চোখের মধ্যে ঢুকে গেল।।আর চোখ দুটি চিরতরে হারিয়ে গেল।।আগে কখনো চোখে কাজল দেই নি ইশরা।। সবসময় ভয়ভয়ে থাকতো ।।তার ধারনা কাজল দিতে গেলে চোখে যাবেই ,, যাতে ইশরা দৃষ্টিতে শক্তি হারিয়ে ফেলবে।।তাই সবসময় আই-লেনার দিয়ে কাজ সেরেছে।। আয়ান টানাটানা করে কাজল দেওয়া শেষ করে চুলগুলো হাত খোঁপা করে দিলো।।ইশরার কানের কাছে নিজের মুখ নিয়ে বললো,,

— “”হায় মে তো মারযাবা ।। তোমার এই রুপে তো আমাকে ঘায়েল করে ফেলেছো।।জানো কতোটা সুন্দর লাগছে ।। আমার অনেকদিনের ইচ্ছে ছিলো তোমাকে এমন সাঝে দেখার ।। তোমার চরণ আলতার লাল রঙের ডুবানো থাকবে ,, ঠোঁটে থাকবে মিষ্টি করে ভুবন ভোলানো হাসি,,, কাজলে রাঙানো থাকবে আঁখি ।।আমি এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকবো তোমার মুগ্ধ নয়ন জোড়ায়।।আচ্ছা তুমি কখনো কাজল দাও নি কেন””?

— “”আমার ভয় করে যদি চোখে ঢুকে যায় “”।।

— “”আজ থেকে আমি তোমাকে প্রতিদিন কাজল দিয়ে দিবো।।জানো না কাজলে তোমার নয়ন জোড়া কতোটা সুন্দর লাগছে। ইচ্ছেতো করছে এখনই তোমার মাঝে ডুবে যাই,, কিন্তু আমি চাই না তোমার সুন্দর সাঝ নষ্ট হোক””।।(কানের কামড় দিয়ে)

— “”আহহ ,, লাগছে তো ।।রাক্ষস একটা ,,কেউ এভাবে কামড় দেয়””।।(কানে হাত বুলাতে বুলাতে ইশরা)

— “”এটাকে কামড় বলে না ,, লাভ বাইট বলে ।। তোমার এই সুন্দর রুপে যাতে কেউ নজর না দেয় তাই দিলাম””।।(একই জায়গায় ওষ্ঠ ছুঁইয়ে দিয়ে আয়ান)

— ‘”আমি সুন্দর হতে চাই না ।।কিউট হতে চাই”” ।।(গম্ভীর মুখ করে ইশরা)

— “”ওম্মা ,, তুমি এই কথা বলছো ।।আচ্ছা ঠিক আছে বলবো,, একটা মুচকি হাসি দাও”” ??

— “ইইইই”??( দাঁত বের করে ইশরা)

আয়ান দেরী না করে ফোন বের করে ইশরার ওমন হাসিমাখা দাঁত বের করে কয়েকটা পিক তুলে নিলো।।মুখে হাসি রেখে বললো…

— “”বেষ্ট পিক ওফ দা ইয়ার!!এই পিকটা বড় করে বাঁধিয়ে দেয়ালে টাঙিয়ে রাখবো‌‌।।আর সবাইকে দেখাবো””।।

— “”এই না না ,, প্লীজ ডিলেট করে দাও ।।সবাই দেখলে কি বলবে””??

— “”ডিলেট করবো ,,তবে আমাকে তুমি করে বলতে হবে ””??

— “”অভ্যাস নেই তো “”( ঠোঁট উল্টে ইশরা)

— “”আস্তে আস্তে হয়ে যাবে ।। বলো ওগো শুনছো ,, আমার ওমন পিকটা প্লীজ ডিলেট করে দাও”” ।।(ভাব নিয়ে আয়ান)

–“” না পারবো না””!!

— “”তাহলে করবো না””।।

— “”ঠিক আছে ।।ওগো শুনছো,,, আমার ওমন পিকটা প্লীজ ডিলেট করে দাও “”।।(মুখ ফুলিয়ে আয়ান)

— “”প্রথমবার তাই ঠিক আছে ,, পরেরবার থেকে ফিলিং দিয়ে বলবে ,, ঠিক আছে””।।

— “”ঠিক আছে”’।।

আয়ান ইশরার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে পিকগুলো ডিলেট করে আবার কয়েকটা পিক তুলে নিলে ।। সর্বশেষে ৩ সেকেন্ড দিয়ে আয়ান আর ইশরার একটা ডুয়েট পিক তুলে নিলো।।ইশরা নিজের অজান্তেই গুনগুন করে সুর তুললো গানের ।। আয়ান ইশরার গানে মন দিয়ে শুনতে লাগলো ….

??হয়ে আয় বন্ধুজন ,,,হয়ে আয় না অবাধ্য মন
বেসেছি তোকেই ভালো …..
হয়ে যা জলপরী ,,আমি হবো তোরই পালক
বেসেছি তোকেই ভালো !!!!!
আজ হোক দিনটা তোর ,, আজ হোক দিনটা আমার
চলনা এভাবে মরতে চাই বারেবার ??

?? হয়ে আয় বন্ধুজন,,, হয়ে আয় না অবাধ্য মন
বেসেছি তোকেই ভালো…
হয়ে আয় জলপরী ,, আমি হবো তোরই পালক
বেসেছি তোকেই ভালো!!!!??

___________________

এভাবে ভালোবাস খুনসুটিতে কেটে গেল আরো অনেকটা সময় ।। কেটে গেল অনেকদিন।।ইশরা এখন সাড়ে নয় মাস চলছে।।ডাক্তার ১৭ দিন পরের ডেট দিয়েছে।।বাড়ির সবাই যথেষ্ট সেনসিটিভ ইশরার ব্যাপারে।। রিপোর্ট আগের চেয়ে অনেকটা নরমাল ।। তবুও আয়ান রিস্ক নিতে চায় না।। তাই নরমাল ডেলিভারি করবে না।। তিথি ,,তমোনা,,আর অনয়ার জ্বালায় আয়ান একটু শান্তিতে ইশরাত কাছাকাছি থাকতে পারে না ।।তারা এসে সারাদিন বসে থাকে ।।রাতে একটু সময় পায় অবশ্য,, কিন্তু তখন ইশরা ঘুমিয়ে থাকে ।।

ইশরা বেডে হেলান দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ছে।।আর আয়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।। আয়ান উবুত হয়ে ইশরার কোলে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে।।দরজা খেলার আওয়াজে বই থেকে মুখ সরিয়ে দরজার দিকে তাকালো।।তিথি আর দাদি এসেছে।।এখন প্রায় রাত ১০ টার বেশী বাজে।। এতো রাতে এদের আসার কারন খুজে পেল না ইশরা।।ইশরার ভাবনার মাঝে আয়ানকে ডেকে তুললো তিথি।।

— “”অভি তাড়াতাড়ি উঠ বাবা ।। নিচে গিয়ে তোর দাদুর পাশে ঘুমিয়ে পড়”” ।।

দাদুর পাশে ঘুমানোর কথা শুনে ধরপর করে উঠে বসলো আয়ান।। ঘুমের কারনে চোখ লাল হয়ে আছে।।

চলবে..??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here