#অন্যরকম_ভালোবাসা ?পর্ব::০২
#ইফা_আমহৃদ
বউ সেজে বসে আছে ইশরা।। তখনই ঝড়ের বেগে কেউ রুমে ঢুকে ,, ইশরার হাত ধরে টেনে দাঁড় করিয়ে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলো।।কি হলো ভালো ভাবে বোঝার আগেই ছিটকে নিচে পড়ে গেল ।।গালে হাত দিয়ে ,,পেছনে ফিরতেই আয়ানের অগ্নিরুদ্ধ মুখটা দেখতে পেল।। আজ ৬ মাস পর আয়ানকে এখানে ,, এমন অবস্থায় দেখে কিছুক্ষণের জন্য থেমে গেল ইশরা।।তাহলে বাহিরের চেঁচামেচির কারণ আয়ান।।ভাবতেই বুক কেঁপে উঠলো ইশরার।।
বামহাত ঠেকিয়ে মাটিতে ভড় দিয়ে উঠার আগেই আয়ান চুলের মুঠি ধরে টেনে দাঁড় করালো।
আয়ানের হাতের উপর নিচের হাত রেখে চুল ছাড়াতে ব্যস্ত যখন ,, তখন প্রশ্ন ছুড়লো আয়ান।।।
— সাহস কি করে হয় তোর ,,, আমার কাছে ডিভোর্স পেপার পাঠানোর।।সেদিন তো দিব্বি বলেছিলি তোর মুখের কথাই যথেষ্ট ।।এখানে এসে নতুন নাগর জুটিয়েছিস।।
আয়ানের কথায় আকাশ থেকে পড়লো ইশরা। সেটা কিভাবে সম্ভব ইশরা নয় বরং আয়ান ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছিলো।।তাও আবার আয়ানের সাইন সহ।।
— কি সব বলছেন আপনি !! আমি কেন আপনাকে পেপার পাঠাবো।। আপনি নিজেই আমাকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়েছেন ।।আর সাথে একটা চিঠিতে লিখেছেন ,, আপনি আমার সাথে থাকতে পারবেন না।।তাহলে এখানে এসে সিনক্রেট করার কি আছে।।
ইশরার কথায় কোনো উত্তর দিলো না আয়ান।। আয়ান নিজেও অবাক ,,সে নিজেও কোনো চিঠি কিংবা ডিভোর্স পেপার পাঠায় নি।।এখন এইসব ভাবার সময় আয়ানের কাছে নেই ।। আগে এখান থেকে বের হক,,তারপর এক এক সব মেলাবে ।। হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগলো ইশরাকে।।এমনিতে ৬ মাসের অন্তঃসত্ত্বা আবার বিয়ের ভারী শাড়িতে হাঁটতে পারছে না ।।এক পর্যায়ে কোমরে গোঁজা কুচি দেওয়া অংশটুকু খুলে পড়ে গেল।।একহাত দিয়ে সবগুলো অগোছালো কুচি মুঠো করে পেটে হাত রাখলো সে।। ড্রয়িং রুমে পর্যন্ত আসতেই আয়ানের সামনে এসে দাড়ালো রৌদ্র জুবায়ের।।
— হাত ছাড়ো আমার মেয়ের।। (চেঁচিয়ে ) লজ্জা করে না।।একটা মেয়ের বিয়ের আসর থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছ।।নাকি আর কিছু করার বাকি আছে ,,যে করবে।।
— আমি কোনো মেয়ে নিয়ে যাচ্ছি না শ্বশুর মশাই ।।আমি আমার বিয়ে করা বউকে আর অনাগত সন্তানকে নিয়ে যাচ্ছি ।।আর আমাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে ,, আইনি ব্যবস্থা নেবো।।শরিয়ত মোতাবেক ,,
প্রেগন্যান্ট অবস্থায় কোনো মেয়ের বিয়ে তো দূরে থাক,, ডিভোর্সও হয়না।(বাঁকা হেসে আয়ান)
আয়ানের কথায় দমে গেল রৌদ্র জুবায়ের।। এখন যদি সত্যিই পুলিশ আসে ,, তাহলে বিয়ের বদলে জেল খাটতে হবে তাকে ।। আয়ানের হাত ছেড়ে দিয়ে মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে সামনে থেকে সরে,, তমোনা জুবায়েরের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো ।। আয়ানও আর কথা বাড়ালো না ,, হাত ধরে সামনে হাঁটা দিলো ।। কিন্তু পেছনে ইশরা পেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।। ছেলেদের হাঁটার সাথে একটা মেয়ে কখনোই হেঁটে পারবে না।।আর ইশরার পক্ষে তো সম্ভবই নয়।। আয়ান পেছনে তাকিয়ে ইশরার ফেকাসে মুখটার দিকে তাকিয়ে সবকিছু বুঝতে নিলো।।শক্ত করে ধরে রাখা হাতের বাঁধন টা আলগা করে ইশরার দিকে এগিয়ে গিয়ে,, কোলে তুলে নিয়ে হাঁটা ধরলো।।বাড়ি ভর্তি মানুষের সামনে কোনো মেয়েকে কোলে তুলে নিলে,,সে নির্ভাবনায় লজ্জা পাবে।। ইশরার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।। লজ্জায় লাল রং ধারন করা মুখটা আয়ানের বুকে লুকালো।।
________________
ফ্রন্ট সিটে ইশরা কে বসিয়ে দিয়ে দরজাটা লক করে আয়ান।। নিজের এসে তার পাশে ড্রাইভিং সিটে বসে দৃষ্টি দিলো ইশরার দিকে।। ইশরা কাঁদছে ,, তবে একান্না
কষ্টের নয় আনন্দের।।আয়ানের আগমনের আগে মুহূর্ত পর্যন্ত শুধু একটা জিনিসই চেয়েছে ইশরা,, আয়ান যেন সেদিনের মতো এসে ,, তাকে তুলে নিয়ে যায়।।এতোকষ্ট দিয়েও আয়ান যে আবার তার কাছে ফিরে এসেছে এতেই শান্তি পেল সে। কিন্তু চোখের অশ্রুর যে নাম লেখা থাকে না ,, যদি লেখা থাকতো তাহলে হয়তো আয়ান বুঝতে পারতো।। ইশরার চোখের পানিতে আয়ান অগ্নিরুপ ধারন করলো।।
— মেঘের সাথে বিয়ে ভেঙে গেছে বলে এতো নাকে কান্না করছো ।।আমি সত্যিই বুঝতে পারিনা ,, আসলে তোমার মতো মেয়েরা কি চাই ,, একসাথে কয়টা লাগে বুঝি না।।
— হ্যা,, আমাদের মতো মেয়েদের অনেক লাগে।।কেন লাগে সেটা আপনি বুঝবেন না।। আপনি বুঝবেন মাঝরাতে একটা মেয়েকে কিভাবে বাড়ি থেকে বের করে দিতে হয়।। কিন্তু তারপর কিহয় সেটা বুঝবেন না ।।(একটু থেমে আবার) সেদিন মাঝরাতে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পর ,,, আমার এক্সিডেন্ট হয়েছিলো।প্রায় মরতে মরতে বেঁচে গেছি আমি,, সেটা বুঝবেন না।।
বিয়ের পর প্রেগন্যান্ট অবস্থায় ৬ মাস স্বামী,, শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়ি থাকার পর ,,, পাড়ার লোকেদের হাজারো বাজে কথা সহ্য করতে হয় সেটা বুঝবেন না।।সবাই বলতো ,, “”মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে নিজের লালসা মিটিয়েছে ,, এখন প্রেগন্যান্ট অবস্থায় ছেড়ে গেছে””।।
তখন কতোটা কষ্ট হয় আপনি বুঝবেন না।।৫ মাসে বেবী মায়ের পেটে কিক করে,, আর পাঁচটা স্বামী স্ত্রীর পেটে মাথা রেখে সেই সাউন্ড শুনে আর আমি বিছানার চাদর আকড়ে ধরে কেঁদেছি,, সেটা বুঝবেন না।।এটা বুঝবেন না,,সেটা বুঝবেন না,, কোনটা বুঝবেন একটু দয়া করে বলবেন???
আর কথা বলতে পারছে না ইশরা।গলা কাঁপছে।বুক ফেটে কান্না আসছে,, দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর হাজারো চেষ্টা করছে ,, কিন্তু তা আদোও সম্ভব হচ্ছে না।। অবশেষে আয়ানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।।আস্তে সিটে গা হেলিয়ে দিয়ে চোখজোড়া বন্ধ করে নিলো।।
______________
ভালোবাসা হারানোর যন্ত্রনা সেই বোঝে যে তার ভালোবাসা হারিয়েছে।। ভালোবাসার জন্য কতো মানুষ পৃথিবী ছেড়েছে তার হিসেব নেই।।আর কখনো তার হিসেব মেলানো সম্ভবও নয়।।দুটি ভালোবাসার মানুষ সবসময় একটা জিনিসই চায় ,, দুজন দুজনাকে কাছে পেতে ।আর যদি হয় তা একতরফা তাহলে তো কথাই নেই।।
বাড়ি ভর্তি মানুষের সামনে গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেঘ।।সে নিজেও জানেনা কেন তার গায়ে হাত
তুললো রৌদ্র জুবায়ের।।তার জানার চেয়ে বড় বিষয় ইশরা।। কোথায় নিয়ে গেছে ইশরাকে ।।মাথায় একটি কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে ,, ইশরাকে চাই ,, শুধু ইশরাকে চাই ।।সেটা যেভাবে হক।।
নিরবতা ভেঙ্গে রৌদ্র জুবায়ের মুখ খুললেন…
— আমি আমার মেয়েকে ভাঙতে শেখাই নি গড়তে শিখিয়েছি।। মেয়ের শিক্ষক হিসেবে আমি কিভাবে তার
সংসার ভেঙ্গে দিতে পারি ।।তাই তো এতো কিছু করলাম।।
— মানে ..!!( অপ্রস্তুত হয়ে মেঘ)
— তুই কি মনে করেছিস আমি কিছু জানি না।।এতোবড় বিজন্যাস সামলাই,, ঘাসের মুখ দিয়ে চলি না।।আমি জানি ,, সবকিছুর পেছনে তোর হাত আছে।।তাই কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুললাম।।তুই যেমন আমার মেয়েটার সংসার ভেঙেছিস।। তেমন তোকে ঘিরে তা আবার জোড়া লাগালাম।।(তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে) শুধুমাত্র মেয়ের সুখের কথা ভেবে বিয়ে বিয়ে নাটক করলাম।।
— বাজে কথা,, হাজার কষ্ট বুকের মাঝে চাপা দিয়ে যখন বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতো ।।বাবা মা হিসেবে নিজের সন্তানের কান্না সহ্য করার ক্ষমতা আমাদের ছিলো না।।তাই মেয়েকে কসম দিয়ে বাধ্য করে এই বিয়েতে রাজি করাই ।।বাকি রইলো ,,, ডিভোর্সের কথা।।একই দেখতে দুটো ডিভোর্সে সাইন নকল করে দুজনের কাছে পাঠিয়েছি।।দেখ তাই হলো ,, বিয়ের দিন আয়ান এসে ঠিক হাজির হলো(রৌদ্র জুবায়ের কে থামিয়ে তমোনা)
পূর্বরায় কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করলো ।। ছেলের দোষে বন্ধুর কাছে লজ্জায় মাথা কাটা রোহিত চৌধুরীর।।প্রায় ৪০ বছরে বন্ধুত্বে ,, আজ তার ছেলে মেঘের জন্য ফাটল ধরল।। এতোক্ষণ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলেও ,, এখন আর তিনি চুপ করে রইলেন না।।পুরো পরিবারকে ইশারা করে ছেলে হাত ধরে টানতে টানতে বেরিয়ে গেলেন।।আস্তে আস্তে ফাঁকা হতে লাগলো পুরো বাড়ি।।তৃপ্তিকর হাসি ফুটে উঠল রৌদ্র জুবায়ের আর তমোনা জুবায়ের এর মুখে।।
_________________________
বর্ষার মাঝামাঝি সময় হওয়ায় বৃষ্টি একটি সাধারণ ব্যাপার।।বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আগে ঝড়হাওয়া দেওয়াও যেন বৃষ্টির নিয়মমাফিক রুটিন।। বাহিরে যখন ঝড়হাওয়া ,,বৃষ্টি আসার পূর্বাভাস।।তখন চাতক পাখি হাহাকার করে বৃষ্টির পানির আশায়।।আজ চাতক পাখির সাথে হাহাকার করছে আয়ানের মন।।নিয়ের প্রিয়শ্রীকে বুকে টেনে নেওয়ার।।না একবার দুচোখ ভরে দেখতে পারছে।। অনুসূচনায় তাকানো সম্ভব হচ্ছে না।। লুকিং গ্লাসে একবার পরখ করে নিলো ইশরাকে।। নিদ্রায় মগ্ন থাকায় মাথা সিট থেকে অনেকটা হেলে পড়েছে।। কাঁধ থেকে শাড়ির আঁচল নিচে নুইড়ে পড়েছে।।সাথে যোগ দিয়েছে শাড়ির কুচিগুলো।।মুখের সাজ লেপ্টে গেছে কান্নায়।।কাঁচ খোলা থাকায় বাহিরে থেকে আসা হাওয়ায় খোঁপা করা চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে।।
সজাগ থাকলে ,নিজেকে এই অবস্থায় দেখে নির্ঘাৎ লজ্জায় মাটিতে মিশে যেত।।।
ব্রেক কষলো গাড়ির ।।একটু ঝুঁকে গাড়ির কাঁচ তুলে দিলো ,,ধুলোয় এলার্জি আছে ইশরার।। আয়ান সরলো না।।নিচ থেকে আঁচলটা কাঁধে তুলে ,, শাড়ির কুচিগুলো গুছিয়ে কোমরে গুজে দিয়ে সরে আসলো।। ঘুমের মাঝে অন্যকারো স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো ইশরা।। একটু নড়েচড়ে আবার গভীর নিদ্রায় তলিয়ে গেল।।মুদৃ হাসলো আয়ান।।হাত বাড়িয়ে ইশরার মাথাটা নিজের কাঁধে নিয়ে,, ব্যস্ত হয়ে ড্রাইভে মন দিলো।।
চলবে… ??
(সব রাইটার দের মতো আমিও বলবো,, ১ম পর্ব পড়ে ,, সম্পূর্ন গল্প ধারনা করা সম্ভব নয়,, ধন্যবাদ)