অন্যরকম_ভালোবাসা ?পর্ব::০৩

0
4709

#অন্যরকম_ভালোবাসা ?পর্ব::০৩
#ইফা_আমহৃদ

বাসর ঘরে থাকার পরিবর্তে বেলকেনিতে দাঁড়িয়ে বৃষ্টি দেখতে ব্যস্ত ইশরা।।বৃষ্টির ধারা বেলকেনির গ্ৰিল টপকে গায়ে এসে পড়ছে।।সেদিকে কোনো আক্ষেপ নেই।। ইশরা সামনে থাকা একজোড়া চড়ুই পাখি দেখতে মন দিয়েছে।।
একটু আগেই আকাশ কাঁপিয়ে বৃষ্টি এসে ধরা দিয়েছে পৃথিবীর বুকে ।।বৃষ্টির পানিতে যখন চারপাশ ভিজে একাকার হয়ে গেছে,, তখন ছোট চড়ুই পাখির বাসাও ভিজে গেছে।।মা পাখিটি তার ডানার নিচে ছোট ছোট ছানাদের আশ্রয় দিয়েছে।। যখন বৃষ্টির ধারায় একদম সম্ভব হচ্ছিলো না,, তখন এক জোড়া চড়ুই পাখি ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে তাদের ছানাদের নিয়ে বেলকেনিতে এসে হাজির হয়েছে।।এমন দৃশ্য দেখে চোখ ঝলঝল করে উঠলো ইশরার।। আপনাআপনি হাত চলে গেল পেটে ।।সে কি পারবে তার ছোট বেবীকে চড়ুই পাখির মতো সকল বিপদ থেকে আগলে রাখতে।।আচ্ছা যদি আয়ান আর ইশরার সংসার টা চড়ুই পাখির সংসার হতো ,, তাহলে কি বেশী ক্ষতি হতো।।হয়তো না।।তাহলে ছোট সোনাকে নিয়ে খুব সুখী হতো দুজনে।। আর ভাবতে পারছে না ইশরা ।।পেট আলতো করে হাত বুলিয়ে বেলকেনি থেকে রুমে চলে এলো।।সামনে সোফায় পা দুলিয়ে বসে আছে অনয়া।।ভাবীকে আসতে থেকে এগিয়ে গেল।।এক হাত ধরে বেডে বসিয়ে ,,নিজেও পাশে বসলো।।আজ কতোগুলো দিন পর নিজের পা ফেলেছে এই রুমে তার হিসেব নেই।।ভাবীর পেটে হাত রেখে মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে বললো…

— “কেমন আছে আমাদের পুচকু ।।আর তার একমাত্র মাই বা কেমন আছে”।।

— “পুঁচকু আর তার মা দুজনেই খুব ভালো।। আমার ননদিনী কেমন আছে”।।(গালে হাত ছুঁইয়ে ইশরা)

— “ভালো ।।(শুকনো হাসি দিয়ে অনয়া)তবে তোমাদের দুজনকে খুব মিস করেছি।। চার মাসে তোমার সাথে আমার ভাবী ননদের বাহির একটা মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো।।যেটা পৃথিবীর সবচেয়ে গভীর সম্পর্ক ।। বন্ধত্বের সম্পর্ক ।।তারপর তো ভাইয়া….

কথা শেষ করলো না অনয়া।।বুকে চিড়ে বেরিয়ে এলো দীর্ঘ শ্বাস।।চোখ সরিয়ে নিলো ইশরা।। সত্যি ই তো এখন থেকে যাওয়ার পর একবারও অনয়ার সাথে যোগাযোগ করেনি।। মেয়েটার তার উপর প্রচুর অভিমান জমে আছে।। সম্পর্ক তো দুটি মনে হয়না ,, হয় অনেকগুলো মানুষকে ঘিরে।।এই বাড়িতে পা রাখার পর শুধু অনয়া ই ,, ইশরাকে সাহস জুগিয়েছে।।তার কথা কিভাবে ভুলে গেল ।।অনুসূচনা হচ্ছে নিজের করা কাজে।।ইশরার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে কথা ঘুরালো অনয়া…

— “ভাবী একটা কথা বলবো।।( এক মুহুর্ত থেমে আবার)জানো ভালোবাসার মানুষটি কাছে থাকলে তার কদর থাকে না।।যদি দূরে যায়,, হারিয়ে যায়,, কিংবা অন্য কারো হয়ে যায় তখন বুঝতে পারে,, ভালোবাসার মানুষটি তার কতোটা স্থান জুড়ে ছিলো।।তাই সবসময় ভালোবাসার মানুষটিকে কন্ট্রোলে রাখতে হয়। যেমনটা আমি দুয়ান কে রাখি ,,তুমিও ভাইয়াকে রাখো ।।দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে”।।

আর কিছু বলার আগেই দমে গেল অনয়া।। ঠোঁট কামড়ে চুপ হয়ে গেল।। কি বলতে কি বলে ফেলেছে ।। অনয়ার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ইশরা।। কথাগুলো কান অবধি পৌঁছাতেই ইনোসেন্স ফেস করে তাকিয়ে আছে।।

— “হ্যা মা আসছি ,,এতো ডাকছো কেন” ।।।

কথাটা বলেই এক দৌড় দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।।
অনয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শব্দ করে হেঁসে দিলো ইশরা।।মেয়েটা নির্ঘাত প্রেমে পড়েছে।।বিরক্তি নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে দৃষ্টি দিতেই মুখে বিরক্তিকর ভাবে কুঁচকে এলো।।আয়ানের এই রাত বিরাতে শাওয়ার নেওয়ার অভ্যসটা এখনো যান নি।।একবার শাওয়ার নিতে গেলে সারাদিন পার হয়ে যায়।।ওয়াশরুমে গিয়ে এতোক্ষণ কি করে আল্লাহ মালুক।।
“” ভাবী টেবিলের খাবার রাখা আছে ,,খেয়ে নিও “” ।।এমন কথা শুনে পেছনে তাকালো ইশরা।। কিন্তু তার আগেই মানুষটি হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।।বুঝতে বাকি রইলো না কে ??বেচারীও খাবার দিতে এসে,, খাবারের কথাটাই বেমালুম ভুলে গেছে।।

______________________

বেডের একপাশে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে ইশরা।। গভীর ঘুমে বিভোর ,, মাথার কাছে বালিশে হেলান দিয়ে তাকিয়ে আছে আয়ান।।ইশরাকে ডাকবে কি ডাকবে না ,, সেই ভাবনায় বিভোর।। তখনকার চেঁচামেচির আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গেছে ,, একটু আগে ঘুমিয়েছে।।একটার উপর আরেকটা প্লেট রেখে খাবার ঢাকা।। পিঠের নিচ থেকে বালিশটা বের করে বেডের কোণে রাখলো।।একহাত কোমরের পেছনে অন্যহাত মাথায় দিয়ে বেডে হেলান দিয়ে বসালো।।ইশরার চোখে মুখে বিরক্তিভাব ।।নিভু নিভু চোখে না তাকিয়ে ,, ঠোঁট দুটি নেড়ে বললো…

— “যাও তো মা ,, বিরক্ত করো না।। প্রতিদিন ঘুম থেকে তুলে খাওয়ানোটা তোমার নিত্যদিনের অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে”।।

ঠোঁট চেপে হাসলো আয়ান ।।আজ প্রথমবার কোনো মেয়ে তার স্বামীকে মা বলে ডাকছে।। সেদিকে তোয়াক্কা না করে টেবিল থেকে প্লেট তুলে এক লোকমা জোর করে মুখে ঢুকিয়ে দিলো আর বললো…

— “রাতে না খেয়ে ঘুমানো একদম ঠিক নয়।। প্রয়োজনে সামান্য একটু খাও,,, তারপর শুয়ে পড়”।।

কোনো কথা বাড়ালো না ইশরা ,, ঘুম ঘুম চোখে খাবার শেষ করলো।। ঘুমাতে পারলেই যেন শান্তি ।।নিজের হাত না ধুয়ে গ্লাসে পানি ঢেকে ব্যস্ত হাতে খাইয়ে দিলো।। এঁটো প্লেটে হাত ধুয়ে ,, আলতো হাতে শুইয়ে দিলো ইশরাকে।।দুগালে হাত রেখে একটু ঝুঁকে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো।।গভীর হলো তার স্পর্শ।। ঠোঁট কপাল ছেড়ে পেট স্পর্শ করলো।।ডিপলি কিস করলো পেটে।। অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো ইশরা।।ঘুমের মধ্যে কেঁপে উঠলো।।ঘটে গেল অঘটন।।আয়ানের হাত ধরে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো ।। তবুও সরলো না আয়ান।।চায় না নিদ্রায় বেঘাত ঘটুক। অপেক্ষা করলো একটু সময় ।। গভীর নিদ্রার আভাস পেতেই ,, নিজের হাত ছাড়িয়ে নিলো ।। পায়ের কাছে বাজ করে রাখা ব্লাঙ্কেট টেনে কোমর পর্যন্ত তুলে দিলো।। রুমের লাইট নিভিয়ে প্লেট হাতে বেরিয়ে গেল।।

________________

বৃষ্টির ধারা এখনো কমেনি বরং বেড়েছে।।আজ বৃষ্টিকে বড্ড নিলজ্জ লাগছে ।।কতোগুলো দিন পর দুটি ভালোবাসার মানুষ এক হয়েছে।।খুব কাছাকাছি আছে ।।এতে প্রকৃতির হিংসা হচ্ছে।। খুব করে হিংসা হচ্ছে।।
বৃষ্টির নিলজ্জ পানি জানালার কাঁচ বেঁধ করে ভেতরে আসার তীব্র আকাঙ্ক্ষা চালাচ্ছে।। ।বৃষ্টির পানি জানালার কাঁচে উপর তীর্যক ভাবে পড়ে ,, লেপ্টে যাচ্ছে এক ফোঁটা অন্য ফোঁটার সাথে ।। জানালা বন্ধ থাকায় তাদের ইচ্ছে,,, সেখানেই সমাপ্তি টানতে হচ্ছে।। বৃষ্টির সাথে যোগ দিয়েছে বিদ্যুৎ চমকানোর ।। হঠাৎ হঠাৎ চারপাশ পুরোপুরি আলোকিত হয়ে যায়,, আবার ঘুটঘুটে অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছে।।বাহিরে এমন পরিস্থিতির ভেতরেও বিরাজ করছে ।। নগ্ন বুকের বাপাশে ইশরা ছোট বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে আছে ,, আর আয়ান একহাতে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।।অন্যহাতে টেবিলের উপর থাকা টেবিলল্যম্প জ্বালাচ্ছে আবার নিভাচ্ছে।। আয়ান গভীর ভাবনায় বিভোর।।
বুকের উপর একফোঁটা তরল পদার্থ পড়তেই চমকে উঠলো সে।।হাত দিয়ে ছুঁতে পানি অনুভব করলো।।এই মাঝরাতে ছাদ ফুটো হয়ে গেলে ,, মিস্ত্রি কোথায় পাবে।।ইশরার মাথাটা বালিশে রেখে দূরত্ব পায়ে লাইট অন করলো।।ইশরা শরীর কাঁপছে,, চোখ বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে।।কতো রাত এভাবে ঘুমের মধ্যে কেঁদেছে তার হিসেব নেই।।ছাদ ফুটো হয়নি বরং ইশরার চোখের অশ্রু গাল বেয়ে আয়ানের বুকে পড়েছে।।
বিয়ের গহনাঘাটি যেমনটা তেমন আছে।। বৃষ্টির পানিতে লেপ্টে যাওয়া সাঝ ধুয়ে গেছে।। শাড়িও খুলেনি।।আয়ান দেরী না করে গহনাঘাটি খুলে উপর থেকে শারিটা সরিয়ে বেডের পাশে রাখলো।।চোখ আটকে গেল ইশরার শরীরে ।। সেদিনের মারের দাগগুলো স্পষ্ট ভাসমান।। ফর্সা গালে ৩ আঙ্গুলের ছাপ স্পষ্ট।।চুলগুলো এখনো এলোমেলো।।যেই ঘনকালো চুল একদিন আয়ানকে পাগল করেছিলো ,, সেই চুলে নাকি সে…!! ভাবতে পারছে না আর ।। নিজের অজান্তেই হাত গিয়ে ঠেকলো ইশরার শরীরে।।আগের কাপাকাপি আরো কয়েকগুণ বাড়লো।।
ড্রয়ার থেকে মলম আর তেল বের করলো।। ইশরার মাথাটা নিজের কোলে নিয়ে যত্নসহকারে মলম লাগিয়ে দিলো গালে।। পরে আস্তে আস্তে অগোছালো চুলগুলোতে তেল দিয়ে বেনী করে দিলো।।লাইট নিভিয়ে হাঁটুর নিচে পড়ে থাকা ব্লাঙ্কেট টেনে গলার পর্যন্ত ডেকে নিলো।। ইশরার মাথাটা পূর্ণরায় নিজের বুকে নিয়ে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো আর বলতে লাগলো

— “সরি আমার ইশুপাখি ।। অনেকগুলো সরি।।আমার জন্য তোমাকে অনেককিছু সহ্য করতে হয়েছে।।খুব কষ্ট পেতে হয়েছে।।আই প্রমিস ,, ততটুকু কষ্ট এই ছয় মাসে তোমাকে পেতে হয়েছে।। তার দশগুন ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখবো।।জীবনে আর কখনো তোমাকে কোনো কষ্ট পেতে দিবো।। আমি আমার ছোট প্রিন্সেস কেও আগলে রাখবো,,,,আমার বুকে “।।

চলবে…??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here