#Story: হিংস্রপ্রেম
পর্বঃ ২৬
লেখাঃ Israt Jahan
.
.
মেহের কাঁদতে কাঁদতে দরজাতে অনেক বার ধাক্কা দিয়ে বলছে-” দরজা খুলুন সম্রাট।আজ হয় আপনি আমাকে প্রাণে শেষ করবেন না হয় আমাকে ভালোবেসে বুকে টেনে নিবেন।আমি পারছিনা এমনভাবে বেঁচে থেকেও মরে থাকতে।”
ফালাক বিছানাতে বসে একা একাই বলছে-” ভালোবাসা তুমি আর কোনোদিনও আমার থেকে পাবেনা আর প্রাণেও তোমাকে কোনোদিন আমি মারবোনা।এভাবেই তোমাকে বেঁচে থাকতে হবে। ভালোবাসা না পাওয়ার তীব্র যন্ত্রণা কি তা তুমি বুঝবে আজ।আমাকে কতোটা অসহনীয় যন্ত্রণার মাঝে রেখেছিলে তা তুমি আজ হারে হারে বুঝতে পারবে।কষ্ট পাও আরো বেশি কষ্ট পাও।বাইজি হয়ে আমার কাছে আসতে চাও তুমি যাকে আমি পৃথিবীর সবথেকে পবিত্র পুষ্পের মতো ভেবেছি। আর সেই পবিত্রতাকে তুমি বাইজি নামে ডেকে নষ্ট করেছো।”
মেহের দরজার সামনে বসেই চিৎকার করে কাঁদছে। একজন দাসী এসে ওকে বলল-” উঠুন রাজকন্যা। আমাদের কক্ষে আসুন।আর কাঁদবেন না।”
মেহেরঃ না।আমি রাতটা এখানেই পার করবো। আমার যে ঘুম আসবেনা।
দাসীঃ এমন জিদ করবেন না।অসুস্থ হয়ে পড়বেন। বাহির যে শীত পড়েছে খুব।
মেহেরঃ তুমি যাও।
দাসী অনেক অনুরোধ করার পরেও মেহের গেলোনা ওর সঙ্গে।শেষে দাসীটি একখানা মোটা চাদর ওর শরীরে জড়িয়ে দিয়ে চলে গেলো।ভোর হয়ে গেছে মেহের ওখানেই দরজার পাশে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।দরজা খোলার শব্দ শুনে মেহের চোখ মেলে তাকাল।ফালাক এক নজর ওর দিকে তাকিয়ে চলে গেলো।মেহেরের যেনো আর ধৈর্যে কুলাচ্ছেনা ফালাকের এমন দূরে চলে যাওয়াটা।চোখে মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে অযু করে নামাজ পড়ে পাকঘরে চলে গেলো। ও আসার পূর্বে দাসীগুলো তরকারি কেটে চুলায় বসিয়ে দিয়েছে।
মেহেরঃ একি….তোমরা যে আজ আমি আসার আগেই সব করে ফেললে?
দাসীঃ আপনাকে আজ কিছু করতে হবেনা।কাল সারাটা দিন সারাটা রাত আপনার উপর দিয়ে যা গেছে তা দেখে আমাদেরই খারাপ লাগে।সম্রাটের হৃদয় যে আল্লাহ্ পাক পাথর করে রেখেছেন।
মেহেরঃ তার হৃদয় পাথর হলে তাকে আজ এই রূপে দেখতে?কতোটা হৃদয়বান হলে আজ সে গ্রামের মানুষের কষ্ট লাঘব করার জন্য কতোকিছু করছে।
দাসীঃ আপনার সঙ্গে সে তো আর হৃদয়বানের মতো কিছু করেন না।তাহলে আপনি তাকে হৃদয়বান কেনো বলছেন এতোকিছুর পরও?
মেহেরঃ আমি তার উপর যতোই রাগ অভিমান করি বা সে আমার উপর যতো খুশি রেগে থাক। সে কিন্তু আমার সম্মান অক্ষুণ্ণ রাখার ব্যবস্থা সবসময় করে আসছে।তার প্রমাণ তো তোমরা দেখতে পাচ্ছো।আজ আর কেউ বলতে পারবেনা যে আমি একজন দাসী।আমাকে দেখে সবাই এই কথায় বলবে যে আমি তার রানী।আমি তার সঙ্গে কম অন্যায় করিনি।স্বামীর প্রাপ্য মর্যাদা আমি তাকে দিইনি।আমার শাস্তি যে সত্যিই হওয়া উচিত। তোমরা আর আমার সম্রাটকে এতো নিষ্ঠুর ভেবোনা।
দাসীঃ জ্বী রাজকন্যা।গ্রামবাসীও এখন সম্রাটকে অনেক সম্মান করেন।আমি যখন এই প্রাসাদে দাসী হয়ে আসি তখন আমার আব্বা আম্মা কতো যে চিন্তা করতো।সম্রাটের ভয়ে আব্বা আম্মাকে একবার দেখতে যেতেও পারতাম না।কিন্তু এখন রোজ যায় আর আসি।আব্বা আম্মা ও এখন আর দুশ্চিন্তা করেনা।
দাসীর মুখে ওর আব্বা আম্মার কথা শুনে মেহেরের নিজের পিতামাতার কথা মনে পড়ে গেলো।ওরা এখন কেমন আছে আর কোথায় আছে তা ওর খুব জানতে ইচ্ছা করছে।একে তো স্বামীর থেকে প্রতিনিয়ত ঘৃণা পেয়ে আসছে তার উপর পিতামাতার খোঁজটুকু ও জানতে পারছেনা।আজ খুব অস্থিরতা কাজ করছে ওর পিতামাতাকে দেখার জন্য।এখন তো পৃথিবীতে এই তিনজন মানুষই সব থেকে বেশি আপন ওর।তাই ফালাকের জন্যও ওর যেমন দুশ্চিন্তা হয় তেমনি নিজের পিতামাতার জন্যও।উত্তেজনা কন্ঠে ও দাসীদের প্রশ্ন করলো-” তোমরা কি কেউ জানো আমার পিতামাতা এখন কোথায় আছেন?তাদেরকে কোথায় রেখেছেন সম্রাট?”
দাসীঃ না রাজকন্যা।কয়েদিদের খাওয়ার প্রহরীগুলো এসে আমাদের থেকে নিয়ে যায়।তাই আর জানিনা কোথায় আছেন আপনার পিতামাতা।
মেহেরঃ আমার যে আজ খুব ইচ্ছা করছে তাদের।
দাসীঃ ওই প্রহরীদের কাছে জানতে চাইলেও তো ওরা বলবে না।সম্রাট ওদের বারণ করে রেখেছেন।
মেহেরের কোনো বাঁধা আজ মনকে আটকে রাখতে পারছেনা।খুব ছুটেছে পিতামাতার কাছে।পাকঘরে বসেই হাজার চিন্তা করে সকালটা কাটিয়ে দিলো।
প্রাতঃভোজনের পর ফালাক মিরাজকে নিয়ে বাহিরে বেরিয়ে গেলো।আর আজ ইরানি এসে দাসীগুলোর সঙ্গে খোশগল্প জুড়ে বসেছে।মেহের এদিকে ফালাকের বাহিরে যাওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে একবার কারাগারের ভেতর যাওয়ার চেষ্টা করবে।কিন্তু খুব ভয় পাচ্ছে।যদি কোনোক্রমে ফালাকের কানে যায় যে মেহের কারাগারের ভেতর ঢোকার চেষ্টা করেছে।তাহলে যে ওর সাথে আজ কি করবে তা ও নিজেও জানেনা।
মেহেরঃ যা খুশি করুক।তবুও আজ আমি একবার পিতামাতাকে দেখবোই।
এটা বলার পরও মেহেরের মনে সাহস জুগাতে সেই দুপুর হয়ে গেলো।এই সময় ফালাক আজ কাল প্রাসাদে ফিরে।মেহেরের তা খেয়াল নেই।
কারাগারের সামনে ঠিকই গেলো কিন্তু ঝামেলা করলো একজন প্রহরী।মেহেরকে তো ঢুকতে দিচ্ছেইনা উল্টে যা তা ব্যবহার করছে তুই তুকারি করে।এমনটা করার সাহস ওরা পেয়েছে সেদিন থেকে। যেদিন থেকে জানতে পেরেছে যে ফালাক এখন মেহেরকে দাসী রূপে রেখেছে প্রাসাদে।যার জন্যই আজ ওদের এতো স্পর্ধা।
মেহেরঃ এমন কেনো করছো আমার সাথে?আমি তো বললাম শুধু এক নজর দেখেই চলে আসবো। আমার পিতামাতা কেমন আছে শুধু সেটুকুই জানতে চাই।
প্রহরীঃ এতো জেনে কি হবে?যেদিন মরবে সেদিন একবারে লাশ দেখিস।যা এখন এখান থেকে।
প্রহরীর এই কথা শুনে আর থেমে থাকতে পারলোনা মেহের।সোজা ওর ডান গালে বাম হাত দিয়ে চড় বসিয়ে দিলো।এতে প্রহরীও অনেক ক্ষিপ্ত হয়ে ওকে ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিলো।ততোক্ষণে ফালাক প্রাসাদে ঢুকেছে।অন্য একজন প্রহরী এসে ফালাককে খবর দিলো-” সম্রাট রাজকন্যা মেহেরুন খু্ব ঝামেলা করছে কারাগারের সামনে।বলছে ওনার পিতামাতাকে উনি দেখতে যাবে।”
ফালাক শুনে কোনো কথা না বলে কারাগারের সামনে চলে এলো।এসে দেখতে পায় মেহের তখন নিচে বসেই কাঁদছে।ও ঠিক বুঝতে পেরেছে যে প্রহরী ওকে ঢুকতে দেয়নি উল্টে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।ও ওখানে আর এক মুহূর্ত দেরী না করে মেহেরকে টেনে তুলে কারাগারের সামনে থেকে নিয়ে চলে এলো।তবে ওর সাথে কোনো কথা বলছেনা।কক্ষের সামনে রেখে সোজা রাজদরবারে এলো।রাজদরবারে মাঝে দাঁড়িয়ে অন্য প্রহরীকে বলল-” ওই প্রহরীকে ডেকে নিয়ে এসো।”
প্রত্যেকেই ফালাকের চোখ দেখে বুঝতে পারে যে এই মুহূর্তে ফালাক রেগে আছে।মিরাজ ও ফালাকের পাশে দাঁড়িয়ে আছে।প্রহরীটি এসে ফালাকের সামনে দাঁড়িয়ে সম্মান জানালো।
প্রহরীঃ জ্বী সম্রাট আদেশ করুন।
ফালাকঃ তোমার তোড়ায়ার টা দাও।
প্রহরী ওর কাছে থাকা তড়োয়ার টা ফালাকের হাতে তুলে দিলো।ফালাক অন্য দুজন রক্ষীকে বলল-” ওর দুই বাহু চেঁপে ধরো।”রক্ষী গুলো তাই করলো। প্রহরীটি ভয় পেয়ে বলছে-” সম্রাট আপনি কি করতে চাইছেন?আমি কি কোনো অন্যায় করেছি?”
কথাগুলো শেষ হতে না হতেই ফালাক দুই আঘাতে ওর দুটো হাত কেটে নামিয়ে দিলো।তারপর রাগীস্বরে চিৎকার করে বলছে-” সে আমার স্ত্রী, এই রাজ্যের রানী।আমি তার সঙ্গে যা ইচ্ছা তাই করি।তোর এতো বড়ো বুকের পাটা যে তুই তার শরীরে হাত দিয়েছিস তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিস। তোকে এই সাহস কে দিয়েছে?আজকের পর থেকে যে ওকে শুধু নাম ধরেও ডাকবে তার অবস্থাও করুণ হবে। মিরাজ?
মিরাজঃ জ্বী সম্রাট।
ফালাকঃ ওকে এই রাজ্যের বাহিরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে এসো।
মিরাজঃ যথা আদেশ সম্রাট।
রাজদরবারের পর্দার আড়াল থেকে সকল দাসী দাঁড়িয়ে দেখছে এই দৃশ্য।পাশে ইরানি ও দাঁড়িয়ে দেখছে।ইরানি ওদের জিজ্ঞেস করলো-” সম্রাটের রানী কে?”
দাসীঃ আপনি চিনেন না?আজ সকালে পাকঘরে যাকে দেখলেন আমাদের সঙ্গে বসে কথা বলছিলো উনিই তো আমাদের রানী।
ইরানিঃ উনি?গতকাল তো ওনাকে দাসীদের বেশে দেখলাম।আর তোমরাও তাকে রাজকন্যা বলছিলে বারবার।আমি তো ভেবেছি এমন কতো রাজকন্যাই তো ওনার দাসী থাকে।উনিও হয়তো তার মাঝে একজন।
দাসীঃ এগুলো সম্রাটের অতীত।এখন আর কোনো রাজকন্যাই ওনার দাসী নন।
ইরানিঃ তাহলে উনি কেমন স্ত্রী যে যাকে উনি নিজের দাসীরূপে মানেন?
এবার দাসীটা রেগে গিয়ে বলল-” আপনি তো আচ্ছা নির্বোধ।নিজের চোখের সামনেই দেখলেন যে ওনাকে সম্রাট সবার সামনে রানী বলে সম্বোধন করলো তারপরো আবার বোকার মতো প্রশ্ন করছেন।
মেহেরের সাথে প্রহরীর অন্যায়ের শাস্তির কথা শুনে ওর আর বুঝতে বাকি নেই যে ফালাক ওকে কতোখানি ভালোবাসে।এখন ওর সঙ্গে যা করছে সব রাগ আর ভুল বুঝে থাকার কারণে।দাসীগুলো মেহেরকে বলছে-” রানীসাহেবা আজ থেকে আমরা আর আপনাকে রাজকন্যা বলবোনা।কারণ রাজকন্যা বললে না জানি সম্রাট আমাদের জিহ্বা কেটে নেয়।”এই বলে সবাই হো হো করে হেসে উঠল।ওরা সবাই ফালাকের কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে হাসাহাসি করছিলো।ফালাককে দ্রুত গতিতে আসতে দেখে সবাই কক্ষের সামনে থেকে সরে গিয়ে দূরে দাঁড়াল মাথা নিচু করে।মেহেরের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে কক্ষের ভেতরে ঢুকে গেলো।
মেহেরঃ তার চাহনি দেখেছো?রাগটা সে এখন আমার উপরেও ঝারবে।
দাসীঃ ঝারুক না।তবুও সে চার দেয়ালের মাঝে স্ত্রীরূপে আপনার উপর রাগ ঝারে।দাসী ভেবে নয়।
মেহেরঃ কিন্তু আমার পিতামাতা কোথায় তা তো আর জানা হলোনা।আমার যে অস্থির লাগছে তাদের জন্য।
দাসীঃ রানীসাহেবা আপনি চিন্তা করবেন না। আমাদের একটু সময় দিন।সম্রাট মধ্যাহ্নভোজ করে যখন বাহিরে বের হবে তখন আমরা আপনার পিতামাতার খোঁজ এনে দেব।
মেহেরঃ কি করে?
দাসীঃ এই যে আমাদের নূরি ওর সাথে ইলিয়াস মানে একজন রক্ষীর ভাব আছে।কিরে বল না নূরি। এতো লজ্জা পাচ্ছিস কেনো?
নূরিঃ জ্বী রানীসাহেবা।ওনার সঙ্গে কথা বলে আপনি জেনে নিবেন যে আপনার পিতামাতাকে সম্রাট কোথায় রেখেছে।ও আপনার পিতামাতার খোঁজ দিতে পারবে।
মেহেরঃ অনেক কৃতজ্ঞ থাকবো তোমার প্রতি।
মেহের ফালাকের সামনে দুপুরের খাওয়ার নিয়ে গেলো।কিন্তু ফালাক ওর দিকে একবার চেয়ে ও দেখেনি।খাওয়া শেষ করে সত্যিই ফালাক আর এক মুহূর্ত সময় দেরী না করে বেরিয়ে গেলো বাহিরে। ইচ্ছা করেই আজ কাল প্রাসাদের বাহিরে থাকে বেশি।মেহেরের সামনে যতোসময় থাকে ততোসময়-ই ওর বুকের ভেতরটা পুড়তে থাকে। ওর মুখের দিকে তাকালেও মনে পড়ে ওর কাছে যাওয়ার সময়গুলোর কথা।এই কষ্টগুলো যাতে ওকে বেশি ধাওয়া না করে তাই ও যতোটুকু সময় পারে প্রাসাদের বাহিরে থাকে।মেহেরকেও সেই ফাঁকে নূরি ইলিয়াসের কাছে নিয়ে গেলো।নূরি ইলিয়াসকে বলছে-” আপনার কাছে অনুরোধ রানীকে ফিরিয়ে দিবেন না।ওনার কষ্টটা বোঝার চেষ্টা করুন।”
ইলিয়াসঃ আমি বুঝতে পারছি নূরি।কিন্তু ভয় পাচ্ছি যে সম্রাট জানতে পারলে আমার কি অবস্থা করবে।আচ্ছা ঠিক আছে আমি চেষ্টা করবো।নূরি তুমি এখান থেকে চলে যাও।আমাদের এভাবে দাঁড়িয়ে কথা বলতে দেখলে অন্য রক্ষীগণ সন্দেহ করবে।
নূরিঃ ঠিক আছে।আমি চলে যাচ্ছি।
ইলিয়াসঃ মহারানী আপনি যদি কিছু মনে না করেন তাহলে কক্ষের মাঝে আসুন আমার সাথে। কারণ এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলা আমাদের জন্য ঠিক হবেনা।যে কেউ দেখে নিতে পারে।
মেহেরঃ আচ্ছা চলো।
ইলিয়াস আর মেহের দুজন একটা কক্ষের ভেতরে ঢুকে কক্ষের দরজাটা হালকাভাবে আটকিয়ে দিলো।
ইলিয়াসঃ মহারানী আপনার পিতামাতাকে সম্রাট কারাগারে রাখেনি।
মেহের ভয় পেয়ে উত্তেজিত হয়ে বলল-” কি করেছে ওনাদের?”
ইলিয়াসঃ ওনারা এই প্রাসাদের-ই একটি কক্ষে আছেন।আর অনেক যত্নে আছেন।তবে সেখানে সব দাসীদের যাওয়া নিষেধ।কোনো দাসী জানেও না যে ওনারা এই প্রাসাদে আছেন।আমাদের হাত দিয়ে ওনাদের জন্য খাওয়ার পাঠানো হয়।আমরা ওনাদের দেখে শুনে রাখার দায়িত্ব পেয়েছি।কিন্তু আপনি সেখানে ঢুকতে পারবেন না।প্রহরীদের কড়া পাহাড়া আছে।
মেহেরঃ তারা যে খুব যত্নে আছে তা শুনেই আমার শান্তি লাগছে।তুমি জানো না তুমি আমার কতো বড় চিন্তামুক্ত করেছো।
মেহের গলা থেকে একটা সোনার হার খুলে ইলিয়াসকে দিতে গেল।ইলিয়াস তখন বলল-” এই উপহারের কোনো প্রয়োজন নেই মহারানী।আপনি রেখে দিন এটা।”
মেহেরঃ তুমি আমার ছোটভ্রাতার সমতুল্য।
তোমাকে একজন রক্ষী হিসেবে নয় ভাই মনে করেই এই উপহার টা দিচ্ছি এটা তুমি রাখো।
মেহের নিজে ওর হাতে ওই হারটা তুলে দিচ্ছে। ঠিক সেই মুহূর্তে একজন রক্ষী দরজাটা ধাক্কা দিয়ে খুলে ফেলল।আর তার পিছেই ফালাক দাঁড়িয়ে ছিলো। ওর নজর গেলো সোজা মেহেরের হাতের দিকে যে হাতে হারটা তুলে দিচ্ছে ইলিয়াসের হাতে।ফালাক বাহিরে গিয়েও অসুস্থবোধ এর কারণে ফিরে এসেছে। মেহের আর ইলিয়াসকে কক্ষ বন্ধ করে দিতে দেখে অন্য রক্ষী তা সঙ্গে সঙ্গে ফালাককে জানায় আর এমন ভাবে কথাগুলো ফালাকের সামনে উপস্থাপন করেছে যা শুনলে মনে হবে মেহেরের চরিত্রের দোষ।এমন ভাবনা হওয়া রক্ষীর খুব অপরাধের না।কিন্তু ফালাক বুঝতে পেরেছে যে মেহের কেনো রক্ষীর সঙ্গে দরজা বন্ধ করে কথা বলছে।মেহের ওর পিতামাতার খোঁজ জানতে চেয়েছে এ বিষয়ে ফালাকের রাগটা হয়নি।রাগ হয়েছে একটা বিষয়েই যে মেহের ওর স্ত্রী হয়ে একজন রক্ষীর সঙ্গে দরজা বন্ধ করে কথা বলছে। আবার তার হাত ধরে নিজের গলার হার খুলে তাকে দিয়ে দিচ্ছে।ফালাক বুঝতে পারলেও অন্য রক্ষীরা তা কিছুটা সন্দেহের চোখেই দেখছে।কারণ ইদানিং সবাই জানে যে মেহেরের সঙ্গে ফালাকের কি সম্পর্ক।যার জন্যই রক্ষীগুলোর চোখে এই ঘটনাটা অন্যরকম লেগেছে আর সেভাবেই ফালাকের সামনে তা বলেছে।রক্ষীদের এই ভাবনাটায় ফালাকের রাগের জন্য যথেষ্ট।
পিতামাতার খোঁজ নেওয়ার জন্য মেহের এতোটায় উতলা হয়ে উঠেছিল যে এই ভাবনা তার মাথাতেই আসেনি যে তার এমন কাজটা করা অন্য সকলের মনে কিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে।ফালাক ওই রক্ষীকে কিছু বললোনা।এবার যা হবে মেহেরের সঙ্গেই হবে।নিজের কক্ষে নিয়ে এসে দরজা বন্ধ করে মেহেরের শরীরে কয়েক ঘা চাবুকাঘাত করলো।মেহেরের চিৎকার শুনে বাহিরের কারোর আর বুঝতে বাকি নেই যে ওর সঙ্গে কি হচ্ছে। কয়েকজন দাসী কেঁদেও ফেলেছে ওর আর্তনাদের কন্ঠ শুনে।চাবুকটা মেহেরের পাশে ছুড়ে ফেলে ফালাক প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে গেলো।দুপুরের পর থেকেই ওর মেজাজ ভীষণ চরা ছিল তারউপর মেহেরের এই অস্বাভাবিক কান্ড যা দেখে ফালাক আর মেজাজ নিজের মাঝে চেঁপে রাখতে পারলোনা।ও নিজেও হাঁপিয়ে যাচ্ছে ওর এই জীবনের জন্য।এক মনে যখন দুরকম টানাপড়েন চলে তখন যে কোনো একটি সিদ্ধান্তে আসা খুবই দুঃসাধ্য।মন চাইছে মেহেরকে কাছে টেনে নিতে আবার নিজের সঙ্গে হয়ে যাওয়া অন্যায় আর মেহের কে নিজের সন্তানের হত্যাকারীদের সহায়ক ভেবে দূরে সরে থাকছে।রাত হলে ফালাক প্রাসাদে ফিরল।শরীর মন দুটোই ক্লান্ত।কক্ষে আসার পর বেশকিছু সময় বসে থেকে দাসীদের রাতের খাওয়ার আনতে বলল।খাওয়ার পর বিছানাতে শোয়ার পরই ওর মেহেরের কথা মনে পড়লো। দাসীদের কে বলল মেহেরকে পাঠিয়ে দিতে।কিন্তু কেউ ওর খোঁজ দিতে পারলোনা।খোঁজ না পাওয়ার কথা শুনেই ফালাকের হৃদয় কেঁপে উঠল।
ফালাকঃ নিজের কোনো ক্ষতি করে বসলো না তো?সারা প্রাসাদে ওকে খোঁজা হচ্ছে কিন্তু কোথাও নেই।তাহলে ও গেলো কোথায়?
চিন্তার মাঝে বাগানে খোঁজার কথা ফালাকের মাথা থেকে বেরিয়েই গিয়েছিলো।বাগানে গিয়ে খুঁজতেই ওকে গাছের নিচে জ্ঞানহারা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখলো।জীবনে প্রথমবারের মতো মেহের এতো আঘাত পেয়েছে।সেই কষ্ট সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়েছে।বাগানে রক্ষী, প্রহরী সবাইকে বলল-” প্রাসাদের আলো নিভিয়ে দাও।আর তোমরা কিছু সময়ের জন্য কোনো কক্ষে থাকো।আমি রানীকে কক্ষে নিয়ে আসছি।”
চেতনা হারিয়ে মেহের পর্দাহীনভাবে আছে।আর শরীরের অবস্থাও খুব খারাপ।ওর এমন অবস্থা কেউ দেখুক তা ও চাইনা।রাত নামলেই মেহের কক্ষ থেকে এই বাগানে এসে গাছের নিচে বসে কেঁদেছে। ফালাক ওকে কোলে তুলে উঠিয়ে নিয়ে গেলো কক্ষে।বাহিরে এখন পুরোপুরি শীত পড়তে শুরু করেছে।ঠান্ডাতে মেহেরের শরীর জমে যাওয়ার মতো।প্রথমে ওর চেতনা ফিরিয়ে শরীরের জামা খুলে নিজেই সারা শরীর মুছে দিলো।তারপর ক্ষত হওয়ার ঔষধ শরীরে লাগিয়ে দিয়ে গায়ে মোটা কাঁথা টেনে দিলো।মেহের ঘুমিয়ে পড়েছে।ওর পাশে এসে শুয়ে ওর মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে।
ফালাকঃ এভাবে কাঁপছে কেনো?জ্বর এলো নাকি? ওর কপালে হাত রাখতেই বুঝতে পারলাম শরীরে জ্বর চলে এসেছে।
ব্যাথা আর শীতের মধ্যে বাহিরে বসে থাকার কারণেই জ্বর লেগে গেছে।নিজের কাঁথাটাও ওর গায়ে দিয়ে দিলো ফালাক।তারপর নিজেই ওর কাঁথার মাঝে ঢুকে ওকে জড়িয়ে রাখলো যাতে খুব তাড়াতাড়ি শরীর গরম হয়ে যায়।
ফালাকঃ ওকে জড়িয়ে ধরতেই ও ঠিক সেই আগের মত আমার জামাটা হাতের মুঠোর মাঝে চেঁপে ধরে শক্ত করে জড়িয়ে রাখল।এভাবে ও আমাকে যতোবারই জড়িয়ে ধরেছে ততোবারই ওর কাছে না এসে থাকতে পারিনি।কিন্তু আজ আমি সত্যি ওর কাছে যাবোনা।ওকে আর কষ্ট দিতে পারবোনা কাছে গিয়ে।
ফালাক মেহেরের হাত ওর জামার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ওর থেকে দূরে সরে আসতে গেলো।তখন মেহের ওর জামাটা আবার টেনে ধরলো।খুব ছোট করে চোখদুটো খুলে আছে মেহের।চোখের কোণ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে।খুব করে কাছে পেতে চাইছে মেহের।ফালাক সত্যি আর পারলোনা ওকে ফিরিয়ে দিতে।ওর চোখের চাহনি দেখে ফালাকের বুকের বামপাশটা মোচর দিয়ে উঠলো।ওর খুব কাছে এসে পুরো ভরটা মেহেরের শরীরের উপর ছেড়ে ওর একদম মুখের সাথে নিজের মুখটা মিশিয়ে দিলো।মেহেরের পুরো মুখ জুড়ে ফালাকের নিঃশ্বাস ছড়িয়ে পড়ছে।মেহের ওকে নিজের দুই বাহুর মাঝে জাপটে ধরলো। আজ দুই তৃষ্ণার্ত প্রেমীর তৃষ্ণা মেটানোর রাত এসেছে।সব রাগ অভিমান কিছু সময়ের জন্য ভুলে গিয়ে দুজন একত্র হলো।মেহেরের নরম ঠোঁটদুটো নিজের ঠোঁটের মাঝে টেনে নিতে আর অপেক্ষা করলোনা ফালাক।
Continue……