হিংস্রপ্রেম পর্ব ২৫

0
361

Storyহিংস্রপ্রেম
পর্বঃ ২৫
লেখাঃ Israt Jahan

.
.
ফালাকঃ দাঁড়াও বলছি।কে তুমি?আমার সামনে এসো।
কন্যাটি ফালাকের দিকে ঘুরে তাকাতেই ইরানিকে দেখতে পেলো।এবার ফালাকের অবাক হওয়ার সাথে রাগটাও মিশ্রিত হলো।এই এতো রাতে তাও এভাবে চুল খোলা রেখে,পর্দার কোনো বালাই নেই রাজপ্রাসাদ ঘুরে বেরাচ্ছে।খুব বিরক্ত ও লাগল ব্যাপার টা ফালাকের কাছে।ইরানি মাথা নিচু করে ওর সামনে এসে দাঁড়াল।ফালাক বেশ রাগান্বিত কন্ঠে বলল-” তুমি?এতো রাতে আমার কক্ষের সামনে কি করছিলে?”
ইরানিঃ ভুল হয়ে গেছে সম্রাট মাফ করবেন।
আসলে প্রাসাদটা কখনো ঘুরে দেখা হয়নি তো। তাই একটু ঘুরে দেখছিলাম।
ফালাকঃ ঘুরে দেখার জন্য আলো প্রয়োজন।তুমি অন্ধকারে কি দেখছিলে?
ইরানিঃ অন্ধকার কই সম্রাট?প্রাসাদের নকশাগুলোর ফাঁক থেকে কি সুন্দর আলো এসে প্রাসাদের ভেতরটা উজ্জল করে রেখেছে।
ফালাকঃ অদ্ভুত কন্যা তো তুমি।এভাবে মুখে তর্ক না করে যাও গিয়ে নিজের কক্ষে ঘুমিয়ে পড়ো। এভাবে যেনো রাতের বেলাতে ঘুরতে ফিরতে না দেখি।
ইরানি মনটা খারাপ করে চলে গেলো।এমনিতেই ফালাকের মনটা বড্ড বেপরোয়া হয়ে আছে। চোখের সামনে,এত কাছে স্ত্রীকে পেয়েও তবু তাকে আর সেই পূর্বের মত কাছে টানতে পারছেনা।তারউপর এই কন্যার এত বিরক্তিকর কার্য মেজাজটা আরো বিগড়ে দিলো।
ফালাকঃ কাল-ই মিরাজকে ওর ভগিনীর ব্যাপারে কিছু বলতে হবে।
কক্ষের দ্বার লাগিয়ে ঘুরে তাকাতেই মেহেরকে জাগান্বিত দেখতে পেলো।ফালাকের উচ্চকন্ঠের আওয়াজ পেয়ে ঘুমটা ভেঙ্গে গেছে ওর।ফালাক কিছুসময় ওর দিকে তাকিয়ে থেকে আসবাবের উপর থেকে পানপাত্র নিয়ে পানি খেয়ে বিছানাতে গিয়ে শুয়ে পড়লো।কিন্তু আজ ওর ঘুমটা যেনো ওকে ফাঁকি দিচ্ছে।মেজাজ তো একদমই লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছে এখন।
ফালাকঃ কি অসহ্যকর যন্ত্রণা।ঘুম না এলে শয্যাতে শুয়ে থাকা যায়?এবার ঘুম না এলে কক্ষ থেকেই বেরিয়ে যাবো।
কিছুসময় পর সেই প্রস্তুতিই নেওয়ার জন্য উঠে বসল।মেহেরের দিকে চোখ পড়তে দেখল মেহের ওর দিকে তাকিয়ে আছে।মেহের বুঝতে পেরেছে যে ওর ঘুমের ব্যাঘাদ ঘটেছে।ঘুমাতে পারছেনা।কিন্তু ও সাহস করে ওর কাছে যেতেও পারছেনা যে ওর মাথাতে হাত বুলিয়ে দেবে।ফালাকের চোখ পড়তেই মেহের ওপাশ ঘুরে চোখ বন্ধ করে ফেলল। ফালাক কিছুসময় তাকিয়ে থেকে কি ভেবে ওকে ডাকল-” এই উঠে এসো।”
মেহের পাশ ফিরে ওর দিকে তাকাল।তারপর উঠে ওর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল-” জ্বী বলুন।”
ফালাকঃ হাওয়া করো এখানে দাঁড়িয়ে।
মেহের মনেমনে সত্যিই অনেক খুশি হয়েছে।কিন্তু ফালাকের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র ওকে দাসী প্রমাণ করার জন্যই এমনটি করা।মেহের পাশে দাঁড়িয়ে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করছে আর ফালাক অন্য পাশে ঘুরে তাকিয়ে আছে।ওর যে বাতাস প্রয়োজন নয়।প্রয়োজন মেহেরের নরম হাতের স্পর্শ।যে স্পর্শ চুলের মাঝে পেলেই ঘুম এমনিতেই দৌড়ে চলে আসবে।চোখদুটো একবার ঠেসে রেখে বন্ধ করে ঘুমাতে চেষ্টা করছে আবার হাঁপিয়ে উঠে চোখদুটো খুলে তাকিয়ে আছে।তবু মেহেরকে বলছেনা ওর চুলগুলো একটু নেড়েচেড়ে দিতে।কিন্তু মেহেরের খুব খারাপ লাগছে।এভাবে ঘুমাতে না পারার কষ্টটা দেখে।কোনো কিছু না ভেবেই চুলগুলোর মাঝে হাত দিয়ে নাড়তে শুরু করলো।প্রথমে ফালাক ভাবল-” আমার কাছে অনুমতি না নিয়েই আমার মাথায় হাত দিলো।স্পর্ধা দেখানোর শাস্তি দিবো।” পরক্ষণে ভাবনা পরিবর্তন হয়ে গেলো।কারণ ও নিজেও চাইছিলো কিন্তু মুখফুটে বলছিলোনা।আর ওর কোমল হাতের এমন স্পর্শ পেলে ফালাকের চোখে এমনিতেই ঘুম নেমে আসবে।কিছুক্ষণ পর, মেহের ফালাকের ঘুমন্ত মুখখানা দেখছে আর মুচকি হাসছে।মেহের মনেমনে বলছে-” এতসময় ছটফট না করে আরো আগে ডাকলেই তো হতো।” সকালে ফালাক মিরাজের সঙ্গে গ্রামে শিক্ষাকেন্দ্রের কাজ দেখার জন্য বের হয়েছে।
মিরাজঃ সম্রাট আমার ভগিনীকে ক্ষমা করে দিন। গতকাল ও আপনার খুব বিরক্তের কারণ হয়ে গিয়েছিল।ভয়ে আমার কাছে খুব কান্না করেছে। আপনার সামনে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চাওয়ার সাহস পায়নি।তাই আমিই বলছি।
ফালাকঃ হ্যা এ ব্যাপারে আমিও তোমাকে কিছু বলতে চেয়েছিলাম।আচ্ছা সমস্যা নেই।
মিরাজঃ আসলে কখনো এমন রাজপ্রাসাদে কোনোদিন আসেনি তো।তাই গতকাল ওভাবে ঘুরে ঘুরে দেখছিলো।আর ও কিছুটা শিশুসুলভ আচরণ করে।আমি ওকে খুব বকেছি।এরপর থেকে আর এমন করবেনা।
প্রাসাদে ফেরার পর ফালাক আর মিরাজ আজ একসাথে মধ্যাহ্নভোজ করতে বসেছে।তবে আজ ফালাক মেহেরকে খাওয়ার নিয়ে আসতে বারণ করে দিয়েছে।খাওয়ারগুলো মুখে দেওয়ার পরই ফালাকের মুখ ঝালে পুড়ে যাচ্ছে।এমন ঝালওয়ালা খাওয়ার ও আগে কখনো খায়নি।রেগে গিয়ে খাওয়ারের থালা রেখে উঠে দাঁড়াল।পাক কাজের দায়িত্ব যতোগুলো দাসীর ছিল তাদের প্রত্যেককে ও ডেকে পাঠালো।আজ ও সবগুলোকে একটা শাস্তির ব্যবস্থা করবেই।দুঃখের বিষয় যখন মেহেরকেও তাদের মাঝে দেখল।তবুও রাগ আর সংবরণ করতে পারলোনা।যদি প্রয়োজন হয় কক্ষে নিয়ে গিয়ে শাস্তি দিবে মেহেরকে।তাও ছেড়ে দিবেনা।ওদেরকে রাগারাগি করার পর যখন শাস্তির কথা উল্লেখ করতে যাবে তখন একজন দাসী সাহস দেখিয়ে বললো-” সম্রাট আজ আমাদের মাঝে কেউ-ই পাক করেনি।আপনার একজন অতিথি করেছে।”
ফালাকঃ অতিথি?কে?
দাসীঃ নাম বলেনি।শুধু বললো আপনার অতিথি।
ফালাকঃ মিথ্যা বলা হচ্ছে?আমার সামনে দাঁড়িয়ে মিথ্যা বলছো?
ফালাক দাসীটির কথা বিশ্বাস করছেনা।ফালাকের এই পুরো ঘটনা যাচাই না করে বিচার করার স্বভাবটা মেহেরের বরাবরই পছন্দ না।ও তখন বলে উঠলো-” মিথ্যা বলার অপরাধে আমরা প্রত্যেকেই শাস্তি পেতে প্রস্তুত।কিন্তু যখন এই মিথ্যা সত্য প্রমাণিত হবে তখন আপনার ভুল বিচারের জন্য কি আপনার কোনো শাস্তি প্রাপ্য হবেনা?”
ফালাক কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।কারণ ও জানে মেহের আর যা-ই হোক মিথ্যা কখনো বলেনা।ও ভেবে দেখলো এই প্রাসাদে কেবল অতিথি বলতে মিরাজের পরিবার।মিরাজের স্ত্রী আর বোনকে ডেকে পাঠালো।ইরানিকে দেখে দাসীগুলো বলল-” সম্রাট উনিই আজ পাক করেছেন।”
নিজের বোনের কথা শুনে মিরাজ খুব ভয়ও পেয়ে গেলো।ও নিজেই গিয়ে ইরানির গালে চড় মেরে বসল।
মিরাজঃ কোন সাহসে তুমি পাকঘরে ঢুকেছিলে? সম্রাটের মধ্যাহ্নভোজ তুমি ঠিকমত করতে দিলেনা।তুমি জানো এর শাস্তি তোমার কি হতে পারে?
ইরানি দৌড়ে গিয়ে ফালাকের পা জড়িয়ে ধরে বললো-” সম্রাট আমি আপনার খাওয়ার নষ্ট করতে চাইনি।আপনি আমার উপর ভীষণ রেগে ছিলেন বলে আমি আপনার জন্য নিজ হাতে পাক করে আপনাকে খাওয়াতে ছিলাম।আমার ভুল হয়ে গেছে।আমাকে এবারের মত ক্ষমা করে দিন।আমি আর এই ভুল জীবনেও করবোনা।”
মেহের শুধু ফালাকের দিকে তাকিয়ে আছে।এর প্রতিউত্তর ফালাকের কি তা জানার জন্য।
ফালাকঃ আমার প্রাসাদের অতিথি বলেই আজ ক্ষমা পেয়েছো।অন্যথা এর শাস্তি অনেক ভয়াবহ হতো।
ফালাকের আর দুপুরের খাওয়া হলোনা।মেহের পাকঘরে গিয়ে নতুন করে কয়েক পদ রান্না করে নিয়ে ফালাকের কক্ষে গেল।ফালাক শুয়ে ছিলো। খাওয়ার সুগন্ধ পেয়েই চোখ খুলে তাকালো।মেহের আর তার পাশে অন্য একজন দাসীর হাতে কয়েক পদ খাওয়ার।ফালাকের খুদা এখনো মিটেনি।তাই আর মেহেরকে বারণ করলোনা।সারাদিনে আজ তিনবার পাক করা হয়েছে।দুপুরের খাওয়ার তৈরির জন্য মেহের-ই সব গোছগাছ করেছিল কিন্তু তার মাঝে এসে ইরানি জোর খাটিয়ে পাক করতে শুরু করে দিয়েছিলো।মেহের বারণ করা সত্তেও সে মেহেরের কথা গ্রাহ্য করেনি।খাওয়ার গুলো রেখে মেহের দাসীকে সাথে করে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিলো। পিছু থেকে ফালাক মেহেরকে থামতে বলল-” দাঁড়াও।”
মেহের এসে ফালাকের সামনে দাঁড়ালো।
ফালাকঃ ইরানি যখন পাকঘরে আসে তখন তুমি কোথায় ছিলে?
মেহেরঃ আমিও পাকঘরেই ছিলাম।
ফালাকঃ তাহলে তাকে নিষেধ করোনি কেনো? এই কাজ কি ওর?
মেহেরঃ না।এই কাজ আমাদের(দাসী)।আমি তাকে বারণ করেছিলাম কিন্তু সে আমার বারণ উপেক্ষা করেছে।
ফালাকঃ কেনো?
মেহেরঃ কারণ সে আমাকে কেবল দাসী পরিচয়ে চিনে।
ফালাক নিশ্চুপ হয়ে রইলো।ও মূলত এটাই চেয়েছিল যে প্রত্যেকের সামনেই মেহের একজন দাসী হিসেবে পরিচিত হবে।কিন্তু মেহেরের প্রতি অন্যদের করা অপমান ও মেনে নিতে পারছেনা। ওর মনে হচ্ছে মেহেরের সাথে কেবল ও যা ইচ্ছা তাই করতে পারে কিন্তু অন্যরা ওকে কেনো অবজ্ঞা করবে।চুপচাপ খেতে শুরু করলো।মেহেরের হাতের রান্না ও এই নিয়ে তিনবার খেলো।তিনবারের স্বাদ-ই মুখে লেগে থাকার মত।ও ভাবছে-” কি করে পারে ও এত খুঁতহীন পাক করতে?কোনোটাতেই একটু কম বেশি ঝাল,নুন কিছু হয়নি।”
মেহের প্রতিটা পদ রান্নার সময় তা সবার আগে নিজে চেখে দেখে।যার জন্য কোনো খাওয়ারে কোনো কিছু কম বেশি হয়না।সেই সকাল থেকে মেহের নিজে হাতে প্রাসাদের যাবতীয় কাজ করছে।তাই গোসলের কাজটাও সাড়তে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।তারউপর আবার ফালাকের জন্য নতুন করে পাক করতে গিয়ে অনেক সময় লেগে গেছে।সন্ধ্যার সময় দাসীদের গোসলাগার থেকে গোসল সেড়ে ওদের সাথে বসেই গল্প করছে।একজন দাসী মেহেরকে উদ্দেশ্য করে বলল-“রাজকন্যা আপনাকে একটা কথা বলতে চাই।”
মেহেরঃ হ্যা বলোনা।
দাসীঃ আমরা কখনো ভাবিনি আপনি আমাদের সাথে নিজেকে এইভাবে মানিয়ে নিতে পারবেন।
মেহেরঃ এই কথা?
দাসীঃ না। কথাটা ঠিক এটা নয়।কথা হচ্ছে সেনাপতির ভগিনী ওই ইরানিকে নিয়ে।মেয়েটা বড্ড বেহায়া স্বভাবের।গতকাল সন্ধ্যার পর সম্রাট যখন বাগানে ছিলেন।উনি তখন সম্রাটের সামনে সরোবর থেকে গোসল সেড়ে ভেজা শরীরে সম্রাটের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলো।সম্রাটকে দেখলাম কি কথা বলে ওখান থেকে চলে এলো।
মেহেরঃ হুম।হয়তো কখনো রাজপ্রাসাদ দেখেনি। তাই কৌতূহলবশত এমন করছে।
দাসীঃ সেটা না হয় কৌতূহলবশত হলো।তাই বলে সম্রাটের জন্য পাক করতে চাইবে কেনো?
মেহেরঃ জানিনা।
দাসীঃ আমার তো ওর কোনো ভাব ভঙ্গীই ভালো লাগছেনা।
এর মধ্যে অন্য একজন দাসী বলে উঠল-” গতকাল রাতের ঘটনা তোমরা তো কেউ-ই জানোনা।”
১ম দাসীঃ কি ঘটনা?
২য় দাসীঃ তোরা তো সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিলি। আমাদের কক্ষের সামনে থেকে কারো পায়ের নূপুরের আওয়াজ পাচ্ছিলাম রাত্রে।তো আমি ভাবলাম রাজকন্যাকে তো সম্রাট ডেকে নিয়ে গেলো। উনি তো আর আমাদের কক্ষের সামনে হাঁটাচলা করতে পারেনা।আর উনি এখন নূপুর ও পড়েন না।আর আমরা সব দাসীরা সব ঘুমিয়ে। তাহলে বাহিরে কে?তা দেখার জন্য ভয়ে ভয়ে খুব আস্তেভাবে দরজাটা খুললাম।খুলে দেখলাম সম্রাটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ইরানি একদম পর্দাহীন ভাবে।চুলগুলো ছেড়ে আর লাল একখানা শাড়ি পড়ে।সম্রাটকে দেখে মনে হলো ভীষণ রেগে কথা বলছেন ওর সাথে।
মেহেরঃ তাতে কি প্রমাণিত হলো?
২য় দাসীঃ বুঝতে পারছেন না রাজকন্যা?ও শুধু ঘুরে ফিরে যে কোনো উপায়ে সম্রাটের সামনে যাওয়ার চেষ্টা করছে তাও বারবার পর্দাহীনভাবে।
১ম দাসীঃ এটা কেমন কথা?এভাবে খোলামেলা শরীরে তো শুধু বাইজিরাই আসতে পারে।ওই মেয়ে কেমন করে আসে?
মেহের কিছুটা থমকে গেলো ওদের কথাগুলো শুনে। তারপর বললো-” আচ্ছা তোমরা খামখা বেশি ভাবছো এই বিষয় নিয়ে।এই প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাও।”
এর মধ্যে হঠাৎ বাহির থেকে এসে এক দাসী বললো-” রাজকন্যা সম্রাট আপনাকে ডাকছেন?”
মেহেরঃ উনি প্রাসাদে এসেছেন?
দাসীঃ হ্যা মাত্রই এলেন।
মেহেরঃ আচ্ছা যাও।আসছি।
দাসীঃ কক্ষে অন্য একজন পুরুষ আছে।
মেহেরঃ অন্য পুরুষ?তার সামনে আমাকে ডাকছেন কেনো?
দাসীঃ জানিনা।তবে তিনি কর্তনকারী।জামা কাপড় তৈরি করেন।
মেহের মুখ আর চুলগুলো ঢেকে ফালাকের কক্ষে গেলো।মেহেরকে আসতে দেখে ফালাক অপর ব্যক্তিকে চলে যেতে বলল।মেহের শাড়ি পরেনা যার জন্য ফালাক মেহেরের পছন্দমত ঢিলা আর লম্বা জামা(সেলোয়ার কামিজ)তৈরি করতে দিয়েছিল। সেগুলো ওর হাতে দিয়ে গম্ভীরস্বরে বললো-” এখন থেকে এই জামাগুলোই পরবে।যাও এখনি পরে আমার কক্ষে এসো।কিছু প্রয়োজন আছে।”
মেহের খুব অবাক হলো।কিন্তু প্রশ্ন করার সাহস পেলোনা।দাসীদের কক্ষে আসার পর ওদেরকে উদ্দেশ্য করে বলল-” আজ তোমাদের সম্রাটের কি হলো বলো তো?এই এতোগুলো জামা বানিয়ে দিয়েছেন আমাকে পরার জন্য।অথচ কিছুদিন আগে উনিই নিজেই আমাকে তোমাদের জামা পড়তে বললো।বুঝতে পারছিনা হঠাৎ কি হলো?”
দাসীঃ রাজকন্যা কারণটা আপনি না বুঝতে পারলেও আমরা এখন বেশ বুঝতে পারছি।
মেহেরঃ তোমরা বুঝতে পারছো?কি বুঝতে পারছো?
দাসীঃ এই কথাগুলো আপনাকে কি করে বলি?
শুনলে আপনি খুব কষ্ট পাবেন।
মেহেরঃ কি হয়েছে আমাকে খুলে বলো তো? মেহেরকে নিয়ে যা যা সমালোচনা হয়েছে রাজ্যে আর প্রাসাদে তার সবকিছু বলল। মেহের এই কথাগুলো শুনে মাটিতে লুটিয়ে পড়ার মত অবস্থা।লজ্জা আর কষ্টে ওর মরেই যেতে ইচ্ছা করছে।অন্যের অধীনে যাওয়ার আগে মেহের নিজের প্রাণ শেষ করে দিতে দুবার ভাববেনা।
জামাগুলো নিচে চেলে ফেলে দিয়ে চিৎকার করে বলতে শুরু করলো-” চাইনা আমার এতো রাজকীয় জামা।আমার সম্মানটুকু সবার সামনে নিচু করে দিয়ে এখন আমাকে দয়া দেখাচ্ছে?এখন এই দয়া দেখিয়ে কি হবে?মানুষের যা বোঝার যা জানার তা তো জেনেই গেছে।নতুন করে আমার সম্মানটুকু আর ফিরে আসবেনা।এর থেকে তো আমার ওনার হাতে মৃত্যু ও শ্রেয় ছিলো।ও এর জন্যই বুঝি আমাকে গতরাত্রে নিজের কক্ষে নিয়ে গেলো।সকলের সামনে এটা দেখাতে চাই যে আমি তার স্ত্রী।অথচ থাকতে হবে সেই দাসীদের মতোই। এতো করুণা আমার প্রয়োজন নেই।ওরা তো ভুল ও বলেনি।উনি তো সত্যিই আমার পূর্বে আরো কত রাজকন্যাকে নিজের দাসী বানিয়ে রেখেছিলো। আর আজ আমিও তাদের ব্যতিক্রম হলাম না। আমিই তো ভুলেই গিয়েছিলাম ওনার ইতিহাস। আজ আবার আমার থেকে তার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এখন আমি দাসী আর কাল-ই হয়তো সত্যি অন্য কোনো রাজকন্যাকে হরণ করে নিয়ে আসবে তারপর তার সাথেও এমন কিছু করবে।এসব তো আমার মনেই ছিলোনা।”
দাসীঃ রাজকন্যা চুপ করুন।আপনি শান্ত হউন। সম্রাট সব শুনে নিবে।
মেহেরঃ শুনে নিক।আমি ওনার দেওয়া এই একটা জামাও পরবোনা।এই পোশাকেই থাকবো আমি। দাসী যেহেতু হয়েছি তাই নিজেকে দাসীর বেশেই রাখবো।আর আজ থেকে এই কক্ষেই থাকবো।
যাবোনা ওনার কক্ষে।কাল হয়তো আমাকে কক্ষে রেখে আমার সামনেই অন্য কোনো নারীর সংস্পর্শে যাবে।যা দেখে আমার চোখকে অপবিত্র করার ইচ্ছা নেই।
মেহের এখন ক্রোধের শেষ পর্যায়ে।কথাগুলো বলে হু হু করে কাঁদতে শুরু করলো।ও ভেবেছিলো ফালাক হয়তো ওকে অন্যসব রাজকন্যার থেকে আলাদা কিছু ভাবে।ওকে সবার থেকে অন্য নজরে দেখে।কিন্তু এই কথাগুলো শোনার পর ওর কাছে মনে হচ্ছে যে ফালাক ওকে সবার মতোই ব্যবহার করেছে ভোগের সামগ্রীরূপে।ওকে যদি সত্যই শাস্তি দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করে তাহলে অন্য কোনো উপায় অবলম্বন করুক।এর থেকে কঠোর শাস্তি প্রয়োগ করুক।কিন্তু দাসীরূপেই কেনো পরিণত করতে হলো?একরাশ কষ্ট আর রাগ বুকে চেঁপে কান্না করছে মেহের।কিন্তু এর মাঝে কেউ লক্ষ্য করেনি যে দরজার ওপাশে ফালাক দাঁড়িয়ে মেহেরের প্রত্যেকটা কথা শুনেছে।শেষের বলা কথাগুলো শুনে ফালাকের অনুতপ্ত হওয়ার বদলে রাগে আরো ক্ষিপ্ত হয়ে গেলো।মেহেরকে ও জামা পড়ে নিজের কক্ষে আসতে বলেছিলো কিন্তু ওর আসতে দেরী দেখে রেগে গিয়ে নিজেই কক্ষ থেকে বেরিয়ে ওকে ডাকতে এসে মেহেরকে চিৎকার করতে শুনে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে সবকথা শুনে নিয়েছে।
ফালাকঃ এখনো তুমি আমাকে এতোটা নোংরা ভাবো?যে তোমার জন্য আমি আজ কোনো নারীর শরীরের দিকে স্ব-ইচ্ছায় তাকিয়ে দেখিনা আর সেই তুমি আমাকে কি বললে?আমি তোমার সামনে অন্য কোনো নারীর সংস্পর্শে যাবো?আমাকে নিয়ে তোমার চিন্তাধারা এখনো এমন?ঠিক আছে, ফালাককে তুমি যদি সেই আগের রূপেই কল্পনা করো তাহলে সেই কল্পনা আমি তোমরা সামনে বাস্তবে পরিণত করবো।
ফালাক প্রচন্ড রেগে গেছে।ধাক্কা দিয়ে দরজা পুরোটা খুলে ফেলল।সবাই চমকে গিয়ে মাথা নিচু করে আছে।আর মেহের ওর দিকে ঘৃণার চোখে তাকিয়ে আছে।সবাই ফালাককে দেখে বুঝতে পেরেছে যে ও সবকথা শুনে নিয়েছে।প্রচন্ড ভয়ে আছে সবাই। ফালাক কোনো কথা না বলে নিচে থেকে জামা গুলো তুলে মেহেরের হাত ধরে টানতে টানতে নিজের কক্ষে এনে দরজা বন্ধ করে দিলো।মেহেরের এখন ভয়ের থেকে রাগ কাজ করছে বেশি।দরজার সামনেই শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ফালাক টেনে এনে বিছানার সামনে দাঁড় করালো।তারপর ওকে বলল-” আমার দেওয়া জামা তুমি ফেলে দিয়েছো, আমার কক্ষে তুমি থাকবেনা, তাই না?দেখছি কি করে পারো।এই জামাটা পরো।”
মেহের কোনো কথা না বলে মুখ ঘুরিয়ে রইল অন্যদিকে।তাতে ফালাকের আর বেশি রাগ হয়ে গেলো।ও আবারো উচ্চস্বরে বললো-” পরতে বলছি আমি।”
মেহেরঃ পরবোনা।আমি এইভাবে এই জামাতেই থাকবো।
ফালাক কিছু না বলে ফলকাটা ছুড়িটি এনে সোজা মেহেরের পিঠের উপর থেকে জামা কেটে ছিড়ে দিলো, হাতা থেকে কেটে ছিড়ে দিলো।পুরো জামাটাই ওর শরীর থেকে ছিড়ে ফেলতে গেলো তখন মেহের বাঁধা প্রয়োগ করলো।
ফালাকঃ এই জামাগুলো না পড়লে এমন কিছুই হবে।আটকাতে পারবেনা কিন্তু আমাকে।
মেহের বাধ্য হয়ে জামাগুলো পড়ে নিলো।আর কক্ষ থেকে বাহিরে যাওয়াও সম্ভব নয় ফালাককে উপেক্ষা করে।মেঝেতে বিছানা করে শুয়ে আছে।ফালাক ও শুয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।মেহের অন্যাপাশ ঘুরে কান্না করছে ও তা ভালো করেই টের পাচ্ছে। আজ মেহেরের বলা কথাগুলো ফালাককে খুব আঘাত করেছে।ও তো একরকম প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল যে মেহেরকে ছাড়া ও আর কোনোদিনও অন্য কোনো নারীর কথা চিন্তাও করবে না।আর সেই সুযোগ ও নেই।কারণ ও নিজের আত্মার সাথে মেহের নামটা বেঁধে রেখেছে।কিন্তু মেহের ওকে কিভাবে এমনটা ভাবতে পারলো।এতোগুলো দিনেও কি মেহের ওকে চিনতে পারেনি?
ফালাকঃ কি লাভ হলো নিজেকে তোমার মনের মত করে তৈরি করে?তার বিনিময়ে যা পেয়েছি তা আর জীবনে দ্বিতীয়বার পেতে চাইনা।
কাল থেকে ফালাককে মেহের অন্যরূপেই দেখবে যে রূপে চরত্রহীন রাজারা থাকে।পরদিন সকাল থেকে মেহের আর ফালাকের সামনে এলোনা।ফালাক ও আর মেহেরকে ডাকেনি।তবে আশ্চর্যকর বিষয় ফালাক আজ সকালের খাওয়ার ও প্রাসাদে খায়নি আর দুপুরের খাওয়ার ও না।গ্রামে শিক্ষাকেন্দ্র নির্মাণের কাজ ও নিজে দাঁড়িয়ে থেকে করাচ্ছে। আর গ্রামের মানুষগুলোও এখন ফালাককে দেখে আগের মত ভয় পায়না।ছোট ছোট বাচ্চাগুলোকে কোলের মাঝে নিয়ে ভীষণ আদর করে।সবাই তা দেখে বলাবলি করে ফালাকের ভালোবাসার মাঝে ওরা সবাই ওর আব্বাজানকে দেখতে পায়।আর ফালাককেও ওরা ভালোবেসে কিছু খেতে দিলে ফালাক তা গ্রহণ করে।আজ সকালের খাওয়ার, দুপুরের খাওয়ার ফালাক গ্রামবাসীদের দেওয়া খাওয়ার খেয়েছে।ও নিজেও ভীষণ আনন্দিত হয়েছে আর গ্রামের মানুষগুলো ও খুব খুশি হয়েছে। এমন করে ওরা কোনোদিন কোনো রাজাকে দেখেনি যে রাজা গ্রামের মানুষের কুঁড়েঘরে বসে তাদের দেওয়া খাওয়ার খেয়েছে।ফালাকের প্রতি ধারণা প্রত্যেকের আস্তে আস্তে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।আর মেহের এদিকে খুব চিন্তিত হয়ে আছে যে ও আজ সারাদিন প্রাসাদের খাওয়ার খেলোনা কেনো?সন্ধ্যার পর কক্ষে ফিরে ফালাক মিরাজকে ডাকল।
মিরাজঃ জ্বী সম্রাট বলুন।
ফালাকঃ প্রস্তুত হও বাহিরে যাবো।
মিরাজঃ এইতো এলেন।একটু বিশ্রাম গ্রহণ করুন। আজ সারাদিন তো অনেক কষ্ট হয়েছে আপনার বাহিরে থেকে।
ফালাকঃ বিশ্রাম নেওয়ার জন্যই যাবো।তোমাকে আমি খুব ভরসা করি একরকম ঢাল এর মতো। তাই তোমাকে সঙ্গে রাখা।বেশি দেরী না করে তৈরি হয়ে এসো।
মিরাজঃ ঠিক আছে সম্রাট।কিন্তু কোথায় যাবেন?
ফালাকঃ বাইজিখানাতে।ঝুমুরবাইকে জানাও আমি আসছি।সবকিছু যেনো প্রস্তুত থাকে।
বাইজিখানার বাইজিদের মধ্যে ঝুমুরবাই নামে একজন নর্তকী বেশ প্রিয় সকলের কাছে।সবাই গিয়ে ওর নৃত্য-ই আগে দেখতে চাই।মিরাজ আর ফালাক রওনা হলো বাইজিকক্ষের উদ্দেশ্যে।
মুহূর্তের মধ্যে প্রাসাদে ছড়িয়ে গেলো এই খবর।
মেহের শোনার পর ওর পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যাওয়ার মতো অবস্থা।ও কল্পনাও করেনি এমনকিছু।আর ফালাক সে গোপনীয়তা বজায় রেখে বাইজিখানাতে যায়নি।মেহেরের কানে যাতে এ খবর পৌঁছাই ও সেইভাবেই জানিয়ে গেছে।
অর্ধরাত্রি হতে চলল মেহের কক্ষে বসে শুধু কাঁদছে। আজ যে ফালাক এই কক্ষে আসবেনা অন্য কোনো নর্তকীর বিছানাতে থাকবে তা ভাবতেই ওর মাথা ঘুরে আসছে।এদিকে বাইজিখানাতে ফালাক সেই একই জায়গাতে ঠাঁই বসে সারাব পান করছে। একের পর এক নর্তকী নাচ করেই চলেছে কিন্তু সেদিকে ওর হুশ নেই।প্রায় সবার নৃত্য দেখানো শেষ তবুও ওর সেখান থেকে ওঠার খবর নেই।ঝুমুরবাই নামে একজন নর্তকী ওকে উঠিয়ে কক্ষে নিয়ে যেতে চাইলো।সে ওকে স্পর্শ করতেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলো।বাইজির সর্দারনী মিরাজকে বলল-” কি গো, তোমার সম্রাট কি এখানে শুধু সারাব পি তে এসেছে?সেই তখন থেকে সারাব-ই খেয়ে চলেছে।আমার কোনো কন্যাদের নৃত্য ও সে ঠিকমত তাকিয়ে দেখলোনা।আবার তাদের স্পর্শ ও নিতে চাইছেনা।তাহলে এসেছে কি করতে?”
মিরাজঃ সম্রাট?
ফালাক কিছুটা মাতলামো কন্ঠে উত্তর নিলো।
ফালাকঃ হুম।বলো মিরাজ।
মিরাজঃ আপনি কি এখানে থাকবেন নাকি প্রাসাদে ফিরবেন?
ফালাকঃ এখানে কেমন আরামবোধ করছিনা। আমাকে প্রাসাদে নিয়ে চলো।
সর্দারনীঃ সেনাপতি সাহেব যাওয়ার পূর্বে আমার কন্যাদের প্রাপ্যটুকু দিয়ে যান।
ফালাকঃ কি বলছে ও? মিরাজ….
মিরাজঃ নর্তকীদের প্রাপ্যটুকু দিতে বলছে।
ফালাক তার জামার সংলগ্ন ছোট থলি থেকে কিছু মোহর বের করে মিরাজের হাতে দিয়ে বলল-” দাও ওদের মূল্য।”
তারপর মিরাজের সাথে চলে আসল প্রাসাদে।কক্ষে বেশ কিছুক্ষণ ধরে জোরে জোরে কড়া নারছে ফালাক।মেহের বিরক্তবোধ করে দরজা খুলে ফালাককে দেখে অনেক খুশি হলো কিন্তু তার থেকে বেশি কষ্ট পেলো ওর শরীর থেকে সারাবের গন্ধ পেয়ে।ও যা ভাবছিলো তাই ওর কাছে সত্যি মনে হলো।মেহেরকে একনজর দেখে শরীরের জামা খুলে ছুড়ে ফেলে দিলো ওর পায়ের কাছে। তারপর বিছানাতে গিয়ে শুয়ে পড়লো বুকের উপর ভর করে।মেহের দরজা বন্ধ করে দু চোখের পানি মুছে ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
মেহেরঃ ঝুমুরবাই বুঝি ঘুমিয়ে পড়েছে?
মেহেরের কথা শুনে ফালাক ঘাড় ঘুরিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকল বেশ কিছুক্ষণ।চোখ দেখেই মনে হচ্ছে মাথায় খুন চড়ে আছে এত পরিমাণ রাগ আছে।তারপর ওকে কর্কশ কন্ঠে বলল-” কথা বলবেনা আমার সাথে।চোখের সামনে থেকে সরে যাও।”
আজ মেহেরের রাগ আর জিদ ও চরমে পৌঁছে গেছে।জোর করেই ফালাকের উপর নিজের অধিকার খাঁটাবে।স্বামীর প্রতি স্ত্রীর যতোপরিমাণ রাগ, অভিমান থাক তাই বলে স্বামীকে অন্য কোনো নারীর সংস্পর্শে যাওয়া কখনোই তা মেনে নিতে পারেনা।মেহেরের ক্ষেত্রেও তার ভিন্ন কিছু হচ্ছেনা।
নাছোড়বান্দার মতোই ওর সাথে কথা বলে যাচ্ছে।
মেহেরঃ কেনো?আমার রূপে আর মধু খুঁজে পান না বুঝি?তাই আমাকে আর দেখতে ইচ্ছা হয়না?
ফালাক মেহেরের কথা শুনে এবার উঠে বসল।ওর উঠে বসা দেখে মেহের কিছুটা কাছে আসলো। তারপর শরীরের উপর থেকে পাতলা চাদরটা সরিয়ে নিচে ফেলে দিয়ে বলতে শুরু করল-” বাইজিদের শরীরে এতো আকর্ষণ পেয়েছেন যা আমার মাঝে আর খুঁজে পান না।ভালো করে একবার চেয়ে দেখুন না খুঁজে পান কিনা?তাদের থেকে কম কোথায় আছে একবার দেখুন।আমাকে নয়, ধরে নিন কোনো বাইজিকেই দেখছেন আপনি। তাই আমার সাথেই না হয়…….
মেহেরের পুরো কথাটা শেষ হওয়ার পূর্বেই ফালাক ওর বাহু ধরে টেনে বিছানায় নিয়ে এলো।তারপর খুব জোরে ওর গলা চিপে ধরে বলল-” আমাকে তুমি কতো নিচে নামাতে চাও?কতো নিকৃষ্ট ভাবো আমাকে তুমি।আমি নিকৃষ্ট হলে তোমার শরীরের এক চুল পরিমাণ জায়গা ফাঁক থাকবেনা এমন নিকৃষ্টতা দেখাবো।যা দেখার পর দ্বিতীয়বার নিজেকে বাইজিদের সঙ্গে তুলনা করতে শিউড়ে উঠবে।”
রাগের মাথায় ফালাকের একটুও হুশ নেই যে ও কতো শক্ত করে মেহেরের গলা চেঁপে ধরে আছে।মেহেরের শরীরে ঘাম ছুটে যাচ্ছে,হাত-পা ছাটাছাটি করছে সেদিকেও লক্ষ্য নেই ফালাকের কথাগুলো বলার সময়।মেহের যখন ফালাকের বুকের মাঝে হাত দিয়ে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করলো তখন ফালাকের খেয়াল হলো।দ্রুত ওর গলা ছেড়ে দিয়ে নিচে নেমে দাঁড়ালো।ফালাকের চোখে রক্ত জমে গেছে মেহেরের এমন কথা শুনে অতিরীক্ত রাগে।আর মেহেরের চোখে রক্ত জমে গেছে নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে আসার অবস্থার কারণে।
শুয়ে হাঁপাতে আছে দেখে ফালাক পানি নিয়ে এসে ওকে উঠিয়ে ওর হাতে ধরিয়ে দিলো।মেহের পানিটুকু খাওয়ার পর একটু স্থির হলে ফালাক ওকে টেনে ধরে বিছানা থেকে নামিয়ে বলল-” বের হয়ে যাও আমার কক্ষ থেকে। আমার চোখের সামনে আর আসবেনা তুমি।”
এই বলে ওকে কক্ষ থেকে বের করে দিলো।
***যেখানে বেশি কষ্ট সেখানে ভালোবাসাও জন্ম নেয় বেশি।সেই বেশি ভালোবাসা দেখা দিবে।***

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here