Story: হিংস্র প্রেম
পর্বঃ ০৫
লেখাঃ Israt Jahan
অনেক্ষণ যাবৎ ফালাক সরোবারের পাশে বসে থেকে মেজাজ নিয়ন্ত্রণে এনে তবেই রাজমহলের ভেতরে গেল।নিজের কক্ষে ঢুকতেই দেখল মেহের আর ওই কক্ষে নেই। ফালাক বুঝতে পারল মেহের তার আগের কক্ষে চলে গেছে।ফালাক মেহেরের খাস দাসীকে ডাকল।
ফালাকঃ মহারানী কি করছেন এখন?
দাসীঃ আমাকে উনি কক্ষ থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছিলেন।আমি বেরিয়ে আসার পর দরজার কাছে গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলাম উনি নামাজ আদায় করতে বসলেন।তারপর মোনাজাত ধরে খুব কান্নাকাটি করছেন।
ফালাকঃ মোনাজাত শেষ হলে আমাকে খবর জানিও।
দাসীঃ যথা আদেশ সম্রাট।
ফালাকঃ অনেক রাত হল দাসী এখন পর্যন্ত কোনো খবর দিতে আসলোনা।এতক্ষণ যাবৎ কি কেউ মোনাজাত করে?
ফালাক বিছানা থেকে উঠতেই দাসী এসে হাজির।
দাসীঃ সম্রাট মহারানী ভেতর থেকে দরজার কপাট লাগিয়ে দিয়েছেন।
ফালাকঃ আমি জানতাম সে এমন কিছুই করবে।ঠিক আছে যাও তুমি।
ফালাক তার রাজপ্রাসাদের কক্ষগুলোর কোনোটিতে একটি দরজা তৈরি করেনি।তার কারণ রাজ্য হামলা হলে প্রাণ নিয়ে বাঁচতে হলে কক্ষের গোপন দরজার প্রয়োজন পড়ে। আর তা এমনভাবে তৈরি হয় যা কক্ষের পেছনে অবস্থান করে।ফালাক মেহেরের কক্ষের সেই দরজা দিয়েই প্রবেশ করল। যেটা মেহের আজও পর্যন্ত জানতে পারেনি যে তার কক্ষে সদরের দরজাটি ছাড়াও আরও অন্য একটি গোপন দরজা রয়েছে।সেটা অবশ্য বুঝতে না পারারই কথা।দরজাটার স্থান এমনভাবে তৈরি করেছে যেটা সহজে টের পাওয়া যাবেনা।
ফালাকঃ কক্ষে আসতেই দেখতে পেলাম মেহের জায়নামাজের উপরে ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি যে কক্ষে প্রবেশ করেছি তা ও বুঝতে পারেনি তার মানে ও এখন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।অতিরীক্ত কান্নাকাটি করলে তারপর এমনিতেই চোখ নিদ্রা নেমে আসে।আমি ওকে খুবই সাবধানের সাথে কোলে তুলে নিলাম। একটুও বুঝতে পারছেনা ও আমার কোলে আছে।সদরের দরজা দিয়ে আমি ওকে কোলে নিয়ে আস্তে আস্তে হেঁটে আমার কক্ষে চলে এসেছি।আস্তে করে ওকে শয্যাতে শুইয়ে দিলাম।কক্ষের বাতি নিভিয়ে দিয়ে ওর পাশে এসে বসেছি।
ফালাক মেহেরের মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকল।
ফালাকঃ আমার মত নারীদেহ লোভী ব্যক্তির লোভকে তুমি সংবরণ করেছো।কি দেখেছি আমি তোমার মাঝে তা আমি নিজেও জানিনা।এতগুলো সময় তোমার সাথে আমার পার হয়ে গেল এখন পর্যন্ত তোমাকে ভোগের সামগ্রী রূপে ভাবিনি। স্বামীরূপে তোমার সংস্পর্শে আসার ইচ্ছা জন্ম নিয়েছে আমার।এমনকি এই কয়দিন অন্য কোনো নারীর প্রতি ও আমার লোভ জাগেনি।তবে আল্লাহ্ পাক তোমার যা রূপ দিয়েছে তাতে আমি কতোকাল নিজেকে ধরে রাখতে পারবো তা বলতে পারছিনা।যেমন এই মুহুর্তে আমার ইচ্ছা করছে তোমার যৌবনের অতল সাগরে তলিয়ে যেতে।জানি তা আমি এখন করতে পারবোনা।অন্য সময় হলে হয়তো এতোকিছু ভাবতাম না।এই অন্ধকার কক্ষেও তোমার রূপ ঝলকানি দিচ্ছে যার জন্য আমি তোমার মুখ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।
বেশ কিছুক্ষণ ফালাক মেহেরকে নিয়ে মনে মনে রাজ্যের চিন্তা করতে লাগল।ভাবার মাঝেই ফালাক নিজের অজান্তে মেহেরের মুখের সাথে ওর মুখ স্পর্শ করলো।মুখে মুখ লাগিয়ে ঘর্ষণ চলছে,মেহেরের কানের লতিতে ফালাকের অধর স্পর্শ করল।কানের নিচ থেকে গলার কাছে নামতেই ফালাকের গরম নিঃশ্বাস মেহেরের শরীরে এমনভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে যেই নিঃশ্বাসের তেজ নিদ্রারত মেহেরের শরীরকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে।ফালাক চোখ দুটো বন্ধ করে ওর নাক আর ঠোঁট মেহেরের গলাতে ঘর্ষণ করছে।মেহেরের শরীর থেকে এক মিষ্টি সুগন্ধ ভেসে আসছে ফালাকের নাকে।যা ওকে মাতাল করে ফেলছে।ফালাকের নরম ঠোঁটের চুম্বন আর গরম নিঃশ্বাসের তেজ মেহেরের শরীরকে বারবার-ই শিহরিত করে তুলছে।ঘুমের মাঝেই মেহের বিছানার চাদর ওর হাতের মুঠোর মাঝে চেঁপে ধরছে।আর এদিকে ফালাক মাতাল হয়ে কখন যেনো মেহেরের শরীরকে আঁকড়ে ধরেছে।মেহেরের শরীরের উপর চলে এসেছে।নিদ্রারত মেহেরের গাল ফালাকের অধর পাগলের মত স্পর্শ করছে।বিছানার কোমল চাদর ছেড়ে মেহের ফালাককে জড়িয়ে ধরল।ফালাক মেহেরের দুই হাতের শক্ত বাঁধনে আটকে পড়ল।যা ফালাককে মেহেরের কাছে যেতে আরো বেশি সাহস জোগাল।অজানা ঘোরের মাঝে চলে গেল ওরা দুজন।ফালাকের নিজের ও অজানা ছিল আজকে যে সে তার প্রিয়তমার বাহুডোরে আবদ্ধ হয়ে তার সঙ্গে মিলিত হবে। মেহেরের গাল আর কানের অংশ থেকে ফালাক তার ঠোঁট সরিয়ে নিয়ে যখন মেহেরের ঠোঁট ওর ঠোঁট দিয়ে চেঁপে ধরল ঠিক সেই ক্ষণেই মেহের চোখ মেলে তাকাল। অন্ধকারের মাঝেও ফালাকারের লাল বর্ণের ফর্সা মুখটি চিনতে মেহেরের বেশি সময় লাগল না।তখনো ফালাক তার ঘোরের মাঝ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি।বুঝতে পারছেনা যে মেহের জাগ্ন হয়ে গেছে। মেহের আর এক মুহূর্ত সময় বিলম্ব না করে ফালাককে সজোরে ধাক্কা দিয়ে নিজের শরীরের উপর থেকে ফেলে দিল।ফালাকের কাছে এই মুহুর্তে এই ব্যাপারটা পুরো অকল্পনীয় ছিল।এমন কিছু ওর সাথে ঘটবে তা ওর মাথাতেই আসেনি।ঝোঁক সামলাতে না পেরে ফালাক বিছানা থেকে নিচে গিয়ে পড়ল।বিছানার পাশে থাকা কাঠের ছোট আসবাবের পায়ার সাথে ধাক্কা খেয়ে কপালে খুব জোড়ে চোট পেল।আপনা আপনি ফালাকের মুখ থেকে “আহ্” শব্দটি বেরিয়ে এল।মেহের বিছানা থেকে উঠে দাড়াল।
মেহেরঃ অমানুষ,জানুয়ার!আমার ঘুমন্ত অবস্থাকে কাজে লাগিয়ে আমাকে গ্রাস করতে চেয়েছিলি?মেহেরুনের শরীরের প্রাণ থাকতে ও তোর হাতে কোনোদিনও নিজেকে তুলে দিবেনা।সুযোগের সন্ধানে ছিলি তুই। আর আজকে সেই সুযোগটা পেয়ে গিয়েছিলি।বিধাতার অশেষ ক্রিপা যে সে আমার নিদ্রাভঙ্গ করতে সহায়তা করেছে। স্বয়ং আল্লাহ্ পাক ও চান না তোর মত পাপিষ্ঠের হাতে আমাকে সঁপে দিতে।
এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে মেহের কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেল।ফালাক তখনো মাটিতে পড়ে ব্যথায় কাতরাচ্ছিল।বহু কষ্টে মাটি থেকে উঠে ফালাক কক্ষের বাতি জ্বালাল। কপালে হাত দিতেই বুঝতে পারল কপাল ফেঁটে রক্ত বের হচ্ছে।বিছানায় গিয়ে বসে কাপড়ের এক অংশ দিয়ে কপালের ফাঁটা স্থান চেঁপে ধরল।কিন্তু রক্তের বাঁধ কাপড়কে হার মানাচ্ছে।কাপড়ের দ্বারা সম্ভব নয় এই রক্তক্ষরণ আটকানো।অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে তখন অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে। তাই নিজ দায়িত্বে ফালাক রাজমহলে থাকা রাজচিকিৎসকের কক্ষে গেল।তার থেকে ঔষধ লাগিয়ে ফালাক নিজের কক্ষে চলে এল।
ফালাকঃ মেহেরের দৈনন্দিন এমন ধরনের ব্যবহার আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে দিচ্ছে। আমি এখন তার স্বামী।পরপুরুষ হয়ে আমি তার কাছে আসতে চাইছিনা।তারপরেও এমনরূপ ব্যবহার?ওর এক খানা ব্যবস্থা না করলেই নয়।কিন্তু প্রাসাদে যে আব্বাজন রয়েছে।সে তো আমার এমন ধরনের কার্যে বাঁধা সৃষ্টি করবে।কিন্তু আমি তো তাকে স্ত্রীরূপে-ই গ্রহণ করতে চাইছি, তার সঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর ন্যায় সংসার করতে চাইছি। এতোকিছুর পরও সেখানে ওর এমন অন্যায় কিভাবে মেনে নিই?আমাকে আঘাত করা? আজ পর্যন্ত আমার আব্বাজান ও আমার শরীরে আঘাতের রূপে স্পর্শ করেনি সেখানে তুমি এক নারী হয়ে আমাকে আঘাত করে আমার কপাল থেকে রক্তক্ষয় করেছো? এর পরিণাম তা তো অবশ্যই ভয়াবহ হবে মেহের।শরীরে প্রেম জন্ম নিয়েছে বলে ফালাক তার হিংস্র ব্যক্তিত্বকে ক্ষয়ে ফেলেনি।
চলবে…..
Story: #হিংস্র_প্রেম
পর্বঃ ০৬
লেখাঃ Israt Jahan
.
মেহেরঃ কিভাবে আমি ওই শয়তানের হাত থেকে নিজেকে আর আমার পিতা-মাতাকে রক্ষা করবো? কোনো ভাবেই তো ওর চোখের আড়াল হতে পারিনা এমনকি কিছুসময় একাও কাটাতে পারিনা।দরজা বন্ধ করেও ওর থেকে নিস্তার পাইনা।কোনো না কোনোভাবে ঠিকই চলে আসে।কতোগুলো রাত বুকে ভয় নিয়ে না ঘুমিয়ে কাটাতে হবে কে জানে? আর তখন আমি কিভাবে ওর মত শয়তানকে জড়িয়ে ধরেছিলাম? যার দিকে তাকাতেও আমার ঘৃণাবোধ হয়।
ফালাকঃ আজকের রাতটা তুমি নিশ্চিন্তে ঘুমাও প্রিয়তমা।কাল থেকে তোমাকে নতুন ভাবে নতুন পদ্ধতিতে অত্যাচার করবো।সহজে তুমি আমার কাছে তোমাকে ধরা দিবেনা, আমাকে গ্রহন করবেনা তা আমার বোঝা হয়ে গেছে।আর ফালাক তাজের মাথায় পছন্দের তালিকাতে যে জিনিস একবার ঢুকে পড়ে তা তো সে যেকোনো উপায়ে নিজের করে নেয়। আরসেখানে তুমি তো আমার বিবাহিতা স্ত্রী।
তোমাকে কি করে আমার থেকে এত দূরে সরে থাকতে দিই?
সকাল হতেই ফালাক ওর পিতার কক্ষে যায়।পিতা ঘুমিয়ে থাকলে তার মুখটা দেখে কক্ষ থেকে চলে আসে।আর জেগে উঠলে ফালাক নিজে ওর পিতার অযু করিয়ে দেয়।নামাজ শেষে তাকে সকালের খাবার নিজ হাতে খাইয়ে তারপর নিজে খাই।আজও তাই করার জন্যই ফালাক ওর পিতার কক্ষে গেল।কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখতে পেল মেহের ওর পিতাকে অযু করতে সাহায্য করছে আর ওর পিতাও তা কোনো দ্বিধা ছাড়ায় ওর সাহায্য করছে।এই দৃশ্যটি দেখে কাছে ফালাকের ভালো লাগলেও মনে একটা সন্দেহ বাসা বাঁধে।ওর কাছে মনে হচ্ছে মেহের কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে ওর পিতার কাছে এসেছে।দরজার কাছে ফালাক কে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ওর পিতা ওকে ডেকে কক্ষে আসতে বলে।
পিতাঃ তাজ আজকে তোমার দায়িত্বটা মেহেরুন মা-ই পালন করল।অনেক খুশি হয়েছি আমি জানো? ইচ্ছা আছে আজকে মেহেরুনের হাতেই সকালের ভোজটা সাড়ব।খাইয়ে দেবে তো আমাকে মা?
মেহেরঃ কেনো দেবো না পিতা?আপনি তো আমার পিতার সমতুল্য।নিজের পিতাকে কত খাইয়ে দিয়েছি।আজকে হয়তো আমার পিতা আমার হাতে খেতে পারছেনা।কিন্তু আপনাকে খাইয়ে দিয়ে আমি সেই দুঃখ কিছুটা হলেও ভুলে থাকতে পারব।
কথাগুলো শেষ করে মেহের ওই কক্ষ থেকে বেরিয়ে গেল।ফালাকের পিতা নামাজ আদায় শুরু করল। পিতাকে নামাজ পড়তে দেখে ফালাকের নিজের কাছেও সেদিনের মত নামাজ আদায়ের ইচ্ছা জাগল। পিতার কক্ষেই অযু করে নামাজ শুরু করল।নামাজ শেষে পিতা তার পুত্রের সাথে কথা বলছে।
পিতাঃ তাজ তুমি কি সত্যিই মেহেরুনের সাথে ঘর করতে চাও?
ফালাকঃ মিথ্যার কিছু দেখেছেন আব্বাজান?
পিতাঃ তাহলে তাকে কষ্ট দিচ্ছ কেনো?তার পিতামাতাকে কেনো কষ্ট দিচ্ছ?
ফালাকঃ আমি তাদের একজনকে ও কষ্ট দিচ্ছিনা। মেহেরের পিতামাতা আমার কারাগারে বন্দী আছে ঠিকই কিন্তু তারা অযত্নে নেই। মেহেরের খাতিরে তারাও পরম যত্নে আছে।
পিতাঃ আমাকে যদি ভালোবাসো তাহলে মেহেরের পিতামাতাকেও তোমাকে ভালোবাসতে হবে।কারণ সম্পর্কে তারাও এখন তোমার পিতামাতা।আমার খেদমত যদি তুমি করতে পারো তাহলে তাদের ও অনুরূপ খেদমত করতে হবে।
ফালাক মনেমনে বলল,
ফালাকঃ আব্বাজান আমি যা বুঝছি আপনি তা বুঝছেন না।একবার মেহেরের পিতামাতা মুক্তি পেলে ওরা মেহেরকে নিয়ে কোনো না কোনে উপায়ে আমার রাজমহল থেকে পালিয়ে যাবে।আর তা আমি নিশ্চিত।ওরা যদি পালাতে পারে তাহলে রাজ্য দখল করার চেষ্টা করবেই।আর মেহেরকে ও আমি হারিয়ে ফেলব।
পিতাঃ মনকে পবিত্র না করলে আল্লাহ্ পাক কি তোমার নামাজ গ্রহণ করবে?মনে পাপ পুষে রেখে ক্ষমা না চাইলে সেই ব্যক্তির সালাত তিনি গ্রহণ করেন না।
দুজনের কথার মাঝে মেহের হাতে খাবারের থালা নিয়ে এসে হাজির হল।খাবারের থালা নিয়ে পিতার পাশে গিয়ে বসল।
আব্বাজানঃ মেহেরুন মা জানো আমার যে কতদিনের সাধ আমার পুত্রবধুর হাতে অন্ন গ্রহণ করবো।
ফালাকঃ আমার ও যে সাধ ছিল পিতা আপনার পুত্রবধু রাজমহলে এলে তার হাতে অন্ন গ্রহণ করবো। আমার কি সেই সাধ পূরণ হবেনা?
ফালাকের কথা শুনে মেহের অগ্নিদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকাল।মনেমনে বলল
মেহেরঃ সেই সাধ তো আমারও ছিল।কোনো এক সুচরিত্রের অধিকারী,দয়াশীল আর পবিত্র মনের রাজকুমার আমার স্বামী হবে।আর আমি তাকে ভালোবেসে পরম যত্নে নিজের হাতে করে খাইয়ে দেব।
আব্বাজানঃ মেহেরুন?
পিতার ডাকে মেহেরের চিন্তা ভঙ্গ হল।
মেহেরঃ জ্বি পিতা?
আব্বাজানঃ তোমার কোনো আপত্তি আছে কি আমার পুত্রকে খাইয়ে দিতে?
মেহেরঃ আপত্তি থাকলেও আপনার সামনে তা প্রকাশ করি কি করে?তাতে যে আপনাকে অপমান করা হবে?
আব্বাজনঃ উত্তর দাও মা?
মেহেরঃ না পিতা।আমার কোনো আপত্তি নেই।
ফালাকঃ মেহেরের সম্মতি আছে শুনে আমি তো মনে হল সাত আসমান থেকে পড়লাম।ও আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে।ওর হাতের প্রতিটি লোকমা আমার স্বাদ লাগছেনা কিনা জানিনা।তবে প্রতিবার-ই ওর অঙ্গুলি সমূহ যতবার আমার মুখে পুরছে ততবারই আমি ওর অঙ্গুলি থেকে এক অমৃতের স্বাদ পাচ্ছি।কারো অঙ্গুলিসমূহ কি এত মধুর হয়?জানা ছিল না তো।এ কি মোহে পড়লাম আমি?এক চাহনিতে তাকিয়ে দেখছি ওকে।
খাওয়া শেষে ফালাক মেহেরকে ওর কক্ষ নিয়ে গেল।
ফালাকঃ আজকে রাজসভায় আমার সাথে তুমিও থাকবে।
মেহেরঃ আমি কেন যাবো?আমার যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
ফালাকঃ প্রয়োজন আছে কি নেই গেলেই দেখতে পাবে।
ফালাক মেহেরের হাত ধরে রাজসভাতে গিয়ে উপস্থিত হল।দুজনে তাদের আসনে বসল।
ফালাকঃ মন্ত্রী সাহেব,রাজ কার্য শুরু করা যাক।
মন্ত্রীঃ ঠিক আছে সম্রাট।
মন্ত্রী রাজসভাতে কিছু কারাগারের কয়েদিকে নিয়ে আসার হুকুম করলো প্রহরীকে।কয়েদিদের মাঝে নিজের পিতামাতাকে দেখে মেহেরের আত্মা কেঁপে উঠল।ফালাকের দিকে একবার তাকাল মেহের। ফালাক মেহেরের চোখের দিকে তাকিয়ে এক পৈশাচিক হাসি দিল।মেহেরের আর বুঝতে বাকি নেই যে ফালাক এখন কি করতে চলেছে।পিতামাতার চোখের দিকে তাকিয়ে অশ্রু ফেলতে লাগল মেহের। শেষ পর্যন্ত কি ফালাকের চরণে পড়তে হবে? এমনটাই ভাবছে মেহের।
মন্ত্রীঃ মহারাজ কারাগারে এই কয়েদিগুলোই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছিল।
ফালাকঃহুম।রানী মেহের আপনি তো শান্তি,শৃঙ্খলার প্রতীকী। আপনিই বলুন বিশৃঙ্খলকারীদের জন্য কিরূপ শাস্তি ধার্য করা যায়?
মেহেরঃ আমার পিতা মাতাকে আপনি শাস্তি দিতে বলছেন?
ফালাকঃ একদমই নয়।আমি আমার কারাগারের কয়েদিদের শাস্তির কথা বলছি।আচ্ছা বুঝতে পেরেছি।আপনাকে কিছু বলতে হচ্ছেনা।
মেহেরের পিতামাতা সব কয়েদিদের পেছনে দাড়িয়ে ছিল।সিরিয়াল মাফিক ফালাক সকলের শাস্তির ব্যবস্থা করছে।এক এক করে প্রতিজনকে একশো বেতাঘাত করার নির্দেশ করল।সবার শাস্তির শেষে যখন মেহেরের পিতামাতার কাছে গেল তখন মেহের সকলের সামনে ফালাকের পা দুটো জড়িয়ে ধরল।
মেহেরঃ আপনি আর যা-ই করুন আমার পিতামাকে কোনো আঘাত করবেন না।
ফালাকঃ মেহের তুমি আমার স্ত্রী।তোমার স্থান কোথায় তা কি তুমি ভুলে গেছো?সকলের সামনে নিজের সম্মান কেনো ক্ষুন্ন করছো?
মেহেরঃ আমি কিছু জানিনা সম্রাট।আপনি দয়া করে আমার পিতামাতাকে ছাড়ুন।ওনারা বৃদ্ধ।
জাভেদ খানঃ মেহেরুন তুমি আমার কন্যা হয়ে ওই শয়তানের পায়ে কেনো পড়ছো?ওর কোনো দয়া আমরা গ্রহণ করবোনা।
ফালাকঃ তোমার পিতামাতা কারাগারে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অন্য কয়েদিদের সমস্যা করছে।এর একটা কোনো শাস্তি যে দিতেই হবে মেহের।
মেহেরঃ আমাকে দিন সেই শাস্তি।আমি ভোগ করবো। আপনার যত শাস্তি দেওয়ার সব আমাকে দিন।
ফালাকঃ তুমি কি ভেবে বলছো?
মেহেরঃ জ্বি সম্রাট।আমি সব ভেবে বলছি।আপনার যেমন ইচ্ছা হয় আমাকে তেমন শাস্তি দিন।
ফালাকঃ প্রহরী ওদের কারাগারে নিয়ে যাও।
প্রহরীঃ যথা আদেশ মহারাজ।
মেহের ফালাকের পা ছেড়ে দৌড়ে কাঁদতে কাঁদতে রাজসভা থেকে কক্ষে চলে গেল।ফালাক রাজসভা কার্য স্থগিত করে মেহেরের কাছে চলে এল।মেহের দাড়িয়ে দাড়িয়ে কান্না করছিল।কক্ষে ঢুকে ফালাক মেহেরের কোমড় ধরে পেছন থেকে সামনে ঘুরিয়ে নিজের কাছে টেনে আনল।
ফালাকঃ তুমি আমার শাস্তির জন্য প্রস্তুত প্রিয়তমা?
মেহের চুপ থেকে মাথা নিচু করে মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি জানাল।ফালাক মেহেরের থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে মেহেরের চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। চোখের পানি মুছে দিল ফালাক।আস্তে আস্তে মেহেরের ঠোঁটের দিকে ঠোঁট আগাল।আর তখন মেহের মুখটা অন্যপাশে ঘুরিয়ে নিল।ফালাকও তখনই মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিল।মেহেরের ঘাড়ের পেছনে চুলের ফাঁকে হাত দিয়ে মুখটা আরো কাছে এগিয়ে আনল।বৃদ্ধা আঙুল দিয়ে স্পর্শ করল মেহেরের ঠোঁট।তারপর ধীর গতিতে মেহেরের ঠোঁট নিজের ঠোঁটের মাঝে টেনে নিল।খুব জোড়ে মেহেরের কোমড় চেঁপে ধরে আছে ফালাক।ফালাকের বুকের সাথে মেহেরের বুক মিশে গেছে এতোটা কাছে ওরা। মেহেরের চোখ থেকে তখনো অশ্রু ঝরছে।মনের বিরুদ্ধে নিজের সবর্স্ব দিতে হচ্ছে স্বামী নামের কোনো নির্দয় মানুষকে।যাকে কোনোদিনও মেহের মন থেকে মেনে নিতে পারবেনা আর ভালোবাসতে পারবেনা।
অধরচুম্বনের মাঝেই ফালাক মেহেরের জামার পেছনে ফিতার বাঁধন আস্তে আস্তে সবগুলে খুলে ফেলছে। চাইলেও আটকাতে পারছেনা মেহের।
চলবে…..