ভালোবাসার সাত রং পর্ব ১

0
1712

বিবস্ত্র অবস্থায় খাটে এলোমেলো হয়ে পরে আছে । সাদা বিছানায় লাল রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। স্বামি নামক লোক টা বেলকনিতে বসে সিগারেট টানছে।আলো এই অবস্থা দেখে বা আলো চোখের পানি দেখে তার বিন্দুমাত্র দয়া হচ্ছে না।কারন আলো কে বিয়ে করতে বাধ্য করেছে তার পরিবার।নিজের ভালোবাসার মানুষটা সাথে বেইমানি করেছে।কবর দিতে হয়েছে নিজের ভালোবাসা কে। তাই তো আলো ওপর বিয়ের প্রথম রাতেই বেল্ট দিয়ে আঘাত করেছে ভোর।

আলো বিছানায় ব্যাথায় কাতরাতে কাতরাতে ভাবতে লাগলো কয়েক ঘন্টার আগের কথা।চোখের পানি ফেলছে! আর মনে মনে আওরাতে থাকে।যখন বধূ সাজে বসে ছিলো!অপেক্ষা করছিলো বিয়ের আসরে। বর কবুল বলার পরই পরই আলো কবুল বলার সময়।কিন্তু বর কে কোথায় খুঁজে পাওয়া গেলো না সে নিখোঁজ।আলো বাবা বর নিখোঁজ হওয়ার কথা শুনে মেয়ে কে নিয়ে অতিরিক্ত টেনশনে হার্ট স্টোক করে বসে।

বন্ধু হার্ট স্টোক করেছে। মা মরা মেয়েটা কে বড় ছেলের রাত এর বউ করতে চেয়ে ছিলো আশিক সিকদার!কিন্তু বড় ছেলে অন্য কাউকে ভালোবাসে।তাই তো বাবার মানসম্মান কথা ভাবলো না বাবা মুখে চুলকানি মাখিয়ে চলে গেলো।তাই ছোট ছেলে ভোর সাথে এক প্রকার জোর করে বিয়ে দিলো। যার পরিনতি আলো নামের মেয়েটিকে ভুগতে হলো।

হঠাৎ আলো হাতে টান খাওয়া বাস্তবে ফিরে আসলো।ভোর তাকে ধাক্কা মেরে বিছানা থেকে ফেলে দিয়ে বলো।

ভোরঃ আমি যার-তার সাথে বেড শেয়ার করি না।
তাই আমার বেডে আসার চেষ্টা ভুলে করো না।কারণ এটা তোমার জন্য নয়!এটা আমার ভালোবাসার মানুষ নিশি জন্য কথাটা মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে নেওয়।

ভোর, আলোকে উদ্দেশ্য কথাগুলো বলে বিছানায় উল্টো হয়ে শুয়ে পড়লো।তার এখন ঘুমের প্রয়োজন।নিশি সাথে সকালে কি কথা বলবে কি বলে মানাবে!সেটা নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমের দেশে পাড়ি দিলো।

আলো চোখের পানি ফেলছে তার কি অপরাধ ছিলো?যার জন্য প্রথম রাতেই স্বামী নামক মানুষটা আঘাতে আঘাতে জোড় জড়িত করলো।

আলোঃ শুনেছি!বিয়ের আগে প্রেম করতে নেই!ইসলাম প্রেম সম্পকে হারাম,অবৈধ বলেছে!বিয়ের পর স্বামী কে ভালোবাসতে হয়!স্বামী সম্পদ এর খেয়ানত করতে নেই!স্ত্রী সব কিছুতে স্বামী অধিকার রয়েছে!স্বামী ঘর নাকি মেয়েদের আসল ঠিকানা!
বিয়ে পর স্বামী,সংসার নিয়ে সুখে,দুঃখে পাশাপাশি থাকতে হয় সারাজীবন!

তাই তো বিয়ের আগে কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে পড়িনি!নিজের স্বামী জন্য মনের গহীনে একটু একটু করে ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছি!বাবা পছন্দের ছেলে সাথে যখন বিয়ে ঠিক করলো আপওি করিনি!বাবা পছন্দের বিরুদ্ধে না বলার মতো কোনো কারণ ছিলো না!বিয়ে আসরে বঁধু সাজে বসে ছিলাম!বর আসবে কবুল বলা হবে! তিন কবুল পরে আমি হয়ে যাবো কারো স্ত্রী কারো অর্ধাঙ্গীনি!কিন্তু বিয়ে আসরে বর যখন আমাকে বিয়ে করবে না বলে বড়া মজলিশে অপমান করে চলে গেলোও!বাবা সেটা মানতে পারেনি!অসুস্থ হয়ে পড়লো মেয়ের চিন্তায়!

বাবার বন্ধু আশিক সিকদার কথা দিয়ে কথা রাখতে পারেনি বলে ছোট ছেলে ভোর সাথে বিয়ে দিলো!
তখন আমি নিশ্চুপ!এর আগে কখনো দেখা হয় নিই কথা হয়নি ভোরে সাথে!ভোরে বড় ভাই রাত সাথে যখন আমার বিয়ে ঠিক হয় তখন নাকি সে চট্টগ্রাম ছিলো!

আলো এসব ভাবতে ভাবতে কখন চোখটা লেগে গেলো বুঝতে পারেনি!যখন ঘুম ভাঙ্গল তখন সকাল হয়ে গেছে!আলো ফ্লোর থেকে উঠতে গিয়ে বসে পড়লো!পুরো শরীর ব্যাথা হয়ে আছে!আশেপাশে চোখ বুলিয়ে কোথাও ভোর কে দেখতে পেলো না হয়তো বাহিরে গেছে!রাতে ভোরে মারে দাগগুলো এখন স্পষ্ট ফুটে আছে!আলো আস্তে আস্তে ব্যাথা শরীর নিয়ে ওয়াশরুম খুঁজে সেখানে চলে গেলোও ফ্রেশ হতে!আলো শরীরের আঘাতে জায়গায় পানি লাগায় জ্বলে উঠলো!আলো দাঁত দিয়ে ঠোট কামড়ে সয্য করে নিলো!

ভোর সকাল, সকাল কাউকে কিছু না বলে চলে যায়!মৌমাছি ক্যাফেতে গিয়ে অপেক্ষা করছে কারো জন্য ভোর!

একটু পর মৌমাছি ক্যাফেতে ভোর বরাবর এসে নিশি নামের মেয়েটি বসে!নিশি, ভোরে দিকে তাকালো।এলোমেলো চুল,পড়নে নরমাল একটা গেন্জী আর টাউজার দেখেই বুঝাই যাচ্ছে ঘুম থেকে উঠে সোজা এখানে এসেছে।

নিশিঃতোমায় এমন দেখাচ্ছে কেনো? কি হয়েছে?

ভোরঃ

নিশিঃ কি হলো কথা বলছো না কেনো?দেখো আমার খুব টেনশন হচ্ছে? প্লিজ কিছুতো বলো!

সারারাত কত কিছু ভেবে সকালে ছুটে এসেছে নিশি কে সত্যিটা বলবে বলে!আজ আর কিছুই বলতে পারছে না। সে নিশি কি বলবে ? কোন মুখে বলবে সে কি করে ফেলেছে। সে যে নিশি কে অনেক বেশি ভালবাসে। পাগলের মতো ভালবাসে।

নিশি,ভোর বিয়ের কথা শুনলে হয়ত মরেই যাবে। ভাবতেই ভোরে বুক ফেটে কান্না আসছে। ভোর শরীর থেকে ঘাম ঝড়ছে! মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।হাজার চেষ্টা করলো ব্যাপারটা সামলাতে! কিন্তু পারল না!সত্যিটা আজ ভোর না বলে অন্য কারো থেকে জানলে কষ্ট পাবে। তাই অনেক কষ্টে সত্যিটা মুখে আনার চেষ্টা করলো!

ভোরঃসব শেষ হয়ে গেছে!আমি নিজের হাতে নিজের ভালোবাসা কে খুন করে ফেলেছি!

নিশিঃকি বলছো তুমি এসব!পরিষ্কার করে প্লিজ বলো!কি শেষ হয়ে গেছে!দেখো আমার ভয় লাগছে!আমি আর সহ্য করতে পারছি না প্লিজ বলো।

ভোরঃসব শেষ হয়ে গেছে সব আমার দোষ। আমি সব শেষ করে দিয়েছি!আমি বিয়ে করেছি নিশিপাখি!

নিশিঃবিয়ে নামটা শুনে নিশ্চুপ রইল কিছুখন! তুমি কি অসুস্থ?বড় ভাইয়ে বিয়ে খেয়ে কি পাগল হয়ে গেলে তুমি!কি বলছো তুমি ভোর!তুমি মজা করছো তাই না!হ্যা মজা করছো আমার সাথে!প্লিজ বলো না এসব মিথ্যে!

ভোর আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না নিশি সামনে কেঁদেই দিলো।ভোর চোখে পানি দেখে নিশি থমকে গেলো!

ভোর কাঁদতে কাঁদতে হাটু গেড়ে বসে পরলো নিশি সামনে।ক্যাফের সব লোকেরা ওদের দিকে তাকিয়ে আছে!ভোর বরাবর নিশি বসে গেলো। হাত দিয়ে ভোর গাল দুটো ধরে উপরে তুলল,

ভোরঃবিশ্বাস করো আমি করতে চাই নিই। আমি তো জানতাম না ভাইয়া বিয়েটা করবে না!বাড়ি ভরা মেহমান সামনে থেকে উঠে চলে গেলো!বাবা সম্মান কথা ভাবেনি!বাবা তখন নিজেদের আর ওই মেয়েটা কথা ভেবে পরিবার মান-সম্মান বাঁচাতে!এভাবে আমায় বিয়ে টা করতে এক প্রকার বাধ্য করবে এটা জানলে সত্যি আমি যেতাম না বিশ্বাস কর। আমি যেতাম কিছুতে যেতাম না!

ভোর বলা কথা গুলো শুনে ভোর গাল থেকে নিশি হাতটা পরে যায়।নিশি চোখ দুটো টলমল করছে!যে কোনো মুহূর্তে গাল বেয়ে পানি পড়ে যাবে!

ভোরে গাল থেকে নিশি হাতটা পড়ে যাওয়া তাকিয়ে রইল ভোর!

নিশি যেনো পুরো দুনিয়া উল্টোপাল্টো হয়ে গেছে! ভিতরের রক্তক্ষরণ হচ্ছে যা কাউকে দেখাতে পারছে না!কষ্টটা জিনিসটা সাথে এর আগে পরিচিত ছিলো না নিশি!থাকবে কি করে মা,বাবা মরা বড় ভাই এর আদরে একমাএ বোন ছিলো!কোনো কিছু যাওয়ার আগেই পেয়ে যেতো!কোনো যাওয়া অপূনর্তা পায়নি!আজ কষ্ট জিনিসটা নিশি অনুভব করতে পারছে।এই কষ্টটা যে বড্ড বেশি।যাকে নিয়ে সংসার করা স্বপ্ন দেখলো!সেই মানুষটা তার আজকে আর নেই!একটু আগেও যে মানুষটা তার ছিলো!এক নিমিষেই সে পর হয়ে গেলো।সে জেনো ধুলোবালি বাতাস স্রোতা উড়ে নিয়ে গেলো!

নিশি আর থাকতে পারলো না!পিছনে ঘুরে চলে যাওয়ার আগরে ভোর কে বল!

নিশিঃআমার সাথে যেটা হয়েছে সেটা হই মেয়েটা সাথে জেনো না হয়!তা হলে আমার মতো বেচে থেকে মরে যাবে!একট জীবন্ত লাশ হয়ে যাবে!ভালো রেখো তাকে আর নিজে ভালো থেকেও!
মেয়েটা কে তার প্রাপ্ত অধিকারটুকু দিয়োও!মেয়েটা তো কোন দোষ নেই!হয়তো আমার কপালেই তুমি ছিলে না!তাই ভালোবেসে তোমায় আর পাওয়া হলো না! ভালো থেকো।কথাগুলো বলেই নিশি চলে যায়!

ভোর ফ্লোরে বসে চিৎকার করতে থাকে!তার চোখে পানি কোনো মূল্য নেই!তার একটা ভুলে কারনে আজ তিনটা জীবন শেষ হতে চলেছে!ভোর আজ একজন ব্যর্থ প্রেমিক!কিন্তু ভালো স্বামী কি সে হতে পারবে নাকি ব্যর্থ স্বামী হিসেবে রয়ে যাবে!

নিশি রাস্তায় কোনো গাড়ি না নিয়ে পাগলে মতো করে হাটছে!তার দম বন্ধ হয়ে আসছে!নিজেকে বড্ড অসহায় লাগছে!ভালোবাসা মানুষটা কে হারিয়ে আজ নিঃশ্ব!চারদিকে শুধু অন্ধকার দেখছে কোথায় যাবে কি করবে জানে না!চোখগুলো দিয়ে পানি পড়ছে,কিন্তু নিশি সেদিকে কোনও মনোযোগ নেই।নিশি বেসামাল হয়ে সামনে যেতে থাকলে,হঠাৎ একটা গাড়ী এসে ধাক্কা মারলো!

আআআআআআআআ

নিশি ছিটকে পাশের রাস্তায় রক্তাক্ত হয়ে পড়ে গেলো!রক্তে লাল হয়ে গেছে শরীর!

ধাক্কাটা এতো জোরেই লাগে যে নিমিষেই চোখে অন্ধকার নেমে এলো। শুধু ছোট্ট করে নিশি বলে উঠল ভাইয়া…..

অজ্ঞান হয়ে পরে আছে ICU তে জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত ডাক্তাররাও কিছু বলতে পারছে না।

ডাক্তাররা আমার বোনকে বাঁচাতে পারবে কি না আমি জানি না!কিন্তু যার জন্য আমার বোনের আজ এই অবস্থা তাকে তো আমি ছাড়বো না!২৪ ঘণ্টা মধ্যে তাজ খান এর বোনের জ্ঞান ফিরুক!তার পর তোমার পাওনা তুমি ঠিকই ফেরত পাবে!

মিষ্টার ভোর সিকদার তোমার দিন শেষ!তোমাকে প্রানের মায়া ত্যাগ করতে হবে!আমার বোনের শরীর থেকে যে রক্ত ঝড়েছে তার দ্বিগুণ ফেরত তোমাকে দিতে হবে!আমার বোন ঞ্জান ফিরলে তোমাকে আমি এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবো!তুমি এই তাজ খান এর শিকার!

বানান ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।সরি
#The_villainদেওয়া কথা থাকলে ওহ দিতে পারছি না অসুস্থতা জন্য!

#ভালোবাসার_সাত_রং??
#Yanur_Akter_Eanya
#সূচনা_পর্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here