ভালোবাসার সাত রং পর্ব ৩

0
1239

#ভালোবাসার_সাত_রং??
#Yanur_Akter_Eanya
#পাঠ-৩
ভোর কে নিয়ে যাওয়ার জন্য হাত বাড়ালেই ভোর যেতে রাজি হয় না!নিশি কে না দেখে সে যাবে না এখানে থাকবে!নার্স আইসিউতে থেকে বের হয়ে ভোর কে ভেতর যেতে বলো!

ভোর আর এক এমুহূর্ত অপেক্ষা না করে ভিতরে চলে গেলো!আইসিউও বাহিরে দাড়িয়ে উৎসব,আশিক সিকদার কে সব ঘটনা বলতে লাগলো নিশি আর ভোর ভালোবাসার কথা!

ভোর আইসিউও রুমে ঢুকে দেখলো নিশি শান্তভাবে চোখ বুঝে বেডে সুয়ে আছে!
ভোর কোনো কথা না বলে চুপচাপ নিশি পাশের গিয়ে দাঁড়ালো!

কেউ কেবিনে এসেছে দেখে নিশি আস্তে করে চোখ মেলে তাকালো!ভোর কে দেখে নিশি চুপ রইল! নিজের মনের মধ্যে কিছু কথা সাজিয়ে নিচ্ছে জবাব দেওয়ার জন্য!মূলত বাহিরে চিৎকার চেঁচামেচি শব্দের জন্য নিশি নার্সকে অনুরোধ করে ভোর কে পাঠানোর জন্য!ICU রুমে ঢুকা পারমিশন নেই!সেখানে নিশি রিকুয়েস্ট করায় পারমিশন দিয়েছে!নিশি হয়তো সুস্থ নয় অসুস্থ কথা বলতে কিছুটা কষ্ট হবে!তবু আজ কথা বলাটা জরুরি!

অনেক্ষণ পর ভোর নিজের নিরবতা ভাঙ্গল।

___আমার পক্ষে এভাবে থাকা সম্ভব নয়!

নিশি দৃষ্টি মিলে তাকায় ভোর দিকে!

_____ আমি ডির্ভোসের জন্য এপলাই করেছি!
কথাটা বলেই ভোর নিশি সামনে এসে হাটু গেরে বসে।ভোর নিজের একটা হাত দিয়ে নিশির একটা হাত আকরে ধরে!

এতোক্ষণ ভোর চোখ ছল ছল করছিলো! চোখের কোণে থাকা এক ফোটা পানি বেয়ে পরল!

নিশি অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে ভোর দিকে। বরাবরই ভোর অগোছালো একটি ছেলে!সেই ভোর কে আজ বড্ড বেশি অগোছালো লাগছে!যেনো সে তার জীবনের ছন্দ হারিয়ে ফেলেছে।আসলেই তো তাই।নিশি যে তার জীবনের সুর, তাল, ছন্দ সব। সেই নিশি কে ছাড়া সে যে এক মুহূর্তও থাকার কথা ভাবতেই পারতো না!কিন্তু আজ তাকে ছাড়া থাকতে হবে!

_____প্লিজ তুমি কিছু বলো!এভাবে চুপ করে থেকো না। তুমি তো জানো আমি শুধুই তোমাকে চাই!কতটা ভালোবাসি তোমায় নিশিপাখি!

নিশি অপলক দেখছে ভোর কে।নিশি চাইতো খুব করে ভোর কে সে তো ভোর কে হারিয়ে ফেলল! কিন্তু কষ্টটা মনে হয় ভোর বেশি হচ্ছে।ভালোবাসা মানুষ কে হারিয়ে আজ দিশেহারা!

নিশি নিজের জন্য কোন কষ্ট হচ্ছে না বরং ভোর ওকে ছাড়া কিভাবে থাকবে ভেবেই নিশি দুনিয়ার ওলোট পালোট হয়ে যাচ্ছে। কে সামলাবে ভোর কে? আলো নামের মেয়েটা আতো পারবে ভোর মনে জায়গা করে নিতে! নিশি মতো করে কি বুঝবে ভোর কে? আগলে রাখবে কি?ভোর তো কখনই নিজের মনের কথা বলে না কাউকে।ভোর একটু চাপা স্বভাবের! নিশি তো ঠিকি বুঝে যেতো ভোর মনের কথা!কিন্তু আলো কি বুঝবে?না হলে যে ছেলেটা হাজার কষ্ট পেলে কাউকে বলবে না!

____নিশি পাখি প্লিজ কিছু বলো!এভাবে নিরব থেকো না!আমি তোমার কন্ঠ শুনতে যাই!প্লিজ কথা বলো!

এবার মুখ খুলল নিশি!

____এটা হয় না ভোর!

নিশি কথায় মুখ তুলে তাকায় ভোর নিশি দিকে।

_____ কি হয় না নিশিপাখি!

____শুধু শুধু কেনো আলো নামের মেয়েটাকে কষ্ট দিবে? ওকে ঠকাবে বলো। মেয়েটার তো কোনো দোষ নেই!বিনাদোষে ওই মেয়েটা কেনো শাস্তি পাবে!তুমি তো ওর ভাগ্যে ছিলে!জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে,এসব আমাদের সৃষ্টিকর্তা ঠিক করে দিয়েছে!

ভোরঃমানি না আমি এমন ভাগ্য!যে ভাগ্যে তুমি নেই!আমার ভালোবাসা নেই! সে ভাগ্য আমি মানি না, আমি চাইও না!আমার শুধু তোমাকে চাই নিশিপাখি শুধু তোমাকে!

নিশিঃ পারবে সব কিছু আগের মতো করে দিতে? পারবে সেই রাতটাকে মুছে দিতে? পারবে ওই দিনটাকে মুছে দিতে!যে দিন তুমি আমার থেকে দূরে সরে কবুল বলে অন্য কারো হয়ে গিয়েছিলে। বলো পারবে? পারবে আলো নামের মেয়েটা সব কষ্ট ভুলিয়ে আগে লাইফ ফিরিয়ে দিতে ওর!

ভোর চুপ করে রইল।

নিশিঃ জানি পারবে না।তুমি পারবে না ভোর এসব বদলাতে!নিয়তি বলে একটা কথা আছে ভোর! সেই নিয়তি খন্ড তুমি খন্ডাবে কি করে!নিয়তি খন্ডানো যায় না ভোর!ভুলে যাওয় তুমি! নিশি নামের কেউ তোমার জীবনে ছিলো!আলো কে নিয়ে সুখে থাকো!

ভোরঃহ্যা পারবো! আমাকে পারতেই হবে!আমি তোমাকে নিজের করে নিবো! তুমি বুঝতে চেষ্টা কর! আমি ডির্ভোস দিয়ে দিলেই সব আগের মতো হয়ে যাবে!আলো কে আমি আবার নতুন করে কারো হাতে তুলে দিবো!আলো সুখে থাকবে আলো লাইফ সাজিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমার!আর আমরা ও ভালো থাকবো!আমি নিয়তি বিশ্বাসী নই কর্মে বিশ্বাসী!

নিশিঃকিছুই আগের মতো হবে না ভোর!ওই দিনটা আমাদের জীবনে থেকে মুছে যাবে না!কখনওই মুছবে না!

ভোরঃতুমি কি চাও?

নিশিঃআমি চাই না আমার ভোর কাউকে ঠকাক। কেউ তাকে প্রতারক বলুক। স্বার্থপর বলুক।বেইমান বলুক! প্রয়োজনে

ভোরঃ প্রয়োজনে কি?

নিশি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে।

নিশিঃপ্রয়োজনে আমি না হয় দূরে সরে যাবো!

ভোর নিশির হাতটা ছেড়ে দেয়!নিশি এমন কিছু বলবে ভোর ভাবতেই পারে নি!তাহলে কি সত্যি সত্যিই ভোর নিশি কে হারিয়ে ফেলল!

নিশি কিছুটা সামনে এসে দু হাত দিয়ে ভোর মুখ ধরে বলল!

নিশিঃ বিশ্বাস করো তোমাকে ছাড়া হয়ত আমি জ্যান্ত লাশ হয়ে থাকবো! তবুও তোমাকে কেউ প্রতারক বলবে, বেঈমান বলবে, স্বার্থপর বলবে, আমি বেঁচে থাকতে তা সহ্য করতে পারবো না। আমি যে অনেক কষ্ট পাবো!ওই মেয়েটার তো কোন দোষ নেই!ও তো অন্য কারো বউ হবার স্বপ্ন দেখেই বউ সেজে ছিলো কিন্তু ওর ভাগ্যে যে তুমি ছিলে!

কথা গুলো বলতে বলতেই নিশি ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে!

ভোরঃ বিশ্বাস করো আমি পারবো না!আমি মরেই যাবো!

ভোর মুখে মৃত্যুর কথা শুনে নিশি কেঁপে উঠে! ভোর বুকে চেপে নেয়!ভোর নিজের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে নিশি কে জড়িয়ে ধরে! যেনো কেউ তাদের আলাদা করতে পরবে না!

নিশিঃ তোমাকে বাঁচতে হবে!আমার জন্য হলেও তোমাকে বাঁচতে হবে!তুমি বেঁচে থাকলেই যে তোমার পাগলীটা বেঁচে থাকবে এই ধরনী বুকে!

ভোরঃ আমি পারবো না আমার নিশিপাখি ছাড়া বাঁচতে! আমি পারবো না! আমাকে এতো বড় শাস্তি দিও না নিশি পাখি!

পাগলের মতো দুজন কান্না করছে! ভেতররে কষ্টটা যেনো কমছেই না!ভোর নিজের কষ্ট নিয়ে হাসপাতালে থেকে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে যায়!উৎসব ভোর পিছু নেয় যেভাবে চলে যাচ্ছে কোনো দূর্ঘটনা ঘটিয়ে বসে!

দরজা বাহিরে আশিক সিকদার দাড়িয়ে আছে!আজ নিজের করার একটা ভুলে মাশুল দিতে গিয়ে তিন তিনটা জীবন নষ্ট হয়ে গেলো!আশিক সিকদার কখনো কারো সামনে মাথা নত করেনি!আজ তার বড় ছেলে রাত এর কারনে ভোর,আলো,নিশি তিনটা জীবন শেষ হতে চলেছে!

আশিক সিকদার তাজ কাছে অনুতপ্ত হয়ে নিশি কাছে আসলো!লেখনীতে ইয়ানুর আক্তার ইনায়া!

নিশি সামনে দুই হাত তুলে ক্ষমা চাইছে আশিক সিকদার!

আশিক সিকদারঃজীবনে কোনোদিন হয়তো পাপ করেছিলাম!যার জন্য আজ আমায় এই দিন দেখতে হলো!আমি এমন একজন পিতা যে কিনা এক সন্তানের জন্য নিজের হারানো সম্মান বাচাতে সবার সামনে আরেক ছেলের গলা ফাসি দড়ি পড়লাম!আমার জন্য তোমাদের সম্পক শেষ হয়ে গেলো!আমরা হাতে তিন তিনটা তাজা প্রান ঝড়ে গেলো!এই কষ্ট কথা রাখবো আমি! বাবা হয়ে নিজের হাতে ছেলে কে বিষ তুলে দিলাম!আমার মাফ যাওয়ার কোনো মুখ নেই মা!যদি পারো এই বুড়ো বাবা কে ক্ষমা করে দিয়ো!আমি অপরাধী মা! আমাকে মাফ করে দিয়োও!

নিশি আশিক সিকদার দুটো হাত ধরে ফেলো,

_____এ কি করছেন আপনি?আপনি একজন বাবা বয়সী! আর আপনি কিনা আমার কাছে মাফ চাইছেন দুই হাত জোর করে!এত বড় পাপের ভাগী করবেন না আমায় প্লিজ!আমি জানি না মা,বাবা কেমন হয়!কিন্তু আপনাকে দেখে বাবা দেখার সেই স্বাদ পূরণ হয়ে গেলো!ভোর,আলো ওরা খুব ভাগ্যবান,ভাগ্যবতী আপনার মতো একটা বাবা পেয়েছে!আপনি কোনো অন্যায় করেনি!আপনি তো কিছুই জানতেন না এতে আপনাকে দোষ নেই!এটা আমার ভাগ্যে ছিলো!তাই আজ আমার এই পরিণতি!আপনি প্লিজ নিজেকে অপরাধী ভাববেন না!আমি আপনাকে রিকুয়েস্ট করছি!

নিশি দুটো হাত দিয়ে আশিক সিকদার চোখের থেকে চশমাটা সরিয়ে চোখ পানি মুছে দিয়ে আবার চোখে চশমাটা পরিয়ে দিলো!

_____বাবাদের চোখে পানি নয় হাসি মানায়!বাবারা হচ্ছে বটবৃক্ষের ছায়া মতো!আপনি আর কখনো আপনার এই অমূল্য চোখের পানি ফেলে অপচয় করবেন না!আপনার মতো যার ঘরে একটা বাবা আছে সে কখনো অসুখী নয়!সে সবচেয়ে বেশি সুখী মানুষ!

__________

নিশি সাথে কিছুখন কথা বলে বেশ হালকা লাগছে!বাসায় যাওয়ার পথে কল আসে!

আশিক সিকদারঃহ্যালো,আসসালামু আলাইকুম!

_____স্যার আমি আপনাদের বাসার ড্রাইভার মকবুল!আজ নিলয় স্যার আসছে বাংলাদেশে তাকে আনতে যাচ্ছি!

আশিক সিকদারঃনিলয় বাংলাদেশে আসছে আগে বলোনি কেনো?দুই ছেলের কান্ড আর বাড়ি অবস্থা পরিস্থিতি ভালো না!এখন কি হবে কে জানে? তুমি ফোন রাখো নিলয় কে নিয়ে বাসায় আসো!লেখনীতে ইয়ানুর আক্তার ইনায়া!

নিলয়, আশিক সিকদার বড় ভাই,আমান সিকদার একমাএ ছেলে নিলয় সিকদার!৫ বছর বয়সে দেশ ছেড়ে মা,বাবা সাথে বিদেশে পাড়ি জমায়! এত বছর দেশে বাহিরে থেকে পড়াশোনা, বিজনেস স্যাটেল করেছে!কখনো বাংলাদেশ পা রাখেনি!আজ হঠ্যাৎ ভাইয়ের ছেলের আগমন আশিক সিকদার অবাক হয়েছে!বিদেশে বাতাস গায়ে যার তার কি বাংলাদেশ আবহাওয়া ভালো লাগবে!

আশিক সিকদারঃফোন কেটে পকেটে রেখে বাসায় রওনা হবে!তখনি অপর সাইটের রাস্তায় নিজের বড় ছেলে রাত কে দেখে চমকে গেলো!রাস্তা পার করে এইপাশ আসতে আসতে রাত গায়েব!রাত এখানে নেই চলে গেলো কোথায়!এখানেই তো ছিলো!আপদতো রাত কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে! নিলয় জন্য বাসায় রওনা দিলো!

এয়ারপোর্ট থেকে সোজা সিকদার বাড়িতে এই প্রথম পা রাখলো নিলয় সিকদার!

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here