ক্যামেলিয়ান ১৬+১৭

0
1190

#ক্যামেলিয়া
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্ব-১৬ +১৭

সূচনার মৃত্যুতে কোনো শোক নেই।সবার মৃত্যুতে শোক মানায় না।সূচনার মৃত্যুটাও তেমন।তার কষ্টের হিসেব তো সে কারোর কাছে চাইতে পারেনি। নিজের জন্য লড়াই করতে পারেনি অথচ জীবনটা তার নিজের ছিল। তার লাশটা অনাদরে পড়ে আছে গেটের কাছটায়।খবর পেয়ে দ্রুত ছুটে এসেছে লাশের মা বাবা।দুজনে কাঁদছে অঝোরে। মেয়েকে ডাকছে,

“সূচনা, মারে উঠো। কি হয়েছে আমাকে বলো।মা রে। এত রাগ করে চলে গেলি।একটাবার আমাকে তোর মনের কষ্ট বলতে পারলি না?কি হলো রে মা?”

দূর থেকে দাঁড়িয়ে জাফরিন দেখছিল এসব। ইউভান এসেছে তার হাতের ড্রেসিং করতে। আজ বিকেল বেলা প্লাস্টিক সার্জনের সাথে এপোয়েন্টমেন্ট রয়েছে। ইদানীং জাফরিনের নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে। হুট করেই তার প্রচুর ব্যাক পেইন হচ্ছে। সে দাঁড়িয়ে বা বসেও থাকতে পারে না।মাঝে মধ্যেই হাঁটাহাঁটি করতে হয় তাকে৷ সে বাড়ির দুয়ারে দাঁড়িয়ে সূচনার লাশের দিকে তাকিয়ে ইউভানকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“আমরা সবাই প্রতিবাদী দেখতে পছন্দ করি তবে কেন প্রতিবাদ করতে পারি না?প্রতিবাদ করলেই কেন বেয়াদব তকমা লাগে?”

“একটা গল্প বললে শুনবে?”

“বলো।”

“এক গ্রামে এক কৃষক রয়েছে। সে বেশ ভালো শাক সবজি চাষ করে। এসবের অধিকাংশ গ্রামবাসীদের দিয়ে দিতো। অল্প সংখ্যক সে বাজারে বিক্রি করতো যা দিয়ে নিজের জীবিকা নির্বাহ করতো সে। একদিন হুট করেই তার উপর দূর্যোগ নেমে এলো।দুধেল দুটো গাই গরু মরে গেল দিন কয়েকের ব্যবধানে। এর ফলে মানসিক দিক দিয়ে ভেঙে গেল। সারা রাত কান্না করলো পর দিন সকাল বেলা গ্রাম বাসীরা সবজি নিতে এসে হায় হায় করলো, স্বান্তনা দিলো অথচ দিন কয়েক যেতেই পরিবর্তন হতে লাগল তারা।
শুরু থেকেই তারা দেখেছে কৃষক ঠান্ডা মেজাজের মানুষ, তাকে কিছু বললেও সে মেনে নেয় প্রতিবাদ করে না।তাই তাদের যেমন ব্যবহার করতে লাগল তার সাথে।অসুস্থ, বিধ্বস্ত কৃষকের ঘুম দেরীতে ভাঙলো চেঁচামেচির শব্দে।কারণ
একদিন সেই গ্রামবাসীরাই কৃষককে দেরীতে ঘুম থেকে উঠার কারণে বেশ গালিগালাজ করলো। তারা নিজের কাজ ফেলে এখানে এসেছে বিনে পয়সায় দুটো সবজি নিতে। তারা সবজি না নিলে কে নিবে তার এই সবজি?এটা কখনো ভেবে দেখেছে?আর অহংকারী কৃষক কী না তাদের অপমান করছে যারা তার সবজি বিনে পয়সায় নিচ্ছে? এতে কৃষক মুখ ফুটে দুটো জবাব দিতেই তার নামের সাথে যুক্ত হয়ে গেল অহংকারী তকমা।

সেদিন বিকেল বেলা গ্রামবাসীর কথাগুলো কৃষক বেশ মনোযোগ দিয়ে চিন্তাভাবনা করলো।গ্রামের মানুষ যেন দুটো ভালো খেতে পায় এজন্য তাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করতো সে আর অপর দিকে এরা তাকেই এসে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। অহংকারী তকমা লাগাচ্ছে?

কৃষকের কী হলো সে নিজেই বুঝতে পারলো না।পরদিন ভোর হওয়ার পূর্বেই সে সকল সবজি তুলে নিয়ে চলে গেল শহরের বাজারে। যেখানে চড়া দামেই বিক্রি হয়ে গেল তার সব সবজি। হাতে থাকা টাকা গুলোর দিকে তাকিয়ে সে মনে মনে ভাবল,

“এত দিন আমি তাদের আপন জন মনে করে নিজের আর্থিক ভাবে কতই না কষ্ট করেছে। কেউ জিজ্ঞেস করেনি তার খারাপ সময়ে যে সে কেমন আছে?অথচ সময় মতোন এসে জিনিস না পেলে তাকে কতই না কথা শোনালো।আমি কেন তাদের কথা চিন্তা করবো?আমি এবার থেকে নিজের কথাটাই আগে ভাববো।এই পৃথিবীতে স্বার্থপরেরাই সুখে থাকে।”

এরপর থেকে সে আর গ্রামবাসীদের কখনো বিনা মূল্যে কিছুই দেয়নি।এরফলে খুব দ্রুতই সবার কাছে সেসব জিনিসের মূল্য দিতে লাগলো।”

“বুঝলাম।কথায় আছে মাগনা দই খেড় পাইতা লই।যখন কোনো কিছুর বিনিময়ে কোনো কিছু দিতে হয় তখন মানুষ বুঝে। আর যারা সব সময় ফ্রি জিনিসে চলতে অভ্যস্ত তারা সেটার কদর করবে না,কারণ সে বুঝেও না অর্থের বিনিময়ে কেনা জিনিস বা অন্যের শ্রম দিয়ে করা কাজের গুরুত্বটা কী হতে পারে। আর যারা বিভিন্ন সময় অর্থের বিনিময়ে কিছু ক্রয় করে তারা যেমন বুঝে নিজের অর্থের জ্বালা তেমনি অন্যের শ্রমের মর্যাদাটাও দিতে জানে।”

“এখানে অর্থ নয়,আমি বুঝিয়েছি সম্মানের কথাটা। একবার খেয়াল কর তো, তুই কী ভেবেছিস কৃষক কে পরবর্তীতে কেউ কিছু বলে নি?অবশ্যই বলেছে। কিন্তু তাদের কথায় পাত্তা না দিয়েও সে নিজের সিদ্ধান্তে স্থির ছিল।কারণ যারা ফ্রিতে সবজি নিতো তারা ভেবেছিল হয়তো কটু কথা বললে সে রাগ করে হলেও দিবে। যেটাতে তাদের লাভ ছিল।

যাক সে কথা,এবার গল্পের মোরাল বলি।
সূচনা আজ লাশ হয়ে পড়ে আছে এতে কারোর দোষের থেকে ওর নিজের দোষ বেশি।হার মেনে নেওয়াটা কী ঠিক হলো।একটু পর পুলিশ আসবে, পোস্ট মর্টেম হবে তারপর জানাজা,দাফন কতো কিছু। ওর কী কষ্ট হচ্ছে না?”

“জানি না, তবে ওর মৃত্যুতে এই পরিবারের সবাই সামিল আছে।”

“শোনো মেয়ে আমি চাই এই লাশ চলে যাওয়ার পর তুমি আজকেই আমার বাপরে বিয়ে করো।তোমার বিয়ে ভাঙ্গছে আর আমার বাপটাও এখন একলা। আজ সন্ধ্যে বেলাই কাজী ডেকে বিয়া পরাই দিতে চাই।”

পিছন দিক থেকে আসা কথা গুলো শুনে জাফরিন বলল,

“আমার বিয়ে আপনার বাপের সাথে মানে?”

“মানে আমার আসিফরে বিয়া করবা। সূচনার জামাই। তোমার বেয়াই।”

“দুনিয়াতে ছেলের অভাব পড়েছে? যে আপনার কাপুরষ ছেলেকে বিয়ে করতে হবে আমার। প্রয়োজনে একজন সৎ রিক্সা চালককে বিয়ে করে সুখী হবো। তবুও আপনার কাপুরষ কে বিয়ে করবো না।”

“মুখ সামলে কথা কও।”

“আমি সূচনা না।আপনি ভাবলেন কী করে আপনার ছেলেকে আমি বিয়ে করবো?যার বৌ আজ আত্মহত্যা করেছে আর যার লাশটাও এখনো বাড়ির উঠোনেই রয়েছে।”

“ওসব ব্যাপার না।ব্যাটা মানুষের একটু দোষ থাকতে পারে।আমিও আমার স্বামীর ২য় স্ত্রী আছিলাম।”

“আপনি ছিলেন বলেই অন্যকে থাকতে হবে এমন নয়। আপনার সাহস দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি।”

“বিয়া না বইলে তোমার বইন এই বাড়িতে থাকতে পারবো?”

“আমার বোন এ বাড়িতে না থাকলেই হবে। তার জন্য আমার বাবা যা রেখে গেছেন তা আপনার লোভের থেকেও অনেক বেশি।”

জাফরিনের শরীর রাগে দুঃখে কাঁপছে। সে তার বড় বোন জামাইকে সবটা জানালে সে ভীষণ রেগে গেল।ততক্ষণে পুলিশ এসে সূচনা কে নিয়ে গেছে।
জাফরিন ব্যাগ গুছিয়ে ইউভানের সাথে বের হবে এমন সময় তার বড় বোন হাত ধরে বলল,

“জাফরিন যাস না।একটু দাঁড়া, আমি কী বলতে চাই একটু বুঝে নিয়ে তারপর না হয় যাস।”

“কি বলতে চাচ্চো আপু?এটাই যে দুই বোন এক সাথে থাকবো, বাবা নেই,তোমার চোখের সামনে থাকলে তুমি শান্তি পাবে। এসব? ”

“না আসলে?”

“আপু আপনার শাশুড়ি যা বলছে সে কথাটা আপনি এভাবে মেনে নিলেন?”

“সে আমাকে আমার ছেলের কসম দিয়েছে আর তুই যদি চলে যাস তাহলে আজকের পর থেকে আমাদের আর কোনো সম্পর্ক থাকবে না।”

এবার তার স্বামী রাগ করে বললেন,

“জেমি যে যা বলে তাই শুনে নাঁচতে যাওয়ার অভ্যেস বাদ দাও। যেখানে আমি কিংবা ইয়াকুব পরের ছেলে হয়ে চিন্তা করছি কীভাবে তোমার বোনের জীবনটা সুখের করে তোলা যায় আর তুমি ভাবছো তাকে ডুবাতে?”

“এতে ক্ষতি কী?আপনার ছোটো ভাই…..”

“আপা আমি আপনাকে যথেষ্ট সম্মান করি কিন্তু আজকের পর আপনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক রইল না। সূচনা আপুর জায়গায় আপনি আমাকে নরক বাস করাতে চাচ্ছেন যার জন্য মেয়েটা মরেই গেল।কিন্তু দুঃখিত আমি আপনার কথাটাই রাখলাম আজ থেকে আমি আপনার কেউ নই, না আপনি আমার।”

চলবে
#ক্যামেলিয়া
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্বঃ১৭

(৪০)

“আম্মা আপনি চাইছেন আপনার ছোটো মেয়ের জন্য আমার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাক?আমার স্বামী সন্তানদের নিয়ে আমি সারা দিন অশান্তিতে থাকি?”

বড় মেয়ের কথা শুনে জাফরিনের মা জিজ্ঞেস করলেন,

“জাফরিনের জন্য তুমি কেন অশান্তিতে থাকবে?ও তো আর তোমার সংসারে গিয়ে বসে রয়নি।”

“কিছুক্ষণ আগে মা এসে সরাসরি বলে গেছেন জাফরিন যদি বিয়েতে রাজি না হয় তাহলে সে আমার হাতে এক গ্লাস পানিও খাবে না।”

“বেশ তো, না খেলে দিবে না তুমি।এখানে জাফরিনকে টানার কোনো কারণ দেখছি না।তুমি কী এসব বলার জন্য আমাকে কল দিয়েছো?”

“আপনি একটু বুঝিয়ে বলুন না।আপনার কথা সে শুনবে।”

“ঠিক কি বলতে বলছো তুমি?তোমার দেবরের সাথে বিয়ের কথা?”

“আম্মা, জাফরিনের বিয়ে ভেঙ্গেছে একবার না দুই বার। আর ওর একটা ভবিষ্যৎ আছে। কী হবে বিদেশ পাঠিয়ে লেখাপড়া করিয়ে? সেই তো শেষ অবধি রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে আগুনের তাপে রাঁধতেই হবে। এর চেয়ে এটা কী ভালো হয় না?সারা জীবন সে আমার সাথে থাকবে আমি নিজে ওকে সবটা দিয়ে আগলে রাখবো।আখেরে কিন্তু লাভটা জাফরিনের হবে। কে জেনে শুনে বিয়ে ভাঙা মেয়েকে বিয়ে করতে চাইবে?”

“আমার মেয়েকে নিয়ে তোমার চিন্তা কর‍তে হবে না।নিজের সংসার মনোযোগ দিয়ে করো।তুমি স্বীয় স্বার্থ দেখতে দেখতে নিজের বোনের ক্ষতি চেয়ে বসছো।তোমাকে বিয়ে দিয়ে যে ভুল আমি করেছিলাম সেটার খেসারত আমার ছোটো মেয়ে দিবে না।এটা মনে রেখো। এসব বলার জন্য এখানে আর কল দিবে না।অন্য কথা বলার হলে বলবে।”

মায়ের পাশেই বসেছিল জাফরিন।বড় বোনের কথা শুনে কিছুটা স্তব্ধ হয়ে বসে রইল সে। কীভাবে বড় আপা এটা চিন্তা করতে পারে? সে ভেবে পাচ্ছে না।অথচ দুলাভাই তাকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে এটা কোনো দিন সম্ভব নয়। জাফরিনদের শহরের বাসায় কাজ ধরেছে। কিছুটা পরিবর্তন আনার পর এখানে একটা এতিম খানা বা বৃদ্ধশ্রম করার চিন্তা ভাবনা করছে জাফরিনের মা।খুব দ্রুত দেশের বাহিরে চলে যাবে ছোটো মেয়ে। বড় দুই মেয়ে নিজ সংসারে আগে থেকেই ব্যস্ত৷ তার দিন কীভাবে কাটবে। তার স্বামী এত কিছু রেখে গেছেন তার জন্য অথচ এই সম্পত্তি এখন তার কোনো কাজের নয়। আত্মীয় স্বজনদের দিয়ে কী হবে তাদের যথেষ্ট আছে। এমন কাউকে এসব দান করতে চান বা তাদের পিছনে খরচ করতে চায় যাদের সত্যিই নেই।অন্তত তারা যেন ভালো একটা জীবন পেতে পারে।
এই শহরের ফুটপাতে অনেক জীবন রয়েছে যাদের থাকার স্থান কোনো অভার ব্রিজের নিচে। মাথা গোঁজার মতোন একটা ঠাঁই, দু বেলা দুটো ভাত এবং বাচ্চাদের একটু একটু করে আরবি পড়া শেখাতে চান তিনি।জাফরিন জানে তার মা মৃত্যুর পরবর্তী সময়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইদানীং খুব সামলে সিদ্ধান্ত নেন কিংবা কারোর সাথে কথা বলেন।মায়ের এমন পরিবর্তন জাফরিনকে বেশ টানে।সৃষ্টি কর্তার নিকট কাঁদতে কাঁদতে তার দুচোখের নিচে কালো দাগ বসেছে। রাতভর সে নফল নামাজে ব্যস্ত থাকে। কিন্তু নিজের সন্তানের প্রতি আরো শক্ত হয়েছেন।তার মেয়েদের নিয়ে অধিক চিন্তা করলেও কারোর নিকট প্রকাশ করেন না।

যেমন আজ জাফরিনের চেকাপ আছে। প্লাস্টিক সার্জন জানিয়েছে তার হাতে সার্জারির প্রয়োজন রয়েছে। ক্ষত বিক্ষত হাত জাফরিন লুকিয়ে রাখে ওড়নার আড়ালে। সে হাতে মেহেদী পড়তে বেশ পছন্দ করতো অথচ এখন চেষ্টা করে যতোটা কম হাত দেখানো যায়। ইউভান তাকে নিয়ে এসেছিল।গাড়িতে উঠার পর বলল,

“তোর এই দাগটা দেখে জানিস কী মনে হয়?”
“কী?যেন চাঁদের গায়ে কেউ আঘাত করেছে?”
“কীভাবে বুঝলি?”
“এটাই সবাই বলে। ডায়লগটা পুরোনো হয়েছে। নতুন কিছু ট্রাই করতে হবে।”
“আর মাত্র সাত দিন আছিস এখানে। আমাদের কথা মনে হলে খারাপ লাগবে না?”
“লাগবে, না বললে মিথ্যে বলা হবে। কিন্তু কী বলতো ভাইয়া। এভাবে তো কারোর জন্য কেউ থেমে থাকে না।আজ সব ঠিক থাকলে এই সময় আমি আমার লাইফের বেস্ট সময় কাটাতাম।তাই নয় কী?অথচ দেখো এখন এই ডাক্তার ওই ডাক্তার করতে হচ্ছে। ভাগ্যিস বাবার কোম্পানির লোক ভিসা সংক্রান্ত সব কিছুর ভার নিয়েছে। এজন্য আমাদের একটু স্বস্তি।”

ইউভান তাকিয়ে দেখলো জাফরিন কান্না আটকে রাখার চেষ্টা করে চলেছে। অপর দিকে ইউভান তাকে সামলে বলল,

“ফ্রুটস নিবো?”
“আছিই তো কয়েক দিন। আবার দেখা পাই না পাই। চলো আজ কিছু রিচ ফুড খাবো।”
“অসুস্থ শরীরে?”
“শরীরের অসুখ কিছুই না যদি মন ভালো থাকে। মনের অসুখ মহামারী যা শরীরকে পুড়িয়ে ফেলে।”

(৪১)
Hey, ladies drop it down
Just want to see you touch the ground
Don’t be shy girl go bananza
Shake ya body like a belly dancer…

লাউড মিউজিকের কারণে কুঞ্জ ঠিক মতোন মাশহুদের কথা গুলো শুনতে পারছে না।ক্লাব থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়িতে বসে বলল,

“এবার বল কী বলছিস?”
“এখন তুই ক্লাবে?”
“আজ উইকেন্ড তো ক্লাবে থাকবো না?”
“তোর সাথে কে?”
“আপাতত কেউই নেই।”
“তবে নিজে ড্রাইভ করিস না। কেস খেয়ে যাবি ট্রাফিক ভাঙ্গার কারণে এখন আমি নেই যে ছাড়িয়ে আনবো।”
“বাদ দে এসব। তোর ওদিকের খবর কী?আজ সতেরো দিন হয়ে এলো। কবে ফিরবি?”

“এইতো দিন সাত পর। আচ্ছা তুই আমাদের শহরের বেস্ট প্লাস্টিক সার্জন এর এপোয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাখবি।”

“কেন?”

“আমার চেহারা সার্জারি করে তোর চাঁদ মুখ খানা বসাবো আমার মুখে। তুই প্রেমিক পুরুষ না?যেটা বলেছি সেটা কর।”

“তাদের নিয়ে আসছিস? দাদার প্রথম স্ত্রী।”

“এখনো জানি না।তবে চেষ্টা করবো।না হলেও একজন নিয়ে ফিরছি।তোকে যা বলেছি সেটা কর।”

ফোন রেখে দিয়ে মাশহুদ বারান্দায় পা মেলে বসলো।এই পরিবারের প্রতি তার আলাদা মায়া জন্মেছে।গ্র‍্যানি বা বাবা কী তাকে ভুল বুঝবে? সে যে সতীন এবং সৎ ছেলে সমেত পুরো পরিবার নিয়ে যাচ্ছে তাদের জন্য সারপ্রাইজ হিসেবে।

হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে পাশ ফিরতেই সে কারোর সাথে আঘাত প্রাপ্ত হলো।ষাট ওয়াটের মৃদু আলোয় দেখলো হাত দুই দূরে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যার চোখ মুখে তীব্র ব্যথা। ব্যথায় কুঁকিয়ে সে বসে পড়েছে। ফোনের ফ্ল্যাশ জ্বলতেই মাশহুদ দেখলো শাড়ি পরিহিতা একজন বসে আছে মাটিতে। পায়ের বৃদ্ধা আংগুল ধরে। বুঝতে বাকী রইল না মেয়েটার পায়ে আঘাত করেছে সে। তার কাছে যেতেই সে বলল,

“প্রয়োজন নেই। আমি সামলে নিতে জানি।”

অদূরে দাঁড়িয়ে মেয়েটির বাবা সবটা দেখে মনে মনে ভাবলেন,

“এক সময় ওই বিদেশী নারী আমার থেকে আমার বাবাকে নিয়েছিল আজ যদি আমি তার থেকে তার এক মাত্র বংশধরকে নিয়ে যাই?তবে কী হিসেব বরাবর হবে না?”

(৪২)

আগামী তিন দিন পর জাফরিনের ফ্লাইট। এই সময়টা সে একান্ত ভাবে তার পরিবারের সাথে কাটাচ্ছে। মায়ের সাথে থাকছে অধিক সময়। ঠিক যেমন ছোটো বেলায় থাকতো।ভাগ্নে-ভাগ্নী সবাই এসে ভিড় জমিয়েছে তার কাছেই। মেঝ আপা ছুটি নিয়েছেন। বড় দুলাভাইও এসেছে,আসেনি শুধু বড় আপা।সে শুধু জাফরিন নয় প্রতিটি মানুষের সাথে রাগ করেছে। ভাগ্নীর গালে লাল দাগ দেখে তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে আসতে চেয়েছে বলে তার মা তাকে মেরেছে।কিন্তু বাবা তাদের নিয়ে এসেছে। এটাও জানতে পারে যে তার দাদী প্রতিদিন তার মাকে অনেক কথা শোনায়, মায়ের সাথে কথা বলে না।খাবার দিতে খাবার খায় না।সে চায় যেন জাফরিন বিদেশ না যায়, বিয়েটা হয়। এজন্য দাদী তাদেরকেও বেশ করে কথা শুনিয়েছে।
কথাগুলো শুনে বাড়ির প্রতিটি মানুষের মন খারাপ হয়ে গেল।জাফরিন ভেবেছিল যাই হোক তার চলে যাওয়ার খবর শুনে বড় আপা আসবেন।ছোটো থেকে তার কাছেই বেশি সময় থেকেছে। মায়ের কাছে কোনো কথা বলতে না পারলে বড় আপাকে বলেছে। অথচ আজ সে নেই। সামান্য অভিমানে কত দূরের মানুষ হয়ে গেল।মান অভিমান ভুলে জাফরিন নিজেই তাকে কল দিলো। কল রিসিভ করে সে বলল,

“কী জানতে কল দিয়েছিস? আমি বেঁচে আছি না মরে গেছি?এটা দেখার জন্য?”
“আপা আমি আগামী পরশু চলে যাবো।”
“যাবি তো আমাকে মরার জন্য রেখে যাবি।সূচনার মতোন আমার মরা ছাড়া উপায় থাকবে না।কী হবে বিদেশ গিয়ে? নোংরামি করার খুব দরকার।”

নিমিষেই জাফরিনের মন বিক্ষিপ্ত হয়ে গেল।সে দ্বিগুণ রাগের সাথে জবাব দিলো,

“বেশ তবে মরেই যান।কথা দিচ্ছি সূচনার পরিবার যে সকল আইনী পদক্ষেপ নেয়নি আমি সব নিবো আপনার জন্য।আর এমন সামাজিক কীট গুলোকে শাস্তির ব্যবস্থা করবো।”

চলবে(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here