ক্যামেলিয়ান ১৪+১৫

0
1287

#ক্যামেলিয়া
#পর্ব-১৪+১৫
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
(৩৪)

মানুষ পোড়ার এতটা বাজে গন্ধ হতে পারে জানা ছিল না গাড়িতে উপস্থিত থাকা কারোর।মেয়েটা এখনো ব্যথায় কাতর। ঝাপটে ধরে আছে এমিলির হাত। মাশহুদ ড্রাইভারকে দ্রুত নিকটস্থ কোনো হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলল।যেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তারা শহরের দিকে যাবে।
এ দেশীয় যে লোকটা তাদের সব দায়িত্ব পালন করছে সে জানালো সদর হাসপাতালে নিতে। ওখানে ডাক্তার পাওয়া যাবে। কিন্তু ওটা তো উল্টো পথে।
মাশহুদ কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে বলল গাড়ি ঘুরাতে৷
জাফরিনদের বাড়ি পার হওয়ার সময় খেয়াল করলো আগুন নিভেছে। দমকল বাহিনী এসেছে তবে হয়তো তারা এখনো জানে না যে জাফরিন নিখোঁজ। বাড়ির চারপাশে মানুষ গিজগিজ করছিল।তাদেরকে পাশ কাটিয়েই শা শা করে এগিয়ে গেল তাদের গাড়ি।
হাসপাতালে পৌঁছানোর পর প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হলো। ডাক্তার জানালেন রোগীর শারীরিক দুর্বলতা রয়েছে। তার পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রামের প্রয়োজন কিন্তু তার হাতে বেশ ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে।
এ ক্ষতটা তাকে ভোগাবে। কনুইয়ের নিচ থেকে কবজি অবধি জায়গায় সৃষ্টি হয়েছে ক্ষত। ভিক্টিমের গায়ে থাকা লিলেনের কামিজের জন্য তার হাতে দ্রুত আগুন লেগে যায়।সে হয়তো আগুন নেভানো বা ছাড়ানোর উদ্দেশ্যে হাত পরিষ্কার করেছিল।যার কারণে কাপড় চামড়ায় বসে যায় এবং চামড়া সমেত উঠে এসেছে। মাশহুদের কপালে চিন্তার রেখা ফুটে উঠেছে। সে ভ্রু-কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

” নিজ থেকে ভালো হবে?”

“উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন।”

” আপনি প্রাথমিক চিকিৎসা দিন।আমরা কিছুক্ষণ পর শহরে ট্রান্সফার করতে চাচ্ছি।”

“আপনাদের ইচ্ছে। তবে আশা করছি দ্রুত সুস্থ হয়ে যাবে।”

ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসার পর এমিলি এগিয়ে এলো মাশহুদের দিকে। সম্মুখে দাঁড়িয়ে বলল,

“স্যার, মিস শিকদারের জ্ঞান ফিরেছে। সে আপনার সাথে কথা বলতে চাচ্ছেন।”
“উনি উনার হাতের দাগ দেখেছেন?
হাতের দাগ তো থেকে যাবে।প্লাস্টিকের সার্জারী করালে কি ঠিক হবে?”

“স্যার উনার প্রতি আপনার এত চিন্তার কোনো কারণ নেই।”

“নেই?তুমি জানো?এই মেয়ের কিছু হলে আমি বা আমার কিছুই থাকবে না।শী ইজ আ প্রফেটেবল প্রজেক্ট ফর মি।যে কোনো মূল্যেই তাকে আমার সুস্থ সবল চাই। উনার সকল কাগজ পত্র রেডি করে ফেল।উনার ফ্যামিলিকে খবর পাঠাও উনি এখানে আছে। এবং খুব দ্রুত যেন সে তার বাবার কর্মস্থলে ফিরে যায়।”

” স্যার, মিস শিকদারের এতটা এএকাডেমিক যোগ্যতা নেই যে সে আমাদের অফিসে জব করবে।”

“আমি বলিনি সে আমাদের সাথেই কাজ করবে। তার লেখাপড়ার জন্যই সে যাবে। বাই দি ওয়ে, তোমাকে বেতন দিয়ে নিশ্চয়ই আমি মুখে মুখে তর্ক করার জন্য রাখিনি।তোমার কাজ আমার সকল কথা অনুসারে কাজ করার। নিজের স্থান ভুলে না যাওয়ার কথাটা মনে রেখো।”

মাশহুদের কথায় হারিকেনের শেষ সলতের মতোন দপ করে নিভে গেল এমিলি।এই ব্যক্তিটা আর যাই বুঝুক মন বুঝে না।যদি বুঝতে পারতো তাহলে আজ এভাবে বলতো না।মাথা নিচু করে সে বলল,

“সরি স্যার। আমি খেয়াল রাখবো।আপনি কি যাবেন মিস শিকদারের সাথে কথা বলতে?”

মাশহুদ তার কথার কোনো জবাব না দিয়ে হনহন করে বেরিয়ে এল হাসপাতাল থেকে।
গাড়ির কাছে এসে সিগারেট ধরিয়ে বেশ কিছু সময় বসে রইল সে। আপাতত তার কিছুটা স্বস্তি হচ্ছে।

দমকল বাহিনীকে কল দিয়ে তারা চলেই যাচ্ছিলো কিন্তু তখন তাদের মাঝে থাকা একজনের দৃষ্টিতে পড়ে কেউ একজন একটা মেয়েকে আগুনের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত পায়ে সে ওদিকে এগিয়ে যেতেই দেখতে পায় যে লোক আগুনের কাছাকাছি টেনে নিচ্ছিলো সে দৌড়ে পালাচ্ছে।এরপর সে জাফরিনের চেহারা দেখতে পায়।বাড়িতে তখন বেশ হট্টগোল। এত কিছুর মাঝেই সেই ভদ্রলোক মেয়েটাকে পাঁজা কোলে নিয়ে বেরিয়ে আসে। মাশহুদ সমেত বাকীরা তাদের দেখে দৌড়ে গিয়ে উদ্ধার করে দুজনকে।

ফোন বের করে মাশহুদ কল দিলো তার বন্ধু কুঞ্জকে। এখানে আসার পর গত কয়েক দিনেই বেশ কিছু সত্যের মুখোমুখি হয়েছে সে।
প্রথমত তার দাদাভাইয়ের এখানে আরো একটি পরিবার রয়েছে। স্ত্রী সন্তান রয়েছে। যারা খুব কষ্টে দিন পার করছে।বছর তিনেক পূর্বে বড় তার বাড়ির বড় ছেলে বাড়ি বন্ধক রেখে লাখ ত্রিশ এর মতোন টাকা নিয়ে চলে গেছে কোথাও।
ধার দেনা এবং ফসলি জমি বিক্রি করে অনেকটা ঋণ শোধ করলেও তারা এখনো বেশ বিপদে রয়েছে। এখনো দশ লাখ টাকা ঋণ, শুধু তাই নয় মেয়ের বিয়ের দায় কিংবা বৃদ্ধ মায়ের চিকিৎসা সব মিলিয়ে তার দাদার বড় ছেলে বেশ বিপদের মধ্যে রয়েছে সে বুঝতে পারে। গত কাল রাতেও পাওনাদার এসেছিল। তাদের বেশ কড়া ভাষায় কথা শুনিয়েছেন। মাশহুদ তাদের ঋণ শোধ করে দিতে চেয়েছিল কিন্তু বৃদ্ধ রাজি হয় নি।যে বাবা তাদের সাথে কোনো সম্পর্ক রাখেনি, জন্মের পর থেকেই তার বাবা ডাকটা কেড়ে নিয়েছে সে লোকের টাকা কোন মুখে নিবে?

মাশহুদ তাদের সাথে খুব একটা কথা বলতে পারেনি।ভাষাগত সমস্যার কারণে, কিন্তু ভেবেছিল আজ বলবে অথচ তাও হলো না।

কল রিসিভ করে কুঞ্জ বলল,

” প্রেমিক পুরুষ কি খবর?মমতাজকে নিয়ে ফিরবি কবে?”

“এখানে সমস্যা হচ্ছে।”

সবটা বলার পর কুঞ্জ বলল,

“তবে তো ওদের পরিবারের সবাই নিরাপত্তাহীনতায় আছে।”

“হ্যাঁ,এবার কি করা যায়?”

“শোন তুই ওদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করিস না।এতে তোর মোটিভটা সামনে না এলেও হয়তো কেউ ভালো দৃষ্টিতে দেখবে না।তাছাড়া যা বলেছিস, ওর ফ্যামিলিও খুব একটা ভালো না।”

“আমি চাচ্ছি আমরা পূর্বের প্ল্যান মতোই এগিয়ে যাবো।”

“বেশ তবে তাই হোক।ফিরে আয় তবে আগামীকাল।”

“দিন দুয়েক দেরি হবে। একটা কাজ করতে পারবি আমার জন্য?”

“বলে ফেল।”

“একটা ফ্ল্যাট রেডি করতে হবে।চারজনের জন্য।এটা মাথায় রাখবি বাবা বা দাদা যেন না জানে।এমনকি আমার পরিবারের কেউ নয়।”

“বিয়ে করে বৌ নিয়ে ফিরছিস না কী?”

“ধরে নে তাই।”

(৩৫)

কিছু সময় পর আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে একে অপরের খোঁজ নিচ্ছিলো।আগুন লেগেছিল খড়ের গাদায় থেকে।রান্নার জন্য আনা বেঁচে পাঠ খড়ি দাঁড় করানো ছিল ঘরের ভিতরে কারেন্টের লাইনের পাশে।প্রথমে খড়ের গাদায় আগুন, ধীরেধীরে পাঠ খড়ি এরপর বিদ্যুৎতের লাইনে গেলে মোটামুটি বিস্ফোরণ ঘটেছে।
ইউভানের বাবার হুট করে মনে হলো তিনি দেখেছিলেন কাউকে সিগারেট হাতে ঘরে যেতে। তার অসাবধানতার কারণেই আজ এত বড় বিপদ এসেছে। কিন্তু জাফরিন যে তাদের সাথে নেই এটা তখনো কেউ খেয়াল করেনি।জাফরিনের মায়ের নাম্বারে কল এলে টনক নড়লো সবার।ইউভানকে নিয়ে দুই দুলাভাই এগিয়ে গেল হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। বাড়িতে তখন কান্নার দমক আরো একবার বেড়ে গেল।একে তো বাড়ির মেয়ে হাসপাতালে, তাদের মনে প্রশ্ন উঁকি দিতে লাগলো কে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল,কিংবা কখন নিয়ে গেল?কি হয়েছে মেয়েটার?
যে কল দিয়েছিল সে জানিয়েছে মেয়েটা অজ্ঞান অবস্থায় আছে।
হন্তদন্ত হয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করতেই ইউভানদের জানানো হলো যে রোগীকে ইমারজেন্সী থেকে কেবিনে শিফট করা হয়েছে। জাফরিন তখন দু চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। কেবিনে সবার পূর্বে প্রবেশ করলেন বড় দুলাভাই। সবার মতেই তিনি একজন বুদ্ধিমান মানুষ যে সকল পরিস্থিতিতে নিজেকে সামলাতে জানে কিন্তু তিনি নিজেও মেয়েটার হাত দেখে চমকে উঠেছে। কারো উপস্থিতি টের পেয়ে জাফরিন তাকিয়ে দেখতে পেল তার ভাইয়েরা এসেছে।
তাদের সাথে এমিলি কিছু সময় পর দেখা করলো।তাদের সাথে এমিলির কি কথা হলো জাফরিন জানে না।
কিছু সময় পর ইউভান এগিয়ে এসে জাফরিনকে বলল,

“তুমি কী দেখেছিলে কে তোমাকে টেনে আগুনের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো?”

জাফরিন নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে বলল,

“দেখেছি দাদাভাই।কিন্তু কী লাভ? সে যে আমার আপন রক্ত।আমার নিজের চাচা।”

চলবে,
#ক্যামেলিয়া
#সাদিয়া_খান(সুবাসিনী)
#পর্বঃ১৫
বিয়ের পর একজন মেয়ে তার স্বামীকে শারিরীক সম্পর্কের জন্য বলতে পারে না।এটা এই সমাজে ট্যাবু।স্বামীর ইচ্ছে হলে তাকে কাছে টেনে নিবে নইলে থাকুক না স্ত্রী পড়ে খাটের একটা পাশে।
অথচ প্রতিটি মানুষের কিছু চাহিদা থাকে, এসব নিয়ে যদি কোনো মেয়ে ভুলেও কিছু বলেছে তবে সমাজ তো পরের কথা নিজ পরিবার তাকে নিয়ে নানান ধরনের কথা বলা শুরু করে দেয়৷ বাড়ির অন্য বৌয়েরা আঁচলে মুখ ঢেকে তাকে নিয়ে তামাশা করে কিংবা শাশুড়ি ছি ছি।

পোড়া হাতটা নিয়ে জাফরিন বসে আছে তার বড় বোনের বাড়িতে। এই বাড়ির বড় বৌ তার বড় আপা জেমিয়ার বেশ কদর রয়েছে। এই কদরের কারণটাও জাফরিন বুঝতে পারে। জাফরিনের বাবা না চাইতেই তার মেয়ের শ্বশুর বাড়ির সবাইকে উপহারের নামে পাঠাতো অনেক কিছু।বাবার মৃত্যুর পর তার আপাও বেশ কিছু স্থাবর অস্থাবর জিনিসের মালিক হয়েছে। এজন্যও তার শাশুড়ি তাকে সমীহ করেই চলে, অপর দিকে তার বড় আপা যেন মাটির মানুষ। মাটি নয় কাঁদা মাটি,তাকে যে রূপ দেওয়া হয় সেভাবেই থাকে।তাই এবাড়িতে জাফরিনদের বেশ সম্মান দেওয়া হয়।ভাগ্নের সাথে বসে তাকে অংক বুঝিয়ে দিচ্ছিলো সে। এমন সময় পাশের ঘর থেকে এসব ছি মূলক কথা শুনতে পেল সে।
দুলাভাই সবে মাত্র অফিস থেকে ফিরেছে। জাফরিনের শরীর ভালো না হওয়া স্বত্বেও এক গ্লাস পানি এনে দিলো।

“তোমার কেন আনতে হবে? আমি নিজেই নিয়ে নিতাম।”

“পুরো দিন বসেই আছি ভাই। ভালো লাগছে না।”

“তবে একটু ছাদে যাও। কিছু খাবে? তোমার আপাকে বলি বানিয়ে দিতে?বাহিরের খাবার তো নিষেধ।”

“খেতে ইচ্ছে করলে আমি নিজেই বলবো ভাই।কিন্তু… ”

পুরো গ্লাসের পানি শেষ করে তার দুলাভাই জিজ্ঞেস করলেন,

“কী হয়েছে? কিছু জিজ্ঞেস করবে?”

“মেঝ ভাই না কী থানায় মামলা দিয়েছে?”

“স্বাভাবিক না কী?ইউভান আর তোমার মেঝ ভাই পর দিন সকালেই থানায় জানিয়েছে।আমি যেতে পারিনি কারণ তোমাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম।”

“কী প্রয়োজন ছিল?”

“আমি বা ইয়াকুব তোমার আপন ভাই নই।আমরা তোমার বোন জামাই। কিন্তু তোমার আপন ভাই থাকলে কী করতো?সে বসে থাকতো?ইউভান বসে আছে? শুনো ঘটনাটা স্বাভাবিক নয়, তারা তোমাকে খুন করার চেষ্টা করেছে। এভাবে ছেড়ে দিতে পারি না।বাবা নেই, কিন্তু তোমার প্রতি আমার দায়িত্ব আছে।”

জাফরিন চুপ করে বসে রইল।এমন সময় পুনরায় ঘর থেকে রাগারাগি ভেসে আসছে।এবার তার দুলাভাই বলল,

“আমি অফিস যাওয়ার পর বাসায় কিছু হয়েছে?”

“আপনাদের পারিবারিক ব্যাপার।তবে ভাই আন্টির সাথে কথা বলুন।আর সূচনা আপু ভীষণ লজ্জায় আছেন। কিন্তু আপনি বুদ্ধিমান মানুষ, এই বিষয়ে আমার কথা বলা সমীচিন নয়।আপনি সবটা বুঝে তারপর আন্টিকে বুঝিয়ে বলুন।”

সূচনার বিয়ের বয়স প্রায় এক বছর। স্বামীর সাথে সম্পর্ক ভালোও না আবার খারাপ ও না।তার স্বামী তাকে মেনে নিয়েছে না মেনে নেওয়ার মতোন করে। একজন স্ত্রীর সকল চাহিদার কথা তার স্বামীর কাছেই বলবে কিন্তু এটা বলাই যেন তার কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার স্বামী সকালবেলা মায়ের কাছে এসে বলল তার স্ত্রীর চাহিদা একটু বেশিই। ব্যস এটা নিয়েই আজ তাদের বাড়ি দফায় দফায় মিটিং বসছে।ঘটনা এ অবধি সীমাবদ্ধ থাকলে কথা ছিল কিন্তু বাড়াবাড়ি হলো যখন সূচনার বাবার বাড়িতে জানানো হলো এবং জরুরী তরফে ডেকে আনা হলো তাদের।

উল্লেখ্য, সূচনার বিয়ে পূর্বে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তার স্বামীর ধারণা নিশ্চয়ই প্রেমিকের সাথেও তার সম্পর্ক ছিল।
নিজ ঘরে মাথা নিচু করে বসে আছে মেয়েটা।এতোটা লজ্জা! তার এই মুহুর্তে মরে যেতে ইচ্ছে করছে, যখন পাশের ঘর থেকে বার বার ভেসে আসছে

“এতোটা শরীরের ক্ষুধা তো রাস্তায় নেমে গেলেই পারে।”

সূচনার সহ্যের সীমা অতিক্রম করে গেল যখন তার বাবা এবং মা চলে যাওয়ার আগে তার সাথে একটা বার কথা অবধি বলল না।রাত যত গভীর হলো আলোচনা ততই বাড়তে লাগলো।কেউ পক্ষে আবার কেউ বিপক্ষে কথা বলেই চলেছে।তার স্বামী রুমে এসে তাকে একবার তাকিয়ে দেখলো মাত্র। হাসতে হাসতে বিছানায় উঠে বসে বলল,

“তোমার এই বাড়িতে থাকার সময় শেষ হয়ে এলো।আমার সংসার জিনিসটাই ভালো লাগে না।মাকে আগেই বলেছিলাম বিয়ে দিও না।দিলো এবার তারাই বুঝুক।তুমি চলে যাওয়ার পর অন্তত আর জোর করতে পারবে না।”

সূচনা অবুঝ চোখে তাকিয়ে রইল বাইরের দিকে।গভীর রাতে তার মায়ের ফোনে কল দিয়ে বলল,

“আমাকে নিয়ে গেলে না মা?”

“বিয়ে দিয়েছি নিয়ে আসার জন্য?”

“ওরা যে আমাকে অসম্মান করছে।মা আমাকে নিয়ে যাও।”

“অসম্মানের কথা বলেছো তাই করছে৷ মেয়ে হয়ে কে এসব বলে? শরীরের ক্ষুধা এত কেন তোমার?”

“শেষ অবধি তুমিও?কেন বুঝতে পারছো না সে আমার স্বামী,আমি শুধু…….

” লজ্জা করো সূচনা, তুমি তোমার মায়ের সাথে কথা বলছো।”

“মা আমাকে নিয়ে যাও। পায়ে ধরছি,আমি পারছি না এসব নিতে।”

মায়ের শেষ কথাটা স্পষ্ট শোনা গেল না। তার বাবা নিশ্চয়ই কল কেটে দিয়েছে মায়ের হাত থেকে ফোন নিয়ে। সূচনা সেই অবুঝ দৃষ্টিতে বাইরের দিকেই তাকিয়ে রইল।একটি নতুন ভোরের আশায়। নতুন ভোর আসবে তো?

(৩৭)

নিজ বিছানায় বার বার এপাশ ওপাশ করছে জাফরিন।একটা স্পর্শ যেন তাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিয়েছে। কিন্তু তার স্পষ্ট কিছুই মনে নেই। তার মনে আছে কালো শার্টের আড়ালে শুভ্র একটা বক্ষ। যেখানে হৃদপিন্ডটার স্পন্দন খুব দ্রুত।এক হাতে সে নিজেই জাফরিনের মাথাটা শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছে তার বুকের সাথে অন্য হাত দিয়ে তাকে আগলে রেখেছে। আর বলছিল,

“ফাস্ট, ফাস্ট, ডুই ইট ফাস্ট ব্লাডি বুলশিট. ডু ইট ফাস্ট. ”

নিচের ঠোঁট কামড়ে সেই পুরুষের কথাটা ভাবছিল জাফরিন। জ্ঞান ফেরার পর সে দেখেনি কে নিয়ে এসেছিল তাকে। কিন্তু তার শরীরের গন্ধ যেন লেগেছিল তার চোখে, মুখে কিংবা চুলে। জাফরিনের বেশ ইচ্ছে করছে তাকে দেখতে কিন্তু যারা তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল তারা জানিয়েছে এমন কেউই ছিল না। তবে কী সবটা ছিল তার জল্পনা কল্পনা?

শত শত চিন্তার মাঝে সেই ব্যক্তিটার কথা মনে হলে বেশ শান্তি শান্তি লাগছে তার। ফোনের দিকে তাকাতেই দেখতে পেল তার মেইল এসেছে।স্পেনে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মাঝেই তাকে চলে যেতে হবে। মেইল দেখার পরেই তার চোয়াল শক্ত হয়ে গেল।নিজের ক্ষণিকের আবেগ ভুলে সে প্রস্তুতি নেওয়ার পরিকল্পনা শুরু করলো।তার বাবার মৃত্যু কখনোই স্বাভাবিক ছিল না।আবার মনে করিয়ে দিলো বাবার লাশ কিংবা মায়ের সাদা শাড়িতে মুখটা।

সে বিড়বিড় করে বলল,

“ক্ষমা যতই মহৎ গুণ হোক না কেন,
আমি তো প্রতিশোধ নিতেই পছন্দ করবো।”

একই সময়ে মেইলটা এসেছে মাশহুদের কাছেও। সে নিজেও মেইলটা চেক করে স্মিত হাসলো।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের দুটো বোতাম খুলল। বুকের বা পাশের দুটো আঁচড় চিহ্নে মৃদু আঘাত করে বলল,

“দাদা বলে দেবদাসের দেওয়া আঘাত না কী পারো শুকাতে দিতো না।
আমি কী তবে সেই পথে হাঁটছি?তুমি আমার হয়েও হবে না এটা পূর্ব নির্ধারিত। তবুও না হয় এভাবেই তোমার স্পর্শ আমার সাথে থাকবে মিস.জাফরিন।অপেক্ষায় রইলাম তোমার প্রতিশোধের।”

(৩৮)

ভোরের আলো সবে মাত্র ফুটতে শুরু করেছে। কিন্তু লাশের নিচ থেকে বেয়ে আসা রক্তের ধারা জমে গেছে। সূচনা আত্মহত্যা করেছে। ছাদ থেকে লাফ দিয়ে। তার লাশ পড়ে আছে গেটের কাছে।
খবরটা পেয়েই বড় আপার শাশুড়ি আপার হাত ধরে বললেন,

“বৌমা, তুমি আমাকে কথা দেও তোমার বোনের সাথে আমার বাপের বিয়া দিবা।”

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here