#ঈংরেজ সাহেবের বাঙালী বধূ
#লেখিকা : সামিয়া ইমাম নূর
#পর্ব : ২+৩
২.
মোনালিসা – Hello Aman! How are you?
আমান মিষ্টি হেসে বলল,
আমান – ভাবী সাহেবা কেমন আছেন? আপনি তো দেখছি এখনো আগের মতোই রয়ে গেছেন। এত বছরেও ভাই আপনাকে বাংলাটা শেখাতে পারল না? এটা কেমন কথা ভাই?
রায়হান – আরে বলিস না, ওরা কি বুঝবে বাংলার স্বাদ? সব ইংরেজ জুটেছে আমার কপালে।
মোনালিসা রেগেমেগে বলে ওঠল,
মোনালিসা – what are you said Raihan? তুমি কি আমাখে আর আমার ছেলেখে এখানে অপমান
খরার ঝন্য এনেছ?
আরিয়ান – Yes dad, this is too much। থুমি আমাদেরখে এখানে এথ রিকুয়েস্ট করে আনার পর এবাভে অপমান খরতে পার না। Mom, I want to go back.
আমান দ্রুত বলে ওঠল,
আমান – আরে আরে ভাতিজা, তুমি চলে যাবে মানে? আমরা তো তোমাদের সাথে একটু মজা করছিলাম। মজাও বুঝনা তুমি? আচ্ছা আচ্ছা ওকে, আমরা আর কোনো মজা করব না তোমাদের সাথে। এবার বাড়ি চলো কেমন? তোমার বোন আর চাচী অপেক্ষা করে বসে আছে তোমাদের জন্য। ভাবী চলুন, ভাই গাড়িতে ওঠো।
ওরা গাড়িতে ওঠে বসতেই ড্রাইভার ওদের লাগেজগুলো গাড়িতে তুলে গিয়ে ড্রাইভিং সীটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল।
গাড়ি চলছিল তার আপন গতিতে মাঝপথে বিপত্তি বাঁধল রাস্তার জ্যাম। আর ঢাকার রাস্তায় জ্যামে আটকাবে না এমন হওয়ার চান্স খুবুই কম। এদিকে আরিয়ান আর তার মা তো অস্থির হয়ে পড়ছে কারণ তারা লন্ডনে কখনোই এমন পরিস্থিতির স্বীকার হয়নি। যদিও আরিয়ান এবং তার মা এই পরিস্থিতির স্বীকার এর আগেও একবার হয়েছিল বাংলাদেশে এসে কিন্তু তখন আরিয়ান অনেকটা ছোট থাকায় তার সেসব মনে পড়ছে না। বর্তমানে আরিয়ান প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে আছে তার বাবার উপর। সে তার বাবার উদ্দেশ্যে বিরক্তির স্বরে বলে ওঠল,
আরিয়ান – What the hell is this dad? আর খথক্ষণ এবাভে জ্যামের মধ্যে বসে থাখতে হবে?
মোনালিসা সাথে সাথে বলে ওঠল,
মোনালিসা – Oh my prince! my son, থোমার খুব খষ্ট হচ্চে থাই না? এই ঝন্যই আমি খখনো থোমাকে বাংলাদেশে আসতে দেইনি আর নিঝেও আসতে ছাইনি। এবার আসাঠাও উছিত ছিল না।
রায়হান ধমক দিয়ে বলে ওঠল,
রায়হান – আহ চুপ করবে তুমি মোনা? ছেলেটাকে আর উসকিও না তো। আর আরিয়ান, এই সামান্য সময়ের মধ্যেই তুৃমি এতটা অধৈর্য হয়ে পড়ছ? কেমন পুরুষ তুমি হ্যাঁ?
আমান এবার সামনে থেকে বলে ওঠল,
আমান – ওকে ধমকিও না ভাই। আসলে ও তো এমন পরিবেশে বেড়ে ওঠেনি আর এমন পরিস্থিতিতেও হয়ত লন্ডনে কখনো পড়েনি। তাই ওর জন্য এমন পরিবেশে হুট করে এসেই মানিয়ে নেয়াটা একটু কঠিনই হবে। বাবা আরিয়ান, তুমি তোমার বাবার কথায় রাগ কর না। জানোই তো তোমার বাবার স্বভাব? হুটহাট করে রেগে যায়। তাই মন খারাপ কর না। আর একটু কষ্ট কর বাবা, জ্যাম কিছুক্ষণের মধ্যেই ছুটে যাবে।
আরিয়ান তার চাচার উদ্দেশ্যে বলল,
আরিয়ান – Uncle! you are so good but my dad is very rude.
আরিয়ানের এই কথা শুনে আরিয়ানের বাবা চোখ গরম করে ছেলের দিকে তাকাল আর বাকিরা সবাই হু হা করে হেসে ওঠল সাথে গাড়ির ড্রাইভার সহ।
প্রায় একঘন্টা পর আরিয়ানরা তার দাদুর বাড়িতে এসে পৌঁছাল। গাড়ি বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াতেই বাড়ির ভিতর থেকে ছোটবড় সবাই এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ল গাড়ির সামনে। ড্রাইভার গাড়ি থেকে নেমে আমানের পাশের ডোর আর পিছনের ডোর খুলে দিতেই প্রথমে আমান আর রায়হান গাড়ি থেকে নামল। ওরা নামতেই সবাই রায়হানের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত সারতে লাগল আর ঐদিকে আরিয়ান আর তার মা গাড়ির সামনে এত মানুষ দেখে গাড়ি থেকে নামার সাহসই পাচ্ছে না। আরিয়ান তো ভেবেই পাচ্ছে না একটা বাড়িতে এত মানুষ কিভাবে থাকতে পারে। এদিকে বাইরে সবাই আরিয়ান আর তার মা’কে দেখার জন্য অস্থির হয়ে ওঠেছে। রায়হান আর আমান আরিয়ান আর মোনালিসা কে নামার জন্য বললে মোনালিসা আরিয়ানকে নামতে বলে নিজেও নেমে পড়ে। এদিকে আরিয়ান গাড়ি থেকে নামছে না দেখে আমান আরিয়ানের হাত ধরে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনে। আরিয়ান গাড়ি থেকে নামতেই বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই হা করে আরিয়ানকে দেখতে লাগল। আরিয়ান সবাইকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অস্বস্তিবোধ করতে লাগল। সে অসহায় চোখে তার মা-বাবার দিকে তাকাতে লাগল। আমান সবার উদ্দেশ্যে বলল,
আমান – আরে তোমরা হা করে দেখছ কি? ও আমাদের আরিয়ান। চিনতে পারছ না তোমরা?
৩.
আমানের বউ রাশেদা নিজের গালে হাত দিয়ে বলল,
রাশেদা – মাশাআল্লাহ! ও আমাদের সেই ছোট্ট আরিয়ান? কত বড় হয়ে গেছ বাবা তুমি? কত লম্বা হয়েছ বাহ। ভালো আছ তো বাবা, চিনতে পারছ আমাকে? আমি তোমার রাশেদা চাচী।
আরিয়ান মৃদু হাসল। রাশেদা এবার মোনালিসার কাছে গিয়ে মোনালিসার হাত ধরে বলল,
রাশেদা – কেমন আছ বিলেতি ভাবী? কত বছর পর এলে বলো তো? এতদিনে বুঝি আমাদেরকে দেখতে মন চাইল?
মোনালিসা মৃদু হেসে রাশেদার থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
মোনালিসা – I am fine. থুমি খেমন আছ? By the way , থোমার মেয়ের তো বিয়ে। তা খোথায় সেই ব্রাইড মামনি?
ঠিক তখনই আমানের মেয়ে রাহা এসে মোনালিসাকে বলে ওঠল,
রাহা – এই তো জেঠিমনি আমি এখানে।
মোনালিসা রাহাকে দেখে বলল,
মোনালিসা – ওহ হো, থুমিই থাহলে রাহা। বাহ, very sweet হয়েছে থোমার মেয়ে রাশেদা।
রাহা – ধন্যবাদ জেঠিমনি। আর এই যে আমাদের ইংরেজ সাহেব, how are you hmm?
আরিয়ান মৃদু হেসে বলল,
আরিয়ান – Yeah, i am fine. what about you ?
রাহা – I am also fine bro… but, আমি কিন্তু তোমার উপর খুব রেগে আছি।
আরিয়ান – But why?
রাহা – এই যে তুমি এত লেইট করে এলে। তুমি আগে এলে তো তোমার মতো এমন হ্যান্ডসাম আর ড্যাসিং একজন পুরুষ থাকতে অন্য কাউকে বিয়ে করতে যেতাম না। ইশ! কি মিস টাই না করে ফেললাম।
আরিয়ান মুচকি হাসল। রাশেদা ধমক দিয়ে বলল,
রাশেদা – দেব ধরে কান মলে ফাজিল মেয়ে। বড় ভাইকে কেউ এসব বলে? দিন দিন বড্ড পাজি হয়ে যাচ্ছিস তুই।
রাহা ভেংচি কেটে বলল,
রাহা – আরে বড়ভাই বলেই তো একটু মজা করছি। ছোট ভাইদের সাথে কি আর মজা করা যায়?
রায়হান এবার হু হা করে হেসে ওঠে বলল,
রায়হান – বাহ! দারুণ বলেছিস তো মামনি। এই রাশেদা আমার ভাতিজিকে একদম বকো না। আরে এখনই তো মজা করার সময়। দুদিন বাদে তো বিয়ে হয়ে যাবে। তখন সংসার-ধর্ম নিয়েই ব্যস্ত থাকবে। তখন কি আর হাসি-ঠাট্টা করার সময় মেলবে? কি বল মোনা?
মোনালিসা – Oh yeah!
আমান এবার সবাইকে বলল,
আমান – আরে এবার ওদেরকে ভিতরে তো যেতে দাও। নাকি এখানেই দাঁড় করিয়ে রাখবে? আরিয়ান বাবার নিশ্চয়ই কষ্ট হচ্ছে। কতক্ষণ ধরে এই রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে ছেলেটা।
রাশেদা বলল,
রাশেদা – এমা! তাই তো? ভাবী চলো ভিতরে চলো। রাহার বাবা তুমি ভাই আর আরিয়ানকে নিয়ে এসো।
সবাই আরিয়ানদের বাড়ির ভিতরে নিয়ে গেল। বসার ঘরে সবাই আরিয়ানদের বসিয়ে তাদের চারপাশ থেকে ঘিরে ধরল। এর মধ্যে আশেপাশের কিছু প্রতিবেশিও এসেছে আরিয়ানদের দেখতে। আরিয়ান খুব অস্বস্তির মধ্যে পড়ে আছে এত মানুষকে একসাথে দেখে আর তাদের আরিয়ানকে ঐভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার কারণে। সবাই নানা রকম কথা বলছে আর আরিয়ান এবং তার মা’কে দেখছে। আসলে ভিনদেশি মানুষদের দেখলে গ্রাম অন্ঞ্চলের মানুষরা এমনিতেই একটু কৌতুহলি হয়ে পড়ে। আর এদের বেলায়ও এমনটাই হয়েছে। যদিও আরিয়ান এবং তার মা’কে তাদের অনেকেই আগেরবার দেখেছে কিন্তু তারাও আজ আরিয়ানরা আসবে জেনে খান বাড়িতে এসে ভিড় করেছে আরিয়ানদের বিশেষ করে আরিয়ানকে দেখবে বলে। যাই হোক, আমানের বউ আরিয়ানদের সামনে এনে নানা ধরনের পিঠেপুলি হাজির করেছে। আরিয়ান এত খাবার দেখে অসহায় দৃষ্টিতে তার বাবা আর মায়ের দিকে তাকাতে লাগল। রায়হান খান তো পিঠেপুলি দেখে কোনোদিকে আর নজর না দিয়েই ঘপাঘপ মুখে তুলতে শুরু করে দিয়েছে আর পিঠার স্বাদের প্রশংসায় ভাসিয়ে ফেলছে বাংলার মানুষদের। রাশেদা বলল,
রাশেদা – এমা আরিয়ান বাবা তুমি খাচ্ছ না কেন? আর ভাবী তুমিও তো হাত গুটিয়ে বসে আছ। পিঠে পছন্দ নয় বুঝি?
মোনালিসা জবাব দিল,
মোনালিসা – Actually, আরিয়ান এইসব খায় না। আর আমিও ডায়েঠে আছি।
চলবে-