ঈংরেজ সাহেবের বাঙালী বধূ পর্ব ২৬+২৭+২৮

0
670

#ঈংরেজ সাহেবের বাঙালী বধূ
#লেখিকা : সামিয়া ইমাম নূর
#পর্ব : ২৬+২৭+২৮

২৬.
আরিয়ান দ্রুত class শেষ করে classroom থেকে বের হয়ে এদিক-ওদিক চোখ বুলিয়ে দেখে মাধূর্য কোথাও নেই। বারান্দা থেকে পুরো campus এ একবার চোখ বুলিয়ে নিল কিন্তু কোথাও দেখা যাচ্ছে না মাধূর্যকে। আরিয়ানের কপালে চিন্তার ভাজ পড়ল। সে দ্রুত পকেট থেকে phone বের করে মাধূর্যর নামবারে call লাগাল। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল মাধূর্যর phone ও switched off অফ দেখাচ্ছে। এবার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আবার আরিয়ানের। সে দ্রুত তার মায়ের নামবারে call দিল। ঐপাশ থেকে সাথে সাথেই phone টা receive করল মোনালিসা। ফোনটা receive করেই মোনালিসা বলতে শুরু করল,

মোনালিসা – Prince my son, থুমি এইসব খি খরছ বলো থো? থুমি মেরিনখে University থে সবার সামনে insult খরেছ, থাখে class থেখে বের খরে দিয়েছ। Why my son? খেন থুমি মেরিনের সাথে এমন আছরণ খরেছ যে মেয়েঠা খাঁদতে খাঁদতে চোখের জল শুখিয়ে ফেলছে? এঠা থুমি এখদমই ঠিখ খরনি প্রিন্স। এখন থো আমার মনে হচ্ছে ওর ছোখের জলে পুরো লন্ডনেই flooding শুরু হয়ে যাবে।

মোনালিসার কথা শুনে আরিয়ান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

আরিয়ান – It’s mean, ও বাড়িতে ছলে গেছে?

মোনালিসা – অভশ্যই, থা না হলে খি খরবে মেয়েঠা? পড়ে পড়ে সেখানে থোমার বখা আর insult হজম খরবে?

আরিয়ান – Okey mom, আমি বাড়ি ফিরে খথা বলছি ওর সাথে। এখন আমার একঠা important class আছে। আমি phone রাখছি।

বলেই আরিয়ান টুথ করে phone টা কেটে দিল।

দুপুরে আরিয়ান ফিরেই তার মা’কে জিজ্ঞেস করে পরিবেশ শান্ত নাকি অশান্ত। মোনালিসা জানায় ঝড় আসার পূর্বাভাষ। আরিয়ান একটা শুকনো ঢুক গিলে কৃত্তিম হেসে মাথা চুলকাতে চুলকাতে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ায়। দরজার সামনে গিয়ে উঁকিঝুঁকি মেরে একবার মাধূর্যর অবস্থান দেখে নিল। মাধূর্য জানালার সামনে বাইরের দিকে মুখ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আরিয়ান বুকের বাম পাশে একটা হাত রেখে আস্তে আস্তে নিঃশব্দে মাধূর্যর দিকে এগিয়ে যায়। একপর্যায়ে একদম কাছে গিয়ে খপ করে মাধূর্যকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আরিয়ান। মাধূর্য প্রথমে কিছুটা সিউরে ওঠলেও পড়ে দ্রুত আরিয়ানের থেকে সরার চেষ্টা করতে লাগে আর কান্না জড়িত গলায় বলতে লাগে,

মাধূর্য – ছাড়ুন আমাকে, একদম ছুবেন না আমাকে আপনি।

আরিয়ান আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কানের কাছের মুখ দিয়ে বলে,

আরিয়ান – খেন দরব না?

মাধূর্য – কেন ধরবেন? অপমান করার সময় মনে ছিল না? এখন নেকামো করে ভালবাসা দেখাতে এসেছে। আপনার ভালবাসা আপনার পকেটে পুরে রাখুন এবার। আমি থাকব না এখানে আর, চলে যাব হুম।

আরিয়ান সাথে সাথে মুখ দিয়ে হুশ…. শব্দ উচ্চারণ করে মাধূর্যকে নিজের দিকে ফিরিয়ে দিয়ে বলল,

আরিয়ান – ছলে যাবে মানে? খোথায় যাবে হুম? Don’t forget that, আমি থোমার স্বামী। আমি না ছাইলে থুমি এখপাও খোথাও এগুথে পারবে না। বুজেছ? সারাজীবন আমার সাথেই থাখথে হবে থোমাখে। Mind it.

মাধূর্য মুখ ভেঙ্গিয়ে বলল,

মাধূর্য – হুম মনে থাকবে। কি স্বামীটা? বউকে সবার সামনে অপমান করে আবার স্বামীগিরি দেখায়। হু…..!

আরিয়ান মুচকি হেসে মাধূর্যর মুখটা আলতো করে উপরে তুলে বলল,

আরিয়ান – Ever so sorry sweetheart. But থুমিই বলো এথে আমার খি খোনো দোষ ছিল? থুমি যদি মন দিয়ে পড়াঠা বুজথে অথবা আমি যখন ask খরলাম সবাই বুজেছ খিনা থখন যদি আমাখে বলথে থুমি ঐঠা বুজথে পারনি থাহলে থো আমি রেগে যেথাম না আর থোমাখে ঐবাবে বখথামও না। আর থাছাড়া, থুমিও থো সেখানে অন্যদের মথোই আমার একজন student। থাই না? আমি থো আমার duty খরার সময়ও থোমার সাথে বাড়ির মথো অথবা husband এর মথো আছরণ খরথে পারব না। আমি আমার অন্য student দের যেবাভে treat খরি থোমার সাথেও সেবাভেই খরতে হবে cause থুমি সেখানে আমার এখজন student। class hour এ আমি থোমাখে wife হিসেবে treat খরথে পারব না। Please try to understand me my beautiful lady.

মাধূর্য নাকে কেঁদে বলল,

মাধূর্য – তারমানে আপনি এখন থেকে সবসময়ই আমার সাথে ঐরকম ব্যবহার করবেন?

আরিয়ান মাথা দুইদিকে নেড়ে বলল,

আরিয়ান – No, থুমি যদি মন দিয়ে class এর lecture শুনো, বুজো and নিয়মিথ study খর then আমি খখনোই থোমার সাথে খারাপ আছরণ খরব না। promise.

মাধূর্য মুখ ফুলিয়ে বলল,

মাধূর্য – তখন তো আপনার জন্যই অমনোযোগী হয়ে পড়েছিলাম class এ।

আরিয়ান ভ্রু কুঁচকে বলল,

আরিয়ান – আমরা জন্য? But why? আমি খি খরেছি যার জন্য থোমার মনোযোগ নষ্ঠ হল?

মাধূর্য আমতা আমতা করে বলল,

মাধূর্য – না মানে, আমি তো তখন শুধু আপনাকে দেখছিলাম আর আপনার মাঝেই হারিয়ে গেছিলাম। তাই আপনি কি পড়াচ্ছিলেন বা আশেপাশে কি হচ্ছিল সেদিকে আমার কোনো খেয়াল ছিল না। Trust me.

আরিয়ান অবাক হয়ে বলল,

আরিয়ান – মানে? আমাখে দেখছিলে? আমি থো সবসময় থোমার সাথেই থাকি থাহলে হঠাৎ খরে খি এমন হল যে সব বাদ দিয়ে থুমি আমাখেই দেখছিলে?

মাধূর্য লাজুক হেসে বলল,

মাধূর্য – জানিনা, কিন্তু ভাল লাগছিল তাই দেখছিলাম।

আরিয়ান দুষ্টু হেসে মাধূর্যর মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলল,

আরিয়ান – Oh really? থুমি খি থাহলে আবার নথুন খরে আমার প্রেমে পড়ছ না খি হুম?

২৭.
মাধূর্য লজ্জা পেয়ে আরিয়ানকে একটা ধাক্কা মেরে দৌড় দিয়ে ঘরের দরজার কাছে গিয়ে আবার উল্টোদিকে ফিরে আরিয়ানের উদ্দেশ্যে বলল,

মাধূর্য – আমার বয়েই গেছে আপনার প্রেমে পড়তে। ইংরেজ একটা!

বলেই মাধূর্য একটা ভেংচি কেটে দৌড়ে চলে গেল ঘরে থেকে বেরিয়ে আর মাধূর্যর এমন কান্ডে কিছুক্ষণ হা করে একইভাবে দাঁড়িয়ে থেকে হঠাৎই হু হা করে হেসে ওঠল আরিয়ান।

ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বসে মাধূর্য সামিরা আর সাফা বসে গল্প করছে। এমন সময় দেশ থেকে রাহার phone এলো মাধূর্যর ফোনে। মাধূর্য রাহার নামটা দেখেই মিষ্টি হেসে phone টা receive করে সামিরাদের থেকে কিছুটা দূরে গেল মাধূর্য। এই পাশ থেকে Hello বলতেই ঐপাশ থেকে রাহা বলে ওঠে,

রাহা – আচ্ছালামু আলাইকুম ভাবীজান। কেমন আছেন? ননদ কে তো ভুলেই গেছেন দেখছি।

মাধূর্য মিষ্টি হেসে বলল,

মাধূর্য – ঐ শাঁকচুন্নি, তুই আবার আমাকে ভাবী ডাকা শুরু করেছিস কবে থেকে রে?

রাহা – যেদিন থেকে তুই আমার ভাইয়ের বউ হয়েছিস সেদিন থেকে। আচ্ছা শোন, একটা good news আছে।

মাধূর্য – Good news? তা কি good news শুনি?

রাহা লাজুক হেসে ঐপাশ থেকে বলল,

রাহা – তুই খালামনি প্লাস মামী হতে চলেছিস।

মাধূর্য উত্তেজিত কন্ঠে বলল,

মাধূর্য – Oh really? Oh my Allah, i am so happy for you my friend, Congregation. দারুণ একটা খবর দিলি দোস্ত।

রাহা – ধন্যবাদ। কিন্তু তোর কি খবর বল তো? তোর আর আমার বিয়ে তো মাত্র একসপ্তাহ আগে পড়ে হয়েছে। তা তোর good news টা কবে পাবো?

মাধূর্য একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

মাধূর্য – আর বলিস না good news এর কথা। তোর ভাই তো মনে হচ্ছে আমাকে পড়ালেখা করাতে করাতেই বুড়ি বানিয়ে ফেলবে। Good news আসার সময় কই? সে আমায় হুমকি দিয়েছে যত যাই হোক না কেন PHD করে Doctorate degree আমাকে হাসিল করতেই হবে। জীবন ঝালাপালা করে ফেলছে তোর ইংরেজ ভাই আমাকে পড়াতে পড়াতে। যবে থেকে এই versityতে ভর্তি হয়েছি তবে থেকেই versity তো তার pressure আছেই সেই সাথে বাড়িতেও আমায় সারাক্ষণ তোর ভাইয়ের pressure এর মধ্যেই থাকতে হয় রে বোন। তার dictionary তে মনে হয় study আর pressure ছাড়া আর কোনো কিছু নেই আপাতত।

রাহা ঐপাশ থেকে হু হা করে হেসে দিয়ে বলল,

রাহা – কেন রে, romance ও কি নেই?

মাধূর্য – আর romance! তোর ভাইয়ের romance এর ঘরেও এখন study ঢুকে গেছে। ঠিকমত পড়ালেখা করলে ভালবাসা আর একটু এদিক-ওদিক হলেই ইচ্ছেমত ঝাড়ি দেয়া, বকা দেয়া তোর ভাইয়ের এখন অভ্যাসে পরিণত হয়েছে মনে হচ্ছে।

রাহা আবার হাসতে হাসতে বলল,

রাহা – ভালো ভালো, শিক্ষিত husband এর বউ বলে কথা। Oxford University র একজন প্রফেসরের বউ হয়েছ আর সে তোমাকে তার যোগ্য করে তুলবে না? আসলে কি বল তো? আমি শুনেছি bro… ছোট থেকেই খুব পড়া পাগল আর পড়ালেখার ক্ষেত্রে সে always খুবই serious. পড়ালেখার প্রতি এতটা serious ছিল বলেই তো সে আজ এতবড় একটা University তে দেশ-বিদেশের এত এত শিক্ষার্থীদের পড়ানোর যোগ্যতাটা অর্জন করতে পেরেছে। তাই না? আর সেই জায়গায় তুই তো তার বউ, ভালোবাসার মানুষ। তোকে তো bro… তার সর্বোচ্চ টা দিয়ে চাইবে তারই মতো একটা উঁচু এবং honorable position এ নিয়ে যেতে। তাই না? তাই মন খারাপ করিস না আর bro… এর উপর রাগও করিস না। সে যা করছে তোর ভালোর জন্যই তো করছে। নইলে তুই পড়ালেখা না করে ঘরে বসে থাকলেও কি তার কোনো ক্ষতি হবে নাকি কোনো কিছুর কমতি পড়বে? কিন্তু সে তোকে just একটা ভালো অবস্থানে দেখতে চায়। আমার bro… এর সাথে কথা হয়েছে। তোকে phone করার আগেই bro… কে phone করেছিলাম আর তোর কথা জিজ্ঞেস করতেই সে সব খুলে বলল তোর ব্যাপারে। তুই নাকি তার প্রতি বিরক্ত হয়ে আছিস সে তোর পড়াশোনা নিয়ে এত চিন্তা করে বলে আর তোকে পড়ালেখার ব্যাপারে এত তাগিদ দেয় বলে। দেখ মাধূর্য, তুই bro… এর উপর এইসব নিয়ে রাগ করে থাকিস না। bro… তোকে অনেক ভালবাসে আর সেই জন্যই তোর সব ব্যাপার নিয়েই সে একটু বেশিই চিন্তিত থাকে। কিন্তু এগুলো তোর ভালোর জন্যই। বুঝলি? এতে তোর কোনো ক্ষতি নেই বরং পুরোটাই লাভ। কয়জন পুরুষ আছে তার বউকে নিয়ে এতটা ভাবে? এতটা যত্ন করে নিজের বউকে বল তো? সেই দিক থেকে তো তুই হাজর গুণ বেশি lucky যার কারণে তুই এমন একজনকে husband হিসেবে, life partner হিসেবে পেয়েছিস। আমি কি বলছি বুঝতে পারছিস নাকি আবার আমার উপরও রাগ করছিস?

মাধূর্য এইপাশ থেকে মৃদু হেসে বলল,

মাধূর্য – না রে, আমি বুঝতে পেরেছি আর একদমই তোর উপর রাগ করছি না আমি। আর হ্যাঁ, তোর ভাইয়ের সাথে আবার কথা হলে তাকেও বলে দিস তোর ভাবী তোর ভাইয়ের উপর মাঝেমধ্যে একটু-আকটু রাগ অভিমান করলেও তার প্রতি কখনোই বিরক্ত হয় না। বুঝেছিস?

রাহা মিষ্টি হেসে বলল,

রাহা – বুঝেছি বুঝেছি। একদম perfect একজন wife এর মতো কথা বলেছিস। সত্যিই, শুধু তুই না বরং আমার ভাইটাও খুব lucky তোর মতো একটা বউ পেয়ে।

মাধূর্য হাসল। এরপর আরও কিছুক্ষণ ওদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে কথাবার্তা হল। আর ঐদিকে আরিয়ান অফিসরুমের জানালা থেকে মাধূর্যকে দেখছে। কথা শেষ করে মাধূর্য phone টা রেখে আবার সাফা সামিরার কাছে যেতেই ওরা জিজ্ঞেস করল কার সাথে কথা বলছিল এতক্ষণ মাধূর্য। মাধূর্য ওদেরকে রাহার কথা বলল। তারপর তিনজনে মিলে আবার class এর দিকে গেল। এটাই আজকের last class ওদের। Class এ গিয়ে তিনজনই একেবারে পিছনের সাড়িতে গিয়ে পাশাপাশি বসে পড়ল। তারপর টুকটাক কথা বলছে আর অপেক্ষা করছে শিক্ষকের জন্য। এর মধ্যেই ওদের সামনে বসা দুইটা মেয়ের কিছু কথা কানে এলো মাধূর্যর। মেয়ে দুইজন আরিয়ানের ব্যাপারে কথা বলছে। মাধূর্য আর তার পাশের মেয়ে দুইটা কান খাড়া করে এবার শুনতে লাগল মেয়ে দুইটা কি বলছে সেগুলো। মেয়ে দুটোর মধ্যে একজনের নাম জেনি আর একজনের নাম সোফিয়া। দুজনেই ব্রিটিশ। জেনি সোফিয়ার উদ্দেশ্যে বলছে,

জেনি – How did Prince Ariyan marry such an ordinary Bangladeshi girl? I have heard that many famous models also proposed marriage to Ariyan but he also rejected them.
But what did Ariyan see in this uncultured girl? Why did he marry this stupid girl?(প্রিন্স আরিয়ান এমন একটা সাধারণ বাংলাদেশী মেয়েকে কীভাবে বিয়ে করলেন? শুনেছি অনেক বিখ্যাত মডেলও আরিয়ানকে বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন তবে তিনি তাদেরকেও প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছেন। কিন্তু এই সংস্কৃতিহীন মেয়েটার মধ্যে আরিয়ান কি এমন দেখল? কেন সে এই বেকুব মেয়েটাকে বিয়ে করল?)

২৮.
এবার সোফিয়া বলল,

সোফিয়া – I think she drove Ariyan crazy with her body? (আমার মনে হয় সে তার শরীর দিয়ে আরিয়ানকে পাগল করেছে।

জেনি – But I’m 100% sure that, she slept in the same bed with Ariyan before marriage and this may be why Ariyan is weak towards this girl and marries her. (কিন্তু, আমি ১০০ ভাগ নিশ্চিত যে,সে বিয়ের আগেই আরিয়ানের সাথে এক বিছানায় শুয়েছে আর এই জন্যই আরিয়ান তার প্রতি দুর্বল হয়ে গিয়ে তাকে বিয়ে করেছে।)

ওদের দুইজনের এই সব কথা শুনার পড় এর বেশি আর কিছু শুনার মতো সাহস বা শক্তি কোনোটাই যেন মাধূর্য পাচ্ছেনা। সে দ্রুত সোজা হয়ে নিজের সিটের সাথে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করে বড় বড় শ্বাস নেয়ার চেষ্টা করতে থাকে। শরীর থরথর করে কাঁপছে তার। এর আগেও ভার্সিটিতে অনেক মেয়েদের রোষের মুখে পড়েছে মাধূর্য শুধুমাত্র সে একজন সাধারন বাঙালী মেয়ে হয়েও আরিয়ান তাকে বিয়ে করায় কিন্তু তবুও সে সবসময় সেগুলোকে পাত্তা না দিয়েই চলার চেষ্টা করেছে কিন্তু সে ভাবতেও পারেনি তাকে এত বাজে বাজে কথাও শুনতে হবে। নিজেকে আর আরিয়ানকে নিয়ে এত বাজে কথা কিছুতেই মাধূর্যর হজম হচ্ছে না। এদিকে মাধূর্যর অবস্থা দেখে সাফা আর সামিরা তাকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করে কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে কি কারো শান্ত থাকা যায়? তবুও আরিয়ানের সম্মানের কথা ভেবেই সে নিজেকে যথেষ্ট শান্ত রাখার চেষ্টা করে সোজা হয়ে বসে পানির বোতলটা থেকে এক চুমুক পানি খেয়ে নিল। তারপর ঠান্ডা মাথায় ভাবতে লাগল কোনোরকম বাজে পরিস্থিতি তৈরী ছাড়াই কিভাবে জেনি আর সোফিয়াকে শায়েস্তা করা যায় আর সেটা আরিয়ানও জানতে পারবে না? ওর ভাবনার মাঝেই class এ sir ঢুকল আর মাধূর্যর মাথাতেও একটা চমৎকার বুদ্ধি খেলে গেল। আর সেই বুদ্ধিমতোই সে কাজে লেগে পড়ল। একদিকে sir class এ একটা বিষয়ে lecture দিচ্ছে আরেকদিকে মাধূর্য তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সাফা আর সামিরা প্রথমে মাধূর্যকে বাধা দিতে চাইলেও পরে তারা এটা ভেবেই মজা পাচ্ছে যে ওদের মতো মেয়ের জন্য এটাই ঠিক আছে। তাই lecture এ মন দেয়ার ফাঁকে ফাঁকে তারাও মাধূর্যর কাজে সাহায্য করতে লাগল।

ক্লাস শেষে মাধূর্য আর সাফা, সামিরা দ্রুত class থেকে বের হয়ে গেল। ঐদিকে জেনি আর সোফিয়া বের হওয়ার জন্য sit থেকে ওঠতে নিলেই দুইজনের চুলে টান খায় আর দুইজনই নিজের মাথায় হাত দিয়ে একসাথেই ‘আহ’ করে চিৎকার দিয়ে ওঠে। অন্যান্য মেয়েরাও আস্তে আস্তে class থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল। জেনিরা যেহেতু আজ শেষের দিকে ছিল তাই তারা সবার পিছনে পড়ে যায় আর মাধূর্যরা তো শিক্ষক class থেকে বের হতে দেড়ি কিন্তু তাদের বের হতে দেড়ি হয়নি। জেনি আর সোফিয়া বুঝতে পারল তাদের দুইজনের চুলগুলোকে একসাথে গিট্টু দিয়ে দেয়া হয়েছে যার কারনে তারা লজ্জায় কাউকে ডাকতেও পারছে না আর কারো কাছে সাহায্যও চাইতে পারছে না। তবে তারা এইটুকু বুঝে গেছে যে তাদের পিছনে যেহেতু মাধূর্য আর তার বান্ধবীরা ছিল তার মানে তারাই এই কাজটা করে গেছে আর এই জন্যই ওরা শিক্ষক class থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই class থেকে বের হয়ে গেছে। জেনি আর সোফিয়া একে অপরের দিকে অসহায় ভঙ্গিতে তাকাল। এরপর হঠাৎই জেনি তেতে ওঠে বলল,

জেনি – I will not leave those girls.( আমি ঐ মেয়েগুলোকে ছাড়ব না।)

সোফিয়া বলল,

সোফিয়া – Not the girls, but the girl. I mean Marine. She did all this. She has grown very big fins. Let’s go and break her wings now.( ঐ মেয়েগুলো না বরং বলো ঐ মেয়েটা। মানে মেরিন। সেই এসব করেছে। অনেক বড় পাখা গজিয়েছে তার। চলো গিয়ে ওর পাখাগুলো ভেঙে দেই।)

জেনি – what do you mean?

সোফিয়া – I mean, let’s go now and complain to Principal Sir about that girl? ( আমি বলতে চাইছি, চলো গিয়ে প্রিন্সিপালের কাছে ঐ মেয়ের ব্যাপারে নালিশ করি।)

জেনি – But how? How do we get out of this situation ?(কিন্তু কিভাবে? এই অবস্থায় আমরা এখান থেকে বের হব কিভাবে?)

সোফিয়া – Hey, this way we can show the principal directly what the girl did to us. In this way, Sir will easily believe us and punish that girl. So hurry to the principal’s room.
(আরে এইভাবে গেলেই আমরা প্রিন্সিপালকে সরাসরি দেখাতে পারব ঐ মেয়ে আমাদের সাথে কি করেছে। এভাবে গেলে স্যার সহজেই আমাদের কথা বিশ্বাস করবে এবং ঐ মেয়েকে শাস্তি দেবে। তাই তাড়াতাড়ি চলো প্রিন্সিপালের রুমে।)

জেনি আর সোফিয়া অনেক কষ্টে এই অবস্থাতেই ক্লাস থেকে বের হল। দুজনে একেবারে গায়ে লাগালাগি করে হাঁটছে কারণ কেউ একটু আগপিছ হলে দুজনের চুলেই মারাত্নকভাবে টান পড়ে। এদিকে ওরা class থেকে বের হয়ে ধীরে ধীরে অধ্যক্ষর কক্ষের দিকে এগুতে নিলেই অন্যান্য ছেলেমেয়েরা ওদের অবস্থা দেখে ফেলে সবাই স্বজোড়ে ওদের নিয়ে হাসাহাসি শুরু করে দেয়। ওরা দুজন তো লজ্জায় আর রাগে-ক্ষোভে পারেনা সবাইকেই ধরে ধরে ওদের মতো চুলে চুলে গিট্টু দিয়ে দিতে। আর মাধূর্যর প্রতি রাগ তো দুজনেরই উপছে উপছে পড়ছে। ওরা সবকিছু হজম করেও অধ্যক্ষের কক্ষের দিকে এগুতে থাকে আর অনেক ছেলেমেয়েরাই তাদের tease করার জন্য তাদের পিছু পিছু যেতে লাগে। তারা একেক জন একেকরকম কথা বলছে আর হাসছে জেনি এবং সোফিয়াকে নিয়ে। ওদের এমন হৈচৈ আর শোরগোল শুনে অধ্যক্ষসহ অন্যন্য সব শিক্ষক- শিক্ষিকারা office roam থেকে বেরিয়ে আসে বাইরে কি চলছে দেখার জন্য। আরিয়ানও office এই ছিল আর মাধূর্য ঐদিকে আরিয়ানের গাড়ির সামনে বসে সাফা আর সামিরার সাথে আড্ডা দিচ্ছে আর আরিয়ানের জন্য অপেক্ষা করছে। যাই হোক, অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাথে আরিয়ান ও বের হয়ে আসে office roam থেকে। ওরা সবাই বের হয়েই জেনি আর সোফিয়ার অবস্থা থেকে আরিয়ান আর অধ্যক্ষ বাদে অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারাও হাসাহাসি শুরু করে দেয় জেনি-সোফিয়াকে নিয়ে। অধ্যক্ষর প্রথমে হাসি পেলেও তিনি নিজের ভাবগাম্ভীর্য ঠিক রাখার জন্য হাসিটাকে পেটের মধ্যেই গিলে নিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য সবাইকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু অধ্যক্ষর কথায় কেউ তেমন একটা পাত্তা না দিয়ে হেসেই যাচ্ছে সবাই। যেন ওদের কেউ Laughing Gas খায়িয়ে দিয়েছে। এবার বাধ্য হয়ে আরিয়ান পিছন থেকে বের হয়ে এসে সবার উদ্দেশ্যে একটা রাম ধমক দিতেই সবাই একেবারেই নিশ্চুপ হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা থেমে যাওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষিকারাও হাসি বন্ধ করে চুপ হয়ে যায়। ঐদিকে জেনি আর সোফিয়া লজ্জায় এবার কান্নাই করে দেয়। আরিয়ান ওদের এই অবস্থা কিভাবে হল জিজ্ঞেস করলে ওরা কেঁদেকেটে একাকার করে ইনিয়েবিনিয়ে মাধূর্য আর তার সাথের মেয়ে দুইজনের নামে নালিশ করে। আরিয়ান রাগে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে মাধূর্যকে phone লাগায়। ঐপাশ থেকে মাধূর্য receive করে কিছু বলতে নিলেই আরিয়ান এক প্রকার হুংকার দিয়ে মাধূর্যকে Principal office এর সামনে আসতে বলে আর সেই সাথে তার বান্ধবীদেরও নিয়ে আসতে বলে। মাধূর্য প্রচুর ভয় পেয়ে যায়। মাধূর্য কারণ জিজ্ঞেস করলে আরিয়ান শুধু বলে, “কারণটা এখানে এলেই বুঝতে পারবে।” এবার মাধূর্য প্রচন্ড চিন্তায় পড়ে গেছে। কথায় আছে চোরের মন পুলিশ পুলিশ। এখন মাধূর্যর মনের অবস্থাও একই। তবে এই মুহুর্তে মাধূর্যের নিজের চেয়ে বেশি সামিরা আর সাফাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। সে ভাবছে যদি তার কারণে শুধু শুধু সামিরা আর সাফাকে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়? তবুও আরিয়ান যেহেতু বলেছে ওদের সাথে নিয়ে যেতে হবে তাই বাধ্য হয়েই মাধূর্ধ সাফা আর সামিরাকে সাথে নিয়েই Principal office এর সামনে যায়। সেখানে গিয়ে প্রচুর ভিড় আর থমথমে পরিবেশ দেখে ওরা তিনজনেই অনেকটা ঘাবড়ে যায়। তিনজনে বুকভরে নিশ্বাস নিয়ে নিজেদের একটু স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে একসাথে ধীরপায়ে এগিয়ে যায় আরিয়ানদের সামনে। মাধূর্য চারদিকে একবার চোখ বুলাতে গিয়ে দেখে সোফিয়া আর জেনিও এখানে দাঁড়ানো আর এখনো তারা আগের অবস্থাতেই আছে। মাধূর্যর ভয়টাই সত্যি হল। এদিকে আরিয়ান মাধূর্য কে দেখে কিছুক্ষণ গম্ভীর দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে Principal এর উদ্দেশ্যে বলে,

আরিয়ান – Sir, the accused have come, now you do what you have to do. (স্যার অভিযুক্তরা এসেছে, এবার যা করার আপনিই করুন।)

মাধূর্য অবাক হয়ে আরিয়ানের দিকে তাকাল। আরিয়ান মাধূর্যর দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিয়ে অন্যদিকে তাকাল। তার চোখমুখ ইতিমধ্যেই লাল বর্ণ ধারণ করেছে। মাধূর্য এমন একটা কাজ করবে তা সে ভাবতেও পারেনি। যেই আরিয়ানকে প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য শিক্ষকরাসহ সম্মান করে অথচ আজ তারই স্ত্রী এমন একটা বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরী করল যে তার জন্য এখন শিক্ষার্থীদের সামনেও তার মাথা নিচু হয়ে গেল। যাই হোক, Principal মাধূর্য আর তার দুই সঙ্গীকে জেনি আর সোফিয়ার এই অবস্থার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করল। ওরা তিনজনই কোনো উত্তর না দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। Principal এবার বলল,

প্রিন্সিপাল – Your silence tells you that you are criminals. Then what is the punishment for your wife and her companions, Mr. Ariyan?(তোমাদের নিরবতাই বলে দিচ্ছে তোমরা অপরাধী। তাহলে তোমার বউ আর তার সঙ্গীদের কি শাস্তি দেয়া যায়, মি. আরিয়ান?)

চলবে-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here