ঈংরেজ সাহেবের বাঙালী বধূ পর্ব ২৯+৩০

0
653

#ঈংরেজ সাহেবের বাঙালী বধূ
#লেখিকা : সামিয়া ইমাম নূর
#পর্ব : ২৯+৩০

২৯.
আরিয়ান এবার মাধূর্যর দিকে অভিমানী চোখে তাকিয়ে বলল,

আরিয়ান – Whatever you want, sir. They are bound to get the punishment you deserve when they are guilty. (আপনার যা ইচ্ছে স্যার। ওরা যখন দোষ করেছে তখন আপনি যে শাস্তি দেবেন সেটাই তারা মাথা পেতে নিতে বাধ্য।)

প্রিন্সিপাল – Okey Mr. Ariyan, then…(ঠিক আছে মি. আরিয়ান, তাহলে….)

প্রিন্সিপাল কথা শেষ করার আগেই মাধূর্য দ্রুত বলে ওঠল,

মাধূর্য – I have to say something sir. (আমার কিছু বলার আছে স্যার।

সবাই এবার মাধূর্যর দিকে তাকাল কৌতুহলি দৃষ্টিতে। মাধূর্য সবার দৃষ্টি উপেক্ষা করে Principal এর উদ্দেশ্যে বলল,

মাধূর্য – Sir, give me whatever punishment you have but let them go. Because, they did nothing. I have done what is wrong. So do not punish them, please.
(স্যার, আপনার যা শাস্তি দেয়ার আমাকে দিন কিন্তু ওদের ছেড়ে দিন। কারণ, ওরা কিছুই করেনি। যা অন্যায় করার তা আমি করেছি। তাই দয়া করে ওদের কোনো শাস্তি দেবেন না।)

আরিয়ান এবার রেগে গিয়ে বলল,

আরিয়ান – Aren’t you ashamed to say it with guilt?(লজ্জা করে না তোমরা দোষ করে আবার বুক ফুলিয়ে বলছ সেটা?)

মাধূর্য এবার অশ্রুভেজা চোখে আরিয়ানের দিকে তাকাল। Principal আরিয়ানকে শান্ত হতে বলে নিজে মাধূর্যর উদ্দেশ্যে বলল,

প্রিন্সিপাল – Okey, if they did nothing, I will let them go. Tell me something before that? Why did you do such a thing?
(তারা যদি কিছু না করে থাকে তাহলে আমি অবশ্যই তাদের ছেড়ে দেব। তার আগে আমাকে একটা কথা বলো তো? তুমিই বা এমন একটা কাজ কেন করলে?)

মাধূর্য – Sorry sir, i can not tell you the reason?(
দুঃখিত স্যার, আমি সেই কারণটা আপনাদের বলতে পারব না?)

আরিয়ান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

আরিয়ান – How can you tell? If you have something to say, you can say it. Isn’t it?
(বলতে পারবে কি করে? বলার মতো কিছু থাকলেই তো বলতে পারবে। তাই না?)

মাধূর্য এবার নিরবে চোখের পানি ফেলতে লাগল আরিয়ানের কথা শুনে। আরিয়ান আগে পড়ে কিছু না জেনেই মাধূর্যকে এভাবে কথা শুনাবে সেটা সে হয়ত ভাবতেই পারেনি কখনো। এবার সামিরা সাহস করে আরিয়ানের উদ্দেশ্যে বলে ওঠল,

সামিরা – No sir, there was definitely reasons behind doing this.
(না স্যার, এই কাজ করার পিছনে অবশ্যই কারণ আছে।)

মাধূর্য এবার সামিরার হাত খামচে ধরে মাথা নেড়ে নিষেধ করল কিছু না বলতে। কিন্তু সামিরা মাধূর্যর হাত সরিয়ে দিয়ে বলল,

মাধূর্য – আমাকে বলতে দাও মাধূর্য। নইলে শুধু শুধু তোমাকেই সবাই খারাপ ভাববে আর শাস্তিটাও অযথা তুমিই পাবে যেটা আদৌও তুমি deserve করো না। তাই তুমি বাধা দিলেও আমি কথাগুলো বলবই। I’m sorry Madhurja.

আরিয়ান সামিরার কথাগুলো বুঝতে পেরে বলল,

আরিয়ান – Can you tell us why she did such a thing?(তুমি আমাদের বলো তো কি এমন হয়েছিল যে কারণে সে এমন একটা কাজ করেছে?)

মাধূর্য বলল,

মাধূর্য – No Samira, please.

আরিয়ান ধমক দিয়ে মাধূর্যকে থামিয়ে দিল। সামিরা আর সাফা তারপর classroam এ জেনি আর সোফিয়া আরিয়ান এবং মাধূর্য কে নিয়ে কি কি কথা বলেছিল সেগুলো সব খুলে বলল। মাধূর্য লজ্জায় মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলে চলেছে অনবরত। আরিয়ান কথাগুলো শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অনুশোচনার দৃষ্টিতে মাধূর্যর দিকে তাকাল। তাছাড়া, তার শিক্ষার্থীরা তাকে নিয়ে এমন জঘন্য চিন্তাভাবনা আর আলাপ-আলোচনা করে সেইটা জেনে সবার সামনে তার মাথা কাটা যাচ্ছে। এদিকে সে এইসব না জেনেই এতক্ষণ মাধূর্যর সাথে এতটা রুক্ষ ব্যবহার করে গেছে। ঐদিকে জেনি আর সোফিয়া তো ভয়ে শেষ। Principal আর অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারাও এবার সোফিয়া আর জেনির উপর ক্ষেপে ওঠল। সামান্য শিক্ষার্থী হয়ে শিক্ষকদের নামে এমন ধরনের কথা বলার সাহস ওরা পায় কোথায় সেটাই ভেবে পাচ্ছে না তারা। Principal রেগেমেগে সোফিয়া আর জেনির উদ্দেশ্যে বলল,

৩০.
প্রিন্সিপাল – Where do you get so much courage? Who dared you to talk so badly about a teacher and his legally married wife? Answer me! That is why I will punish you severely. I will expel you from the university tomorrow. This is the result of your rudeness and that’s what you deserve. (এত সাহস পাও কোথায় তোমরা? একজন শিক্ষককে এবং তার বৈধভাবে বিয়ে করা স্ত্রীকে নিয়ে এমন বাজে কথা বলার সাহস কে দিয়েছে তোমাদের? জবাব দাও। এরজন্য আমি তোমাদের কঠিন শাস্তি দেব। আমি কালই তোমাদের ইউনিভার্সিটি থেকে বহিষ্কার করব। তোমাদের বেয়াদবির ফল এটাই এবং তোমরা এটাই ডিজার্ভ করো।)

প্রিন্সিপালের কথা শেষ হতেই সোফিয়া আর জেনি হাঁটু ভেঙ্গে বসে পড়ে প্রিন্সিপালের সামনে। হাত জোর করে তারা প্রিন্সিপাল আর আরিয়ানের কাছে ক্ষমা চাইতে শুরু করে আর এই ফাঁকে মাধূর্য চোখ মুছতে মুছতে কাউকে কিছু না বলেই সেখান থেকে বেরিয়ে পড়ে। University থেকে বেরিয়েই মাধূর্য একটা cab ভাড়া করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। আজ আরিয়ানের প্রতি প্রচুর অভিমান আর অভিযোগ ভর করেছে মাধূর্যর মনে। তাই আরিয়ানের জন্য অপেক্ষা না করে একাই বাড়ি চলে যাচ্ছে সে। এবার মি. আরিয়ানকে বুঝাবে সে কত ধানে কত চাল হয়। এতদিন সে মাধূর্যর ভালবাসা দেখেছে কিন্তু অভিমান দেখেনি যেটা এবার ভালোভাবেই দেখতে পাবে আরিয়ান এবং হাড়ে হাড়ে টেরও পাবে।

কেটে গেছে পনেরোটা দিন। সেদিন যখন সোফিয়া আর জেনিকে Principal মাধূর্যর কাছে ক্ষমা চাইতে বলল তখন ওরা পাশ ফিরে দেখে মাধূর্য নেই।আরিয়ানসহ সবাই চারদিকে চোখ বুলিয়ে মাধূর্যকে খুঁজতে লাগলে সাফা আরিয়ানের উদ্দেশ্যে বলে যে, মাধূর্য চলে গেছে। আরিয়ান সাথে সাথেই কাউকে কিছু না বলে সেখান থেকে বেরিয়ে নিজের গাড়ির কাছে চলে যায় কিন্তু মাধূর্য গাড়িতে নেই। সে ভাবল হয়ত সেদিনের মতো রাগ করে আজও মাধূর্য একা একাই বাড়ি চলে গেছে। তাই সেও দ্রুত গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে। বাড়ি এলে তার মা জিজ্ঞেস করে মাধূর্য একা কেন এসেছে আর তার চোখমুখ কেন ফোলা? তখন আরিয়ান তার মা’কে সব খুলে বলে। তারপর দ্রুত ঘরে গিয়ে দেখে মাধূর্য তার সব পোশাক-আশাক গুছিয়ে Suitcase এ পুরছে। আরিয়ানের বুকের ভিতরে মুচড় দিয়ে ওঠল। সে মাধূর্যর সাথে কথা বলতে চাইলে মাধূর্য তাকে ignore করে Suitcase নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে পাশের ঘরে গিয়ে ধুম করে আরিয়ানের মুখের সামনে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে আরিয়ান অনেক চেষ্টা করে মাধূর্যর সাথে কথা বলার, তার রাগ ভাঙ্গানোর কিন্তু মাধূর্য আরিয়ানকে তার কাছে আসার কোনো সুযোগই দেয়নি। এভাবেই কেটে যায় পনেরোটা দিন। এর মধ্যে আর University তেও যায়নি মাধূর্য। ঐদিকে সেদিনের ঘটনার কারণে সোফিয়া আর জেনিকে University থেকে বহিষ্কার করে দেয় Principal। আরিয়ানও এই ব্যাপারে principal কে কিছু বলেনি। বেচারা নিজেই আছে মহা ঝামেলায়। পনেরোটা দিন ধরে বেচারার বউ তাকে কাছে যেতে দেয় না, তার সাথে কথাও বলে না আর তাকে দেখাও দেয় না। সারাক্ষণ ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে থাকে, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়াও করেনা। মোনালিসা মাঝেমধ্যে এসে জোর করে খাইয়ে দিয়ে যায় আর নয়ত খাবার মাধূর্যর ঘরে পাঠিয়ে দেয় কারণ, মাধূর্য খাবারঘরে একেবারেই যায় না। খুব প্রয়োজন না হলে ঘর থেকেই বের হয় না যদি আরিয়ানের সামনে পড়ে যাবে সেই ভেবে।

আরিয়ান versity তে যাওয়ার পড় আর versity থেকে ফেরার আগ পর্যন্ত সময়টাতেই কখনো কখনো একটু বেরিয়ে ছাদে বা বাগানে যায় হাঁটতে বা মোনালিসার সাথে টুকটাক গল্প করতে। যদিও মোনালিসার সাথেও এখন খুব কমই কথা হয় মাধূর্যর কারণ মোনালিসা সুযোগ পেলেই তার ছেলের হয়ে সাফাই গাইতে শুরু করে। ওদের দুজনের মধ্যকার মনোমালিন্য মিটিয়ে নিতে বলে কিন্তু মাধূর্যও এবার এত সহজে আরিয়ানকে ক্ষমা করবে না ভেবে রেখেছে। আরিয়ানের সেদিনের ব্যবহারগুলো এখনো মাধূর্যকে পোড়ায়। অভিমানের পাহাড় জমেছে আরিয়ানের প্রতি যা এত সহজে ভাঙবে না এবার। আর ঐদিকে আরিয়ানেরও অবস্থা খারাপ মাধূর্যকে ছাড়া। ঠিকমত খায় না, ঘুমোয় না। একদিন রায়হান আরিয়ানকে মাধূর্যর সাথে সব মিটমাট করার একটা উপায় বের করে দিল। আরিয়ানও সেই উপায়টাকেই কাজে লাগালো। আরিয়ান সেদিন ভার্সিটিতে না গিয়ে ঘাপটি মেরে ঘরে বসে রইল। ঐদিকে আরিয়ান ভার্সিটিতে চলে গেছে বুঝানোর জন্য আরিয়ান নিজের গাড়িটাকে তার মায়ের গাড়ির ড্রাইভারকে দিয়ে বাড়ির বাইরে পাঠিয়ে দেয় যাতে গাড়ির শব্দ পেয়ে মাধূর্য ভাবে আরিয়ান বেরিয়ে গেছে। এদিকে মাধূর্যও ভেবেছে আরিয়ান হয়ত ভার্সিটিতে চলে গেছে। তাই কিছুক্ষণ পর মাধূর্য গোসল করে চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে একটু রোদ পোহানোর জন্য ছাদে যাওয়ার জন্য বের হল। ঘর থেকে বের হয়ে আরিয়ানের ঘরের সামনে যেতেই খপ করে আরিয়ান নিজের ঘরের দরজার ভিতর থেকে মাধূর্যর হাত টেনে ধরে এক টানে মাধূর্যকে ঘরের ভিতরে নিয়ে বিছানাতে ফেলে দিয়েই দরজা lock করে দিল। এদিকে মাধূর্য প্রথমে প্রচন্ড ভয় পেয়ে জোরে একটা চিৎকার করলেও যখন আরিয়ানকে দেখতে পায় তখনই সে বোকা বনে যায়। বিছানা থেকে ওঠেই সে বড় বড় চোখ করে ভুত দেখার মতো আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে থাকে। আরিয়ানের পরনে একটা তোয়ালে ছাড়া আর কিছু নেই। মাথার চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে তার। সে এই অবস্থাতেই মাধূর্যর দিকে এগুচ্ছে মুখে দুষ্টু হাসি নিয়ে। মাধূর্যর এবার যেন হার্টবিট বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। আরিয়ান যে হঠাৎ করে এভাবে তাকে বোকা বানাবে সে তা ভাবতেও পারেনি। মাধূর্য আরিয়ানের দিকে জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে আছে। সে বুঝতে পারছে না আরিয়ান কি করতে চলেছে। এদিকে আরিয়ান মাধূর্যর একেবারে কাছে চলে আসতেই মাধূর্য দ্রুত চোখ নামিয়ে নিয়ে বিছানা থেকে ওঠতে নিলেই আরিয়ান খপ করে মাধূর্যকে ধরে জোর করে আবার বিছানায় বসিয়ে দিয়ে তার সামনে নিজের হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। তারপর মাধূর্যর চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করতে থাকে কতটা অভিমান আর অভিযোগ জমেছে ঐ চোখে তার জন্য। আর মাধূর্য দেখছে আরিয়ানের রক্তবর্ণ ধারণ করা চোখদুটো যেগুলো নোনা পানিতে ছলছল করছে।

চলবে-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here