ঈংরেজ সাহেবের বাঙালী বধূ পর্ব ৪+৫

0
790

#ঈংরেজ সাহেবের বাঙালী বধূ
#লেখিকা : সামিয়া ইমাম নূর
#পর্ব : ৪+৫

৪.
রায়হান পিঠা চিবুতে চিবুতে বলল,

রায়হান – আরে রাখো তো ঐসব ডায়েট ফায়েট। আরে একবার মুখে দিয়ে দেখ গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী পিঠেপুলি। দেখবে আঙুল সহ খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করবে আর তখন ঐসব ডায়েট ফায়েটের নাম ভুলে বারবার এইসবই খেতে চাইবে। আর তোমার ঐসব ডায়েট ফায়েটের চক্করেই দেখ আমার ছেলেটাও ঐসব ঘাসপাতা খেয়ে খেয়ে কেমন শুকনো লঙ্কার মতো হয়ে যাচ্ছে দিনদিন।

রায়হানের কথা শুনে উপস্থিত সবাই স্বজোরে হেসে ওঠল। এতে আরিয়ান বিব্রতবোধ করল। সে রেগে গিয়ে তার বাবার উদ্দেশ্যে বলে উঠল,

আরিয়ান – Dad! What do you mean by shukno longka ?

রায়হান কিছু বলতে যাবে তখনই পিছন থেকে একটা মেয়ের কন্ঠস্বর ভেসে আসল। মেয়েটা হচ্ছে রাহার বান্ধবী মাধূর্য মেহরিন। মাত্রই সে রাহাদের বাড়িতে এলো রাহার বিয়েতে এটেন্ড করার জন্য আর সদর দরজা দিয়ে ঢুকতেই বৈঠকখানা থেকে আরিয়ানের কথাটা শুনতে পেয়েই সাথে সাথে বলে ওঠল,

মাধূর্য – এমা, সে কি? শুকনো লঙ্কার মানে জানে না এমন মানুষও এই দেশে আছে নাকি?

কথাটা বলতে বলতেই মাধূর্য বৈঠকখানার দিকে এগিয়ে গেল। রাহা দৌড়ে গিয়ে মাধূর্যকে ধরে কোলাকোলি করে বলল,

রাহা – এতক্ষণে তোর আসার সময় হল? দেখ আমার জেঠু-জেঠিমনি আর আরিয়ান ব্রো এসেছে।

মাধূর্য সবার দিকে একবার চোখ বুলাতেই আরিয়ান আর আর তার মা’কে দেখতে পেল। আর ওদের দেখেই মাধূর্যের বুঝতে বাকি নেই যে এরাই সেই বিলেতি মা-ছেলে। আর আরিয়ানরাও এখন মাধূর্য কে দেখে বুঝার চেষ্টা করছে এই মেয়ে কে? যাই হোক, মাধূর্য সবার উদ্দেশ্যে সালাম দিয়ে রাহার বাবা-মায়ের সাথে কুশলাদি সেরে নিয়ে বলল,
মাধূর্য – আচ্ছা! আমি আসতে আসতে শুনলাম কে যেন শুকনো লঙ্কার মানে জিজ্ঞেস করছিল?

যদিও মাধূর্যের এখন বুঝতে বাকি নেই যে প্রশ্নটা আরিয়ানই করেছিল তবুও ইংরেজ সাহেবকে একটু না জ্বালালে যেন মাধূর্যের হচ্ছেই না। রাহা মাধূর্যের জবাবে বলল,

রাহা – আরে ওটা তো আরিয়ান ব্রো জিজ্ঞেস করেছিল জেঠুকে।

মাধূর্য আরিয়ানের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,

মাধূর্য – একি! উনি শুকনো লঙ্কার মানে জানে না? এটা কোনো কথা? বাঙালী বাবার ছেলে হয়ে শুকনো লঙ্কা কি সেটাই জানেনা। আমি আপনাকে বলছি শুকনো লঙ্কার মানে কি। ওহ সরি, আপনি তো আবার বাংলা বুঝেন না। ঠিক আছে, আমি ইংরেজিতেই বলছি। Shukno longka means dried chilly. Understand?

আরিয়ান তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে দাঁড়িয়ে পড়ল। তারপর তার বাবাকে বলল,

আরিয়ান – What the hell dad? Dad, you call me dried chilly? Like seriously? I will be back in London right now, mom. Dad is repeatedly insulting me. I will not tolarate this anymore. (এইসব কি বাবা? বাবা, তুমি আমাকে শুকনো লঙ্কা বললে? আমি এক্ষুনি লন্ডন ফিরে যাব মা। বাবা বারবার আমাকে অপমান করছে। আমি আর একমুহুর্তও এসব সহ্য করব না।)

মোনালিসাও এবার রেগে গিয়ে বলল,

মোনালিসা – This is too much Raihan. থুমি continueously আমার ছেলেটাখে insult খরছ। এই ঝন্যই থুমি আমাদের এখানে নিয়ে এসেছিলে?

উপস্থিত সবাই হা করে এবার আরিয়ান আর তার মায়ের কাণ্ডকারখানা দেখছে। আরিয়ান যে এভাবে হঠাৎ রেগে ওঠবে তা কেউই বুঝতে পারেনি। রায়হান এখনো মন দিয়ে পিঠে খাচ্ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। ঐদিকে মাধূর্য ও আরিয়ানকে রেগে যেতে দেখে হাত দিয়ে মুখ ঢেকে হাসছে। রাহা, আমান আর রাশেদা দ্রুত এগিয়ে গিয়ে আরিয়ান আর তার মাকে বুঝাতে লাগল যেন তারা চলে না যায়। রাহা আরিয়ানকে উদ্দেশ্যে করে বলল,

রাহা – ব্রো প্লিজ তুমি চলে যেওনা। দেখ জেঠু তো জাস্ট তোমার সাথে দুষ্টুমি করছিল তুমি পিঠে খাচ্ছিলে না বলে। প্লিজ তুমি জেঠুর উপর রাগ করে লন্ডন চলে যেওনা প্লিজ। আমি তো তোমার একটামাত্র বোন বলো? তুমি তোমার বোনের বিয়েতে থাকবে না? Please bro…, i request you! Please, তুমি আর জেঠিমনি চলে যেওনা। আমি কথা দিচ্ছি জেঠু আর তোমাকে কিছু বলবে না। কি তাই তো জেঠু?

৫.
রায়হান মাথা নেড়ে বলল,

রায়হান – ঠিক আছে।

এরপর আরিয়ান রাহাকে বলল,

আরিয়ান – Okey, আমি যাচ্ছিনা but next time এমন খিচু খরলে কিন্তু আমি আর খারো কোনো রিখুয়েস্ট শুনব না।

আরিয়ানের বাংলা কথাগুলো এতক্ষণ হা করে শুনছিল মাধূর্য। যেই আরিয়ান কথা থামাল অমনি মাধূর্য হু হা করে হেসে ওঠল। আরিয়ান আর তার মা ভ্রু কুঁচকে মাধূর্যের দিকে তাকাল। বাকি সবাইও মাধূর্যের হাসির কারণ জানতে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কিন্তু রাহা মাধূর্যের হাসির কারণটা বুঝতে পেরে চোখ গরম করে মাধূর্যকে ইশারা করল থামার জন্য। সাথে সাথেই মাধূর্য অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে গলাটা হালকা ঝাড়া দিয়ে চারপাশে একবার চোখ বুলালো। দেখে সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে আর আরিয়ান এবং তার মা তো এখনো সন্দেহের চোখে মাধূর্যের দিকে তাকিয়ে। মাধূর্য এবার নিজেই কিছুটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে গেল। আরিয়ান হুট করে বলে উঠল,

আরিয়ান – Hey you! থুমি ঐভাবে খেন হাসছিলে তখন? থুমি খি আমায় নিয়ে হাসছিলে?

মাধূর্যর আবার হাসি পেয়ে গেল আরিয়ানের কথা শুনে কিন্তু এবার হাসলে প্রবলেমে পড়ে যাবে বুঝতে পেরে হাসি কন্ট্রোল করার জন্য শুকনো কাশতে শুরু করল সে। রাহা দ্রুত বলে ওঠল,

রাহা – নো নো ব্রো, ও তোমাকে নিয়ে হাসেনি। আসলে কি বলো তো? ও তো যখন তখন শুধুশুধুই হেসে ওঠে।

তারপর রাহা হাতের ইশারায় আরিয়ানকে বলল যে মাধূর্যের মাথায় গন্ডগোল আছে। আরিয়ানও সেটা সত্যি ভেবে মাধূর্যের দিকে তাকিয়ে আফসোসের সুরে বলে,

আরিয়ান – Oh really? So sad।

এদিকে রাহা যখন আরিয়ানকে ইশারা করছিল তখন মাধূর্য সেটা দেখে ফেলে। মনে মনে তার রাহার উপর খুব রাগ হলেও এখানে সবার সামনে নিজের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে চুপচাপ ব্যাপারটাকে হজম করে নিল সে। আমান বলল,

আমান – অনেক হয়েছে, রাহা তুই মাধূর্যকে তোর ঘরে নিয়ে যা আর ভাই তুমি আর ভাবী গিয়ে তোমাদের রুমে রেস্ট নাও। আমি আরিয়ানকে ওর রুম দেখিয়ে দিচ্ছি। অনেক ধকল গেছে তোমাদের, এবার একটু রেস্ট নেয়া দরকার। তা ভাই, তোমার মনে আছে তো নিজের রুম কোনটা?

রায়হান – আরে তা আর বলতে? তুই গিয়ে তোর ভাতিজাকে তার রুম দেখিয়ে দে। চলো মোনা আমরা রুমে যাই।

মোনালিসা বসা থেকে ওঠে আরিয়ানের উদ্দেশ্যে বলল,

মোনালিসা – Go and rest my prince. And call me if you need anything. Okey?

আমান বলল,

আমান – আরে ভাবী চিন্তা কর না। আমরা তো আছি, প্রিন্সের যখন যা প্রয়োজন সব আমরাই ব্যবস্থা করব। তোমরা যাও।

মোনালিসা মাথা নেড়ে রায়হানের সাথে চলে গেল। আমানও আরিয়ানকে নিয়ে আরিয়ানের জন্য সাজানো-গুছানো ঘরের দিকে এগুতে লাগল। ওরা এক এক করে চলে গেলে রাশেদা মাধূর্য আর রাহাকে ঘরে যেতে বললে রাহা মাধূর্যকে নিয়ে চলে যায় নিজের ঘরে।

মাধূর্য ঘরে ঠুকেই ব্যাগপত্র বিছানায় ফেলে রাহাকে ধপাধপ কয়েকটা কিল বসিয়ে দিয়ে বলল,

মাধূর্য – কুত্তি, শাঁকচুন্নি তুই ঐ ইংরেজটাকে কি দেখাচ্ছিলি তখন হাতের ইশারায়? আমি পাগল? তুই ঐ ইংরেজটার কাছে আমায় পাগল বানালি?

রাহা অনেক কষ্টে মাধূর্যের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বিছানায় বসে বলল,

রাহা – আরে গাধী তুই বুঝছিস না কেন? তখন ঐটা না বললে তো ব্রো আবারও রেগে যেত আর তখন আবার চলে যেতে চাইত। তাই পরিস্থিতি শান্ত করার জন্যই আমি ঐটা বলেছি। বুঝলি? আর তখন থেকে ইংরেজটা ইংরেজটা কি বলছিস রে? আমার ব্রোর কি নাম নেই নাকি? জানিস কত সুন্দর নাম ব্রোর? প্রিন্স আরিয়ান খান! জোস না?

মাধূর্য মুখ ভেংচি দিয়ে রাহার পাশে গিয়ে বসে বলল,

মাধূর্য – হাহ! তাতে কি এসে গেল? নামে কি রাখা আছে? দেখে তো মনে হচ্ছে ইংরেজি ঝাড়া ছাড়া আর ভুলভাল কয়েকটা বাংলা বলা ছাড়া আর কিছুই পারে বলে মনে হচ্ছে না। বিলেতি মাল???

চলবে-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here