#পদ্মরাগ
#আনু_ইসলাম_রেনী
৬
পরীর এ অবস্থা দেখে ইজ্বা নিজেকে সামলাতে পারেনি। পরীর মুখে নিজের মুখ লাগিয়ে অক্সিজেন দিতে থাকে ইজ্বা। তারপর রেষ্ট রুমে পরীকে কোলে করে নিয়ে যায়। ইজ্বা একবার পরীর হাত পা মুখে মলম দেয়, আরেকবার ঔষধ খাওয়ায় যা তার জন্যে রুশেন আরা দিয়েছিলেন। যখন নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয় তখন ইজ্বা অক্সিজেন দেয় ।
সারা কলেজের ছাত্রছাত্রীদের ভীড় জমেছে, কলেজের সব টিচার,পেন্সিপাল সবাই থ হয়ে দাড়িয়ে আছে। কারো মুখে কোনো কথা নেই। কেউ কিচ্ছু বলে না। সবাই শুধু নির্বাক স্রোতা।
তারা অবাক হবেনই না কেন? খালাত্বো বোনের জন্য কেউ এতটা কেয়ারিং হতে পারে,তা কেউ আগে দেখিনি বা নিজেরাও এমন কেয়ারিং হয়নি। পরীর জন্য ইজ্বার এত ড্রেসপায়ারতা দেখে সবাই অবাক। আর ইজ্বার প্রতি ক্রাস খাওয়া মেয়েরাতো জ্বলেপুড়ে মরমে মরছে। অলরেডি মৌমিতার থেকে সব্বাই জানতে পেরে গিয়েছিল যে আবির স্যারের খালাতো বোন পরী।
পরী ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করল। ইজ্বা তখনো হতাশ, তার মনে অপরাধবোধতা কাজ করছে।
পরী স্বাভাবিক হওয়ার পর সবার দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই বড় বড় চোখ করে তাকে দেখছে। পরী কিছু বলল না শুধু সবাইকে দেখল।
পরীর জ্ঞান ফিরেছে তাই শিক্ষকেরাও নিশ্চিন্ত হয়ে সব শিক্ষার্থীদের ক্লাশে নিয়ে গেলেন। এখন শুধু রেষ্ট রুমে ইজ্বা আর পরী।
ইজ্বা অপরাধবোধতায় ভোগছিল। পরীর এ অবস্থার জন্য সে দায়ী। তাই পরী স্বাভাবিক হতেই ইজ্বা জানালার পাশ ফিরে বসে আছে।
অনেকক্ষণ চুপচাপ ছিল রেষ্টরুম।
পরীর জল তৃষ্ণা পায় তাই সে জল খেতে হাত বাড়ায় টি-টেবিলের দিকে তখনো তার হাত কাঁপছিল। পরী টি টেবিল নাগাল পাচ্ছিল না, তাই উঠতে চেষ্টা করে। কিন্তু নিজকে সামলাতে না পেরে পড়ে যাবে প্রায় মেঝেতে তখন ইজ্বা এসে তাকে বাহুডোরে জড়িয়ে ধরে।
পরী ইজ্বার দিকে চেয়ে দেখে ইজ্বার চোখে জল।
পরী বিষ্ময় মুখে বলে,
পরী- কি হয়েছে ইজ্বা ভাইয়া আপনি কাঁদছেন কেন?
ইজ্বা-ও কিছু না, চোখে কিছু একটা পড়েছে।
পরী- কই দেখি চোখে কি পড়েছে?
ইজ্বা-দেখতে হবে না, নে জল খা।
পরী-না আমি খাব না আগে দেখতে দেন।
ইজ্বা-আচ্ছা দেখ।
পরী- কিছুই তো নেই।
ইজ্বা-উহু
পরী-তাহলে আপনি কাঁদছিলেন। কিন্তু কেন?
ইজ্বা- দূর পাগলি কাঁদবো কেন? তুই পানি খেয়ে নে।
পরী ইজ্বার হাতটা ধরে বলে, বলনা ভাইয়া কাঁদছেন কেন?
ইজ্বা পরী হাত শক্ত করে ধরে বলে,
ইজ্বা-দেখিস পরী আমি আর এরকম করব না।
পরী-কি করবে না?
ইজ্বা- আমিই তোর কলেজ ড্রেসে বিছুটি গুড়ো দিয়েছিলাম। আমি তো জানতাম না তাতে তোর শ্বাস কষ্ট হয়। আই এম রেয়েলি সরি।
গল্পকথক- তখনো ইজ্বার চোখ দিয়ে টপটপ করে চোখের অশ্রু ঝরছিল।
পরী-এবার কান্না বন্ধ করেনতো। এই দেখেন আমি একদম ঠিক আছি। আর আপনিই তো আমাকে মুখে মুখ,
এই বলে পরী লজ্জা পেয়ে অন্য কিছু না বলে ইজ্বার বুকে মুখ গুঁজে নেয়।
এভাবেই দুজন অনেকক্ষণ থাকল।কিছুক্ষণ পর পরীর গালে গিয়ে ইজ্বার চোখের জল পড়ল। পরী ইজ্বার বুক থেকে মাথা তুলে বলল,
পরী- আবার কাঁদছেন? উফফফফ আপনাকে নিয়ে আর পারছি না।
পরী আলতো হাতে ইজ্বারর চোখের জল মুছে দেয়।
তারপর ইজ্বাকে ধাক্কা দিয়ে মুখ ভেংচি কেটে বলে,
পরী- কি বুদ্ধি আপনার এনাকন্ডা, বাপরে বাপ। ভেবেছেন এভাবে নাকিকান্না কাঁদলেই আমি আপনাকে ছেড়ে দেবো। নো এর প্রতিশোধ আমি নেবোই। আর আপনি যে স্টুপিড মেয়েদের মতো আই মিন আমার মতো এতটা কাঁদতে পারেন জানা ছিল না।
এতক্ষণ পর ইজ্বা একটু হাসল, পরী ইজ্বার হাসি আর রাগী মুখ দেখার জন্যই প্রতিশোধের কথা বলেছে।
ইজ্বা রাগী লোক নিয়ে বলে
ইজ্বা- হু, প্রতিশোধ তুই না আমি নেব। তোর উপরে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যেই তো তোকে এতকষ্ট করে আমার অক্সিজেন দিয়ে বাঁচিয়েছি।
পরী-কি? শুধু প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য আমাকে বাঁচিয়েছেন।
ইজ্বা- হুঁ
পরী- এখন তো আমার প্রতিশোধ নেওয়ার কথা আপনি কেন নিবেন?
ইজ্বা- তুই যে আস্থ একটা মুটকী আগেতো জানতাম না। দেখ তোকে কোলে করে দুইতলা থেকে পাঁচতলায় নিয়ে এসেছি। ওমা গো কি ব্যাথা করতেছে সারা গায়ে।
পরী -ব্যাথা যখন করে তবে কোলে নিলেন কেন?
ইজ্বা- আমি আগে তো জানতাম না তুই যে চট্টগ্রামের ইয়া বড় পাথর।
পরী- এ্যাঁ এ্যাঁ, আপনি আমাকে বারবার এরকম লেকফুল করেন।
ইজ্বা পরীকে আবার কোলে তোলে বলে
ইজ্বা – তুই চট্টগ্রামের পাথর হ আর যাই হ তোকে কোলে আমি নেবই।
পরী-আপনি যে বললেন তোমার সারা গায়ে ব্যাথা করতেছে, তবে আবার কোলে তুললেন যে?
ইজ্বা চুপ হয়ে যায়। সে নিজেও জানেনা তার মন কেন এতটা চঞ্চল আজ। কেন তার হৃদয় অজানা কারণে শোকাহত। ইজ্বা শুধু এটাই জানে পরীর কোনো যন্ত্রণা সে সহ্য করতে পারেনা। ইজ্বা নিজেকেও কতবার প্রশ্ন করেছে কিন্তু কোন উত্তর পায়নি।
কিছুক্ষণ পর,
ইজ্বা নিজের মনকে আওড়াতে আওড়াতে পরীর দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,
ইজ্বা- কিরে চুপ হয়ে আছিস যে? এখনো বুঝি কষ্ট হচ্ছে?
পরী- হুঁ, শ্বাস নিতে এখনো কষ্ট হচ্ছে কিছুটা।
ইজ্বা- দেখবি ঠিক হয়ে যাবি।
ইজ্বা আবার চুপ হয়ে যায়। তার মন আবার ভার হয়ে যায়। পরীর এই চুপচাপ মুখ তার ভালো লাগছে না। পরীকে তার দুষ্টুমিতেই ভালো লাগে।
চলবে…