পদ্মরাগ পর্ব- ০৭

0
304

#পদ্মরাগ
#আনু_ইসলাম_রেনী

ইজ্বা আবার চুপ হয়ে যায়। তার মন আবার ভার হয়ে যায়। পরীর এই চুপচাপ মুখ তার ভালো লাগছে না। পরীকে তার দুষ্টুমিতেই ভালো লাগে।
ইজ্বা ড্রাইবিং সিটে বসে ড্রাইভ করছে পাশে পরী জানালা দিয়ে চারপাশটা মুগ্ধ হয়ে দেখছে। কিন্তু আজ রাস্তা, রাস্তার গাছ, শস্যক্ষেত, দিগন্ত মাঠ সবই পরীর অন্যরকম লাগছে। এভাবে মুগ্ধ হয়ে সে কখনো এসব দেখেনি।

হঠাৎ চার-পাঁচটা বাইক তাদের গাড়িটাকে ঘিরে ধরে। ইজ্বা আর পরী কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাদের গাড়ির দিকে বন্ধুক তাক্ করে বলে গাড়িটাকে থামাতে।
ইজ্বা গাড়ি থামাতেই ইজ্বার কলার ধরে একজন গাড়ি থেকে ইজ্বাকে নামিয়ে বন্ধুক তাক্ করে। পরী হতবাক হয়ে রয়েছে এখনো বুঝতে পারেনি সে কি হচ্ছে?
ইজ্বা একটু রাগান্বিত কন্ঠে বলে,

ইজ্বা- হু আর ইউ?

গোন্ডাগুলোর থেকে একজন বলে, আমরা তোর বাপ।

এই বলে গোন্ডা গুলো ইজ্বাকে ঘুসি দিতে থাকে। ইজ্বার ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হচ্ছে।

ইচ্ছা চিৎকার করে বলে,

ইজ্বা- কি কারণে আমাকে মারছ? আমি কি করেছি?

গোন্ডা- বসের নির্দেশ আছে। এই শালাকে মার। একদম জান খুঁবলে আন।

ইজ্বা- কে তোমাদের বস?

গোন্ডাগুলো তখন হাসতে থাকে হেসে ইজ্বাকে আরো মারতে থাকে এট লাস্ট ইজ্বা যখন নেতিয়ে পড়ল গোন্ডা গুলো তার দিকে বন্ধুক তাক্ করে গুলি করতে যাবে তখনই পরী এই গোন্ডাটার মাথায় একটা বড় পাথর দিয়ে আঘাত করে। যার ফলে এই গোন্ডাটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তখনই পাশে থাকা গোন্ডাগুলো পরীকে ঘেরাও করে, পরী চিৎকার করতে থাকে,

পরী- ইজ্বা, আমাকে বাঁচাও, ইজ্বা, উঠো তুমি। উঠো। ইজ্ববববা।

পরীর ডাক অনুভব করে, পরীর এই আর্তনাদ ইজ্বার নেতিয়ে পড়া পেশিগুলোকে বলিষ্ঠ করে তোলে। পরীর ডাকে শত কষ্ট হলেও ইজ্বা উপেক্ষা করতে পারেনি। সে উঠে দাড়ায়। এবং এক এক করে সবগুলো গোন্ডাকে সে মেরে একদম হাত- পা- মুখ- বাহু সব কিছু ভেঙ্গে দেয়। কিছু গোন্ডা দৌড়ে পালিয়েছে।
এখন ইজ্বা আবার নিজেকে দুর্বল অনুভব করছে। পরী দৌড়ে এসে ইজ্বাকে জড়িয়ে ধরে। ইজ্বা কিচ্ছু বলতে পারে না তার সবকিছু আবছা আবছা লাগছে। পরী ইজ্বার মাথাটা কাঁধে করে নিয়ে অনেক কষ্ট ইজ্বাকে গাড়িতে তুলল। এখন পরীকে দেখে মনে হচ্ছে সে একদম সুস্থ। সুস্থ না হললেও সে নিজেকে নিয়ে এখন আর ভাবতে চায় না।

কলিং বেলের শব্দ শুনে রুশেন আরা দরজা খোলেন। তিনি ইজ্বার এ অবস্থা দেখে বিষ্মিত হয়ে যান। ব্যতিব্যস্ত হয়ে তিনি ইজ্বাকে সোফায় বসিয়ে বলেন

রুশেন আরা- এসব হলো কিভাবে?

পরী- জানিনা মা, আমি আর ইজ্বা ভাইয়া আসছিলাম হঠাৎ কতগুলো গোন্ডা আমাদের রাস্তা আগলে……..

রুশেন আরা- পরী এসব কথা পরে হবে। তাড়াতাড়ি তোর ডাক্তার কাকুকে ফোন দে। ইজ্বা, ইজ্বা বাবা চোখ খোল এই দেখ তোমার মণিমা।

//কয়েকদিন পর।

এ কয়েকদিন পরী আর ইজ্বা কলেজ যায়নি। দুজনেই অসুস্থ তাই ছুটি নিয়েছিল ৩-৪ দিন।
রুশেন আরা খাবার পরিবেশন করছেন।
রিতু নিজের মতো করে খাচ্ছে। ওদিকে মাহমুদ সাহেব একটা হেঁকি তুলে বলেন,

মাহমুদ সাহেব- ইজ্বা তুমি কি জানতে পারলে তোমাকে সেদিন অ্যাটাক করেছিল কে?

ইজ্বা- এখনো জানতে পারিনি।

মাহমুদ সাহেব- তোমাকে কেউ অ্যাটাক করতে পারে আমার এই কথাটায় আমার কেমন কটকা লাগছে।

ইজ্বা- হুম। আমি তো ছোটবেলা থেকে লন্ডনে বড় হয়েছি। এই কয়েকটা দিন হলো এখানে এসেছি। সেরকম আমি এখানকার কাউকেই চিনিনা। তবে আমাকে কেউ মারতে যাবে কেন?

মাহমুদ সাহেব- একই প্রশ্ন আমার মনেও জাগে। আচ্ছা এটা ভেবে নিশ্চিন্ত যে ওই গোন্ডা গুলো তোমাকে আর অ্যাটাক করার চেষ্টা করেনি।

ইজ্বা- হুম

মাহমুদ সাহেব- তোমার প্রতি আমি খুব খুশি বাবা। UK এর বিলাশিতা ছেড়ে যে তুমি এদেশের কথা ভেবেছো, এত বড় স্যাকরিফাইজ ক’জনে করতে পারে।

ইজ্বা মুচকি হাসে। পানি এক ঢুক গিলে রুশেন আরার দিকে তাকিয়ে বলে,

ইজ্বা- মণিমা পরী কোথায়,খেতে আসেনি কেন?

রুশেন আরা- খাবে না বলেছে, গলায় ব্যথা করছে নাকি। আমার দর্শীপণা মেয়েটা গিয়ে দেখ আজ কত চুপচাপ। এরকমই তো লক্ষী হয়ে থাকতে পারতো সবসময়। না উনার সারা বাড়ি মাথায় তুলা চাই।

মাহমুদ সাহেব- আমার মেয়েকে দুষ্টুমি করবে নাতো কে করবে। ও দুষ্টুমি না করলে বাড়িটাকে বাড়িই মনে হয় না।

রুশেন আরা- এমন বেয়াড়া মেয়েকে কে বিয়ে করবে শুনি?

মাহমুদ সাহেব – যে আমার মেয়ের দুষ্টুমি গুলো মেনে নিয়ে বিয়ে করবে তার কাছেই বিয়ে দেব আমার মেয়ের।

রুশেন আরা মুখ ভেংচি কেঁটে গটগট করে চলে যান এঁটো বাসন নিয়ে রান্না ঘরে।

ইজ্বা লুকিয়ে রান্না ঘরে ঢুকে চুপিচুপি পরীর জন্য স্যুপ রান্না করে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here