পদ্মরাগ পর্ব-১৬

0
516

#পদ্মরাগ
#আনু_ইসলাম_রেনী

১৬

ওরা ইজ্বাকে ধরে রাখে, পরী পুলিশকে ইনফর্ম করে। লোকটা ইজ্বার পেটে ঘুসি দিয়ে বলে,

– ক্ষতি, হাহাহাহাহা ! তুই আমার ক্ষতি না আমার ছয় বছরের সাজানো স্বপ্নকে ভেঙে দিয়েছিস,

ইজ্বা- আমি! কিসের কথা বলতে চাইছো? কি করেছি আমি?

-জারা! আমি জারার বয়ফ্রেন্ড ফারাবি,

ইজ্বা- ওহ মাই গড!

ফারাবি- হ্যাঁ জারা আমার জান আমার সোনা! আমার সোনার ডিম পাড়া হাঁস।
কত স্বপ্ন বুনেছি টুকরো টুকরো করে। ছয় ছয়টা বছর লেগেছে জারাকে আমার বশে আনতে কিন্তু তুই কোথায় থেকে উদয় হয়ে জারাকে বিয়ে করতে চললি। আমার স্বপ্ন! আমার কোটি কোটি টাকার স্বপ্ন তুমি একদিনেই শেষ করে দিলি, ওহ নো শেষ করতে পারিসনি এখন আমি তোকে শেষ করে জারাকে বিয়ে করে কোটিপতি হবো।

এই কথা বলে ফারাবি ইজ্বার দিকে বন্দুক তাক্ করে,

তখনই জারা বিধ্বস্ত কন্ঠে বলে: না, স্টপ ফারাবি

কিন্তু ফারাবি অলরেডি ফায়ার করে ফেলেছিল, গুলির শব্দে সবাই চোখ বুঝে, ইজ্বার এতক্ষণে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে যাওয়ার কথা কিন্তু সে নিজেকে আবিষ্কার করল সে এখনো ভালো আছে তার গুলি লাগেনি। ইজ্বা চোখ খুলে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না, তার গায়ে গুলি লাগার আগেই পরী তার সামনে এসে দাড়ায়, পরী মাটিতে লুটে পড়ে। ইজ্বা চিৎকার করে পরীকে নিজের বুকে আগলে বলে,

ইজ্বা- পরী, এটা তুমি কি করলে?

পরী- এটাই হয়তো আমার নিয়তি। ভালো থেক
পরীর প্রাণ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ইজ্বা যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে বলে

ইজ্বা- পরী তুমি আমাকে কখনো ছেড়ে যেতে পারো না? পরী!!!!

ফারাবি জারার হাত ধরে বলে,

ফারাবি- জারা আমার সোনা তুমি এখান?

জারা-ছিঃ তুই এতটা খারাপ ছিঃ আমি কিনা তোকে ভালোবেসে….

ফারাবি- সোনা সত্যি সত্যি আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি

জারা- তোর মুখে ভালোবাসা কথাটা মানায় না। ছিঃ আমার সম্পত্তিকে তুই ভালোবেসেছিস। সবটা শুনেছি আমি। সবটা

ফারাবি- ও শুনে ফেলেছিস ! এই এটাকে ধরে রাখ সব কটাকে আজ মেরে উড়িয়ে দেব। একদম প্রমাণ লোপাট। কেউ বলতে পারবে না কে খুন করেছে। হাহাহাহাহা।

জারা- তোকে আমি ভালোবেসেছিলাম, নিজেকে আমার ঘৃণা হচ্ছে। ওই মেয়েটা কি করেছিল তোর বল?

ফারাবি- জারা তুমি বাংলাদেশে?

জারা- আমার নাম তোর মুখ থেকে আর শুনতে চাইনা।

জারা চিৎকার করে কাঁদতে থাকে। ফারাবি জারাকে ধমক দিয়ে বলে,

ফারাবি- বল, কি করতে এসেছিস?

জারা- আমার আর ইজ্বার বিয়েটা ভেঙ্গে গিয়েছিল। কারণ ইজ্বা ওই যে দেখছিস একটা মিষ্টি মেয়ের নিথর দেহ পড়ে আছে তাকে ভালোবাসতো। তাই ইজ্বা বিয়েটা ভেঙ্গে দেয়। তাই আমি তোকে সারপ্রাইজ দিতে তিন দিনের জন্য বাংলাদেশে আসি। কিন্তু যখন তোর বাসায় যাই তোর দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী দেখি সেখানে কেউ থাকে না একটা পরিতক্ত বাড়ি ওটা। তারপর আমি তোর নাম্বার ট্যাক করে এই জায়গাটার ঠিকানা পাই এবং এখানে চলে আসি। এসে দেখি ছি:

জারা এক দলা থুতু ফারাবির মুখে ছুড়ে মারে। ফারাবি ভয়ংকর ভাবে রেগে জারার দিকে গুলি তাক্ করে এবং গুন্ডাগুলোকে ইজ্বাকে শেষ করার ইশারা দেয়, ইজ্বা পাথর হয়ে পরীর মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। গুন্ডাগুলো ইজ্বাকে মারার জন্য চুরি বের করে যেই আঘাত করবে তখনই পুলিশ চলে আসে। কিন্তু দুঃখজনক পরী তাদের ফোন করেছিল কিন্তু পরীই আর বেঁচে রইল না। ইজ্বা তার সব অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছে। পরীর মৃত্যুর শোকে সে একদম শক্ত হয়ে গেছে জমে শক্ত হয়ে যাওয়া যাকে বলে।

ছয় বছর পর
জারা রুম গোছাতে গোছাতে ইজ্বাকে ডাকে। ইজ্বা চোখ মেলে তাকিয়ে কোন সাড়াশব্দ না করে আবার শুয়ে পড়ে।
জারা রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে বলে,

জারা- উঠবে নাকি জল ঢালবো?
গল্পকথক- ইজ্বা কোল বালিশ জড়িয়ে ধরে বলে,
ইজ্বা- আরেকটু ঘুমাই প্লিজ।

জারা ইজ্বার চুলগুলো এলোমেলো করে বলে,

জারা- উফফফফ উঠোতো। তোমার কিচ্ছু মনে নেই নাকি?

ইজ্বা-কি?

জারা-আজ আমাদের মেয়ের বার্থডে।
ইজ্বা কম্বলটা সরিয়ে এক লাফে উঠে পা মুড়িয়ে বসে জারার কাঁধে মাথা রেখে বলে,

ইজ্বা- আজকের দিনটা কি ভুলার মতো জারা।
জারা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে,

জারা-পাঁচ বছর হলো, সত্যি সেই দিনটা ভুলার মতো নয়। আজও মনে পড়লে লোম শিউরে ওঠে। জারার চোখ দুটো ফাপসা হয়ে ওঠে। ভীজে কন্ঠে বলে,

জারা- এসবের জন্যে আমি দায়ী। আমি যদি ফারাবিকে ভালো না বাসতাম এসব হতো না। পরীর মতো একটা মিষ্টি মেয়ের প্রাণ যেত না।

ইজ্বা- দূর পাগলি, পরী ওইযে শেষের কথাটা বলেছিল, নিয়তি! হয়তো আমার আর পরীর মিলন হওয়াটা আমাদের হয়তো ভাগ্যে ছিল না।

একথাটা বলে ইজ্বা নিজের বুকে গভীর শূন্যতা অনুভব করে। তার চোখে লোনা জল টলমল করছে।

ইজ্বা জারার কাঁধ থেকে মাথা সরিয়ে জারার দিকে তাকিয়ে ক্ষীণকন্ঠে বলে,

ইজ্বা- সেদিন আমিও তো মরে যেতে পারতাম। কেন বাঁচলাম বলতো?

জারা ইজ্বাকে ঝাপটে ধরে বলে,

জারা-এরকম কথা আর বলবে ন।

ইজ্বা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চেয়ে তাকে জারার দিকে। দুজনের মধ্যেই একটা অনেক পুরানো ক্ষত। যার ব্যাথা তারা এখনো অনুভব করতে পারে বিশেষ করে ইজ্বা। জারার চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়ছে।
ইজ্বা জারার চোখ মুছতে মুছতে বলে,

ইজ্বা- কাঁদছো কেন পাগলী? পরী আমার ভালোবাসা আর তুমি হলে আমার সেই ভালোবাসা রাঙিয়ে দেওয়ার মাধ্যম।
জারা ইজ্বার বুকে মাথা রাখে। হঠাৎ ওদের মেয়ে গুটিগুটি পায়ে এসে ঠোঁট উল্টে বলে,

মেয়ে– এখানে বসে দুজনে প্রেম করছো? আর আমি এতক্ষণ ধরে ওয়েট করেই যাচ্ছি বাপু? আমার বার্থডে যে আজ তোমাদের মনে নেই? মনে হচ্ছে আজ আমার বার্থডে না তোমাদের ভেলেন্টাইস ডে।

জারা আর ইজ্বা লজ্জা পেয়ে যায়। ইজ্বা মেয়ের গাল দুটো টেনে বলে,

ইজ্বা- ওরে আমার ফাঁকা বুড়ি,

একথাটা বলে ইজ্বার মনে শূন্যতা ভর করে। পরীও এরকম দুষ্টুমি করত বাচ্চাদের মতো। পরী চলে যাওয়ার পর জারা আর ইজ্বার বিয়ে হয়। কারণ পরীর শোকে রুশেন আরা আর মাহবুব হোসেন ভীষণভাবে ভেঙ্গে পড়েন, লন্ডন থেকে জারা আর ইজ্বার ফ্যামিলির সবাই চলে আসেন রুশেন আরার কাছে। রুশেন আরা পরীর মতো করে নিজের মেয়ে ভেবে জারাকে ভালো বাসতে থাকেন তাই রুশেন আরার কথায় ইজ্বা আর জারার বিয়ে হয়। এবং ওরা বাংলাদেশেই থেকে যায়। বিয়ের একবছর পর জারার কোল আলো করে একটা মেয়ে আসে কিন্তু ইজ্বা আর জারার মেয়ে সেদিনই আসে যে তারিখে পরী না ফেরার দেশে চলে যায়। তাই জারা নিজেই আবেগপূর্ণ হয়ে তাদের মেয়ের নাম দেয় পরী।

জারা- দাড়া হচ্ছে তোর, কোথায় থেকে এসব পাকামু শিখছিস?

মেয়ে- ফাঁকামু আমি তোমার আর আব্বুর থেকে শিখেছি। মেয়ের সামনে বসে বসে প্রেম করছ, আবার বলছ কে পাকা বানিয়েছে।
জারা আর ইজ্বা দুজনেই হাসতে থাকে। কিন্তু এই হাসির মধ্যেও এক ধরনের শূন্যতা তাদেরকে খুঁকড়ে খুঁকড়ে মারছে। কিন্তু এই শূন্যতা তারা নিজেদের মধ্যেই লুকিয়ে রেখে ভালোবাসার অন্য একটা গল্প তৈরি করেছে। যেখানে শুধু ভালোবাসা নই দুজনে দুজনকে বোঝার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু পরী ওদের মধ্যে বেঁচে আছে এখনো বেঁচে থাকবে আজীবন।

সমাপ্ত।।
অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য করবেন অনেক অনেক ধন্যবাদ সবাইকে ❤

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here