পদ্মরাগ পর্ব- ০৫

0
309

#পদ্মরাগ
#আনু_ইসলাম_রেনী


– আমার খুব ভয় করে তোমাকে হারানোর।

জারা- এমন করে বলনা। আমি ঠিক কোনো ভাবে সব মেনেজ করে নেব দেখ। আর হ্যাঁ তোমাকে তো আমি ইজ্বার ছবি এন্ড ওর সম্পর্কে সব বলেছিলাম। কখনো যদি ওর সঙ্গে তোমার কুঅ্যাক্সিডেন্টলি দেখা হয়ে যায়। তুমি ওর সঙ্গে রুট ব্যবহার করবে না ও খুব ভালো আর ভদ্র ছেলে।

অপরদিকে পরী আর ইজ্বা ঝগড়া করতে করতে দুজনে কলেজে উপস্থিত হয়। পরীকে ইজ্বার গাড়িতে দেখে মৌমিতা চোখ কপালে তুলে পরীকে গাড়ি থেকে নামতেই ফিসফিসিয়ে বলে,
মৌ- পরশো দিনই তো তোরা শত্রু ছিলি। আজকে একদম স্যারের গাড়ি করে চলে এলি। ব্যাপার কি রে?

পরী-তুই জানিস মৌ এই এনাকন্ডাটা আমার খালাতো ভাই। আমি চিনতে পারিনি সেদিন। আগে তো একদম রোগা, আরশোলার মতো ছিল আর লন্ডনের হাওয়া পেয়ে আগের থেকে অনেক পাল্টে গেছে।

মৌ- ও আচ্ছা, স্যারের চোখ-মুখেএসব কি হয়েছেরে ?

পরী- আমাকে ক্লাস থেকে সেদিন ক্লাস থেকে বের করে দিয়েছিলেন না। আমি তো অভিশাপ দিয়েছিলাম। সেই অভিসাপের ফল এটা।

ইজ্বা পরীর কথাগুলো কোনোভাবে শুনতে পেয়ে মনে মনে বলে, কি ডেঞ্জায়াস মেয়ে রে বাবা। বলে তার অভিসাপে নাকি আমার এসব হয়েছে।
ইজ্বা তখন মুচকি হেসে পরীর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে,
ইজ্বা- পরীরানী তোমার যখন চুলকাবে হাত পা ফুলে যাবে তখন কি বলবে তখন কি বলবে ইজ্বা ভাইয়ার অভিসাপে এসব হয়েছে, কারণ তার বিছানায় যে আমি বিছুটি পাতার গুড়ো ছড়িয়ে এসেছিলাম তাইনা?

পরী ইজ্বার কথা শুনে হা করে তাকিয়ে ভাবে, আবির জানল কিভাবে?

ইজ্বা-, হা করে থেক না নর্দমার মশা মাছি ঢুকে যাবে।

পরী- ইজ্বা ভাইয়া আপনি এসব জানলেন কিভাবে? আমি কিচ্ছু করিনি। আর আমার চুলকাবে কেন?

ইজ্বা-এতগুলো প্রশ্ন এক সঙ্গে। তুই কি আমার ম্যাডাম নাকি, ভুলে যাস না আমি তোর স্যার।

এই বলে ইজ্বা বিলিয়েন হাসি দিয়ে চলে যায়।
ইজ্বা ক্লাশে ঢুকে

ইজ্বা-গুড মরনিং এভরি বডি।
সবাই -গুড মরনিং স্যার।
ইজ্বার প্রতি ক্রাশ খেয়েছে অনেকগুলো ছাত্রী তার মধ্যে একজন অরিনা, অরিনা মুখ বাড়িয়ে বলে, কেমন আছেন স্যার?

ইজ্বা -ভালো। আউট অফ কনট্যাক্সট ছাড়ি এবার।
পরী মৌমিতাকে কিছু একটা বলছিল, ইজ্বা ধমক দেয় পরীকে। পরী একদম চুপ হয়ে ব্যাগে মাথা গুঁজে থাকে।

একে একে সবার কাছ থেকে ইংরেজী বিষয়ে লজিক শুনে ইজ্বা যখন পরীর কাছে আসে দেখে পরী মুখ কলেজ ব্যাগে গুঁজে রয়েছে এখনো। প্রায় পঁচিশ মিনিট একই ভাবে বসে আছে।
ইজ্বা বিস্মিত হয়ে যায়। ভাবে মেয়েটার হলো কি? এখন তো ওর সারা ক্লাস মাথায় করা উচিত ছিল, চুলকানোর জ্বালায়।। পরীর চামড়া তাহলে কি গন্ডারের চামড়া। নাকি আমার ধমক খেয়ে শান্ত হয়ে বসে আছে।
পরী করিডোরে বিছুটি পাতার গুড়ো মুড়ানো যে কাগজটা করিডোরে ফেলে দেয়, তা পরী আর খুঁজে পায়নি কেননা তা করিডোরের একটা কোণায় পড়ে গিয়েছিল। আর সেখানে অন্ধকার ছিল তাই পরী দেখতে পায়নি। সকালের আলোতে ইজ্বা তা দেখে রাতের চুলকানোর কারণ আবিষ্কার করে।
ইজ্বা তার প্রতিশোধের জন্য পরীর কলেজের ড্রেসে ওই কাগজে মুড়ানো বিছুটির গুড়ো প্ল্যান মাফিক ছড়িয়ে দেয়।

কিন্তু ইজ্বা এখন পরীর চুপচাপ অবস্থা দেখে অবাক হয়।
ইজ্বা পরীকে ডাকে। কিন্তু কোনো সাড়া দেয় না।
সাড়া না পেয়ে কপট রাগ দেখিয়ে বলে,
ইজ্বা- কলেজ কি ঘুমানোর জায়গা?
কিন্তু ইজ্বার চিৎকারেও পরী সাড়া দেয়নি।

মৌমিতা তখন দাড়িয়ে বলে,
মৌ- স্যার ও ক্লাশে আসার পর থেকেই ওর সাড়া গায়ে চুলকাচ্ছিল। তারপর আপনার মতো মুখ, হাত, পা ফুলে গেল। স্যার আপনি যখন ধমক দিয়েছিলেন তখন ও বলছিল ওর শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আপনার ধমক খেয়ে সেই থেকে যে মাথা নিচু করেছিল আর ওপর করেনি। আমিও ডেকেছি কতবার।

ইজ্বা অজানা শঙ্কায় শিউরে উঠে। মৌমিতাকে বলে, তুমি সরে আস ওর পাশ থেকে। ইজ্বা পরীর কাছে গিয়ে পরীর মুখ ওপর করে পরীর এ অবস্থা দেখতে একদমই প্রস্তুত ছিলনা। পরীর হরিণ কালো চোখ দুটো আগুনের মতো লাল। একদম অচেতন অবস্থা। শ্বাস নিতে না পেরে পরী অচেতন হয়ে পড়েছে

পরীর এ অবস্থা দেখে ইজ্বা নিজেকে সামলাতে পারেনি। পরীর মুখে নিজের মুখ লাগিয়ে অক্সিজেন দিতে থাকে ইজ্বা। তারপর রেষ্ট রুমে পরীকে কোলে করে নিয়ে যায়।

চলবে…..

অবশ্যই গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here