#হলদে_প্রজাপতি
(প্রাপ্তমনস্কদের জন্য )
— অমৃতা শংকর ব্যানার্জি ©®
চৌত্রিশ
( আগের অধ্যায়গুলোর লিংক অধ্যায়ের শেষে দেওয়া হল)
মাস তিনেক হয়ে গেল বাবা-মা আমার কাছেই আছে ।
সেই কোন নরম ভোরে মৌটুসী পাখিগুলো যখন অশান্ত লেজ নাড়াতে নাড়াতে ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে ওড়াউড়ি করে , সেই তখন আমরা বাপ-বেটিতে মিলে প্রতিদিন প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে ষড়যন্ত্র করতে বেরোই। মানব সভ্যতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র । কল-কারখানা , টেকনোলজির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র । সব রকমের ষড়যন্ত্র । মানুষের বিরুদ্ধে যা যা করা যায়। আমরা তখন ভুলে যাই, আমরাও ‘মানুষ’ । মনে হয় যেন , প্রকৃতি পরিবেশের বিরুদ্ধে মানুষের মত ষড়যন্ত্র আর কেউ করেনি । আমরা তাই চুপি চুপি, আলগোছে প্রতিদিন সেই ষড়যন্ত্র ভেঙে ফেলার নতুন ষড়যন্ত্র করি।
এখন বর্ষাকাল । ভরা বাদর পেরিয়ে এসে কাটছাঁট হয়েছে তার আয়ুকাল । প্রকৃতির এই এক মজা , সে প্রতি বছর নিজের রূপ , রস , গন্ধ, যৌবন , নতুন করে সাজিয়ে গুছিয়ে নেয়। পৃথিবীর অবলা জীবদের মত বছর বছর বুড়িয়ে ওঠেনা । তাই প্রকৃতি চিরযৌবনা । যেমন বয়সন্ধিকাল আসে একটি মেয়ের জীবনে তাকে পূর্ণ নারী রূপে গড়ে তুলতে, তেমনই বর্ষাকাল আসে প্রকৃতিকে যুবতীর সাজে সাজিয়ে তুলতে । আকাশ মুখ ভার করে না থাকলে, প্রতিদিন আমরা প্রকৃতির সেই যুবতীর সাজ দেখতে বেরিয়ে পড়ি । প্রথম আলো ফোটা ভোরে । টিয়া পাখির একটা সবুজ ঝাঁক প্রতিদিন দক্ষিণ থেকে উত্তরের দিকে উড়ে যায়। তখন ঠিক সাতটা বাজে। হারানদা যখন নিচু হয়ে ঝুঁকে প্রতিটা গাছের হলদে হয়ে যাওয়া পাতাগুলো পরম যত্নে আঙুলের ভাঁজে ছিঁড়ে ছিঁড়ে জড়ো করে, আমরা বাপ-বেটি তখন ফিরে আসি। টগর লনে দিয়ে যায় দুটো চেয়ার , সাথে চা-টেবিল। তিন কাপ চা আসে । আমারটা সাদা, বাবার আর হারাণদার লাল। মা কখনো কখনো ইচ্ছে হলে আমাদের সাথে এসে বসে । সোঁদা মাটির গন্ধে ভিজে একসাথে সবুজের মধ্যে ডুবে বসে থেকে আমরা গরম পানিয়র কাপে চুমুক দিই ।
ইতিমধ্যে বাবার সঙ্গে আমার চা বাগানের শ্রমিকদের ভাবসাব হয়েছে । মেয়েরা কেউ কেউ ছোট ছোট দলে কাজ সেরে বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগে আমার বাংলোর চত্বরের মধ্যে ঢুকে, লনে উবু হয়ে বসে বাবার সঙ্গে গপ্পোসপ্পো করে যায়। আমি ঠিক যেমনটা চেয়েছিলাম, অথচ পেরে উঠিনি । একটা অদৃশ্য পর্দা নেমে আসত। বাবা কিভাবে এইটুকু সময়ের মধ্যে তা করে ফেলেছে । ওদের মতে, বুঢ়াবাবু মান্যি মানুষ। কথা কয়, বেশ লাগে, বোঝেন নি ? কার ছেলের জ্বর হয়েছে, কার ঘরের ঘরের চাল বর্ষার জল পেয়ে পচে উঠেছে, কার গরু বাচ্চা দিয়েছে, এইসব খবরাখবর দিয়ে ওরা বাবার কাছে শুনতে চায় , কলকেতায় পায়রার খুপড়ির মতো পিঠের ওপর চাপানো ঘরগুলোতে দাওয়া’ই যদি নেই, কচি ছোঁড়াছুঁড়িরা খেলে কোথায় ? ভিজে জামাকাপড়ই বা কোথায় শুকুত’ দেওয়া হয় শাওন-ভাদর দিনে , এইসব । ওদের মতে, গোবর দিয়ে তকতকে করে নেকানো একটা উঠান না থাকলে সে ঘর আবার ঘর নাকি ? আবার কখনো উৎসুক দুচোখ মেলে জানতে চায়, চান্দ-সদাগরের কথাটা আবার কইবেন ? আপনার মুখে বড্ড মানায় । অবশ্য বাবার কাছে গল্প শোনার সবচেয়ে বেশি আবদার করে পাতা। আস্ত ঠাকুরদার ঝুলি পেয়েছে ও একটা ।
তিনদিন ধরে একটানা বৃষ্টি হলো । নিম্নচাপের বৃষ্টি । এক টানা বৃষ্টিতে মনে মেঘ জমে। আমার জমে । আর কার কি হয় জানিনা । খারাপ ওয়েদারের জন্যই ঠান্ডা লেগে হল কিনা জানিনা, বাবার হঠাৎ করে একদিন জ্বর এলো । সর্দি, কাশি , জ্বর । প্রথমে ভেবেছিলাম সেরে যাবে । তারপর দেখলাম, দুটো দিন কেটে গেল, অথচ সারার লক্ষণ নেই। চিন্তা হলো। ইন্দ্রাশিষ বাবু বাড়িতে এসে বাবাকে দেখে ওষুধ দিয়ে গেলেন। দিন সাতেক জ্বর থাকলো । তারপর সেরে উঠলেও, শারীরিক দুর্বলতাটুকু বাবার রয়েই গেল । কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলেই হাঁপিয়ে ওঠে । একটানা বেশিক্ষণ বসে থাকতে পারে না । খাওয়া-দাওয়াও কমে গেছে । মাঝেমাঝেই বড় করে শ্বাস নেয় । ভালো লাগছিলো না বাবাকে এভাবে দেখতে। মা, আমি, দুজনেই চাইছিলাম কলকাতায় গিয়ে ডাক্তার দেখাতে । কিন্তু , বাবা যেতে রাজি নয়। বলছে, জ্বর তো সেরে গেছে । যেটুকু যা উইটনেস রয়েছে, আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে । তার জন্য ছোটাছুটি করা দরকার নেই । আসল কথা যেটুকু আমি বুঝেছিলাম, ডাক্তার দেখানোর ব্যাপারে কলকাতার দিকে একবার চলে গেলে বাবা বুঝেছিল, আবার এদিকে কবে আসা হবে তার ঠিক নেই। বাবা আসলে এখান থেকে যেতে চাইছিল না । বুঝেছিলাম সেটা। জোর করিনি আর । ইন্দ্রাশিষ বাবু দু-তিন দিন অন্তর অন্তর ঠিক একবার সময় করে বাবাকে এসে দেখে যেতেন। বাবা আজকাল আর মর্নিং ওয়াকে বের হতে পারে না । জবা , মালতি, লক্ষী , সন্ধ্যা, ছায়া’রা এসে নিজেরাই খানিক গল্প করে চলে যায়। বাবা ওদের সাথে খুব বেশি কথা বলতে পারে না । পাতার জন্য বরাদ্দ গল্পেও আজকাল টান পড়েছে। সারাদিনে আধখানা । পরের দিন বাকিটা। তবে ইন্দ্রাশিষ বাবু বাবার সাথে দেখা করতে এলে বাবা খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলে। শুধু আন্তরিকতা নয়, কোথায় যেন কি একটা আগ্রহ মিশে থাকে। আমি বুঝতে পারি। উনি পারেন কিনা জানিনা । মাঝে মাঝে আমাকে যেন ইন্দ্রাশিষ বাবুর ব্যাপারে কিছু একটা বলতে চায় বাবা । তবে এখনো কিছু বলেনি ।
একরকম স্রোতে চলে এসেছিল জীবনটা। ভাবতে শুরু করেছিলাম, এখানেই রেখে দেবো বাবা-মাকে । কিন্তু এখন আর তা ভাবার ভরসা পাচ্ছি না । মানুষ নিশ্চিন্তে কয়েকটা পা’ চলতে পারলেই ভাবে এমনি নিশ্চিন্তেই বুঝি জীবনটা কাটবে । হঠাৎ ছোট-বড় ঝাঁকুনিতে জীবন সে ভুল ভেঙে দেয় । সপ্তাহ তিনেক কেটে গেছে । এখনো বাবার পুরনো ছন্দে ফেরা হয়নি। সেপ্টেম্বর মাস চলছে। সামনের মাসে পুজো । বাবা বলেছে , এবার পুজোয় এখানেই কাটাবে । বেশ কিছুটা দূরে একটা বসতি আছে । সেখানে ছোট্ট করে দুর্গাপুজো হয়। জানিনা এখানে পুজোয় কেমন লাগবে । বাবার মাঝেমধ্যে অদ্ভুত খেয়াল চাপে বটে ।
একদিন সন্ধ্যাবেলায় আমায় বলল, কালকে মর্নিং ওয়াকে বেরোবো , বুঝলি ? সারাদিন মনটা ফ্রেশ থাকে।
— তুমি বেরোতে পারবে বাবা ? বেশিক্ষণ তো একনাগাড়ে হাঁটতে পারো না।
— যেটুকু পারবো , সেটুকুই হাঁটবো । তবে বেরোবো ।
ভালো লাগলো শুনে। মনে ভাবলাম , নিশ্চয়ই বাবা কিছুটা বেটার ফিল করছে । পরের দিন সকালে, মাঝে বেশ কিছুদিন বিরতির পর আবার বেরোলাম আমরা। তবে বাবা বেশিক্ষণ হাঁটতে পারল না। মিনিট পনেরো পরেই গুটি গুটি পায়ে ফিরে এলো। তবে ঘরে ঢুকলো না । ফেরার রাস্তায়, বাড়ির অল্প দূরে একটা শেড ট্রির নিচে বাঁশের তৈরি বেঞ্চের মতো করা আছে। সেখানে বসে পড়ল। আমিও বসলাম বাবার পাশে । কেমন যেন মনে হচ্ছে , কি একটা বলতে চায় বাবা ।
কিছুক্ষন পর বলল , তুই তোর জীবনটাকে নিয়ে কি ভাবছিস?
— কি ভাবছি ?
— হ্যাঁ আজ যেভাবে চলছে , সারাটা জীবন কিন্তু সেভাবে কাটবে না ।
— তাহলে কিভাবে কাটবে?
— একদিন আমিও থাকব না , তোর মা’ও না । সেদিন তুই একা হয়ে যাবি।
— এসব কথা এখন কেন বাবা ?
— বলতে হবে । এখনই হাই টাইম।
আমি চুপ করে রইলাম ।
বাবাও বেশ কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল,
— জেনারেলি মেয়েদের যে বয়সে বিয়ে হয় , সেই বয়সটা তোর অনেকদিন পেরিয়ে এসেছে। আমি তোকে বিয়ের জন্য রাজি করাতে পারতাম, বিয়ে দিতে পারতাম ইচ্ছে করলে।
এই কটা কথা বলে বাবা আবার চুপ করে গেল।
কিছুক্ষণ পর বলল,
— সব বাবা-মা’ই তার মেয়ের বিয়ের জন্য মনে মনে একটা টেনশনে ভোগে । চাপা চিন্তা। আমারও হয়েছে । আমি জানি, আমি যদি তখন তোকে জোর দিয়ে বলতাম , তুই বিয়ে করছিস । কিন্তু তোর বিয়ের সম্বন্ধ করতে গিয়ে সত্যি কথা বলতে কি, আমি এমন একজন ছেলেকেও দেখিনি , যাকে দেখে মনে হয়েছে, তুই অনিচ্ছায় জোর করে বিয়ে করলেও, বিয়ে করার পরে ভালো থাকবি।
আবার চুপ করে গেল বাবা ।
বেশ কিছুক্ষন পর বলল ,
— বিয়ে মানে একচুয়ালি কি জানিস ? এডজাস্টমেন্ট । এটা থাকতেই হবে । ভালোবাসা, বিশ্বাস, আর যা-ই থাকুক, তার সাথে জানবি এডজাস্টমেন্ট মাস্ট । তোর মার সাথে আমার মতের মিল হয়েছে খুব কম জায়গায় । এডজাস্টমেন্ট। সেটাই করেছি।
আবার চুপ করে গেল বাবা ।
আমি কিছুক্ষণ পর বললাম , তুমি কি আমাকে কিছু বলতে চাইছ বাবা ?
একটা ছোট দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাবা বলল ,
— আজকাল মনে হয়, তোর বিয়ে দেওয়ার সময় জোর করেই বিয়েটা দেওয়া উচিত ছিল । বাবা হয়ে সেটা আমার কর্তব্য ছিল । আমি সেটা করিনি । তোর ওপরে কোনো দিনই কি জোর করে চাপিয়ে দিয়েছি কিছু ? তবে এইটা মনে হয় চাপানো উচিত ছিল ।
অস্থির গলায় বললাম , এসব আজকে হঠাৎ করে কি বলছ বাবা ? যেখানে আমার নিজের মনকে জোর করে ঠেলে বিয়ের পিঁড়িতে নিয়ে গিয়ে ফেলতে হতো, সেটা বুঝি খুব ভালো হতো ? তার রেজাল্ট ?
— কাজে লাফ দিলে, তবে তো তার রেজাল্ট পাওয়া যেত। আমিও সেই ভাইটাল কাজটা করিনি , তোরও সেই রেজাল্টটা দেখার ইচ্ছে ছিল না ।
— কিন্তু, আজকে কেন হঠাৎ-
— না, হঠাৎ নয় । আজকে তো আর তোর অমত নেই মা-
চমকে বাবার মুখের দিকে তাকালাম,
— মানে !
— ইন্দ্রাশিষের সঙ্গে আজকে তোর যদি একটা বিয়ের কথা ওঠে , তোর কি তাতে অমত হবে ? নিশ্চয়ই হবে না । আমি জানি হবে না ।
এক ঝাঁক বাঁশপাতি সামনের ইলেকট্রিক তারটায় দোল দিয়ে এসে বসলো । সেগুলোর দিকে এক ঝলক তাকিয়ে নিয়ে চোখ নামালাম ।
বাবা বলল, বলি তাহলে ?
সারা শরীরে কেমন যেন বিদ্যুত খেলে গেলো ।
— মানে ! বাবা, কাকে কি বলার কথা বলছো তুমি ?
— ইন্দ্রাশিষকে । এক্ষেত্রে সরাসরিই বলতে হবে । তা ছাড়া উপায় নেই । অনেক ভেবেছি আমি । ওর মতটা না জেনে তো ওর মাকে গিয়ে বলা যায়না । সেভাবে প্রস্তাব করা যায় না।
আমি চমকে উঠে দাঁড়ালাম , এসব কি বলছ বাবা ! তিনি .. তাঁকে.. না না.. সেকি.. , তা কি করে হয়? তিনি তো তেমন কিছু-
— না বললেও আমি বুঝেছি । ওটুকু আমি বুঝতে পারি । তুই এক্সাইটেড হয়ে পরিস না । শান্ত হয়ে বোস । বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছি তোকে বলি কথাটা । আমি আসলে সারাজীবনে ভেবেছি অনেক বেশি, কাজ করেছি কম । সেই কারণেই শেষ জীবনে আজকে এসে এতোখানি দুঃশ্চিন্তা মাথায় করে বয়ে নিয়ে বেড়াতে হচ্ছে । কিন্তু আমি ঠিক বুঝেছি, তোদের দু’জনকেই বুঝেছি। এই প্রপোজাল উঠলে, তোদের দুজনের কারোরই কোন অমত থাকবে না।
অস্থির হয়ে উঠলাম ।
বললাম , কিন্তু বাবা তিনি তো তেমন কিছু কখনো-
আবার একটা ছোট দীর্ঘশ্বাস পড়ল বাবার।
— না , আমি বলছি না একেবারে যে আমার বোঝার ভুল হতে পারে না । হয়তো ইন্দ্রাশিষের অমত হতেও পারে । তাহলেও সেটা জানাটা প্রয়োজন । ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয়ে যাওয়ার প্রয়োজন আছে।
— কেন প্রয়োজন , কিসের প্রয়োজন, সেটাইতো আমি বুঝতে পারছি না বাবা।
— প্রয়োজনটা হলো , তুই চাস ।
— আমি চাই !
থমকে রইলাম কিছুক্ষন ।
তারপর বললাম, এমনটা তোমার হঠাৎ কেন মনে হল বাবা?
বাবা এবার অল্প একটু হাসলো।
বলল , হঠাৎ মনে হয়েছে কে বলেছে তোকে ? তাহলে আমি এতগুলো দিন সময় নিতাম না এই কথাটা তোকে বলার জন্য ।
বাবার পাশে গিয়ে বসলাম । বাবা আমার শুকনো মুখটার দিকে একবার তাকে নিয়ে বলল , এটা আমাকে বলতেই হবে মা । তুই এটা নিয়ে চিন্তা করিস না । আমার ওপরে ছেড়ে দে ।
গলা শুকিয়ে এল আমার । বললাম, কিন্তু বাবা এরকম সাডেন প্রপোজাল – , তিনি যদি কিছু মাইন্ড করেন ? অসন্তুষ্ট হন ? তাহলে ?
— তাহলেও বলতে হবে। সেটাও জানা প্রয়োজন ।
— তেমনটা হলে তুমি কি ভীষণ ছোট হয়ে যাবে তাঁর কাছে।
— ছোট হয়ে যাওয়ার আমাদের এই সামাজিক ধ্যান-ধারণাগুলো ভুল । এগুলো ভেঙে আমরা বের হতে পারি না । তবে বেরোনো উচিত । আর পাঁচটা সিম্পল প্রপোজালের মতই এটাও একটা প্রপোজাল । এটাকেও আমাদের সিম্প্লি নিতে শিখতে হবে। যেকোনো প্রপোজালের যেমন ‘হ্যাঁ’ ‘না’ দুই আছে, বিয়ের প্রপোজালের ক্ষেত্রেও সেটা থাকতে পারে । তারমধ্যে অসম্মানের কিছু নেই। একটা বিয়ের প্রপোজাল ‘না’ করে দেওয়ার পেছনে হাজার একটা কারণ থাকতে পারে ।
আরো কিছু যেন বলতে যাচ্ছিল বাবা, কিন্তু হঠাৎ করেই চুপ করে গেল।
কিছুক্ষণ পর বলল, নাহ্ , চল বাড়িতে ফিরে যাই ।
আমার ভেতরের অস্থিরতাটা বাড়ছিল ।
বললাম , তুমি কি সত্যিই সেরকম কিছু বলবে বাবা তাঁকে?
— হ্যাঁ বলবো । শেষ জীবনে এসে জীবনের এই মস্ত বড় ভুলটা শোধরানোর এই একটা চান্সই আমি পেয়েছি। আর যে কখনো পাবোনা, তাও বুঝেছি । তোদের যদি সত্যিই বিয়েটা হয়, তুই খুব ভালো থাকবি মা।
বাবা ডান হাতটা বাড়িয়ে আমার মাথার পেছন থেকে রাখল ।
বলল, ইন্দ্রাশিষ সোনার টুকরো ছেলে । ওর মনটা বড় । হয়তো একটু খামখেয়ালি। রোগী দেখে বেড়ায় । কাজ-পাগল । কিন্তু আলটিমেটলি একটা গোল্ডেন হার্ট আছে । আর তোকে ও যথেষ্ট সম্মান করে । সেটা আমি দেখেছি ।
হাতটা আমার মাথার উপর থেকে সরিয়ে নিয়ে সামনের দিকে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে বাবা বলল,
— আমি কখনো বিশ্বাস করিনি একজন মানুষকে তার অমতে জোর করে বিয়ে দিয়ে তাকে ভবিষ্যতে সুখী দেখতে পাওয়া যায় । সে কারণেই তোকে কখনো ওই ব্যাপারে জোর করিনি । আজকেও হয়তো শুধু আমার একারই যদি ইন্দ্রাশিষকে ভালো লাগতো, বুঝতাম তুই পছন্দ করিস না , তাহলে জোর করতাম না । কিন্তু তা যখন নয়, তোর যখন ইন্দ্রাশিষকে পছন্দ, তখন এই ব্যাপারে সামনে এগোনোই যায় । না এগোলে সেটা অন্যায় হবে । জীবন সুযোগ বারবার দেয় না । একজন সত্যিকারের ভালো মানুষকে লাইফ পার্টনার হিসেবে পাওয়ার সুযোগ হয়তো জীবনে আর কখনো ফিরিয়ে দেবেনা। তোর সাথে কথা বলে নিলাম । একবার তোর মায়ের সঙ্গে কথা বলতে হবে । তারপর ইন্দ্রাশিষকে বলব । তারপরে তার মা’কে ।
— বাবা, তুমি কি ধরেই নিচ্ছ তিনি এ প্রস্তাবে রাজি হবেন ?
বাবা বেশ অন্তর্মুখী দৃষ্টিতে আমার চোখের দিকে তাকাল কয়েক সেকেন্ড ।
তারপর বলল , সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার ভয় পাস না । যে সম্পর্কগুলো জীবনে স্টে করার থাকে, সেগুলোতে সামনে এগিয়ে যেতেই হয় । সেগুলো কখনো ভাঙ্গে না ।
বাবার চোখের দিকে একবার চোখ তুলে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম । কেমন যেন মনে হলো চুরির দায়ে ধরা পড়েছি। সেই অনেক বছর আগের সম্পর্ক ভাঙা-পড়া, মন নিয়ে পুতুল-খেলা, খেলাঘরের রান্নাবাটি সংসার, মনে মনে মন-কলা – আরো কত কি ! সেদিন বাবার উঁচু মাথাটা আমার জন্য নুয়ে পড়েছিল । বড় চিন্তা হয় , সারাজীবনে আর যেন কখনো তেমন কিছু না করে ফেলি, যাতে করে আমার জন্য আবার বাবাকে কখনো সেরকম কোন পরিস্থিতিতে পড়তে হয় । ছোট-বড় যাই হোক , আমি যেখানে জড়িয়ে , আমার হিতাহিত যেখানে জড়িয়ে, শুধুমাত্র আমার জন্যে বাবার মাথা যেন হেঁট না হয় কখনো । আমার যেমন তেমন । তবে আজ থেকে অত বছর আগে বাবার সেই হেঁট হয়ে যাওয়া মাথাটা তুলে ধরতে পারি , এমন কোন দৃষ্টান্তমূলক কাজ তো করে উঠতে পারিনি । পরিচিতি , সন্মানও গড়ে তুলতে পারিনি । নিজের কাজেও তেমন কোন দলিল রাখিনি । তাই আর চাইনা । বাবার ছোট্ট কোনো অপমানের কারণও যেন নিজেকে না হতে হয় ।
ক্রমশ..
©®copyright protected
এক-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/978775899579141/
দুই-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/980083989448332/
তিন-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/981378992652165/
চার-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/983543179102413/
পাঁচ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/986002805523117/
ছয়-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/987404668716264/
সাত-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/989485091841555/
আট-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/991102821679782/
নয়-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/993099491480115/
দশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/994279738028757/
এগারো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/995634347893296/
বারো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/998832147573516/
তেরো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1000733104050087/
চোদ্দো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1002718000518264/
পনেরো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1004549847001746/
ষোল-
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1007202950069769&id=248680819255323
সতেরো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1009015169888547/
আঠারো-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1011129543010443/
উনিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1013312572792140/
কুড়ি-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1015118655944865/
একুশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1017814589008605/
বাইশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1019125995544131/
তেইশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1021798458610218/
চব্বিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1024967944959936/
পঁচিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1031476470975750/
ছাব্বিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1034632350660162/
সাতাশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1038754843581246/
আঠাশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1046967802759950/
উনত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1048831039240293/
ত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1051696202287110/
একত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1053606998762697/
বত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1060747584715305/
তেত্রিশ-
https://www.facebook.com/248680819255323/posts/1064517157671681/
ছবি : সংগৃহীত