হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ২৪)

0
1879

#হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ২৪)
#নাহার
·
·
·
সময় সাড়ে এগারোটা। আজকে একটু বেশিই কুয়াশা পড়ছে। সাথে হার কাঁপানো ঠান্ডা। নিরাদের এলাকায় ঠান্ডা তেমন একটা বুঝা যায় না। তবে আজ যেনো সব নিয়ম কানুন ভেঙে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা পড়ছে। নিরা বোরকার উপর লং সুয়েটার পড়েছে। কাধে ব্যাগ নিয়ে কলেজের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেছে। সেদিনের কলেজে ওয়াশরুমের ঘটনার পর থেকে আর তেমন কিছুই হয়নি। কৌশিকের বিয়ের কৌতুহলে প্রায় সব মাথা থেকে বেরিয়ে গেছে নিরার।

কলেজের ক্লাস শেষে বাসায় চলে আসার উদ্দেশ্যে গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে রিকশা খুজছে নিরা। আজ নিরার কোনো বান্ধুবি আসেনি। নিরার কয়েকজন ক্লাসমেট কলেজের পাশের রেস্তোরাঁয় যাচ্ছিলো। নিরাকেও বলে যেতে। কিন্তু নিরা যেতে চাইছে না। অনেক জোর করে তারা সবাই নিরাকে নিয়ে গেছে।

রেস্তোরাঁর ভেতরে বসে আছে সবাই। একটা গোল টেবিলে বসেছে। খাবার অর্ডার দেয়া শেষ। অর্ডার আসতে দেরি হবে তাই তারা একটা গেম খেলবে সেই প্লেনিং করলো। প্রথমে সবাই নিরার থেকে শুরু করবে বলে জেদ ধরেছে। একজন ক্লাসমেট বললো,
— নিরা গেমটা প্রথমে তোমার থেকে শুরু হবে।

— কিন্তু গেমের নাম কি?

— সারপ্রাইজ।

অন্য একজন হেসে বললো,
— আরে এটা দিয়া বানিয়েছে গেমটা। তবে সোজা সাপটা গেম। তুমি চোখ বন্ধ করবে আমরা তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো। নাউ ক্লোজ ইউর আইস।

— কিন্তু

— কোনো কিন্তু না।

নিরার চোখ ধরে ফেলে। তারপর তারা একে অপরকে ইশারা করে এবং নিরাকে চোখ খুলতে বলে। নিরা চোখ খুলে আশ্চর্য হলো। তারা তাকে এইরকম সারপ্রাইজ দিবে এটা কল্পনাও করেনি। কিন্তু তারা তুহিনকে পেলো কোথায়? তুহিনের সম্পর্কে তারা কিভাবে জানে? নিরার সামনের টেবিলে তুহিন বসে আছে। ঠোঁটে একটা রহস্যময়ী হাসি। নিরার এতোটাই অবাক হয়েছে যে কি বলবে বা কি করবে বুঝতে পারছে না। তখন নিরার মোবাইলের টোন বেজে উঠলো। মোবাইল হাতে নিয়ে দেখলো স্ক্রিনে রাফিন লিখা। রাফিন মেসেজ দিয়েছে। মেসেজ ওপেন করে আরো অবাক হলো। মেসেজে লিখা
” দুই মিনিটের মধ্যে বাহিরে আসো। রেস্তোরাঁর সামনের গাড়িতে উঠে বসো। আমি ভেতরে আসলে আজকে খারাপ কিছু হয়ে যাবে।”

নিরা আর একমুহূর্ত দেরি না করে সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। রেস্তোরাঁর সামনের গাড়িতে উঠে বসে। ভেতরে তার ডাক্তার সাহেব বসা ড্রাইভিং সিটে। নিরা রাফিনের দিকে একবার তাকালো। আবার চোখ নামিয়ে নিলো ভয়ে। রাফিনের চোখে রাগ, ক্ষোভ, হিংস্রতা। এই রাফিনকে সে আগে কখনো দেখেনি। এতোটা রাগী চেহারায় দেখেনি আগে। রাফিন রেগে দাঁতে দাঁত চেপে নিরার দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলো,
— তুহিনের সাথে রেস্তোরাঁয় কি করছিলে?

নিরা কিছু বলছে না। চুপ করে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। রাফিনের রাগ আরো বেড়ে গেলো। আবারো জিজ্ঞেস করলো,
— তুহিনের সাথে ভেতরে কি করছিলে? কি কথা বলছিলে তোমরা? আন্সার মি ডেম ইট। ( চিল্লিয়ে)

নিরার নিরবতা আগুনে ঘী ঢালার মতো ছিলো। গাড়ির ভেতরের এয়ার ফ্রেসনার এক ঘুসিতে ভেঙে ফেলে। নিরা ভয়ে কেঁপে উঠে। রাফিন আরো রেগে গেছে। সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়। খুব ফাস্ট ড্রাইভ করছে। রাগে চোখ লাল হয়ে আছে। চোয়াল শক্ত। শিরায় উপশিরায় রক্তে যেনো আগুন ধরে গেছে। একটা নিরিবিলি জায়গায় গাড়ি থামে। রাফিন বের হয়ে যায়। গাড়ির দরজা খুব জোরে ধাক্কা দিয়ে বন্ধ করে। নিরা ভয়ে আবারো কেঁপে উঠে। নিরার পাশের দরজা খুলে টেনে বের করে গাড়ির সাথে চেপে ধরে। রাগে চিৎকার দিয়ে জিজ্ঞেস করে,
— কি করছিলি তুই ওই ছেলের সাথে? এতো কিসের ভাব তোর? বল আমাকে। আমাকে তোর ভালো লাগে না? হুম? এত অপমানের পরও কিভাবে তোর ওই ছেলের সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করে বল আমাকে।

এক হাতে নিরার গাল চেপে ধরে জিজ্ঞেস করে,
— এই তুই এতো বেহায়া কেন? তোর লাজ লজ্জা বলতে কিছু নেই? বারবার মানা করার পরেও কেন যাস ওই ছেলের কাছে? আমাকে এখন অপছন্দ হয় তোর? বল?

নিরা চোখ বন্ধ করে ফেলে। চোখ থেকে পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়লে নিরাকে রাফিন ছেড়ে দেয়। রাগের বসে গাড়ির গ্লাসে ঘুসি মারে। গ্লাস ফেটে যায় সাথে রাফিনের হাতও কেটে যায়। গলগল করে রক্ত ঝরছে হাত থেকে।সেদিকে খেয়াল নেই তার। রাফিন এদিক সেদিক পায়চারি করে পাশের বেঞ্চে বসে পরে।

কিছুক্ষণ পিনপতন নীরবতা ছিলো সেখানে। নিরা গাড়ির ভেতর থেকে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে রাফিনের পাশে বসে। তুলায় সেভলন রাফিনের হাত নিজের হাতে নেয়। রাফিন ফিরে তাকায়। কিছু বললো না। চুপ করে আছে। নিরা আলতো হাতে কাটা স্থান সেভলন দিয়ে পরিষ্কার করে দেয়। তারপর ব্যান্ডেজ করে দেয়। রাফিন এখনো চুপ করে বসে আছে। ফাস্ট এইড বক্স গাড়িতে রেখে আসে। আর নিজের ব্যাগ থেকে টিস্যু নিয়ে আবার রাফিনের পাশে বসে।

নিরা তার ডাক্তার সাহেবের দিকে ঘুরে বসে। কপালের উপর থেকে চুল সরিয়ে পুরো মুখের ঘাম মুছে দেয়। রাফিনকে অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছে। মনে হচ্ছে এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি নিরার কাছে চলে এসেছে। বাসায়ও যায়নি। রাফিন চোখ বন্ধ করে বসে ছিলো এতক্ষণ। নিরা এবার বললো,
— আপনি আমাকে তুহিনের সাথে দেখে যতটা অবাক হয়েছেন আমিও তুহিনকে আমার সামনে দেখে ততটাই অবাক হয়েছি। আমরা ক্লাসমেট সবাই সেখানে খেতে গেছিলাম। অর্ডার আসতে দেরি বিধায় একটা গেম খেলছিলাম। কিন্তু তুহিন ওখানে কেনো? কিভাবে? কিসের জন্য? এলো আমি জানি না। সত্যি আমি জানি না। আমি ওকে ডাকিনি৷ সত্যি বলছি। বিশ্বাস করুন।

নিরা ছলছল চোখে রাফিনের দিকে তাকিয়ে আছে। রাফিনের চোখে মুখে এখন কোনো রাগ নেই। রাফিন সামনের দিকে তাকিয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। নিরার বাম হাত টেনে নিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে। নিরার কাধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নেয়। এভাবে আরো কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে ছিলো দুইজন। রাফিন চোখ বন্ধ করেই বললো,

— তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো বলে সরাসরি এয়ারপোর্ট থেকে তোমার কলেজে গেছিলাম। রাস্তায় দেখলাম তুমি রেস্তোরাঁয় যাচ্ছো। গাড়িটা ঘুরিয়ে এনে রেস্তোরাঁয় ঢোকার সময় তুহিনকে তোমার সামনে দেখে রেগে গেছিলাম। মুহূর্তেই প্রচন্ড রাগ উঠে গেছিলো। ওখানে সিনক্রিয়েট হবে তাই বাইরে এসে তোমাকে মেসেজ দিয়ে বললাম বাহিরে আসতে।

নিরার কাধ থেকে মাথা তুলে নিরা কোলে মাথা রেখে বেঞ্চের উপর শুয়ে পড়ে রাফিন। নিরার বাম হাত এখনো জড়িয়ে ধরে রেখেছে। ডান হাত টেনে চুলের ভাজে ঢুকিয়ে বললো,
— বিলি কাটো আমার চুলে।

রাফিন চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। নিরা বিলি কাটছে আর একটু পরপর নড়ে চড়ে বসছে। রাফিন আবার বললো,
— জানো কতটা ভয় পেয়েছিলাম আমি। আমি ভাবলাম তুমি আবার তুহিনের সাথে।

একটা গভীর নিঃশ্বাস নিলো। আবার বললো,
— তোমাকে আমি হারাতে চাই না নিরুপাখি। পেয়ে হারানোর বেদনাটা অনেক তীব্র। তোমাকে আর কখনোই হারাতে দিবো না। একেবারে বন্দী করে রাখবো বুকের সিন্দুকে। আর তুমি যদি নিজ থেকে ছেড়ে যেতে চাও পা ভেঙে ঘরে বসিয়ে রাখবো। তাই আমি বেঁচে থাকতে অন্য কোনো ছেলের কথা মাথায় আনার চিন্তাও করো না। নাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না। মাইন্ড ইট। তুমি শুধু আমার। শুধুই আমার।

নিরা চুপ করে শুনছিলো। রাফিন চোখ খুলে নিরার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
— তুমি এতো নড়ছো কেনো?

— কাতুকুতু লাগছে আমার।

রাফিন কিছুক্ষণ নিরার দিকে তাকিয়ে থেকে ফিক করে হেসে দিলো। চোখে মুখে দুষ্টামি নিয়ে নিরার দিকে তাকায়। নিরা এখনো নড়ছে। একটা শয়তানি বুদ্ধি মাথায় এলো রাফিনের। নিরার কোমড় শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কখনো নাক ঘষছে আবার ফু দিচ্ছে আবার খোচা দাড়ি দিয়ে ঘষে দিচ্ছে নিরার মেদহীন পেটে। নিরা রাফিনকে ঠেলে উঠিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। রাফিনকে বললো,
— অসভ্য। ব্যাংকক গিয়ে নিজের দেশের কালচার ভুলে গেছেন আপনি?

নিরা গাড়ির লুকিং গ্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে হিজাব ঠিক করছে। রাফিন পেছন থেকে কোমড় জড়িয়ে ধরে বলে,
— আমার তো আর দুই তিনটা প্রেমিকা নেই যে তাদের সাথে অসভ্যতা করবো। তুমি আছো তাই তোমার সাথেই করছি।

নিরা রাফিনের দিকে তাকালে রাফিন বাকা হাসে। কিছুদূর সামনে এগিয়ে যায়। হাত ধরে হাটছে দুইজন। এই জায়গাটা প্রায় শুনশান থাকে। নিরা হুট করে বললো,
— আচ্ছা আমরা পা খুলে হাটলে কেমন হয়।

রাফিন হেসে দেয়। হাসতে হাসতে সেখানে বসে যায়। নিরা একহাতে মুখ চেপে ধরে। কি বলতে কি বলে ফেললো। নিরা লজ্জা পেয়ে কিছুটা সামনে চলে যায় হাটতে হাটতে। রাফিন হাসি থামিয়ে দৌড়ে আসে। দুইহাত পেছনে নিয়ে লম্বা লম্বা পা ফেলে নিরার সাথে হাটছে। হাসি হাসি মুখ করে বললো,
— ঠিক করে বলো তখন কি বলতে চাইছিলে?

— জুতা খুলে হাটার কথা বলতে চেয়েছিলাম। ভুল বশত পা খুলে হাটবো বলে ফেলেছি।

রাফিন হাসছে। নিরা অপলক তাকিয়ে দেখছে সেই হাসি। এই হাসিতে নিরা বারবার ঘায়েল হয়। তার ডাক্তার সাহেব হাসলে হাসির সাথে চোখ দুটো জলজল করে। রাফিন হাসি থামিয়ে দেয়। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিরার দিকে নিক্ষেপ করলে নিরা লজ্জা পায়। লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে মুচকি হাসে। রাফিন নিরার একটু সামনে এগিয়ে এসে বললো,
— প্রিয়তমা যখন লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে মুচকি হাসে এই দৃশ্যটা একজন প্রেমিকের কাছে ভয়ংকর সুন্দর দৃশ্য হয়ে উঠে। পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য এটা লজ্জাবতী।

নিরা আরো লজ্জা পায়। মুখ লুকাতে উলটো দিকে ফিরে দাঁড়ায়। রাফিন ঠোঁট কামড়ে হাসে। নিরার সামনে এসে দাঁড়ায়। আবার বললো,
— এভাবে নজর ফিরিয়ে নিও না আমার লজ্জাবতী। তোমার এই নজর ফিরিয়ে নেয়াতে আমি বারবার শতবার ঘায়েল হই। তা কি তুমি বুঝো? আমার লজ্জাবতী! আমার লাজুকলতা!

নিরা কিছু বললো না। চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ খুলে যদি দেখে রাফিন তার লজ্জামাখা চেহারা দেখে হাসছে তাহলে লজ্জায় সে মরে যাবে। তাই চখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। রাফিন নিরার কানে ফিসফিস করে বললো,
— ভালোবাসি।

নিরার হার্টবিট বেড়ে গেছে। একমুহূর্তের জন্য মনে হচ্ছে সে স্বপ্নের দুনিয়ায় আছে। ঠোঁট কাপছে সাথে চোখের পাতাও। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। বুকের ভেতরে ঢিপঢিপ এখনো চলছে। রাফিন এক আঙুলে নিরার থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করে আবার বললো,
— ভালোবাসি নিরুপাখি।

নিরা চোখ খুলে রাফিনের দিকে তাকায়। এই চোখে সে তার জন্য অজস্র ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছে। নিরা লজ্জায় নুইয়ে পড়ে রাফিনের বুকে। রাফিন শব্দ ছাড়াই হাসে। পরম যত্নে আগলে ধরেছে তার প্রেয়সীকে।

——————————————————————————–
সূর্যের রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। নিরা এবং রাফিন একটা জায়গায় বসেছে। হাটতে হাটতে ক্লান্ত তারা। নিরা অভিমানী সুরে বললো,
— আপনি তখন আমাকে অনেক বকেছেন।

— আচ্ছা তাই।

— হ্যাঁ। গাড়ির সাথে চেপে ধরেছেন। আবার গাল চেপে ধরেছেন। আমি ব্যাথা পেয়েছি।

— সরি বাবু।

নিরা এবার হুংকার দিয়ে বললো,
— বাবু? আমাকে কোন দিক থেকে বাবু লাগে হ্যাঁ। আবার সরি বলছেন। আপনার সরি আপনার কাছে রাখেন।

— আচ্ছা ঠিকাছে। আমার কাছেই রেখে দিলাম। তুমি তো নিবে না তাই।

নিরা কপাল কুচকে, চোখ ছোট ছোট করে, কোমড়ে হাত দিয়ে গাল ফুলিয়ে রাফিনের দিকে তাকায়। রাফিন নিরাকে দেখে হেসে দেয়। নিরা তেড়ে রাফিনের সামনে আসলে রাফিন উঠে দৌড় দেয়। একটু সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে যায়। নিরা আবার অভিমানী সূরে ঠোঁট ফুলিয়ে বলে,
— আপনি আমাকে তুই করে বলেছেন।

রাফিন কপাল চুলকে বললো,
— ওহ হ্যাঁ। তাই তো। আসলে তখন রেগে ছিলাম৷ তাই বলে ফেলেছি।

নিরা রেগে রাফিনের সামনে যায়। শার্টের কলার শক্ত করে ধরে রাফিনের ঠোঁটের নিচে কামড় বসায়। রাফিন শক্ত হয়ে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর নিরা ছেড়ে দেয়। কামড়ের জায়গায় তাকিয়ে আতকে উঠে। ভয়ে ভয়ে রাফিনের চোখের দিকে তাকায়। কাদো কাদো হয়ে বললো,
— আমি এমনটা চাইনি। বিশ্বাস করুন ডাক্তার সাহেব।

কামড়ে দেয়া জায়গায় হাত দিয়ে ঘষছে নিরা। আর বারবার বলছে সে এমনটা চায়নি। ভুল বশত হয়ে গেছে। আচমকা রাফিন নিরার গালে শব্দ করে চুমু খায়। নিরা স্ট্যাচু হয়ে যায়। রাফিন বত্রিশ পাটি দাত বের গগন কাঁপানো হাসি হাসে। নিরার কানের কাছে এসে বললো,
— টিট ফর ট্যাট।

নিরা দৌড়ে চলে আসে। গাড়িতে এসে বসে পরে। একটুপর রাফিন আসে। ড্রাইভিং সিটে বসে নিরার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। গাড়ির ভেতরের লুকিং গ্লাসে দেখে নিরার দিকে তাকিয়ে বললো,
— নিরুপাখি এটা তুমি কি করলে? এখন আমি সবার সামনে কিভাবে যাবো বলো। এই কামড় দাগ দেখলে যে কেউ সন্দেহ করবে। বাসায় কিভাবে ঢুকবো এখন আমি?

নিরা হেসে হেসে বললো,
— টিট ফর ট্যাট।

— আরেব্বাস।

——————————————————————————–
বাড়িতে এসে নিরা দৌড়ে উপরে উঠে যায়। রাফিন মুখে মাস্ক লাগিয়ে ভেতরে ঢুকলো। সবার সাথে কথা বলে। মিসেস তানজুম রাফিনের মামি তাকে জিজ্ঞেস করলো,
— কিরে বাবা তোর কি কিছু হয়েছে?

— কেন মামি?

— ঘরের ভেতরেও এভাবে মাস্ক পরে আছিস তাই।

— না মানে আসলে। তেমন কিছু না।

কৌশিক তীক্ষ্ণ চোখে রাফিনকে দেখছে। রাফিন সবাইকে এড়িয়ে কোনোমতে উপরে উঠে এলো। সিড়িতে এসে মাস্ক খুলে বিড়বিড় করে বললো,
— নিরুপাখি তুমি আমাকে মুখ দেখানোর লাইক ছাড়লে না। হাহ।

কৌশিক পেছন থেকে বললো,
— কিরে মিয়া কাহিনি কি বল।

রাফিন কৌশিকের দিকে তাকায়। কৌশিক চোখ ছোট ছোট করে রাফিনের ঠোঁটের নিচের কামড়ের জায়গার দিকে তাকিয়ে আছে। রাফিন চেচিয়ে বললো,
— এমনে চায় আছোস কেন?

— কিরে মিয়া তোমার এখানে এটা কি?

— তোর বোন জংলি বিল্লী কামড় দিছে।

কথা বলতে বলতে তারা রাফিনের ঘরে চলে এলো। কৌশিক হেসে গড়াগড়ি। রাফিন অপরাধীর মতো দাঁড়িয়ে আছে। কৌশিক বললো,
— বাহ বাহ! রোমাঞ্চ রোমাঞ্চ। ভালো তো। নাইস লাগছে তোকে।

কথাটা বলেই আবার হাসতে থাকে। রাফিন ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় কৌশিককে। তারপর দরজা লাগিয়ে দেয়। কৌশিক দরজার সামনে দাঁড়িয়ে এখনো হাসছে।
·
·
·
চলবে……………………….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here